দেশপ্রেম এর সংঞ্জা কি? একজন বিখ্যাত ব্যাক্তির কাছে জানতে চাইলে ভদ্রলোক বিব্রত হন। প্রথমে একটু ভেবে নিজেকে গুছিয়ে নেন। ভদ্রলোক বলেন, দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যারা কাজ করে, প্রকৃত পক্ষে তারাই দেশপ্রেমিক। তিনি আরো বলেন, এ যুগে প্রকৃত দেশপেমিক বনা মশকিল বটে। কিন্তু একথা অনেকে মানতে নারাজ। তারা বুঝাতে চান, দেশে দেশপ্রেমিক আছে ভুরি ভুরি। তাদের বিশ্বাস তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেমিকের অভাব নেই। কয়েক মাস আগে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা এর সম্পাদক ডক্টর আলী হোসেন এর সাথে একান্ত সাক্ষাত হয়। তিনি তরণদের শুধু দেশপ্রেমিক বলে শেষ করেননি। তরুণদের স্বপ্নদ্রষ্টা বলে দাবী করেন।
প্রকৃত পক্ষে দেশের কল্যাণে সব জাতীয় কাজে সুন্দর মানুষিকতা ও কার্য সম্পাদনে সহযোহিতা করাই হচ্ছে দেশপ্রেম। এব্যাপারে তরুণ যুবকরাই এগিয়ে। যদিও দেশকে ভালোবাসতে হলে বয়স মুখ্য বিষয় না।
আজকাল দেশে দেশপ্রেমিকের সংখ্যা আকাশচুম্বি। আদর্শ দেশপ্রেমিক খুব কমই আছে। ১৬কোটি মানুষের সবাই প্রেমিক, কিন্তু আদর্শপ্রেমিক ক’জন পাবেন? সত্যিকার দেশাত্ববোধ চেতনায় নাই নাই অবস্থা চলছে। সামরিক নীতিমালার অধিনে যেমন নিয়োগে লম্বা লাইন হয়, যাচাই বাচাই শেষে তেমন কম লোকই নিয়োগ পায়।
এ দেশে কিছু দেশপ্রেমিক আছে, যাদের চেহারা থেকে দূর্গন্ধ চড়ায়। ওদের পাড়া-মহল্লার মানুষ দেখলে নাক কুচকায়। সম্প্রতি দেশের এখানে সেখানে দেখা যাচ্ছে, সার্টিফিকেটধারী সন্ত্রাসও দেশপ্রেমিক, চাঁদাবাজ নেতা ও দুর্নীতি পরায়ণ লোকটাও দেশপ্রেমিক। লাথি মেরে ভিখেরীর পা ভেঙ্গে দিয়েছে, সে লোকটাও এখন দেশপ্রেমিক। সার্টিফিকেটধারী বলতে এখানে চিহ্নিতদের কথা বুঝানো হচ্ছে।
এরা আবার মঞ্চে দাড়িয়ে গলাবাজি করে সমর্থন কুড়ায়। না জেনে কিছু লোক হাততালি দেয়। কেউ আবার আত্মসন্মান লাভের আশায় গলাবাজি করে। জনগণ ওদের বাহবা দেয়। ওমুক ভাইয়ের চরিত্র, ফুলের মত পবিত্র। এক দেশপ্রেমিককে দেখেছি নির্বাচনের দিন ঘরের স্ত্রী-কে মার’ধোর করে রুমে আটকে রেখেছে। কারণ, তার স্ত্রী তাকে ভোট দিবেন এই দেশপ্রেমিকের এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না।
অনেকের ধারণা, সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হতে হলে আগে কোটিপতি হতে হয়। কোটিপতিরাই পারে দেশের সেবা করতে। তারা অর্থ ও সম্পদ দিয়ে দরিদ্রদের পাশে দাড়ায়। এ ধারণাগুলো আমি যথার্থ মানছি না।
এক শিল্পপতির মুখে শুনেছি, এতই ব্যস্ত থাকি, অনেক সময় স্ত্রী-সন্তানদের
কথা ভুলে যেতে হয়।
এক বৃদ্ধ বলেন, এ দুনিয়া টাকার দুনিয়া। এখানে টাকা থাকলে সব হয়। অভদ্ররাও ভদ্র হয়। এ সমাজ এটাই বিশ্বাস করে। সময়ের দৈনিক পত্রিকাগুলোর কথা বলছি। সম্পাদকরা বিশেষণ দ্বারা সংবেদনশীল। টাকা পেলে যাকে তাকে বিখ্যাত করে দেয়। এখানে দলীয় শক্তিও কাজ করে। মফস্বলের কিছু কাগজ এসব লোকদের অর্থায়ণে নির্ভরশীল বটে।
জনগণ যেসব লোকদের দেশপ্রেমিক বলে মর্যাদার আসনে বসায়, তাদের দ্বারাই দেশ ধ্বংসের পথে নেতিয়ে যাচ্ছে। এ দিনে দেশপ্রেম, দেশাত্ববোধ চেতনা ও মূল্যবোধ নিয়ে কথা বললে দোষ হয়। আর সত্যিকার দেশপ্রেমিকরা মা’র খাচ্ছে কতিপয় নেতা সন্ত্রাসদের হাতে। এখন ভালো কথা শুনতে ভালো লাগে না। ভালো কাজে বাঁধা আসে চারদিক থেকেই।
তবে বড়লোক নেতাদের মধ্যেও কিছু লোক থাকে স্বার্থহীন। মনে হয়, দেশ ও মানুষের কল্যাণে তাদের জীবন নিবেদিত।
দেশে শিক্ষার গতি দিনদিন বাড়ছে। পাসের হারতো আকাশছোয়া। কিন্তু দিনদিন বিবেক সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শিক্ষা সচেতনতা ও উপলব্ধিবোধের অভাবে অর্জিত শিক্ষা কার্যত ব্যবহার করা যাচ্ছে না। শিক্ষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত নয় বলে দেশপ্রেম ও মানবতাবোধ এখন বিতর্কিত হচ্ছে। এরই একটা প্রাপ্তি হচ্ছে, দুর্ণীতিতে বিশ্ব চ্যামপিয়ণ আমরা। মজার কথা হচ্ছে, এদেশে শিক্ষিত ও মার্কামারা সার্টিফিকেটধারী ব্যাক্তিরা দুর্ণীতি করে থাকে।
দেশটা এখন রাজনীতির আদলে অধিষ্ঠিত। দেশের ভালো ও মন্দ দু’টোই রাজনীতিবিদদের কাছে দায়বদ্ধ। দেশ গড়া ও ধ্বংসের কারিগড় তারাই। ফলে সময়ের ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ প্রেমহীন উদ্ধাস্ত ভূমির মত। অধিকার অধিকার বলে মানুষ চেছিয়ে যায়, কিন্তু শোনার মত কেউ নেই।
দেশকে ভালোবাসতে হলে আগে মানুষকে ভালোবাসতে হয়। আর আজ তো মানুষকে ভালোবাসা দায় হয়ে পড়েছে। গত আগষ্ট মাসে দেখলাম, দিনাজপুরে এক বাবা তার সাত বছরের ছেলেকে জবাই করে মেরেছে। পারিবারিক কলহের সূত্র ধরে ঘটনাটি ঘটেছে। ফরিদগন্জে বাবা-মা তাদের বয়স্ক এক পুত্রকে তিন বছর বার্থরুমে আটকে রাখেন। তিন বছর পর এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে। মতলবে ছেলের হাতে বৃদ্ধ পিতা প্রাণ দিলেন কয়েক দিন আগে। প্রতিদিন পাড়ায়-মহল্লায়, কলনীতে মানুষের হাতে মানুষ মরছে। দেশের আনাচে কানাচে ভেসে বেড়ায় ধর্ষিতা নারীর আর্তণাদ। ছোট ছোট স্কুলছাত্রীরাও রেহাই পাচ্ছে না। ধর্ষক এবং ইভটেজার ধরাছোয়ার বাইরে থাকে। দেশে দেশপ্রেমিকের অভাব নাই কিন্তু প্রতিবাদ করারও কেউ নাই। এভাবে দিনদিন দেশে অন্যায়গুলো প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সংস্কৃতির বিবর্তন ঘটে অশালীন প্রেক্ষাগৃহে। মানুষ যদি মানুষকে ভালো না বাসে, দেশকে ভালোবাসায় মূল্য কোথায়? সাবেক দক্ষিন এশিয়া বিষয়ক মানবাধিকার এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো এর মহা-সচিব ডক্টর মোহাম্মদ শাহজাহান একান্ত অলাপে বলেন, আত্মরক্ষার জন্য নয়, দেশ রক্ষার জন্য মানবাধিকার। দেশের স্বার্থই জাতীর ভবিষ্যত।
১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশটা বেশি বড় নয়। কিন্তু নিজের করে ভাবলে খুব বড়ই হয়। এরকম একটি দেশ থেকে অনেক কিছু পাওয়া থাকে। পেতে হলে আগে চাইতে হয়। দেশাত্ববোধ চেতনা সুন্দর কিছু পেতে ভূমিকা রাখে, এমনকি উন্নত বিশ্বের একটি স্বয়ংক্রিয় দেশ গড়তে অবদান রাখে।
সামগ্রিক দৃষ্টিকোন থেকে বাংলাদেশটা একটা শস্যক্ষেত। কার ক্ষেতের শস্য নষ্ট হচ্ছে সেটা মূখ্য নয়। কার দ্বারা নষ্ট হচ্ছে বুঝতে হবে। একজন দেশপ্রেমিকের কাছে সমগ্র দেশই তার নিজের। ফলে সবগুলো শস্যক্ষেতের পরিচর্যা তাকেই করতে হয়। এভাবে ১৬ কোটি মানুষের সবাই সমগ্র দেশকে নিজের মনে করে যে যার অবস্থান থেকে দেশ গড়ার দায়িত্ব নেয়, তাহলে দেশপ্রেমিক নামের কিছু কুটিল লোকেরা স্বার্থের জন্য বাংলাদেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়ার সাহস পাবে না। একই সাথে অমাদের দেশকে অমরা উন্নত বিশ্বের সারিতে দাড় করাতে সক্ষম হবো।
২১ অক্টোবর - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