কেউ বিশ্বাস করবে না বাসায় আমাকে চা দেয় না। গত আধ ঘন্টার মধ্যে এটা তিন নম্বর চা। তারেক'র দোকানের ৫ টাকা দামের চা খেতে খেতে আমাদের সন্ধ্যার আগ থেকে রাতের প্রথম ভাগের শেষ পর্যন্ত কেটে যায়। এর মধ্যেই জাহেদ গিটারে টুংটাং শুরু করে দেয়। সিএনজি থেকে নামতে নামতে রাব্বীর চাইনীজ হাসি। চেহারা ওর চাইনীজদের মত, তাই চাইনীজ হাসি। ওর আর একটা হাসির নাম বার্মীজ হাসি! জোরপূর্বক হাসিটার নাম বার্মীজ হাসি। সিএনজি থেকে নেমে আমাদের দিকে তাকিয়েও না তাকানো হাসির একটা বিশেষ মানে আছে- বাসা থেকে ডিরেক্ট সিএনজি নিয়ে আসছি! এরকম আমরা প্রায় করি। প্রতিদিনের বাস ফেলে যদি কখনো কারো গাড়িতে লিফট জুটে যায়, গাড়িটা ঠিক যেখানে আমরা এমএম আলী রোডে আড্ডা মারি তার পাশে পার্ক করে খুব ভাব নিয়ে নামি। ভাবটা এমন- “ওফ! তোরা কী বাসে চড়ে আসোছ? বাসে ক্যামনে চড়ে মানুষ!”
রাব্বীর চাইনিজ হাসি আমাদের দিকে আসতে আসতে ম্লান হতে থাকে! ১৪-১৫ বছরের যে ছেলেটি জাহেদের পাশে বসে ছিলো, সে আবার জাহেদকে পটানোর চেষ্টা করছে। সে গিটার শিখতে চায়, কিন্তু জাহেদের টাইম নাই! এটা অবশ্য পুরোপুরি সত্য নয়। আমরা শুধু শুধু ভাব ধরি, এটা তার একটা অংশ।
দোকানের সামনে কাষ্টমার বসার জন্য যে বেঞ্চটা রাখা, তাতে পিঠের ব্যথায় কাতর হয়ে শুয়ে থাকা সাদ আওয়াজ দেয়, “ধাপ্ বেটা, কী বাজাস এগুলা! জ্যাজ বাজা, জ্যাজ!”
সম্প্রতি আমি আর সাদ মতের মিল না হওয়াই আমাদের দুই সদস্যের ব্লুজ ব্যান্ড 'কিউবান ব্লুজ' থেকে বের হয়ে নতুন জ্যাজ ব্যান্ড করছি 'ম্যাংগো'! আমি জ্যাজ এর এখনো কিছু জানি না, সাদ ইন্টারনেট ঘেঁটে ৩ টা কর্ড বের করছে অবশ্য।
“সাকসেস হয় নাই?”
আমরা বাংলাদেশ মহিলা সমিতির মাঠ থেকে বিকেলে ফুটবল খেলে বেরুচ্ছিলাম। ৫ গোল করার পরও সবাই আমাকে সমানে বাশঁ দিয়ে যাচ্ছে! কারণ আমি কম করে হলেও ১০ গোল মিস করছি! তো গেট দিয়ে বের হতেই আমরা একদল পিচ্চি মেয়ের সামনে পড়ে যাই। ওরা সমস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠে “এই আমাদের স্কুলে ছেলে ক্যানো?” আমরা বিব্রত হাসি চেপে রেখে দ্রুত পা চালাই। পিচ্চিগুলো পেছন থেকে ক্রমাগত চিল্লাফাল্লা আর আমাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। হঠাৎ একজন বলে উঠে, “ঐটা ফারিয়া আপুর জামাই!” এরপর ওরা সবাই এই লাইনটা আওরাতে থাকে। আমি পেছনে ফিরে দেখি পিচ্চিগুলোর সাথে একটা বড় আপুও আছে, বুঝলাম ঐটাই ফারিয়া আপু। রিয়াজ আর রাব্বী ঐ পিচ্চিগুলোর পাশে ছিলো। সিধামত একটার থেকে জিজ্ঞেস করে ফারিয়া আপুর প্রাথমিক পরিচয়টা নিয়ে আসে।
অনেকদিন পর আমাদের আড্ডায় একটা নতুন টপিক আসে- ফারিয়া আপু! ক্ষ্যাপানো হয় ক্যানো ঐ কথাটা বললো! কোন কাহিনী নিশ্চয়ই আছে! যদিও কোন কাহিনী আসলে ছিলো না। পিচ্চিগুলো কেউ একজনকে দেখে ভালো লেগেছিলো হয়তো, তাই ফারিয়া আপুর জামাই বানিয়ে দিয়েছে।
