একটা ব্যর্থ নীল ছাতার গল্প

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

শায়ের আমান
  • ৯২
ক.
ক্র্যা-এ-এ-এ-এ-চ্‌!

গাড়িটা থামতে থামতে পূর্ণ বেগে প্রাণপণে আবার ছুটতে শুরু করে। ইশরাত বাস থেকে নেমে প্রচন্ড বাতাস আর বৃষ্টিতে নীল রঙের ছাতাটা সামলানোর চেষ্টা করছিলো। বাতাস আর বৃষ্টির ঝাপটায় সে চোখ বন্ধ করে উড়ে চলে যেতে চাওয়া ছাতাটার বডি টেনে ধরে ঠিক করার এক পর্যায়ে রাস্তার প্রায় মাঝখানে যখন চলে আসে হঠাৎ, দ্রুত বেগে আসতে থাকা প্রাইভেট কারটির থামা বা পাশ কাটানোর উপায় কিংবা সময়- কোনোটাই ছিলো না।

খ.
আয়নার সামনে চুলগুলো ঠিক করতে গিয়েই চোখে পড়ে পেছনে জানালার ওপাশ থেকে ফারুখ তাকিয়ে আছে। কিঞ্চিৎ অস্বস্তি সামলে, সে একবার ফিরে দেখে আবার চুল ঠিক করায় মনোনিবেশ করে! ফারুখ অত্যন্ত হতাশ আর বিরক্ত হয়ে চলে যায়। প্রথম দিকে রহস্য থাকলেও দ্রুতই মূল ঘটনা বের হয়ে আসে। গ্রামে নতুন তরুণী ডাক্তারটি আসার পর থেকেই সাইফুলের এই ব্যাপক পরিবর্তন। এখন সে আগের মত পাড়ার যুবকদের সাথে বিড়ি-সিগারেট টানতে টানতে আড্ডা দেয় না। কালেভদ্রে যাকে প্যান্ট পড়তে দেখা যেতো, সে এখন লুঙ্গি পড়াই ভুলে গেছে! চুলে তেল, গায়ে সুগন্ধি, আরো নানা কায়দায় শহুরে ভাব আনার তার আপ্রাণ চেষ্টা। গ্রামের ছেলে হয়েও সাঁতার না পারার কারণে এতোদিন মাঝে মধ্যে হাসির খোরাক হতে হতো, এই ঘটনা তাকে বন্ধুদের কাছে পুরোপুরি মুখরোচক হাসির পাত্র বানিয়ে দিয়েছে। তবুও প্রেমিক মন সেসব গ্রাহ্য করে না।
তার দৈনন্দিন কাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে তরুণী ডাক্তারের কোনো সাহায্য লাগে কিনা তা খুঁজে বের করা। একবার যদি সেটা বের হয়, হোক তা দোকান থেকে একটা কোক অথবা উপজেলা মার্কেট থেকে পাপোশ- সাইফুল ছাড়া এ কাজ করার অধিকার আর কারো নেই!

গ.
অনেকগুলো দিন চলে যায়। ভালোবাসার অনুভূতি সাইফুলের পুরোটা দিনযাপন গিলে খায়। তরুণী ডাক্তারকে নিয়ে সুখী প্রেম-কল্পনা তাকে বিমোহিত করে। হঠাৎ করেই একটা আফসোস হয়। সেই ৭ বছর আগে স্থানীয় ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে টানা দুই দুইটা দিন ক্লাস করার পর ঐ পথে আর পা মাড়ানো হয়নি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে, সে ভাবে- ইস্‌! লাইফটা যদি বাংলা সিনেমার মত হতো, এক রাতেই এম এ পাশ!

