মা তানি,সুরেলা গলায় ডাকে শুভর বাবা।
: আমার চা'য়ের কাপ নিয়ে আয়তো মা।
ও তরকারী কুটছে,যেতে পারবে না এখন। আমিই দিচ্ছি তোমার চা'
বলে রান্না ঘরের দিকে যায় শুভর মা। চা'য়ের কাপটা হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে শুভর মা আর বক বক করতে থাকে। নয়টা বাজতে চলল, বাথরুমে ঢুকবো, তার পর অফিস। আমার কি একবার জুরাবার সময় আছে, সেই ভোরে উঠেছি। এ কাজ, ওকাজ, সে কাজ, সবতো আমাকেই সামলাতে হয় নাকি? তোমরা পুরুষ মানুষতো শুধু ওর্ডার দেই এ খালাস।
রান্নার তরকারীটা চুলায় দিয়ে,গসল করতে যাই।
এই তানি তরকারী কাটা হলে, বলবি, একটু হাত চালা। তোকে কাজ দিলে যে একটু তারাতারি করবি তাতো আর হবার না। বক বক করতে রান্নার ঘরের দিকে যায় শুভর মা।
শোন তানি,যা বলছি মন দিয়ে শুন। বার্থরুমে এক বাল্টি কাপড় ভিজানো আছে কাঁচবি ঠিকমত। শুভর দুধ বানিয়ে যাচ্ছি, ঠান্ডা হলে ফিডারে ঢেলে, খাওয়াবি। শুভ যে না কান্না করে। আবার তুই খাইয়ে খালি করসি না।
আর তরকারি চুলায় দিচ্ছি, বলগ আসলে একটু পর নামাবি।
দুপুরের আগে দুই পটের ভাত রান্না করবি। দুপুরে শুভর বাবা আসবে।
শুভর বাবা মা দুজনই ন'টার আগেই যার যার অফিসে বেড়িয়ে পরে।
ঢাকা শহরে অফিস। সারা পৃথিবীর টেনশন থাকে মাথায়। শুভর বা'মা প্রাইভেট জব করে। দেশে বাড়ী দক্ষিণ অঞ্চলে। সেবার বাড়ীতে যাওয়ার পর শুভর দাদি, তানিকে পাঠালো, শুভর দেখাশুনার জন্য। যেহেতু ছেলে, ছেলের বৌ, দু'জনই চাকরি করে। শুভকে দেখবে কে?
আজ কাল কাজের মেয়েই পাওয়া যায় না, গার্মেন্টস আইসা সব স্বাধীন হইছে। কেউ বাসায় বাড়ী কাজ করতে চায় না। কথাগুলো বললো, শুভর দাদি।
: তানিকে দেখে রাইখ, কাজ কাম শিখাবা দেখবা সব পারবে।
: এত ছোট মেয়ে, বলে শুভর মা।
: ছোট কও কেন বৌ? বড় মেয়ে পাইবা কই? বড় মেয়ে রাখতে পারবা?
অযথা ঝামেলায় যাবানা বৌ, আমি যা বলি শন, ওর বয়স৭ চলছে, ওকে যা শিখাবা তাই শিখবো। একটু বানাই লইতে হইবো আর কি।
: এই তানি,শোন, তোর মামা, মামির কথামত চলবি। যা'বলবো তাই শুনবি। ঢাকা শহর, বাহির হবি না, একবার পথ হারাইলে খুঁজে পাওয়া যাবে না, কথাগুলো শুভর দাদি বলে ওদের বিদায় দিয়েছিল।
শুভর বয়স,দুই আড়াই হবে। তানির কোলেই, হামাগুড়ি, হাটা শেখা, দুধের ফিডার কাওয়ানো, খালি বাসায় ঘরময় দু'জনের খেলায় যায় বেলা।
সময় মত খাওয়ানো, গসল করানো, সবই তানি করে। তানি এখন রান্নাও করতে পারে।
এইতো সেদিন, শুভ তানি খেলতে খেলতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে দু'জন।
শুভর মা' দরজায় নক করতে করতে,কড়া শব্দে ধরপর করে উঠে পরে তানি। দরজা খুলে দেখে শুভর আম্মু। একগাদা বোকা ঝোকা। খালি ঘুম।
তাইতো ছেলেটা আমার শুকিয়ে যাচ্ছে। ঠিকমত খাওয়াস না তাই না। এমন সময় শুভর আব্বা বাড়ী ফিরে।
: আরে বাবা তানি বকছো কেন?
: ওইতো ছেলেটাকে দেখে রাখে তাই না?
: অন্য আর কেউ নাইতো তাই না? তাই ঐটুকুন মেয়ের কাছ কাছ থেকে আর কত চাও বলতো।
: আল্লাহ শুকুর কর, শুভকে দেখে রাখে।
এমন সময় শুভ ঘুম থেকে উঠে পরে। মায়ের কাছে না যেয়ে, ঘরের কোণে
দারানো তানির জামা ধরে, মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। মায়ের বোকাঝোকা অবলকন করে, আর তানির ময়লা ফ্রকটি টানে কোলে নেয়ার জন্য। শত অভিমান ভলে, তানি শুভকে কোলে তুলে নেই।
শুভর ওজন বেড়েছে। ওকে নিতে তানির কোমর বাঁকা হয়ে যায়। তবুও ঘন্টার পর ঘন্টা শুভকে কোলে রাখে। এখন শুভ একটু একটু কথা বলতে পারে। হটাত সেদিন, শুভ বলে উঠলো! মা' বাবার সামনে।
: তানি' মা দুদু খাব।
তানিতো মহা খুশি, সেদিন হতে ওকে আরো কাছে কাছে রাখে।
শুভর আম্মু তো মহা ক্ষেপা, শুভকে আদর করে আর বলে,
: তানিকে আপু বলবি বাবা, ওতো আপু, আমি তো মা।
মায়ের কোল থেকে জড়াজোড়ি করে, নেমে যায় শুভ! রান্না ঘরে তানিকে খোঁজে আর;
: তানি'মা! তানি'মা! বলে ডাকতে থাকে।
একদিন এই শিশু তানি,বছর গড়িয়ে,কিশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখবে।
স্বামী সংসার, সন্তান,জীবন বৈবভ কেমন হবে জানি না।
তবে সে এখন মা। শুধু তানি'মা। শুভর তানি'মা।
০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
২১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী