পরানপুরের মোল্লা বাড়িতে এগারতম আগমনী আওয়াজ শোনা গেল- রাতের মধ্যভাগে। আজ ওসমানগনির কন্ঠে আজানের ধ্বনী শোনা গেলনা। এ বাড়িতে এরকম আওয়াজ শোনার পর পরই ওসমানগনির স্ব-কন্ঠে আজানের ধ্বনী শোনা যায়। এর আগে এরকম আটবার আজানের ধ্বনী উচ্চারিত হয়েছে। প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে খায়েরুন্নেছা ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ আওয়াজ কানে বাজতেই ঘুম ভেংগে গেল। তবে কিছুক্ষনের মধ্যে বাপজানের কন্ঠে আজান শুনতে না পেয়ে শীতের রাতে আর কষ্ট করে লেপ ছাড়তে মন চাইল না। মাকে সেবা করার লোকের অভাব নেই। তার নিজের শরীরটাও তেমন ভাল যাচ্ছেনা । বিছানায় শুয়েই সবুরনন্নেছার দাবীর কথা মনে করে নিজেদের নামের সাথে মিল করে মেহেরুন্নেছা নামটা রেখে ফেলল। ঘুম আর হলোনা বাকী সময়টা অন্ধকারে তাকিয়ে নানা রঙবেরঙের স্বপ্নজাল বুনতে বুনতে ফজরের আজান হয়ে গেল। নামাজ শেষে তজবিহ্ করছিল। এমন সময় ফাতেমা তার ঘরে এসে বলল,
* বু’জান, মেয়ে হয়েছে।
- সে তো আমি জানি।
* বা,রে তুমিতো এলেই না, জানলে কিভাবে ?
- আমার চোখ কয়টা তুই জানিস ? কেমন করে জানলাম সে জেনে তোর কাজ নেই। মা কেমন আছে বল।
* গিয়ে দেখে এস না।
- দুর ! লজ্জা করে। একেতো আমার এ অবস্থা! এর মধ্যে মায়ের আবার !
* বেশ, হয়েছে, হয়েছে । তোমার যেতে হবে না। আমরা আছি। দু’জনই ভালো আছে। স্বস্তি পেয়ে আর একটু চোখ বুজে নিল।
*************
পুবধারের বেড়ার ছোট ছোট ফাক দিয়ে সূর্যের রশ্মি চোখের পাতায় সুড়সুড়ি দিয়ে ঘুমটা ভেংগে দিল। রিজিয়া হন্ত দন্ত হয়ে মা’র কাছে ছুটে এল। হাতে সদ্য বানানো পুতুলকে লাল শাড়ী পরিয়েছে। হাফাতে হাফাতে বলল,
* মা, নানুর কোলে নতুন একটা কুটি মেয়ে এসেছে । তুমি দেখেছ ?
- হ্যা, জানি। এখনো দেখিনি, দেখতে যাব।
* এটা আমি কুটি মেয়ের জন্য বানিয়েছি।
- ও যে কুটি মেয়ে, একথা তোমাকে কে বলল ?
* বারে, নানু যে বলল । আমি বাবু কান্না শুনতে পেয়ে নানুর ঘরে যেয়ে দেখি লাল টুকটুকে এই পুতুলটার মত একটা বাবু। আমি বললাম, নানু, এ বাবু তুমি কোথায় পেলে ? নানু বলল, আল্লাহ পাঠিয়ে দিয়েছেন । তারপরে বললাম, ও আমার কি হয়? ওকে আমি কি বলে ডাকব ? নানু বলল, কুটি মেয়ে বলে ডাকবে। ও তোমার কুটি মেয়ে। আম্মু, আমাকেও কি আল্লাহ পাঠিয়েছে ?
-হ্যা, আমরা সবাই তাঁর কাছ থেকে এসেছি।
* কি ভাবে আসে ?
- ঐ আকাশ থেকে উড়ে উড়ে ।
* অবাক হয়ে বলল, আকাশ থেকে উড়ে উড়ে !
হ্যা।
* কিন্তু, আমাদের তো পাখির মত ডানা নেই, তাহলে কিভাবে উড়ে এলাম ?
- আমাদের ওড়াটা কেউ দেখতে পায়না। তুমি এখন খেলতে যাও।
* নাহ্ ! তুমি যেন কেমন কর। তোমার কি হয়েছে মা ? রোজ রোজ তুমি রাগ করছ। আমার সাথে তুমি কথাই বলতে চাওনা। কাছে এলেই বল, যা, খেলতে যা।
- আমার শরীরটা অসুস্থ্য মা, তুমি এখন যাও। পরে তোমাকে কুটি মেয়ের গল্প শোনাব।
**************
কুটিমেয়ের জন্ম উপলক্ষে আর তার স্কুলের শীতকালীন ছুটি থাকায় মামা বাড়ির অনেক নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে আরো অনেকদিন খেলার সুযোগ পেয়ে গেল রিজিয়া। এর পর আবার তার মাকে আরো অনেকদিন নানাবাড়ি থাকতে হয়েছিল। এই লম্বা বেড়ানোর সুযোগটা আরো প্রসারিত হবার কারণটা অবশ্য কিছুদিন পরে ফাতেমার মাধ্যমেই জানা গেল। তাকে কানে কানে বলেছিল, কুটি মেয়ের মত তার মায়ের কোলেও আর একটা কুটি বাবু আসবে। তাই সে যেন তার মাকে বেশী বিরক্ত না করে। কিন্তু এসব বাবুরা কোত্থেকে, কিভাবে আসে তা রিজিয়ার কৌতুহলী মনের কোনে অজানাই রয়ে গেল। সময় গড়িয়ে চলেছে। লেখাপড়া করতে তার খুব ইচছা। কিন্তু পুতুল খেলার সিডিউল টাইম মেনটেন করতে যেয়ে লেখাপড়ায় ইদানিং কিছুটা ভাটা পড়েছে। তার মধ্যে নানা বাড়িতে লম্বা ছুটিতে এসে এখন অনেক সংগী জুটেছে । এক মাসের হোম ওয়ার্ক সব পড়ে রয়েছে পেছনে। কিন্তু স্কুল বন্ধ করে তাকে এখানে আরো থাকতে হবে তিন/চার মাস। অতএব তার হাতে এখন মোটেই সময় নেই। শেলীর ছেলে পুতুলের সাথে আগামী শুক্কুর বারেই তার মেয়ে পুতুলের বিয়ে। অনেক কাজ । কতজনকে এখনো দাওয়াত করাই হয়ে ওঠেনি। মা তাকে এসব কাজে বাঁধা দেয় না। কিন্তু কিছুদিন পর পর বাবা আসেন। দিনের বেলায় কিছু বলেন না। কিন্তু রাত হলে বাবা কেবলই বই খাতা নিয়ে তাকে চাপ সৃষ্টি করে। কতবার বলেছে। নানু বাড়িতে কি কেউ লেখা পড়া করতে আসে ? এখানে এসে শুধু খেলতে হয়। বাবা একটা বোকা। কিছুই বোঝে না। আরে বাবা, স্কুল খুলুক। এ সব পড়া আমি একদিনেই মুখস্ত করে ফেলব। এ কথা বাবা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না।
হাসি আনন্দে কেটে গেল অনেক দিন। কুটি মেয়ে এখন ডাগর চোখে তার দিকে চেয়ে খিল খিল করে হাসে। পাঁচ মাস বয়স হল তার। এমন একটা আকর্ষণ তাকে গ্রাস করেছে যে অনেক লম্বা সময় স্কুলের লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় আর সময় পার করা যায় না বিধায় বাবা এবার জোর করেই নিয়ে গেলেন। তার কাছে মনে হয়েছে কুটি মেয়েকে ছেড়ে যাওয়া এখন তার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। লেখাপড়ার জঞ্জালকে প্রচন্ড ঘৃণা হতে লাগল । কিন্তু তার সে অনুযোগ কারো কাছেই গৃহীত হল না। এক করুণ বিদায় তাকে নিতেই হল।
