বাবারা বুঝি এমনই হয়

বাবারা এমনই হয় (জুন ২০১৯)

মারুফ আহমেদ অন্তর
  • 0
  • 0
  • ৬৭
ছোটবেলা থেকেই আমার আব্বুকে দেখে আসছি পরিবারের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ তিনি কতটা
নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছেন। আমরা পাঁচ ভাই-বোন। কখনো তিনি কাউকে আলাদা করে
দেখেননি।
মনে পড়ে ছোটবেলায় আব্বুর সাথে চকবাজারে যাওয়া। আমাদের চকবাজারে ব্যবসা ছিল। আব্বু
প্রায়ই আমাকে চকবাজার নিয়ে যেতেন। আমার খুব আনন্দ লাগতো। ফিরে আসার সময়
আলাউদ্দিন এর মিষ্টির দোকানের মিষ্টি, ছানা, দই, গাজরের হালুয়া খাওয়া কী যে মজাদার, কী যে
আনন্দের ছিল সেই অনুভূতি! এছাড়া আব্বু যখনই চকবাজার থেকে বাড়ি ফিরতেন ব্যাগে করে কিছু
না কিছু নিয়ে আসতেন। আমরা ভাইবোনেরা আশায় থাকতাম কখন আব্বু বাড়িতে ফিরবেন। আমি
পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে একটু বেশিই মনে হয় আদর যত্ন পেতাম। আব্বু আমাকে ছোটবেলা
থেকেই আব্বু বলে ডাকতেন, কখনো আমার নাম ধরে ডেকেছেন বলে মনে পড়েনা। আমাদের
অসুখ বিসুখে তিনি অস্থির হয়ে যেতেন কি করবেন।
আমার আব্বু কখনো আমাকে হাত তুলে শাসন করেননি। উনার ধমক, চোখের ইশারাকে ভীষন ভয়
পেতাম। আমাকে নিয়ে তিনি অনেক আশা করতেন। আমাকে কুরআনে হাফেজ বানাবেন। কিন্তু
আমি ছোটবেলা থেকে মাদ্রাসায় যেতে চাইতামনা। বাংলা লাইনে পড়াশুনা করার আগ্রহের কারনে
আমার উপর তিনি আশা ছেড়ে দেন। তারপরও আমার প্রতি তাঁর আদর, ¯স্নেহ, ভালোবাসা কখনো
কমতি ছিলনা। এখনো নেই। এখনো আমার আব্বু আমাকে সেই ছোটবেলার মতোই আগলে
রাখেন।
বাবারা বুঝি এমনই হয়।
আমি বুঝিনি, বাবারা কেমন নয়। বাবার অনুভূতি কী! গত ২০১৬ সালে বিয়ে করার পর ২০১৭
সালে আমি পুত্র সন্তানের জনক হলাম। প্রথম সেদিন বুঝলাম বাবা হবার অনুভূতি কী! যেদিন
আমার সন্তানের জন্ম হল এখনো মনে আছে এইতো সেদিন ১৩ মে, ২০১৭ রাত ৯:৪৫ মিনিটে
আজিমপুর ম্যাটার্নিটি হাসপাতালে আমার ওয়াইফ এর সিজার হওয়ার পর নার্সরা যখন বাচ্চাকে
বের করে রেজিস্ট্রি খাতায় সই করে আমার হাতে আমার সন্তানকে তুলে দিলেন। কি যে ভালোলাগা
এক শিহরন আমার ভিতরে কাজ করছিল বোঝানো যাবেনা। আমি ফিল করার চেষ্টা করি আমার
কোলে আমার অস্তিত্ব, আমার কলিজার টুকরা!
আমার ছেলে জন্মের পর অনেকগুলো ফাঁড়ার মধ্যে দিয়ে যায়। প্রথম ৮ দিনে জন্ডিস হয়। ২ মাস
বয়সে ডায়রিয়ার কারনে নিবেদিতা হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। ৩ মাস বয়সে মারাত্মক
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ধানমন্ডি পেডিহোপ হাসপাতালে আইসিইউতে ৯ দিন ভর্তি থাকে। হার্টে
সামান্য ছিদ্র ধরা পড়ে। কি যে যন্ত্রনার, কি কষ্টের ছিল সেই দিনগুলো। দিনরাত নামাজ পড়ে মহান
আল্লাহর কাছে আমার একমাত্র সন্তান মাসফিদ (পুরো নাম মাসরুফ আল আরাফ মাসফিদ) এর
জন্য জীবনভিক্ষা চেয়েছিলাম। মহান আল্লাহ আমার কথা, আমার দোয়া রেখেছিলেন। শোকরিয়া
মহান আল্লাহর দরবারে।
দিন দিন ছেলেটা বড় হচ্ছে। ওর দুষ্টুমি, চঞ্চলতা আমাদের পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে। এখন ওর
দুই বছর পার হলো মাত্র। একটু একটু ভাঙ্গা ভাঙ্গা দুয়েকটা শব্দ বলতে পারে। আমাকে বাবা স্পষ্ট
উচ্চারনেই ডাকে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাসফিদ এর ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আমার
আব্বু, মা অনেক আদর করে তাদের প্রিয় নাতিকে। আমার বোনেরা ভীষন ¯স্নেহ করে আমার
আদরের সন্তানকে।
বাবারা বুঝি এমনই হয়।
এখনো আমি কাজ শেষে বাড়ি ফিরলে আমার ছেলের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে যাই। যেমন আমার
আব্বু আমাদের জন্য আনতেন।
এখনো ঈদ এলে আগে আমার ছেলের জন্য সব কিছুকেনাকাটা। নিজের জন্য না হয় নাই
কিনলাম। যেমন স্যাক্রিফাইজ করতেন আমার আব্বু। আমার ছেলে একটু ব্যাথা পেলে, অসুখ হলে
চিন্তায় রাতে ঘুম আসেনা। ছেলেকে নিয়েই সব।
তারপরও মনে হয় আমার বাবা আমার প্রতি যেমন আদর, স্নেহ, ভালোবাসা দেন, আমি কি পারব
আমার ছেলেকে তেমন ভালোবাসা দিতে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

বাবা

১৬ নভেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "নগ্নতা”
কবিতার বিষয় "নগ্নতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মে,২০২৪