বিনে পয়সার বাঁশি

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

মোঃ শামছুল আরেফিন
  • ১০৯
  • 0
  • ৭৭
প্রথম পরিচ্ছেদ
সারি সারি সুপারি আর নারিকেল গাছগুলোকে সাক্ষী রেখে সরু এই আঁকাবাঁকা পথটি চলে গেছে ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে। পথটি কেবল পথিকের পায়ে হেঁটে চলার জন্যই উপযুক্ত। এমন রাস্তায় মফিজ মিয়া তার মরিচা ধরা ভ্যান এনে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। রাস্তার এই বিশ্রী রকমের কাঁদা আর বড় বড় গর্তগুলোর অত্যাচারে ভ্যানটি অসুস্থ বৃদ্ধার মত কোকড়াচ্ছে। কিন্তু তাতে বিশেষ কোন ফল লাভ হচ্ছেনা। মফিজের পটুতা আর আমার বাবা আসলাম সাহেবের চেষ্টার ফলে ভ্যানটি কচ্ছপ গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । বাবার অবস্থা মফিজের ভ্যানের চেয়ে খুব বেশি ভাল নয়। ভ্যান ঠেলতে গিয়ে তার প্যান্টের ভাঁজ উঠেছে হাঁটুর উপরে, হাতে পায়ে পচা পানির কাঁদাও লেগেছে, মুখে ক্লান্তির চাপ এসেছে স্পস্টভাবে, কিন্তু তাতে কোন বিরক্তিবোধ নেই। অনেকদিন পর আজ তার নিজ গ্রাম সন্তোষপুরে পা রাখবেন তিনি। খুব ভালই লাগছে তার। তবে মিসেস আসলাম, যিনি আমার মা এবং বাবা যাকে মালতী বলে ডাকেন তার অবস্থা মোটেও সুখকর নয়। শ্বশুর-শাশুড়ি শুন্য শ্বশুরালয়ে শুন্য ভিটা প্রদর্শন করতে যাওয়া যে শুদুই বোকামি নয়, বরঞ্ছ কিছু টাকা অকাজে গচ্ছা দেয়ার উপায়ান্তর মাত্র, বাবাকে তা বুঝাতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তাই একহাতে শাড়ীর আচল আর অন্য হাত শূন্যে ভাসিয়ে রাস্তার কাঁদাগুলোকে পাশ কাটিয়ে চলতে চলতে এই পর্যন্ত অনেকবার এবং মনে মনে যে কতবার বাবাকে বকা দিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য। আমি তাদের একমাত্র ছেলে। বয়স বার হলেও গ্রামে বেড়াতে আসা আমার এই প্রথম। তাই যা কিছু দেখছি তার সবই লাগছে স্বপ্নের মত। আবেগ আর উচ্ছাস দুটোই তার বেশি থাকায় মায়ের বারণ সত্ত্বেও পথ চলছি সবার আগে লাফিয়ে লাফিয়ে। পথ চলতে চলতে আমি হঠাৎ করেই চিৎকার করে উঠলাম
বাবা stop.সামনে একটা পুল। আমার কথামত সামনে এসে তিনি যা দেখলেন তাতে বাবার মাথায় যেন বাজ পড়ল। এই বাঁশের সাঁকোটি পেরোলেই তিনি তার গ্রামের সীমানায় পা রাখবেন। তারপর আধা মাইল দূরে তার বসত ভিটা। কিন্তু সাঁকোটির যে অবস্থা তাতে ভ্যান পাড় করা তো দূরের কথা অনভ্যস্ত কাউকে সাঁকো পাড় করানো যে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে তা শুদু দেখার অপেক্ষা। এই বেলায় কারো সাহায্য কামনা করে বাবা যেই না মফিজের দিকে তাকালো মফিজ বলে উঠল,
স্যার আমারে মাপ করেন। আমি ভীন গায়ের মানুষ। আমি ভ্যান থুইয়া কোথায়ও যাইতে পারতামনা। আমি আপনাগরে ব্যাগগুলা পাড় কইরা দেই, আপনারা ঐ পাড়ে গিয়া অন্য চেষ্টা করেন।
মফিজের কল্যাণে ব্যাগগুলো পাড় হল খুব ভালভাবেই। আমাকেও কোলে করে নিয়ে ঐ পাড়ে পৌঁছে দিল সে। কিন্তু সমস্যা বাধল মাকে নিয়ে। বাবা তাকে খুব শক্ত করে ধরে মৃগী রোগীর মত কাঁপতে কাঁপতে সাঁকো পাড় হচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাত করে মায়ের একটি পা পিছলে একটি বাঁশের খণ্ড স্থানচ্যুত হয়ে পড়ে যাবার উপক্রম হলে তাকে জড়িয়ে ধরতে হল নিরুপায় হয়ে। যখন সাঁকো পাড় হল বাবা যেন মহাবীর হেক্টরকে বধ করে এসেছেন। কিন্তু আমার মা’র চোখে তখনও লজ্জা, বিস্ময় আর কিছুটা হলেও ক্ষোভ কাজ করছিল। বাইরের একজন লোক সহ নিজের ছেলের সামনে এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে তিনি এটি কল্পনা করেননি কোনদিন।
