ফিরে দেখা

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১১)

Israt
  • ২০
  • 0
  • ৭৩
স্যার, কিছু খেয়ে নিলে হতোনা? ড্রাইভারের কথায় চিন্তায় ছেদ পড়ে ইমতিয়াজ হাসানের। বিশ বছর পর দেশে ফিরে নিজের বাড়িতে যাচ্ছেন তিনি। না, ভুল বলা হলো, নিজের বাড়ি নিশ্চই বিলীন হয়ে গেছে এতদিনে। দেশে বিশ বছর পর ফিরলেও নিজের এলাকায় যাচ্ছেন '৭২ এর পর এই প্রথম। দেশ স্বাধীন হবার পর সেই যে ঢাকা এলেন তার পর আর ফেরা হয়নি , ইচ্ছে হলেও সময় হয়নি, আর দুটোই যখন হয়েছে তখন পুরনো স্মৃতিগুলোর মুখোমুখি হবার সাহস হয়নি। আমেরিকায় আছেন প্রায় ত্রিশ বছর। এর মাঝে একবার দেশে ফিরেছেন বটে কিন্তু নিজের আর যাওয়া হয়নি। এবার আসার পর পত্রিকায় যুদ্ধাপরাধী নিয়ে খবর দেখে খুব মনে পড়তে লাগলো দেশের বাড়ির কথা, যুদ্ধের দিনগুলোর কথা। এক বন্ধুর গাড়ি ধার করে রওনা হয়ে গেলেন। রওয়ানা দেবার সময় বন্ধু বলছিল আমার ড্রাইভারটা কিন্তু খুব পেটুক, দেখবি পাঁচ মিনিট পর পরই খেতে চাইবে। তা কথাটা মিথ্যে নয়- পাঁচ মিনিট না হলেও আধ ঘন্টা পর পর সে খেতে চাচ্ছে। ভাগ্যিস আসার সময় বন্ধুটি কিছু খাবার দিয়ে দিয়েছিল, নইলে রাস্তা ঘাটে খবর খুঁজতে হলে তো খবরই ছিল।
এখন দুপুর ১টা। লোকটার এবার নাস্তায় চলবে বলে মনে হয় না, লাঞ্চই করাতে হবে।হোটেল একটা কাছেই ছিল, দুজনে লাঞ্চ করতে বসলেন। লোকটা গোগ্রাসে খাচ্ছে। আনমনে হাসলেন ইমতিয়াজ। এক সময় তিনিও ঠিক এইভাবেই খেতেন আর লতা খুব রাগ করত দেখে। "অমন হা-ভাতের মত খাচ্ছ কেন? দেখলে মনে হয় যেন কতদিন খাও না!" মানুষ কত বদলে যায়! এখন ইমতিয়াজের খাওয়া দেখলে লতা কী বলতো কে জানে!
লতার মা খুব ভালো রাঁধতেন। একই পাড়ায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে প্রায়ই আশা যাওয়া হত। লতারা ছিল দু' বোন। লতাদের বাড়ির সামনে ছেলেদের আনাগোনা লেগেই থাকতো। কিন্তু প্রবেশাধিকারটা ইমতিয়াজই কিভাবে যেন আদায় করে নিয়েছিল। ছেলেদের ঈর্ষার খোঁচাও তাই তার নিয়মিত পাওনা ছিল। লতার সাথে সরাসরি প্রেম-ভালবাসার কথা তার কোনদিনই হয়নি, সেসময় এত খোলাখুলি বলা সম্ভব ও ছিল না। দু’জনের একা দেখা-সাক্ষাতও বা কই হত! কিন্তু তারপর ও দুজনের মনের কথা দুজনেরই জানা হয়ে গিয়েছিল.........
"খাওয়া শেষ স্যার, চলেন রওনা দেই"
“হ্যাঁ,চলো যাওয়া যাক।”
আরও এক ঘন্টা পর ইমতিয়াজরা পৌছুলেন। পুরনোরা প্রায় কেউ নেই। এক ফুপু ছিলেন, তিনি ও মারা গেছেন দশ বছর হয়। তার বাড়িতে কি যাওয়া ঠিক হবে? ফুপাতো ভাই-বোনেরা কে কে আছে কে জানে! কারো বাসায় গিয়ে অস্বস্তিতে পড়ার চাইতে ইমতিয়াজ এমনিই হেঁটে বেড়ানো ভালো বলে ঠিক করলেন। তাঁদের বাড়িটা বিদেশ যাবার আগে বিক্রি করে গিয়েছিলেন। এখন সেখানে আর আশ—পাশের কয়েকটা জায়গা মিলে শপিং সেন্টার উঠেছে ।শহরটা বেশ বদলে গেছে।
“ভাইজান কি বিদেশ থেইকা আসলেন?” দাড়িওয়ালা এক প্রৌঢ় হাসিমুখে দাঁড়িয়ে।
“হ্যাঁ, তবে আমি এই পাড়ারই ছেলে।”
" অ, তা কোন বাড়ি?"
“বাড়ি তো এখন নেই, চিনতে পারার কথা না। এইখানেই ছিল - মজুমদার বাড়ি।"
“আচ্ছা তা উঠছেন কই?"
“কোথাও না। আমি বিকেল পয ঘোরাঘুরি করে ঢাকয় চলে যাব।”
“ও তো আসেন না আমার দোকান থেইকা এক কাপ চা খাইয়া যান, একটু গল্প-গুজবও করি। অনেকক্ষণ ধইরা দেখতাছি এদিক-উদিক উদাস হইয়া ঘুইরা বেরাইতেছেন। আসেন ভাই, আসেন।”
লোকটা অনেক গল্প এ শোনালো। তার নাম রহমত মৃধা।পরিচিত অনেকের কথা জানতে পারলেন ইমতিয়াজ। ফুপু মারা যাবার পর তার ছেলেরা ঢাকায় চলে যায়। মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন ইমতিয়াজ- তাদেরও আর ফেরা হবেনা। লতাদের বাড়িটা দেখা যাচ্ছে এখান থেকে-ছোট সুন্দর ১টা দোতলা বাড়ি সেখানে।
“এই বাড়িটার কি হয়েছিল বলুন তো?” ইমতিয়াজ জিগ্যেস করলেন । “আর এ এই বাড়ি তো শুনছি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই দখল হইয়া যায়, বাড়ির মালিকরা সব মইরা গেছিলো কিনা। ”
ইমতিয়াজ তখন সবে ইন্টারমিডিয়েট দিয়েছেন। লতা তখন কলেজে ভর্তি হবে। তখনই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। রক্ত তখন টগবগ করে ফুটছে ইমতিয়াজের। মার নিষেধ শুনলেন না, বাবার চোখ রাঙ্গানিতেও ভয় পেলেন না। ইমতিয়াজ আর তার বড় ভাই চলে গেলেন যুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে তিনি বাড়ি ফিরে আসলেও ভাই আর ফেরেননি। মা-বাবা গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। শহরে ফিরে এসে দেখেন তাদের বাড়িটা একেবারে লণ্ড-ভণ্ড হয়ে আছে। এসেই লাতাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন ইমতিয়াজ। ওরা কেউ ছিল না। লতার বাবা জেদ করে এখানেই পরে ছিলেন- শেষ রক্ষা আর হলনা। স্বামী-স্ত্রী কে একসাথেই মেরে ফেলে হানাদাররা। ইমতিয়াজ ভাসা ভাসা ভাবে শুনেছিলেন লতারা দু'বোন পালাতে পারছিল। কিন্তু তারা ফিরে আসেনি আর - ইমতিয়াজ অনেক চেষ্টা করেও আর খুঁজে পাননি তাদের।
" তা ভাইজান রাত্রে থাইকা যান?"
" হুঁ, না আমি ঢাকায় চলে যাব। আপনার বিলটা ...."
"না, না ভাইজান কি যে বলেন, আপনি আমাদের মেহমান, এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আপনার সাথে যে এতক্ষণ কথা বলতে পারলাম , তাতেই আমার মন ভরে গেছে। টাকার কথা বলে মনে কষ্ট দিয়েন না"
ইমতিয়াজ আর জুরাজুরি করলেন না ।
"তাহলে আসি ভাই, আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো"
মোবাইলে রিং হচ্ছে-ডোরা ফোন করেছে, তার আমেরিকান স্ত্রী। ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করছেনা ইমতিয়াজের। ভালই ছিলেন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে। আজ এত বছর পর এখানে এসে পুরনো জখমগুলো তাজা করার কোনো মানে ছিল!
গাড়িতে গিয়ে উঠলেন ইমতিয়াজ। কত স্মৃতি এই জায়গা ঘিরে, বন্ধুত্ব, প্রেম, পরিবার-আজ কোথায় সবাই! যুদ্ধে দেশ পেয়েছেন কিন্তু হারিয়েছেন আর বাকি সব। শেষ দেখার দিন লতা বলেছিল, “হেরে বাড়ি ফিরবে না", তিনি তার কথা রেখেছেন কিন্তু লতা .......লতা তার জন্য অপেক্ষা করেনি। সন্ধ্যা প্রায় হয় হয়-এফএম এ গান বাজছে ...."তবে কি যুদ্ধে গেছি তোমায় হারাতে...."।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Osprissho Apu onek shundor hoyeche. Noboborsho shonkhayto kichu dilena. Ma shonkhay 2mar lekha porar asha korchi.
সূর্য গল্পটা ভয়ে ভয়ে পড়লাম। আবার "ক্যামেরা"র মতো শেষে গিয়ে না দেখতে হয় এইটা আমার লেখানা। হা হা হা হা । লেখাটা ভালো লাগলো
Farzana Shams খুব সুন্দর!
Farzana Shams খুব সুন্দর!
Farzana Shams খুব সুন্দর!
মাহমুদা rahman ভাল লেগেছে ভোট দিয়েছি........ভাল থাকবেন
Israt লেখাটি পড়ার জন্য এবং কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ|

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