সিএন এন চ্যানেলটা ওপেন করে হঠাৎ আতকে উঠল রাহাত । লাইভ প্রোগ্রাম ইন ঢাকা সিটি। এ এক চরম বিষ্ময়ের ব্যাপার । নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা । এ কি কোন কল্প কাহিনি, নাকি বা¯তব ? আরো মনোযোগের সাথে রিপোর্টগুলো দেখছে । না, এটা কোন রূপ কথার গল্প নয়। একেবারে জীবšত । তাহলে কি সত্যিকার উড়šত শশার বাংলাদেশের আকাশে ! এসব নানা প্রশ্ন এসে বিদ্ধ করছে রাহাতের মাথায়। বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো কি বলছে ? রিমোট টিপে চলে গেল চ্যানেল আই এ । এখানেও দেখা গেল সব চ্যানেলের ক্যামেরার চোখ এখন ঢাকার আকাশে।
- সুধী দর্শক মন্ডলী, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, একটা বাস কি এক অদৃশ্য শক্তির টানে ফুট পাথের একটু ওপরে লটকে আছে । মানুষ ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে হুড় মুড় করে নেমে যাচ্ছে । সবাই আতঙ্কে দৌড়াচ্ছে ।
(দৌড়ানো একজন এর পথ রোধ করে) আচ্ছা, ভাই, একটু শুনুন, কি ঘটেছে যদি একটু বলেন?
-- কি আর কমু ভাই, কিছুইত বুঝবার পারতাছি না । গারিটা ঐ জ্যামে আটকাইয়া আছিল , হঠাৎ দেহি ডেরাইবারে নরে চরে না, গারীখান হুন্যের উপরে উইঠ্যা এইহানে আইল, কেমতে আইল, কিছুই বুঝবার পারলাম না । আর ঐ যে দ্যাহেন কতক প্যাসেনজারে সিডের লগে, দাড়াইয়া কেমন পাত্থরের লাহান লটকাইয়া আছে। অগো শরীলে টাস করবারও পারিনাইক্যা। চুম্বকের লাহান বিকর্ছন করছিল।
সুধী দর্শক মন্ডলী, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, এক সাথে চারজন লোক যুগলবন্দী অবস্থায় উড়ে যাচ্ছে। আমরা এ মুহুর্তে দেখতে পাচ্ছি, জাতি সংঘ শান্তি মিশনের পতাকাবাহী বিমান উড়ে যাওয়া মানুষগুলোকে উদ্ধারের জন্য তাদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু মনে হচ্ছে একটা নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধের মধ্যে আবর্তিত হতে পারছে, একেবারে নিকটবর্তী হতে পারছে না। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, এবার বিমানটা আরো ওপরে যেয়ে উড়ে যাওয়া মানুষগুলোর মাথা বরাবর নীচে নামার চেষ্টা করছে । কিন্তু হায় ! সেটি এখন বিদ্ধস্ত হয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ।
আপনারা দেখছেন, চ্যানেল আই ।
আল্লা তোমার মেহেরবানীর কোনই সীমা নাই
তুমি রহিম, তুমি করিম , তুমি রহমান
আমরা সবাই পাপী তাপী
কর মোদের পরিত্রান
ইসলামী গানের অংশবিশেষ শেষ হলে এক উপস্থাপক অনুষ্ঠান শুরু করলেন ঃ
সুধী দর্শক মন্ডলী, এতক্ষন আপনারা সম্প্রতি যে অজনা রহস্যজনক ঘটনা ঘটছে তার সরাসরি সম্প্রচার দেখছিলেন । এ মুহুর্তে আমাদের ষ্টুডিওতে উপস্থিত আছেন বিশিষ্ট ইসলামী চিšতাবিদ জনাব ডঃ আনোয়ারুল হক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ ইফতেখার আলম। আমরা তাদের কাছে জানতে চাইব, প্রথমতঃ সারা ওয়ার্লড ব্যাপি ধারনা ছিল যে, হঠাৎ করে ঢাকার আকাশে এরকম রহস্যজনকভাবে মানুষ ও অন্যান্য বস্তু শুন্যে উড়ে যাচ্ছে । কিন্তু অতি সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি বিশ্বের সব মানব জমিনেই এটা হচ্ছে । আমি প্রথমে জানতে চাইব জনাব ডঃ ইফতেখার আলম স্যারের কাছে, স্যার এর বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা কি ?
