গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ‘প্লাবন’ । কিছু দূর যেতে যেতে সে দেখল, কয়েকজন লোক ছুটোছুটি করছে । সে ভাবল কোথাও হয়তো কোন কিছু ঘটেছে । একটু সামনে যেতেই সে আরও দেখল, বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ পুকুর থেকে পাত্রে পানি নিয়ে গ্রামের ভিতরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । আর একটু সামনে যেতেই দেখা গেল, একটি ঘর আগুনে জ্বলছে । ঘরের ছাউনিটাও দাউ দাউ করে জ্বলছে । যারা পানি নিয়ে এসেছে তারা তা ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে । আর অন্যরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছে । ঘরের কাছাকাছি যেতেই সে জানতে পারল কোন এক অদ্ভুত কারণে ঘরে আগুন লেগেছে । আরও জানল ঘরের ভিতর একটি মেয়ে ছাড়া কেউ নেই । মেয়েটির বাবা ঘর থেকে অনেক দূরবর্তী একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন । আর মা ছোট ছেলেকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন । এদিকে বড় মেয়ে ‘অনন্যা’ ঘরে একা । সে নিকটবর্তী গ্রামের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়ে । মা-বাবা কেউ ঘরে না থাকার কারণে হয়তো তার কলেজে যাওয়া হয়নি । কলেজে না যাওয়ায় হয়তো দিনটি তার জন্য দুর্ভোগের কারণ হল । আগুন জ্বলছে এবং ঘরও পুড়ছে কিন্তু মেয়েটি ঘরের ভিতর কি অবস্থায় আছে তা কেউ জানে না । কেউ কিন্তু সাহস করে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে না । এমন সময় ‘প্লাবন’ ঝড়ো বেগে প্রজ্বলিত ঘরের দরজা অতিক্রম করে, আগুনের ফুলকি অগ্রাহ্য করে, নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে, ঘরের ভিতর প্রবেশ করলো এবং কিছুক্ষণের মধ্যে তার কাঁধে করে মেয়েটিকে বাহিরে নিয়ে আসল । হয়তো আগুনের তাপ ও ভয়ের কারণে মেয়েটি জ্ঞান হারিয়ে ঘরের ভিতর পড়ে ছিল । তবে সাহস করে নিজে বের হতে না পারলেও আগুনের সামান্য চোট তার গায়ে লাগে নি । মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হল । মেয়েটির (অনন্যার) বাবা-মা ছেলেটির (প্লাবনের) অসীম সাহসিকতার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানালো । তারা এটাও বলল যে, সে না থাকলে হয়তো অনন্যাকে আর কোনোদিন ফিরে পেত না । যা হোক, কয়েকদিনের মধ্যে অনন্যা সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে এল । ‘প্লাবন’ একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে । যদিও ঘটনার দিন ক্লাস ছিল না বলে সে অকস্মাৎ ঐ স্থানে উপস্থিত হতে পেরেছিল । প্লাবন জীবনে কোন দিন এরকম কোনও পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় নি । এটিই তার জীবনে প্রথম কিছু যা তার কল্পনার বাইরে ছিল । সে কোন দিন ভাবে নি যে, এমন এক সাহসিকতার মাধ্যমে কাউকে কোন কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবে । যা হোক, এখানে তার জীবনে অবেলায় নতুন কিছু ঘটে গেল । সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর থেকে প্লাবন ‘অনন্যা’র বাড়িতে আসা-যাওয়া করছে । মেয়েটির নাম যেমন ‘অনন্যা’ কাজ ও তেমন অনন্য । অনন্যা এমন মিষ্টি সুরে কথা বলে, যাতে যে কেউ তার কথা না শুনে ফিরবে না । প্লাবন ও তেমন এক ছেলে যে অনন্যার প্রতিটি কথা শুনতে ও বুঝতে হেলা করে না । অনন্যাও মাঝে মাঝে ভাবে যে, প্লাবন তাকে উদ্ধার না করলে হয়তো তাকে আগুনে পুড়ে মরতে হতো । তাই প্লাবনকে সে কোনোদিন ভুলতে পারবে না । যা হোক, অনন্যা পড়াশোনায় অনেক ভালো একজন ছাত্রী । যদিও পড়াশোনা বিষয়ক কিছু না বুঝলে প্লাবনের কাছ থেকে বুঝে নিতে মোটেও কার্পণ্য করে না । প্লাবনও অনেক সহজ-সরল একটি ছেলে । সে মাঝে মাঝে এসে অনন্যার পরিবারের সকলের খবরা-খবর নেয় । ছুটির দিনে একে-অপরের কাছে যাওয়া-আসা করে, সুখ-দুঃখের কথা বলে অবসর সময় কাটায় । এভাবে তারা কখনো কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা করে, কখনো দূরে কোথাও স্বল্প সময়ের জন্য বেড়াতে যায় । আস্তে আস্তে তারা তাদের মনের মধ্যে কেমন যেন একটু পরিবর্তন দেখতে পেল । দেখতে দেখতে একটি বছর চলে গেল আর এতে করে তাদের দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো । আরও কিছুদিন পর অনন্যা বলল, ‘প্লাবন’ তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কিছু কল্পনা করতে পারি না । তবে প্লাবন কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর সম্মতি জ্ঞাপন করে বলল, আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি । এর পর যে যার বাড়ি ফিরে গেল । এভাবে ভালবাসার কথা মনে আসতেই প্লাবন মনে মনে বলল, আমি তো সেই রকম কিছু ভাবিনি তবে কেন এমন হচ্ছে । অবেলায় নতুন কিছু ঘটে যাচ্ছে মনে হতেই প্লাবন মনে মনে হাসল । সে কোন দিন কল্পনাও করেনি যে, এত অল্প সময়ে এমন কিছু ঘটে যাবে । বছর তিনেক পার হল এবং তাদের দুই পরিবারের যৌথ সম্মতিতে প্লাবন ও অনন্যার বিয়ে সম্পন্ন হল । যদিও বিয়ের আগে প্লাবন একটি চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিল । তাদের দিন ভালোভাবেই চলতে লাগলো । যতই দিন যাচ্ছে প্লাবন ততই ভাবতে লাগলো যে, এত দ্রুত জীবনের পরিবর্তন কিভাবে হল । সে বাস্তবতাকে খুব পছন্দ করে তবে অকল্পনীয় ও নতুন কোন কিছু অতি অবেলায় ঘটে যাওয়াকে সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না । সে দেখল একটু সাহসিকতার কারণে কোন এক জনের প্রাণ বাঁচানো, তারপর একটু দেখা একটু কথা মাঝে মাঝে নীরবতা, ভালবাসার সূচনা এবং বিয়ের মাধ্যমেই সেই ভালবাসার পরিসমাপ্তি । সবকিছুতেই যেন নতুনত্ব এবং অবেলায় ঘটিত বিষয় । যা অবিশ্বাস্য, যা অকল্পনীয় । স্মরণীয় হয়ে থাকবে সেই  সব ঘটনা...............................................................অনেককাল ।             
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
    
                    
        
        
            
            
                 ১৯ নভেম্বর  - ২০১১ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ১৩ টি
                        
                    
            
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                     
 
     
    
        
        বিজ্ঞপ্তি
        “নভেম্বর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
        প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী