আজ থেকে কয়েক বৎসর পূর্বে পল্লী গ্রামের অবস্তা বর্তমানের চেয়ে অনেক অনেক পশ্চাদমুখি ছিল। ছিল অনুন্নত কল্পনাতীত। পল্লীর মেঠো পথ তখন ও পীচঁ ঢালার সামান্যতম সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেনি। এমন কি অনেক এলাকার মানুষ স্বপ্ন লোকে বিচরন করে ও ভাবেননি এক দিন এ এলাকা বা অঞ্চল হবে আধুনিকতার স্পর্শ ছোয়া স্বাপ্নিক বাস্তবতার উন্নয়ন। আজ সেখানে বাস্তবতা ভিত্তিক আধুনিক জীবন যাত্রায় সামগ্রিক পরিবর্তন এসেছে। সত্যিই এ এক অপূর্ব আমেজ , আবেশ। দশ বৎসর পূর্বে ও যেখানে গ্রাম থেকে গ্রামে যোগাযোগের এক মাত্র বাহন ছিল নৌকা বা হাটুঁ অবধি কাদাঁ পানি যুক্ত পায়ে চলা মেঠো পথ। সেখানে আজ নৌকা হারিয়ে গেছে কোন সুদুরে অজানার পথে বিস্মৃতির অতলে। তার বদলে উন্নত সড়ক যোগাযোগে নিত্য চলছে নানা রঙ্গের , আকৃতির যন্ত্রযান। পৃথিবী হয়েছে গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত। এতে আমি /আমরা গর্বিত , আনন্দিত সত্যিকার অর্থেই। যাহোক আমি বেশ কয়েক বৎসর পূর্বে বর যাত্রী হয়েছিলাম আষাঢ়ের এক শুক্রবার। এক ঘন ঘোর মুষল ধারার বৃষ্টির দিনে। সে স্মৃতি আমাকে মাঝে মাঝে ভাবায় , কাঁদায় , হাসায়। বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়ি ১০ কিলোমিটারের ব্যবধান। এ সম্পূর্ণ রাস্তাটুকু বর যাত্রীরা মেঠো পথ ধরেই হেটেঁ যেতে হবে জানা সত্ত্বে ও হয়েছিলাম আনন্দ ঘন পরিবেশে বরের সহযাত্রী বা বর যাত্রী। ঐ দিন ছিল ভোর থেকে দমকা হাওয়া যুক্ত অবিরাম বৃষ্টি। আবার কখন ও গুড়ি গুড়ি একটানা বৃষ্টি। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ নেই। সময় গড়িয়ে যাচেছ দ্রুত। অপেক্ষার প্রহর কাটে না। বিলম্বতা সয় না। অতিরিক্ত বিলম্বতা মানায় না। এক সময় যাত্রা শুরু করতে হল বৃষ্টির মধ্যেই। বাড়ি থেকে অনতি দুরে যেতেই বৃষ্টির তীব্রতা বৃদ্ধি পেল। আকাশে চমকাচেছ বিজলী ঘন ঘন। ছাতা হাতে থাকলে ও না থাকার মত। রাস্তায় কোথা ও গর্ত , জমাট পানি। কাদাঁর ছড়াছড়ি যত্রতত্র। অল্পক্ষণেই যেন পুকুর থেকে ডুব দিয়ে উঠেছি। কাপড় ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে যাচেছ। শীতের আক্রমনে অনেকে কুপোকাত। তবু ও চলছে বরের পালকী। সঙ্গের সঙ্গী সবাই। কনের পিত্রালয়ের নিকটবর্তী দুই কিলোমিটার জায়গা নৌকা যোগে যেতে হবে বেশি পানি থাকায়। ওরা নৌকা প্রস্ত্তত রেখেছে মাত্র একটি। এক সঙ্গে সবাই যাওয়া সম্ভব নয়। দু’তিন বারে যেতে হবে। অধিক সংখ্যক অপেক্ষা করতে নারাজ। বিয়ে বাড়ি পৌছতে পারলে রক্ষা। প্রাণে বাঁচা যায়। নৌকায় পালকী সমেত উত্তোলনের পর অতিরিক্ত ২/৩ জন ব্যতীত আরোহণ অসম্ভব। বৃষ্টি আর দমকা হাওয়া থামার কোন লক্ষণ নেই বিদ্যমান। সুতরাং বর যাত্রীরা যে যেদিকে পারে কোথা ও কোমর অবধি পানি ড়িঙ্গিয়ে