-- দেখুন, এ ঘটনা ঘটছে আকষ্মিকভাবে, সারা দুনিয়া ব্যাপি । প্রায় আট ঘন্টারও বেশী সময় অতিবাহিত হয়ে গেল । জানি না আমরা কতক্ষন আছি, আর কখনইবা তাদের পথ আমাদেরকে অনুসরন করতে হবে । গোটা বিশ্বই এখন উদ্বিগ্ন । আমি নাসায় কর্মরত আমার বন্ধুদের সাথে ইতোমধ্যে কথা বলেছি, মত বিনিময় করেছি, এখনও পর্যšত এর কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি । তবে যে সম¯ত বিজ্ঞানীরা এখনও এলাইভ আছেন, তারা কেউই বসে নেই । বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন, এরই মধ্যে দেখেছেন কয়েকজন বিজ্ঞানী বিমান নিয়ে পর্যবেক্ষন করার সময় বিদ্ধ¯ত হয়ে মারা গিয়েছেন । আমরা তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং প্রর্থনা করছি আল্লাহ উনাদের যথাবিহিত ফয়সালা করুন । আপনারা একটা বিষয় লক্ষ করে থাকবেন, যে মানুষ বা যে বস্তুটা এ অদৃশ্য শক্তির টার্গেট হচ্ছে তার একটা নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধের মধ্যে অন্য যারা টার্গেটের বাইরে আছে তারা যেতে পারছেনা । আটকে যাচ্ছে । কিসে আটকে যাচ্ছে- তাও তারা বুঝতে পারছেনা । আরো লক্ষ্য করেছেন, এ বৃত্তের ব্যাসার্ধও কিন্তু খুব বেশী নয় মাত্র দু’গজের কাছাকাছি । খুব সহজেই তার আওয়াজ আমাদের শোনার কথা । কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি , টার্গেটেড ব্যক্তি হঠাৎ করেই ষ্টাচ্যু হয়ে যাচ্ছেন এবং বাকশক্তিও তার থাকছেনা । এক পর্যায়ে হেলিকপ্টারের মত জা¤প করে উড়ে যাচ্ছে । পাশাপাশি আমরা এসব শক্তির খুব কাছে অবস্থান করেও এখনও পর্যšত টিকে আছি। অর্থাৎ আমার কাছে এটা মনে হচ্ছে - অদৃশ্য শক্তিটা কারো দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । এ মুহুর্তে আমাদের জ্ঞানের ভান্ডারে যা আছে তার সীমাবদ্ধতা মাথায় নিয়ে আমি বলতে চাই যে, এটা হচ্ছে, কি এর কারণ, কি সে শক্তি ? এর উদ্দেশ্য কি? এটা কি আল্লাহ প্রদত্ত কোন সুপার পাওয়ার নাকি অন্য কিছু - এসবের বিচার বিশ্লেষনের সময় এখনও হয়নি । এ নিয়ে গবেষনা চলছে । আমরা যতক্ষন এ ধরাধামে আছি ততক্ষন এ নিয়ে গবেষনা চালিয়ে যাব । আপনারা ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করুন ।
- ধন্যবাদ স্যার, আপনার মূল্যবান বক্তব্যের জন্য । এবার আমরা জানতে চাচ্ছি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ইসলামী চিšতাবিদ জনাব ডঃ আনোয়ারুল হক স্যারের কাছে, স্যার আপনার কি মনে হয়, এটা কেন হচ্ছে ?
