We are lost again!!

২১শে ফেব্রুয়ারী (ফেব্রুয়ারী ২০১২)

জ্যোতি হাসান
  • ১৯
  • ৬৬
বর্ষার মেজাজ অত্যন্ত খারাপ, হঠাৎ করেই স্যার “Presentation” এর ডেট দিয়ে দিলো!! সাধারণত এইসব ঝামেলা মিডটার্ম এর পরেই হয়। কে কবে শুনেছে যে, সেমিস্টার শুরু হওয়ার সপ্তাহেই এরকম “Presentation” হয়!! বর্ষা ওদের কমন রুমে মুখ কালো করে বসে ছিলো। ওর কোন বন্ধু আসেনি আজ ক্লাসে, ওরও আসার কোন কথা ছিলো না, ভেবেছিলো আজ সারাদিন ওরা অরণীদের বাসায় কাটাবে। কিন্তু হঠাৎ করে অরণীর দাদি অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে ওদের পুরো প্ল্যানটাই নষ্ট হয়ে গেলো!! তাই বাসায় একা বসে না থেকে time pass করতে ক্লাসে এসেছিলো বর্ষা, ক্লাসে এসে শোনে পাগল ব্যাটা “Presentation” এর ডেট দিয়ে দিয়েছে আবার আজকের মধ্যেই নাকি গ্রুপের নাম জমা দিতে হবে!! মগের মুল্লুক পেয়েছে যেন ব্যাটা!! এটা শুনে ক্লাসে বসেই শাহাব আর মায়েশা কে এসএমএস করে বর্ষা। অরণীকে আপাতত বিরক্ত করা ঠিক মনে করে না ও আর ছাগল রুম্মানকে বললেই ছাগলটা ফ্যাকফ্যাক করে হেসে ওর মেজাজ আরও খারাপ করে দিবে। বর্ষা পরের ক্লাসটাও না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এখনো অনেকেই বইই কিনে নাই আর মগা স্যারটা কিনা “Presentation” এর ডেট দিয়ে দিলো!! তাও কোন ইম্পরট্যান্ট কোর্স হলে একটা কথা ছিল, “Bangladesh Studies” কোর্সটা তো একটা “Core course” ছাড়া কিছু না! অসহ্য!!! অথচ এই মগা স্যারটার প্রশংসা শুনেই না উনার কোর্সটা নেয়া!! বর্ষা ভেবে পায় না, এরকম একটা স্টুপিড স্যারের প্রশংসা সবাই কেন করে!! আবার রাগ আর বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে যায় ওর!!
“কি রে?! হঠাৎ জরুরি তলব?! আমি যে কি ঝামেলা করে এসেছি তা যদি জানতি। অরণীদের বাসায় যাওয়া হবে না দেখে গাড়ি বাবার অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, আরেক গাড়ি নষ্ট। তারপর পেলাম তোর জরুরি এসএমএস, এখন কি ভাবে আসবো?! তারপর সিএনজি দিয়ে আসলাম, যা গরম আর ধুলা...উফ্!!!” মায়েশা ঝড়ের মতো কমন রুমে ঢুকে, বর্ষার পাশের সোফাতে ধরাম করেই বসে।
“আরে তুই কি ঝামেলা করে এসেছিস, আসল ঝামেলা আরাম্ভ হবে হবে করছে, Bangladesh Studies বইটা কিনেছিস?! কিনিসনি তো না??!” বর্ষার জিগ্যেস করে মায়েশাকে।
“আরে না, তোদের সাথেইতো প্রতিবার নীলক্ষেতে যেয়ে সব বই কিনি, এখনও সব বইয়ের নামই পাই নি। যাবো, নেক্সট ওইকে, কি বলিস?!” মায়েশা এখনো ঠাণ্ডাই আছে।
“নেক্সট ওইকে বই কিনলে আর ভালো গ্রেড পেতে হবে না। ইকবাল স্যার এর presentation এর ডেট দিয়ে দিছে, আজকের মধ্যেই গ্রুপের নাম, গ্রুপ লিডারের নাম, গ্রুপ মেম্বারদের নাম জমা দিতে হবে। তারপরই উনি টপিক দিবেন আমাদের, এখন বুঝলি ঝামেলা কতো প্রকার আর কিকি?!” এখনো উত্তেজিত বর্ষা।
“Holy cow!! You are not joking, right!! How could he do such a thing to us, after all the semester has just started and we are not ready yet!! No one said a thing to him regarding this?!!” উত্তেজিত হয়ে গেলে মায়েশার মুখ থেকে শুধু ইংলিশ বের হয়, বেচারি (??!!) English Medium থেকে এসেছে সেটা তখুনি বুঝা যায়!!!
নিজের উত্তেজনাকে মায়েশার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেড়ে বর্ষার একটু যেন আরাম হয়, “You know the guys of the class, big fools!! আমাদের গ্রুপটা থাকলে আমরা protest করতাম!! এখন বুঝ!!! শাহাবটা এখনো এসে পৌঁছালো না কেন, বুঝলাম না!!!”

