হিমঘর

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

দিলরুবা মিলি
  • ৫৯
  • ৯২
১ম ব্যক্তিঃ “ তারপর ? কি অবস্থা ? ”
২য় ব্যক্তি কোন জবাব দিলেন না ।
১ম ব্যক্তিঃ “ ঠান্ডা লাগছে ? ”
২য় ব্যক্তিঃ “ জী । “
১ম ব্যক্তিঃ “ প্রথম প্রথম আমারও লাগতো । এখন সহ্য হয়ে গেছে । কথা বলছি বলে বিরক্ত হচ্ছেন ? কি করবো বলুন , কতক্ষণ আর একা একা থাকা যায় ? কবে হলো ? ”
২য় ব্যক্তিঃ “ ৬দিন আগে । আপনার ? ”
১ম ব্যক্তিঃ “ আমার তো ২৮দিন হয়ে গেলো । আর কত দিন যে থাকতে হবে কে জানে ? ”
২য় ব্যক্তিঃ “ এতো দিন ! ”
১ম ব্যক্তিঃ “ আর বলবেন না , আমার ছেলেটা থাকে কানাডাতে আর মেয়েটা রাশিয়াতে । বড়দিনে তো ওখানে সব বন্ধ থাকে ।
প্লেনের টিকেট পাচ্ছে না । তুষারের কারণে ফ্লাইটের শিডিউলেও গন্ডগোল হয়ে গেছে । ছেলে টিকেট পায় তো মেয়ে পায় না । এর মধ্যে মেয়ের ঘরের নাতিটা অসুস্থ হয়ে গেছে । এইসব কিছু নিয়ে গোজামিল বে ঁধে গেছে। “
২য় ব্যক্তিঃ “ আপনার স্ত্রী ? ”
১ম ব্যক্তিঃ “ তিনি গত হয়েছেন ৪ বছর হল । “
২য় ব্যক্তিঃ “আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধব কেউ নেই?”
১ম ব্যক্তিঃ “ ছিলো সবাই । আত্মীয় স্বজনের সাথে খুব একটা যোগাযোগ রাখা হয়নি কখনো । ফরেন মিনিষ্ট্রিতে ছিলাম । অবসরে গেছি তাও ২বছর হয়ে গেলো । অনেকটা সময় দেশের বাইরে কাটাতে হয়েছে । তাই দূরত্ব টা রয়েই গেছে । এখন ছেলে মেয়েরা এসে সিদ্ধান্ত নেবে কি হবে। কবে যে আসবে তাও বুঝতে পারছি না । প্রতিদিন কেউ না কেউ আসছে । ২/৩ দিনের বেশি থাকছে না । আমিই রয়ে গেলাম । এক পুরোনো কাজের লোক ছিলো । ওই আমাকে এখানে রেখে গেছে । আপনাকে কে রেখে গেছে ? ”
২য় ব্যক্তিঃ “ পুলিশ । “
১ম ব্যক্তিঃ “ কে করলো ? ”
২য় ব্যক্তিঃ “ আমার স্বামী । “
১ম ব্যক্তিঃ “ কেনো ? ”
২য় ব্যক্তিঃ “ মা’র পছন্দে আমাকে বিয়ে করেছিলো । আমি তো সুন্দরী না । বিয়ের ৪মাসের মাথায় মা মারা গেলো । তারপর থেকেই আমাকে আর সহ্য করতে পারতো না । ও আবার অন্য একজনকে পছন্দ করতো । তারপর ৬দিন আগে অফিস থেকে হাসিমুখে ঘরে ফিরলো । আমার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করলো । আমি ভাবলাম সব বোধহয় ঠিক হয়ে গেছে । নিজ থেকেই আমার জন্য চা বানাতে চাইলো । চা আমার খুব প্রিয় । আমি খুব খুশি হয়েছিলাম । ওই চা তেই বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলো । “
১ম ব্যক্তিঃ “ হুম । এই ৬ দিন কোথায় ছিলেন ? ”
২য় ব্যক্তিঃ “ লাগেজের ভেতর । ও যে কি করবে বুঝতে পারছিলো না । ৫দিন ঘরেই রেখে দেয় । ৫ম রাতে দূরের এক খালে ফেলে দিয়ে আসে । কিন্তু শীতকালে পানি বেশি না থাকায় পরদিন দুপুর নাগাদ খালের একটা বা ঁকে এসে আটকে যাই । তারপর পুলিশ আমাকে এখানে নিয়ে আসে । “
১ম ব্যক্তিঃ “ আপনার ছেলে মেয়ে নাই ? ”
২য় ব্যক্তিঃ “ আমি ৩মাসের প্রেগনেন্ট ছিলাম । এটাই প্রথম “
১ম ব্যক্তিঃ “ আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন । মুনকার নাকির এসেছিলেন ? ”
২য় ব্যক্তিঃ “ হুম । “
১ম ব্যক্তিঃ “ উত্তর দিতে পেরেছিলেন ? ”
২য় ব্যক্তিঃ “ না । আপনি ? ”
১ম ব্যক্তিঃ “ না । আমিও পারিনি । জানেন , এখানে যারা এসেছে আমি এখনও এমন একজনকেও পাই নাই যে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে । বে ঁচে থাকতে আমরা কোন প্রশ্নের উত্তর মিলাতে পারতাম না, এখনও পারছি না...”
