এলে তাহলে! বলে সামনে এসে দাঁড়ায় সোমা। ধুয়া উড়া চায়ের কাপে এখনো ঠোঁট লাগায়নি জাহিদ। পরিচিত কণ্ঠ শুনে সামনে তাকায় ও। 'আমি কথার বরখেলাপ করি না। বলে পিরিচে করে কাপটা নিজের পাশে টুলের উপর নামিয়ে রাখে জাহিদ।
চিনতে পেরেছো তাহলে?
চিনবো না! ছবি চেয়েও সুন্দর তুমি।
ভুল বললে, পুরুষরা সুন্দর হয় না, হয় স্মার্ট।
ঐই হলো আর কি।
কখন এলে?
এখুনি
তুমি?
মিনিট পনেরো হবে।
পরিচয় হও, এই হলো আমার বান্ধবী রেখা।
স্লামাইকুম
ওয়ালাইকুমসালাম, বেশ সুন্দর নাম তো আপনার!
সুন্দর না ছাই, সবাই বলে ভারতের নায়িকা।
হো হো করে হেসে উঠে তিনজন।
বেশ তো ঐ পদবীটাই ক'জনের পায় বলুন।
আপনারা বহেন সাব, সামনে খালি টুল দেখিয়ে বলেন, পঞ্চাশ উধর্্ব লোকটি। এর কথায় যোগ দেয় জাহিদ বলে,
হ্যা বসুন, চা খান।
না না চা খাবো না, পায় এক সাথে বলে উঠে দু'বান্ধবী। দোকানী খুব জৌলুশ মনের মানুষ, এর মধ্যেই আরো দু'কাপ চা বানিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয় লোকটা।
কোথায় যাবে? প্রশ্ন করে জাহিদের চোখে চোখ রাখে সোমা।
কি অপূর্ব চাহনী, অপলক দৃষ্টিতে জাহিদও তাকায় সোমার দিকে। এ সময় জাহিদের মনে বেজে উঠে কবি গুরুর বাণী
"শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ্ তুমি নারী
পুরুষ গড়েছে তোমার সৌন্দর্য সঞ্চারি
আপন অন্তর হতে...
পরেছে তোমার 'পরে প্রদীপ্ত বাসনা
অর্ধেক মানবী তুমি, অর্ধেক কল্পনা\"
পুরুষের চিত্তেই সৌন্দর্যময়ী নারীর জন্ম। তাই জগতের সমস্ত সৌন্দর্যে পুরুষ নারীকেই প্রত্য করে। নারী পুরুষের মনের সৃষ্টি। পুরুষের মনে আশা আকাঙ্খ আদর্শ নারীতে রূপায়িত হইয়া তাহাকে অতো সুন্দর ও মধুর করিয়াছে। কেবলমাত্র বিধাতাই নারীকে সুন্দর কবিয়া সৃষ্টি করেন নাই, পুরুষের কামনা-বাসনা-কল্পনা তাহাকে অপরূপ সৌন্দর্য় ও মাধুর্য দান করিয়াছে। কবি ও শিল্পীর নিজের মনের মাধুরী দিয়াই নারীকে সৌন্দর্য ও মাধুর্যের মহিমান্বিত কবিয়াছে"
কি দেখছো অমন করে। কথা বলছো না যে?
সোমার কথায় ধাক্কা খায় জাহিদ, বলে না তো কিছু দেখছি না দেখছি শুধু তোমাকে আর তোমার সৌন্দর্যকে। জাহিদের কথায় লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে মাথা নিচু করে সোমা।
হ্যা কি যেনো বলছিলে।
কোথায় যাবে।
হ্যা কোথায় যাবো! আচ্ছা রেখা আপনিই বলুন কোথায় যাওয়া যায়।
যাবেন আপনারা, আমি বলবো কি করে!
কেনো আপনি যাবেন না?
যদি ডিষ্টার্ব হয়।
তা কেনো, আপনি না গেলে কি জমবে?
