রাত প্রায় ৯টা। আমিন সাহেব বারান্দায় অস্থির ভঙ্গিতে পায়চারি করছেন । রিনি এখনও বাসায় ফেরেনি। রিনি আমিন সাহেবের একমাত্র মেয়ে । সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়েছে । আমিন সাহেবের শরীরটা ভাল লাগছে না । সে একটা চেয়ারে বসে পরলেন । চিন্তিত গলায় ডাকলেন , রাবেয়া । আমিন সাহেবের স্ত্রী রাবেয়া ছুটে এলেন । আমিন সাহেব তাকে বললেন , রিনি এখনও আসছে না কেন ? ওর ফোনও তো বন্ধ । রাবেয়া বললেন , তুমি অস্থির হয়ো না । রিনি ওর বান্ধবীদের সাথে শাড়ি কিনতে গেছে । আগামিকাল পহেলা বৈশাখ । ও ওর বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সকালে রমনায় যাবে । আমার সাথে ওর কথা হয়েছে । আমিন সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন । এইতো সেদিনের কথা , রিনির বয়স তখন ৬ কি ৭ । পহেলা বৈশাখ আসলেই তিনি ছোট্ট রিনির জন্য শাড়ি কিনে আনতেন । নববর্ষের সকাল বেলা রিনি শাড়ি পড়ে বাবার সাথে রমনার বটমূলে যেত । দুপুরের প্রখর রোদে রিনি ক্লান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমিন সাহেব তার সাথে ঘুরে বেড়াতেন । সেই ছোট রিনি এখন রীতিমত তরুণী । এখন আর রমনায় যেতে বাবাকে প্রয়োজন হয় না । রাবেয়া বাপ্যারটা বুঝতে পারলো । সে আমিন সাহেব কে বলল , তুমি মন খারাপ করো না । রিনি বড় হয়েছে । এখন তো ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরতে যাবে । এটাই স্বাভাবিক । এমন সময় হুড়মুড় করে রিনি এসে ঢুকল । মেয়েটা এমনই । যেখানেই যায় নিজের সরব উপস্থিতি জানান দেয়।
আমিন সাহেব আলমারি খুলে রিনির জন্য কেনা শাড়িটা বের করলেন । এবারও তিনি রিনির জন্য শাড়ি কিনতে ভুল করেননি। রিনি আমিন সাহাবের ঘরে এসে ঢুকল । ঢুকেই বলল , বাবা আমার শাড়ি কোথায় ? আমিন সাহেব হেসে ফেললেন । শাড়িটা হাতে দিতেই রিনি বলল , বাবা সকালে আমি আমার বন্ধুদের সাথে রমনায় যাব , কিন্তু বিকালে তোমার আর মার সাথে বের হব । এই শাড়িটা আমি বিকালে পড়বো । তুমি মন খারাপ কোন না । আমিন সাহেব রিনির পিঠে হাত রাখলেন , মন খারাপ করবো কেন ? আমরা না হয় বিকালে কোন ভাল জায়গায় খেতে যাব।
রিনি ঘুম থেকে উঠল অন্ধকার থাকতে । বেশখানিকটা সময় নিয়ে সে সাজল । আমিন সাহেব রিনিকে দেখে বললেন , মা তোকে পরীর মতো লাগছে । রিনি কল্ কল করে হেসে উঠলো । বাবা তুমি সব সময়ি এভাবে বল । রিনি চলে যাচ্ছে । আমিন সাহেব মেয়ের চলে যাওয়া দেখছেন । এই মেয়েটা তার বড় আদরের ।
আমিন সাহেব হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছেন । পহেলা বৈশাখের সকালে রমনার বটমূলে বোমা হামলা হয়েছে । রিনি মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছে । আমিন সাহেবের মুখ পাথরের মতো শক্ত হয়ে আছে । রাবেয়া ধীরে ধীরে হেঁটে আসছে । ডাক্তার তাকে জানিয়েছেন রিনি আর নেই । এই খবরটা সে আমিন সাহেব কে কিভাবে দেবে বুঝতে পারছে না ।
এরপর অনেক গুলো পহেলা বৈশাখ কেটে গেছে । আমিন সাহেব এখনও রিনির জন্য নতুন শাড়ি কিনে আনেন । পহেলা বৈশাখের সকাল বেলায় পুরানো সূর্যটা নতুন করে হেসে উঠে । চারিদিকে নতুনের জয়ধ্বনি তুলে সবাই ছোটে নতুন বছর কে বরণ করে নিতে । আমিন সাহেব আর রাবেয়া সেদিন রিনির পুরানো শাড়ি গুলো বের করেন । রিনির শাড়ি , চুরি সবকিছুই রয়ে গেছে , শুধু রিনি নেই । সবাই নববর্ষের দিনে নতুনকে স্বাগত জানায় , কিন্তু আমিন সাহেব আর রাবেয়ার পহেলা বৈশাখ কাটে পুরানো স্মিতিকে আঁকড়ে ধরে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
এর আগে মিষ্টির লেখা পড়েছি কিনা মনে করতে পারছিনা তবে এটাই যদি প্রথম রেখা হয় আমার খুব ভালো লেগেছে.....আগামীতে আরো ভালো হবে এই কামনা করি...অশেষ ধন্যবাদ মিষ্টিকে......
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।