এমন সময় নরেন ডোম এলো । তিনি ২য় ব্যক্তি কে নিয়ে গেলেন আর আমরা শুনতে পেলাম ১ম ব্যক্তির দীর্ঘশ্বাস যা এক ঝলক শীতল হাওয়া হয়ে বয়ে গেলো...ছড়িয়ে গেলো পৃথিবীময় । যদিও আমরা তার কিছুই টের পাইনি...পেলেও আমরা তার জন্য কিছুই করতে পারতাম না। তার প্রতীক্ষার প্রহর আবারও শুরু হল...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মনির খলজি লিখাটার সংলাপের প্রশংসা করতেই হয় ....এটা যে ইসলাম ধর্মীয় আলোকে লিখা তাতে কোনো সন্দেহ নেই...লিখাটাতে কল্পনা শক্তি ভালই টেনেছেন .....কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে একটা জিনিসকে নিয়ে মনে হয় ভাববার অবকাশ ছিল ....তা হলো হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবার পূর্বে মর্গ, কবরে, কিংবা অন্য কোনো অবস্থায় দুটো মরদেহের আত্মা একখানে আসতে পারে কিনা ! আর সংলাপ তো পরের কথা !! কারণ, তা না হলে "মুসলিম ধর্মীয় প্রাণদের'' মনে কিছুটা হলেও একটা নেগেটিভ অনুভুতি আনতে পারে .....তারপরও শুভো কামনা রইল !
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১২
"ইসলাম ধর্মীয় আলোকে লিখা" কারন আমি অন্য ধর্মের মৃত্যুর পরে কি হবে তা খুব একটা জানি না। ইসলামের নিয়ম হল শরীর গরম থাকতে থাকতে কবর দেয়া। কিন্তু আমরা যে অন্যায় আচরণ করছি মরদেহের সাথে তার দিকে পাঠকের মনোযোগের আশায় এ গল্প লেখা হয়েছে। "মুসলিম ধর্মীয় প্রাণদের'' মনে কিছুটা হলেও একটা নেগেটিভ অনুভুতি আনতে পারে" যার মনে কুচিন্তা থাকে সে সব সময় সবকিছু থেকেই কু বের করার চেষ্টা করবে...let hem be ...হাশরের ময়দানে কিন্তু কেউ কাউকে চিনবে না...কথা বলা দূরে থাক...বিশ্ব সাহিত্যে অনেক বিখ্যাত লেখক life after death নিয়ে লিখেছেন। আমি খুব সামান্য একটা চেষ্টা করেছি মাত্র... মুল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সেলিনা ইসলাম গল্পটা পড়ছিলাম আর একটা শীতল অনুভুতি অনুভব করছিলাম ! প্রবাসে যারা মারা যায় তাদেরকে দেশে কবর পেতে গেলে প্লেনের স্ক্যাজুয়ালের উপর নির্ভর করতে হয় আর সেই কয়দিন ফিউনারেলের ফ্রিজে রেখে দেয় ! আপু অসাধারন গল্প ! অনেক গভীরভাবে চিন্তা করেছেন ! আপু হ্যাটস অফ ! এক অনন্য অনুভুতি এবং সত্যের কথনে গেঁথেছেন । তবে মুনকার নাকিরের প্রশ্নের উত্তর মহিলা কেন দিতে পারল না ? কারন সে একেতো স্বামীর হাতে খুন হয়েছে তার উপর প্রেগনেন্ট ছিল - আমি যতদুর জেনেছি যদি কেউ অন্যের হাতে খুন হন তার গুনাহ মাফ হয়ে যা্য আর সন্তান গর্ভে থাকতে বা ভুমিষ্ট করার সময় যদি কেউ মারা যান তাহলে তার জন্য বেহেস্তের দরজা খোলা তাহলে কেন তিনি এই অবস্থায় খুন হয়েও ফেরেস্তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না ? প্লিজ জানাবেন আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১২
"যদি কেউ অন্যের হাতে খুন হন তার গুনাহ মাফ হয়ে যা্য আর সন্তান গর্ভে থাকতে বা ভুমিষ্ট করার সময় যদি কেউ মারা যান তাহলে তার জন্য বেহেস্তের দরজা খোলা " এক সময় আমি ও এটাই জানতাম...কিন্তু এখন জানি, এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। পাপী সে যেই হোক না কেন,তার শাস্তি পাব্‌ তারপর সে বেহেস্তে যাবে। আর আল্লাহর ইচ্ছার উপর তো কারো হাত নাই...এই মুহুর্তে রেফারেন্স হাতের কাছে নেই, আপনি চাইলে আমি পরে বার্তা পাঠিয়ে দিবো।ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
এম এম এস শাহরিয়ার মন্তব্য করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি .......................
