সাদা মেঘেও কান্না ঝরে

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

মামুন ম. আজিজ
  • ৪৬
  • 0
  • ৭১
(১)
শাওয়ারটা ছেড়েছে সবে। ঠাণ্ডা পানি গায়ে পড়তেই এই পড়ন্ত বিকেলের অসহ্য গরমটুকু শরীর থেকে উড়ে যেতে লাগলো।
পানির প্রতিটি ফোঁটার সাথে সাথে গড়িয়ে পড়তে লাগলো ধুলো আর ক্লান্তিগুলো । তখনই মোবাইল বাজার শব্দ কানে এলো উদ্ভাসের। শব্দের ভিন্নতা শুনেই বুঝল ওটা একটা এসএমএস।
বাথরুমের দরজা খুলে গোসল করা তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। অবশ্য ঘরের মূল দরজা বন্ধ করা হয় আগেই। বাথরুমের দরজা বরাবর তার ঘরে একটা টিভি সেট করা। গোসল করতে থাকবে। টিভিতে কোন গানের চ্যানেল খোলা থাকবে। গায়ে পানি পড়বে আর কানের ভেতর ঢুকবে গান। মাঝে মাঝে পানির ফোঁটা লেগে থাকা চোখ গুলো চেয়ে চেয়ে দেখে নেবে দু'একটা নাচের সঠিক মুদ্রা কিংবা আধুনিক নর্তন কুর্দন।
সম্প্রতি উদ্ভাসের বিয়ে ঠিক হয়েছে। পারিবারিক আয়োজন। ভেবেছিল প্রেম করেই বিয়েটা করবে। সে তো আর হয়ে উঠলো না। তাই বিয়ে ঠিকঠাক পরবর্তী একটা সমঝোতা পূর্ণ প্রেম শুরু করেছে। গোসলের এই বিষয়টি সে তার হবু বউ ঈশিতাকে কথায় কথায় একদিন বলেও ফেলেছে। তবে ঈশিতার কাছে এটা তেমন কোন সমস্যা মনে হয়নি। সমস্যা না মনে করার বিষয়টি উদ্ভাসের পছন্দ হয়েছে। ঈশিতা বলেছে ঘরের মূল দরজা বন্ধ করে গোসল করাই ভালো। কেনো ভালো সে আলাপে সেদিন আর যাওয়া হয়নি। উদ্ভাস ভেবে রেখেছে এই সূত্র ধরেই খুব শীঘ্র কোন আরেকদিন ইরোটিক কথার সূত্রপাত করার চেষ্টা সে চালাবে। উদ্ভাস এও জানে হবু বউয়ের সাথে ইরোটিক কথার সূত্রপাত এমনেতেই হয়ে যাবে। তাদের কথাবার্তা এখন সেই লাইনেই চলে যেতে চায় প্রতিদিন।
এই মুহূর্তে টিভি ছেড়ে গোসল করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বাসায় ইলেক্ট্রিসিটি নেই। সে কারণেই মোবাইলের এসএমএস আসার শব্দ কানে খুব স্পষ্ট পৌঁছালো। প্রথমটা আসার কয়েক সেকেন্ড পরেই আরেকটা এসএমএস আসার শব্দ । ঠিক একটু পরেই আরেকটা। গোসলের আরাম ভুলে এবার তার মনোযোগ এ দিকে নিবিষ্ট হলো। ইম্পরট্যান্ট কিছু নাকি? কে পাঠাচ্ছে, কি পাঠাচ্ছে...
দ্রুত গোসল শেষ করেই গাটা মুছে তোয়ালে জড়িয়ে ঘরে ঢুকেই প্রথম পৌঁছালো টেবিলের কাছে। টেবিলের উপরে মোবাইলটা রাখা। প্রথম মেসেজটা পড়তে পড়তেই আরও একটা এসএমএস এসে হাজির হলো। একই নম্বর থেকেই চারটি এসএমএস এসেছে। অচেনা নম্বর। প্রতিটাই দুই দুইবার করে পড়লো উদ্ভাস।
১ম এস.এম.এস: " আমার নম্বরে ১০০ টাকা ফ্লেক্সি করো। আই হেভ রিয়েল প্রবলেম। বিলিভ মি। কুইক পাঠাও।"
২য় এস.এম.এস: "টাকাটা খুব তাড়াতাড়ি ফ্লেক্সি করো, না হলে কিন্তু জায়গা মতো ফাঁস করে দেবো..."
৩য় এস.এম.এস: "কল দিয়ে কিন্তু কোন লাভ হবে না, আমি এখন রিসিভ করব না। বাট ফ্লেক্সি না করলে প্রোবলেম এ পড়বে। মাইন্ড ইট। ফ্লেক্সি কর। ডু ইট রাইট নাও। এতে তোমার লাভ হবে। কুইক"
৪র্থ এস.এম.এস: "ভয় পাচ্ছ কি? ভয় পাবার কিছু নাই। আমি বাঘ ভাল্লুক না। তবে তোমার সিক্রেট জানি। ফ্লেক্সি না করলে সাম প্রবলেম হতে পারে। মাইন্ড ইট। আর দেরি করো না , তাড়াতাড়ি পাঠাও।"

কে হতে পারে। ভেবে কুল পাচ্ছে না। একবার ভাবল, নিচে গিয়ে ১০০ টাকা পাঠিয়েই দেই। কিন্তু কেনো পাঠাবে। তার এমন কোন গোপন কি আছে। আর কার কাছেই বা ফাঁস করবে। ঈষিতার কাছে? কিন্তু কি ফাঁস করবে?
