আমার অনেক ঋণ আছে

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম
  • ২০
  • 0
‘বাগনটা শুকিয়ে ছাই বর্ণ ধারণ করেছে। পড়ে আছে গোয়াল ঘরের পাশে। দেখেই বুঝতে পারলাম, এটির ব্যবহার এখন আর হয়না। অথচ চোখটা বন্ধ করলেই দেখতে পাই নিকুঞ্জ গাছি ‘বাগ’ এর দু’পাশে অনেকগুলো রসের হাড়ি নিয়ে হেলে দুলে হেটে আসছেন। হাটার তালে তালে বাগের মাঝ বরাবর সংযুক্ত আর একটা খণ্ডের সাথে ঘর্ষণের শব্দ ’ক---চ্ , ’ক---চ্ , ’ক---চ্ ! যেন এখনো কানে বাজছে। লেপের নীচে আরো কিছুক্ষণ শুয়ে আড়মোড়া কাটতাম আর এই শব্দটা শোনার জন্য কান খাড়া করে থাকতাম। কে এই শব্দ আগে শুনে বলতে পারবে ঃ ’নিকুঞ্জ কাকা এসে গেছে’- ভাই বোনদের মধ্যে তার এক প্রতিযোগীতা ছিল প্রতি সপ্তাহের দুটো দিনই।
সপ্তায় ২ দিন গাছ কেটে রস বের করা হত। এর বেশী কাটলে রস হয়না বা হলেও মিষ্টি হয় না, এমনই একটা শান্তনা আমাদের দেয়া হত। কিন্তু আসলে খেজুর গাছের শীর্ষাংশের যে অঞ্চল কেটে রস বের করা হয়, তার পরিসীমারও যে একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে- সেটা বোঝবার মত বয়স তখন আমাদের হয়নি। আমাদের উঠোনের চারপাশে ২০ থেকে ২২ টা খেজুর গাছ ছিল। এখন আর তার একটিও নেই। একটা চারাগাছও আর কেন ভবিষ্যতের জন্য কেউ রোপন করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করল না, তা বোঝা গেল ফুপাতো ভাই রুহুলের দীর্ঘশ্বাস জড়িত কথায়।
নিকুঞ্জ গাছি মইরে যাবার পর আমাগে গিরামে আর খেজুর গাছ কাটার কোন লোক পাওয়া গেলনা। বেশ কয়েকবছর আমাগে পাশের গিরামের আনু গাছি গাছ ঝুইড়ে (শুধু ছেটে দেয়ার কাজ) দিয়েছে। পেত্তেক গাছের জন্যি ১০ টাহা দিতি অইছে। ঝড়া পাতা দিয়ে চাচী, ফুপুরা পাটি বানাইছে আর চুলা জ্বালানুর কাজটা সারছে। কিন্তু খেজুর গাছের সেই মিঠে রস আর আমাগে কারো রুজিতে অলনা। আর সেই দিন নাইরে ভাই । আজ কয়েকবছর অইয়ে গেল আনু গাছিও আর গাছ ঝুড়তি আসে না। খবর দিছি কতবার ! সে কইছে, এসব কাজে এহন আর তার পুষায় না। কি আর করব, দেখতি দেখতি আগাছা অয়ে গেল সব। ছায়া পইড়ে তরি তরিতরকারীর ফলন সব নষ্ট অয়ে যাচ্ছেলো। রস না খালিতো বাঁচতি পারবানি, কিন্তু ভাত খাবার ব্যবস্থা না থাকলি বাঁচপানি কেমন কইরে ? তাই সব কাইটে-ছাইটে বেইচে দিছি ।
একটানে রুহুল কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, এহন আর গিরামে বেড়াতি আইসে কি করবা । আগের মত আনন্দ আর পাবা না । চারিদিক খালি অভাব আর অভাব। মানসির প্যাটে দানা পানি নাই। ধান পান মাইর গেইছে পর পর দুইবার। অভাবের তাড়নায় গিরামের মানুষ সব চইলে যাচ্ছে শহরে। কেউ রিক্সা চালাচ্ছে, কেউ মুইটে বচ্ছে। যাবে না তয় কি করবে, খাবে কি ? হায়রে ! সেই দিনগুলন কোহানে চইলে গেল !