“শাহাবকে দিয়ে কিছু হবেনা, পুরাই good for nothing, মাকাল ফল!। তুই BD Einstein কে খবর দিয়েছিস?! BD Einstein-ই তো সবসময় আমাদের সবকিছু ঠিক করে!!” মায়েশা বর্ষাকে জিগ্যেস করে। মায়েশা রুম্মানকে ফান করে, BD Einstein অর্থাৎ বাংলাদেশের আইনেস্টাইন বলে।

“তোর ওই ছাগল আইনেস্টাইনকে দেখলেই আমার গাটা জ্বালা করে! ছাগলটার ফ্যাকফ্যাক হাসি simply unbearable!!! তুই এসেছিস, এখন তুই ফোন কর। ছাগলটা তো আবার তোকে পছন্দ করে!” মায়েশাকে একটা wink উপহার দেয় বর্ষা!

মায়েশা বিন্দুমাত্র অপ্রস্তুত হয় না এতে, “আরে শুন, আগে এইসব reports, assignments, case studies, আর presentations এ highest score করার secrets and tricks গুলো জেনে নেই, তারপরই ওই রুম্মান ছাগলকে good bye!! Till then you have to tolerate him, baby!! ছাগলটার সাথে একটু flirt করে ওকে আমাদের গ্রুপে ধরে রাখাটা খুব দরকার!!” মায়েশা রুম্মানকে ফোন করে এখুনি আসতে বলে।

মায়েশার কথা শেষ হলে, বর্ষা একগাল হেসে উত্তর দেয়, “আসলেও we are very smart, aren’t we?! And my hat is off to you!! একদিকে গ্রুপের brain হিসাবে, ছাগল রুম্মান আছে আর অন্যদিকে গ্রুপের face and finance minister হিসাবে মাকাল ফল শাহাব আছে!! আর মাঝখান থেকে আমরা তিনজন power puff girls!!! কি বলিস?!” বর্ষার কণ্ঠে আত্ম-অহংকারের ছোঁয়া!!!

মায়েশাও বর্ষার হাসিতে যোগ দেয়, “yeah, of course baby!!! But we are smarter than power puff girls and Charlie’s angels together!!! কিন্তু আমরা ওইসব কাজগুলো শিখবো কবে?! Reports, assignments, case studies, presentations এগুলোর কথা শুনলেই আমার palpitation শুরু হয়!!! কে জানতো, university life এতোটা pain দিবে!?!?!”

বর্ষার জবাব দেয়, “তুই এতো tension নিচ্ছিস কেন?! মাত্রতো 1st year চলছে আমাদের। আরও তিন বছর বাকি আছে এইসব রিপোর্ট-টিপোর্ট এর হাবিজাবি কাজ শেখার জন্য!! আর যতদিন ছাগল এবং মাকাল ফল আমাদের সাথে আছে, ততোদিন let’s enjoy babe!!! Don’t worry, be happy!!!”

বর্ষা আর মায়েশা খিলখিল হাসতে হাসতে ‘hi-5’ করে!!

“What’s up guys?? দুই সুন্দরী পুরো ক্যাম্পাস কাঁপিয়ে হাসছিস, ব্যপার কি?! আমিতো ঘুম ভেঙ্গে বর্ষার এসমএস পেয়ে রীতিমতো shocked হয়ে গিয়েছিলাম!! এখনতো তোদের দেখে মনে হচ্ছে সবকিছু ঠিকই আছে!! Was it a prank?!” শাহাব কমন রুমে ঢুকে।

মায়েশা নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে জবাব দেয়, “It wasn’t a prank শাহাব! We were laughing at our fates!! খবর শুনলে, তোর পেটের ভাত চাল হয়ে যাবে। দাঁড়া, BD Einstein রুম্মান আসুক, একবারে বলি। He is on his way to university!!”

তিন বন্ধু (??!!??) মিলে ততোক্ষণ আড্ডা (?!?!) মারতে থাকে! আড্ডার নামে চলে গীবত, অপরের সমালোচনা, আর নিজেদের প্রশংসা!!!

“হাই, কি খবর তোদের?! এতো ইমারজেন্সির কি হলো?!!” কমন রুমে ঢুকে বসতে বসতে রুম্মান প্রশ্ন ছুঁড়ে।

মায়েশা ফ্লোর নিয়ে নেয়, “যাক, BD Einstein রুম্মান আমাদের মাঝে পৌঁছিয়েছেন! এখন অধিবেশন শুরু করা যাক!! ব্যাপারটা খুব simple!! ” তারপর মায়েশা সেই তথাকথিত simple ব্যাপারটা সবাইকে খুলে বলে, মাঝে মাঝে কথা যোগায় বর্ষা।

সব শুনে শাহাবের মুখ থেকে বের হয়, “What the ….???!!!!”

আর রুম্মান বলে, “চলতো, স্যারের কাছে যাই। বইতো কেউ কিনে নাই এখনো, presentation টা দিবো কিসের উপর, এটা অন্তত জেনে আসি! আর আবার আমারে গ্রুপলিডার না বানাইলে কিন্তু আমি তোগো সাথে নাই, এটা কয়া দিলাম!!”

শাহাব সাথে সাথে রেগে উঠে বলে, “কেন?! আমিই তো সবসময় গ্রুপলিডার হই!! আমি গ্রুপলিডার হিসাবে খারাপ কিসের?! আমার ল্যাপটপ, আমার নেট, আমার প্রিন্টার, আমার গাড়ি এগুলা ছাড়া কি কোন report- assignment তোরা সাবমিট করতে পারতি?!”

রুম্মানও তেড়ে উঠে জবাব দেয়, “আরে, আমার বাসায় কি কম্পিউটার নাই নাকি?! আর নীলক্ষেতেই হাজার হাজার দোকান আছে, যেখানে নেট ইউজ করা যায় আর প্রিন্ট আউট করা যায়! মূল ব্যাপারটা হচ্ছে Brain, যেটা আমার আছে, তোদের কারই নাই! আর লাস্ট সেমিস্টারেই না ঠিক হয়ে গিয়েছিলো যে আমিই সবসময় গ্রুপলিডার হবো?!”

ওদের এই চিল্লাচিল্লির মাঝেই, চোখে চোখে কথা হয় স্বঘোষিত দুই smart কন্যার। মায়েশা পরিস্থিতি নিয়েন্ত্রণে এগিয়ে আসে, আলতো করে রুম্মানের হাতের উপর হাত রেখে বলে, “তোরা দুইজন কি শুরু করলি?! কমনরুমে এরকম করে ঝগড়া করলে আমাদের গ্রুপের মান-সন্মানটা কোথায় যাবে?! আর ফ্রেন্ডসদের মধ্যে একটু আধটু compromise করতেই হয়, কেননা we are like family! বুঝলি??!!”

এবার হাল ধরে বর্ষা, “শাহাব, গতবার তোর একটু ভুলের জন্য আমাদের সবার A+ মিস হয়ে গিয়েছিলো। আর তাইতো আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম যে রুম্মানই আমাদের গ্রুপলিডার হবে। তুইও তো তখন ‘হ্যাঁ’ বলেছিলি, তোর বুঝি মনে নেই?!”

কিছুক্ষণ গাইগুই করার পর শাহাব দুই সুন্দরী বান্ধবীর কথা মেনে নেয়। তারপর সবাই মিলে স্যারের রুমে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার সবাইকে দেখা যায় কমন রুমে।

বর্ষা, “Well, sir is quite clever!! উনি আমাদের presentation টা এইজন্যই আগে আগে নিচ্ছেন যেন আমরা বই থেকে কোন হেল্প নিতে না পারি! তবে নেট আর লাইব্রেরি থেকে হেল্প নিতে পারবো আর আমাদের টপিক ‘২১ শে ফেব্রুয়ারি’। টপিক হিসাবে যথেস্টই ইজি এটা!! খুব বেশি পরিশ্রম করা লাগবে না এবার কারণ আমরা সবাই কম বেশি জানি এই দিনটার সম্পর্কে। আর তাই আমাদের এইম থাকবে হাইয়েস্ট নাম্বার পাওয়া।”

মায়েশা উত্তর দেয়, “I know a little about 21st February!! Cause, আমি কখনই বাংলাদেশের ইতিহাস সেভাবে পড়ি নাই।”

রুম্মানকে কিছুটা চিন্তিত দেখায়, কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি “শালা, ব্যাপারটা কেমন হইলো?! ২১শে ফেব্রুয়ারীর উপর presentation কিন্তু দিতে হবে English এ!! এটাতো পুরাই বেইমানি, জাতির সাথে বেইমানি, যারা ভাষা আন্দোলনে শহীদ হইসে তাদের সরাসরি অপমান!! হালায়......”।

শাহাব রুম্মানকে থামিয়ে দেয়, “উফ্!! তুই কি বাংলাদেশের intellectual হোলি নাকি?! থামতো!! Graduation লেভেলে বাংলায় presentation, ব্যাপারটা খুবই ridiculous শোনায়!! আর ভুলে যাসনে আমাদের ক্লাসে কিন্তু তিনজন ফরেনার স্টুডেন্টও আছে। তারাতো বাংলা বুঝে না!!”

রুম্মান শাহাবের যুক্তি মানে না, “এটা খুব সহজ একটা ব্যাপার শাহাব!! তুই ব্যাপারটা এভাবে দেখ, ২১শে ফেব্রুয়ারীতে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবন দিয়েছি, তাই না?! আর এখন ২১শে ফেব্রুয়ারীকে সন্মান জানাবো আমরা English এ?! ব্যাপারটা কি অনেকটা ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গলায় মাইকেল জ্যাকসনের English pop গান গাওয়ার মতো’ হয়ে গেলো না?!”

এবারো মায়েশা এগিয়ে আসে, “রুম্মান শুন, আমরা একটা global standard ডিগ্রী নিতে এখানে এসেছি! So, আমাদের পড়াশোনাটাও সেরকম standard ই হতে হবে, তাই না?! তুই এগুলা ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে ” presentation এর format, outline, আর sequence টা আজ রাতের মধ্যেই তৈরি করে ফেল! আজকের দিনটা চলে গেলে আর থাকবে কিন্তু মাত্র ৬ দিন!!”

