আমার বাবা

বাবা (জুন ২০১২)

মিজানুর রহমান মিজান
  • ১০
  • ৫৬
মহান আল্লাহ্‌-তায়ালা সকল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা। অগণিত সৃষ্টির মধ্যে মানুষের জন্য অপূর্ব সেরা নিয়ামত হিসেবে মাতাপিতাকে দান করেছেন সন্তানের আপন জন রূপে। পৃথিবীতে সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হচ্ছে মাতা-পিতা। আমার পিতা ছিলেন একজন প্রখ্যাত মরমী বাউল শিল্পী , যিনি দীর্ঘদিন গানের ভুবনে বিচরণ করেন। আপন প্রতিভা ,সাধনা বলে খ্যাতি , মানুষের ভালবাসায় হয়েছেন সিক্ত। এক সময় মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হত ভাবুক , বিষাদ লহরী , ভাব , তত্ত্ব পূর্ণ গানের এক সুকণ্ঠই , সুরেলা সাধকের নাম হিসাবে আমার বাবার নাম। বাবার এ সুখ্যাতি থেকে আমি সেই ছোট বেলায় যখন যেখানে গিয়েছি মানুষের মুখে ছিল একটি অভিব্যক্তি বড় হয়ে আমি হবো একজন স্বনাম ধন্য গায়ক। কিন্তু ভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য যাই বলুন আমি হতে পারিনি সেই পথের পথিক। জানি না এ অন্তর্নিহিত রহস্যের মর্মভেদী। একমাত্র আল্লাহই সর্ব জ্ঞাত। আমার বাবা ছিলেন একজন ধনীর আদুরে দুলাল। যাহোক এক সময় অর্থনৈতিক দীনতা আমার পরিবারকে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে গাছের সহিত লতার প্রেম ভালবাসার অনুরাগে সযত্নে।
পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান আমি। সাত বোনের মধ্যে কৈশোর বয়সে দু'বোন মারা যায় জরাব্যাধিতে। আট সদস্যের পারিবারিক বন্ধন ছিল সুদৃঢ়। পিতা বাউল শিল্পী হবার সুবাদে অত্যধিক রাত্রি জাগরণে একদিকে পিতার কষ্ট অনুভব করতাম হৃদয়ে তুমুল ভাবে। তাছাড়া তিনির সান্নিধ্য পেতাম অত্যধিক কম। দায়িত্ব , কর্তব্য , নিষ্ঠা ও সচেতনতা আমাকে আন্দোলিত করত দারুণ ভাবে প্রতিনিয়ত। মনে হত বার বার একাধিক পুত্র সন্তান হলে একজন না একজন হয়ত বাবা মাকে সুখ , শান্তি ও আনন্দ দান করত অজস্রতায়। ফলে বাবা মার সেবা যত্নের অমিয় ধারা থাকত বহমান। কারণ আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন , " মা বাবার পদতলে সন্তানের বেহেস্ত।" পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান বলে এ ধারণাবোধ তাড়িত করত সর্বক্ষণ মাতাপিতাকে সুখ , শান্তি প্রদানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা অবশ্য করণীয় , পালনীয় , দায়বদ্ধতার কিঞ্চিৎ উপলক্ষ বা অবলম্বন। তাছাড়া একটি ভাইয়ের অভাববোধ , শুন্যতা হৃদয়ের শেষ প্রান্ত বিন্দু পর্যন্ত করুণ ব্যঞ্জনাময় সুর তোলতো বার বার প্রতিবার। সুতরাং এ সকল কার্য কারণের সঙ্গে শ্রদ্ধা , ভালবাসা , সম্মান , দায়িত্ব-কর্তব্যের বোধে উপার্জনক্ষম সামর্থ্য অর্জনের সাথে সাথে পিতাকে পরোক্ষভাবে বিনম্রতার সহিত অনুরোধ জ্ঞাপন করি সঙ্গীত জগত থেকে অবসর নেবার। ধীরে ধীরে চলে যান অবসরে। অবসরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ অবলোকন করেছি তিনির সর্ব প্রকার চলাফেরায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ , নিয়মিত রোজা পালন ইত্যাদি ছিল তাঁহার দৈনন্দিন কার্যক্রমের তালিকায় সতর্কতা অবলম্বনে । ছিলেন নিজ গ্রামে অবস্থিত জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং রাজা গঞ্জ বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য। তদসঙ্গে সাংসারিক কর্মকাণ্ডে ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও সচেতন।
তিনি আমার লেখা পড়ার সময় সঙ্গীত জগতের সহিত ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন। তথাপি সান্নিধ্যকালীন সময় তিনির প্রেরণা আমাকে এ পর্যন্ত সক্ষমতা অর্জনের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক। পিতা ও ব্যক্তি হিসেবে সমান্তরাল আদর্শের মূর্ত প্রতীক আমার বাবা ছিলেন। তাঁর নীতি বাক্য , উপদেশ , আদেশ ,নির্দেশ সবই ছিল শিক্ষণীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে।
আমার বাবা প্রিয় তালিকার শীর্ষে আমার ক্ষেত্রে ছিলেন। অনেকে বাবা হারান বিভিন্ন সময়। কেহবা জন্ম পূর্ব সময়ই হারান। এক্ষেত্রে আমি সৌভাগ্যবান একটা দীর্ঘ সময় সান্নিধ্য পেয়ে। কিন্তু বর্তমানে বড় অস্বস্তিকর এবং শুন্যতা আমাকে মর্মবেদনায় ভোগাচ্ছে। পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়মে সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে আগে পিছে যার রোধ শক্তি কারো নেই , থাকবে ও না অনাদিকাল পর্যন্ত।
২০০০ খ্রিষ্টাব্দে আমার বাবার গলায় মরণব্যাধি ক্যান্সার বাসা বাধে শক্ত সামর্থ্যে। খোদার অপার বিস্ময় দীর্ঘ একটি বৎসর ওসমানী হাসপাতালের ক্যান্সার নিরাময় বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ ফরিদ আহমদের অপরিসীম আন্তরিক চিকিৎসা সেবায় আরোগ্য লাভ করেন। যদি ও রেড়িও থেরাপি গ্রহণের ফলে খাবার জাতীয় সকল প্রকার দ্রব্যের স্বাদ বঞ্চিত হয়ে পড়েন। ২০০৪ সালের ২৮ রমজান আবারো ফুসফুসে বাসা বাঁধে। কিন্তু এ যাত্রা রক্ষা দেয় নাই। সকল প্রকার চিকিৎসা ব্যর্থ বলে প্রমাণিত করে ১৭ই ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৫-৫৫ মিনিটে প্রিয় মাদ্রাসার হাফিজ সাহেবানদের সংস্পর্শে থেকে চির নিদ্রায় হন শায়িত।
আমার বাবা সঙ্গীতের সহিত সম্পৃক্ত থাকা এবং ১৯৮০ সালের দিক হতে বিরত থাকার কারণে আমি প্রায়ই দু'ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে থাকি। কারো অভিমত আমি বাবাকে ,বাবার প্রতিভাকে ধ্বংস করেছি। আবার কারো মতে ভাল সুন্দর দিক নির্দেশনা দিয়েছি। উপরোল্লিখিত মুল উদ্দেশ্য বিবৃত করায় পাঠকের নিকট হয়ত ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ভাল-মন্দ একমাত্র আল্লাহ্‌ জ্ঞাত। তাছাড়া আমার জীবনে বাবার প্রভাবকে নিয়ে অনেক মানুষের নিকট ভ্রান্ত ধারণার শিকার হয়েছি। যেমন অনেকে ছাত্র জীবনে আমাকে গান পরিবেশন করার অনুরোধ বার বার করেছেন আমি জেনে ভেবে। কিন্তু কোনদিন আমি কারো অনুরোধ রঙা করতে পারিনি বিধায় কেহ কেহ ধরে নিয়েছেন আমি উপেক্ষা করছি , অহংকারী , অবমূল্যায়ন করছি ইত্যাদি। কিন্তু যা নির্মম ও বাস্তব সত্য তা হচ্ছে আমার অজ্ঞতা , অক্ষমতা।