ঠিক আছে যাবো তবে বডিগার্ড হিসেবে, আপনারাই ঠিক করুন কোথায় যাবেন।
চলুন আপার বাসায় যাই। ওখানে একটু কাজও আছে।
ও বুঝেছি, এক ঢিলে দুই পাখি, রথও দেখা কলাও বেচা।
বাহ্, তুমি বেশ পণ্ডিতের মতো কথা বলো তো, বলে সোমার দিকে তাকায় জাহিদ। চোখ উচু করে মুখ টিপে হাসে ও, কথা বলে না।
চলুন, বলে উঠে দাঁড়ায় রেখা। চা'র বিল পরিশোধ করে পা বাড়ায় তিনজন।
কালো ট্রাঙ্কি্যাবে এক সাথে তিনজন বসতে কষ্ট হলেও মনের আনন্দে ছুটছে ওরা। জাহিদের পাশে সোমা, রেখা তার পরে। ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে এক গাদা কাগজ বের করে রেখা, বাড়িয়ে ধরে জাহিদের দিকে।
কি এগুলো?
কবিতা
মানে আপনি কবি!
না তা নয়, তবে চেষ্টা করছি একটু একটু লিখতে।
দেখি কেমন হয়েছে?
মনে হয় ভালো না।
নিজের লেখা নিজের কাছে সবারই এমন মনে হয়। আপনি তার ব্যাক্রিম হবেন কেনো। সোমা এক বার জাহিদের দিকে একবার রেখার দিকে তাকায়। বলে, হ্যা লেখকরা লেখকের কদর বুঝে, আমরা শ্যালায় ভেলুলেস।
আরে না না, তুমি ভেলুলেস হবে কেনো, তুমি হলে আমাদের মধ্যমনি। আকাশে বাতাসে আজকের যা আয়োজন সব তোমাকে ঘিরে। তোমার জন্যই তো আজ আমরা ভেসে বেড়াচ্ছি হাওয়ার ভেলায়। বলে জাহিদ তাকায় সোমার দিকে। জাহিদের বুকে কনুইয়ের গুতা মেরে সোমা বলে, হয়েছে হয়েছে কথায় তো বেশ পটু, কিন্তু...।
কি থামলে কেনো, বলো?
না থাক।
এই হলো মেয়েদের দোষ। কথার অর্ধেক বলে থেমে যাওয়া।
দেখুন ভাই মেয়েদের বলবেন না, আমিও একজন মেয়ে, বলে চিমটি কাটে রেখা।
হ্যা আমাকে একলা পেয়ে...
না, এখনো কিছু করিনি তবে রেডি থাকো, বলে সোমা।
ওরে বাবা এই ভরদুপুরে কি বিপদেই না পড়লাম। হো হো করে হেসে উঠে সবাই, ঠিক এ সময় গাড়ির চাকা পাঞ্চারের বিকট শব্দে থেমে যায় সব আনন্দ।
কি হলো ড্রাইভার ভাই?
স্যার সবাই একটু নামেন, চাকাডা বদলাইয়া লই। গাড়ির দরজা খুলে ওরা নামকেই পাশ দিয়ে সাঁ করে চয়ে যায় একটি ডবল ডেকার বাস। এক দলা ধুলো এসে ভিজিয়ে দেয় তিনজনের শরীর। চুইংগাম কিনে আনে জাহিদ, খোসা ছাড়িয়ে একফালি মুখে পুরে বলে সোমা, ভাগ্যটাই খারাপ। তা না হলে আজকের এই দিনে এতো বাধা কেনো? প্রথম দিনেই এতো ঝামেলা, না জানি ভবিশ্যৎ কেমন।
ছোট খাটো আওয়াজ শেষে আধ ঘন্টা পর ঠিক হলো গাড়ি। আপার বাসায় ওদের পৌছাতে সময় লাগলো পুরো দু'ঘন্টা। তরজনি আঙ্গুলে কলিংবেলে চাপ দিয়ে অপো করে তি গোয়েন্দা। ভেতর থেকে আপার গলা
কে?