***********
কুটি মেয়ের সাথে আর বেশীদিন খেলা হলনা রিজিয়ার। এত অল্প সময়ের মধ্যে তার খেলার পুতুলগুলোকে এভাবে তার জীবন থেকে বিদেয় দিয়ে নিজেকেই আজ অন্যরকম পুতুল হতে হবে তা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। এর জন্য যত রাগ এসে জড়ো হলো তারই প্রাণপ্রিয় কুটি মেয়ের উপর। তার অভিযোগ হল কুটি মেয়ে এত দ্রুত কেন সাত বছর বয়স পাড়ি দিয়ে ফেলেছে ? আর সেই অবকাশে তার বয়সটা বারতে এনে ফেলেছে। কত শত কাজ তার এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। রোজীর পুতুল রাজের সংগে তার রাণীর বিয়ের তারিখটা এখনো পড়েনি। অথচ হুকুম হয়েছে, পুতুল খেলার দিন তার শেষ হয়ে গেছে। এখন তাকেই শশুর বাড়ি যেতে হবে । কি এক যন্ত্রনা ! প্রাইমারী পাশ দিতে না দিতেই আই বুড়ি হয়ে উঠেছে সে ? আর সে বদনাম হবার আগে একটা ব্যাটা ছেলের বউ হয়ে চলে যেতে হবে? এত সব খেলার সাথী, সামগ্রী, এত এত সংসার ফেলে চলে যেতে হবে পরের বাড়ি ? কি এক বিশ্রি নিয়ম ! কৈশোরের প্রথম পটে শৈশবকে তখনও মন বিদেয় দিতে প্রস্তত হয়নি। অথচ এরই মধ্যে কঠোর হুকুম- তৈরী হয়ে নাও, শশুর বাড়ি যেতে হবে।
* মা, আমার আরো লেখা পড়া শিখতে ইচ্ছে করছে। এখনি একটা ব্যাটা ছেলের বউ হয়ে আমাকে কি শশুরবাড়ি যেতেই হবে ?
- হ্যা, মা, এটাই নিয়ম । এই যে আমাকে দেখ। এই আমাকেও একদিন সব ফেলে তোমার বাবার হাত ধরে চলে যেতে হলো তোমার দাদা বাড়িতে। আমি যদি সব ফেলে তোমার বাবার হাত ধরে চলে না যেতাম তাহলে তুমি তোমার এত আদরের বাবা পেতে কোথায়- বল ? মেয়ে হয়ে জন্মেছ । সব ফেলেই তোমাকে নতুন ঠিকানায় যেতে হবে। তুমি যদি পড়তে চাও তো বেশ, জামাইকে বলে দেব, সে যেন তোমাকে লেখাপড়া করার সুযোগ দেয় ।
অগত্যা সব ছেড়ে ছুড়ে পাহাড়ের মত এক দীর্ঘাঙ্গী, সুঠাম দেহী এক ভদ্রলোকের হাত ধরে রিজিয়াকে শশুর বাড়ি যেতেই হলো।
সময়ের চাকা বড় দ্রুতই ঘোরে। এত দ্রূত ঘুরলো যে কোন ফাঁকে এতটা বেলা গড়িয়ে গেল কেউ টেরই পেলনা। তখনকার দিনে গ্রামের এলিট শ্রেণীর লোকেরা নদীবিধৌত এলাকায় বেড়ানোর জন্য একধরণের নৌকা ব্যবহার করতেন। একে বলা হত গয়না নৌকা। এর আদি ইতিহাস মূলত জমিদারদের ব্যবহৃত বজরার কিছুটা অনুরূপ। জমিদারী প্রথা যখন চালু ছিল তখন কোন ঘাটে বজরা দেখা গেলেই সে এলাকার নিরীহ মানুষ ভয়ে আতংকে থাকতেন। এলাকার কন্যা সন্তানের বাবা মায়েরা তাদের কন্যা সন্তানকে লুকিয়ে রাখতেন। যিনি লুকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হতেন তাকে তার মেয়ের করুণ পরিণতি সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। এটা জমিদারদের হাতে তাদের নিয়মিত নিগৃহিত হবার নিয়তি হিসেবেই তারা মেনে নিতে বাধ্য হতেন। এখন সেই প্রথা অনতিদূরে বিলুপ্ত প্রায়। বজরা আর দেখা যায় না। তবে গ্রামের পরবর্তী কিছু শিক্ষত প্রজন্ম নিজেদেও আমিত্ব বা আভিজাত্মকে