রুম্মান কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, “তোরা সবাই আমার সাথে একটু স্যারের কাছে চলতো!”

বর্ষা বিরক্তিভাব লুকানোর কোন চেস্টাই করে না, “তোর সমস্যাটা কি?! যদি presentation টা বাংলায় দিতে চাওয়া নিয়ে তুই স্যারের কাছে যেতে চাস তাইলে আমরা কেউই তোর সাথে নাই!! সামান্য ব্যাপারটা এতো পেঁচানোর কি আছে?! আমাদের highest number পাওয়া নিয়ে কথা, যেটা হয়তোবা এবার সম্ভব হবে। আর স্যার বাংলাতে presentation দিতে বললেই যে আমাদের জন্য ভালো হবে, সেটা ঠিক না। মায়েশা আর অরণী দুইজনই English মিডিয়াম থেকে এসেছে, এদের কথা তুই ভাববি না! আর আমরা যদি সবাই মিলে বলিও স্যার আমাদের কথা কখনই শুনবে না!!”

বর্ষার লম্বা ভাষণ কোন রেখাপাত করে না রুম্মানের মনে। রুম্মান তার স্বরূপে আবার আবির্ভাব হয়, “তোরা এখন আমার সাথে না গেলে আমি কিন্তু অন্য গ্রুপে চলে যাবো আর যাওয়ার আগে স্যারকে বলে যাবো যে তোরা কোন কাজই করিস না তাই আমাকে অন্য গ্রুপে যেতে হলো!! আর তোরা সবাই জানিস অন্য যে কোন গ্রুপ আমাকে লুফে নিবে!!”

মায়েশা চেয়ার ছেড়ে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়, “চল্, স্যারের কাছে যাই! but I do firmly believe that sir would never allow us to present in Bangla!!”

বর্ষাকে দেখে মনে হয় যে কেউ ওকে ফাঁসির হুকুম দিয়েছে!! কিছুক্ষণ পর আবারো ওদের দেখা যায় কমন রুমে!! রুম্মানের মুখে রাজ্যজয়ের হাসি!!

“দেখলি, স্যার কেমন জ্ঞানী মানুষ!! উনি আমার এককথাতেই রাজি হয়ে গেলেন! শুধু তাই না, আমার idea টা শুনে উনি বলতে গেলে লাফিয়েই উঠলেন!! আমাকে তো উনি ‘genius’ বললেন!! আর সবচেয়ে বড় কথা স্যার খুশি হয়ে আমাদের গ্রুপের সবাইকে ২ নাম্বার করে বোনাসও দিয়ে দিয়েছেন!!!” রুম্মান খুশিতে আত্মহারা!!

মায়েশা খুশি হয়ে বলে উঠলো, “Holy cow!!! You are a genius in true sense and am proud to be your friend rumman!! Cheers for BD Einstein rumman!!”

রুম্মান হেসে বললো, “এখন থেকে শুধু বাংলা, মায়েশা বেগম!! আগামি ৬ দিন শুধু বাংলা বলবি তুই আর অরণী!!”

স্যার খুশি হয়ে রুম্মানদেরকে বাংলায় presentation দিতে বলেছেন এবং ২ নাম্বার করে বোনাসও দিয়েছেন কিন্তু এতেও বর্ষা আর শাহাবের মুখে হাসি নেই! ওরা এখনো ভাবছে যে ওরা সবাই পরাজিত হয়েছে একটা সামান্য মানুষরুপি ছাগলের কাছে!!!