এমন না যে তার দু একজন বান্ধবী কখনও ছিল না। কিন্তু তাদের কাছে এমন কোন ঘটনার স্মৃতি তো নেই যা ঈষিতার কানে পৌঁছালে নারী মন উতলা হবে। এই যুগে কি বান্ধবী থাকা অন্যায় কিছু?
আর যেন কে কে ছিল? পুরাতন অনেক কিছুই মনে পড়ে না সব সময় মানুষের। একটা মেয়ের কথা মনে পড়ছে। তাকে প্রেম নিবেদন করেছিল। প্রেম প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ না করলেও সেই তরুণ বয়সে সুন্দরী ললনার সঙ্গ পাওয়ার বাসনায় প্রত্যাখ্যানও করেনি। কিন্তু প্রেম তো আর হয়নি। কোন নিবির সম্পর্ক? না, চরিত্র নিয়ে এতটা দুঃসাহসিক অভিযাত্রী সে কখনও হতে পারেনি। ভয় পাবার কিছু নেই। নিশ্চয় কেও তার সাথে মশকরা করছে। কিন্তু মনের মধ্যে একটা খচখচ্ ভাব কাজ করতেই থাকে। এই খচখচানি মানুষের অতি প্রাচীন এক বদ অভ্যাস। এর থেকে নিস্তার নেই কারও। তার কেনো থাকবে?
ভাবতে ভাবতেই আবার এসএমএস এলো। পঞ্চম এস.এম.এস-টা আরেকটু বেশী আগ্রাসী-
"এখনও পাঠালে না। আমি কিন্তু তোমাকে খুব ভালো করে চিনি এবং তুমিও আমাকে খুব ভালো করে চেনো। বাট আমি আমার নামটা তোমাকে বলতে চাচ্ছি না। ফ্লেক্সি টা এখনি কর। আমি কে সেটা ফ্লেক্সি করার পরই জানতে পারবা। ওকে। এই শেষ সুযোগ। মাইন্ড ইট। "
ভয়ের কথা। কিন্তু এবার একটা ছাই চাপা রাগ বের হয়ে এলো। মেজাজটা চড়ে গেলো হঠাৎ উদ্ভাসের। না, যা হয় হবে। কিসের টাকা পাঠাবে সে, কোন কলও করা ঠিক হবে না। দেখা যাক কি হয়। তারপর সে মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিলো খাটের নরম তোষকের উপর।

(২)
তিন দিন পেরিয়েছে। কিছুই ঘটেনি। এসএমএস বিষয়টি নানান ঝামেলায় উদ্ভাস একরকম ভুলতেই বসেছে । গত পরশু ঈষিতার সাথে বিকেলে বসুন্ধরায় সিনেমা দেখতে গিয়েছিল। একবার ভেবেছিল ওকে বলবে। পরে আর কেনো জানি বলা হলো না।
ঈষিতার সাথে ঐ দিন পরিকল্পনা হয়েছে ১লা বৈশাখে তারা সকাল সকাল ঘুরতে বের হবে। সাথে উদ্ভাস কোন বন্ধুকে আনতে পারবে না। তবে ঈষিতা আনতে পারবে। এই ডোমিনেটিং পাওয়ার ঈষিতা এই কদিন প্রেম করে অর্জন করে নিয়েছে। আর উদ্ভাস সেটা মেনেও নিয়েছে।
তার বন্ধুরা না থাকাই ভালো। বন্ধুদের সাথে যতবার নববর্ষ উদযাপন করতে গেছে সে দেখেছে নারী পটনপটীয়শী হবার প্রচেষ্টাতেই তারা প্রায় শতভাগ ব্যস্ত থাকে। চেনা নেই জানা নেই মেয়েদের সাথে খাতির করে বসছে। আর একদল মেয়েও আছে , এইসব উড়ে এসে জুড়ে বসা ছেলেদের পাত্তাও তারা দিয়ে দেয়।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো পাড়ার এক বন্ধু, নাম সিফাত। তার প্রেমের সূত্রপাত হয়েছিল এক পয়লা বৈশাখে। অচেনা এক মেয়ের সাথে হঠাৎ কথা। সেদিনই মোবাইল নম্বর বিনিময়। মেয়েটা অবশ্য মোবাইল নম্বর দেয়নি। নিয়েছিল কেবল। তারপর কথা শুরু। প্রেম এলো পাখীর ডানায় ভর করে। পাখী রয়ে গেলো। বিয়ে হয়ে গেছে। উদ্ভাস ভাবে পাখির আয়ু কম। কবে যে মরে যায়। কিন্তু তারা ভালোই আছে।
এর বিপরীত ঘটনাও আছে পাড়ার আরেক বন্ধুর। কোন এক ১লা বৈশাখে এক নারীর সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে টাঙ্কি জাতীয় খেলা শুরুও পর নারীটিও তাকাচ্ছিল। তারপর সেই বীর পুরুষ বন্ধু নিজ কৃতিত্ব দেখাতে বন্ধুদের দল ত্যাগ করে নারীর দিকে এগিয়ে যায়। তারপর সেদিক থেকে প্রানন্ত হাসির ফোয়ারা ছুটে আসে। মেয়েটার সাথে সঙ্গীরা কাছেই ছিল। সে কি অপমান। বন্ধুটি মাথা নিচু করে ছিল। উদ্ভাসরা অবাক। প্রথমে ভেবেছিল মাইর টাইর দেয়ার প্রস্তুতি। তারাও বন্ধুর সাহায্যে এগিয়ে যেতে থাকে। সত্য যখন প্রকাশিত হয়। হাসি উদ্ভাসদের মাঝেও ছড়ায়। আসল ব্যাপার ওটা কোন মেয়ে ছিলনা। মেয়ের সাজে একটি ছেলে। পথ নাটক করেছিল তারা। নাটক শেষে ঘাসের উপর আড্ডা জমিয়েছিল। পোশাক তখনও পরিবর্তন হয় নি। সে কি লজ্জা বন্ধুটির।
ওসব বন্ধু সাথে না থাকলেই তাই ভালো।
বন্ধুদের সব কথা কি আর ঈষিতাকা বলা যাবে। বিশ্বাসই করবে না যে সঙ্গ দোষে সেও লোহা হয়ে ওঠেনি কভু। ঈষিতা নির্ঘাত বলবেই, সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। তুমিও মেয়েদের উত্যক্ত করেছো ঠিকই। বন্ধুরাই তো বলে অনেকে সে নাকি সাহসের অভাবে চরিত্রবান। হাস্যকর!
