সালেহার গল্প

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

রোদের ছায়া (select 198766*667891 from DUAL)
  • ৪৭
  • 0
  • ৫০
(১)
মাসুম জবুথবু হয়ে বসে আছে ফুটপাথের উপর, সামান্য একটু রোদের আশায় , সালেহা একটু দুরে দাঁড়িয়ে ছেলের দিকে অসহায় চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার রাস্তা ঝাড়ু দিতে শুরু করে। এই বছর এমন কুয়াশা আর শীত পড়বে কেও ভাবে নাই। অনেকটা হুরমুর করে চলে এলো শীত আর কি দাপট শীতের। অন্য বছর এসময় তো এত শীত লাগে না। আর এইবার এখনি যেন হীম বাতাস শরীর কাপিয়ে দিচ্ছে।
এই শীত কিভবে কাটবে তাই নিয়ে সালেহার যত চিন্তা। হাতে একটা টাকা বেশি থাকে না সারাদিনের খাওয়া খরচ শেষে। ছেলের জন্য একটা গরম কাপড় না হলে সত্যি ভীষণ সমস্যা হয়ে যাবে, এমনিতেই সারা বছর সর্দি লেগে থাকে মাসুমের।
''মা মা আমার শীত করে মা'' মাসুমের ডাকে সালেহার চিন্তার সুতো ছিড়ে যায়, দৌড়ে ছেলের কাছে আসে। ''বাজান একটু কষ্ট কর,কিছুদিন পর সরকার তেরান দিবি , তখন আর তোমার শীত করবিনা দেখবানে"।
(২)
শুক্রবার সকাল থেকেই শোনা যাচ্ছে ত্রানের কম্বল, সুয়েটার দেয়া হবে, কিন্তু কোথায় কখন সেটা কমলাপুর স্টেশন এর পাশের বস্তিবাসীরা বলতে পারছে না। এই বস্তির শত শত মানুষ শীতে কষ্ট করে। সর্দি, কাশি, জ্বর যেন প্রতিদিনের জীবনের সাথে জড়ানো। কিন্তু করার কিছু নাই, একটা গরম কাপড় নাই বলতে গেলে কারো। ওষুধ কেনার টাকাই বা পাবে কোথায় অসহায় এই মানুষগুলো?
ত্রানের খোজ নিতে নিতেই শুক্রবারটা পার হলো সালেহা, মাসুম, রইসুদ্দিন, কমলা আরো এরকম কতগলো অসহায় মানুষের। কেও কাজেও তেমন মনোযোগ দিতে পারছিলনা ত্রানের চিন্তায়। আর এই জন্যই কর্পোরেশনের শহীদ ভাই এসে সবাইকে বকাঝকা করে গেল...
" সুযোগ পাইলেই কমে ফাকি দেয়া লাগবে তাই না?? মামা বাড়ির আবদার পাইছ?''
(৩)
'' শুনছ নি বুবু আইজ নাকি তেরান দিতে আসবি'' সালেহার মুখে এই কথা শুনে করিমের মার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। সারা রাত শীতে ঘুমাতে পারে নাই, এখনো শরীর কাপছে ঠান্ডায়। করিমের বাপের কদিন থেকেই হাপানির টান বেড়েছে। '' তার কষ্ট আর চোখে দেখা যায় না রে বইন'' একটা কম্বল পাইলে ভালই হইত।
''তালে চল গিয়ে দেখি কনে তেরান দিচ্ছে'' করিমের মাকে নিয়ে সালেহা হাটা শুরু করে। স্টেশনের দক্ষিন পাশের চায়ের দোকানে গিয়ে দেখে বেশ কিছু লোক চায়ের কাপ হাতে গল্পে মগ্ন , গল্পের বিষয় ত্রান।
দোকান ছাড়িয়ে আরো কিছু দূর গিয়ে ওরা অনেক লোক জড়ো হতে দেখে সেদিকেই এগিয়ে যায়।
'' এত লোক কোত্থেকে আইলোরে সালেহা? মুখ দেইখা তো চিনতে পারিনা! করিমের মার প্রশ্ন শুনে সালেহার কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। ''তেরানের খবর শুনি অন্য জায়গায় থাকি লোক আসিছে বুঝলা বুবু।''
(৪)
দেখতে দেখতে জায়গাটা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। কিন্তু ত্রান কর্মীরা এত লোকের ত্রান আনে নাই বিধায় স্থানীয় নেতার সাথে পরামর্শ করে একটা তালিকা তৈরী করে , তারপর ত্রান দেয়া শুরু করে। তখন বেলা বেড়ে গেছে, সূর্যের তাপে সবগুলো মুখ লালচে দেখায়।
