বাংলাদেশী পরিবার ও মেয়ের বিয়ে বিড়ম্বনা

পরিবার (এপ্রিল ২০১৩)

জাকিয়া জেসমিন যূথী
  • ১৬
  • ৬৪
তুলির মেজাজটা খুব খারাপ!
দিনের বেলা সালমা আন্টির ফোন পেয়েই ও বুঝেছিলো, নিশ্চয়ই বিয়ের কোন খবর। যা ভেবেছে, ঠিক তাই। মা বললেন এসে , "তোমার একটা প্রস্তাব। সন্ধ্যাবেলা ভাবীদের বাসায় যাইতে হবে ছেলে দেখতে।"
তুলিও একটু বোরিং হইয়া যাচ্ছিলো। বিয়ের জন্য! বললো, "ঠিক আছে যাবোনে ছেলে দেখতে!"
তুলি বসে বসে কম্পিউটারে কাজ করছিলো। প্রাইমারীর ভাইভার রেজাল্ট বলে দিবে এই মাসের পঁচিশ বা ছাব্বিশ তারিখে; সমকালে লিখেছে। তাই গত কয়েকদিন ধরেই নিয়মিত সারাদিন নেটে বসে ও। সালমা আন্টির ফোন পেয়ে ভাবলো, “ঘুমাতে হবে।” তখন বেলা ৩টা বাজে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় ইফতারির পরপরই ছেলে দেখতে যাওয়া। ওরতো রোজা রেখে চেহারার মূল শ্রী হারিয়ে যায় ! ছেলে কি ওর আমসি চেহারা দেখে পছন্দ করবে?! মা টা একেবারেই কিছু বুঝে না।
“যাই একটু ঘুমিয়ে নেই” বলে ও গেলো ঘুমোতে। তবে শুধু গড়াগড়িই করা হলো। অন্যদিন তবু মরার মত ঘুম হয়। আজ কোন ঘুমই হলোনা। মনে হয় টেনশনেই! বায়োডাটা দেয় নাই। ছেলে ক্যামন, কি করে কিছুই জানে না।। আর মা’দের তো কথার কোনও বিশ্বাস নাই। যেইটা দ্যাখে সেইটাই খুব ভালো। পরে ভালোর অবস্থা বুঝা যায়! বিনা বর্ষায় টিনের চাল দিয়া পানি পরার ব্যাপারটা জায়গামত গেলেই বুঝা যায়!
যাই হোক, ইফতারি খেয়ে মাগরীবের নামাজ পড়ে মাত্র তসবী নিয়া বসেছে তুলি, কিছুটা পড়া হয়েছে আর শুনে, টিএনটি ফোন বাজতেছে। ও বুঝে নিলো, ওটা সালমা আন্টির ফোন। ওর প্রতিবেশী ঘটক!
দু’মিনিট পরেই আম্মা এসে ডাকাডাকি শুরু করলো, "কই রেডি হওনা? তোমারে না কইছি আজকে নামাজ পইড়াই রেডি হয়া যাইতে! ভাবী কইছে পাঁচ মিনিটের মধ্যে যাইতে!"
তুলির মনে পরলো, মা আগে বলে নাই! এখন বলছে! সে জবাবে বললো, “কৈ তুমি তো আগে বললেনা?” এটা বলার পরে তুলির মা আরো ক্ষেপে গেলেন।
যাই হোক, ছেলে দেখতে যাচ্ছে। এখন ঝগড়া না করাটাই ভালো। মুখশ্রী বিচ্ছিরি দেখাবে। ও সামান্য উষ্মার সাথে মাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, "বললেইতো রোজার মাসে ইফতারীর পরপর পাঁচ মিনিটে রেডি হওয়া যায়না! রেডি হচ্ছি। তাড়াতাড়ি হইলেইতো হইলো নাকি?"
মা আর কথা না বাড়িয়ে নিজে শাড়ি চেঞ্জ করতে লাগলেন। তুলিও সাত তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে তারপরে দুজনে গেলো ওদের বাড়ি ছেড়ে একটা বাড়ি পরেই সাততলা বিল্ডিং এর দোতলায়। সালমা আন্টির বাসায়।
আন্টির মেয়ে লিসার ঘরে কয়েক মিনিট বসে কথা বলতে বলতে তুলি শুনতে পেলো, ছেলেরা চলে এসেছে। ছেলেরা সালমা আন্টির বাসার বিল্ডিং এর তিন তলাতেই থাকেন। ইটালী থেকে এসেছেন। উঠেছেন একমাত্র বড় বোনের বাসায়।
যাই হোক ছেলেরা আসার পরে তুলি,ওর মা আর সালমা আন্টির সাথে গিয়ে বসলো ওনাদের ড্রয়িং রুমে। রুমে ঢুকেই দেখে এক পাশের দেয়াল ঘেষে বসেছে রাশেদ আংকেল আর একটা মেয়ে (কমবয়সী সুন্দর দেখতে), রুমের দরজার কাছের সোফায় বসেছে খুব মোটা এক লোক আর তার পাশে অনার্স পড়ুয়া এক ছেলে হবে, কমবয়সী! (তুলি পরে জেনেছে, ওর অনুমানই ঠিক! তুলি গিয়ে আরেক দিকে বেশ দূরের সোফায় গিয়া বসে ভাবছে “ছেলে কোনটা?!”
