সারপ্রাইজ অপারেশন

নববর্ষ (ডিসেম্বর ২০১৩)

মামুন ম. আজিজ
  • ৪৬
-কিন্তু অভিকে একবার বলার প্রয়োজন ছিল না?
-আরে দূর শিবলী, বললে আর সারপ্রাইজ হলো কোথায়। এতদিন পর আমার বন্ধুটি দেশে আসছে, এর চেয়ে উত্তম সারপ্রাইজ আর কি হতে পারে।ওদের ছাদে কত আড্ডা মেরেছি। তুই জানবি কি করে, তখন তো তুই আর এ এলাকায় আসিসনি। কিন্তু তোকে একবার নিয়ে গিয়েছিলাম, মনে আছে না। ওরা খুব মাই ডিয়ার পরিবার। কিন্তু সেই গ্র“পটা, একদম ভেঙে গেছে। কেবল আমি, রাতুল, রনীল আর নীরব কেবল রয়ে গেছি এখনও এ পাড়ায়। আর সবাই কই কই চলে গেলো। অর্ধেকই তো চলে গেছে বিদেশে। দেশে যেন আমরা আর পড়াশুনা করছি না।
-সুযোগ পেলে কেনো যাবে না।
-ঠিক। কি আছে এ দেশে? আমি তো ওৎ পেতে বসে আছি, কেউ একটু হাত ধরে টানলেই চলে যাবো। এত অস্থিরতা , এত ঝামেলা, আর ভাল লাগে না।

শেষ কথাগুলো বলল রাতুল। বললাম, ‘হ্যাঁ, কথা ঠিকই বলেছিস...সবাই সুযোগ সন্ধানী। আর না হয়ে কি উপায় নেতা-নেত্রীরাই তো সুযোগ সন্ধানী হবার পথ দেখিয়ে দিচ্ছে দিনের পর দিন। সে সব যাক। আমরা কিন্তু সন্ধ্যার পরেই সবাই জড়ো হয়ে যাব আমার বাসায়। ওদের ওখানে পৌঁছে যাব নয়টা সাড়ে নয়টার মধ্যেই। আমার সাথে আজ সকালেও ফেসবুকে চ্যাটিং হয়েছে। অভি ঢাকায় ল্যান্ড করবে বিকালে সোয়া পাঁচটায়। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাতটা। দাড়োয়ান হানিফ ভাইকে বলা আছে। আমরা কিন্তু সবকিছু বিকালের মধ্যেই গুছিয়ে ফেলবো। শিবলী, ল্যাপটপ আর স্পিকার কিন্তু আনতে ভুললে হবে না। আর রাতুল যন্ত্রপাতি মানে ঐ চাপাতি টাপাতি যা লাগবে সব কিন্তু রেডি করে রেখ। রাস্তা ঘাটের অবস্থা ভালো না। কখন আবার পুলিশের হাতে পরতে হয়। আগেই আমাদের বাসায় এনে রেখে দিও। আমি, নীরব আর রাজা মিলে বাকী সব রেডি করে রাখব। অন্যদের বলে দেবে একটুও যেন দেরী না করে।

শিবলী বলল, খালি দাড়োয়ানকে জানিয়ে এত বড় অপারেশন করা ঠিক হবে। রিস্ক হয়ে যাচ্ছে না।

আমি আর রাতুল হাসলাম। রাতুল চোখের ইশারায় মানা করায় আমি আর হাসি প্রলম্বিত করলাম না। পরে না আবার অন্যরা চেপে ধরে। রাতুল তখন লজ্জায় পরে যাবে। কেবল আমি আর রাতুলইতো জানি। অভিও জানে না। এইবার অভি প্রায় একমাস থাকবে। এই সুযোগে অভিকেও জানাতে হবে। আশা করি সে মানা করবে না।

আমি বললাম, ও সমস্যা হবে না। অভিদের পরিবারের এমন কেউ নেই যে আমাকে চেনে না। সেই ক্লাশ ওয়ান থেকে ও আমার বন্ধু। ওদের ছাদে খেলে খেলেই তো বড় হলাম। ও পরিবারে আমি একজন সদস্যের মতই।


...৩১ শে ডিসেম্বর সকাল থেকেই মনে উত্তেজনা। গ্র“পটা ভেঙে যাবার পর শেষ কয়েকটা থার্টি ফার্ষ্ট নাইট কেটেছে ঘরে বসেই আমার। রাতুলেরও তাই। সাত সকালেই সব কেনাকেটা শেষ। সবাইকে ফোন করে আরেকবার কনফার্ম হয়েছি। সবাই আসছে। মোট আমরা বারো জন। অপারেশনটা ভালোই হবে। গ্র“পের প্রায় অর্ধেকের আবার বোতলের অভ্যাস আছে। অয়ন নামে একটি ছেলে আছে এ মহল্লারই সে দায়িত্ব নিয়েছে। তবে একসাথে সে যাবে না। তাকে মূল ওপারেশন শুরুও পরে আসতে বলা হয়েছে। আমার আপত্তি ছিল, কিন্ত আধিক্যের ইচ্ছায় ধোপে টিকলো না। বলেছিলাম দেশের অস্থিতিশীল অবস্থা এর মধ্যে এসব নিয়ে টানাহেচড়া করা ঠিক হবে না। রাতুলের বিষয়টাও আছে। তবুও রাজী হতে হলো। গোপনে হয়ে যাবে, মাত্র তো দু’বোতল । নতুন কিছূ নয়। আর অভি বিদেশে দেদারসে গলধঃকরণ করে আমি জানি। ও খুশিই হবে। মাথা থেকে চিন্তা তাই বাদ দিয়েছি।

এয়ারপোর্টে পৌঁছে অভি নেটে ঢুকেছিল ফেসবুকে, তখন শেষ কথা হয়েছে। যথাসময়েই প্লেন ছাড়বে জানালো। বেশি কিছু জানালাম না। তবে একটু হিন্ডস দিলাম। বললাম আয়, অনেকদিন পর থার্টি ফাস্টে একসাথে সিগারেট ফোঁকা যাবে। ও খুশি হয়েছিল। তারপর আর কথা হয়নি।

বিকাল হতেই আমাদের আয়োজনের শেষ মহড়া দিয়ে নিলাম। পুরো আস্ত একটা খাসি। বেশ আয়েশ করে মেরিনেটও করেছি। বড় একটা গামলা কিনেছি আমরা। ওটার মধ্যে রাখা আছে মসলা মাখানো আস্তখাসিটা। অভিদের ছাদে বারবিকিউ করার ব্যবস্থা আছে । ক’দিন আগেও অভির ছোট বোন অণি আমাকে আর রাতুলকে বারবিকিউ করে খাইয়েছিল। রাতুল এইসব সুযোগ পেলেই অভিদের বাসায় যাওয়াটা মিস করে না। তবে আমার ইদানীয় বেশ ভয়। যদি আন্টি আংকেল বিগড়ে বসে! ভেবেছি আজ রাতে অভির কানে ঢুকিয়ে দেবো বিষয়টা। দেরী করলেই লেট হয়ে যাবে।

অয়ন আর রাজা বাদে আমরা বাদ বাকী দশজন সব যোগাড় যান্ত নিয়ে রওয়ানা হলাম অভিদের বাসার দিকে। চাপাতি আর ছুরিগুলো একটা কাঁধ ব্যাগে বেশ করে কাগজে জড়িয়ে বইয়ের ফাঁকে করে নেয়া হয়েছে যাতে রাস্তায় যেকোন অনাহুত উৎপাত থেকে বাঁচা যায়।