এর মধ্যে অগ্রগতি যেটা হয়, কোচিং হোম এর ঠিকানা বের করে আনে রিয়াজ। মজা করতে করতেই আগ্রহটা জন্ম হয়। একদিন আমরা সাহস করে তার কোচিং হোম এর সামনে হাজির হই। প্রায় দুই ঘন্টা বিভিন্ন ব্যাচ এর আসা-যাওয়া দেখতে দেখতে এক সময় সে বেরিয়ে আসে। বান্ধবীদের সাথে হাসতে হাসতে বের হচ্ছে। বুকে জ্বলুনী ধরার মতই হাসি। আমরা একটু দূরে সরে যাই। এভাবে মাঝে-মধ্যে গিয়ে আমরা দূর থেকে দেখে আসি। বেশ কয়েক সপ্তাহ চলে যায়। একদিন তার চোখে ধরা পড়ে লুকোচুরি। প্রথমে কিছুটা বিস্ময়, তারপর চেপে রাখা হাসি, শেষে জোরপূর্বক মুখে এঁকে নেয়া বিরক্তির ভাব দেখিয়ে চলে যায়। ত্রাতা রিয়াজ মেয়েটির কোন এক বান্ধবীকে ভুজুংভাজং দিয়ে মোবাইল নাম্বার নিয়ে আসে। এরপর শুরু হয় বুদ্ধি দেয়ার পালা। কী ভাবে, কখন, কী উপায়ে কল করা যায়! অনেক বুদ্ধি, অনেক সাহস দেয়ার পরও আপাত দৃষ্টিতে সবার চোখে সবচেয়ে ডেসপারেট ছেলেটি শেষ পর্যন্ত কল দিতে পারে না। এইটা নিয়ে শুরু হয় পঁচানী দেয়া!
তবে এভাবে সুযোগ পেলেই কোচিং হোম এর সামনে গিয়ে দেখে আসা ইতিমধ্যে আমাদেরই যথেষ্ট দৃষ্টিকটু লাগছিলো, সে যখন সত্যি সত্যি বিরক্ত হতে শুরু করলো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এভাবে আর না, সরসরি কথা বলাই শ্রেয়। কপালে যা আছে।
যেই ভাবা সে-ই কাজ, আজকে আমরা গিয়েছিলাম চার জন। সে যখন বের হয়ে হেঁটে আসছিলো তিন জন দূরে সরে যায়, একটু এগিয়ে যেতেই একটা ছেলে সামনে আসে, সে পাশ দিয়ে চলে যায়। ছেলেটি বলে, “আপনি ফারিয়াকে কিছু বলবেন? কোনো কাজ আছে? আমি ওর বয়ফ্রেন্ড, আমাকে বলতে পারেন!”
রাব্বী আবার জিজ্ঞেস করে, “কী রে...সাকসেস হয় নাই?” রাব্বীর মুখে বার্মীজ হাসি।
রাব্বীর কথার কোনো জবাব দেয় না পাভেল। মাঝখান থেকে রনি খুব নিচু স্বরে বলে 'ফারিয়া আপুর জামাই'! এই দু:খের মাঝেও আমরা মুখ চেপে হাসার চেষ্টা করতে করতে রনির সাথে হাই-ফাইভ দিয়ে অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়ি। পাভেল বেচারা, বুঝতে পারি, উপরে হাসলেও ভেতরে কষ্ট আর অপমানে জ্বলে যাচ্ছে। ওকে মূলত সারাক্ষণ ফারিয়া আপুর জামাই বলে বলে কান জ্বালাপালা করে প্রেমে পড়ার ব্যবস্থাটা আমরাই করে দিছি। বেচারার তেমন কোনো দোষ নেই।
ও হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়। হাঁটতে শুরু করে। জাহেদ সাদ থেকে গিটার কেড়ে নিয়ে আন্দাজে মেক্সিকান মিউজিক বাজাতে থাকে। পাভেল কিছুদূর যেতেই আমরাও উঠে দাঁড়াই। মন খারাপ হলে আমরা উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটি। যে দিকে মন চায়। আজকে অনেক দূর হাঁটতে হবে।
০৬ জুন - ২০১১
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