সাদা আলোটার ঠিক ডানপাশে এক টুকরো লালচে আলো। সেখানটাতে আখি দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিন ঠিক এই সময়টাতে সে এখানেই এসে দাঁড়ায়। আল-আমিন তার বাসার তিনতলা দেখে লক্ষ্য করে গত দুই মাস ১২ দিন ধরে। এমনিতে আল-আমিনের দিন তারিখ খুব একটা মনে থাকেনা। কিভাবে যেনো ওই তারিখটা মনে গেঁথে গেছে। যেদিন আখিকে সে প্রথম দেখে সেদিন খুব অস্বাভাবিক কারণে রাস্তাটা শুনশান ছিলো। এমনিতে এখানটাতে অনেক রিক্সা থাকে, মানুষজনের আনাগোনা থাকে। আখি দাঁড়িয়ে ছিলো প্রায় ২০-২৫ মিনিট। গায়ে কালো জামার মধ্যে প্রিন্ট করা ফুলের ছোট ছোট কাজ। ওড়নাটা কায়দা করে মাথায় দেয়া। ল্যাম্পপোস্টের সাদা আলোটা মাথার উপরে পড়ায় ওড়নার ছায়াটা মুখে পরেছে। ওপাশ থেকে একটা লাল আলোর আভাও হালকা করে পড়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্য সুন্দর যেটা আল-আমিনের লেগেছে সেটা হচ্ছে তার হাসি। মাথা নেড়ে নেড়ে যখন ফোনে কথা বলছিলো তখন একফাকে ফিক করে হেসে দেয়। আল-আমিন হিন্দি সিনেমাতে দেখেছে নায়কের প্রেম হলে তার পেছনে আবহ সংগীত বাজে। হুবহু যেনো তার পেছনেও আবহ সংগীত বাজতে লাগলো 'লা-লা-লা-লালা, লা-লা-লা-লালা....' একটা হাসিতে কারো জীবনে সিনেমার মতো আবহ সংগীত বাজতে পারে সেটা তার ধারণার বাইরে ছিলো। যে ছেলে জীবনে কোন দিন কোন অপরিচিত মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেনি তার এখন অপরিচিত এক মেয়ের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যদিও ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে না থাকলেও হয়। আখি কখনো দেরি করেনা। কিন্তু এই অপেক্ষাটাও তার কাছে ভালো লাগে। যেদিন প্রথম দেখেছিলো আখিকে, আল-আমিন তার পরের দিন-ই নামটা জেনে গিয়েছিলো। আখির পরিচিত কোন একজন রিক্সা দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলো, "এই আখি, কেমন আছো?" আল-আমিন চাইলেই তার পরিচয় বের করে নিতে পারে। কিন্তু সে করেনা। তার কেনো জানি আখিকে বারান্দা থেকে দেখতেই ভালো লাগে। ১০-১৫ মিনিটের এই দেখার জন্য আড়ো দুই ঘন্টার অপেক্ষা। এই দুই মাস ১২ দিন খুব দ্রুত-ই কেটে গেলো। যদিও আখি একবারের জন্য-ও তার বারান্দার দিকে তাকায় নাই কিন্তু আল-আমিন প্রতিদিন ধোয়া পরিষ্কার জামা কাপড় পরে বারান্দার লাইট নিভিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিদিনের রুটিনে বিশেষ কিছুই পরিবর্তন হয়নি। ল্যাম্পপোস্ট এর বাতিটা একবার ফিউজ হয়েছিলো, আল-আমিন নিজ দায়িত্বে সেটা পরিবর্তন করে দিয়েছে। ২ মাস ১৩ দিনের দিন ঘটলো প্রথম পরিবর্তনটা। আখি সেদিন আসেনি। ২ মাস ১৪ দিন, আখি সেদিনও আসেনি। ২ মাস ১৫ দিন, আখি সেদিনও আসেনি। ............ ৩ মাস ২৮ দিন, আখির দেখা মেলেনি।
অপেক্ষা মানুষের এক সময় অভ্যাস হয়ে যায়। আল-আমিন প্রতিদিনের মতো অপেক্ষা করে। প্রতিদিনের এক-ই সময়ে এসে বারান্দায় দাঁড়ায় তিন থেকে চার ঘন্টা অপেক্ষা করে আবার ফিরে যায় অপেক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইনুল ইসলাম আলিফ
দারুণ একটা অনুগল্প।ভীষণ ভাল লেগেছে।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আসবেন ভাই আমার গল্প আর কবিতার পাতায়।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
পার্থিব বা জাগতিক পৃথিবী/জীবন টিকে আছে ভালোবাসার জন্য, ভালোবাসার মানুষের জন্য, ভালোবাসা/ভালোবাসার মানুষের অপেক্ষার জন্য।
১৩ জুলাই - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।