কিছু সময় অপেক্ষার পর বাস হেলপার বলতে লাগলো, “তাড়াতাড়ি উঠেন, এখনই বাস ছেড়ে দেওয়া হবে” । কিন্তু ‘নাফিস’ বাস এর বাহিরে দাড়িয়ে বন্ধু ‘রাফা’ র জন্য অপেক্ষা করছে । বাস এর ভিতরে থাকা তিন বন্ধু ‘অরিন, অংশু, অপর্ণা’ এবং বাস যাত্রীরা বাস ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে । বাস ছাড়ার সাথে সাথে ‘রাফা’ তাড়াতাড়ি করে বাস এ উঠতে সক্ষম হল । তারা পাঁচ বন্ধু একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে । নাফিস ছাড়া অন্য চার জনই শহরেই বড় হয়েছে । তারা কোনোদিন গ্রাম দেখে নি । সেই কারনে তাদের মধ্যে গ্রাম দেখার আগ্রহ জন্মেছে । তাই তারা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নাফিসের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল । প্রায় সাত- আট ঘণ্টা বাস এ থাকার পর ভোর ছয়টার দিকে বাস থেকে নামল । বাস থেকে নামার পর গরুর গাড়িতে করে গ্রামের পথ দিয়ে পাঁচ বন্ধু নাফিসের বাড়িতে যেতে লাগলো । তাদের চোখ যে দিকে যায় সেদিকেই সবুজ আর সবুজ এবং পুব আকাশে লাল সূর্য । তা দেখে তারা আনন্দ উল্লাস করতে লাগলো । শহরের চার বন্ধু গ্রামের খোলা মাঠ , গাছ-গাছালি, ফল ও পশু-পাখি দেখে গ্রামের মহিমা গায়তে লাগলো । গরুর গাড়ি থেকে নামার পর একটি ছোট খাল পেরিয়ে তারা নাফিসের বাড়িতে পোঁছাল । নাফিসের ‘বাবা, মা, ও বোন’ অতিথিদেরকে স্বাগতম জানাল । তারপর নাফিসের ছোট বেলার সাথী ‘সুমা’ ও সেখানে এলো । এর পর নাফিসের ছোট বোন ‘নাদিয়া’, ও ‘সুমা’ অতিথিদের সাথে পরিচিত হল । তারপর সকলে মিলে নাফিসের গ্রাম্য বন্ধু ‘অজয়’ এর বাড়িতে বেড়াতে গেল । ‘অজয়’ গ্রামের অভ্যন্তরীণ একটি রেডিও’র সঞ্চালক । এখন সবাই মিলে গ্রাম ঘুরতে বের হল । গ্রামের এদিক-সেদিক নানা চিত্র দেখে শহুরে বন্ধুরা বিস্মিত হল । তারপর কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ সকলের চোখে পড়ল একটি ‘শহীদ মিনার’ । ‘শহীদ মিনারটির’ চারদিকে গাছ-গাছালির অপরূপ শোভা সকলকে মোহিত করল । কিন্তু ‘শহীদ মিনারটির’ কিছু অংশ ক্ষয় হয়ে গেছে । তা দেখে তারা দুঃখবোধ করল । এভাবে কি যেন ভাবতে ভাবতে তারা সামনের দিকে এগোতে লাগলো .........। পথে ‘রহিম চাচা’র সাথে দেখা হল । তারা সকলে ‘রহিম চাচা’ র সাথে পরিচিত হওয়ার পর তাঁর বাড়িতে গেল । তারা সকলে ‘রহিম চাচা’র মুখে গল্প শুনতে চাই । তবে সেই গল্প হল ১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে । ‘রহিম চাচা’ ভাষা আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ছিলেন । ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেলেন । কিন্তু তাঁর বন্ধুরা, ‘রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত’ সহ আরও অনেকে সেই দিন জীবন হারাল । তাই তাদের স্মৃতিতে একটি ‘শহীদ মিনার’ নির্মাণ করা হয়েছে এমন কাহিনিও সেই গল্পে স্থান পেল । তখন তারা সকলে ‘শহীদ মিনার’ টির এমন খারাপ অবস্থার কারণ জানতে চাইল । ‘রহিম চাচা’ বলল , “ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর কারণে ‘শহীদ মিনার’ টির এই অবস্থা, এরপর কারো সহযোগিতা পাইনি বলে তা আর করা হয়ে উঠে নি” । তখন ‘রাফা’ বলল, “আমরা সকলে মিলে কি সেটা মেরামত করতে পারি না ?” উত্তরে সকলে একমত হল যে, তারা তা নতুন ভাবে করবে । অরিন, অপর্ণা, ও অংশু বলল, “আমরা একটি তহবিল গঠন করব, তারপর ‘শহীদ মিনারটির কাজ শুরু করব”। ‘অজয়’ সাথে সাথে সেই খবরটি রেডিও’র মাধ্যমে গ্রাম বাসীকে জানিয়ে দিল । গ্রামবাসী ও তাদের সাথে একমত পোষণ করল। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করতে লাগলো । অতি সহজে একটি তহবিল গঠন করা হয়ে গেল । এবং কাজ ও শুরু করে দেওয়া হল । অনেক পরিশ্রমের বিনিময়ে প্রায় ১৩ দিন কাজ করার পর ২০শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারটির কাজ শেষ হল । সবাই এখন মহা খুশি কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে । তেমনি ২১শে ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২.০১ মিনিটে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হল । গ্রামের সকলে ঐ বন্ধুদেরকে অনেক বাহবা দিল । তাই তো ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন সকলের মুখে শোনা যায়.........
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো
২১শে ফেব্রুয়ারি ।
আমি কি ভুলিতে পারি......?
এভাবে ফেব্রুয়ারির আগন্তুকেরা দেশ, জাতি, শহীদ ও ভাষার প্রতি ভালবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত প্রমান করল ।
১৯ নভেম্বর - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