অবশেষে, presentation এর দিন এলো। মেয়েদের তিনজনই সাদাকালো শাড়ি পড়ে এসেছে অবশ্যই রুম্মানের বুদ্ধিতে। রুম্মান আর শাহাব পাঞ্জাবী পরার অনুমতি পায় নি, ওরা দুইজন presentation এর formal dress code এ এসেছে। ওদের সাদা শার্ট, কালো টাই আর কালো ফুলপ্যান্ট দেখে মনে হচ্ছে “২১শে ফেব্রুয়ারী” এর চেতনা ওদের ভালো ভাবেই স্পর্শ করেছে। অনবরত বাংলায় কথা বলার ফলে মায়েশা আর অরণী খুব ভালো করেই ‘২১শে ফেব্রুয়ারীর” উপর গড়গড় করে বাংলায় যার যার নিজেদের topic গুলো বলে যায়। বিশেষ করে মায়েশা “২১শে ফেব্রুয়ারী আর আমাদের সাহিত্য” এই অংশটুকু খুব সুন্দর করে বলে, জহির রায়হানের চলচ্চিত্র “জীবন থেকে নেয়া”, মুনীর চৌধুরীর মঞ্চ নাটক “কবর”, শওকত ওসমানের উপন্যাস “আর্তনাদ”, কবি শামসুর রাহমান এর কবিতা “বর্ণমালা”, “আমার দুঃখিনী বর্ণমালা”, “ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯” এবং প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া ২১শের বইমেলা সবকিছু সুন্দর করে, গুছিয়ে এবং নির্ভুল ভাবে উপস্থাপন করে।

BD Einstein রুম্মানের নেতৃত্বে ২১শে ফেব্রুয়ারীর উপর দেয়া এই presentation
এ ওরা সর্বোচ্চ নাম্বার পায়। আর স্যার সবাইকে ২ নাম্বার করে বোনাস দেওয়াতে presentation এ ওদের প্রত্যেকের নাম্বার হয়, ১০ এ ১২!!!!

সবার Presentation শেষে স্যার ফলাফল ঘোষণা করে ক্লাসরুম থেকে চলে গেলে ওরা পাঁচজন উল্লাসে ফেটে পরে। ক্লাসের অনেকেই ওদের “congrats” জানায়। শাহাব আর বর্ষাও সব রেষারেষি ভুলে রুম্মানকে আদর্শ দলনেতা হিসাবে মেনে নেয়!!! বর্ষা স্বীকার করে, “রুম্মান, তোরে ছাড়া আর অন্য কাউকে দিয়েই এটা সম্ভব হতো না!! স্যার কি বললেন শুনলি না?! স্যার দেখা এটাই নাকি সবচেয়ে ভালো presentation!!!”

অরণী বলে, “Its call for a celebration!!! Lets have lunch together at ‘Yummy in the Tummy’!!”

‘Yummy in the Tummy’ বনানীর একটা দামি দোকান, আর দামি দেখেই অভিজাত!!!

“আরে, এখন থেকে বাংলাতেই কথা বল অরণী, বাংলাতেই আমাদের জয়!!! আর আজ খাওয়াবে কে, আমার পকেট ফুটা!!” রুম্মান বলে।

শাহাব বলে, “অবশ্যই এখন থেকে শুধু বাংলা!! জয় হক বাংলার!! আর আমিই খাওয়াবো, রুম্মানের সৌজন্যে আজকের খাওয়া!!!”

সবাই হাসাহাসি করতে করতেই শাহাবের গাড়িতে উঠে। শাহাব গাড়ি স্টার্ট দেয়, পিছন থেকে মায়েশা বলে, “শাহাব, ‘rabiosa’ ছাড়, জোরে”। পথচারী আর আশেপাশের সব যানবাহনকে সচকিত করে শাহাবের Rav4 এ বাজতে থাকে ল্যাটিন পপ গায়িকা Shakira এর গলা, “Oh ya papi, you're like a mocha,
Come get a little closer and bite me en la boca…….”

বিড়বিড় করে রুম্মান বলে, “We are lost again!!”


