ঘৃণার সাথে বসবাস

ঘৃণা (সেপ্টেম্বর ২০১৬)

জলধারা মোহনা
  • 0
  • ৩২
অন্যমনস্ক হয়ে চুলায় বসানো গরম কেটলীতে হাত দিয়ে চমকে উঠলো তিতির। ওঘর থেকে সবার তুমুল আড্ডা কানে আসছে, সেটাই শুনছিল ও। সকালবেলায় তার এক চাচা নতুন বউ নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। তিতির দের জন্য নতুন হলেও বিয়ের প্রায় কয়েক মাস হয়ে গেছে তাদের। বাসায় উৎসবমুখর পরিবেশ.. কয়েকদফা নাস্তা আর গল্পগুজব হয়ে গেছে। চা খাবে সবাই, তিতির উঠে এসেছে তাই। কাপে চা ঢেলে নিয়ে বসলো সবার সাথে। চাচী হাসিমুখে গল্প করছে, যেন বহুদিনের চেনা সবাই। তিতির কথা বলতে বলতেই দেখছিল খুব অন্তরঙ্গ হয়ে বসে থাকা চাচা চাচী কে.. চাচীর বয়স তেমন বেশি না, একটু মোটাসোটা হাসিখুশি মেয়ে। আর তার এই দুঃসম্পর্কের চাচাটাকে কেউই তেমন পছন্দ করে না। মানুষটা তাদের আত্মীয় হলেও ভীষণ ধুরন্ধর টাইপের.. আর প্রথম দর্শনে অপছন্দ করার মত লোক। স্বভাব চরিত্রও নাকি ভালো না.. এমনটা অবশ্য সবাইকে আলোচনা করতে শুনেছে তিতির। এখন অবশ্য নতুন চাচীকে দেখে সবাই খুশী। অবশেষে মানুষটা লাইনে এলো.. বউ আসা মানেই আগের বাউণ্ডুলে জীবনের সমাপ্তি। আর চাচার ব্যবহারও বেমালুম বদলে গেছে, মানুষটা আসলেই সুখে আছে বউকে নিয়ে।
রাতে সবাই খেয়ে শুতে গেলো। তিতিরের ঘুমই আসছে না। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো ও। বিয়ে.. অদ্ভুত এক বাঁধনের নাম। মানুষ আসলেই কত বদলে যায় বিয়ের পর.. ভালবাসা আজীবন বেঁধে রাখে দুজন মানুষকে। ধুর.. ঘুম কোথায় হারালো কে জানে, উঠে চোখেমুখে পানি দিয়ে সব ঘরের লাইট নিভাতে লাগলো তিতির। চাচা চাচীর ঘরের পাশ দিয়ে আসার সময় কানে এলো নতুন চাচীর মৃদু কান্নার আওয়াজ.. চাচার গলাও একটু একটু করে চড়ে যাচ্ছে। চাচী বলছে, "আর কি কি মেনে নেবো বলো। তুমি ঘুষ খাও, টাকা মারো, মদ গাজা খাও, আমার বাবা মা কে গালাগালি করো.. সব মেনে নিয়েছি, কিন্তু আরেকটা মেয়ের সাথে রাতের পর রাত ফোনে নোংরামো করলে কি করে মেনে নেই। আমারও তো সহ্যের একটা সীমা আছে। কি নিশ্চয়তা আছে যে তুমি ওই মেয়েটার কাছে যাও না...।" আর শুনতে পারছিলো না তিতির। হঠাৎ ওকে স্তম্ভিত করে দিয়ে ভেতর থেকে চড় থাপ্পড়ের বিষাক্ত আওয়াজ ভেসে এলো। তারপর সব চুপচাপ, যেন কোথাও কোন অন্যায় হয়নি।কয়েকটা মাস.. মাত্র কয়েকটা মাস কাটিয়েছে দুজন একসাথে... কি করে সারাজীবন কাটাবে এরা? অন্ধকারে বসার ঘরে বসে থাকলো তিতির.. চাচীর জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে ওর। বাবা মা এত দেখেশুনে বিয়েটা দিয়েছে.. প্রেম করে নয়, বরং শুধু পরিবারের উপর আস্থা রেখে চোখ বুজে বিয়ে করেছে মেয়েটা। কত স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল স্বামীর সাথে নতুন সংসারে, আজীবন ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকবে বলে। ওঘরের দরজা খুলে চাচী বেরিয়ে এলেন.. ওকে দেখতে পাননি। অন্ধকারেই দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। তিতির উঠে গিয়ে হাত ধরতেই চমকে উঠলেন। "ওমা, তিতির.. তুমি কি করছো অন্ধকারে। ভয়ই পেয়ে গেছিলাম.. ভাবলাম ভুত নাকি.. হা হা হা।" আর সহ্য হলো না তিতিরের। হাত ধরে টেনে ওর ঘরে চাচীকে এনে দরজা আটকে দিলো।চাচী হাসিমুখে বললেন, "এই দেখো পাগল, এতো রাতে কি গল্প করবে নাকি। ঘুমাও তো তুমি। আমি যাই, তোমার চাচা দেরী হলে আবার ডাকাডাকি আরম্ভ করবে। আমাকে এক মিনিট না দেখলে পাগলু হয়ে যায়। বিয়ে করো, তখন বুঝবে এসব.. হিহিহি"। চাচীর মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো তিতির। তারপর বললো, "আবার অভিনয় শুরু করে দিয়েছেন? এতই যদি কাঁদতে হয়, তাহলে কেন এইসব মিথ্যে অভিনয় করা?" ওর শীতল চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝে গেলেন চাচী। হাত ধরে বললেন, "তুমি কাউকে এসব বলো না তিতির। এমনটা হয়ই বিবাহিত জীবনে, ঠিক দিন কেটে যাবে আমার। মানিয়ে নিতে হয় পরিস্থিতির সাথে।" অবাক হল তিতির, কিন্তু কেন মানিয়ে নিতে হবে? কি আছে ওনার মধ্যে এমন? আমাকে এমন একটা কারন বলেন যার জন্য সব ভূলে থেকে যাওয়া যায় এভাবে। হাসলেন চাচী, কান্নার মত দেখালো যদিও.. এতোটাই করুণ সেই হাসি। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, "কারনটা আর যাই হোক ভালোবাসা নয়। কাউকে এখনো বলিনি, কনসিভ করেছি আমি। এখন আর কি করে পিছিয়ে যাই বলো? একটু একটু করে ঘৃণা করতে শুরু করেছিলাম.. আর এখন পুরোপুরি ঘৃণা করি মানুষটাকে। কিন্তু বাচ্চাটার কি দোষ বলো? একসাথে বাবা আর মা কে পাবেনা, তা কি করে হয়। ওর কথাই আগে ভাবতে হবে আমাকে। আর সংসারের এইসব চোরাবালিতে একদম তলিয়ে গেছি। বাকিটা জীবন আমি এই ঘৃণা নিয়েই তার সাথে কাটিয়ে দেবো। আর জানোই তো, প্রতিটা মেয়েই সংসারে অভিনয় করার প্রতিভা নিয়ে জন্মায়। কেউ একটু আধটু অভিনয় করে, আর কেউ কেউ পুরোটা সময়ই অভিনয় করে কাটিয়ে দেয়।" চাচার ডাক কানে আসতেই দরজা খুলে নিঃশব্দে চলে গেলেন চাচী। বারান্দায় এসে দাঁড়ালো তিতির। বুঝতে পেরেছে সে। প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে যদি কোন মানুষ বহুদিন বেঁচে থাকে, তখন এমন একটা সময় আসে যখন সে আর ওই ব্যথা ছাড়া জীবনটাকে কল্পনা করতে পারে না.. ব্যথাটা তার শরীরের একটা অংশ হয়ে যায়। নিজের অজান্তেই সে ব্যথার সাথে বসবাস করতে শুরু করে। আর এই মানুষ দুটো.. ঠিক তেমনি করেই তীব্র ঘৃণা নিয়ে দিব্বি বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেবে হয়তো। বাচ্চাটার সামনে, বাকিদের সামনে অসাধারণ অভিনয় করে যাবে সুখী দম্পতীর। অনেকে হয়তো এদের দেখেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাববে কি ভীষণ ভালো আছে এরা দুজন। কেউ জানতেও পারবেনা, ভালোবাসা নয়... ঘৃণার বাঁধনে বাকিটা জীবনের জন্য বাঁধা পড়েছে তারা!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জয় শর্মা (আকিঞ্চন) আপনজন আজ হয়েছে পর নতুন স্বপ্ন দেখছে প্রখর, আসলে যে কঠিন পথে এগুচ্ছে সে নিশি 'প্রহর।
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আহা রুবন আমাদের অনেককেই এই অভিনয়টা করে সংসার টিকিয়ে রাখতে হয়। সংখ্যায় নারী বিপুল পুরুষ কম। ঘৃণা যেন জীবনের অঙ্গ হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
দারুণ বলেছেন.. ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন :)
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
উদাসী পথ চমৎকার গল্প...