বাবা একগুঁয়ে মানুষ।মা’র অনিচ্ছা সত্তেও এই অল্প কদিনের জন্য রান্না-বান্নার জন্য হাড়ি পাতিল এবং থালাবাসন পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন তিনি। তাই সব মিলিয়ে ব্যাগ সঙ্খা হল নয়টি। মফিজকে বিদায় দেয়ার পর তিনি ভেবেছিলেন নিজ গ্রামে চেনা মানুষের অভাব হবেনা। কিন্তু তার সমস্ত ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়ে যখন কোন চেনা মানুষ তো দূরের কথা কোন কাক পক্ষীও খুঁজে পাওয়া গেলনা এবং এই অপরাধে বাবা যখন তার প্রিয় স্ত্রীর প্রবল বকা শুনার অপেক্ষায় আছেন তখন আমি আবারো লাফিয়ে উঠলাম।
বাবা দেখ নদীর পাড়ে একটা ছেলে বসে আছে। বাপ ছেলে দুজনে এক দৌড়ে পৌছে গেলাম ছেলেটির কাছে সাহায্যের আশায়। ছেলেটি বড় একটি পদ্মপাতাকে আসন বানিয়ে মাটিতে বসেছে। অদক্ষ হাতে একটি সিগারেট মুখে দিয়ে তার ধোঁয়া নাক দিয়ে বের করার চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে এবং পরক্ষনেই একটি বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে তাতে সুর তোলার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু তাতেও তার নিপুণতার পরিচয় মিললনা। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম
তুমি সিগারেট খাও কেন?
সিগারেট খাইলে শরীরে বল বাড়ে। তহন জোর দিয়া বাঁশি বাজান যায়।
তোমাকে কে বলেছে এটা?
আমার ওস্তাদ কালু ফকির। উনি অনেক সুন্দর কইরা বাঁশি বাজায়। আবার গানও গায়। উনি আমারে বলছে বাঁশি বাজানোর সময় বিড়িতে টান দিয়া আগে ভাব আনবি। তারপর বাঁশিতে ফুঁ দিবি। তহন দেখবি বাঁশি পঙ্খীরাজের মত ক্যামনে ছুডে।
ছেলেটির এমন কথায় হতভম্ব হয়ে বাবা কিছুই বললেন না। তার উপর ধূমপান নামক বদ অভ্যাসটি তার নিজেরো আছে। মা আমাদের মাঝে এসে উপস্থিত হলেন সবার শেষে। তাকে দেখা মাত্রই ছেলেটি মুখ থেকে সিগারেট ফেলে দিল। কিন্তু তা মায়ের দৃষ্টির অগোচরে যায়নি। মা একদৃষ্টিতে ছেলেটিকে নিরীক্ষন করলেন। ছেলেটির বয়স বার কি তের। এর বেশি হবেনা। পেশিবহুল শরীর। এই ছেলেটিকে যদি কেউ অসুন্দর বলে জ্ঞান করে তবে তার রুচির যে যথেশঠ পরিমাণ ব্যামো ঘটেছে তা শতভাগ নিচ্ছিত। ছেলেটির কাজল কাল দুইটি চোখের মাঝে গভীর মায়া এবং দুই ঠোঁটের রেখায় স্মিত হাঁসির ঝিলিক লেগে আছে। শুদু পরনের ধূলিময় মলিন পুরাতন বস্ত্রগুলো ছেড়ে নতুন বসনে সজ্জিত হলে তাকে অতি মার্জিত কোন ধনী পরিবারের সন্তানের মতই মনে হবে। তাই এই ছেলেটিকে দেখলে সকল মায়েদের মনে স্নেহের উদ্রেক হওয়াটাই সাভাবিক। তবে আমার মা মালতী বেগমের মন কোনরূপ বিগলিত হল কিনা তা আমার পক্ষে বুঝা অতি দুরহ কাজ ছিল। মা কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের উপর অধ্যাপনা করে থাকেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিউটনের তৃতীয় সুত্র প্রমান করার চেষ্টা তার সবসময় থাকে। তাই ছেলেটি যদি তার কলেজের কোন ছাত্র হতো তবে সিগারেট খাওয়ার অপরাধে তাকে নিচ্ছই মেয়েদের হাই বেঞ্ছে উঠে কান ধরে উঠ-বস করতে হত। তবে আপাত মুহূর্তের বিবেচনায় তিনি ছেলেটিকে বললেন,
বাবা আমরা ঢাকা থেকে এসেছি, তুমি কি আমাদেরকে একটু সাহায্য করবে?
আমরা হেঁটে চলেছি সন্তোষপুর গ্রামের মেঠো পথ ধরে। গ্রামটির তিন দিকেই নদী এবং একদিকে বিল। শুকনা মৌসুমে বিলে পানি থাকেনা। বর্ষাকালে যখন সেই বিলটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন সেই গ্রামটি একটি অপরূপ দ্বিপ হয়ে ধরা দেয় প্রকৃতির কাছে। সেই ছেলেটি একাই তিনটি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হেঁটে চলেছে সবার আগে। তার সাথে পা মিলাতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছি আমি।আমি তাকে নানা প্রশ্ন করতে থাকি।
আচ্ছা তোমার নাম জানা হলনা এখনো। তোমার নাম কি?
গেদু।
যাও গেদু কি আবার কারো নাম হয় নাকি?
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
আমরা গ্রামে আসলাম দুইদিন হয়ে গেল। অথচ গেদুর সাথে আমার ভাব জমতে সময় লাগলো মাত্র একদিন। গেদু এত সহজে সবাইকে আপন করে নিতে পারত যে ওর সাথে আমার কখন কিভাবে যে বন্ধুত্ব হয়ে গেল তা রীতিমত গবেষণার বিষয়। শুদু আমার সাথেই নয় আমাদের পরিবারের একজন অতি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠল সে। আমার মা লাকড়ির চুলোয় রান্না করতে করতে নাকানি চুবানি খান, তার লাকড়ির সন্ধান করতে হয় গেদুকে। আমাদের দুপুরের ভাত খাবার সময় হয়েছে অথচ ঘরে পানি নেই। মা গেদুকে ডেকে বলবেন,
গেদু,ঘরেতো পানি নেই। এখানে গভীর নলকূপের পানি কই পাওয়া যায় বলতে পার?
তখনই গেদু কলসী নিয়ে ছুটে যায় পানি আনতে। সন্ধ্যার সময় ঘরের পিদিম হঠাৎ করে নিবে যায়। আমার মা সেই প্রদীপটি কানের কাছে এনে নাড়তে নাড়তে বলবেন,
তেল পুরাবার আর সময় পেলনা।
গেদু বোতল হাতে ছুটে যাবে আবুর দোকান থেকে কেরোসিন তেল নিয়ে আসতে। আমার বাবার খুব সকালে গরম চা খাওয়ার অভ্যাস। আমার মায়ের অতিরিক্ত ঘুম বিলাসিতায় ঢাকায় থাকাকালীন নিজ হাতেই চা বানিয়ে খেতেন। কিন্তু লাকড়ির চুলোয় আগুন ধরানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়, এইভেবে ডাক পরে গেদুর। গেদু যখন গ্লাস ভর্তি গরম চা নিয়ে বাবার সামনে হাজির হয় বাবা তখন আবার খুব বিনয়ী হয়ে বলে,
গেদু আমার সিগারেটের বক্সটা যে খালি তা আগে খেয়াল ছিলনা।
গেদু তখন সানন্দে ছুটে যাবে আধামাইল দূরের বেড়ির বাজারে। কেননা আসলাম সাহেব যে ব্রান্ডের সিগারেট খান তা আবুর দোকানে সহজলভ্য নয়। সন্তোষপুর গ্রামের অতি অল্প কজনই খেয়ে থাকেন সেটি।
আবশ্যিক কোন কাজে গেদুর এমন স্বভাবসুলভ আচরণ আমার বাবা-মাকে অনেক মুগ্ধ করল। তারা মনে মনে ভাবল, এমন ছেলে বুঝি আর হয়না। তাদের কাজগুলো অতি সুন্দর করে সম্পাদনের ফলস্বরূপ গেদুকে তারা অনেক পছন্দ করলেও আমার সাথে তার অতিরিক্ত সখ্যতাকে প্রশ্রয় দিতে নারাজ ছিলেন আমার মা। আমি যখন গেদুর সাথে দুপুরবেলা পুকুরে একত্রে গোছল করার বায়না করতাম তখন তিনি বলতেন।
পুকুরের পানিতে গোছল করে তোমার জ্বর বাধাতে হবেনা বাবা। তার চেয়ে গেদু তোমাকে একবালতি পানি এনে দিক তুমি এখানেই গোছল সারবে।
প্রতিদিন বিকালে আমি যখন বাবার সাথে গ্রামে ঘুরতে যাই বাবা তখন তার পিতৃপ্রদক্ত সম্পদ গুলোর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। আবার কোন পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হলেই কুশলাদি বিনিময়ের পর বলবেন,