--------------------------------------------------------------------------
বিঃ দ্রঃ এই গল্পের কোন চরিত্রই কাল্পনিক নয়!!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য হ্যা এই গল্পের কোন চরিত্রই কাল্পনিক মনে হয়নি। মাঝে মাঝে নিজেকেও যেন এই দলে দেখতে পেলাম (আমিওতো দু'চার, দশটা ইংেরজী শব্দ অবলীলায় বলে ফেলি। তবে এই ধারনায় একমত নই যে ২১ এলেই বদলে যেতে হবে । প্রয়োজনে বিদেশি ভাষা ব্যবহার করা যাবে না কেন? তবে যেখানে বাংলা সবাই বোঝে সেখানে নয় মানে মায়ের ভাষার সম্মান ক্ষুন্ন না করে। স্যাটায়ার ভাল হয়েছে পছন্দে রইলো...............☼
ভালো লাগেনি ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ সূর্য ভাই কে!!! :) আর সাথে অনেক অনেক শুভকামনা :)
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
তানি হক একদম বিবেক ঘুরিয়ে দেবার মত লিখেছেন !অভিনন্দন জানাই..আপনাকে ..ধন্যবাদ
অসংখ্য ধন্যবাদ তানি হক ম্যাডামকে সময় করে গল্পটি পড়ার জন্য!!! :) খুব ভালো থাকেন সবসময়!!! শুভকামনা!!!
amar ami বেশ সুন্দর লিখেছেন আর গল্পটা বাস্তব থেকেই নিয়েছেন নিশ্চই কারণ বাস্তবতা এখন এমনি....
আমার আমি ম্যাডামকে অনেক ধন্যবাদ!!!! :) ভালো লেগেছে জেনে, আমারও ভালো লাগলো! অনেক শুভকামনা রইলো!!! :)
মাহ্ফুজা নাহার তুলি We are lost again!!”..............অনেক ভালো বলেছেন.....
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
আন্তরিক ধন্যবাদ!!! :)
মিজানুর রহমান রানা বেশ সুন্দর লিখনি।
ভালো লাগেনি ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
আন্তরিক ধন্যবাদ মিজানুর রহমান রানা ভাই!! :)
ভালো লাগেনি ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
এফ, আই , জুয়েল # অন্য ধারনার --অন্য ষ্টাইলের অনেক সুন্দর একটা গল্প ।= ৫ দিলাম ।।
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ এফ, আই, জুয়েল ভাই!!! :) খুব ভালো থাকেন, সবসময়!!! :)
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ “We are lost again!!” -------- আর কতবার হারাবো? আর হারাতে চাই না। লেখা ভাল লেগেছে । শুভেচ্ছা।
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
ধন্যবাদ জালাল উদ্দিন মুহম্মাদ ভাই!!! :) আপনার জন্য শুভকামনা থাকলো!!! :)
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সালেহ মাহমুদ বিঃ দ্রঃ পড়ে ভালো লাগলো। গল্পটি পড়ে গল্পটি যে কাল্পনিক নয় তার প্রমাণ পেলাম। অসাধারণ জ্যোতি হাসান। অসামান্য দক্ষতায় আমাদের সমাজের বিশেষ একটা শ্রেণীর ভাষাগত অবস্থানকে ফুটিয়ে তোলার জন্য। প্রিয়তে নিলাম। আর সর্বোচ্চ নাম্বার।
ভালো লাগেনি ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সালেহ মাহমুদ ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ!!! :) সুখী হলাম জেনে যে আমার পরিশ্রম বৃথা যায়নি!!! :) খুব ভালো থাকবেন, শুভকামনা রইলো!! :)
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
এম এম এস শাহরিয়ার ঠিক তাই .........................
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
:) ঠিক বলেছেন ভাইজান!!!! :)
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Osadharoner ghore tik debo.......golpoer dharabahikota...monojog bichchuti ghotay ni.........ak tane pora jay......amon akti golpo. suvo ratrri....Joti.......
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ ভাইজান!!! :) আপনার মন্তব্য পড়ে মন খুশিতে ভরে গেলো!!! :)
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

১৪ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