ত্রান নিতে আসা মানুষগুলোর অপেক্ষা যেন আর শেষ হয় না। মাইলখানেক লম্বা লাইনের শেষ দিকে দাড়ানো সালেহা আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে বসে পড়ে। '' কিরে বইসা পড়লি কেন?'' করিমের মার কোথায় চমকে তাকে সালেহা। সে কোথায় ঠিক বুঝতে উঠতে পারে না। হঠাত মাসুমের কথা মনে পরায় সালেহা কিছুটা দিশেহারা বোধ করে। বাচ্চাটাকে একা রেখে এসেছে, কখন ফিরবে তার ঠিক নাই , সারাদিন ছেলেটার মুখে একটু খাবার পড়ল কিনা ভাবতে ভাবতে সালেহার মাথা ঘুরে উঠে। তাই দাড়াতে গিয়েও আর দাড়াতে পারেনা,
এদিকে সারা দিন পেটে কিছু না পরে করিমের মার অবস্থাও খারাপ।ওরা ত্রানের আশা ছেড়ে হাটা দেয় নিজের ডেরায়।
(৫)
দূর থেকেই জায়গাটা কেমন থমথমে লাগে সালেহার। '' বুবু দেখ দেখি সব কেন খালি খালি লাগে?'
হায় হায় করে উঠে করিমের মা। সালেহার হাত ধরে দৌড়াতে থাকে বস্তি যেখানে ছিল সেদিকে। কি হয়েছে বুঝতে বাকি থকে না আর।
বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে, সম্ভবত নেতার আগমন উপলক্ষেই। ত্রান দিতে নেতা আসবেন আর সেখানে কিনা এরকম নোংরা বস্তি থাকবে?
নেতার চলার পথে কোনো নোংরা ময়লা যেমন থাকবেনা তেমনি থাকবেনা কোনো দৃষ্টিকটু বস্তি। তাই নেতা আসার আগেই সব পরিস্কার করা হয়েছে।
(৬)
আজ শুক্রবার , সালেহার ছেলে মাসুম, করিমের বাপ, হায়দারের মেয়েটা কারো খোজ পাওয়া যায় নাই গত সাত দিনেও। আপনজন হারানো মানুষ গুলো জানে না কেন এমন হয়?
শীত থেকে বাঁচার ত্রান নিতে গেলে কেন তাদের হারাতে হয় মাথা গুজার ঠাই? কেন হারাতে হয় কারো স্বামী, কারো ছেলে?
এই তীব্র শীতের ঠান্ডা বাতাসের সাথে যুক্ত হয় স্বজন হারানোর ব্যথা । হয়ত এই শীত কোন না কোনো ভাবে পার করে দেবে এই সালেহা. কিন্তু তার একরত্তি মাসুমের জন্য সারা জীবন এক তীব্র কনকনে ব্যথা থেকে যাবে সারাজীবন এই স্বামীহারা নারীর।
সালেহাদের মত শত শত অসহায় , নিরাশ্রয় মানুষগুলো কনকনে শীতের রাতে প্রতিক্ষায় থাকে কখন সকাল হবে, এক চিলতে রোদ কখন ওদের গায়ে এসে পড়বে একটু উষ্ণতা নিয়ে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানি হক দেরিতে আসার জন্য ক্ষমা প্রার্থী আপুনি ....আমাদের সমাজের এক বাস্তব চিত্র ..সাহসের সাথে তুলে ধরার জন্য ..আপুকে সালাম এবং সুভেচ্ছা ...
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১২
তানজির হোসেন পলাশ ভালো লেগেছে / ধন্যবাদ.
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১২
রোদের ছায়া (select 198766*667891 from DUAL) md .wahid hussai আপনাকেও ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ..
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন . . . . . . . . . . আহ, যাদের হাতে ক্ষমতা তাদের বিবেক কবে তাদের সৎ পথে চালাবে? সুন্দর হয়েছে লেখাটা। শুভেচ্ছা।
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
রোদের ছায়া (select 198766*667891 from DUAL) যাক অনেক দিন পর ২ জন পাঠক পেলাম গল্পের ......ধন্যবাদ পাঁচ হাজার ও আনিসুর রহমান মানিক .......
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
আনিসুর রহমান মানিক অনেক ভালো লাগলো /
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
পাঁচ হাজার খন্ডচিত্রের সুন্দর গল্প। ভাল লাগলো
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
রোদের ছায়া (select 198766*667891 from DUAL) F .I .Jewel আপনাকে ধন্যবাদ / ভালো থাকুন/
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১২
F.I. JEWEL N/A # গল্পের ষ্টাইল অনেক ভাল ।। --৫
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১২

১৭ আগষ্ট - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