ঘ.
ছাতাটা অদ্ভুত সুন্দর। কড়া নীল রং ছাতাটা দেখেই সাইফুলের মন জুড়িয়ে যায়। অনেক দিন ধরে টাকা জমিয়ে সে শহরে এসেছিলো নতুন জামা কাপড় কেনার জন্য। ওখান থেকে বাজেট কেটে সে ছাতাটা কিনে নেয়। এই বর্ষায় ইশরাতকে ছাতাটা উপহার দিবে- ভাবতেই সাইফুলের মন খুশিতে ভরে উঠে!

ঙ.
ডাক্তার ইশরাতের থাকার ঘরের সামনে পা রাখতেই বুকে ধাক্কা খায়। জিনিসপত্র-ব্যাগ সব গুছানো। সাইফুলকে দেখেই ইশরাত বলে উঠে, “কী সাইফুল ভাই, দুই দিন ধরে আপনার কোনো খবর নাই, আমি আজ চলে যাচ্ছি, শহরে গেলে অবশ্যই ফোন করে আমাদের বাসায় চলে আসবেন।”
সাইফুল কিছু বলতে পারে না। মাথায় কিছু ঢুকছে না তার। অজান্তেই ছাতাটা বাড়িয়ে দেয়।
ইশরাত চলে যাওয়ার পর প্রচন্ড বৃষ্টি নামে। যারা দেখেছে প্রেমের শেষ দৃশ্য, তাদের কয়েকজন তাকে খোঁচা মারে, হাসাহাসি করে। সে কিছু বলে না। হাঁটতে থাকে একমনে। হাঁটতে হাঁটতে শংক নদীর ব্রিজে পৌঁছে যায়। ব্রিজের রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে পা গলিয়ে বসে থাকে। সাইফুল কাঁদে। অনেকক্ষণ যাওয়ার পর, বৃষ্টি কিছুটা কমে, আশেপাশে একবার দেখে হঠাৎ ব্রিজের রেলিংয়ের উপর সে উঠে দাঁড়ায়। হাত দুইটা দুই পাশে প্রসারিত করে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইশরাতের মুখ ভেসে উঠে। সুখ জাগানিয়া অনুভূতিতে বন্ধ চোখে সাইফুল হাসে। এরপর শরীরটা পাখির মত শূন্যে ভাসিয়ে দেয়!
আর ঐ দিকে, রাস্তা থেকে কিছু দূরে ছিটকে পড়া, ইশরাতের শরীরের প্রতি ফোঁটা রক্ত বৃষ্টির সাথে ভেসে ভেসে যাচ্ছিলো!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শায়ের আমান @amar ami - জেনে খুশিই হলাম। ধন্যবাদ।
শায়ের আমান @সূর্য - ধন্যবাদ ভাইয়া। তবে সত্য কথা হচ্ছে আমি সাহিত্য সম্পর্কে কিছু জানি না। দেখে-পড়ে নিজের মত করে অল্প লেখার চেষ্টা করি। লিখে শান্তি পেলেই আমার শান্তি, তা যেভাবেই লিখি না কেনো! হোক পানির মত সোজা অথবা অনেক প্যাচানো, বাস্তব কিংবা অবাস্তব! ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
amar ami ভালই লাগলো....
সূর্য বেশ সুন্দর করে এগিয়েছে গল্প। তবে সাইফুলের জায়গায় আমি হলে "নতুন ডাক্তার"কে নিয়ে স্বপ্ন দেখতামকি না যথেষ্ট সন্দিহান। গল্পের বাক্যের ধরন আমাদের মৃন্ময় মিজানের সাথে মেলে, অহেতুক বকবকানি নেই।
শায়ের আমান @মিজানুর রহমান রানা - হা হা ধন্যবাদ।
মিজানুর রহমান রানা ইশরাতের মুখ ভেসে উঠে। সুখ জাগানিয়া অনুভূতিতে বন্ধ চোখে সাইফুল হাসে। এরপর শরীরটা পাখির মত শূন্যে ভাসিয়ে দেয়!
শায়ের আমান @সুমন কান্তি দাস - জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ এবং শুভকামনা রইলো।

০৬ জুন - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