ভালোবাসার ভুবন

ভালবাসা (ফেব্রুয়ারী ২০১১)

সৈয়দ আকমল হোসেন কাজী
  • ১৬
  • 0
  • ৬৭
মায়া ও ছায় ২ বোন গ্রামের বাবা-মার সাথে বাস করে। বাবা অন্যের জমিতে চাষ করে আর মা সারাদিন অন্যর বাড়ীতে কাজ করে যা পায় তাই দিয়ে কোনমতে কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে দিনাতিপাত করে। মায়া এবার অনার্স শেষে বর্ষের ছাত্রী আর ছায়া ১০ম শ্রেণীর। মায়া শহরে গ্রামের পরিচিত এক চাচার বাসায় লজিং থেকে ও ২টা টিউশানি করে তার পড়াশোনার খরচ চালায় আর বাড়ী যাওয়ার সময় ছায়ার জন্য নতুন জামা, চকলেট নিয়ে যায়। ছায়া ছোট বলে অনেক আবদার। মায়ার বয়স ২৫ বছর। মা-বাবা দরিদ্র হওয়ায় তারা চায় সে শিক্ষিত হয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে তবে তার বিয়ে দিবে। এদিকে মায়ার কখনো মনে হয়নি কারো সাথে ঘর বাঁধার কথা। মায়ার বাবার একটি চোখ নষ্ট। মায়া ছোটকালে একদিন স্কুলে গেলে একটি মেয়ে মায়াকে কানার মেয়ে বলায় মায়া তাকে ভীষণ মেরেছিলো এবং সেদিন থেকে সে প্রতিজ্ঞা করে ছিলো জীবনে অনেক বড় হবে। অনেক টাকা উপার্জন করতে হবে। তাহলে সে বাবার চোখ ভালো করতে পারবে। এমনকি তাদের চেয়ে অসহায় মানুষের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পারবে। এতিম বাচ্চাদের শিক্ষিত করা, দুবেলা খেতে দেওয়া তাদের মানুষ করবার, মায়ার খুব ইচ্ছা। কিন্তু এদেশে চাকুরীর যে অবস্থা যদিও পড়ার জোরে চাকুরী হয় তবু বেতন কম হওয়ায় তা দিয়ে নিজের সংসার চলে না। তা ছাড়া অসৎ টাকা সে কখনই উপার্জন করতে চায় না। তাই সে ভাবে-‘আচ্ছা আমি যদি আমেরিকায় যেতে পারতাম,ওদেশে পড়াশুনা করতে পারতাম, তাহলে আমি অনেক বড় চাকুরী পেতাম আর অনেক টাকা উপার্জন করতে পারতাম। এই ভাবতে ভাবতে সে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি। সকালে নাস্তা সেরে টিউশানি করাতে যায়। ছাত্রীর বাসায় বসে বসে পেপার পড়ছিলো আর চা খাচ্ছিলো। হঠাৎ তার চোখে পড়ে পেপারে একটি ছেলের ছবির উপরে লেখা: পত্রী চাই, পাত্র ৪৫+ ইউ.এস প্রবাসী সুন্দর মনের লম্বা নামাজী ৩০+ পাত্রীরা যোগাযোগ করুন। সরাসরি পাত্র: ০১৭১১২৫৮৭১৪। মায়ার হঠাৎ কেন যেন আজ এই ছেলেটির লেখা তার খুব পছন্দ হল এবং নম্বরটি সেভ করলো। বাসায় ফিরে চাচীর সংসারের সব কাজ করে যখন ঘুমাতে গেল তখন মনে মনে ভাবলো-দেখি একটু কথা বলে। মায়া ফোন দিল। ওপাশ থেকে ভেসে এল কণ্ঠ-‘হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম, আমি সুমন। আপনি কে বলছেন, প্লিজ?’ মায়া বলল-‘আমি মায়া, আজ আপনি পেপারে এ্যড দিয়েছেন। তাই আমি পাত্রী হিসাবে আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক।’
সুমন বলে-‘আপনার বয়স কত? আপনার বয়স কি ৩০ ঊর্ধ্ব? আপনাকে আমার ছোট মনে হচ্ছে।’
মায়া বলে-‘হ্যাঁ, আমার বয়স ২৫ বছর, কিন্তু আপনি এতদিন বিয়ে করেননি কেন?’
সুমন বলল-‘যুদ্ধে আমার মা-বাবা, ভাই-বোন সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আমি আমেরিকায় পাড়ি জমাই। সেখানে গিয়ে দোকানে কাজ করি এবং পড়াশুনা করে এখন ওখানে ভার্সিটির লেকচারার। সবাই বলে ড. সুমন। কিভাবে যে ৪৫ বছর কেটে গেল বুঝতে পারেনি। তবে আপনার মত ছোট মেয়ে কেন আমাকে বিয়ে করতে চায় বুঝতে পারছি না।’ তখন মায় তার স্বপ্নের কথা বলল। সে ভালোবাসার ভুবন গড়ে তুলতে চায়। এর জন্য দরকার পার্শে শক্ত কারো দুটি হাত। যে হাত দুটি ধরে স্বপ্নের ভালোবাসার ভুবনে যেতে পারবো। সুমন বললো-‘মায়া আপনি এতো ভালো মনের মানুষ আমি বুঝতে পারেনি। আপনাকে পেলে আমার নিজেকে ধন্য মনে হবে। আমার এ শহর থেকে একটু দূরে একটা এতিমখানা আছে। যা আমি আমার আমেরিকার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছি। এতিমখানার বাচ্চারা সবাই আমাকে বাবা বলে ডাকে। আপনি কি পারবেন তাদের মা হতে?’
মায়া বলে-‘আপনি আমাকে কবে নিয়ে যাবেন আপনার ভালোবাসার ভুবনে?’
সুমন বলল-‘মায়া, আমি কালই আসছি।’
মায়ার সেই থেকে শুরু হল আয়না দেখা, কখনও আয়না দেখ কাজল দেয় কখনো বা দেয় লিপিষ্টিক। এভাবে কখন যে দিন গেল রাত হয়ে ভোর এলো বুঝতে পারলো না। সকালে ফ্রেস হয়ে নাস্তা সেরে ধবধবে একটা সাদা শাড়ী পড়ে মনের মত করে সেজে সুমনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। সুমন আজ ড্রাইভার নিল না। নিজেই গাড়ী নিয়ে এসে পৌঁছল। এসে দেখে তার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট একটা মেয়ে ধবধবে সাদা শাড়ী পড়ে দাড়িয়ে আছে। তাকে দেখতে পরিব মত লাগছে । খুশিতে সুমনের মনটা ভরে গেল। সে বলল-‘মায়া আমিই সুমন।’ মায়া লজ্জায় নীচের দিকে তাকিয়ে রইলো। সুমন তাকে গাড়ীতে নিয়ে ঘুরতে বের হল। আজ তার মন খুশিতে নেচে উঠছে। সে হাওয়ার বেগে গাড়ী চালাল আর গান গাইতে শুরু করলো-‘আমার ও পরান যাহা চায় তুমি তায়...।’
হঠাৎ গাড়ী এক্সিডেন্ট হলো। হাসপাতালে সুমনের জ্ঞান ফিরলে সে মায়াকে খুঁজলো। ডাক্তার জানায়- সে ভালো আছে। আজ আমরা তাকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে রেখেছি কাল আপনি কথা বলতে পারবেন। সুমন কেন যেন মন মানছে না। হঠাৎ সুমনের ফোন এল এতিমখানা থেকে। কেয়ারটেকার সাহেব বললেন-‘স্যার আপনা আগামীকাল আসবেন না? বাচ্চারা তো কাল আপনাকে ছাড়া খাবে না। কাল ভ্যালেন্টাইন ডে। তাই আপনাকে মনে করিয়ে দিলাম স্যার’। শোন সামসু-‘ আমি কাল একা নই, তোমাদের মাকেও নিয়ে আসবো। ভালোবাসা দিবসে আমরা সবাই ভালোবাসা ভাগ করে নেব।’ মায়ার বেডের পাশে বসে থেকেই সুমন কাটিয়ে দিল একটা রাত। সকালে মায়া চোখ খুলে দেখে সুমন পাশ বসে অঝোর ঘুমাচ্ছে। সে সুমনের ঘুমন্ত মুখে হাত রেখে বলে-‘সুমন তোমার কিছু হয়নি তো?’
সুমন ঘুম থেক জেগে মায়াকে বলে মায়া ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে।’ আর হাতে তুলে দেয় একগুচ্ছ ফুল। মায়াও বলে- ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে’। সুমন বলে চলে মায়া দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চারা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। চল আমাদের ভালোবাসার ভুবনে। ওরা পৌঁছেই দেখে সব বাচ্চারা ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। মায়া এ সুমনকে ওরা ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে। এরাই এক ফাঁকে সুমনের হাতের উপরে এসে পড়লো মায়ার একটি হাত। মায়া বলল-‘ কোন দিন ছেড়ে দেবে না তো এই হাত?’
সুমন বলল-‘ না মায়া এ সাধ্য কি আর আমার আছে?’ আর দুরে বসেই সামসু ভূপেন হাজারিকার সেই ভালোবাসার গানটি গাচ্ছিল-তুমি ভালোবাসো আমাকে, আমি ভালোবাসি মানুষকে, এসো আমাদের ভালোবাসা বিলিয়ে দেয় এই দেশটাকে...।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
salman salman Good................
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০১৪
Good Good........
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০১৪
শিশির সিক্ত পল্লব সুন্দর...........................
Dubba সুন্দর হইছে
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১১
Dubba সুন্দর হইছে
ভালো লাগেনি ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১১
বিষণ্ন সুমন All the best wishes for u
ভালো লাগেনি ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১১
বিন আরফান. দোয়া করি জীবনে বড় হোন. বিন আরফান
ভালো লাগেনি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১১
বিন আরফান. ভালুলাগ্ল তাই ভোট দিলাম
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১১
A.H. Habibur Rahman (Habib) আপনার গল্পটা অবস্যই সুন্দর. তবে ঘটনা গুলো খুব দ্রুত বলেছেন......মায়া এবং সুমনকে আরো সময় দেয়া দরকার ছিল. আরো একটু দুঃক্ষ কষ্ট, আরো একটু রোমাঞ্চ..... এটা একন্তই আমার বাক্তিগত অনুভুতি থেকে বললাম. আপনি লেখক, আপনার চিন্তাই হোক আপনার লেখনি. সুভাসিস রইলো. আমিও দুটি কবিতা পোস্ট করেছি.......সময় পেলে পরার আমন্ত্রণ রইলো.
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

৩১ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