এই হল আমার ছেলে কিরন। এইবার ক্লাস সিক্সে পরে। খুব ভাল ইংরেজি বলতে পারে। বাবার কথায় বাধ্য হয়েই তখন আমাকে কিছুটা ইংরেজি শুনাতে হত। তখন আমার ইংরেজিতে মুগ্ধ হয়ে কেউ যদি বলে,
বাহ আসলাম ছেলেরে তো ঢাকায় রাইখ্যা মানুষের মতন মানুষ করছ।
বাবার তখন গর্ভে বুক ফুলে উঠে এবং এমনভাবে আনন্দের হাঁসি হাসতেন যা দেখলে আমার নিজেরো হাঁসি পেত। এইসব কারনে গ্রামে বাবার সাথে ঘুরাটা আমার মোটেও পছন্দ ছিলনা।আমি এমন একজনকে চেয়েছিলাম যার সাথে গ্রাম দেখতে দেখতে অনেক মজার গল্প করা যায়, দুষ্টুমি করতে করতে জামা ময়লা করা যায়,খেলা যায় এবং যার কাছে অনেক অজানা জিনিস জানা যায়। তাই সমস্ত দিক বিবেচনায় গেদুই ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ
গেদুর সাথে ছিল আমার আকাশ পাতাল পার্থক্য। সে ছিল বনের পাখির মতই উদ্যম ও প্রানচঞ্চল। আর আমি ছিলাম খাঁচার পাখির মতই সুন্দর অথচ নিস্তেজ, বিনয়ী কিন্তু বিভ্রান্ত। গেদুর মাঝে এমন একটি আকাশের ব্যাপ্তি ছিল যে কোন সংকীর্ণতা তাকে কখনো আঁচ করতে পারেনি। তাই গেদু যখন আমাকে সেই রকম একটি আকাশের সন্ধান দিল নিজেকে আর সংবরণ করা সম্ভব হলনা। সেই আকাশে নিজের ঠিকানা স্থায়ী করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে দিলাম। গেদুর যে গুনটি আমাকে সবচেয়ে বেশী কাছে টানত তা হল তার অসম্ভব রকম সরলতা। একটু গোছানো বাংলায় যাকে বলে মাটির মানুষ। এই রকম একজন মানুষের সাথে বাবা-মার অনুমতি সরূপ নানা রকম বিধি-নিষেদ মেনে দিনের বেলা যতটুকু সময় কাটাতাম তাতে আমার মন ভরতোনা। তার উপর আমার আবার বনের পাখি হওয়ার জীদ ধরেছে এবং আমার অদেখা জগতকে আবিষ্কার করার তীব্র একটা তাগিদ ভিতরে ভিতরে অনুভব করতে লাগলাম। তাই কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম যে আমরা নিশাচর হয়ে উঠেছি। আমার নিউটনি মায়ের অতিরিক্ত ঘুমকাতরতা আর বাবার বিনা প্রয়োজনীয় কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার বদান্যতায় এমন অসম্ভব সাধন সম্ভব হয়েছিল।
আমরা চলতাম খালি পায়ে মেঠো পথ ধরে, কখনো সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে শিশিরে পা ভিজিয়ে কিংবা সদ্য ফসল তোলা ধানক্ষেতের সরু আইল ধরে। চাঁদের আলোর সাংঘাতিক রকমের প্রাচুর্য না থাকলেও তার মৃদু আলোয় পথ চিনে নিতে আমাদের কোন অসুবিধাই হতোনা।
অপরাপর অন্যান্য দিনগুলোর মত আজও যখন আমরা বাসা থেকে বের হয়েছিলাম তখন সবেমাত্র সন্ধ্যার আবেশ ছাড়িয়ে রাতের অন্ধকারের রাজত্ব শুরু। বেড়ীর বাজারের কাছেই একটা জারি গানের আসর বসেছিল আজ। গেদু আমাকে সেখানেই নিয়ে গেল। ঐ গানগুলি যে কীভাবে গেদুর ভাল লাগে তা বুঝে উঠতে পারিনা। শুদু বাঁশির সুরটাই আমাকে মুগ্ধ করেছিল। মনে মনে স্থির করলাম যে আমিও গেদুর মত বাঁশি বাজানো শিখব। তাই আসর শেষে আমরা যখন একটি খোলা মাঠ দিয়ে হাঁটছি গেদুকে বললাম,
গেদু তোমার বাঁশিটি আমার চাই।
কিন্তু গেদু তখন আমাকে হতাশ করে দিয়ে বলল,
এই বাঁশি তো তোমারে দেয়া যাইবেনা, আমার মা আমারে মাইরবে। মা চাইছিলেন আমি বড় বাদক হমু। তাই মা উরুস থেইকা এইডা আমারে কিন্না দিছিল।
তোমার মা তোমার অনেক ভাল বন্ধু ছিলেন তাই না?
তোমারে কে বলছে? মা আবার বন্ধু হয় নাকি?
তোমার মা এখন কোথায়?
গেদু দূর আকাশের চাঁদটাকে দেখিয়ে বলল,
ঐ চাঁদের দেশে।
আমার তখনো অবুঝের মত প্রশ্ন,
তোমার মা চাঁদের দেশে কেন গেলেন?