পরিশিষ্ট.
রাত বারোটা বেজে গেছে। ঘড়ি দেখে বুঝতে হলো না। আতশ বাজী ফুটলো কাছে কোথাও। হাজতের ক্ষুদ্র জানালা দিয়ে দেখা গেলো না। আমরা দশ জন মন মরা হয়ে বসে আছি থানার হাজতে। প্রায় সবাই কিছূ না কিছু আঘাতে জর্জরিত। রাতুল সবচেয়ে বেশি ব্যথায় কাতর। হালকা গনপিটুনির সাথে পুলিশের লাথি গুতোও তাকে খেতে হয়েছে। বারবার একটা ফোন করতে চাইছিল। ফোনটা করতে চেয়েছিল অণির কাছে। অণির সাথে রাতুলের গভীর প্রেম। এটলিস্ট তাকে জানাতে পারলে পরিবারের অন্যদের সে জানাতে পারত। লাথিগুতোর দেয়ার পর অবশ্য অণিকে একটা কল করা সুযোগ হয়েছে রাতুলের। অভি ফিরেছে। তবে এয়ারপোর্ট রোডের অদিকে মারামারি হওয়ায় প্রায় দু’ঘন্টারাস্তা বন্ধ ছিল। অভিকে নিয়ে ওর পুরো পরিবার উঠেছিল খিলক্ষেতে ওর খালার বাসায়। রাস্তার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর রওয়ানা দিয়ে এই মাত্র ওরা বাসার দিকে যাচ্ছে। এখন রাস্তায়

আসলে রাত ন’টায় যখন আমরা অভিদের বাসায় পৌঁছালাম তখন একবার যদি রাতুল কথা শুনতো, অণিকে একটা কল দিতো। সে রাজীই হলো না। বলল, অভি, অভির বাবা -মা সবাই সাথে আছে, এই সময় ও কথা বলতে পারবে না। একটা গোছানো জিনিসএই সামান্য কারণে নষ্ট হোক সে চায় না। দাড়োয়ান হানিফ কে আমরা কোথায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অনেকবার ডেকেও কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। শেষে দেয়াল টপকে ওপারে গিয়ে হানিফকে ভেতরে খুঁজলাম, তাও নেই। কি আশ্চর্য। রাস্তায় এইসব মালামাল আর অস্ত্র নিয়ে কতক্ষণ আর দাঁড়াব। আমরা সব গেটের ওপর দিয়েই একের পর এক পার করে ভেতরে নিয়ে গেলাম।

অভির আব্বা যখন ফোন করে জানায় যে তাদের আসতে দেরী হবে তা শুনে হানিফ গিয়েছিল কাছেই তার এক বোনের বাড়ি একুট ঘুরে আসতে। তা আমরা কি করে জানবো। ব্যাটা আমারা যে আসব সেটা মাথায় রাখেনি। পাসের বাড়ির কেয়াটেকার জুম্মনকে রেখে গিয়েছিল । জুম্মনও এক হারামী, গেটে তালা দিয়ে হানিফের ঘরে গিয়ে শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমাদের দেয়ালটপকে মালামাল ওপাশে নেয়ার সময় শব্দে ঘুম ভেঙে ভীষণ ভয় পেলো। চুপচাপ মোবাইলে পাশের বাড়িতে তার বউকে জানালো ডাকাত পড়েছে। বউকে বলল পাশের ক্যাম্পে গিয়ে পুলিশকে জানাতে।