একটু আলাদা পরিচয়ে প্রকাশ করতে প্রয়োজনের খাতিওে এসব নৌকা ব্যবহার করতেন। এসব দেখে যাতে কেউ জমিদারদের ব্যবহৃত সবার দৃষ্টিতে ঘৃণার বস্ত বজরা না ভাবেন তাই এর সংস্কার করে নাম দেয়া হয়েছে গয়না নৌক। এটা দেখলে সাধারণ লোকজন বুঝতে পারত যে সে এলাকায় কোন অভিজাত ভদ্রলোক এসেছেন। যে ঘাটে এ নৌকা ভিড়ে সেখানে তাই অনেকেই ভিড় জমিয়ে আগন্তককে দেখে তৃপ্তি পান। গ্রামের সাধারণ অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী এসব শিক্ষিত ভদ্রলোকদের অতিমানব হিসেবে মূল্যায়ন করেন। ভক্তিতে মাথা নুইয়ে সম্মান প্রদর্শণ করেন। আগন্তক তাদের চেনা জানা হলে আনন্দে সবাই উৎসুক হয়ে পড়েন। কে কার আগে তাকে সেবা করবে তার প্রতিযোগীতা চলতে থাকে । সে এক মহা উৎসবের ব্যাপার। আগন্তকও নিজেকে বড় সৌভাগ্যবান মনে করেন। পুলকে-আহ্লাদে আপ্লুত হয়ে তিনিও সে আতিথেওতা গ্রহণ করে ধন্য হন। এই ধারাটাও অবশ্য এখন অনেকটা কমে যেতে বসেছে। তবে গয়না নৌকর কাছে কৌতুহলী ভীড় জমানোটা এখনো অব্যাহত আছে। পহরডাংগা গ্রামের মধুমতি তীরে এক দুপুরে এরকমই এক গয়না নৌকা এসে ভিড়লো। যথারীতি সবাই ভিড় করল। তবে আগন্তক নাজির আহমেদ চৌধুরীকে সবাই চিনতে পেরেছে। তাই দ্রুত কৌতুহলী ভিড় কিছুটা কমল। বড়রা তাকে সালাম জানিয়ে যে যার কাজে চলে গেলেন। ছোটরাও ডুব সাতারে তাদের খেলার শেষাংশে নিয়োজিত হয়ে পড়ল। কিন্তু মিসেস চৌধুরীর হাত ধরে লাল টুকটুকে শাড়ীতে মোড়ানো পুতুলের মত ১০/১১ বছরের একটা মেয়েকে নামতে দেখে নদীতে ডুব- সাঁতারে উন্মত্ত বাচ্চারা আবার ভিড় জমালো তাদের খেলা ফেলে।
- ধ্যাত, তোমাদের গ্রাম পঁচা, আর আসব না।
-- কেন, কি হয়েছে ?
- আমার শাড়ীতে কাঁদা লেগে গেছে।
-- তাতে কি হয়েছে। বাড়ি যেয়েই ধুয়ে দিব। তাই বলে পুরা গ্রামটাই পঁচা হয়ে গেল?
- হ্যা, পঁচাই তো ।
-- আচ্ছা, মা, আমাদের গ্রাম পঁচা। মানছি। তো চল, অভিমান করে এখানে দাড়িয়ে থাকলে চলবে ?
- আগে তুমি ওখান থেকে পানি এনে ধুইয়ে পরিস্কার করে দাও, তার পরে যাব।
--বেশ, চল ।
ডুব সাঁতারে খেলায় মত্ত আবিজান খেলা ফেলে থমকে গেল লাল টুকটুকে এ মেয়েটাকে দেখে। তার ঠোটে সে কি এক অস্ফুট হাসি ! কি দেখছে সে এ বালিকার দিকে এমন করে ? চৌধুরী কুটি মেয়ের হাত ধরে হাটছেন আর তার নানা অভিযোগ খন্ডন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে আসছেন। তিনি লক্ষ্য করলেন নদী তীর থেকেই মেয়েটা তার কুটি মেয়েকে কেমন অবাক হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে আর তাদের সাথে দৌড়াচ্ছে । এভাবে ছোট্ট মেয়ে আবিজান বেগম চৌধুরী বাড়ির দরজা পর্যন্ত যেয়ে কি যেন সে পেয়ে গেছে এমন আনন্দ নিয়ে দ্রুত দৌড়ে গেল তাদের বাড়িতে ।
খুব হাফিয়ে গেল সে ।
বাপজান, বাপজান ?