আমার বদ বাবা মায় থাকতে আরেকটা বিয়া করছিলেন, তারপর থেইকা মারে আর দেখতে পারতনা। সারাদিন কেবল মারত। কোন খাওন দিতনা। তাই মা একদিন রাগ কইরা চাঁদের দেশে চইলা গেছে।
তোমাকে নেয়নি কেন তোমার মা?
জানিনা।
আমি তখনো বুঝতাম না গেদু তার মা’র চাঁদে যাওয়া বলতে কি বুঝিয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম নীল আর্মস্ট্রংরা যেভাবে চাঁদে গিয়েছিলেন তিনিও বুঝি সেই ভাবেই গিয়েছিলেন। তাই গেদুকে শান্তনা দিয়ে বললাম,
চিন্তা করোনা বন্ধু, আমি বড় হয়ে যখন চাঁদের দেশে যাব তখন তোমার মাকে আবার তোমার কাছে নিয়ে আসব।
গেদু তখন মাথা নিচু করে কাঁদছে।
এমনি করে হাঁসি-কান্না আর দুঃখ-বেদনার অবিমিশ্র কাব্যের মধ্য দিয়ে কাটতো আমাদের বিনিদ্র রজনীগুলো। ঐ অল্প কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের মধ্যে যে বন্ধুতা তৈরি হয়েছিল তার কোন সীমারেখা অংকন করা যাবেনা কোনদিন। তবে তার একটি ভাবরেখা টানলে তা ঠিক এমন হবে, আমাদের যে যুগল চলন শুরু হয়েছিল তা ভোরের আলোর মতই কোমল, শরৎের আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘেদের মতই শুভ্র, আর পশ্চিমাকাশে অস্তগামী সূর্যের মতই সত্য।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
একদিন সকালে আমাদের বাড়ির উঠোনে রীতিমত একটি জটলার সৃষ্টি হল। আমাকে ঘিরে আসেন সবাই। বলোড়াম ডাক্তার আমার পেটে চাপ দিয়ে মুখ দিয়ে পানি বের করছেন। তা যেন তাদের কাছে অতি সুন্দর দর্শনীয় কিছু বলে বিবেচিত হচ্ছে। আমার বাবা-মা আমার পাশেই আছেন, শুদু নেই গেদু। সে খানিকটা দূরে উঠোনের দ্বারে পেয়ারা গাছটির নিচে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর মত। আমার মা তখন গেদুর উপকারগুলোর কথা ভুলে তার উপর তীব্র জ্বালাময়ী কথার বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তুই আমার নাড়ী ছেড়া ধনকে খুন করতে চেয়েছিলি তাইনা? ভেবেছিলি কেউ টের পাবেনা। তোকে আমি আজই পুলিশে দিবো। তোকে পুলিশে না দেওয়া পর্যন্ত আমার ছেলে সুস্থ হবে না।
আমার বাবা কাউকে বকা দিতে মায়ের মত অত পটু ছিলেন না কোনকালেই এবং কখনও কাউকে চোখ রাঙিয়ে শাসন করতে দেখিনি তাকে। আমার সেই শান্ত বাবাও সেদিন গেদুকে বকা না দিয়ে ক্ষান্ত হলোনা।
তোকে আমি অনেক ভালই ভেবেছিলাম। তুই জানতিনা কিরণ সাঁতার জানেনা? তবে কেন তুই কেন তুই আমাদের সবাইকে না জানিয়ে ওকে নিয়ে শাপলা তুলতে গেলি?
গেদু বিন্দুমাত্র প্রতিবাদটি করলনা। শুদু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। সে ভালভাবেই জানত আমার বাবা-মার বকার বিরুদ্ধে যুক্তি চালিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার মত জ্ঞান তার তখনো হয়নি। কিন্তু আমিতো জানতাম আমার বন্ধু গেদু কতটা নির্দোষ ছিল। বরঞ্চ দোষের ভাগটা পুরোপুরি ছিল আমারই।
গ্রামে আসার আগে শাপলা-শালুক ফোঁটা মিঠাপানির বিল কেবল ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখেছিলাম। নিজ গ্রামে নিজ চোখে এমন একটি বিলে যখন অন্যান্য ছেলে-মেয়েদেরকে শাপলা তুলতে দেখলাম তখন গেদুর বারণ সত্ত্বেও নিজ হাতে শাপলা তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না। তাই পরেরদিন খুব ভোরেই বাবা-মার অজান্তে গেদুকে নিয়ে আমিও রওনা দিলাম শাপলা তুলতে। গেদু ছোট্ট নৌকাটিকে নিয়ে গিয়েছিল একদম বিলের মাঝে যেখানে শাপলার সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশী। সেও তখন শাপলা তুলছিল। অসংখ্য সাদা সাদা শাপলা ফুলের মাঝে একটু দূরের একটি নীলপদ্ম আমার নজর কাড়ল। গেদুকে কিছু না বলেই নৌকা থেকে অনেক দূর বেড়িয়ে চেষ্টা করছিলাম ফুলটি তুলবো বলে। হঠাৎ করেই অন্য একটি নৌকা এসে আঘাত করল আমাদের নৌকায়। তখনই ঘটল এই অঘটনটি। সেদিন গেদু যদি ঝাঁপ দিয়ে সাথে সাথে আমাকে নৌকায় না তুলতো তবে আমার দুই চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখা হতনা আর।
আমার মা যখন অনর্গল গেদুকে বকে যাচ্ছিল তখন স্থানীয় একজন লোক এসে মায়ের সাথে যোগ দিয়ে বলা শুরু করল,
ছিঃ ছিঃ এই ছেলেকে আপনারা আপনাদের ছেলের সাথে মিশতে দিয়েছেন? জানেন এই ছেলেটির মা ছিল চরিত্রহীন, অসৎ। তার ছেলে আর কেমনই হবে বলুন?
