প্রতিদিনের মত গানু মোল্লা , আজো কাক ,মোরগের আগে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে । নগেন মাঝির বাড়িতে গেল । গিয়ে দেখে পান্তা ভাত দিয়ে কাঁচা মরিচ খাচ্ছে নগেন মাঝি । নগেন মাঝি মুখে কিছুটা ভাত পুরে দিয়ে ভাঙ্গা স্বরে বলল – এত...স...কাল...স...কা...ল ক... ই যা...যা...বেন মোল্লা সাব ?
গানু মোল্লা -শ্যাম গঞ্জে জমির ল্যাইগা খাওন আনতে ।
নগেন মাঝি – সারের যে দাম বেড়েছে , খবর রাখ ?
গানু মোল্লা – কি করব তিন ব্যলা ভাত জুটাতে হলে জমিকে খাওন দিতে হইব ।
নগেন মাঝি – মররে কৃষক মর , কষ্ট করে ফসল ফলাবি অর্ধেক নিবে জোয়ারদার ......
গানু মোল্লা – মাটির গন্ধ তোর নাকে লাগেনিরে নগেন । বিনে লাভেও চাষ করতে ভাল লাগে । আতপ চালের সাধ বোর চালের পান্তার কাছে হার মানে কেন জানিস নগেন ?
নগেন মাঝি – পরাটাও পান্তার কাছে হার মানে গো মোল্লা ।
গানু মোল্লা – একে বারে হাচা কথা কইলি বাহে । পোলাও , পরাটা ইংরেজ ও পাকিস্থানীদের মত । একটা হল ফুটানি আরেকটা বক মুসলিম । পেট ভরেনা । মাছ ,কচুশাক ,ডাল আর ভাতের মত খাওন আল্লাহ পৃথিবী তে দেইনি ।
গানু মোল্লাকে হ্যাঁটা (বেতের তৈরি এক ধরনের বাটি )তে করে মাঝি বৌ – খই ,উখড়া ,মুড়ি ও সামান্য খেজুরের গুর । একটি আটার লাড্ডু দিয়ে বলল -এটি শেষ করেন তার পর তিল ,চিড়ে , লারিকেলের লাড়ু দিব ।
নগেন মাঝি , নগেন মাঝি চীৎকার করতে করতে কাঞ্চন এসে বলল – একটু তাড়াতাড়ি ঘাটে চলো সুখ নগর সাহপাতাল যেতে হবে । সুধীরের বৌ রমা বৌদি কে মনে হয় বাঁচানো যাবেনা । ধান ভানতে গিয়ে ঢেকির উপর পড়েগিয়েছে । রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হচ্ছেনা ।সাত মাসের বাচ্চাটা হয়ত মরে গেছে , দেরী করলে বৌদিকে বাঁচানো যাবেনা ।
গানু মোল্লা , নগেন মাঝি , কাঞ্চন এক দৌড়ে ঘাটে গিয়ে পোঁছিল । গ্রামের অনেক মানুষ নদী তীরে ভীর জমিয়েছে রমা বৌদি কে দেখতে ।সমীরণ স্তব্ধ রমাকে দেখে । স্রোতের উজানে সুখ নগর যেতে ১ ঘণ্টার নিচে যাওয়া সম্ভব নয় । ভাটাতে হলে ৪০ মিনিটে যাওয়া যেত । কাঞ্চন তার মা কে গালাগালি দিচ্ছে – বৌদিকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করিয়ে তোর শান্তি হয়না । ধান ভান্তে দিয়েছিস । এখন কাকে দিয়ে সব কাজ করাবি তুই , সুধীর কে কি জবাব দিবি ?
গানু মোল্লা কাঞ্চন কে শান্ত করে । তিন জনে শরীরের সব শেষ শক্তি দিয়ে নৌকা বেয়ে চলে । বৃষ্টির মত ঘাম ঝড়ে পড়ছে তাদের । স্রোত কেন যে এত শত্রুতা করছে, কেউ বুঝে উঠছে না ?
রমাকে বাঁচাতে কয়েক ব্যাগ রক্তের প্রয়জন গানু মোল্লার , রক্ত ছাড়া আর কারো রক্ত রমার সাথে মেললনা ।গ্রামের কিছু সাঁওতাল , সাঁওতালনি এসেছে রমাকে দেখতে তাদের কয়েকজনের রক্ত রমার সাথে মিলেছে । কাঞ্চনদের সব টাকা শেষ হয়ে গেল । শেষে গানু মোল্লা তার সার কেনার টাকা গুল দিয়ে ওষুধ কিনে দিল ।
বাচ্চার কোন ক্ষতি হয়নি শুনে সকলের মুখে হাসি ফুটল । রমাকে ফল মূল ও ভাল ভাল খাবার খেতে দিতে হবে শুনে সকলের মুখ কাল মেঘে ঢেকে গেল । যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে ভাল ভাল খাবার স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না ।
কিন্তু পৃথিবী আজ উল্টো পথে ঘুরছে । রমার জন্য গ্রামের সবায় সাধ্য মত খাবার নিয়ে আসচ্ছে । কেউ মুরগী , কেউ কবিতরের বাচ্চা ,অনেকে পাতি হাঁস , রাজ হাঁস । জেলেদের জালে পড়া সেরা মাছ , ও ছোট ছোট মাছ , লাল শাক , কচু শাক , আম , আমড়া , বেল ,কলা, জাম , পেয়ারা ,জামরুল যার যা আছে নিয়ে আসছে রমার জন্য । আপেল কমলার গাছ এই গ্রামে নেই তাই গানু মোল্লা এগুল এনে দেয় বাজার থেকে ।
সন্ধায় গানু মোল্লা নদীর তীরে বসে ভাবছে জমিতে সার দিতে পারলাম না , এবার ধান ভাল হবেনা । জোয়ারদার কে কতটুকু দেব আর নিজের জন্য রাখব কতটুকু । আবার ,যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে বিপদের শেষ থাকবে না ।
নগেন মাঝি বলল -কি ভাবছ মোল্লা ?
গানু মোল্লা – আমাদের গাঁয়ে ভালবাসার বন্যা এসেছে দেখেছ কি ? গ্রাম –বাংলার প্রতিটি ঘর ভালবাসায় পূর্ণ হয়েছে কানায় কানায় ।
নগেন মাঝি- হুম , রমার জন্য যে ভাবে সবাই এগিয়ে এসেছে খুব ভাল লাগল । এই গ্রামে জন্মেছি বলে খুব অহংকার হচ্ছে । জমিতে তো এবার সার দিতে পারলেনা ফসল হবে ?
গানু মোল্লা – রমার অনাগত সন্তান কি আমাদের ফসল নয় ? রমার সন্তান কে ঘিরে আমার নানান স্বপ্ন চোখের পাতায় । ওকে নিয়ে ঘুরে বেড়াব এ গ্রাম ও গ্রাম , বনবাদরে ছুটে বেড়াব ।ও আর আমি কানামাছি খেলব ।প্রজাপতি , ফড়িং ধরে বেড়াব । ঘুড়ি উড়াব । দেখিস ও লেখা পড়া শিখে গ্রামের মুখ উজ্জল করবে । ইত্যাদি বলতে থাকল ।
নগেন মাঝি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল দেখো গানু মোল্লা চাঁদটা আমাদের গ্রাম দেখে হাসচ্ছে । তারা দুজনে চাঁদ দেখতে লাগল । চাঁদের হাসিতে ভুলে যাচ্ছে তারা দুঃখ কষ্ট , মান-অভিমান ।তাদের চোখে একটি স্বপ্ন রমার সন্তানকে মানুষ করতে হবে , মানুষের মত মানুষ ।।
০৯ আগষ্ট - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