এদিকে কমবয়সী মেয়েটা কথা বলছে সালমা আন্টির সাথে। বলছে, "মামা তো..."
কি জানি বললো, পরিস্কার বুঝা গেলো না। যাই হোক কয়েক মিনিটের মধ্যেই ও বুঝে গেলো যে এই মোটা বেলুনাকৃতির লোকটাই পাত্র। প্রথমে ভেবেছিলো গার্ডিয়ান লেভেলের কেউ।
মোটা শরীর দেখে প্রথমেই তুলির মনটা দমে গ্যালো। “ওরে বাপরে! আমাদের দুইজনকে লাগতেছে দুই মেরু!” একজন ভীষণ মোটা আর আরেকজন তেমনি শুকনা! তার তুলনায় ওকে তাই মনে হচ্ছে!
একটা ইংলিশ ছবি দেখেছিলো ও টিভিতে। লোকটা অনেক মোটা, মনে হয় যেন বেলুন ফুলিয়ে দেহটাকে ওইরকম বানিয়েছে। পরে স্লিম বানানো হয় লোকটাকে। এই ইতালীর লোকটাকেও ওইরকম ফুলানো বেলুনের মত লাগতেছিল তুলির।
কথাবার্তা শুনে আরো যা বুঝলো, ছেলে ইতালীতে থাকে তেরো বছর ধরে। প্রথমে ওইখানে গিয়া হোটেলে কাজ করেছে। এখন নিজেরই হোটেল আছে। ভালো ইনকাম। মায়ের কাছে শুনলো, “ছেলে প্রায়ই দেশে আসে। অবস্থা ভালো”।
কিন্তু, অবস্থা যতই ভালো হোক, তুলির যে বিজনেসম্যান পছন্দ না। বিজিনেসম্যান হলে সেইরকম চাই, খুব নামকরা! তবু, নামকরা হলেও ওর কাছে বিজনেসম্যান ভাল লাগেনা! ব্যক্তিগতভাবে, বরের বিষয়ে ওর খুব চাহিদাও নাই। একটা ভাল শিক্ষিত ফ্যামিলির ছেলে হলেই চলে। ছেলের যোগ্যতা আর মানসিকতাই আসল। এইক্ষেত্রেও সেটা হতে পারতো। কিন্তু, অস্বাভাবিক মোটা শরীর যে পছন্দ হলোনা। তুলি কি করবে!
ছেলেরা মেয়ে দেখে চলে যাওয়ার আরোও কিছুক্ষণ পরেও ওই আন্টির বাসায় থাকতে হলো। ওনারা বাসায় ফিরতেই দিবেন না। আরেকটু বসে গল্প করতে বললেন। আবার এর মধ্যে কারেন্টও চলে গেছে। তুলি ওর প্রাইমারী স্কুলের টিচার নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভার রেজাল্টের কথা পাবলিশ হবে বলে। ওর মা’কে বাসায় যাওয়ার কথা বলতে বলতে অস্থির। চাপ দিয়া কিছুক্ষনের মধ্যে ছাড়া পেলো বাসায় যাওয়ার জন্য। তারপরে নিজের মা’কে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।
আম্মাকে নিয়া এক মুশকিল। তাকে কেউ যখন বলে ওমুকে ভালো, আমরা চিনি। ব্যাস, ওমনি ওই লোক খুব ভালো হয়ে যায়! এখন সেই লোক ভালো হোক বা না হোক! তাই মাকে বলতে ভয় পাচ্ছিলো যে, প্রস্তাবটা ওর পছন্দ হয় নাই।
আম্মা চা বানাতে বসেছে। চা বানানো শেষ। তুলি কাছে গিয়ে ভয়ে ভয়ে মা’কে বললো, "আম্মা লোকটাতো বিজনেস করে!" আম্মার জবাব "আমিতো আগেই শুনছি!" তুলির খুব রাগ লাগলো। আজব! আম্মা জানে যে, ও বিজিনেসম্যান পছন্দ করে না। উনি নিজেও করেন না। তবু, কেন দেখতে যাওয়া হলো? এই সব ব্যাপার একেবারেই অসহ্য লাগে! কেউ কিছু চাপিয়ে দিতে চাইলেও কিচ্ছু বলবেনা। মনে হয় যে মেয়ে নিয়ে পানিতে পরেছে।
যাই হোক, তুলিতো গজগজ করতেই আছে! কিছুতেই রাজী না। এর মধ্যে ইন্টারনেট খুলে বসেছে রেজাল্ট দেখার জন্য। ইয়াহু মেসেঞ্জার অন করে দেখে, একটা সিনিয়র ভাইয়া আছে বন্ধুর মতন তাকে পেয়ে গেলো। তার সাথে কথা বলে যদি মনটা হালকা হয়! চেনেনা জানেনা। কিন্তু কিছু সময়ে অপরিচিত একজন ব্যক্তিও তার আন্তরিক কথার মাধ্যমে আরেকজনের মন ভালো করে দিতে পারে। কথায় কথায় তুলি ওনাকে পুরা বিষয়টা জানালো। উনি কয়েকটা কথা বললেন। সেগুলা আবার তুলি ওর আম্মাকে বললো। আম্মাও এখন শান্ত হয়ে গেছে। তুলিকে বলে উঠলেন, “হুম, আমারও খুব একটা পছন্দ হয় নাই। তোর বড় বুবু আছে অনলাইনে?” ওরে কিছু জানানোর দরকার নেই”। তুলির বড় বোন হাজবেন্ডের সাথে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে!