চলে সম্মুখ পানে। উদ্দেশ্য বিয়ে বাড়ি পৌছা। একটু নিরাপদ হবার প্রত্যাশা। অনেকে ফিরে আসার ইচছাকে অবদমিত করেছে মনের সহিত যুদ্ধ ঘোষণায়। নিকটবর্তী এসে ফিরে যাওয়া সঠিক হবে না ভেবে। তৎকালীন সময় চেয়ার টেবিলের প্রচলন শুরু হয়নি। ভিজে কাপড় সমেত বসে কেহ বা কেহ দাড়িয়ে আহার পর্ব করেন সমাপ্ত। যারা বসে আহার করেছিলেন , তাদের লুঙ্গি সতরঞ্জির রঙ মিশে একাকার এবং বৈচিত্রময় অদ্ভুদ এক দৃশ্যের অবতারণা। কে কাকে নিয়ে উপহাস করবেন। সকলেরই প্রায় এক অবস্তা। এ সময় গ্রামে পেন্টের প্রচলন শুরু হয়নি। অগত্যা কেহ পেন্ট পরিধান করলে অভিজাত বলে পরিগণিত হত। সে সময় সামর্থানুযায়ী প্রত্যেক বিবাহে গরু ছালামি দেবার প্রচলন ছিল। এ বিবাহে আমরা সাতটি গরু উপঢৌকন পেয়েছিলাম। অত:পর সেখানে পৌছে বরের দিকে লক্ষ্য করে সবাই হাসিতে লুঠোপুঠি খাচেছন। পালকী সাজানোর সকল প্রকার কাগজের রং , গিন্নি (এক প্রকার কাপড়ের চাদর) এবং বরের পোষাকের রং গলে বরকে অদ্ভুদ অথচ বিচিত্র মিশ্রণে যে দৃশ্যের অবতারনা - তা ভায়ায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। দম ফাটানো হাসির পরক্ষণেই সকল উদগ্রীব হলেন সহানুভুতির অনুকম্পায় বরের অবস্তা বিবেচনায় এটা ওটা করার তোড়জোড়ে। জরুরী ভিত্তিতে সকল পর্ব সমাপ্ত করে বৃষ্টির মধ্যেই শুরু হল ফিরে আসার যাত্রারম্ভ। এ দিনের অভিজ্ঞতা , দৃশ্যপট , পারিপার্শ্বিক অবস্তা বৃষ্টি শুরু হলেই আমার মনে স্মরণের তালিকায় ভেসে উঠে সচিত্র বাস্তবতায় অনেক দিন অতীতের স্মৃতি রোমন্তনে। মানুষ স্মৃতি পরায়ন । আবার কোন কোন ঘটনা মানুষের মনে দাগ কাটে স্মৃতিময় স্মরণীয় তালিকাভুক্তির ক্রম ধারাবাহিকতায় সমুজ্জল থাকে অনেক অনেক দিন অম্লান , অক্ষয় হয়ে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ছালেক আহমদ শায়েস্থা
সুতরাং বর যাত্রীরা যে যেদিকে পারে কোথা ও কোমর অবধি পানি ড়িঙ্গিয়ে চলে সম্মুখ পানে। উদ্দেশ্য বিয়ে বাড়ি পৌছা। আপনার লেখার যাত্রা শুভ হউক স্যার।
আহমেদ সাবের
তিন চার দশকের ব্যবধানে আমাদের পল্লী গ্রামের চিত্র কতখানি বদলে গেছে টা আজকের যুবকদের পক্ষে কল্পনা করা একটু কঠিন বইকি। চমৎকার স্মৃতিচারণটার জন্য ধন্যবাদ।
বশির আহমেদ
প্রাচীন গ্রাম বাংলার প্রকৃত চিত্রটি সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন । বর্তমান প্রজন্মের কাছে ঘটনাগুলে অবাস্তব মনে হতে পারে কিন্তু আবহমান বাংলার প্রকৃত রূপই এটা । ধন্যবাদ লেখককে ।
সিয়াম সোহানূর
সে সময়ের একটি কষ্টের স্মৃতি । তবে এখন মানে হয় সে স্মৃতিটুকু লেখককে আনন্দই দেবে । আর এখানে লেখক সে সময়ের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়েছেন নিপুন কুশলতায়। ধন্যবাদ মিজান ভাই।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।