সূর্য দেখেছো? ধ্যাৎ! কি জিজ্ঞেস করছি! ওটাতো প্রতিদিনই দ্যাখো- দ্যাখোতো!? না, দ্যাখোনা। প্রাতে কিংবা অপরাহ্নে যখন সে উত্তাপহীন- হয়তো তখন দেখে থাকতে পারো! মধ্যাহ্নের সূর্যের পানে তাকাওনা কখনও- বরং লুকাও নিজেকে উত্তাপ এড়াতে, নয় কি?
আমি মধ্যাহ্নের প্রখর সূর্যের পানে অনন্তক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি। হয়তো এটা জেনেটিক কারণ-
মুক্তিসেনাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে(?) তোমরা ধরে নিয়ে গিয়েছিলে আমার বাবাকে। দীর্ঘ আটটি মাস বাবা নিখোঁজ! মরে গেছে কি বেঁচে আছে – আমরা অনিশ্চিত থেকেথেকে ক্ষণেক্ষণে মা ও দাদীর বুকফাঁটা আর্তনাদ- প্রতীক্ষার দূর্বিসহ সব প্রহর! নির্ঘুম, অর্ধাহার-অনাহারে অন্ধকার কুঠুরিতে মানবেতর জীবন-যাপন। জীবন-মৃত্যুর সংজ্ঞা ভুলে- বোবা চাহনীতে শুধু একমুঠো আলোকে হাতরে বেড়ানো!
আর বাবা! তোমাদের গোপন টর্চার-ক্যাম্পে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নির্বিকার, স্থবির এক অনড় সত্ত্বা। প্রিয় সংসারের প্রিয় মুখগুলোর কথা ভেবে জীবনটাকে কোনরকমে টেনে নিয়ে চলেছেন!
ভাষায় বর্নণীয় নয়, এমন সব অত্যাচারে তোমরা তাকে জর্জরিত করেছো। শরীরে তিল পরিমান জায়গা অবশিষ্ট ছিলনা যেখানে বর্বর পাক(অবশ্যই নাপাক)-শিল্পী আর তাদের দোসর, তোমাদের প্রাণ-সংহারি তুলির(!) আঁচড় পরেনি!
ঘন্টার পর ঘন্টা হীম-শীতল পানিতে দাড় করিয়ে রেখেছো, ড্রামের পর ড্রাম ফুটন্ত জলে ঝলসে দিয়েছো সমস্ত শরীর, দুই বাহুর সর্বত্র জ্বলন্ত সিগারেটের স্যাঁকা, পিন ফুঁটিয়েছো প্রতিটি নখে, রুটিন মাফিক তিনবেলা ইলেক্ট্রিক শক্, মল-মূত্র-আবর্জনা কি দাওনি খেতে! টানা সাত রাত ঘুমাতে পর্যন্ত দাওনি চোখের সামনে জ্বালিয়ে রেখেছো হাজার ওয়াটের বাল্ব। বাবা মুখ খোলেননি! হয়তো দূর্বিসহ আলোকে সহ্য-সীমায় নিয়ে এসেছিলেন, দৃষ্টিশক্তিতেও প্রভাব পরেনি বিন্দুমাত্র! তোমরা পরাজিত হয়েছো বাবার দৃঢ়তার কাছে, পরাজিত হয়েছো দৃপ্ত বাঙালীসত্ত্বার বলীষ্ঠ দেশপ্রেমের কাছে।
আমার পঙ্গু বাবা, এখনও তীব্র আলো সহ্য করতে পারেন। আমিও পারি! ঘন্টার পর ঘন্টা মধ্যাহ্নের প্রখর সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে! ভয় পাচ্ছো! আমি জানি, প্রচন্ড ভয়ে সব পাক(নাপাক)-সহশিল্পীর ইন্দ্রিয়গত অনুভূতি দুমড়ে-মুচড়ে আসছে-
অন্ধকারের কীটরা আলো ভয় পায়, ওদের অপকীর্ত্তি চলে আঁধারে। আমি আলোর পূজারী, আলো ভালবাসি- এখন আলোর সময়- “নবীনরা সব আলোকের পথ-যাত্রি, আলোকিত পথে এগোচ্ছে দিবা-রাত্রি! চারিদিকে শুধু আলোকের জয়গান ঝলসে যেতে প্রস্তুত হ শয়তান!”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ শামছুল আরেফিন
প্রদ্যোত দা, আপনার সাথে পরিচয় হবার পর আপনার কথা-বার্তা শুনে অনেক মুগ্ধ আমি। আপনার কন্ঠে আপনার কবিতা শুনেছি কয়েকটি। সেগুলো অসাধারণ লেগেছে। আপনার কবিতায় আমার এই প্রথম আসা। কবিতা পড়ে আপনি যে কি জিনিস সেটা বুঝতে পারছি। বিবেককে জাগ্রত করা আর লোম খাড়া করা কবিতা উপহার দিলেন। এই রকম আরও শত সহস্র কবিতা চাই আপনার কাছ থেকে।
মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান
“নবীনরা সব আলোকের পথ-যাত্রি,
আলোকিত পথে এগোচ্ছে দিবা-রাত্রি!
চারিদিকে শুধু আলোকের জয়গান
ঝলসে যেতে প্রস্তুত হ শয়তান!”.................ওহ কি আর বলব................কবিতার সাথে সাথে কবির জয়গান গেয়ে যেতে ইচ্ছে করে......একটুও না থেমে.........অসাধারণ.............
প্রজাপতি মন
অন্ধকারের কীটরা আলো ভয় পায়,
ওদের অপকীর্ত্তি চলে আঁধারে।
আমি আলোর পূজারী, আলো ভালবাসি-
এখন আলোর সময়-
“নবীনরা সব আলোকের পথ-যাত্রি,
আলোকিত পথে এগোচ্ছে দিবা-রাত্রি!
চারিদিকে শুধু আলোকের জয়গান
ঝলসে যেতে প্রস্তুত হ শয়তান!”
আপনার কবিতাটি পড়ে এতো ভালো লাগলো যে, আপনার বাবার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে এলো। অসাধারণ একটি কবিতা। প্রিয়তে রেখে দিলাম। আর এর প্রাপ্যটুকু দিয়ে গেলাম।
সেলিনা ইসলাম
--মুক্তি যুদ্ধ থেকে প্রেরণা , ধৈর্য , সাহসীকতা আর সহিষ্ণতার এক চরম উপাখ্যান পরিশেষে উচ্চশীরে নির্ভীক উচ্চারণ !! অসাধারণ একটা কবিতা পড়লাম শুভকামনা
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।