ভালো লাগেনি ২৯ জানুয়ারী, ২০১২
"মন্তব্য করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ....................... " এটা বাংলা ভাষা ...হারিয়েছেন বলে তো মনে হচ্ছেনা। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
সাজিদ খান অসাধারণ আপনার গল্পটি । আপনার সৃষ্টিশীলতার প্রশংসা করতে পেরে আমি খুব আনন্দিত ।পছন্দের তালিকায় রাখলাম সাথে প্রাপ্তিটাও ।
ভালো লাগেনি ২৯ জানুয়ারী, ২০১২
প্রশংসা পেয়ে আমি ও আনন্দিত।ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
প্রজ্ঞা মৌসুমী লেখকের কল্পনার প্রশংসা করতে হয়। গল্পের শেষে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। ২য় ব্যক্তিও যে মুসলিম সেটা ১ম ব্যক্তি কিভাবে আন্দাজ করলো বলা হলোনা। মুনকার নাকিরের মুখোমুখি হবার ঘটনাটা লেখক কিভাবে সাজান জানার ব্যাপক আগ্রহ হচ্ছিল। সেদিকেতো গেলেন না। সে যাক, দুটো ভিন্ন দেহের মৃত্যু এবং জীবনের বর্ণনা মুগ্ধ করলো। "আল্লাহ্‌ যা করেন ভালোর জন্য" ভাবছি, সন্তান সম্ভাবনা এক মা/ ধর্মস্ত্রীকে মেরে ফেলাটা সত্যিই কি আল্লাহর সিদ্ধান্ত... খুব কি ভালো কিছু হলো.. এতো অন্যায় যা শয়তান আমাদের করায়। ঈশ্বরের সিদ্ধান্তে কষ্ট থাকে কিন্তু অন্যায় বোধহয় থাকেনা...। অনেক শুভকামনা থাকলো
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
"২য় ব্যক্তিও যে মুসলিম সেটা ১ম ব্যক্তি কিভাবে আন্দাজ করলো বলা হলোনা।" কারন মুনকার নাকির প্রশ্ন গুলো সব মানুষ কে করবে, শুধু মুসলমানদের নয়। আর মৃত্যুর পরপরই মুনকার নাকির চলে আসবে। যেহেতু মৃত্যুর বেশ কিছুদিন পর দুজনের দেখা হয়েছে তাই মুনকার নাকিরের মুখোমুখি হবার ঘটনাটা দেখানো হল না।"ঈশ্বরের সিদ্ধান্তে কষ্ট থাকে কিন্তু অন্যায় বোধহয় থাকেনা..." আপনার সাথে পুরোপুরি একমত। কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
পাঁচ হাজার অনেক আবেগের সুন্দর একটা গল্প। অসাধারণ।
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১২
ধন্যবাদ...শুভকামনা আপনার জন্য...
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
রোদেলা শিশির (লাইজু মনি ) আপু ..............চরম .............হয়েছে !
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১২
হাহা...অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
এফ, আই , জুয়েল # নোতুন বছরের নোতুন মডেলের গল্প । লেখার ষ্টাইলও বেশ ভাল । অপূর্ব চিন্তাশক্তি , সুন্দর বর্ননা । === ৫
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ...ভালো থাকবেন।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মোঃ শামছুল আরেফিন গত ১৩ তারিখ রাতে গল্পটি পড়েছিলাম এবং ভোট করেছিলাম। কিন্তু তখন সময়ের কারণে কমেন্ট করে যেতে পারিনি। তাই আজ আবার আসলাম। এমন অসাধারণ গল্পে কমেন্ট না করলে আমার গল্প কবিতায় বিচরণ বৃথা হয়ে যেত। শুদুমাত্র একগুচ্ছ সংলাপ দিয়ে অসাধারণ একটি গল্প লিখে ফেললেন। এমন গল্প সবসময় উপহার পাব সেই প্রতীক্ষায় রইলাম।
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১২
আমি হলাম খুবই আলসে একজন মানুষ। জানি না কতদিন লিখবো।।তবে এই রকম পাঠক পেলে হয়তো আবার লিখতে শুরু করব।ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
দিলরুবা মিলি Saiful Samee@ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১২

০১ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