গেদু মানুষের শত বকা সইতে পারে, কিন্তু তার মাকে নিয়ে সামান্য কটু কথাও সইতে পারেনা। তাই তৎক্ষণাৎ একটি ইটের খন্ড নিয়ে সজোরে আঘাত করল লোকটির মাথায়। রক্ত বেড়িয়ে আসতে দেখে সেখান থেকে এক দৌড়ে পালিয়ে গেল সে।
দুই দিন যাবত তার কোন সন্ধান মিললনা। কিন্তু সেদিন ঘুম থেকে উঠেই খুব অবাক হয়েছিলাম। দেখলাম গেদুর প্রিয় বাঁশিটি আমার মাথার কাছে রাখা।খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তখন। সে আমার কাছে নীরবে এসেছিল।আবার আমার আবদারটি পূর্ণ করে নীরবেই চলে গেছে। আমার বাবা মা আমাকে ঘর থেকে বেরুতে দেয়নি। সারাদিন কেবল তার কথাই ভাবতাম।ঘুমের মাঝে স্বপ্নে দেখতাম গেদু আমার জানালার এসে আমাকে ডাকছে,
কিরণ ও কিরণ দরজা খোল।
আর তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ
পরদিন সকালে একটা মন খারাপ করা খবর শুনে আমাকে ঘরে ফিরতে হল। ঘরে ফিরেই দেখি আমার মা অত্যন্ত বিচলিত। কাঁদো কাঁদো মুখে তিনি সকল জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন।
কি ব্যাপার মা? আমাদের ঢাকায় যেতে এখনো আরো কয়েকদিন বাকি, এখনি ব্যাগ গুছাচ্চ যে?
মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন,
তোমার নানা ভাইয়া হার্ট স্ট্রোক করেছে। তুমি রেডি হয়ে নাও। আমরা এখনই রওনা করব।
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে মার কাছে গিয়ে বললাম,
মা মণি, নানা ভাইয়া তো এর আগেও কয়েকবার স্ট্রোক করেছে, কিছু হয়নি। দেখ এইবারো কিছু হবেনা।
তাই যেন হয় বাবা।
মা আমরা একটু দেরি করে যাই? গেদুকে ওরা ধরে রেখেছে। অনেক মারধর করছে।
কারা?
পূর্ব পাড়ার ছেলেরা। বাবাকে গিয়ে বলনা ওকে ছাড়িয়ে আনুক।
মা যেন এইবার তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। তিনি চিৎকার করতে লাগলেন।
কোথাকার কোন ছেলের জন্য তোমার এত দরদ কিসের শুনি? গিয়ে দেখ আবার কারো মাথা ফাটিয়েছে, কারো ঘরে সিঁধ কেটেছে। তাকে বেঁধে রাখবেনা তো কি করবে?
না না মা, গেদু কোন দোষ করেনি।
তাহলে কার দোষ?
আমি কিছুই বলতে পারলাম না। খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার পর আবারো বললাম,
সে তো আমার বন্ধু মা। তার জন্য......
অত বন্ধু টন্ধু বুঝিনা। তুমি রাস্তার ছেলেদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে ন্যাকামো করবে আর আমরা তা মেনে নিব না?
