্ইচ্ছামতীর নদীর তীরে টাকীর কাছে এক অখ্যাত গ্রামের গল্প। সে বছর খুব বন্যা হয় , এক গ্রাম্য অথচ বর্দ্ধিষ্ণ পরিবারে একটি মেয়ের জন্ম হয় । প্রবল বন্যায় ঘরদোর সব ভেসে যাচ্ছে তারই ইট দিয়ে খাট অনেক উচু করে আতুর ঘরের ব্যাবস্থা করা হয়। এতো কষ্ট করে যদি বা সন্তান জন্মালো তাও আবার মেয়ে , যাই হোক নাম রাখা হলো বন্যা।
এবার একটু বতমানের ছবি কেখা যাক, বন্যা আজই একটা পাহাড়ীয়া গামের স্কুলে বড়দিদি অর্থাৎ হেডমিস্ট্রেস নিযুক্ত হয়েছে। গ্রাম্য স্কুল হলেও ব্যাবস্থা বেশ ভালো , বড়দিদির জন্য একটি ছোটো বাংলো টাইপের বাড়ীর ব্যাবস্থা আছে, একতা ঘর , সামনে একটা ছোটো বারন্দা কাঁচ দিয়ে ঘেরা, পাতাবাহার গাছ উঠে গেছে রেলিং বেয়ে, পিছনে লম্বা একফালি জায়গা ,খাবার টেবিল পাতা , লাগোয়া রান্নার জায়গা , খাবার জায়গার নীচে তকতকে উঠোন , এককোনে পরিষ্কার স্নানঘর, একটি কাজের মেয়ে ঠিক করা আছে নাম ময়না, ভারী মিষ্টি মেয়ে । সে তাড়াতাড়ি বড়দিদির জন্য লেবু চিনি দিয়ে সরবত করে নিয়ে এলো। এতো দূরে এমন ব্যাবস্থা পাবে বন্যা ভাবতে পেরেনি। ময়না অনর্গল কথা বলে , তার মুখে শুনলো কলকেতার এক বড়োলোকের বাবু নাকি এই গ্রামে এসে এই ইস্কুল হাসপাতাল সব করেছে । তিনি এখানেই একটি পোরো বাড়ী ছিল তাকে মেরামত করে নিয়ে , নিজের পছন্দ মতোন সাজিয়ে নিয়ে বেশ আছেন, তার রুচি যে উন্নত তা মনে মনে তারিফ না করে উপায় নেই। বিকেলে একটু বেড়াতে বার হোলো । এখন গ্রাম কতো উন্নত , ছেলে মেয়ে সবাই সাইকেল করে বই খাতা নিয়ে ইস্কুল যাচ্ছে, তবু মুক্ত বাতাস ,সবুজ বনানী, নীল আকাশের হাতছানি, সবেতেই যেন এক মিষ্টি মাদকতা মিসে আছে। যাদের মাটির বাড়ী তাদের বাড়ীর সামনে নিকানো দাওয়া, তুলসী মঞ্চ, বেড়ার গা ঘেসে নানা রকম গাছগাছালি, প্রায় প্রত্যেক বাড়ীতেই পাতকুয়া আছে।কিছুদূর গিয়ে একটা পুকুর চোখে পড়ল ,তাতে অনেক শাপলা ,কলমী এসব রয়েছে। গ্রামের বৌ ঝি রা এইসব শাকপাতা তুলছে। একটি বাড়ী থেকে একজন মহিলা বেড়িয়ে এলেন , সহজ সরল ভাবে বললেন ওমা আপনি নতুন বড়দি আসুন না চা খেয়ে যান ; বন্যা অবাক হলো এখন সবাই চায়ের কথা বলে তাদের শৈশবে মুড়ি নাড়ু দিয়ে লৌকিকতা করা হত । কিন্তু মানুষের সেই গ্রামীন সরলতা এখনও অম্লান।
যাই হোক মহিলার নাম কমলা , মোরা পেতে বসালেন , সুন্দর করে চা , নোনতা বিস্কুট, আর রসগোল্লা এনে দিলেন । খিদেও পেয়েছিল , এঁর আন্তরিকতায় খেয়ে ফেললেন তারপর পায়ে পায়ে হেঁটে চললেন সেই ছোটোবাড়ীটির দিকে । কাল থেকে কাজ আরম্ভ।ময়না তারতাড়ি রাতের খাবার এনে দিল ,সরল পুঁটিমাছের ঝোল আলুভাতে আর ডাল । সারাদিনের পর যেন অমৃত লাগলো ।এতো স্বাদের মাছ অনেকদিন পর খেলেন ,সেই গ্রাম ছারার পর । পরদিন তারাতারি তৈরী হয়ে নিলেন আজ প্রথম দিন জানেন না প্রধান কর্ম কর্তার সাথে আজ দেখা হবে কিনা , একবার অবশ্য ভদ্রতা করে কুশ্ল সংবাদ নিয়েছেন ফোনে , চেনা গলা লাগলো যাই হোক ও নিয়ে আর মাথা ঘামালেন না। কতো গলাই তো ফোনে চেনা লাগে।