কিন্তু ঈষিতাকে কি আর বিশ্বাস করানো যাবে, বছর দু'য়েক আগে নববর্ষের দিন বরং একটি মেয়েই তার কাছে মোবাইল নম্বর চাইছিল। মেয়েটা তারই আরেক দল বন্ধুদের সাথে এসেছিল। নম্বর সে দেয়নি। কিন্তু তার বন্ধুরাতো ছিলই। নম্বর জোগাড় মেয়েটা কল ঠিকই করেছিল। একবারই । হয়তো তারপর বুঝে যায় উদ্ভাসকে দিয়ে টাইম পাস সখ্যতা হবে না।
এই মেয়েটাও তো হতে পারে। কিন্তু এই বছর দুয়েক পরে এসএমএস দেয়ার কি কারণ। এতদিন পরে হঠাৎ কারও কথা মনে পড়ে নাকি। উদ্ভাস বিশ্বাস করে না। সে নিজেই মেয়েটার নাম ভুলে গেছে।

(৩)
চারদিক সাত সকাল থেকেই সাজ সাজ রব। নারীরা সেজেছে সাদা লালের কম্বিনেশনে। সাদা শাড়ী লাল পাড়। কারও অবশ্য লাল শাড়ী হলুদ পাড় কিংবা সাদা। কেউ শাড়ীর পরিবর্তে সালোয়ার কামিজেই লাল সাদা রঙের আগমন ঘটিয়েছে। আর পুরুষরাও কাছাকাছি রঙের ফতুয়া পাঞ্জাবী । পুরোদস্তর বাঙালী সাজ। আসলে ঠিক বাঙালী সাজটা যে কি, তা কি বলা যায়?
তবে এটা বহু বছরের প্রচলিত অভ্যাস কিংবা আচরণ। এভাবেই চলে আসছে। আমরা বাঙ্গালী তো বহু জাতির মিশল জাতি। সেই বৈদিক যুগে কিংবা আরও আগে? দরিদ্ররা কি এই পোশাক পড়ত? কিংবা আরও পরে সেন পাল এসব যুগে? তখনও তো নববর্ষ ছিল। তখনও কি লাল সাদা হলুদ রঙে সাজত মানুষ। ইতিহাসে আছে কিছু। কিছু হয়তো নেই।
একখানা কোকিল উদ্ভাসের ঘরের জানালা ঘেঁষা স্বর্ণ ঝুরি গাছটির কচি ডালে এসে বসেছিল। পাখিটা ডেকেছেও দু একবার। সঙ্গীর কথা মনে পড়ে গেছে হয়তো। প্রাণে সঙ্গ পাবার টান। প্রকৃতি আর মানুষের এত এত সাজে এক মাস আগে বসন্ত হারা বেদনার্ত পাখিও ভেবে বসেছে হয়তো এই তো আরেক নব বসন্ত। এই তো আনন্দ। এই তো প্রেমের নব তরঙ্গ প্রবাহ ক্ষণ।
সত্যি আজ ১লা বৈশাখ। আন্দনের উৎসরণ দেখেই তা বোঝা যায়। এ জাতির আনন্দের বড় অভাব। তাইতো যখনই একটু সুযোগ আসে এরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। লাফিয়ে ওঠে। মন প্রাণ উজাড় করে চেষ্টা করে সময়টাকে প্রাণবন্ত করার। কারণ আনন্দ শেষ হলেই একটা রাত। রাতের পর আবার সমস্যার অন্তহীন এবং অমোঘ পথে নেমে যেতে বাধ্য সবাই।
উদ্ভাস ভেবেছিল আজ ছুটির দিন। তার উপর পথে পথে মানুষের রঙিন ঢল। যানজট কম থাকাই স্বাভাবিক। অথচ অন্যদিনের চেয়ে বেশী আজ। এ শহরে আজ আর কোন প্রেডিকশন কাজ করে না। অনেক কিছুরই ঊর্ধ্বের চলে যাচ্ছে প্রিয় ঢাকাটা।

ঈশিতারা তার আগেই পৌঁছে গেছে। মোবাইল নামক সুবিধা যন্ত্রের কারণে ঈষিতার কল চলে আসছে বারবার। প্রতিবারই পূর্বের চেয়ে ঈষিতার বিরক্তি একটু একটু করে বাড়ছে। কিন্তু সীমা অতিক্রম করতে দেবে না বলেই বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করে সে। অবশ্য ঈষিতার সাথে কোম্পানি দেয়ার জন্য বেশ কয়েকজন আছে। রাগ তাই মাত্রা ছাড়াতে পারবেই না। তার উপর এই নব বর্ষ প্রভাতের বাতাসে এমন এক জাদু থাকে যাতে ক্লান্তি আসে কিন্তু কষ্ট হয় না। ঘামতে থাকে , নারীর ম্যাক আপ নষ্ট হয়ে গলে পড়তে থাকে, রোদ বাড়তেও থাকে, কিন্তু মানুষের হাঁটা চলা থামে না সন্ধ্যা বধী। এ এক অন্যরকম প্রাণচঞ্চলটা । এর মাঝেই মানুষের এক বছরের সঞ্চিত সুখ স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ।
টিএসসির দিকে হাঁটছে। মোবাইলে ঠিক তখনই সেই নম্বর থেকে একটি এসএমএস এলো।
"কি উদ্ভাস , আজ ফাঁস করে দেই, টাকা তো পাঠালে না। হবু বউটাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছো টিএসসি তে, বলে দেবো নাকি। আজ এখুনি টাকাটা পাঠালেও চলবে।..."