তাই বলে কি আমি গান ভালবাসিনা , শুনি না ? না আমি গানের একজন ভাল শ্রোতা , ভক্ত , অনুরাগী। আমার বাবার প্রতিভা ধ্বংস করা , বাবার অনুরাগী , ভক্ত শ্রোতাদের অবহেলা , অবজ্ঞা বিন্দু মাত্র আমার হৃদাসনে ছিল না , নাই বিদ্যমান। আমার বাবাকে নিয়ে লেখার প্রথম সুযোগ পেয়ে আমার অন্তরের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশে আনন্দবোধ করছি। অপর দিকে প্রত্যেকের নিকট ক্ষমা প্রার্থী আমার সঠিক অভিমত জানাতে পেরে। আমি মানুষকে গভীর শ্রদ্ধা , সম্মান ও ভালবাসি।
বাবার গীত গান গুলির মধ্যে উল্লেখ যোগ্য দু'একটি গানের প্রথম কলি পাঠক মহলকে উপহার দিচ্ছি (১) একদিন নবী গেলেন সংসার ছাড়ি , কইতে না পারি ...........। (২) কান্দে ছকিনা বিবিরে স্বামী লইয়া কুলে , স্বামী হারা করলা আল্লাহ্‌ এই না ভু-মণ্ডলে.........। (৩) হরিণী কাঁদিয়া বলে , পড়িয়াছি শিকারির জালে , তরাইয়া লও আমারে নবী মোস্তফায় ...,,,,.। (৪) গরিব হইলে ভবে কেউ চিনে না ...... গরিব ধনীর বাড়িত গেলে ,মনে মনে বলে কোন জিনিষ নিত আইছে করে ভাবনা ....। এ জাতীয় অজস্র গান রয়েছে যা তখনকার দিনে মানুষকে একদিকে আনন্দ দিত এবং এ দেশের সংস্কৃতি ভাব ও ভাবুকতায় ছিল সমৃদ্ধ। শেষ বেলায় মহান আল্লাহর দরবারে বাবাকে জান্নাত বাসী করার করজোড়ে আবদার জানাই আমিন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি আল্লাহ আপনার বাবাকে বেহেশত নসীব করুন|
শাহ্‌নাজ আক্তার বাবার সৃতি চারণ | আপনার বাবার প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ...............ভালো থাকবেন সবসময় |
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মন্তবে্র জন্য। আপনার সুিখ জীবন কামনা কির।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি ভালো লাগলো বাবার স্মৃতিচারন। মিজান আপনাকে ধন্যবাদ.......
স্বাধীন খুব সুন্দর করেই স্মৃতি গুলোকে গল্পাকারে দিলেন ভাই। পিতামাতাই সন্তানের নিরাপদ আশ্রয় স্থল।
আহমেদ সাবের আপনার বাবাকে নিয়ে লেখাটা খুব ভাল লাগল। পরম করুণাময় আল্লাহতালা তাকে বেহেস্ত নাজিল করুন।
মিলন বনিক আত্মকাহিনী এবং উপদেশমূলক সৃতি গাথা ভালো লাগলো..শুভ কামনা...
জাকিয়া জেসমিন যূথী স্মৃতিকথা ভালো লাগলো।
কামরুল হাছান মাসুক স্মৃতির অাকারে লেখা হয়েছে। চালিয়ে যান। দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে।
রোদেলা শিশির (লাইজু মনি ) আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যেন বাবার স্মৃতি ধারণ করার তৌফিক আপনাকে দেন সেই কামনা ..... !

২৮ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী