বড় বাবা

আঁধার (অক্টোবর ২০১৭)

জ্যোতি হাসান
(আমি ব্রিটিশ সাইন্স ফিকশন টিভি সিরিজ Black Mirror এর একজন অন্ধভক্ত। এই সিরিজের প্রতিটা পর্ব আমার একাধিক বার দেখা। এই সিরিজের Second Season এর White Bear এর কাহিনীর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই গল্পটি লেখা।)

মধ্যবয়স্ক লোকটির জ্ঞান ফিরলো প্রচণ্ড পানির পিপাসা নিয়ে, জ্ঞান ফিরে সে দেখে তার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সে একটা খটখটে চৌকিতে শুয়ে আছে, মাথার নিচে পিলো কাভার ছাড়া বালিশ। বড় জানালা দিয়ে সূর্যের আলো আসছে, ঘরের দরজা-জানালা সব বন্ধ, ফ্যান নেই, প্রচণ্ড গরমে আর পিপাসাতে লোকটির অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে, মাথা আর কপালের ঘামে সেই বালিশ ভিজে গেছে। চৌকির সামনের দুই পায়ার সাথে উনার দুই হাত বাঁধা, আর পিছনের দুই পায়ার সাথে উনার দুই পা বাঁধা। উনি কিছুই মনে করতে পারছেন না......উনি কে, উনি এইখানে কিভাবে এলেন...কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে উনার পানির জন্য পিপাসাটাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে, আর সাথে যন্ত্রণাদায়ক গরম...

“কেউ কি আছেন? কেউ কি শুনছেন? প্লীজ সাহায্য করুন......দয়া করুন...” এই কথাগুলোই প্রথমে জোরে জোরে তারপর গরমে আর পিপাসাতে ক্লান্ত হয়ে আস্তে আস্তে বিড়বিড় করতে থাকে লোকটি। কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞানও হারায়। জ্ঞান ফিরে আগের মতো পিপাসা টের পায় না, মাথে ঘুড়িয়ে যতখানি পারা যায়, দেখে মাঝারি আকারের ঘরটিতে আর কি কি আছে...একটা চৌকি যেটার উপর উনি নিজে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে, আর একটা বন্ধ জানালা আর একটা বন্ধ দরজা! দরজা দেখে উনার মনে আশা জাগলো নিশ্চয়ই দরজার ওপারে গেলেই সব জানা যাবে আর পেটপুড়ে পানি খাওয়া যাবে। মধ্যবয়স্ক হলেও উনার শরীরের গঠন ভালো, আর তাই নতুন উদ্যমে আবার রশিগুলো টানাটানি শুরু করে, ওনাকে অবাক করে দিয়ে উনার ডান হাতের রশির বাঁধন খুলে যায়, তারপর কিছুটা সময় চেষ্টা করে উনি নিজেকে মুক্ত করে দরজার দিকে এগিয়ে যান। দরজার হাতলে হাত দিয়ে দেখেন দরজাতে কোন তালা লাগানো নেই। বেশ অবাক হলেই দরজা খুলে বাইরে পা রাখেন উনি, দেখেন, একটা সাজানো গোছানো ড্রয়িংরুমে এসে পড়েছেন উনি, আর ডাইনিং রুমের অংশে ফ্রিজও আছে, সাথে সাথে ফ্রিজের কাছে পৌঁছে ফ্রিজ খুলে ঠাণ্ডা পানির বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি পান করে নেন উনি। কতক্ষণ যাবত উনি এইরকম অবস্থায় বন্দি ছিলেন উনি জানেন না, কিন্তু তার অনেক ক্ষুধা লেগেছে সেটা টের পেলেন। কিন্তু ফ্রিজে পানির বোতল ছাড়া আর কিছুই নেই, তাও মাত্র একটাই বোতল ছিলো। ডাইনিং টেবিলের চেয়ার নিয়ে উনি একটু বসলেন জিরিয়ে নিতে, আর ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে উনি কে, এইখানে কিভাবে এসেছেন। খুব বেশী চিন্তা করতে পারলেন না কারন ফ্রিজের গায়ে ম্যাগনেট দিয়ে আটকানো ফুটফুটে আট-দশ বছরের একটি মেয়ের ছবি, গোলাপি ফ্রকে মেয়েটিকে কি সুন্দরই না লাগছে!! মায়া কাড়া চেহারা আর ডাগর চোখ!! লোকটির আর কিছুই মনে করতে না পারলেও মেয়েটিকে উনার কেমন যেনো চেনা চেনা লাগলো...... “আচ্ছা, এই মেয়েটির সাথে কি আমার কোন সম্পর্ক আছে?” লোকটি ভাবতে চেষ্টা করে কিন্তু ভেবে পায় না, তাই ছবিটি খুলে নিয়ে শার্ট এর পকেটে ভরে, ছোট বাসাটায় আর কাউকে দেখতে পায় না, তাই চিন্তা করে বাইরে বেরিয়ে যায় লোকটি।

ফ্ল্যাটের দরজা খুলে, সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নামে লোকটি, কিন্তু কাউকেই দেখতে পায় না, বাড়ির মেইন গেট খুলে রাস্তায় বের হয় উনি, কড়া রোদে ঠিকমতো দেখাও অনেক কষ্ট। রাস্তা ধরে কিছুদূর এগিয়ে যায় উনি, আশেপাশে অনেক বাড়ি, কিন্তু কোন মানুষ দেখতে পায় না উনি। দিনে দুপুরে এমন নির্বাক নিঝুম হয় না কোন শহর! কিছুটা ভয় পেলো উনি।

“কে আছেন, দয়া করে সাহায্য করুন......প্লিজ হেল্প!” উনার ব্যাকুল চিৎকারেও আশেপাশের বাড়িগুলোর ঘুমভাঙ্গে না, উনি রোদকে হাত দিয়ে আড়াল করে পাশের বিল্ডিং এর দিকে তাকায়, দোতালার জানালায় কি কাউকে দেখা গেলো? অবাক হয়ে উনি দেখলেন, সত্যি সত্যি একজন মহিলাকে দেখা গেলো, উনি মুচকি হাসছেন আর তার হাতে ধরা মোবাইল দিয়ে লোকটিকে ভিডিও করছেন! লোকটি অবাক হয়ে যায়, পরে রেগে চিৎকার করে উঠে, “এই মহিলা আপনি কি দেখছেন, আমাকে সাহায্য করুন...”

চাঁপা হাসির আওয়াজ পায় উনি, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে, এই পাশের চারতালা বিল্ডিং এর বারান্দা ও জানালা থেকে অনেকেই মোবাইল ফোন হাতে উনাকে ভিডিও করছেন অথবা ছবি তুলছেন আর সবার মুখে হাসি যেনো কোন সার্কাস হচ্ছে এইখানে। আর উনি সেই সার্কাসের একজন ভাঁড়!! লোকটি রাগে দুঃখে চিৎকার করে উঠে, রাস্তা থেকে ইটের টুকরো তুলে নিয়ে এক কাঁচের জানালা বরাবর ছুঁড়ে মারে, তার লক্ষ্য মিস হয়ে যায়, উনি এতে করে আরো রেগে উঠেন, “তোমরা সব জাহান্নামে যাও...” অভিশাপ দিয়ে উনি রাস্তা ধরে আগাতে থাকেন। একটু এগিয়েই বুঝতে পারেন তার পিছনে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে কারন তাদের চাঁপা হাসি আর পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, সাথে সাথে উনি মাথা ঘুরিয়ে দেখলেন, প্রায় বিশেক মানুষ জড় হয়েছে, তারা পায়ে পায়ে তার দিকে আসছে, তাদের সবার মুখ হাসি হাসি আর হাতে মোবাইল ফোন যা দিয়ে সবাই উনাকে ভিডিও করছে!