আপা আমি জাহিদ।
এই সময় কোথা থেকে।
আগে খুলেন, আমি একা নই, ত্রিরত্ন।
দরজা খুলেই বলে আপা, হ্যা তাই তো, এসো এসো ভিতরে এসো। ড্রইংরুমে ওদের বসতে বলে জাহিদের উদ্ধেশ্যে বলেন তিনি, আমার জিনিস এনেছো?
জি আপা এনেছি এই নিন। হাতে ধরে রাখা প্যাকেটটি পরিপাটি করে গোছালো ধরনে মানুষ রোজি না দিকে বাড়িয়ে ধরে জাহিদ। প্যাকেট হাতে নিয়ে বলেন আপা, তোমরা বসো আমি আসছি, বলে ভিতরে চলে যান তিনি। ফিরে আসে কিছুণ পরে। হাতে ট্রে, কাঁচা আমের ভর্তা, ছোট ছোট করে কাটা তরমুজের টুকরা, রসমালাই আর চিনে বাদাম ভাজাসহ বাটিগুলো ট্রে'র উপর সাজানো। টি টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে আপা বলেন, নাও যার যেটা পছন্দ খাও আর গল্প করো আমি দুপুরের খাবার রেডি করি। জাহিদ বাধা দিয়ে বলে,
না আপা দুপুর প্রযর্ন্ত থাকবো না, চলে যাবো একটু পরেই। এসেছি শুধু আপনার বইগুলো দেওয়ার জন্য।
তুমি না হয় না খেলে, যারা সাথে আসছে তাদের তো খাইয়ে দেয়া উচিৎ।
না না, আমরাও খাবো না আপা, অযথা ব্যস্ত হবেন না, এক সাথে বলে উঠে দু'জন।
আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা গল্প করো, বলে বের হয়ে যান আপা। এটা সেটা নিয়ে অনেকণ গল্প করে তিনজন। সময় গড়ায় অন্দকারে হাওয়ার ভেতর, টের পায় না কেউ। বিদায় নেয় সবাই ওখান থেকে। আসার সময় বার বার বলে আপা, আবার এসো কিন্তু। তা আগে ফোন করো।
আচ্ছা আপা তাই করবো, বলে সায় দেয় জাহিদ।
পুরো পঁয়তালি্লশ মিনিট স্ট্যান্ডে অপো করে বাসে উঠে ওরা। সাভারের লাইনে সিটিং সার্ভিসগুলোর বেহাল অবস্থায়, একটা ফেল করলে তো আরেকটার জন্য ঘন্টা পার। তার পরও ভোগান্তির শেষ নেই। টঙ্গি ষ্টেশন রোডের টিকেট কাটলেও বাস ড্রাইভার নামিয়ে দেয় কামার পাড়ায়। আম-কাঁঠাল পাকার তীব্র গরমে দলের সবারই অবস্থা কাহিল। ট্যাঙ্ী নয়, সিএনজিও নয়, অবশেষে এক রিকশায় তিনজন। বসার সমস্যা হলেও ভালোই লাগছিলো। সোমা এমনি চেয়ে ছিলো হয় তো। কতোদিন অপোর করে মনের মানুষকে পেয়েছে কাছে। তাও যদি থাকে দূরে দূরে তাহলে!... তিন চাকার যানে আপ এ বসেছে সোমা, ডাউনে জাহিদ, পাশে রেখা। পড়ে যাওয়ার ভান করে সোমা পেচিয়ে ধরে জাহিদের গলা, গালে গাল চেপে ধরে আড়াল করে রোদ। প্রথম দিনের এই অভিযানে সফল হয় দু'জন। ইচ্ছে করেই লংড্রাইভ করায় রিকশাওয়ালাকে। যতই ঘনিয়ে আসে গন্তব্যের স্থান, ততই দ'ুজনার মধ্যে বেড়ে যায় হৃদয়ের স্পন্দন। আবার করে কেমন করে পাবে ওরা একে অপরকে এমন করে কাছাকাছি?