বলতে বলতে তার কন্ঠ ভারী হয়ে এল। একটু দম স্বাভাবিক হয়ে এলে চোখ মুছে বলল,
তয় আমি কব, এর জন্যি তোমরা যারা গিরাম ফেলাইয়া শহরের মানুষ অইয়ে গেছ, গিরামের দিক ফিরেও চাওনা, তারাই দায়ী । ফসলের যহন ক্ষেতি অইয়ে যায়, তুমরা যদি সেই সুমায় আমাগে পাশে দাঁড়াইয়ে আবার সাহায্য কইরে ধান পান ফলানুর কাজ সওজ কইরে দিতা, তাইলি কি এই রহম মানুষ ভিটে ছাড়া অয় ? এহানের সব মানুষ যদি নিজেগে কাজ-কাম কইরা প্যাটে ভাতে বাঁচতি পারত, তালি আগের মত গিরামে সব সুখ পাইতে। আর তুমরা যে বিদেশী চাইলির ভাত খাও, অরে কি চাইল কয় ? ও তো রবার (রাবার) খাও। ওর মধ্যি কি রস-কস কিছু আছে ? হায়রে! সেই ঢেহি ছাটা আউশ, আমনের চালির ভাত, তার স্বাদ কোহানে পাবা ! কও ? যাও, সবাই কেবল শহরে যাবা। সব ভদ্দল্লোক অইয়েই থাহ। আরে বাইরে, দ্যাশের মানুষ কত লেহা পড়া শেখল, কত কিছু করল, ভাত কয়ডা গালে দেয়ার সুমায় খালি এঠুক চিন্তে অইরে দেহেনা, ভাতের দানা বিদ্যাশেরতে কিনে কয়দিন চলবা ? যে দ্যাশেরতে কিইনে খাচ্ছ, তাগে যদি এমুন কিছু অয়, যে তারা আর তোমাগে কাছে চাইল বেচতি পারবে না তহন কি খাবা ? এ জন্যি আমি কই কি, আমাগে দ্যাশের গিরামের মানুষ যদি বাঁচতি না পারে, তালি তোমরাও বাঁচতি পারবানা। এ কথাডা কইয়া রাখলাম ।
ওর কথা শুনে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। আর সৃষ্টির মো’জেজা, মহান র’ব্বুল আ’লামীনের সৃষ্ট এক দার্শনিককে অবাক বিষ্ময়ে চেয়ে দেখছি ।
বাবার অপছন্দ স্বত্তেও আমাদেরকে নিয়ে সপরিবারে শহরে তাঁর চাকরীস্থলেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। সেখানকার স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। তবে প্রতি বছর শীতে বার্ষিক পরীক্ষার পর একটা লম্ব্ াছুটিতে বাবা আমাদের সবাইকে গ্রামে রেখে আসতেন। তিনি নিজেও সময় পেলে গ্রামে ছুটে আসতেন। আমাদের বলতেন, যেখানেই থাক, যত বড়ই হও গ্রামটাকে কখনও ভুলে যাবে না। কেননা এ মাটিতে তোমাদের জন্ম। নদীর ভাংগনে জমি-জমা সব খুইয়ে অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের কারণে এই চাকরী করি। চাকরী মানে কি ? চাকরইতো, তাই না ? টাকার বিনিময়ে অন্যের গোলামী করছি। কিন্তু এটুকু জেনে রেখ, তোমরা যদি এখন থেকে খেয়াল রাখ, ঐ জমি আবার তোমাদের যুগে ফেরত পাবা। এটা কিভাবে হতে পারে, তা তোমরা বড় হলে বুঝতে পারবে। আবার আমাদের সব হবে । গ্রামকে অবহেলা করবানা। মানুষকে মানুষের মত বাঁচতে হলে গ্রামকেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু কেন জানি, সে জমি আর আমরা ফেরত পাইনি। এ বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা আমাদের ছিল না। আইনি জটিলতায় নাকি আমরা সে জমি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো এ বিষয়ে ডিটেল্স জানতে পারতাম। যাক ! এখন আর আফসোস করে কি হবে ।
ওর চিন্তার বোঝাটাকে সাময়িক হাল্কা করে দেবার জন্য আর নিজেকেও একটু সহজ করে নিতে শৈশব- কৈশোরের স্মৃতিচারণ শুরু করলাম।
রুহুল শৈশব কাল থেকেই একটু ইঁচড়ে পাকা টাইপের ছিল। বলতে গেলে অটোমেটিক্যালী কিছু অগ্রিম অভিজ্ঞতা যেন তার ভান্ডারে কোত্থেকে এসে উদয় হত। খেজুর গাছগুলো যখন ছোট ছিল। আমিও তখন ছোট। আমি ওর কাছেই শিখেছিলাম, পাটখড়ি দিয়ে কিভাবে গাছে পাতানো রসের হাড়ি থেকে রস টেনে খেতে হয়। নিজেদের গাছেরটা ছাড়াও অন্যদের গাছের রস তাদের অজান্তে চুরি করে খেতে নাকি আরো মজা। অন্য কারো জিনিষ তাকে না জানিয়ে খাওয়া আমার মোটেই ভাল লাগতোনা। কিন্তু কেউ এসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতো না। কোন ঝুট-ঝামেলাও হত না। তাই মনের আনন্দেই তার সহযোগী হতাম। বলতে গেলে পুরো শীতকাল জুড়ে এ ছিল আমাদের এক মহানন্দ। আমি একদিন ওকে বললাম, তুই যে বললি, পরের গাছেরটার স্বাদ আরো বেশী । কিন্তু আমিতো খেয়ে দেখি, আমাদের গাছের রসও যেরকম, এই গাছের রসও সেরকম। আলাদা কোন স্বাদতো বুঝলাম না।
ও হেসে বলল, এসব তুই বুঝবি না। তুই হলি অতিশয় ভদ্দল্লোক মানুষ। শহরে থাকিশ। কেবল শীতের ছুটিতে বাড়িতে আসিস। এসব তোর বোঝার দরকার নেই। পরের গাছের রস চুরি করে খাওয়ার সে স্বাদের কথা মনে করে দু’জনে প্রাণ ভরে হাসলাম। সত্যি ,কী এক মনোস্তাস্তিক স্বাদ !
কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে আমি খেয়াল করলাম। শৈশব কালে ও আমাকে তুই তাকারী করে কথা বলত। এখন আমাকে তুমি করে বলছে। আমি এতে আপত্তি জানালে ও বলল,
থাক না, তোমরা কত বড় শিক্ষিত মানুষ!
আমি বললাম, তাহলে আমি কিন্তু খুব কষ্ট পাব।
এর পর ও একবার তুই একবার তুমি -এভাবেই কথা বলতে লাগল।
---------
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে গেট খুলে দিখে সাদা ধবধবে দাড়িওয়ালা একজন বৃদ্ধ। দেখতে একেবারে আমার দাদাজানের মত। বললাম,
-কে ?
চিনতি পারলা না তো ? আমি জানতাম তুমি চিনবানানে। গিরামে তো আগে যাইতে। এহনতো আর তোমরা যাবানা। তা, আমাগে আর চিনবা কেমন কইরে। তোমাগে কাছেই অচেনা অইয়ে যাচ্ছি। আর তোমাগে আওলাদ-বইনেদ তো চিনা দূরি থাক, আমাগে দেখলি ভাববে, জংগলের ভুত পেতনি ।
মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা হয়। তাই কণ্ঠস্বর শুনেই আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। রুহুল ? তুই ? এরকম বুড়ো হয়ে গেছিস ?
প্রায় দশ বছর পর রুহুল শীতের পিঠা , শালী ধানের মুড়ি আর খৈ নিয়ে এসেছে। তাকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম ! একই সাথে আমার বুকের ভেতরে যেন একটা ঘন্টা বেজে উঠল। সময় বেশী নাই কিন্তু !
ঠিকই কইছ ভাই ।
-আবার তুমি ? তাহলে কিন্তু আমি কোন কথাই বলব না।
আচ্ছা, ঠিক আছে।
-তোর এ অভিযোগের আমি কোন জবাব দেব না। মাথা পেতে নিলাম । সত্যি , নিজের কাছেই নিজের লজ্জা লাগে।
-কেন এত কষ্ট করে এসব করেছিস ? এতদূরে বয়ে এনিেছস ? আর তা ছাড়া খেজুরের রস পেলি কোথায় ?
একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল, কিছু চারা লাগাইছিলাম। বেশ ডাংগর অইছে। এ বছর পেত্থম কাটছি। নিজিই গাছ কাটা শিইখে ফেলাইছি। তোগে কথা মনে অয়। ভাবি, আর কি কোনদিন আমাগে বাই বেরাদাররা , তাগে ছাওয়াল পাওয়ালরা খেজুর গাছের রস খাতি পারবে না ? এইডা চিন্তে কইরে আমি কতদিন , রাত চোহির পানিতি বুক ভাসাইছি! তো ভাবীরে কলাম , আবার খেজুর গাছের বাগান বানাবো। সেও খুব সাহায্য অরছে আমারে।
আমি চোখ বন্ধ করে বসে পড়লাম। গরম পানিতে চোখের পাতা ভারী হয়ে গেল। আবেগে এতটাই উচ্ছসিত হয়ে পড়লাম যে, কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমি নির্বাক হয়ে বসে আছি। রুহুল বলছে,
তোরাতো শহরে থাকতি থাকতি কলের মেশিন অইয়ে গেছিস। এইয়ের যে কি স্বাদ ! তাতো এহন তোমরা না খাতি খাতি ভুলেই গেছ। আমরা যহন এগুলা গালে দিতি যাই, তহন তো তোমাগে মুখগুলান ভাইসে ওঠে চোহের সামনে। প্যাটে ঢুকতি চায় না। সেই যে গেদাকালে বাড়ির বাইর অইছ, ক্যান, গেরাম দ্যাশে কি তোমাগে যাতি মন চায় না ?
আমি আবার খেয়াল করলাম, সে একবার তুই, আর একবার তুমি মিশ্রিত কথা বলছে। আমি আর কিছু বললাম না ওকে।
-মন তো কত কিছুই চায়রে ভাই, কিন্তু শহরের এ চাকরী জীবন ! এমন বাধনে আমাদের বেঁধে ফেলেছে যে, স্বাদ থাকলে কি আর সাধ্যে কুলায় ? তোদের কথা সব সময় মনে করি। চাচা, চাচী একে একে সবাই চলে গেল। শেষে ছোট চাচাও বিদেয় নিয়ে বাড়িতো একেবারে শূন্য করে দিয়ে গেল। এখন আর ইচ্ছে করে না যেতে। আর তা ছাড়া এখন রাস্তাঘাটে যাতায়াতের যে অবস্থা, চিন্তা করতে গেলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। তোকে তো বলেছি, এত কষ্ট করে এগুলো এত শত শত মাইল দূরে বয়ে আনার দরকার নেই। সময় সুযোগ পেলে আমি একবার বাচ্চাদের নিয়ে বেড়ায়ে আসব।
এই কইয়ে কইয়ে তো এত বছর পার করলা ! আমাগে কথা তো মনেও করলা না। বাচ্চাগুলান পর অইয়ে যাচ্ছে। মনডা তোমাগে পাথর অইয়ে গেছে। কিন্ত তোমাগে জন্যি যে আমাগে মন পুইড়ে ছাই অইয়ে যায়। এই মনডারে তো বুঝাতি পারি না, বাই ।
আবেগে উচ্ছসিত হয়ে উঠল! আমিও নির্জিব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আছি ওর মুখের দিকে চেয়ে ।
ছোট ছেলেটা অপরিচিত আগন্তককে দেখে ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
রুহুল ওকে দেখে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
ও কিডা ? তোর ছাওয়াল না ?
-হ্যা, ছোট টা।
দেখতি দেখতি কত ডাংগর অইছে। বড়ডা কোহানে ?
-স্কুলে গেছে। ওর ছুটি হতে দেরী হবে।
এই ভাষাগুলোর সাথে ছেলেরা পরিচিত নয়। তাই অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে।
আমার কানে কানে বলছে,
আব্বু, তুমি এ বুড়ো মানুষটাকে তুই, তুই করে বলছ কেন ? বড়দের সাথে কি কেউ এভাবে কথা বলে ? আর উনি কি ভাষায় কথা বলছেন ? ছাওয়াল মানে কি ?
এক সংগে অনেকগুলো প্রশ্ন । আমি হেসে বললাম,
আচ্ছা, বলছি একটা একটা করে । আগে এস, পরিচয় করিয়ে দেই। উনি হচ্ছেন তোমার একজন চাচা। আমার ফুপাতো ভাই। মানে, তোমার ফুপুর ছেলে যেমন তোমার ভাই হয়, তেমনি উনিও আমার সে রকম ভাই। তোমার চাচা হয়, সালাম কর।
-আসসালামুআ’লাইকুম।
ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ । মাশআল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ । কত ডাংগর অইয়ে গেছ। কোন কিলাশে পড়তিছ বাপ ?
-কিলাশ ? মানে ক্লাস ?
ভাষা বিড়ম্বনার জটিলতায় পড়ে দ্রুত বলল, আমি ক্লাস টুতে পড়ি। বলেই দৌড়ে পালাতে উদ্ধত হলে আমি ওকে থামিয়ে বললাম,
আমার কানে কানে যা বলছিলে, তার উত্তর শুনবে না?
একটু ইতস্ততবোধ করছে সে।
না, না, লজ্জা পাবার কিছু নেই। তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু ওর চুল দাড়ি সব সাদা হয়ে গেছে বলে ওকে বুড়ো দেখাচ্ছে । আসলে ও আর আমি প্রায় সমবয়সী। এবার বুঝেছ ? আর ছাওয়াল মানে হল ছেলে। গ্রামের মানুষ খুব সহজ সরল ভাষায় কথা বলেন। মাটির গন্ধ আছে এসব কথায়। তোমাকে আমি পরে সব বুঝিয়ে দেব।
কিন্তু অবাক হয়ে সে আমার দিকে একবার আর ওর মনের কল্পনারও অতীত আগন্তক এ চাচার দিকে আবার ভাল করে চেয়ে দেখে নিরবে ওর মনে জাগা প্রশ্নের অমীমাংসিত সমাধান নিয়ে আপাতত কেটে পড়ল।
এতক্ষনে ওর মা এলেন। অনেক দিন আগে একবার দেখেছিলেন তিনি। তাই ঠিক মনে করতে পারছেন না ওর চেহারাটা। সেই সাথে আমার চেয়ে ওকে বৃদ্ধ দেখে মাথার কাপড়টা আরো খানিকটা টেনে গুটি শুটি মেরে আমার পাশে দাঁড়ালেন।
রুহুলকে চিনতে পাচ্ছ না ?
না, মানে । সেই রুহুল ? কিন্তু যেভাবে ওর চুল দাড়ি সাদা হয়ে গেছে। আমিতো ভেবেছি--- । তা ভাই, এত অল্প বয়সে এরকম বুড়ো হলে কি করে ?
-অল্প আর কৈ ? বয়স তো কম অল না ? তোমরা তো শহরে থাহ, খাটা খাটনি নাই। আমাগে তো খাটতি খাটতি শরীরের এই অবস্তা ।
দেখ, কী পাগলামী নাই সে করেছে।
এত কষ্ট করে এসব টানাটানির কোন মানে আছে ? আচ্ছা, ভাই, কথা পরে হবে, আগে বাথরুমে যাও। গোসল করে ফ্রেস হয়ে এস, আমি ভাত বাড়ছি। খুব তো ভাইয়ের সাথে যে গল্প জুড়ে বসেছ, সেই কোন কাক ডাকা ভোরে রওনা করেছে, ওকে যে আগে খেতে দিতে হবে, সে খেয়াল আছে ? সাধারণত ঘরের বউয়েরা নিজের দেবর ননদকেই তেমন একটা গুরুত্ব দেয়না। সেখানে ফুপাতো ভাই এর প্রতি ওর মমত্ব আমাকে মুগ্ধ করল।
এর পর থেকে শীত এলেই ছেলেরা বায়না করে,
আব্বু, খেজুর গাছের রস দিয়ে পিঠা কি শহরে বানানো যায় না ?
-তুমি কি শহরে কোন খেজুর গাছ দেখেছ ?
তা দেখিনি। কিন্তু এগুলো কি শহরে হয় না ? কেবল গ্রামেই হয় ?
-শহরে হবে না কেন ? এসব গাছ শহরে রোপন করলেই হয় । আমরা তো কেউ সে কাজটা করছি না । আর তা ছাড়া এখানে মানুষ, বসতবাড়ি করে সব যায়গা ভরাট করে ফেলেছে। এসব গাছ লাগাতে অনেক খোলা যায়গা লাগে। ইচ্ছে থাকলেও কারো পক্ষে শহরে এসব গাছ রোপন করা সম্ভব হয় না। মানুষ হিসেবে এ জমিনে জন্ম নিয়েছি। এ মাটির কাছে আমরা অনেক ঋণী। এ ঋণ কোনদিন শোধ হবার নয়। তাই এস, আজ থেকে আমরা শপথ করি, এসব নেয়ামত সমৃদ্ধ গাছপালা আমরা রোপন করবই, তা সে যেখানেই হোক না কেন ।
ছেলেটা আলতোভাবে মাথা কাত করে অবুঝ সম্মতি জানিয়ে দ্রত পালিয়ে গেল আমার সম্মুখ থেকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ সুন্দর বাস্তবতা ঘেরা গল্প। খুলনা অঞ্চলের ভাষা। পরিচিত তাই। অভিনন্দন।
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
আনিসুর রহমান মানিক অনেক ভালো লাগলো /
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১২
মিজানুর রহমান রানা মানুষ হিসেবে এ জমিনে জন্ম নিয়েছি। এ মাটির কাছে আমরা অনেক ঋণী। এ ঋণ কোনদিন শোধ হবার নয়। তাই এস, আজ থেকে আমরা শপথ করি, এসব নেয়ামত সমৃদ্ধ গাছপালা আমরা রোপন করবই, তা সে যেখানেই হোক না কেন ।----------শুভকামনা রইলো। ------
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১২
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম সেলিনা ইসলামের মূল্যবান মন্তব্য শুধু আমাকেই নয় , যারা উদ্ভিদ জগতের এরকম মূল্যবান নেয়ামতকে ভালবাসেন তাদের সবার জন্য অনু্প্রেরণা যোগাবে ।
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১২
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম সেলিনা ইসলাম আপনার অনুভূতি ভাল লাগল।
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১২
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম সেলিনা ইসলাম আপনার অনুভূতি ভাল লাগল।
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১২
সেলিনা ইসলাম খুব ভাল লাগল গল্পটা আঞ্চলিক ভাষাটা গল্পটাকে জীবন্ত করেছে নিঃসন্দেহে - শহরের অনেক বাচ্চারা আছে খেজুর গাছ বলতে আরব দেশের গাছ বোঝে । আমাদের দেশেও যে গাছটি আছে এবং বিলুপ্তির পথে তা অনেকেই বুঝেও বোঝে না ! সবাই শুধু গাছ লাগাতে বললে মেহগনি আর কাঁঠাল , আম ইত্যাদি চারা লাগায় যা দিয়ে ফার্নিচার করা যাবে ! " মানুষ হিসেবে এ জমিনে জন্ম নিয়েছি। এ মাটির কাছে আমরা অনেক ঋণী। এ ঋণ কোনদিন শোধ হবার নয়। তাই এস, আজ থেকে আমরা শপথ করি, এসব নেয়ামত সমৃদ্ধ গাছপালা আমরা রোপন করবই, তা সে যেখানেই হোক না কেন । "---বেশ সুন্দর কথা শুভেচ্ছা !
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১২
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম সকল মন্তব্যকারী ভাইদের আবারো ছালাম । রোদের ছায়া বার্ডফ্লু জাতীয় অসুখ এর কথা বলেছেন, আমার মনে হয় অাধুনিক যুগে আমরা এর প্রতিকার করতে নেট ববহার করতে পারি। এটা কঠিণ কাজ নয়। বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গাছের চাষ করলে এর স্বস্থ্যসম্মত উপায় বের করা মোটেই কঠিণ বিষয় নয়। দরকার পৃষ্ঠপোষকতা । সবাইকে ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১২
sakil অসাধারন একটা গল্প শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ ভাল লেগেছে ।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

২৯ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