-কিরে হাপাচ্ছিস কেন ? কি হয়েছে ?
বলছি, দাড়াও।
- তা , একটু বসে দম নিয়ে নে। তোর তো দেখছি দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
পাওয়া গেছে বাপজান, পাওয়া গেছে , এবার ঠিক পাওয়া গেছে
- কি পাওয়া গেছে ? খলি হাফাচ্ছিস আর বলছিস পাওয়া গেছে , আরে কি পাওয়া গেছে, বলবি তো ?
ভাবী পাওয়া গেছে।
-ভাবী পাওয়া গেছে , মানে ?
আরে, শোনই না । তুমি ওই শেখের মেয়ের কথা আর ভুলেও বলনা, ওর নাকটা বোঁচা, চোখে সব সময় কেতর থাকে। নাকে সব সময় ময়লা লেগেই থাকে। ছি ! ঘেন্না ! থু ।
-দেখ, এত খোটা বাছা করলে তোর ভাইকে বিয়েই দেয়া যাবে না। আর তাছাড়া তোর ভাই যে একটা বড় অপদার্থ, তাকে মেয়ে দেয় কোন ভাল মানুষে ?
উহ! কে বলেছে আমার ভাই অপদার্থ ? আমার ভাইয়ের মত এরকম একজন সুদর্শন পুরুষ মানুষ তুমি দশ গেরামে খুজে পাবে ?
-থাক ,থাক, আর ফিরিস্তি দিতে হবেনা। আরে, রাম ছাগলের খালি চেহারা থাকলেই হয় রে ?
দেখ , ফের আমার ভাইকে যদি কিছু বল , তবে ----- থাক, এখন আর তোমার সাথে ঝগড়া করতে চাচ্ছিনা। শোন বাপজান, এসব কথা পরে হবে, তুমি এখন চৌধুরী বাড়িতে যাও।
কেন , ও বাড়ি যেতে হবে কেন ?
সেটাইতো বলছি তোমায় । ও বাড়িতেই আমার ভাবী এসেছে।
- ভাবী এসেছে , মানে ? কি বলতে চাচ্ছিস তুই। তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তোর ভাই বিয়ে করে বউ ওবাড়িতে রেখে এসেছে ? কি ব্যাপার বল তো ?
শোনা না, মনে হয় চৌধুরীর শশুর বাড়ির মেয়ে টেয়ে কেউ হবে। বাপজান, কি যে বলব তোমায়, এক্কেবারে পরী । পরীর চেয়েও সুন্দর। তুমি দেখলে পাগোল হয়ে যাবে।
- হোক না সে পরীর চেয়ে সুন্দর, তাই বলে আমি যাব চৌধুরীর বাড়ি ? তোর সাহস তো কম নয় । আমার মান সম্মান নেই ? যা , তুই তোর কাজে যা। পাকা বুড়ি একটা। তিন আংগুল মেয়ে । ভাইকে বিয়ে দিতে হবে বলে যেন পাকা গিন্নি সেজে বসে আছে। যা, নিজের কাজে যা । আজ স্কুলে যাস নি ? এই নিয়েই বুঝি গবেষনা হচ্ছে ?
বা, রে , আজ স্কুল বন্ধ না ?
- আচ্ছা, তোকে এসব নিয়ে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।
সে তুমি যাও বা না যাও। ঐ শেখের মেয়েকে ভাবী করতে দেব না, এই আমার শেষ কথা । তুমি যদি ওকে এ বাড়ির বউ করে আন, তাহলে আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। মুখটা একটা ঝামটা মেরে গাল ফুলিয়ে চলে গেল আবিজান।
বিধির কী শান ! আবিজানের মনের ইচ্ছার চুড়ান্ত পারিণতি ঘটেই গেল । রিজিয়াও পেয়ে গেল তার প্রানপ্রিয় কুটিমেয়েকে তার প্রতিবেশী হিসেবে । কিন্তু পুতুল খেলার সব সামগ্রি জলাঞ্জলী দিয়ে আরো একটা সূর্য ডুবে গেল জমিদার বাড়ির অস্তচলে ।