আজ দেশপ্রেম দিবস ।
এ উপলক্ষে একটি ভিন্ন রকম ফ্যাশন শো এর আয়জন করেছে প্রবাসী কল্যাণ সমিতি ।এই ফ্যাশন শো এর ব্যাতিক্রমী দিক হল । বিভিন্ন দেশ প্রেমিকগন এখানে ট্রু টক গ্লাস চোখে দিয়ে , অঙ্গ ভঙ্গী করতে করতে , ফুলের মত দুলে দুলে এসে তাদের দেশ প্রেমের বর্ণনা করবেন ।দর্শকদের সামনে ।মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে ট্রু টক গ্লাসটির বিশেষ ক্ষমতায় কেউ মিথ্যে বলতে পারবেনা ।
মঞ্চের চারপাশে দেশী শিল্পীদের আঁকা নদী পাহাড় ,ঝর্না ,শহীদ মিনার ,ফুল- পাখি, গ্রাম্য বধুর পশু-পাখি পালন সব মিলিয়ে পুরো বাংলাদেশ টার রূপ ফুটে উঠেছে ।
মঞ্চটির দিকে এক পলক তাকালেই একজন দেশ দ্রোহী ও দেশ প্রেমিক হয়ে যাবে মনে হচ্ছে । বাদক দল মন ভুলানো সুর তুলেছে সম্পূর্ণ দেশী যন্ত্র দিয়ে । গাছের পাতা ও পাখিরা সেই সুর শুনছে চুপটি করে প্রজাপতির মত, তটিনীও পথ ভুলেছে ,রঙধনু মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে ফ্যাশন শো প্রতিযোগীদের দেশপ্রেমের গল্প শোনার জন্য ।
শুরু হল ফ্যাশন শো প্রথম প্রতিযোগী আসছেন ছোট্ট শিশুর মত হামাগুড়ি দিতে দিতে ,গরু ছাগলের মত অভিনয় করতে পারছেন বেশ ।বোঝা যাচ্ছে তিনি আর কেউ নয় এদেশের একজন ১০০% খাঁটি দুধের সমমান পাউডার দুধ কম্পানির মালিক । তিনি দর্শক দের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন - আমার কোম্পানির দুধে মেলামাইন দেয়া থাকে মেলামাইনে প্রোটিন আছে কিন্তু মেলামাইন শিশু দের জন্য ক্ষতি কর । ইত্যাদি ইত্যাদি শেষে বললেন পাউডার দুধ কখনো খাঁটি দুধের সমমান হতে পারেনা । প্রতিটি প্রাণীর জন্য তার মায়ের দুধের বিকল্প নেয় ।দেশপ্রেম নামে একটি শব্দ আছে ভুলে গিয়ে পন্যের মিথ্যে বিজ্ঞাপন দিয়েছি ।
ট্রু টক গ্লাস খুলে বললেন দোষ কি আমার একার মডেলিং ,এড লেখক , টেলিভিশন কতৃপক্ষ ও তো টাকার লোভে অযুক্তিক ...............। সব দোষ আমার ?
দ্বিতীয় প্রতিযোগী খুব হেলেদুলে নেচে নেচে আসছেন । মেয়েদের পোশাকে কিন্তু ছেলেদের মত দেখতে কিছুটা ।দর্শক দের হাসাহাসি কটু শব্দ শুনে বোঝা যাচ্ছে । ইনি আমাদের দেশের একজন হিজড়া ,কিন্তু এরাও যে মানুষ এই কথা মাঝেমাঝে ভুলে যায় আমরা ।তিনি দর্শক দের সামনে বলতে লাগলেন – আমরা যে তোলা উঠায় , নাচ গান করে আপনাদের বিরক্ত করি , যাদু মন্ত্রের ভাব নিয়ে কুলার উপর কোটা নিয়ে নাচ করি তা প্রচণ্ড প্যাটিস ছাড়া কিছু নয় । তবে নতুন রা চম্বুক শক্তি কাজে লাগিয়ে আপনাদের মধ্যে তন্ত্র মন্ত্র , নজরবন্দীর বিশ্বাস জাগিয়ে দেয় তাই ক্ষমা চাচ্ছি ।
ট্রু টক গ্লাস খুলে বলতে লাগলেন –আমরাও মুক্তি যুদ্ধ করেছি । পাকিস্থানিদের লোলুপ দৃষ্টির স্বীকার আমরাও তো হয়েছি । এই মাটি কে ভালবেসে আমরাও যুদ্ধ করেছি । দেশের গান শেকল ভাঙ্গার গান রক্ত গরম করার গান গেয়ে প্রানে শক্তি জোগিয়েছি ।আপনাদের পাঠ্য বইয়ের কোন পাতায় লেখা আছে কি ? স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী হলো । কিন্তু আমাদের স্বীকৃতি হলো না । আমাদের ভোট দিতে হয় ফেকি দের মত ।
তৃতীয় প্রতিযোগী নবাবী পোশাকে হাত তুলে সকলকে শান্ত হবার ইঙ্গিত করতে করতে এসে ট্রু টক গ্লাস খুলে কিছু বলতে চেষ্টা করলেন । কিন্তু ফ্যাশন শো কমিটি কিছু বলতে দিলেন না । কারন প্রথমে ট্রু টক গ্লাস পড়ে কিছু বলতে হবে এটায় নিয়ম ।
বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টি হল । এক সাথে বিস্ফোরিত হল বেশ কিছু বোমা । বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ হল ।জীবন্ত মানুষের দেহ থেকে ,খসে পড়া মাংস খণ্ড গুল লাফাতে থাকল , গলা কাটা মুরগীর মত । পানির ধারার মত নিম্ন দিকে বয়ে যেতে লাগল রক্তের স্রোত । অনেকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে গুলিবিদ্ধ অঙ্গে দৌড়াতে গিয়েও বাঁচতে পাড়লনা । লুটিয়ে পড়ল মাটির বুকে । একটি ছোট্ট শিশু যে গুলি বিদ্ধ হয়নি সেও প্রান হারালো আতংকিত মানুষের পদতলে পিষ্ট হয়ে । গুলি বিদ্ধ মা তার সন্তানকে বাঁচানোর আপ্রান চেষ্টা করেও ব্যার্থ হলো ।সন্তানকে বাঁচানোর জন্য বিধাতার কাছে আকুল আবেদন বিধাতার কাছে পোঁছিলনা । দেশ প্রেম দিবস যেন মৃত্যু দিবসে পরিনত হয়ে গেল ।
এ কেমন বোমা হামলা ?
রমনার বটমূল থেকেও তো কিছু মানুষ বেঁছে ছিল ।হিরোশিমার মত শক্তিশালী পারমানবিক বোমার আঘাতের ভয়াল থাবার হাত থেকে ও কিছু মানুষ বেঁচে ছিল । কিন্তু এই হামলা থেকে বাঁচলনা । একটি নিষ্পাপ শিশু ,বাউল ,হিজড়া , সাংবাদিক , পুলিশ র্যানব ,বাঁচানো গেলনা একটি বিদেশী নাগরিককে ও । বাংলাদেশ সরকার কি জবাব দেবে বিদেশী সরকারকে ?
দেশপ্রেম দিবসের বোমা হামলায় এই ফ্যাশন শো এর মূল উদ্যোগ তা ইয়াসির আরাফাত তার পরিবারের সকলকে হারিয়েছে । সে নিজেও বাঁচতে পারেনি । এই ঘটনার জন্য দায়ী কে ? না ভেবেই অন্যান্য জেলার বেঁচে থাকা জনতা এই ফ্যাশন শো এর মূল উদ্যোগতা ইয়াসির আরাফাত এর ফাঁসির দাবিতে রাজ পথে নেমে বিভিন্ন কলকারখানা ,গার্মেন্স , ১৫১ টি ট্রেনে আগুন জ্বালিয়ে দেয় । গাড়ি , সরকারী অফিস , প্রবাসী কল্যাণ সমিতির সকল শাখায় ভাংচুর করতে শুরু করে । ইয়াসির আরাফাতের পুতুল বানিয়ে আগুনে পোড়িয়ে কৃতিম স্বস্তি পায় জীবিত জনতা । শুধু লাশ আর লাশ । ধ্বংস লীলায় মেতে উঠাই যেন দেশ প্রেম সবার কাছে । স্কুল , কলেজ গুলতে অগ্নী সংযোগ করা হয় ।জাতীয় পতাকা ও ছাড় পেলনা আগুনের হাত থেকে ।
এখানে মজার ব্যাপার হল একজন ক্ষুধ জনতাও কিন্তু নিজের একটি পুরনো বদনাও লাথি মেরে চ্যাপ্টা করেনি ।কেউ দুঃখে নিজের ঘরে আগুন দেইনি । তার মানে কি এটা দাঁড়ায় না ? ক্ষুধ জনতা শব্দ অভিনেতা নেত্রীদের অভিনয় গুরু । এদের থেকেই দেশপ্রেম শিখতে হবে সবাইকে ? এক লক্ষ লাশের সাথে ১০ লক্ষ লাশের যোগ করা কেমন দেশ প্রেম । অগ্নী সংযোগ , ভাংচুর না করে একটি মানব বন্ধন করলে কি এমন ক্ষতি হত ? ধ্বংস লীলায় মেতে উঠে কি এমন লাভ হলো ?
০৪ আগষ্ট - ২০১১
গল্প/কবিতা:
২৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