-- ধন্যবাদ, আপনাকে । আস্সালামুআলাইকুম। পরম দয়ালু আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত কামনা করছি । সেই সাথে গোটা বিশ্বের মানুষের প্রতি আমি আহ্বান করছি, আসুন আমরা আল্লাহর উপর সোপর্দ করি, তার কাছে আÍ-সমর্পন করি । আমরা সবাই বলি - “ র’ব্বি আন্নী মাগলুবুন ফানতাছির ” । অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক, আমি পরাজিত/পরাভূত, আমি আপনার কাছে আÍ-সমর্পন করছি, আপনার যা ইচ্ছা আমার জন্য ফয়সালা করুন । আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানী, আমাদের কত বন্ধু-বান্ধব, আÍীয়-স্বজন আমাদের অতি নিকট থেকে চলে গেছেন। আমরা এখনও এখানে আছি । প্রত্যেক জীবিত প্রণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর এ মৃত্যু কখন হবে, কোথায় হবে, কোন বয়সে হবে, তা কেউ বলতে পারে না। ডঃ ইফতেখার সাহেব যেমনটা বললেন, এর বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি খুঁজছেন সারা বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীরা । হয়ত এর গ্রহনযোগ্য কোন ব্যাখ্যাও তারা পেয়ে যাবেন । তবে আমি এ বিষয়ে যা ভাবছি, তা একাšতই আমার নিজস্ব ভাবনা । অনুমোতি দিলে আমি আপনাদের সাথে আমার ভাবনাগুলো শেয়ার করতে পারি।
- হ্যা, নিশ্চই স্যার ।
-- ধন্যবাদ । আমাদেরকে খুঁজে খুঁজে দেখতে হবে, যারা চলে গেছেন, তারা কারা ? কি ছিল তাদের পরিচয় ? তাদের কি পরিবারের সবাইকে নিয়ে গেছে, না কি বেছে বেছে কাউকে নিয়ে গেছে । আমার জানা মতে আমাদের ক্যা¤পাসের একজনকে তুলে নিয়ে গেছে । আমি সে পরিবারের সবার সাথে কথা বলেছি । তাদের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছি । তারা ভয়ে আতঙ্কিত । তার ছেলে মেয়েরা কেউ কিছুই বলতে পারছেন না । কিছুক্ষন আগে আমি ভাবীসাহেবার সংগে কথা বলেছি, তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু কথা আমাকে বলতে চান, তবে টেলিফোনে নয় । তিনি আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন, আমি যেন উনার বাসায় যাই । আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে, আমাদের মধ্যে সবাই বোধহয় টার্গেটেড না । আল্লাহ কোন কোন বিশেষ মানুষ বা বস্তুসমূহকে কোন শক্তির বলে এভাবে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা যদি এসব মানুষ ও বস্তুসমূহের সঠিক পরিচয়, তাদের ইতিহাস জানতে পারি, তাহলে মনে হয় একটা বিষয় অবগত হওয়া যেতে পারে । আমার মনে হয়, আমরা সবাই আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে আÍ-সমর্পন করে তার ফয়সালার অপেক্ষায় থাকি । পাশাপাশি এ নিয়ে অবশ্যই আমাদের গবেষনা চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে ধৈর্য্যধারন করে এ অবস্থার মোকাবিলা করার তৌফিক দান করুন, আমীন। আসসাসালামুআলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ ।
-সুধী দর্শক মন্ডলী, এতক্ষন আপনারা দুজন বিজ্ঞ আলোচকদের মূল্যবান আলোচনা শুনলেন । এখন আপনাদেরকে আমরা নিয়ে যাচ্ছি লাইভ প্রোগ্রামে । যেখানে আমাদের বিভিন্ন রিপোর্টাররা আপনাদেরকে আপডেট নিউজ দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছেন ।
**
- হ্যালো, রাহাত বলছি ।
-- আমি, রোমেনা নিউইয়র্ক থেকে । কেমন আছ তুমি ।
- জ্বি, ভাল ।
-- কিছু বলছ না যে ?