স্কুলে একটু তাড়াতাড়ি পৌছলেন প্রথম দিন বলে । মৈনাকবাবু স্কুলের সব কাজ দেখা শোনা করেন তিনি তাকে নিয়ে গিয়ে বসালেন , কর্তা এলে ডেকে নিয়ে যাবেন।ঠিক দশটার সময় এস্লেন প্রধান কর্ম কর্তা , মুখ নীচু করে বসেছিলেন , বললেন মুখ নীচু করেই কথা বললেন , ‘’গরীব স্কুল এখুনি হয়তো আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী দিতে পারবোন তবে মনে কাজ করলে আনন্দ পাবেন , অনাবিল গ্রাম্য সরলতা খোলা আকাশ্ মুক্তবাতাস নদী কোনোকিছুর অভাব নেই মানে যা আপনি পছন্দ করেন, বলেই চমকে মুখ তুললেন ,নিজের অজান্তে কি বলে ফেললেন ? বন্যাও যেন চমকে উঠলো বলতে যাছিল আপনি কি করে জানলেন? আর বলা হলোনা তার আগেই দেখে ফেললেন কুড়ি বছর আগের দেখা হলেও বিশেষ বদলায়নি।
কাঠের মতোন বসে থেকে বন্যা বলল ‘আমি জানতাম না আপনার স্কুল ? জানলে কি হতো আসতেন না তাইতো? তবে আপনি ভুল করছেন এ আমার স্কুল নয় এখানে কোনো কিছুই কারোর সম্পত্তি নয় ,যা আছে তা সবার । যাক পরে কথা হবে এখন আপনি আপনার দায়ভার বুঝে নিন । বন্যা সেদিন সারাদিন সবার সাথে খুব মিলেমিশে কাজ করল এবং কাজ বুঝলো। আনন্দ পেল । সেই কুড়ি বছর পর আবার সেই বাংলার গ্রামে এসেছে শিক্ষিকা হয়ে , যাতার সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল । অনুন্নত গ্রাম্য মানুষদের জন্য কিছু করা । সবই তো ভালো কিন্তু---- একটা কিন্তু থেকেই গেল ।
সেদিন বড়দির বাড়ীতে একটা চায়ের মজলিস বসল কিছু কম বয়সী সিক্ষিকাও এসেছিল আস্নন রবীন্দ্র জন্ম উতসব নিয়ে কিছু আলোচনা--। বৈশাখী বলল রঞ্জন দা আসছেন তিনি বলেছেন যে গানই বাছো গুরুদেবের ওই গান্টি যেন থাকে কোন গান সবাই প্রায় একসাথে বলে উঠল “তোমায় নতুন করে পাবো বলে হারাই বারে বার” । বন্যা চমকে উঠল ।
যাই হোক আলোচনা শেষে যে যার বাড়ীর দিকে চলে গেল। রঞ্জন আর বন্যা দুজনে,
রঞ্জনই বলল এখানে নদীর ধার খুব সুন্দর যাবে না কি? চল ; যেতে রঞ্জনই বলল আমাদের বিচ্ছিনতার জন্য কাউকে দোষ দেওয়া যায়না , তুমিও যান দায়ি নও আমিও নই।নিজেকে ঢাকছো ? না , দায়ী আমাদের সমাজ আমাদের গুরুজনেরা ; হয়তো তাই , বাবা আমাকে ওকালতি পরতে পাঠিয়ে দিলেন বিদেশে আর তুমি কলকাতায় , ফিরে এসে আর তোমায় পাইনি । খুজে ছিলে না কি ? নিশ্চয়;
নদীরধারে ওরা দুজন নৌকা আসছিল রঞ্জন আগার মতোন বন্যার হাত দ্গরে ব্লল চলো
নৌকায় বাতাসে তার চুল উরছিল বহুদিন আগের মতোন বন্যা ডেকে উঠল রঞ্জন –
রঞ্জন বলল বন্যা --- জিবন যে মধ্য লগনে , হোকনা বন্যা শেষ লগন তো এখনও বাকী । পারবোনা আমরা এই শেষ লগনে এসে স্বপ্নকে সফল করতে ? বন্যা মুখতুলে
চাইল একটু হাসলো বলল পারবো।।
জীবন যখন মধ্য লগনে