তবু, তুলির মনটা খচখচ করতেই থাকে। যতক্ষন না ওই বাসা থেকে আবার কোনো পজিটিভ খবর এসে পরে আর মায়ের ডিসিশন আবার চেঞ্জ হয়ে যায়। আম্মাদের একেবারেই বিশ্বাস নাই।
“মেয়ে মানুষের জীবন। কবে যে শেষ হবে এসব যন্ত্রনাকর পরীক্ষা দেওয়াদেওয়ি! আল্লাই জানেন!! ভাল্লাগেনা!! অসহ্য!!” তুলির মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়ার পরেও এই দেশের মেয়েদের কি ব্যক্তিস্বাধীনতা আসবেনা? আর কত? কতকাল এরকমটা চলতেই থাকবে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি “মেয়ে মানুষের জীবন। কবে যে শেষ হবে এসব যন্ত্রনাকর পরীক্ষা দেওয়াদেওয়ি! আল্লাই জানেন!! ভাল্লাগেনা!! অসহ্য!!” তুলির মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়ার পরেও এই দেশের মেয়েদের কি ব্যক্তিস্বাধীনতা আসবেনা? আর কত? কতকাল এরকমটা চলতেই থাকবে? ............শুধু এটুকু বাদে পুরো গল্পটিতে পরিচ্ছন্নতার ছাপ রয়েছে ......অনেক ভাল গল্প .....জুইফুল আপনাকে অনেক ধন্যবাদ...........
সূর্য N/A একটা নতুন পরিবার গড়ে ওঠে বিয়ের মাধ্যমে, আর বিয়েটা হতে পারে এ্যারেঞ্জ অথবা নিজস্ব পছন্দের। এ্যারেঞ্জ ম্যারেজের বেলায় বেশির ভাগ সময়ই এই বিরম্বনার শিকার হতে হয়। মাঝে মাঝে ভাবি আসলে বহিরাবরনটাই কি সব, ভেতরের কোমলতা অথবা ভালটা কয়জন দেখে। চলে আসা একটা বিষয়ের উপস্থাপন ভালো হয়েছে। তুলিরা স্বাধীন হতে শিখুক কামনা থাকলো।
তৌহিদ উল্লাহ শাকিল N/A হুম এটা ভাবোতে আসলেই খারাপ লাগে যখন একটা মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কথা বারর্তা হবে তখন তার মতামতকে প্রাধান্য দেয়না . বর্তমান সময়ের উপযোগী অনেক সুন্দর একটা কাহিনী তুলে ধরেছেন তবে মোটা মানুষকে ও তো ভালবাসতে হবে বিয়ে করতে হবে[আমি নিজে তো অনেক মোটা তাই বললাম]
নিলাঞ্জনা নীল বাস্তবতার সুন্দর চিত্র :)
F.I. JEWEL N/A # বাস্তবতার আলোকে সুন্দর গতিশীল একটি গল্প । ধন্যবাদ ।।
আরমান হায়দার ভাল। বেশ ভাল।
মোঃ কবির হোসেন জুঁইফুল অপু আপনার গল্পটি আমার কাছে ভাল লেগেছে. ধন্যবাদ.
রোদের ছায়া (select 198766*667891 from DUAL) ভালো লিখেছ তবে গল্পের মত লাগলো না কেন জানি , তবে আমাদের সংসারের একটা দিক তুলে ধরেছ লেখায় ........সেটাই আসল কথা ...শুভেচ্ছা । ( এই গল্পের কাহিনিও তোমার জীবন থেকে নেয়া নয়তো?)
মামুন ম. আজিজ চিরায়ত নারী উৎকণ্ঠার টুকরো বাস্ববতার এক মুঠো নির্যাস। ভালোই।

১৭ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ভূমিকম্প”
কবিতার বিষয় "ভূমিকম্প”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৫