এতটা বুদ্ধির অভাব উদ্ভাসের মস্তিষ্কে নেই। এসএমএস কারীকে করার কাজটা বোধহয় আজই হয়ে যাবে। ঈষিতার সাথে এখন থাকার কথা তার দুই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। হয়তো তাদেরই কেউ।

মিথ্যে হলো না। এসএমএস করছিল যে সে সে আসলে হয়তো আশা করেনি এমনটা হবে।
উদ্ভাস ঈষিতাদের সামনে পৌঁছাতেই ঐ নম্বরে একটি কল দিল। ও নম্বরে এটাই প্রথম কল তার। বেজে উঠল । হাত ব্যাগটা কাঁপছে মৃদু। মেয়েটা মোবাইলটা বের করেই থমথমে মুখে তাকাল উদ্ভাসের দিকে। উদ্ভাস তাকে চেনে না। চেনেনা উপস্থিত অন্যদের সবাইকেও। কেবল চেনে যে মেয়েটাকে সে আরেক বান্ধবী ঈাষিতার। তার নাম লাবণ্য।
ঈষিতা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল অচেনাদের সাথে। পরিচয় হওয়া প্রথমজন একজন যুবক। তারই কাছাকাছি বয়স। যুবকটি ঈষিতার আরেক বান্ধবী নন্দিনীর হবু বর। বিদেশ থেকে এমএস করে ফিরেছে ক'দিন আগে। নন্দিনী আর তার বরের অবস্থাও ওদের মত। সব ঠিকঠাক। দিন ক্ষণ পাকা । তারাও তাদেও মত ঠিকঠাক করা পরবর্তী প্রেম পর্ব চালাচ্ছে। এদের কথা শুনেছে সে ঈষিতার কাছে আগেই। একটু পার্থক্য হলো ঠিকঠাক পূর্বেও তাদের প্রেম ছিল। যুবকটি দীর্ঘদিনের বন্ধু তাই যেন সবার। তারপর যে মেয়েটি ব্যাগ থেকে মোবাইল হাতে বের করে চেহারাটা চুপসে যাওয়ার মত ভাব ধরেছিল তার সাথে পরিচয় করানোর মুহূর্তে মেয়েটা বলে উঠল, 'সরি ভাইয়া, কিছু মনে করেন নি তো, ওটা আসলে...।'
সবাই অবাক। তারপর কিছু ব্যাখ্যা প্রদান করা শুরু করে বান্ধবীটি।
তারপর বিস্তর হাসাহাসি । খোলামেলা হাসি। লাল সাদার সুখ আকাশে উড়িয়ে হাসি। ঈষিতা হাসে না। অনেক হাসির মাঝে তখন ঈষিতার মিষ্টি মুখটি একমাত্র বুনো ফুল। সে বিরক্ত হয়। না তার এসএমএসকারী বান্ধবী নিলির উপর নয় । উদ্ভাসের উপর। উদ্ভাস কেনো গোপন করে গেলো। এই কি হবে ভবিষ্যৎ স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক! বিশ্বাস তবে আসবে কি ঝড়ের মত , চলে যাবে কিছু ধ্বংসের চিহ্ন রেখে। তাহলে কি করে হবে।
ঈষিতা খেপে আছে। নিলি তাকে দূরে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। হয়তো বুঝালো। এটা তো করেছি তোর জন্যই। একটা পরীক্ষা করে দেখতে হবে না। তবে ভাইয়া পরীক্ষায় পাশ।
কিন্তু যদি পরীক্ষায় পাশ না করত?
সে তো ভাবিনি, ঈষিতা।
কিন্তু ও আমাকে কেনো জানালো না। তবে কি সুযোগটা হাতছাড়া না করে হাতে ধরে রাখার চেষ্টা। অথবা তোকে চিনেই ফেলেছে আগে।
চিনবে কোত্থেকে। চিনেছে তো একটু আগে আমার এসএমএস পেয়ে। আমিও গাধী। কেনো অমন একটা ধরা খাওয়া এসএমএস পাঠালাম। আর পাঠালাম যখন, মোবাইলটাও অফ করলাম না। সে যা হোক। ঠাণ্ডা হো। ভাইয়া ফেল তো করেনি। তাই সেটা নরমালি হোক কিংবা টেকনিক্যালি। পাশ ইজ পাশ।

ঈষিতা ঠাণ্ডা হলো। উদ্ভাস হাফ ছেড়ে বাঁচল। তার পর গোল হয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ল সবাই। শুরু হলো আড্ডা, ঝালমুড়ি, আচার। ইলিশ পান্তা খাবার অফার দিলো নন্দিনীর হবু বর। কেউ রাজী হলো না। সবাই নাক শিটকালো এক বাক্যে।
তুলি খুব মজা পেয়েছে। সে এখনও মুখ টিপে টিপে হাসছে। তারপর বলেই ফেলল ভাইয়া আপনি কত বোকা। অনেক ভয় পেয়েছিলেন না এসএমএস গুলো পেয়ে। অগুলো কিন্তু আপুকে আমিই লিখে দিয়েছি।
আই তুলি চুপ, কথাটা বলল নিলি।
তবে ভাইয়া পাশ । ঈষিতা আপুর জন্য যোগ্য। ঈষিতা আপুর বিয়ে। আমার লক্ষ্মী আপু। দুলাভাইকে একটু তো পরখ করেই নিতে হয়।
উদ্ভাস এসব কথায় কি বলা উচিৎ না বুঝতে পেরে, হাসিই বিলিয়ে দিল। ঈষিতা একটু গম্ভীর এখনও।
তুলি নিলির ছোট বোন। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এবার। নিলিতো তাকে নিয়েই আসবে না। এই ভিড় ভাঁড়ে তাকে নিয়ে ঘোরাফেরার বড় ঝঞ্ঝাট। সে বার বাণিজ্য মেলায় দুই ছেলে পিছে লেগেছিল। ফোন নম্বর চেয়েও বসেছিল। তারপর একটা মিথ্যে নম্বর দেয়ায় পিছু হটেছিল সে দুটো।
আসলে তুলি স্বাভাবিক সৌন্দর্যের মধ্যে পড়ে না। সে তার চেয়ে আরেকটু বেশী। সে সৌন্দর্যের সাথে তার কচি বয়স। তর চারপাশে সবসময় এক আকর্ষণের প্রলয় বলয়। সে বলয়ে হাজারো দুষ্টু পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি।
উদ্ভাস নিজেও কিছুক্ষণ না তাকিয়ে পারেনি। কিন্তু ঈষিতা চোখের সব ভাসা বুঝে ফেলতে চায়। দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
ঈষিতার কারণেই তুলিকে আনা। ঈষিতা তুলির সবচেয়ে প্রিয় আপু। নিজের বোনের চেয়েও তার সাথে সখ্যতা বেশী। চিরায়ত পুরুষের নষ্ট দৃষ্টি কবর দিয়ে একজন ভালো দুলাভাই হওয়াটাই সঠিক এবং উচিতকর্ম। উচিতকর্ম করায় কোন কমতি কখনও ছিলনা উদ্ভাসের। নন্দিনীর বরটিও বেশ সুবোধ বালক। হয়তো তারচেয়েও অনেক বেশী। এবং নির্ভেজাল।

(৪)
১০ ফিট দূরে ভাঙা দেয়ালটার উপরে তিনটে ছেলে বসে সিগারেট টানছে। উদ্ভাস তাদের দিকে পেছন দিয়ে বসা। উদ্ভাসের বরাবর তুলি। তুলির পাশে ঈষিতা। ঈষিতাই প্রথম খেয়াল করল ছেলেগুলো তাদের দিকে তাকিয়ে নানান অঙ্গভঙ্গি করছে। কখনও কানে আঙ্গুল ছুঁয়ে ফোন নম্বর চাইছে।
লক্ষ্য হয়তো তুলি। তুলি সেদিকে একবার তাকিয়ে মুখটাও ভেঙালো।
নিলি বলল, চলেন উঠে অন্যদিকে যাই। ছেলেগুলো জ্বালাচ্ছে।
নন্দিনীর হবু বর বলে উঠল, এতো ইভ টিজিং। এত কড়াকড়ি আইন করা হয়েছে। শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তারপরও কেউ থামছে না?
উদ্ভাস বলল, তাই নাকি। আইন মানানো এত সহজ এ দেশে! আইন মানাতে হলে আগে আইন মানার বিষয়টি তো মানুষের অন্তরে ঢুকাতে হবে। আইন এর সাথে আবার নামও নাকি চেঞ্জ করছে। ইভ টিজিং বলা যাবে না। যৌন হয়রানি বা নির্যাতন না কি যেন বলতে হবে।
উত্যক্ত কথাটি বললে বেশী ভালো হতো মনে হয়।
আচ্ছা বলতো সবাই, নাম এর পরিবর্তনে কি মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসবে। আসে না। এটা দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফসল।
নিলি বলে, চলেন ভাইয়া আমরা উঠি। তুলিও! দেখেন না। বান্দর একটা। ছেলেগুলো তাকাচ্ছে, ফাজলামি করছে আর সে ভেঙাচ্ছে। কেনো তোর কি দরকার পাত্তা দেয়ার। সুন্দরী গাধী। তোর মুখে কালি মেখে বাইরে বের করা উচিৎ।
আমি আবার কি করলাম। যা আপু।
উদ্ভাস বলল, ঠিকই সুন্দর হওয়া কি পাপ নাকি। ইভ টিজিং যারা করে তাদের কাছে সৌন্দর্য কি আর অসৌন্দর্য। তাদের কাজ উত্যক্ত করা। তারা করবেই। চল , উঠি। কিন্তু ছেলেগুলোকে কিছু উপদেশ দিয়ে আসবো নাকি। কি বলেন ভাইজান।
ঈষিতা বলল, কোন দরকার নেই। সব বীর পুরুষ সাজার ইচ্ছে। বীরপুরুষ সেজে ইমপ্রেস করতে হবে না। আমরা ভদ্রতার দুর্বলতাতেই ইমপ্রেস হয়েছি। বিয়েও করছি। তারচেয়ে ওটাই ভালো। রমনায় গিয়ে গান শুনে আছি , চল সবাই।

সবাই উঠে রমনার দিকে যাত্রা করল।
তুলি খেয়াল করল ছেলেগুলো তাদের পিছু নিয়েছে। বলল, আপু ঐ যে ওইগুলা পিছে পিছে আসছে।
চেহারা দেখলেই বোঝা যায় সবগুলো ডাইল খোর।
নন্দিনীর হবু বরের সে কথায় তুলি বলল, ডাইল খোর কি।
তোর জানতে হবে না। ওদিকে না তাকিয়ে সামনে হাট। ভিড়ে হারিয়ে যাবে বান্দরের দল একটু পরেই।
নিলি কথাগুলা বলেই তুলির হাতটা শক্ত করে ধরে এগিয়ে চলল।
চারুকলার সামনে ভয়াবহ ভিড়। বেশ খানিকটা সময় লাগল সে ভিড়টা ঠেলে সামনে এগোতে। বান্দর ছেলেগুলাকে আর চোখে পড়ছে না। কিংবা আশেপাশে একই রকম বান্দরের দল অনেক। আলাদা করে আর চেনা যাচ্ছে না হয়তো।
সোহরাওয়াদী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভটা পেরিয়ে রমনা পার্কের দিকে এগিয়ে চলল দলটা। উদ্ভাস আর ঈষিতা টুক টুক করে কথা বলতে শুরু করেছে। ঈষিতার রাগ পুরো উড়ে গেছে এখন। দলের অন্যরা আড় চোখে তাকিয়ে মজা নিচ্ছে।
রমনার ভেতরে ঢোকার সরু গেটটার সামনে একটা জটলা। বেশ ঠেলাঠেলি।
নন্দিনীর বর সেই জটলার ভেতর ঢুকতে চাইলো না।
নন্দিনী ক্ষ্যাপে গেলো। বলল, কেনো তোমরা দুজন পুরুষ মানুষ চারটে মেয়েকে ঘিরে স্কট করে নিয়ে যেতে পারব না। আমরা যাবোই। বটমূলে গান শুনবোই।
লাবণ্য বলল, ঠিকই তো।
দলটা এগিয়ে গেলো।
ভিড়টার সাথে মিশে যেতে শুরু করতেই হঠাৎ ঠেলাঠেলি বেড়ে গেলো আরও বেশী। অকারণ। সবাই যেন আগে ঢুকতে চাচ্ছে।
কিন্তু সে কারণ নয়। এ তো ইচ্ছাকৃত । সেই ছেলে তিনটে। কিংবা এখন দলে ভারী। তারাই যেন ঠেলছে বেশী। উদ্ভাস বুঝতে পারছে তাদের লক্ষ্য মূলত তুলি। উদ্ভাসের সামনে ঈষিতা। তা সামনে নিলি , নিলির পাশে তুলি। ঈষিতার কানে কানে বলল, ছেলেগুলো তুলির গায়ে ঘেঁষছে। সেই ছেলেগুলিই।
উদ্ভাস ঈষিতার কাঁধ বাম হাতে জড়িয়ে এক পা এগিয়ে যায়। তুলি এখন ঠিক তার সামনে। এ ছেলেগুলোর একটা তুলির গা ঘেঁষে চলে এসেছে।
ঠিক তখনই উদ্ভাস শুনল তুলি নিলির কানে কানে বলছে, ' আপু ঐ ছেলেটা আমার বুকে হাত দিচ্ছে।'
নিলি রুদ্র ভঙ্গি নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকাতে যাচ্ছে, কি করবে সে হয়তো জানে না, কিন্তু সে ক্ষিপ্ত।
উদ্ভাস বুঝতে পারে। তারই কিছু করা উচিৎ। কিন্তু কি?
তুলির কানের কাছে মুখটা এগিয়ে বলল, আপু ছেলেটার মুখে প্রচণ্ড জোড়ে একটা চড় লাগিয়ে দেও। দেখবা সব ঠিক হয়ে গেছে।
মুহূর্তে ভাইয়ার আদেশ সে পালন করল।
প্রচণ্ড ভিড় তবুও জঘন্য ঠেলাঠেলিও থেমে গেলো। চড়ের শব্দ কিছু পুরুষের নিষ্ঠাবান পৌরষত্ব জাগিয়ে তুলল। অথচ হয়তো ক্ষণিক আগে তারাও অপকর্মগুলোতে মজা নিচ্ছিল।
ছেলেগুলো নিঘৃত হলো। পারলে মারে কেউ কেউ। কিন্তু মারলো না। আজ নববর্ষ । আনন্দ দিন। মারার ইচ্ছে হলো না হয়তো কারও। কিংবা পুরুষ সব পুরুষই তো। কারে মেরে কি বিপদে পড়ে। বিপদে পড়া মেয়েটা সামনে ছোট মুহূর্তের হিরো হওয়ার চেষ্টা তো অনেকের সফল। ওটাই কম কিসে।
নিলি সবটুকু আক্রোশ নিয়ে ছেলেগুলোকে- বেয়াদব , তোদের মা বোন নেই- এতটুকু বলে উঠল দাঁত মুখ খিঁচিয়ে।
তারপর দলটা প্রস্থান নিল ভিড় থেকে।
জটলা ভেঙে গেলো। কিছুদূর গিয়ে পিছে তাকিয়ে ছেলেগুলোকে আর চোখে পড়লো না। যাক বাঁচা গেছে। ওরা তো দলবল নিয়ে আসতে পারে। আরও খারাপ কোন ঘটনা ঘটাতে পারে।
কিছু আর ঘটে নি সেদিন। তুলি কাঁদার চেষ্টা করছিল। নিলির বকাবকিও বাড়ছিল। উদ্ভাস তুলির জন্য একটা সুন্দর মুখোশ কিনে দিল। একটা বাঘের মুখোশ। বিপন্ন প্রায় প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখোশ। তারপর বলল , এই নাও এটা পড়ে কান্না কর। তাহলে সুন্দর মুখে কান্নার কলঙ্ক চোখে পড়বে না।
তুলির কান্না তাতে থামতে শুরু করল। নিলিও থেমেছে ঈষিতার হস্তক্ষেপে।

তারপর একটা সুন্দর সকাল এবং দুপুর কাটানোর পর সবাই চলে গেলো যার যার বাড়ির পথে। বিকেলের মধ্যভাগ। উদ্ভাস ঈষিতাকে নিয়ে তার বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য এগিয়ে যেতে থাকে।
ঈষিতার চোখের কাজল ল্যাপটে গেছে। সেটা নিয়ে হালকা রসিকতার চেষ্টা করছিল উদ্ভাস। তবে দুজনের মনই এখন ফুরফুরে। পহেলা বৈশাখের বিকেলে ফুরফুরে হাওয়া বইছে। কাল বৈশাখীর এক আগমন বার্তা যেন। আকাশে এখনও সাদা মেঘ ছুটছে। হয়তো সন্ধ্যা নামতে নামতে কালো রূপ ধরবে। বছরের প্রথম দিনেই মেঘ দেখিয়ে দেবে তা কান্নার কত জোর।
বাতাসে ঈষিতার খোলা চুল উড়ছে। উড়ে উড়ে উদ্ভাসের মুখে লাগছে।
উদ্ভাস বলছে, এই চুলগুলো মুখের উপর ছড়িয়ে কবে যে ঘুমাব...
এই তো লক্ষ্মী সোনা আর একমাস। কিন্তু বিশ্বাস কিন্তু পোক্ত হয়নি। কথা দিতে হবে আজকে এই নব বর্ষের প্রথম দিন। আমার কাছে গোপন করবা না কিছু। বল, কথা দাও।


(পরিশিষ্ট)
জ্যৈষ্ঠ মাসে উদ্ভাস আর ঈষিতার বিয়ে হয়ে গেলো।
বিয়ে হবার পর আরও দুমাস কেটে গেছে। মুখের উপর চুল ছড়িয়ে ঘুমানোর কাল শেষ । তারপর চুলে তেল দেয়া নিয়ে কথা কাটিও হয়ে গেছে মাঝে।
তারপরও সুখে আছে দুজন। কারণ তারা সুখে থাকতে চায়।
তারা জীবন যুদ্ধ আর সুখের সন্ধানে দিন কাটাতে থাকে।
শ্রাবণ মাস। শান্ত সকাল। আকাশে সাদা মেঘের অনবরত আনাগোনা।
ঈষিতার পরীক্ষা চলছে। সে ঢাকা মেডিক্যালের শেষ বর্ষের ছাত্রী। সকালে উঠেই সে বিদায় নিয়েছে। শনিবার বলে উদ্ভাসের অফিসও বন্ধ। ঈষিতা যাবার পরও আরও কিছুক্ষণ সে ঘুমিয়ে থাকল।
ঘুমঘুমে চোখে হাতটা বাড়াতেই খাটের উপর খবরের কাগজ পেয়ে গেলো। ঈষিতাই রেখে গেছে। এই ছোট ছোট কাজই সুখে থাকার উপকরণ। এগুলো ছাড়া সুখের অস্তিত্ব থাকে না। সুখ খুব বড় কিছুতে হয় না। সুখের আশ্রয় হয় ক্ষুদ্র পাত্রেই।
খবর কাগজের প্রথম পাতায় সব নেতিবাচক খবর। রাজনৈতিক অস্থিরতা।
পেছনের পাতাতেও তাই। ভাল খবর কি আদৌ ঘটে না। নাকি নেতিবাচক খবর লিখতে লিখতে সাংবাদিকদের নেশা হয়ে গেছে? ইতিবাচকতা আর টানে না।
হঠাৎ শেষ পাতার মাঝামাঝি চোখ আটকে যায়। মেয়েটার সুন্দর চোখটা দেখেই চিনে ফেলে।