নানা ভাইয়া আমাকে অনেক বেশী ভালবাসতেন। আমরা যখন মাঝপথে তখনই খবর পেলাম নানা ভাইয়া আর নেই, আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন তিনি। আমাদের মাঝে তখন শোকের ছায়া বিরাজ করছে। কিন্তু নানা ভাইয়ার জন্য আমার যতখানি খারাপ লেগেছিল তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট লাগছিল গেদুর কথা মনে করে। তাকে না জানি কত মারধর করছে ওরা। অথচ ওর কোন দোষ ছিলনা।
গতকাল রাতে ও যখন সত্যি সত্যিই এসেছিল তখন আমিইতো ওকে গ্রামের উত্তর দিকের চরে নিয়ে গিয়েছিলাম।তখন ধানক্ষেত গুলোতে শুকনা খড়গুলো স্তূপ করে রাখা ছিল। সেখান থেকে বাচাই করে আজিজ মেম্বারের ক্ষেতটি খুঁজে বের করলাম গেদুকে নিয়ে। গেদু বলেছিল আজিজের চরিত্র নাকি মোটেও ভাল না। আর সেদিন গেদুর মা নিয়ে উনিই কটু কথা বলেছিল।তাই কিছুটা হলেও প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই গেদুকে কিছু না বলেই তার খড়ের স্তূপে আগুন লাগিয়ে দিলাম। গেদু অনেক চেষ্টা করল আগুন নিভানোর জন্য। কিন্তু আগুন নিভানো তো দূরের কথা আজিজ মিয়াঁর সবগুলো খড়ের স্তুপে আগুন ছড়িয়ে পড়ল চোখের পলকে। অন্ধকার চরটি হঠাৎ করে আলোকিত হয়ে গেল। তখনই দেখা গেল মেম্বারের লোকজন চরে ছুটাছুটি শুরু করে দিয়েছে কে আগুন দিয়েছে খুঁজে বের করার জন্য। আমরা তখন আশ্রয় নিয়েছিলাম দূরের অন্য একটি খড়ের স্তূপের ভিতর। ওরা যখন কাউকে খুঁজে পেলনা তখন তাদের মাঝে কেউ একজন বলল,
এত বড় সাহস? মেম্বরের ক্ষেতে আগুন? ঐ চরের সব ক্ষেতে আগুন জালাইয়া দে। কারো ক্ষেতে য্যান কোন খেড় না থাকে ক্ষেতে, সব ছাই কইরা দিবি।
তখন ঠিক তাই হতে চলল। চরের অন্যান্য খড়ের স্তূপ গুলোতে আগুন লাগাতে শুরু করেছে ওরা। একটু পরে আমাদের স্তূপটিতেও আগুন দিবে। খুব ভয় পেয়ে গেলাম তখন। ওরা যখন আমাদের খড়ের স্তূপে আগুন লাগাতে চলল গেদু হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়ল সেখান থেকে।
আমিই আগুন দিছি মেম্বরের ক্ষেতে, আমি আগুন দিছি। চিৎকার করে বলতে থাকে সে।
ওরা যখন গেদুকে ধরতে গেল সে হঠাৎ করে দৌড় মারল আবার। আমি দেখলাম গেদু অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে। আর বাকি সবাই ওর পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে। এই সুযোগে আমি বাসায় চলে আসলাম। কিন্তু গেদু যে শেষ পর্যন্ত ওদের হাতে ধরা পড়ে যাবে তা আমি ভাবিনি।
সারাটা পথ ধরে গেদুর দেয়া বাঁশিটা বুকে চেপে কান্না-কাটি করলাম। গেদু কি আমায় কখনো ক্ষমা করবে?
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
একটি আদর্শ গল্পের শেষটি যেমন হওয়া উচিত বিগত বছর গুলোতে গেদুর সাথে আমার ভাবটি ঠিক তেমনই আছে। গেল বসন্তে আমার বয়স সাতাইশ পূর্ণ হলো। নাতিদীর্ঘ এ জীবনে আমার অনেক আশাও পূর্ণ হলো। আমার মা আমার গোপন প্রণয়টিকে মেনে নিয়ে সেই ললনার সাথে আমাকে একটি বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছেন। আমার মায়ের নিউটনি ভাবটাও এখন আর নেই। কারণ বাবা তার কথামত আমাদের গ্রামের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে বিশাল বড় বহুতল ভবনে ছোট্ট একটি ফ্লাট কিনেছেন। এখানে সব কিছু সাজানো গোছানো। গেদুর দেয়া সেই বিনে পয়সার বাঁশিটি যত্ন করে রেখে দিয়েছি আমার শো-কেইসটিতে। এখান থেকে অনেক দূরের আকাশ দেখতে কোন বেগ পেতে হয়না। রাতের বেলা প্রতিদিন চাঁদের আলো আমার ঘরে এসে উঁকি দিয়ে মনে করিয়ে দেয় গেদুর কথা। তাকে কথা দিয়েছিলাম, চাঁদে গিয়ে তার মাকে নিয়ে আসব। কিন্তু এই জীবনেও তা আর সম্ভব হবেনা আমার।
বছর দশেক আগে একবার সেই গিয়েছিলাম আমাদের সেই গ্রামে। অনেক খোঁজাখুঁজি করলাম। কিন্তু আমার গেদুর কোন সন্ধান মিললনা। কেউ কেউ বলল সেদিনের পর গেদুকে নাকি আর গ্রামে দেখা যায়নি। কেউ বলল পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। থানায় গিয়েও গেদুর কোন খবর পেলাম না। আবার কেউ কেউ বলল তারা নাকি সেই ঘটনার পর গেদুর বয়সী একটা ছেলের লাশ ডাকাতিয়া নদী দিয়ে ভেসে যেতে দেখেছে। সব কিছু শোনার পর বুঝতে পারলাম গেদু আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে কোথাও চলে গেছে। ভিতরে ভিতরে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিলাম তখন। নিজেকে অনেক বড় একজন অপরাধী মনে হচ্ছিল। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল গেদুর দেয়া বাঁশিটি ডাকাতিয়া নদীর জ্বলে ভাসিয়ে দেই, কিন্তু পারলাম না।
আমি তাকিয়ে আছি গেদুর দিকে। তার একবিন্দুও পরিবর্তন নেই। সেই লম্বা লম্বা চুল, ময়লা জামাযুক্ত কাপড় চোপড়। সে বলছে,
কি ব্যাপার কিরণ, এত খুশী ক্যান তুমি?