গ্রীষ্মের রোদে রাস্তা তপ্ত হয়ে ছিলো, তার উপর উনার খালি পা, তাও উনি প্রাণ ভয়ে দৌড়নো শুরু করলেন...কিন্তু উনার সাথে পাল্লা দিয়ে পিছনে আরও মানুষ আসতে লাগলো, সবাই মজা পেয়ে হাসছে আর মোবাইলে ভিডিও আর ছবি তুলছে, বাচ্চা, বড়, কিশোর কিশোরী, তরুন তরুণী, বৃদ্ধ বৃদ্ধা সবই আছেন আর সবাই খুব সুন্দর পোশাকে সজ্জিত। উনি এগোচ্ছেন আর তার সাথে মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে, এছাড়া, আশেপাশের বাড়ির থেকেও মানুষ যোগ দিচ্ছে!

একপর্যায়ে মধ্যবয়স্ক লোকটি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন, মানুষজন উনাকে গোল করে ঘিরে ধরছে, একপাল অপ্রকৃতস্থ উম্মাদ মানুষ...কিন্তু কেউ কিছুই করলো না, শুধু হাসতে হাসতে উনাকে ভিডিও করতে লাগলো!
লোকটি আর সহ্য করতে না পেরে কেঁদে ফেললেন, “কেউ কি আছো? আমাকে বাঁচাও, এ কোন জাহান্নাম...”, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন উনি।

এমন সময়ে দূরে শোনা গেলো ঢাকের শব্দ, দিম-দুম করে বাজছে আর ক্রমেই ঢাকের শব্দটি বেড়ে যাচ্ছে, লোকজন খুশিতে জোরে হেসে ফেলে বলতে লাগলো, “বড় বাবা এসে পরেছে...বড় বাবা এসে পড়েছে!!”

এমন সময়ে একজন অল্পবয়স্ক তরুণী ছুটে এলো, লোকটিকে ধরে উঠালো, বললো, “তাড়াতাড়ি কান্না বন্ধ করুন, আমাদের পালাতে হবে বড় বাবা এসে পড়লে আর রক্ষা নেই! চলুন প্লীজ!” লোকটি এতোই অবাক হয়ে যায় যে উনি আর কিছু মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করতে পারেন না......মেয়েটির সাথে দৌড়াতে শুরু করেন আর পিছু পিছু সবাই হাসি মুখে তাদের সাথে সাথে দৌড়াতে থাকে, হাতে সবার মোবাইল আর মুখে মুচকি হাসি!! এদিকে ক্রমেই বেড়ে উঠছে ঢাকের গুড়ু গুড়ু আওয়াজ যেনো সাক্ষাৎ নরক থেকে শয়তান হাসি দিচ্ছে, লোকটির কলজের পানি শুকিয়ে দিচ্ছে আওয়াজটা!

মেয়েটি পর্যায়ে লোকটির হাত ধরে বলে, “চিন্তা করবেন না আংকেল, আমার বন্ধু গাড়ি নিয়ে এখুনি আসবে, বড় বাবা আমাদের ধরতেই পারবে না! এখন প্লীজ একটু জোরে দৌড়ান, ঐ মোড়টার কাছেই আমার বন্ধুর গাড়ি!”

ঢাকের আওয়াজ এখন যেনো পাশেই আর লোকজন সবাই মন্ত্রের মতো জপছে, “বড় বাবা আসছে, বড় বাবা ঐতো আসছে!” লোকটি দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপাতে হাঁপাতে মেয়েটিকে প্রশ্ন করে, “বড় বাবা কে? আমি আগে কোথায় যেনো নামটা শুনেছি!”

মেয়েটি উত্তর দেয়, “বড় বাবা যম, মানুষরুপী শয়তান, আপাতত এইটুকুই যেনে রাখুন, ঐতো আমার বন্ধু গাড়ি নিয়ে এসে পড়েছে...”

একটি ঝরঝরে, পুরানো চলন্ত মাইক্রোবাসে উঠে পড়ে মেয়েটি আর লোকটি, ততক্ষণে বড়বাবার বিশাল গাড়ি থামে, লোকটি মাথা ঘুরিয়ে দেখতে পায়, বড় বাবার পড়নে কঙ্কালের মুখোশ, হাতে উনার একটা শটগান উঁচিয়ে রেখেছে, আর উনি দেখতেও অনেক লম্বা!

মেয়েটি বিরক্ত হয়ে বলে, “আহ! কি করছেন এইসব, নিজেও মরবেন, আমাদেরও মারবেন, মাথা নিচু করে রাখুন!”

গাড়ি কিছুদূর এগিয়ে যাবার পর ঠাণ্ডা হয়ে, লোকটি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে, “আমাকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ মা, তুমি কে? আর সব মানুষগুলো সব এইরকম নিষ্ঠুর আচরণ করছে কেন?”

মেয়েটি উত্তর দেয়, “এইসব মানুষ সব বড় বাবার দলের, বড় বাবা মোবাইলের মাধ্যমে সবাইকে বশ করে রাখে। শুধু আপনি, আমি, আমার বন্ধু আর এইরকম কিছু মানুষ আছে যাদের বশ করতে পারেনি...মোবাইলের মাধ্যমে সিগন্যাল পাঠিয়ে যা করতে বলা হবে তাই করে সবাই! সবাই বড় বাবার হাতের পুতুল! কিন্তু আপনি কে? আপনি এই জিন্দালাশ মানুষগুলোর মাঝে কিভাবে আসলেন? ”

লোকটি উত্তর দেয়, “আমি কিছুই জানি না মা, মাথায় কিছুই আসতেসে না...তবে এই মেয়েটিকে চেনা লাগছে, মনেহয় আমার মেয়ে হবে......আর বড় বাবার নামটা খুব চেনা লাগছে!......কিন্তু এখন আমরা কোথায় যাচ্ছি?” এই বলে পকেট থেকে সুন্দর বাচ্চা মেয়েটির ছবিটি বের করে দেখায় লোকটি!

মেয়েটির বন্ধু, যে কিনা মাইক্রো বাসটি চালাচ্ছে, সে এতক্ষণে কথা বললো, “এই জিন্দালাশগুলো এমন জায়গায় যেতে পারে না যেখানে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নাই, তাই আমাদের বাঁচার জন্য এমন জায়গায় লুকাতে হবে যেখানে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নাই, তাইলেই বড় বাবা আমাদের ছুতেঁ পারবে না!”

কেউ কিছু বলার আগেই লোকটি বলে উঠলো, “তাহলে চিরনির বনে আমরা যেতে পারি, ঐখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই!”

মেয়েটি অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকায়, কিন্তু মেয়েটির থেকেও বেশী অবাক হয় লোকটি নিজে কারন উনি হাজার চেষ্টা করেও যেখানে নিজের নামটা পর্যন্ত মনে করতে পারেনি সেখানে বনের নাম কিভাবে মনে করে বলতে পারলো!! শুধু তাই না চিরনির বনে যাবার রাস্তাটিও লোকটি মেয়েটির বন্ধুকে বলে দিতে পারলো! এবং লোকটি বেশ খুশি হলো এটা ভেবে আস্তে আস্তে তার স্মৃতি ফেরত আসছে!

চিরনির বনে ঢুকে এক টিলার কাছে বিশাল বট গাছের নিচে, মাইক্রোবাসটি দাঁড়া করালো ছেলেটি! তারপর গাড়ি থেকে তারা দুইজন নামলো, কিন্তু লোকটির বোধহয় আরও কিছু স্মৃতি মনে আসছে অথবা শরীর খারাপ লাগছে, তার চেহারাটা ক্রমেই ফ্যাঁকাসে হয়ে যাচ্ছে...

