দিনের বেলায় কি তাঁরা খসে পড়ে? যেমনটা দেখা যায় রাতের আকাশে? পড়ে বোধ হয়। সূর্যের আলোর চেয়ে জ্বলে যাওয়া তাঁরার আলো কম হওয়ায় দেখা যায় না। কোথায় যেন একটা ছবিতে দেখেছিলাম, জ্বলে জ্বলে ঝড়ে পড়া তাঁরা দেখে কেউ একজন ইচ্ছা প্রকাশ করল আর তার ইচ্ছা পূরণ হতে থাকল। আজ সপ্তাহ খানেক ধরে মিজান মামা আর আমি রাতের আকাশে খসে পড়া তাঁরা খুজছি।
ছবি তোলা দরকার পাসপোর্টের জন্য। মামা ইন্ডিয়া যাবেন। পাসপোর্ট শুধু ইন্ডিয়া যাবার জন্য না, ইন্ডিয়াতে চেক রিপাবলিকের দূতাবাস আছে, বাংলাদেশে নেই। এই নিয়েও মামার ক্ষেদোক্তি কম না “শালারা সব দেশে দূতাবাস দিতে পারে না! নাকি দেশে মানুষ নাই, তাই পারে না? মানুষ বাড়াইতে পারো না! আরে দরকার হইলে আমাগো লইয়া যা, দেখ ক্যামনে জনসংখ্যার বোমা ফাটায়া দেই...।” রাগে গজ গজ করতে থাকেন মামা। আমিও চামে বলে ফেলি “ঐ জনসংখ্যা দিয়া কি কাম হইব আমরা সেইটা ভালোই বুঝতে পারতেছি, তোমারে দেখলেই বুঝা যায়...
শালার পো ফাইজলামী ঝাড়বি না কইয়া দিলাম। ওরা খালি বাংলাদেশে না চান্দেও দূতাবাস খুইলা রাখতে পারে না! কখন দরকার লাগে কওন যায়...
মামা ঠিক কথা কইছ, চান্দেও তোমার মতন পাজী মানুষ থাকতে পারে, যারা গেঞ্জি, পেন্টি বেচার আশায় গেছে।
এর মাঝেই আমরা আক্কু ভাইয়ের “প্রিয়তমা মৌ ডিজিটাল স্টুডিও” তে পৌছে যাই। আমার মাথায়ই এলো না এত বড় বড় স্টুডিও থাকতে মামা এইখানে কেন এলেন! যাক্ আমার কী, যার ছবি তোলা দরকার তার তৃপ্তী হলেই হয়। আহামরি কোন স্টুডিও না ছোটখাট একটা ঘর, তবে খুব সুন্দর করে গোছানো।
স্টুডিওর ভিতরে ঢুকেই বুঝে ফেললাম মামার এখানে আসার কারন। কিশোরী, যুবতী মেয়েতে যেন ঠাসা স্টুডিও। আশেপাশে শ-খানেক গার্মেন্টস্, গার্লস্ স্কুল-কলেজ আছে, তাই এই ভিড়। মধ্য বয়স্ক আক্কু ভাই রোবটের মতো ছবি তুলে যাচ্ছেন। একজন কমলে দুজন বাড়ে অবস্থা। বসার কোন জায়গা না পেয়ে আমিও দাড়িয়ে থাকা মামার পেছনেই রইলাম।
ফকফকা আলোর সামনের চেয়ারটায় কেউ হয়তো মাথা কাত করে বসে, আবার কেউ সীনা ফুলিয়ে... আর আক্কু ভাই মাথাটা একটু নামান... একটু ডানে ঘুড়েন... একটু বায়ে... ওড়নাটা একটু তোলেন। যখন কেউ এর কোনটাই বুঝে উঠতে পারে না হাসিমুখো আক্কু ভাই দুই চার লাইন কবিতার ছন্দ ঝেড়ে দিতে কার্পণ্য করেন না।
“ছোট্ট বেলার প্রেম
বিদিশা কয় দেখছি
এরশাদ হয় শেম” টাইপের কবিতা।
এর মাঝেই খুব উৎফুল্ল নাকি লজ্জিত হয়ে চেয়ার ছেড়ে আসার সময় একটা ফর্সা সুন্দরী মেয়ে হোচট খেয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল, আক্কু ভাই সহজাত অভ্যস্ত ভঙ্গিতেই তাকে ধরে ফেললেন। যাক কোন অঘটন ঘটল না। ততক্ষণে মামার মুখের পাটি খুলতে খুলতে প্রায় একটা ইদুরের গর্তের মতো হয়ে “হা” গিয়েছে।
মামা এমন হা কইরা রইছ ক্যান, মুখ বন্ধ কর। মামা মুখ বন্ধ করতে করতে শুধু বললেন ইসসসসস...
মনে মনে ভাবলাম এই ধরণের আতেলরাই তাহলে স্কুল-কলেজ যেখানে মেয়েমানুষ দেখা যায় ভিড় করে থাকে। হায়রে আতেলের দল!
সবার শেষে মামার সময় এলো ছবি তোলার। চেয়ারে বসে কোট টাই সব ঠিকঠাক করে দুটো স্নাপ নেয়ার পর আক্কু ভাই টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন মার্কা হাসি দিয়ে বললেন “ঠিক আছে হইছে”। মামা উঠে আসার সময়ই বলা নাই কওয়া নাই ছাদে ঝুলানো স্পট লাইটটা খসে পড়ল মামার মাথার উপর। আহারে মাত্রই টাক গজাতে শুরু করেছে মামার মাথায়!
সেই টুকটাক টাক গজানো মাথায় হাত দিয়েই মিজান মামা আক্কু ভাইকে বলে উঠলেন “ঐ মিয়া মাইয়াডা পড়তে গেছে খপ কইরা ধইরা ফালাইলেন, বাত্তিডা ধরতে পারলেন না?”
আক্কু ভাই পই পই করে বললেন “ভাই ঐটাতো আমার উপরে পড়ে নাই যে ধরমু”
হ খালি মাইয়া মানুষ হইলেই ধরেন...
সদা হাসিখুশি আক্কু ভাইও এইবার ক্ষেপে গেলেন, “ঐ ব্যাডা বাইর হ দোকান থেইকা, গত দশ বছরে আমার দোকানের একটা স্ক্রু খুইলা পড়ে নাই, ব্যাডা ফাজিলের ফাজিল তুই কি না কি পাপ করছস, আর তেজ দেখাস আমার লগে!
পাপের বীজ বুনবা তুমি
সারা জীবন ভর
শাস্তিখান পাইতে গেলেই
আমারে কও ধর”
ছড়ার তালে তালে এক প্রকার ঘাড় ধরেই বের করে দিলেন মামাকে।
জিদের কারনে মামা এই গরমেও গায়ে জড়ানো কোট টাই আর খুললেন না। রিক্সায় করে ফিরছি পাশে মামা ধোড়া সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছেন।
শোন মামা তোমার সাথে কোথাও যাইতে এখন আমার দশবার ভাবতে হবে। কোথায় কোন চিপায় লইয়া গিয়া মাইর খাওয়াইবা কে জানে!
ঐ বেটা একদম কতা কবি না, চান্দি গরম হইয়া রইছে...
হ হেইডা তো দেখতাছিই, ধোয়াও মনে হয় বাইর হইতাছে...
মামা ভয়ংকর কিছু বলতে যাচ্ছিলেন চোখমুখ খিঁচে, ঠিক সেই সময়ই আকাশ থেকে মুরগীর নাড়িভুড়ি উড়ে এসে পড়ল মামার মাথায়। দুজনেই নির্বাক হয়ে গেলাম। আশে পাশে কোন বাড়ি ঘরও নেই। আকাশে শুধু কয়টা চিল উড়তেছে। কে করলো এই কাম!
না, মামা তোমার সাথে চলাফেরা আমার জন্য নিরাপদ না। কখন জানি আমার মাথায়ও কি পড়ে!
কোন ভাবে এ কথাগুলো বলেই লাফিয়ে রিক্সা থেকে নেমে দৌড়ে বাসে উঠলাম। আহা শান্তি।
সন্ধ্যায় মামা বাসায় ফিরলেন। মামার গা ভর্তি তরকারীর খোসা, মাছের আঁশটে লেগে আছে কোটে, টাইয়ে। শরীর থেকে এ গুলোর যে গন্ধ বেরুচ্ছে তা অনেকটাই কাজলা ডাম্পিং পয়েন্টের কথা মনে করিয়ে দেয়। মাথা থেকে এখনো নোংরা পানি ঝরছে।
কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, মামারে তুইতো ফাল দিয়া আমারে থুইয়া আইসা পড়লি, একবারও আমার কথা ভাবলি না। তুই আসার পরে বৃষ্টি শুরু হইল, রিক্সাওয়ালারে কইলাম ভাই আপনে একটু বসেন আমি বৃষ্টিতে মাথাডা একটু ভিজাই। তুইতো দেখছসই মাথায় কি পড়ছিল! রিক্সা থেইকা নাইমা যেই আকাশের দিকে তাকাইলাম বলা নাই কওয়া নাই ইয়া বড় বড় শীল পড়া শুরু হইল, দেখ দেখ চান্দিডা এখনো ফুইলা রইছে। দৌড়াইয়া রিক্সায় উঠলাম শীল পড়াও বন্ধ। রিক্সার হুড তুইলা রওনা দিলাম, বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায়ও গাড়ী কইমা গেছে। ক মামা মোড়ের বড় বিল্ডিংটার দোতলা থেইকা বালতি ভরা ময়লা ফেলাইয়া দেখ আমার হাল কি করছে!
মামার ভয়াবহ অবস্থা দেখে বেশ মায়া হচ্ছিল। তবে তার বলার ভঙ্গিতে ভেতরে ভেতরে হাসিতে ভেঙ্গে পড়ছিলাম।
শোন মামা সেই যে স্টুডিওর স্পট লাইট থেইকা শুরু হইল বাসা পর্যন্ত তো চলছেই। কয়ডা দিন তুমি আর বাড়ি থেইকা বের হইও না।
কথায় আছে না কয়লার ময়লা ধুইলেও যায় না। মামাও আমার কথা শুনলেন না। প্রতিদিনই গা ভর্তি কিছু না কিছু নিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। তার ঘরটা একটা মিনি ময়লার জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই আক্কু ভাইয়ের স্টুডিওর কথা মনে পড়ে গেল। মামাকে বললাম
আচ্ছা মামা সত্যি কইরা কওতো মাইয়াডা যখন পইড়া যাইতেছিল আর আক্কু ভাই নায়কের মতো ধইরা ফালাইল তুমি কি ভাবছিলা?
এত্ত সুন্দর একটা মাইয়া কেমন বুইড়া আক্কু ভাইয়ের উপর গিয়া পড়ল। আমি মনে মনে কইলাম “ইসসসস যদি আমার উপর পড়তো!”
ব্যস্ সব ঝামেলাতো ঐহানেই বাধছে, তোমার ইচ্ছা পুরণ হইয়া গেছে।
ব্যাডা ফাইজলামী করস? কয়দিন ধইরা পড়তাছে কাকের গু, পোলাপাইনের নেংটি, তরকারীর খোসা, মাছের আঁইশটা... সুন্দরী না হোক একটা মাইয়াতো পড়লো না!
আরে বলদা মামা তুমি কিনবা লাউ আর তার স্বাদ যদি চাও বিরানীর মতন, পাইবা?
মানে কি?
তুমিতো আর কও নাই যে “আহা মাইয়াডা যদি আমার উপর পড়তো!” তুমি কইছো যদি তোমার উপর পড়তো! আইচ্ছা একটা জিনিসও কি তোমার সামনে পিছে পড়ছে? সবইতো তোমার উপরেই পড়ছে, নাকি!
ঠিকই কইছসরে মামা। আমি হালায় আসলেই একটা বলদা। ইস্ যদি ঠিক কইরা কইতাম!
দেখো মামা সেইটাও ঠিক হইত না। তুমি কেন চাইবা মেয়েরা তোমার উপরে পড়ুক? এইটা কোন সুস্থ্য চিন্তা হইল। আগে চরিত্র ঠিক করো।
মামারে যা হওয়ার হইছে এখন মুক্তির পথ দেখা।
জানি না সত্য কি না তবে শুনছি তাঁরা ঝড়ে পড়ার সময় কিছু চাইলে সে ইচ্ছা পূরণ হয়।
চল তাইলে তাঁরা খুজি।
চিন্তা কইর না রাইতে খুজবনে...
০৭ জুন - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