আমি মুচকি হেঁসে বললাম,
জানোতো আমার বউ আট মাসের প্রেগন্যান্ট এখন। আগামী মাসে তার কোল আলো করে একটা ফুটফুটে ছেলে আসবে।
ছেলে আসবে তোমারে কে বলেছে? মেয়েও তো আসতে পারে।
আরে না। মেয়ে হবেনা, ছেলেই হবে। তুমি দেখো। ছেলের নাম কি ঠিক করেছি জানো?
না। কি নাম রাখবে ওর?
গেদু। তোমার নামে নাম।
গেদুও তখন মুচকি হাঁসতে শুরু করল। আমার স্ত্রী মিতু যখন আমার ঘরে প্রবেশ করল গেদু কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। মিতুকে জড়িয়ে ধরে আমি তাকিয়ে থাকলাম বাঁশিটির দিকে। আর অপেক্ষায় আছি আমাদের কোল আলোকিত করে অন্য এক গেদুকে দেখব বলে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মনির খলজি আপনি খুব সাবলীল ভাষায় গল্পের চরিত্রগুলোকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুন্দর চিত্রায়ন করেছেন ...ভালো লাগলো আর শুভো কামনা রইলো ।
মিজানুর রহমান রানা ধন্যবাদ আরেফিন ভাই। ভালো থাকুন, এই কামনা।
amar ami দেরী করে পড়তে হলো বলে আফসোস হচ্ছে এখন !
মোঃ শামছুল আরেফিন তানভীর ভাই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার কামনা যেন সত্যি হয়।
তানভীর আহমেদ অনেক অনেক ভালো একটি গল্প। একটানে পড়ে ফেলা যায়। লেখকের উন্নতি কামনা করি।
মোঃ শামছুল আরেফিন আকাশ ভাইয়া পুরো গল্প না পড়ে কমেন্ট করলে খুব খারাপ লাগবে। আবার বলেছেন সময় হলে পুরোটা পড়বেন। তাহলে ভাইয়া কমেন্টটা তখনই করলে ভাল হত। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে যারা আমার গল্পে আসবেন দয়া করে পড়ে কমেন্ট করবেন, গল্পের কিছু অংশ কিংবা অর্ধেক পড়ে প্লীজ কমেন্ট করবেন না।
Akther Hossain (আকাশ) boro bole purota porte parlam na seser dike poreci somoy hole purota porbo.
পন্ডিত মাহী ভুল গুলো কেন হয়েছে সেটা আগেই বুঝতে পেরেছি। তবে ভুল গুলো ভালো লাগার মাঝে দেয়াল হতে পারেনি। শুভকামনা রইল।
মোঃ শামছুল আরেফিন মাহী ভাই আমার গল্পটি আপনি ভালভাবে পড়েছেন বলেই আমার গল্পের ভুলত্রুটি গুলো ধরতে পেরেছেন। ভাইয়া বানান ভুলগুলো আমার অজ্ঞতা, এবং অভ্র দিয়ে টাইপিং এ সমস্যার কারণে হয়েছিল। আর আমি প্রতিটি প্যারা অন্তর গ্যাপ রেখেই গল্পটি জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু গল্পকবিতার এডিটিং এ আবার এমন হয়ে গেছে। তাই আপনাদের পড়তে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আপনি যে অনেক কষ্ট করে পড়লেন তার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
পন্ডিত মাহী দারুন লাগলো। সত্যিই দারুন। তবে কিছু টাইপিং এর ভুল আছে আর পরিচ্ছেদ গুলোর মাঝে সব জায়গায় যথেষ্ট ফাকা জায়গা না থাকায় সামান্য অসুবিধা হয়েছে পড়তে। কিন্তু এসব তেমন কিছুই না অসাধারন বর্ণনাশৈলীর কাছে। অনেক ভালো লাগলো।

৩১ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