- ফোন তো তুমি করেছ, কি বলবে বল ?
-- ব্য¯ত না কি খুব ।
- হ্যা, এখন শুধু আমি কেন, গোটা বিশ্বই তো ব্যা¯ত ।
-- তা - ই তো । তুমিত আবার পন্ডিত মানুষ । তাহলে ডিসিশনটা নিয়েই নিয়েছ ?
- কিসের ডিসিশন ?
-- বা, রে । একেবারে আকাশ থেকে পড়লে মনে হয় । কিসের ডিসিশন, তুমি বুঝি জান না ?
- না, আমি বুঝতে পারছি না ।
-- এত অভিনয় জান তুমি , আশ্চর্য !
- আচ্ছা, এখান থেকে তুমি এক তরফা ঝগড়া করে গিয়েছ । আমি তো তোমাকে কিছু বলিনি। তোমার কোন কাজেই আমি বাঁধা দেই নি । এখন সে সুদর আমেরিকা থেকে ফোন করেছ কি লেজে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার জন্য ?
-- আমি লেজে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছি ? এনাফ, এনাফ । তোমার মত অভিনেতার সংগে অভিনয় করে আমি পারব না । তুমি আমার ছেলেদের কাছে ফোনটা দাও, আমি ওদের সংগে কথা বলব ।
- সে তো হবার নয় । ওদের সংগে কথা বলা যাবে না ।
-- কেন ?
- কেন, তুমি বুঝতে পারছ না ? তুমি যখন ছেলেদের ফেলে আমেরিকায় চলে গেলে তখন কি প্রমিজ করেছিলে, ভুলে গেছ ?
-- কেন ভুলব, আমি চাকরী পেয়ে এখানে এসেছি । তোমার সাথে যা হয়েছে, আমিতো তাদের কাছে কিছু প্রকাশ করিনি ।
- কিন্তু এখন তাদের সাথে কথা বলতে চাও কেন ?
-- আশ্চর্য ! আমি আমার ছেলেদের সাথে কথা বলতে পারব না ?
- না ।
-- কেন, ওরা শুধু একা তোমার, ওরা আমার কেউ নয় ?
-সে কথা তুমি তোমার নিজেকেই প্রশ্ন করে জেনে নিও। আমি এখন খুব ব্য¯ত। আর তোমার সাথে এতক্ষন কথা বলে মনে হচ্ছে, তুমি দিন দুনিয়ার কোন খবরই রাখনা । টি ভি খুলে . . . . . .
কথায় বাঁধা দিয়ে,রোমেনা বলল, তাই বলে আমার বাচ্চাদের সাথে ফোনে কথা বলতে পারব না?
- না তা সম্ভব নয় । আমি এখন খুব ব্য¯ত। রাখছি ........
-- না, না, রেখনা আর একটু শোন । তুমি ডায়রীটা পড়েছ ?
- তোমার লেখা ডায়রী যেদিন পড়ব সেদিনই এরকম আরো ডায়রী আমার টেবিলে চলে আসবে । তুমি কি মনে কর ? তুমি ডায়রী রিখতে পার, আর তোমার শাশুড়ি, ননদেরা লিখতে পারে না বুঝি ?
-- হ্যা, নিজের মা, বোনের সাফাইত তুমি গাইবেই ।
- প্লীজ, নিজেকে আর ছোট কর না । এসব কথা টেলিফোনে আলাপ করতে তোমার অনেক টাকা বিল আসছে । তুমি এখন রাখ , আর এতক্ষন তোমার কথা শুনে মনে হলো তুমি দিন দুনিয়ার খবর রাখ না । আসল কথাটায় বাঁধা দিচ্ছ। শোন, তুমি টি,ভি খুলে যে কোন চ্যানেলে দেখ সারা দুনিয়ায় এখন কি হচ্ছে ।
-- কথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলে ? আমার বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে দিবে না ?
- দুত্তরি ! তুমি টি,ভি খুলে দেখ, দেখে যদি কিছু বোঝ তাহলে আবার ফোন করো। ফোন করলে বাসায় করোনা, মোবাইলে করো। কেননা আমাকে এক্ষুনি বাইরে যেতে হচ্ছে । তোমাকে একটা কথা বলি, টিভিতে দৃশ্যগুলো দেখে ভয় পেও না । যদি বেশী ভয় পাও, আমাকে আবার ফোন কর, আমি তোমাকে সংগ দিব।
আচ্ছা, রাখছি ।
রোমেনা রাগে, দুঃখে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল । অনেকক্ষন শক্ত পাথরের মত বসে থেকে রাহাতের শেষ কথাগুলো মনে করতে লাগলো । কত বড় সেয়ানা । আমাকে টি, ভি দেখতে বলে কথার মোড় ঘুরিয়ে অন্য দিকে চলে গেল ? দাঁড়াও, আমিও দেখে নেব তুমি কত বড় পন্ডিত । আমি কোর্টে যাব, আইনের আশ্রয় নেব । আমার নাবালক বাচ্চাদের উপর এখন আমারই অধিকার । আমি ওদেরকে আইনের মাধ্যমেই আমার কাছে নিয়ে আসব । আমার লাইফটাকে হেল করে দিয়েছ । তোমার একগুয়েমীর অবসান আমি করবই করব আমিও দেখে নেব, তোমরা কতবড় সাধু । রাগের চোটে রিমোট টা হাতে নিয়ে চ্যানেল আই ওপেন করল । কিছুক্ষন লাইভ দেখে ভয়ে শীতল হয়ে গেল। এ কি !
-- হ্যলো, আমি রোমেনা
- বল ।
-- এসব কি হচ্ছে ?
- তুমি কি এই ১০ ঘন্টা পরে জানলে ? এতগুলো ডিগ্রী ঘাড়ে নিয়ে বড়াই কর। এইতো তোমার শিক্ষার দৌড়। তুমি বাইরে যাওনি ?
-- না, আমি ঘুমুচ্ছিলাম, আজ কাজে যাই নি । আর জানইতো, আমার টি,ভি দেখার অভ্যাস কম। কিন্তু এসব হচ্ছে কি ? আমার খুব ভয় করছে।
- ভয় পেওনা। দরজা খুলে বাইরে যেয়ে দেখ ।
-- কিন্তু আমার যে ভীষন ভয় হচ্ছে । বাইরে গেলেই যদি -------
- এই ১০ ঘন্টা যখন রয়ে গেছ, তখন মনে হয় তোমার আর ভয় নেই ।
--আমার বাচ্চারা ?
- পরীক্ষা শেষ। তাই ওরা সারাদিন খুব মজা করে খেলেছে । এখন ওরা ঘুমাচ্ছে। তুমি ওদের নিয়ে টেনশান কর না । দোওয়া, দরূদ পড়, আল্লাহকে স্মরণ কর । নো টেনশান, পরে আবার কথা হবে , ছাড়ছি ।
সাত দিন পার হয়ে গেল । এখন উড়ে যাওয়ার পরিমান একটু কম । তবে থেকে থেকে এখনও যাচ্ছে। রাহাতের মাথায় একটা আইডিয়া এল । সে একটা ডায়রী আর কলম নিয়ে বেরিয়ে পড়ল । কেন জানি মনে হচ্ছে, যারা চলে গিয়েছে, তাদের পরিচয় জানতে পারলে এর একটা সুরাহা হতে পারে । মধ্য বাড্ডা এলাকার যেখান থেকে একসাথে চারজনকে নিয়ে গেছে সেখানে যারা প্রত্যক্ষ দর্শী ছিল তাদের কাছে এল রাহাত ।
- আচ্ছা, আপনি বলুন ত, ওরাত আপনার হোটেলে বসে খাচ্ছিল । কি হয়েছিল তখন?