মেয়েটি সেটা লক্ষ্য করে বললো, “আংকেল নীচে নেমে আসেন, গরমের থেকে একটু মুক্তি পাবেন...”

লোকটি কাঁপতে কাঁপতে গাড়ি থেকে নামলো, উনার চেহারাটা দেখে মনেহচ্ছে উনার মাথায় যেনো আকাশ ভেংগে পড়েছে! লোকটি আর দাঁড়াতে পারলো না, হাঁটু ভেংগে মাটিতে বসে পড়লো! কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, “ক্ষমা করো পরম করুণাময়...এই অধমকে মাফ করো!!”

মেয়েটি আর ছেলেটিকে এইসব কিছুই স্পর্শ করলো না, তারা নিজেদের ভিতর কিছু বলে জোরে হেসে উথল......আবার সাথে সাথে রক্ত হিম করা ঢাকের শব্দ কানে এলো, যেটা ক্রমেই বাড়ছে আর সাথে সাথে হাজার মানুষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে!

লোকটি মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললো, “মা, আমাকে সবাই মারতে আসছে, আমাকে মারাই উচিত...এই জীবন আর আমি রাখতে চাই না...” হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো লোকটি!

গাড়ি আর অনেক মানুষ জায়গাটিকে ঘিরে ফেললো সবার হাতে মোবাইল আর সবাই ভিডিও করছে, অনেক মজা নিয়েই ভিডিও করছে! ঢাকের আওয়াজ অবশেষে বন্ধ হলো, বড় বাবা নামের মুখোশ পড়া লোকটি মাটিতে ফুঁপিয়ে কান্নারত লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললো, “তারপর বড় বাবা, তুমি কি সবকিছু স্বীকার করলা?! নাকি এখনো তোমার কোন কিছু বলার আছে!?!”

উনি কেঁদে উত্তর দিলেন, “আমাকে তোমরা মেরে ফেলো, এইভাবে আমি বেঁচে থাকতে চাই না...দয়া করো আমাকে মেরে ফেলো...দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এইভাবে বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না......” উনার হাহাকারে সবাই জোরে জোরে হেসে ফেললো, যেনো কোন মজার কথা শুনেছে... লোকটির যন্ত্রণা কান্না কাউকেই স্পর্শ করছে না!

মাইক হাতে ঘ্যানঘ্যানে গলায় কংকাল মুখোশধারী বলতে লাগলো, “আট বছরের ছোট মিষ্টি মেয়ে বকুল, তোমাকে বড় বাবা ডাকতো, তুমি মেয়েটিকে বনের ঠিক এই জায়গাতে এনে ধর্ষণ করেছো, এবং পরে নিষ্ঠুর নির্দয় ভাবে জ্যান্ত আগুনে পুড়িয়ে মেরেছ, তারপর আবার পুরো ঘটনাটা তুমি তোমার মোবাইলে রেকর্ড করেছো! তোমার মতো পশুকে যা শাস্তি দেয়া হচ্ছে সেটা মিষ্টি মেয়ে বকুলের যন্ত্রণার কাছে কিছুই না!”

সবাইকে অনেকক্ষণ ভিডিও আর ছবি তোলার জন্য সময় দিয়ে, সূর্য যখন পশ্চিমে হেলে পড়েছে তখন সেই ছেলেটি আর মেয়েটির উদ্দেশ্যে মুখোশধারী বলে, “ বিকেল হয়ে গেছে, এখন আর ছবি ভালো আসবেনা! এই শয়তান লোকটিকে তুলে নাও, আজকের জন্য শো শেষ, কালকের জন্য প্রস্তুতি নাও!”

আবার মাইক উঠিয়ে নিয়ে ভিডিওরত দর্শক শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মুখোশধারী বলতে থাকে, “সন্মানিত দর্শকশ্রোতা, প্রথমেই অভিনন্দন!!! আপনাদের চমৎকার অভিনয়ের জন্য, আপনারা আপনাদের অংশে খুব সুন্দর অভিনয় করেছেন!!! আজকের জন্য আমাদের শো শেষ হচ্ছে! আপনারা সবাই জানেন আজ থেকে বেশকিছু বছর আগে সমস্ত পৃথিবীতে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করা হয় তাই আমরা মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীদের যে হীন কাজের জন্য তাদের শাস্তি দেয়া হয় সেটার কাছাকাছি অবস্থা দিয়ে চলতে বাধ্য করি আর যেনো তারা কিছু হলেও ভিকটিমের মতো একইরকম পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়! আশা করি কর্মফল থিম পার্কের আজকের শো ভালো লেগেছে, আবার কাল দেখা হবে আরেকজন মানুষরূপী পশুকে নিয়ে!” দর্শকরা হাততালি দিয়ে একে একে বিদায় নিতে থাকে, সবাকেই অনেক পরিতৃপ্ত দেখাতে থাকে।

মেয়েটি আর ছেলেটিসহ বেশ কিছু মানুষ লোকটিকে বেঁধে নিতে থাকে, মুখোশ পড়া লোকটি ওদের উদ্দেশ্য করে বলে, “আজকের শো ভালোই গেছে কিন্তু ঐ ইটের টুকরোটি আসলো কোথা থেকে?! এই শয়তান কিন্তু কোন দর্শক বা আমাদের কাউকে আহত করতে পারতো...সুতরাং আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে এইসব প্রপস সাজানোর সময়ে!” লোকটিকে দেখিয়ে বলে, “ওরে এক সপ্তাহের জন্য ঘুমের ওষুধ দিয়ে দাও আর স্মৃতি মোছার ইঞ্জেকশনও দিতে ভুলো না......আর আগামীকালকের প্রপস রেডি করে ফেলো, আগামীকালের পাপীকে রেডি রেখো......!”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মৌরি হক দোলা চমৎকার একটি গল্প। পরিণতির জন্য অপেক্ষা ছিল....খুব ভালো লাগল।
প্রজ্ঞা মৌসুমী Black Mirror সিরিজ দেখিনি। গল্পটা পড়ে ভালো লেগেছে। আপনি চাইলে বিষয়ের সাথে মিলিয়ে অন্ধকার পরিবেশ করতে পারতেন। ছবি ভালো আসবে না বলে? আগুনের আলোয় ভিডিও কেমন হয় ভাবনায় আসলো। বট গাছটার বা সেই মার্ডার সিনের আরও কিছু বর্ণনা কিংবা হীন কাজের আরও একটু কাছে নিয়ে যেতে পারলে বেশ হতো। এই যেমন- একই দিন, একই সময়, ফ্রিজে বকুলের ঝলসানো ছবি। এখানে যেন ভিডিও করাটাই জোর পেয়েছে। শুরুর দিকে কিছু লাইনে এত 'উনি' ছিল। শেষটা অন্যরকম ছিল
ফেরদৌস আলম বাহ্‌ বেশ চমৎকার সায়েন্স ফিকশন। শেষের টুয়িস্টটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। মুগ্ধই করেছেন। শুভকামনা রইল।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী একেবারে ভালো লাগার মত.... খুব দারুণ লেগেছে। শুভকামনা সহ ভোট রইল, সময় হলে আমার পাতা ঘুরে আসুন....
নুরুন নাহার লিলিয়ান কাহিনি তো মিলে গেছে । অনেক কষ্ট করেছেন । শুভ কামনা রইল ।
Salma Siddika black mirror আমার ভীষণ পছন্দের সিরিজ। কিন্তু আপনি তো white bear পর্বটার গল্পটা হুবহু বললেন! আমি তো সেই এপিসোডের সাথে আপনার গল্পের খুব সামান্য বদল ছাড়া কিছু পেলাম না। সেই পর্বে মধ্য বয়সী লোকের জায়গায় একটা মহিলা ছিলো এছাড়া তো তেমন কিছুই বদল করেননি।

১৪ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