এতো তুলি। নিলির বোন। বিয়ের দিন শেষ দেখা হয়েছিল। তখন তুলি কলেজে ভর্তি হয়েছে। এসএসসিতে পেয়েছিল গোল্ডেন এ প্লাস। ওদেরও বাসায় যাবার কথা ছিল, ইচ্ছেও ছিল। সময়ের অভাবে আর যাওয়া হয়নি।
খবরটা ভয়াবহ। শিরোনাম টা এমন
"ইভ টিজিং এবং এসিডের শিকার আর এক তরুণী"
ঘটনা ভয়াবহ। এসিড মেরেছে একটা ছেলে। গতকাল শুক্রবার ঘটেছে এই ঘটনা। জানালায় দাঁড়িয়েছিল তুলি। দোতালায়। নিচ থেকে ছুড়ে মারে এসিড রাখা একটি বাল্ব। প্রেমে প্রত্যাখ্যান হয়ে সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। মেয়েটার ডান হাত পুরো পুড়ে গেছে। মুখের ডান পাশটাতেও ছিটকে লেগেছে এসিড। কিছু অংশ পুড়ে গেছে। শয়তান ছেলেটার ছবি দেয়া ইনসেটে। চেনা চেনা লাগছে। পহেলা বৈশাখের দিন রমনার সেই ছেলেটাই তো মনে হচ্ছে।
সেই চড় খাওয়া ছেলেটা। সেই ইভ টিজার। বেয়াদবটা। নাও হতে পারে। হয়তো এদের সবার চেহারা একই রকম। এদের পরিচয় তো একটাই। হতে পারে চড়ের প্রতিশোধ। তাহলে তো এ তারই দোষ। চড় দেয়ার সাহস জুগিয়ে কি ঈষিতার জীবনে এত বড় ক্ষতি করে ফেলল ? যে মুখের চেহারা থেকে কারও চোখ ফেরে না, সে চেহারাটা নষ্ট হয়ে যাবে, কেউ তাকাবে না। কেউ আর আবিষ্ট হবে না। মুগ্ধ হবে না। কেউ আর পিছেও কিন্তু লাগবে না।
সেই ছেলেটাই কি? অনেকগুলো প্রশ্ন মনে উঁকি দিল।
কাগজে নিয়মিতই তো ইভ টিজিংয়ের শিকার মেয়েদের খবর দেখে। আজ নিজের পরিচিত একজনের । তুলির মত একটা সুন্দর সুশীল এবং ভালো ছাত্রী। শিউরে ওঠে গা। তার পরিচিত!
ঈষিতাকে জানাতে হয়। মোবাইল বন্ধ পেলো।
অস্থির হয় মন।
কি করা যায়। তারপর মনে পড়ল। মোবাইলে সেই এসএমএস গুলো এখনও আছে।
সেখান থেকে নিলির নম্বর নিয়ে ফোন দিলো।
নিলি খুব কাঁদছিল।
কান্না জড়ানো কণ্ঠে তার কাছ থেকে হাসপাতালে ঠিকানা নিল। তুলি আছে পিজি হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে।
ঈষিতার মোবাইলে একটা এসএমএস দিয়েই ছুটে চলল উদ্ভাস।
সকালের নাস্তা করার কথাও তার মনে নেই।
রিকশা পেলো না। ঝরঝরে রোদের মাঝে সে ছুটছে। সাদা মেঘগুলা চেয়ে আছে আকাশে। ঘামছে অথচ ক্লান্তি হচ্ছে না। মনটা তার কাঁদছে ভীষণ। সেখানে ফুটে উঠছে তুলির সেই মিষ্টি মুখ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিন আরফান. আমার দেখা এই সংখ্যার সেরা গল্প. আর কিছু বলার নেই.
মামুন ম. আজিজ আপনাকেও ধন্যবাদ ফজলুল
এস, এম, ফজলুল হাসান অনেক ভালো লেখেছেন , ধন্যবাদ আপনাকে
মামুন ম. আজিজ গল্পতো বাস্তবতারই ছায়া
খোরশেদুল আলম সঠিক চিন্তাচেতনা আর বাস্তবতায় অনেক ভালো লিখেছেন পড়ে খুব ভাল লাগল।
মামুন ম. আজিজ এবং এর বিষয়টা প্রণিধান যোগ্য। ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য সুন্দর এবং কার্যকর। আবারও ধন্যবাদ নাযমুল ।
নাজমুল হাসান নিরো আমি পাগলটা অনেকটা আপনার উদ্ভাসের মতই গানখোর। বাথরুমে মোবাইল ফোনে গান ছেড়ে গোসল না করলে আমার তৃপ্তিই হয় না। এবার আপনার গল্প প্রসঙ্গে আসি। ভেবে অবাক লাগছে যে এতটা দীর্ঘ হওয়ার পরও গল্পটা তার সৌন্দর্য্য হারায় নি। লেখার হাত যে অনেক পুরনো তা গল্প পড়েই বোঝা যায়। একই সাথে শুধু গল্পের জন্য গল্প এবং গল্পের ছলে বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ প্রশংসা করার মত। আর একটা কথা কোন পূর্ণ লাইনের পরে এবং ব্যবহার করলে এবং এর আগে হাইফেন ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত দাঁড়ি নয়।
মামুন ম. আজিজ ধন্যবাদ পড়ার জন্য আহমেদ সাবের।
আহমেদ সাবের ভোট না দিয়ে পারলাম না। একটা বাস্তব সমস্যার সত্যিকার প্রতিফলন।
মামুন ম. আজিজ কৌশিক, অনেক অনেক ধন্যবাদ।

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