-- আমি কিছু বুঝতে পারলাম না স্যার । ওরা চারজন ডাল পুরি আর চায়ের অর্ডার দিয়ে কেবল বসল। এর মধ্যে দেখি, ওরা একসংগে টেবিলের ওপর দিয়ে ওপরের দিকে সোজা উঠে গিয়ে ছাদের সাথে মিশে গেল । আর দেখলাম না । তার পর বাইরে থেকে লোকেরা চিৎকার করছে, এ ভাই ঐ লোকগুলো উড়ে যাচ্ছে কি ভাবে ?
- হুু! এটাত দুনিয়াবাসি সবারই এখন চিšার বিষয় । কেউ কিচ্ছু বলতে পারছে না। তবে ভাই, আপনি যে বললেন, বাবলু ভাই সহ চারজন, মানে আপনি কি উনাদের চিনতেন ?
-- হ্যা, সবাইকে চিনি । ওনাদের না চেনে কে ? আপনি চেনেন না ওনাদের ?
- না তো ।
-- না চিনে ভালোই করছেন ।
- কেন ?
-- আজ তো ওরা নাই । মনে হয়, আর আসবেও না। তয় ওরা যদি স্যার দুনিয়ায় আবার ফেরৎ না আসে, তাহলে আমরা বাঁচি । কিন্তু যদি আবার আসে? না, না, স্যার , আমি কিছু জানি না । আপনি কে স্যার ? আমাকে এত কথা জিজ্ঞাসাই বা করছেন কেন ?
- আপনার কোন ভয় নেই । এ পর্যšত যারা গিয়েছে তারা কেউই ফেরেনি । আর নিশ্চিšত থাকেন, কেউ ফিরবেও না । আপনি নির্ভয়ে বলুন । আমি একজন সাংবাদিক, আমাকে আপনি বলুন ওদের পরিচয় কি? আপনার পরিচয় গোপন থাকবে।
-- স্যার, ওরা চারটাই খুনী । চাদাবাজি আর সšত্রাসই ওদের কাজ ছিল । আমার হোটেলে ওরা ফ্রি খাইত। টাকা চাইলে বলত, যদি আমাদের কথা মত চলিশ তোর টাকার অভাব হবে না । এ শহরে চান্দা না দিয়া কেউই ব্যবসা চালাইবার পারবো না। তুই আমাগো আড্ডায় আর খাওয়ায় বাঁধা না দিলে তোর সারা জীবনের চান্দা মাপ পাইবি । তারপর থেকে ওরা আমার এখানে নিয়মিত আড্ডা দেয় আর ফ্রি খায়। আমি জানের ভয়ে আর ব্যাবসার খাতিরে ওদের কোনদিন কিছু বলিনাই ।
- ওদের বাসা কোথায় আপনি চেনেন ?
