ক্যামেরা

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১১)

Israt
  • ২৬
  • 0
  • ৭২
২৭ মে, ১৯৭১
সন্ধ্যা হয়নি এখনো। উঠানে মেলে দেয়া কাপড়গুলো নিয়ে ঘরে ঢুকলো শিউলী। ইলেক্ট্রিসিটি নেই অনেকদিন ধরেই, তাই ঘরে একটা হারিকেন জ্বালানো। সেটার হলদেটে আলোয় সাজ্জাদকে দেখলো শিউলী- রেডিওর নব ঘুরিয়ে কোনো একটা চ্যানেল ধরার চেষ্টা করছে।
- “চা খাবেন?” জিজ্ঞেস করলো শিউলী।

তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ছ’মাস হলো, কিন্তু সাজ্জাদকে “আপনি” করেই ডাকে শিউলী। ঘাড় কাত করে সম্মতি দিল সাজ্জাদ।

চা নিয়ে ঘরে ঢুকে শিউলী দেখলো সাজ্জাদ খুব মন দিয়ে রেডিওতে চরমপত্র শুনছে। গত পরশু থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চালু হয়েছে প্রোগ্রামটা।
- “এই যে চা।” হাত বাড়িয়ে চা নিলো সাজ্জাদ।

মে মাসের প্রচন্ড গরম ভ্যাপসা গরমে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। একটা পাখা এনে তাকে বাতাস করতে বসলো শিউলী। “কী করছো! লাগবেনা থাক” থামিয়ে দিল তাকে সাজ্জাদ। মন একটু খারাপই হলো শিউলীর, মানুষটার জন্য সবসময়ই কিছু না কিছু করতে ইচ্ছা করে। রেডিওতে কান দিলো, আখতারুজ্জামান মুকুলের ভারি স্বর ভেসে আসছে, আঞ্চলিক টানে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব বর্ণনা করে যাচ্ছেন, মিলিটারীদের কটাক্ষ করছেন সমানে। সাজ্জাদের দিকে তাকালো সে, তার সেলুলয়েড চশমার মোটা কাঁচের মাঝ দিয়ে দেখা যাচ্ছে উত্তেজনায় চোখ চকচক করছে। আপনমনে হাসলো সে, চুপচাপ মানুষটা মাঝে মাঝে যখন চঞ্চল হয়ে যায়, দেখতে ভালই লাগে। চেয়ে থাকল সে।
- “আচ্ছা শিউলী, তোমার কাছে স্বাধীনতার মানে কি?” হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো সাজ্জাদ।
আচমকা এমন প্রশ্নে অপ্রতিভ হয়ে যায় শিউলী। “আমি কেমন করে বলব…” থেমে যায় সে। জবাবের অপেক্ষায় তার মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে সাজ্জাদ।

- “তোমার কাছে স্বাধীনতার কোন মানে নেই?” নিরাশ হয়ে তার দিকে তাকায় সে।

লজ্জা পেয়ে যায় সে। “এটা নিয়ে তো বড় বড় মানুষেরা ভাবছেন, আমি কি করে বলি…” একটা নিঃশ্বাস নেয় সে। একটু কুন্ঠিত হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো- “আপনার কাছে স্বাধীনতার মানে কি?”

- “আমার কাছে?” একটু ভেবে নেয় সাজ্জাদ “মনে হয় সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে পারাটা”।
- “তাই বুঝি?” হেসে ফেললো শিউলী।
- “হাসছো কেন? আগুন, ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তুপের ছবি তোলার মধ্যে ভালো লাগার কিছু নেই। কিন্তু আমাকে রিপোর্টিং এর জন্য এগুলোই তুলতে হয়। দেশ স্বাধীন হলে নিশ্চয়ই আমাকে এসব ছবি তুলতে হবেনা, আমি ইচ্ছামতো ছবি তুলে বেড়াতে পারব।” সাজ্জাদের চোখেমুখে স্বপ্ন নেমে আসে।

তাই তো! ব্যাপারটা আগে কখনো এভাবে ভেবে দেখেনি শিউলী। সাজ্জাদ বলে চলে-“আর স্বাধীনতা কখনোই বড় মানুষদের ব্যাপার না শিউলী। তোমার, আমার সবার জন্য স্বাধীনতা। ভেবে দেখো, যুদ্ধ কারা চালিয়ে যাচ্ছে? সবাই তোমার আর আমার মতই সাধারণ।” টেবিলের উপর থেকে তার ক্যামেরাটা তুলে নিয়ে শার্টের কোণা দিয়ে লেন্স পরিষ্কারে মন দিলো সে। ২৫ মার্চ রাতে হানাদারেরা দৈনিক ইত্তেফাকের অফিস পুড়িয়ে দিয়েছিল। গত একুশ তারিখ থেকে সেটা আবার চালু হয়েছে। তাই ক্যামেরাটার ব্যস্ত দিন আবার ফিরে এসেছে।

দেশ স্বাধীন হলে আসলেই খুব ভালো একটা ব্যাপার হয়, আনমনে ভাবতে লাগলো শিউলী। উঠান থেকে ভেসে আসা হাস্নাহেনার গন্ধের সাথে আর বারুদের গন্ধ মেশানো থাকবেনা, শেষরাতে টিনের চালে শিলা পড়ার শব্দকে মিলিটারীদের বুটের আওয়াজ ভেবে ভুল করে ভয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে হবেনা, ইচ্ছামতন ছাদে গিয়ে খোলা হাওয়ায় চুল উড়ানো যাবে, তাদের পাড়ার দুষ্টু ছেলেগুলো আবার কাদায় গড়াগড়ি দিয়ে ফুটবল খেলবে…হঠাৎ ছেলেমানুষের মত খুশি হয়ে উঠে শিউলী। মনে হচ্ছে যেন সে স্বাধীনতার মানেটা ধরতে পেরেছে।

-“আপনার কী মনে হয়? আমরা দেশকে স্বাধীন করতে পারব?” শিউলী বললো।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে সাজ্জাদ।
-“মনে তো হয়” একটু দ্বিধাভরে উত্তর দিলো।

চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থাকে শিউলী। তারপর আঁচল বেঁধে উঠে দাঁড়ায়, চুলায় ভাত চড়াতে হবে। টেবিলের উপর থেকে ক্যামেরাটা অপলক চেয়ে থাকে।


১১ ই জুন, ১৯৭১

১.

গলায় ক্যামেরাটা ঝুলিয়ে সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লো সাজ্জাদ। উদ্দেশ্য ইত্তেফাক অফিস। পেশায় সে একজন ফটোগ্রাফার। শুরুতে ফটোগ্রাফিটা তার কাছে একটা নেশার মতই ছিল কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রাম অন্য অনেকজনের মতই তার জীবনের অনেক ছক ওলটপালট করে দিয়েছে।

অফিসে ঢোকার মুখেই সহকর্মী শাহেদের সাথে দেখা। চেহারায় রাজ্যের বিরক্তি। “খবর শুনেছো?” জিজ্ঞেস করলো সে।

-“কি হয়েছে?”
-“কাল রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে মুক্তিবাহিনী হামলা চালিয়েছে। ছয়টার মত গ্রেনেড চার্জ করেছে।”
-“কোত্থেকে?” সাজ্জাদ তাজ্জব হয়ে গেল।
-“একটা গাড়ি থেকে। গাড়িটা হাইজ্যাক করে আনা হয়েছিল।”
-“কিন্তু আমি তো যতদূর জানি গতকাল রাতে সেখানে ডিপ্লোম্যাটদের একটা মিটিং হবার কথা”
-“ছিলোই তো! ভন্ডুল হয়ে গেছে।”
-“ভালোই তো হয়েছে। ইয়াহিয়া খান চাচ্ছিলো বাইরের দেশগুলোকে দেখাতে যে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এখন তারা গিয়ে রিপোর্ট করুক বাংলাদেশের কি অবস্থা।” একটু থেমে শাহেদকে দেখতে লাগলো সাজ্জাদ।
-“তুমি মনে হচ্ছে খুব একটা খুশি নও।” সাজ্জাদ বললো।
-“এটা খুশি হওয়ার মত কোন ঘটনা না। কেউ একজ়ন মারাও যেতে পারতো। এটাতো কোন খেলা না।” শাহেদ রেগে উঠে।
-“আমার তা মনে হয়না।” শান্তভাবে জবাব দিল সাজ্জাদ। “মানুষ মারার জন্য গ্রেনেড চার্জ করার চেয়ে মানুষ বাঁচিয়ে গ্রেনেড চার্জ় করা অনেক কঠিন। আর এটার দরকার ছিল। বাইরের বিশ্বের সবার জানা উচিত এখানে কি হচ্ছে।”

শাহেদ বরাবরই পাকিস্তানপন্থি, তার পুরো পরিবার মুসলিম লীগ সমর্থক। একটা গুজব ও শোনা যায় যে তাদের পরিবারে অনেক পাকিস্তানী মিলিটারী অফিসারদের যাতায়াত আছে। তাই তার কাছ থেকে এমন প্রতিক্রিয়ায় সাজ্জাদ মোটেই অবাক হলোনা।

-“তোমাকে একটু কেরানীগঞ্জ যেতে হবে এখন। সেখান থেকে হাজারীবাগ। রিপোর্টিং এর কাজে।” শাহেদ বললো।
-“কি হয়েছে সেখানে?”
-“তেমন কিছু না” একটু ইতস্তত করে শাহেদ বললো, “কয়েকটা গ্রামে আগুন ধরে গেছে।”
-“মিলিটারীরা হামলা চালিয়েছে বলতে মুখে বাঁধে, তাইনা?” স্থির চোখে তার দিকে তাকায় সাজ্জাদ। সেই দৃষ্টির সামনে চোখ নামিয়ে নিতে বাধ্য হল শাহেদ।

২.

বসে থাকতে থাকতে একটু তন্দ্রামতন এসে গিয়েছিল শিউলীর। সাজ্জাদ বের হয়ে যাবার পর ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল সে। এমন দুঃসময়ে একা একা ঘর থেকে বের হবার কথা জানতে পারলে সাজ্জাদের খুবই রাগ করার কথা, কিন্তু আজকের কথা আলাদা। সব কথা শোনার পর নিশ্চয়ই তার সব রাগ পড়ে যাবে।

দরজায় কারও খুব অস্থিরভাবে কড়া নাড়ার শব্দে ঝিমুনিভাবটা দূর হয়ে গেল তার। নিশ্চয়ই সাজ্জাদ। তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে দরজা খুললো। দরজার ওপাশে সাজ্জাদ দাঁড়িয়ে আছে, চোখে উদভ্রান্তের মত দৃষ্টি। চমকে উঠলো শিউলী।

-“কি হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ করেছে?” শিউলী জিজ্ঞেস করলো। সাজ্জাদ জবাব দিলোনা। এলোমেলো পা ফেলে হেঁটে ঘরে ঢুকলো। টেবিলে ক্যামেরাটা রেখে পাশের কাউচে বসে সেটার দিকে তাকিয়ে রইলো অপ্রকৃতিস্থের মত।

এরপরও প্রকৃতিস্থ থাকার কোন উপায় নেই কারও। মানুষরুপী কতগুলো নেকড়ের বীভৎস কীর্তি দেখে এসেছে সে। গ্রামের পর গ্রাম বিরান, ধোঁয়া আর ছাই ছাড়া আর কিছু নেই। কয়েকটা পুকুর রক্তে লাল, বোঝার উপায় নেই এখানে একসময় স্বচ্ছ জল ছিল। আর বাকিগুলো আর পুকুর থাকেনি, একেকটা একেক বধ্যভূমি। শত শত নারী পুরুষের লাশে বোঝাই, কারো চোখ বাঁধা, কাউকে কাউকে দিয়ে শেয়াল-কুকুরেরা উৎসব করেছে। নিষ্পাপ শিশু পর্যন্ত রেহাই পায়নি পাকিস্তানি পশুদের হাত থেকে। যত্রতত্র পড়ে আছে আকাশে নিষ্প্রাণ দৃষ্টি মেলে, নিথর লাশ হয়ে। দাঁড়িয়ে থাকার উপায় নেই লাশগুলো থেকে ভেসে আসা উৎকট গন্ধে।

কাছে এগিয়ে গিয়ে তার কপালে একটা হাত রাখে শিউলী। ঘেমে ঠান্ডা হয়ে আছে, জ্বর নেই।
-“আমি ওই ক্যামেরাটার মত হতে চাই।” ফিসফিস করে বললো সাজ্জাদ।
-“মানে?” গলাটা একটু কেঁপে উঠে শিউলীর।
-“ক্যামেরাটাকে দ্যাখো। আমি আজ যা দেখেছি, ক্যামেরাটাও তাই দেখেছে। কিন্তু তার তো কোন ভাবান্তরই নেই!” ফুঁপিয়ে কেঁপে উঠে সাজ্জাদ। “মানুষ কিভাবে এত নিষ্ঠুর হয়!” কান্নার তোড় থামাতে থরথর করে কাঁপছে সে।

প্রবল মমতায় সাজ্জাদকে জড়িয়ে ধরে শিউলী। দেশ একদিন স্বাধীন হবেই, হতেই হবে। তাদের সংসারে যে নতুন অতিথি আসছে, যেখানে সে নিশ্চিন্তে খেলবে, সেখানে এই নীচ পশুগুলোর স্থান কোথায়? হঠাৎ চমকে ওঠে শিউলী, সাজ্জাদকে তো এখনও বলাই হয়নি এই কথা! তার দিকে তাকালো সে, এখনও কাঁদছে মানুষটা। থাক, কাঁদুক। এখন না কাঁদলে কখন কাঁদবে?

-“আমরা স্বাধীন হবো সাজ্জাদ।” গাঢ় স্বরে বললো শিউলী। “তুমি সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে পারবে আবারও।” এই প্রথমবারের মত সাজ্জাদকে তুমি করে বললো সে।

টেবিলে রাখা ক্যামেরাটা তার লেন্সের চোখ দিয়ে তাদের দিকে চেয়ে থাকে নিষ্পলক।


১৮ জুন, ১৯৭১

১.
বিকেল পড়ে এসেছে প্রায়। ঘুমিয়ে ছিলো শিউলী। বাইরের উঠানে কেউ একজন সাজ্জাদের নাম ধরে ডাকছে, তাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তার। চোখ মুছে উঠে বসলো সে, পাশে সাজ্জাদ গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। কে আসলো এই অসময়ে? বিরক্তমুখে বাইরে বেড়িয়ে এলো সে।
-“ভাবি, সাজ্জাদ ঘরে আছে?”
-“উনি তো ঘুমাচ্ছেন।” ঘুমের ঘোরে এলোমেলো কাপড়েই বাইরে চলে এসেছে শিউলী, সন্ত্রস্ত হয়ে সব ঠিক করে মাথায় ঘোমটা টেনে দিলো সে।
-“একটু জরুরী দরকার ছিলো। তাকে এখন আমার সাথে একটু বাইরে যেতে হবে, ভাবি।”
-“আচ্ছা।” মনে মনে খুব বিরক্ত হলো শিউলী, সাজ্জাদকে একটু শান্তিমতো ঘুমাতেও দিবেনা নাকি এরা? “আপনি একটু বসার ঘরে বসুন।”
-“বসবোনা ভাবি। আপনি ওকে ডেকে নিয়ে আসুন।”

সাজ্জাদকে ডেকে তুলতে মায়াই লাগলো শিউলীর। এই ক’দিন খুব খাটুনি গেছে বেচারার। গত সপ্তাহে তুলে আনা ছবিগুলো প্রিন্ট করে পত্রিকা অফিসে জমা দেয়া ছাড়াও আরও অনেক কাজ ছিলো। ছবিগুলো নাকি সে বাইরের গণমাধ্যমগুলোকে দিয়ে দিয়েছে। এখন সারাবিশ্ব জানতে পারবে, বাংলাদেশে কি নৃশংস গণহত্যা চলেছে। পাকিস্তান যে শুধুই সামরিক জান্তা না বরং একটা মানবতাবিরোধী শক্তি, সবাই সেটা জানবে এখন থেকে।

বাইরে বেরিয়ে শাহেদকে দেখে মনটা তেতো হয়ে গেল সাজ্জাদের।
-“কি হয়েছে?” কন্ঠের বিরক্তিটা চাপা দিতে কোন চেষ্টাই করলোনা সে।
-“একটা মিটিং আছে পত্রিকা অফিসে।”
-“দাঁড়াও, আমি শার্টটা বদলে আসি।”

ঘরে ঢুকে গায়ে একটা শার্ট চড়ালো সে।
-“জলদি চলে এসো?” উদ্বিগ্ন স্বরে বললো শিউলী। জবাবে একটু হাসলো সাজ্জাদ।

দরজ়ায় ছিটকিনি দিয়ে ঘরে ঢুকে টেবিলের উপর চোখ পড়তেই স্থির হয়ে গেল শিউলী। ক্যামেরা নেয়নি সাজ্জাদ। এমনতো কখনও হয়নি? ক্যামেরাটা তুলে নিলো সে হাতে। কেমন একটা অজানা উদ্বেগ পেয়ে বসলো তাকে।

২.

সন্ধে হয়ে আসছে। কালো একটা টয়োটাতে করে ছুটে যাচ্ছে সাজ্জাদ আর শাহেদ। দুজ়নই চুপচাপ। নিরবতা ভাঙ্গলো শাহেদই।
-“ছবিগুলো বাইরে পাঠিয়ে খুব ভালো কাজ করোনি তুমি।”
শাহেদের এমন চোখা মন্তব্যে অবাকই হলো সাজ্জাদ। কোন রাখঢাক না রেখেই কথা বলছে।
-“তোমার তাই মনে হচ্ছে?”
শাহেদ চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ। হঠাৎ মোড় নিয়ে পত্রিকা অফিস পার হয়ে এলো।
-“কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? পত্রিকা অফিসে তো যাচ্ছোনা।” সাজ্জাদ অবাক হয়ে গেলো।
-“মেজর মুদাসসার তোমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন।”
-“গাড়ি থামাও। আমি নেমে যাচ্ছি। নারী আর শিশু হত্যাকারীদের সাথে আমার কোন কথা বলার নেই।”
-“এসে পড়েছি।” আরেকটা মোড় নিল শাহেদ। মোড় ঘুরতেই দেখলো সাজ্জাদ, একটা বিরাট আর্মি কনভয়, ট্রাক আর খাকি উর্দি পড়া মিলিটারীর বেশ বড় একটা জটলা। একটা শীতল শিহরণ যেন নেমে গেল তার মেরুদন্ড বেয়ে। গাড়ি থামিয়ে নেমে গেল শাহেদ। সোজা হেঁটে গেল সানগ্লাস পড়া একজন অফিসারের দিকে। একটা বিহারীর চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে সে। গাড়িতে বসে দেখতে লাগলো সাজ্জাদ, কিছুক্ষণ পর হাত নেড়ে তাকে ডাকলো শাহেদ। পায়ে পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়ালো সে।

মেজর মুদাসসার কিছুক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে যেন দেখলো সাজ্জাদকে। সাজ্জাদের কেমন একটা অশুচি অনুভূতি হতে লাগলো। চোখের সামনের লোকটা যে খাকি উর্দি আর সানগ্লাসের আড়ালে একটা দানব।
-“কেয়া তুম সাজ্জাদ হোসাইন হো?” সানগ্লাস খুলে ফেলতেই মেজরের ক্রুর দৃষ্টি বের হয়ে আসে।
-“হ্যাঁ।” কন্ঠস্বর সংযত রাখতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে সাজ্জাদের।
-“গেট হিম।” পাশের দুই মিলিটারিকে নির্দেশ দিলো মেজর।

রাইফেলের বাটের এক ধাক্কায় সাজ্জাদকে মাটিতে ফেলে দিলো তারা। তারপর হাত পিছমোড়া করে বেঁধে টেনে হিচড়ে তুলে ফেললো ট্রাকটাতে। তাতে অনেক পরিচিত আর ভয়ার্ত মুখ দেখতে সে। বাইরে তাকালো সে, শাহেদের চোখে চোখ পড়লো।

তীব্র ঐ দৃষ্টির কোন জবাব শাহেদের কাছে নেই। ছিলোনা এবং থাকবেওনা। চোখটা মাটিতে নামিয়ে আনলো সে।



১৮ জুন, ২০১০

সকাল হয়েছে মাত্র। ঘরের জানালা বেয়ে রোদের সরু একটা ফালি শিউলীর মুখের উপর পড়লো। ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো ক’টা বাজে কিন্তু পারলোনা। বয়স হয়েছে, দৃষ্টিও ঘোলাটে হয়ে এসেছে। উঠে বসে চশমাটা চোখে দিল সে। ক্যালেন্ডারে চোখ পড়লো তার, তারিখটা জ্বলজ্বল করছে- ১৮ ই জুন। সাজ্জাদ চলে গেছে উনচল্লিশ বছর হয়ে গেল!

স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে হেঁটে জানালার কাছে আসলো শিউলী। জানালার গ্রিল ধরে ছ’তলা নিচে তাকালো সে, কিছু প্রৌঢ়া প্রাতঃভ্রমণ সেরে টুকটাক গল্প করছেন। আশেপাশে বিশাল বিশাল এপার্টমেন্ট উঠে গেছে, আকাশ ছোঁয়ার স্পর্ধা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। কে বলবে উনচল্লিশ বছর আগেও এখানে একটা ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছু ছিলোনা? দেশ স্বাধীন হয়েছে, কত বিশাল অট্টালিকা উঠে গেছে, প্রৌঢ়ারাও নির্বিঘ্নে প্রাতঃভ্রমণ সারতে পারেন এখন…কিন্তু তাও কোথায় একটা অপূর্ণতা রয়ে গেছে। মনে হয় যেন স্বাধীনতার পুরোটা পাওয়া বাকি এখনও, এখনও স্বাধীন হয়নি অনেক কিছু।

-“আপনার কী মনে হয়? আমরা দেশকে স্বাধীন করতে পারব?” শিউলী আপন মনেই জিজ্ঞেস করে। তার চোখের কোণায় একফোঁটা পানি সূর্যের আলোয় চিকমিক করতে থাকে।

আলো-আঁধার থেকে কেউ যেন দ্বিধাভরে উত্তর দেয়-“মনে তো হয়।” স্বরটা শিউলীর পরিচিত। উনচল্লিশ বছর আগে শেষ শুনেছে এই কন্ঠ।

শো-কেসের ভেতর থেকে ক্যামেরাটা তখনও নিরব চেয়ে থাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান লেখকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
রওশন জাহান ইসরাতকে অনেক ধন্যবাদ সত্য প্রকাশ করার জন্য।
রওশন জাহান আমার পড়া সবচেয়ে সুন্দর গল্প এটা এই ওয়েব সাইটে। এই গল্পটা কেন এত কম পড়া হয়েছে বুঝলাম না।
মোঃ শামছুল আরেফিন অসাধারন একটি গল্প।ভোট দিয়ে দিলাম।কিন্তু খারাপ লাগছে এখন যে জানলাম গল্পটি ইশ্রাতের নিজের লেখা নয়।সে বলছে অন্য কোন ইশ্রাত লিখেছে কিন্তু তার নামে চলে এসেছে। ইশ্রাত কে ধন্নবাদ সত্য তথ্যটি জানানর জন্ন।তবে গল্প কবিতা ডট কমের এই মারাত্মক ভুলটি কিভাবে হল তা বুজতে পারছিনা।আশা করি গল্প কবিতা ডট কম অছিরেই সমস্যাটির সমাধান করবেন এবং মূল লেখককে তুলে আনবেন।
বাবুল হোসেইন সুন্দর গল্প আমার গল্প পড়ার আমন্ত্রণ রইল
বিন আরফান. thak, boon amra karo mone kost na dei. গল্প কবিতায় ক্রিকেট/নববর্ষ সংখায় লেখা জমা দেয়ার আর মাত্র ৬ দিন বাকি. আজ-ই আপনার লেখা জমা দিন. আমাদের সংগে থাকুন. কোন সংকোচ করবেন না. এমনও হতে পারে আপনার লেখা বিশ্ব নন্দিত. আমার লেখা বঙ্গলিপি পড়ার আমন্ত্রণ রইল.
Israt @মামুন ম.আজিজ, প্রশ্ন করার আগে জেনে নেয়া ভালো না? উপরের কমেন্টগুলো পড়লে আশা করা যায় বোকার মত প্রশ্ন করতেন না|
মামুন ম. আজিজ অন্যের লেখা পোষ্ট করেছেন কেনো?

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