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
ধন্যবাদ :)
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
Fahmida Bari Bipu জলময়ী, তোমার গল্পটা এতোদিনে পড়ার সুযোগ পেলাম। বিষয় হিসেবে যেটাকে উপজীব্য করেছো তা নিঃসন্দেহে চমৎকার। যদিও অনেকে বলবে কমন প্লট ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কমন প্লটে গল্প লিখতে পারাটা লেখকের মুন্সীয়ানা। তবে একটু অতিরিক্ত 'ফাইন টাচ' এর ছোঁয়া থাকতে হয় এই যা! গল্প বলা আর রঙ তুলি দিয়ে ছবি আঁকার মাঝে কী কোন তফাত আছে? মনে হয় না। তুলির একটা একটা আঁচড়ে যেমন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে শিল্পীর অনুভূতি ঠিক একইভাবে একেকটি শব্দচয়ন, বাক্যগঠন লেখকের একেকটি অনুভূতির প্রকাশ। সেই প্রকাশে খানিকটা খামতি পেয়েছি। অনুভূতিগুলো সেভাবে জীবন্ত হয়ে ওঠেনি। কবিতায় যে সুনিপুণ দক্ষ তুমি, একই দক্ষতা গল্পেও আসুক...শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আপু, কি দারুণ করে মন্তব্যটাও করো তুমি.. গল্পের মত। খুব ভালো লাগে তোমার গল্পগুলো। আর আমি তো গল্প একদমই লিখতে পারি না। কেমন যেন মেকি টাইপ হয়ে যায় :( কাহিনীটা রিসেন্টলি ঘটেছিল, তাই ভাবলাম চেষ্টা করি ওটাই ফুটিয়ে তোলার :D আমি কবিতার মানুষ.. গল্পের বাড়িতে অতিথি হয়ে আসি মাঝে মাঝে.... তোমার কথাগুলো মনের গভীরে গেঁথে নিলাম, পরবর্তীতে কোন গল্প লিখলে কাজে লাগাবো :)
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
Lutful Bari Panna মোহনা, প্রথমত চমৎকার একটা বিষয় বেছেছো। ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথার মত একটা ঝলক তুলে এনেছো। খুবই ভালো গল্প। যেটুকু সমালোচনার সেটা হলো গল্পের ফর্ম্যাট। ভেঙে ভেঙে ডায়লগগুলো আলাদা করে দিতে পারতে। দেখতে খানিকটা প্রবন্ধের মত লাগছে। আর শেষের তোমার কথাগুলো গল্পের মধ্যেই কোনো এক ইংগিতে বলে দিয়ে পাঠকদের ভাবার সুযোগ করে দিতে পারতে।
ভালো লাগেনি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
ভাইয়া, আপনাকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ.. প্রশংসার জন্য নয়, সমালোচনার জন্য। এইটাই দরকার ছিল আমার। আমি বরাবরই কবিতার মানুষ, গল্প আমার খুব একটা আসেনা। আর যখন খুব কাছের কাউকে দেখে মন বলে একে নিয়ে লেখ তুই, এর কাহিনীই লিখে ফেল তুই... তখন এলোমেলো লিখে ফেলি। গল্পের ফর্ম্যাটের ব্যাপারটা আমি সত্যিই ওরকম ভাবে বুঝি না.. এরপর থেকে ভেঙে ভেঙে দেবো :) আর লেখার সময় শেষের কথাগুলো শেষেই মনে হয়েছিল বলে তখন লেখা.. আপনার উপদেশ মাথায় রেখেই পরের গল্পটা লিখবো। অনেক ভালো থাকবেন :)
ভালো লাগেনি ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
জোহরা উম্মে হাসান খুব সুন্দর একটা থীম । আসলেই আমাদের সমাজে অনেক মেয়েরাই এমন বুকভরা দুঃখ আর ঘৃণা নিয়ে মরার মত বেঁচে আছে । ভাল থেক !
ভালো লাগেনি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
অনেক ধন্যবাদ আপু... অনেক ভালো থাকবেন :)
ভালো লাগেনি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
পন্ডিত মাহী সুপার্ব...
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
ধন্যবাদ ভাইয়া :)
ভালো লাগেনি ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
মোজাম্মেল কবির ঘৃণা প্রকাশ না করতে পারার অসম্ভব কষ্ট বুকে চেপে রেখে হাসি মুখে বেঁচে থাকার অভিনয় করে মানুষ... সে পুরুষ কিংবা নারী... চমৎকার গল্পে সমাজের অপ্রকাশিত দিক তুলে ধরেছেন লেখক। শুভ কামনা ও ভোট রেখে গেলাম।
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এক ঘৃন্য কাহিনী আমি শুধু গল্পের আদলে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি মাত্র... অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য :)
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

১৪ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