-- শুধু বাবলু ভাইয়ের বাসা চিনি । আর কারোরটা আমি চিনি না ।
- আচ্ছা, ঠিকানাটা দিন ।
-- তয়, স্যার, আল্লার দোহাই, আমার কথা কিছু বলবেন না । ঠিকানা যে আমার কাছ থেকে পাইছেন, এ কথা কাউকে আপনি বলবেন না ।
- আপনি নিশ্চিšত থাকতে পারেন । আমার দ্বারা আপনার কোন ক্ষতি হোক, আমার জীবণ থাকতে তা আমি চাইব না । আপনি নির্ভয়ে বলুন ।
ঠিকানা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রাহাত।
এর পর সারা দুনিয়া জুড়ে আরো অনেক তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। খবরের পাতা ভরে বড় বড় কাহিনী ছাপা হয়েছে। সারা বিশ্ব জেনে গেছে, এ যাবৎ যারা উড়ে গেছে তারা কেউই ভালো লোক ছিলনা। তবে একই সাথে যানবাহন সহ অন্যান্য সামগ্রী উড়ে যাওয়ার বিষয়ে রহস্য অজানাই রয়েই গেল। গোটা পৃথিবীতে মানুষ বদলে যাচ্ছে, সমাজ বদলে যাচ্ছে । এখন আমাদের দেশে আর গদি নিয়ে কামড়াকামড়ি হচ্ছেনা। রাজনীতিতে কেউ আর সহসা আসতেই চায় না। এখানে যার যার দায়িত্ববোধ থেকেই দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দেশ পরিচালনা করছেন। বিষ্ময়কর পরিবর্তন! কী যে আনন্দ! পৃথিবীর তাবৎ সুস্থ্য লোকেরা তাদের অšতরে এরকম স্বপ্ন লালন করে আসছিল। আজ যেন তা সত্যি হলো।
-- হ্যালো, আমি রোমেনা।
- আহা ! এভাবে কাঁদছো কেন ? কোন ভয় নেই। বল।
--কি বলব ? এতদিন ধরে যা দেখছি, আর যা শুনছি তাতেতো মনে হচ্ছে কোন পাপীই ছাড়া পাবে না।
- তুমি এখনও মুক্তই আছ, তো ? তোমার ভয় কি ?
-- ( আরো জোরে কেঁদে ) কিন্তু আমিও যে পাপ করেছি।
- করে থাকলে তওবা কর।
-- আমার এ পাপ ক্ষমার যোগ্য নয়। আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে নিয়ে আমার শশুর-শাশুড়ির সংসার থেকে আলাদা হয়ে যাবার জন্য এসব করেছি। তোমাদের আমি চিনতে ভুল করেছি। আমার এ পাপের কোন ক্ষমা নেই।
- দ-উ-র বোকা। তুমি যে এসব চিšতা করতে -সেতো আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম।
-- কিভাবে ?
- শোন, তুমি যা ভেবেছিলে এটা কোন পাপ নয়। এটা হচ্ছে নির্বুদ্ধিতা। পাপ আর নির্বুদ্ধিতা এক নয়।
-- আমাকে ক্ষমা করতে পারবে তো? আমি কথা দিচ্ছি, সারা জীবণ এ ভুল আমি আর করব না। আমি দেশে আসছি। বল, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ।
- পাগলী । আচ্ছা, আমি দু’চারদিনের মধ্যেই আসছি।
-এস, আমি অপেক্ষায় থাকবো।
জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সূর্য উঁকি মারছে। আজ ছুটির দিন। একটা ছুটির দিন পেলেই ফজরের নামাজ পড়ে একটুখানি ঘুমিয়ে নেয় রাহাত। বেরসিক হকারের নিক্ষেপিত পত্রিকা কপালে আছড়ে পড়ায় ঘুম ভেংগে গেল। লাফ দিয়ে উঠল । ক্যামেরা ? ক্যামেরা ? . . .
চোখ থেকে ঘুমের ঘোর কাটতে আর একটুখানি আড়মোড়া দিয়ে কিছুক্ষন গড়িয়ে নিল। কি অদ্ভুৎ সব স্বপ্ন ! একটু মুচকি হাসি দিয়ে পত্রিকাটার শিরোনামে চোখ বুলিয়ে নিল ।
“ দু’নেত্রীর চুলোচুলি এখন তুংগে ’’
“মালীবাগে ট্রিপ্ল মার্ডার ’’
“সারা দেশে প্রশাসনের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেংগে গেছে ’’
“মুরগী চোর লাল্টু ‘ক’ দলের টিকেটে নির্বাচনে লড়ছেন ’’
“শিশু খাদ্যে ভেজাল আতংকে দেশের সব শিশুর মা বাবা ’’
“ দেশে এখন এইড্স্ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ’’