আমরাতো তখন নিশ্চিন্ত মনে ভেতরে ঢুকে পড়েছি। হানিফের ঘরে আলো জ্বলছে দেখে নিশ্চিতও হয়ে সে নাম ডেকে ঘুমাচ্ছে। হানিফরে মজা দেখাবো বলে তার ঘরের সামনে গিয়ে যেই হাজির ওমনি দেখি পেছনে পুলিশের বাশি। সাথে এলাকার বেশ কয়েকজন লোকজন। যদিও জুম্মন সহ আগত অনেক লোকই আমাকে আর রাতুলকে চেনে। এই এলাকায় আমরা তো আজন্ম রয়েছি। না চেনার কি আছে। তবুও তারা মানতে নারাজ। বলল চেনা মানুষজনই তো ডাকাতি করে। জুম্মনতো নিশ্চিত এই কাজে হানিফেরও হাত আছে বলেই সে পালিয়েছে। অভির বাবার-মারকাছে জুম্মনের নাম ডাক বাড়বে সে তো আজ হিরো ডাকাত ধরেছে। ফোন করে কিছু না বলে হানিফকে ডেকে আনাল। তাকেও সপর্দ করল পুলিশের হাতে। হাতে নাতে ধরা পড়েছি আমরা। ব্যাগে অস্ত্র। খাসির গামলাটা অবশ্য কারোও নজড়েই পড়লো না। ওটে পড়ে রইল হানিফের রুমের কোনায়। ভাগ্য ভালো অয়ন আর রাজা পরে আসার কথা। নাহলে অস্ত্রের সাথে বোতল মিলে সোনায় সোহাগা হয়ে যেত।

অণি সবই জানতো। আমাদের সারপ্রাইজ প্লানে সেও প্রথম থেকে অংশীদার । না হলে এই রিস্ক কি আর আমি নেই। রাতুলের গার্লফ্রেন্ড তারোপর অভির ছোট বোন। আমি তো তাই পুরো পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু হতে আপত্তি করিনি।

...আমার আব্বা আম্মা আর রাতুলের বড় ভাই খবর পেয়ে চলে এসেছিল। ওনাদের জানানোর বিষয়টা আাসলে অয়ন আর রাজার ই কান্ড। ওনারা আসার মিনিটখানেক পরেই একটা গাড়ী থামল। গাড়ী থেকে নেমে এল অভি, অভির মা-বাবা আর অণি। খিলক্ষেত থেকে আর বাসায় যায়নি তারা, সোজা এখানে নিয়ে এসেছে অণি।

হাজত থেকে বেরিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল অভি। হো হো করে হেসে বলল, যাক একটা ভিন্ন রকম থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন হলো। চল খাসিটা কুকুরের পেটে যাবার আগে খুঁজে বের করি।
বেশ খারাপ ঘটনা ঘটে গেলো রে অভি। আমি দুঃখিত অনেক। নতুন বছরের শুরুটা এমন হয়ে গেলো! যাক একটা সুখবরও আছে। যদি শুনতে চাছ্...

রাতুল আর অণি তো ! সে অণির মুখ দেখেই বুঝে গেছি। রাতুল আমাদের পুরাতন গ্র“পের সবচেয়ে ভাল ছেলে। বাবা-মা আমার সাথে... ইনফেক্ট নিজেরাই একবার প্রস্তাব দিয়েছিল এই ব্যাপারে। আমি বলেছিলাম দেশে এসেই তবে ও বিষয়ে ভাববো। ভালেই হলো।

আমি মুচকি হাসলাম তারপর অভি আর আমি একসাথেই রাতুলের দিকে তাকালাম , বেচারা খোঁড়াচ্ছে। আর একটু দূরেই অণি তখন চোখের কোণার জল মুছছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Rumana Sobhan Porag ato pranobonto ! golpo naki sotti ghotona?
ভালো লাগেনি ৯ জানুয়ারী, ২০১৪
একমাত্র খাসি বাদে আর সব কল্পনা।
ভালো লাগেনি ৯ জানুয়ারী, ২০১৪
মোঃ আক্তারুজ্জামান এতো রীতিমত আস্ত একখান অনাসৃষ্টি! খুব মজারু লিখেছেন ভাই।
জাকিয়া জেসমিন যূথী দারুন গল্প লিখেছেন। আমিও আমার গল্পে হাজতবাস দিতে চেয়েছিলাম, পরে আবার কাহিনী পাল্টালাম। হাহাহা!!
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৪
নাম মিললো কেমন করে?
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৪
কি জানি! নাম মিললো কেমন করে!!
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৪

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