(১) “সারাদিন বাসায় বসে বসে কি কর একটা সামান্য চিরুণী দেখে রাখতে পার না?” অনেকটা ধমকের সুরে কথাগুলো বলে মিঠু ঘর থেকে অফিসের জন্য বেরিয়ে যায়। যাকে বলা হল সে হল লিজা ।ওরা স্বমী-স্ত্রী। অবশ্য সমাজের চোখে। বাস্তবে নয়।এটা ওদের সমঝোতার সংসার। মিঠুর আচরণ দিনকে দিন খারপ হয়ে যাচ্ছে এটা গত কিছুদিন ধরে সে লক্ষ্য করছে।কারন কিছুটা হলেও সে আন্দাজ করতে পেরেছে।নিচতলার নতুন মেয়েটা সুমির প্রতি ওর নজর পড়েছে।পুরুষ মানুষ আর বর্ষার আকাশ কোনটাকেই বিশ্বাস করা যায় না।গ্রাম থেকে শহরে এসেছে মেয়েটা চাকুরীর জন্য।বোন আর দুলাভাইয়ের সাথে থাকে।কি সুন্দর মুখায়ব,চিত্রা হরিণের মত দেহের কাঠামো দেখেতো ওরই লোভ হয় তাহলে মিঠুতো পুরুষ মানুষ-ওর লোভ হবেনা কেন? এর একটা বিহিত করা দরকার। নইলে বালির বাধের মত ওর সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যাবে ! গত এক বছর যাবত ওরা একসাথে আছে।বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে ওরা স্বমী-স্ত্রী নয়।মিঠুর একবার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু লিজার মতই সংসার করার সৌভাগ্য হয়নি।বংশগত ভাবে মিঠুরা ধনী। ঢাকায় বিদেশী একটা কোম্পানীতে চাকুরী করে পাশাপাশি শেয়ার বাজারে ব্যাবসাও করে।পারিবারিক অবস্থা হিসেবে মুদ্রার ঠিক উল্টা পিঠে লিজার অবস্থান।দুঃখ-যন্ত্রনা-হতাশা-দারিদ্রতা লিজার নিত্য সঙ্গী।সামান্য যৌতুকের ক’টি টাকার জন্য প্রতিনিয়ত স্বমীর অত্যাচার সইতে হত।সেটাকে সে ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছিল কিন্তু স্বমী যখন দ্বিতীয় বিয়ে করল তখন সেই সংসারে টিকে থাকা দুস্কর হয়ে পড়ল।তাইতো বাবা-মায়ের পরামর্শে স্বমীকে তালাক দেয়। প্রথম প্রথম বাবার বাড়িতে ভালই লাগত আর কোন ঝামেলা নেই,কেউ কটু কথা বলতে পারবে না, নির্যাতন করতে পারবে না।কিন্তু দিন যত গড়াতে থাকে ততই শরীর-মন দুটোই বিদ্রোহী হয়ে উঠতে থাকে।ভাই-ভাবী কিংবা বাল্য কালের সখী সবার সাজানো গোছানো সংসার দেখে মনটা হু হু করে কেঁদে উঠে। নিজেকে অপয়া মনে হয়।পাড়া-প্রতিবেশীর নিত্য খোটা খেতে খেতে মনে হয় অসলেই সে অপয়া।যে বাবা মা প্রণের চায়তে বেশী ভাল বাসত তারাও আজকাল কথায় কথায় বলে উঠেন “দুনিয়ায় এত মানুষের মরণ হয় তোর মরণ হয় না কেন?” অবশেষে একদিন ওর বান্ধবী শিখার সাথে ঢাকা শহরে পা বড়ায়।শিখা গার্মেন্টসে অপারেটরের চাকুরী করে।নবম শ্রেণীতে পাড়ার সময় লিজার বিয়ে হয়ে যায়।বিদ্যার দৌড় খুব বেশি ছিলনা বিধায় সেও শিখার সাথে গার্মেন্টসে চাকুরী নেয়।টানা পাঁচ মাস চাকুরী করার পর সে হাপিয়ে উঠল।সেই সকাল আটটায় ফ্যাক্টরীতে যাওয়া তার পর টানা দশ ঘন্টা বার ঘন্টা ডিউটি আর ভাল লাগে না। তাছাড়া পুরুষ সহকর্র্মীদের লোলুপ দৃষ্টি আর সামান্য ভুল ত্র“টি হলে সুপারভাইজারের অকথ্য গালিগালাজে মনটা বিষিয়ে উঠে।সিদ্ধান্ত নেয় আর গার্মেন্টসে চাকুরী করবে না। ঢাকা শহরে বসে বসেতো আর খাওয়া যায় না।টিকে থাকতে হলে কিছু না কিছু কাজ করতেই হবে।এর মধ্যে আশেপাশের বেশ কয়েক জনের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে।তাদের মধ্যে জাহিদ অন্যতম।বেশ হ্যান্ডসাম,সদা হাস্যজ্জল মানুষ।তাকে কোন দিন কেউ অফিসে যেতে দেখেনি কিংবা ব্যাবসার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখেনি কিন্তু সে দিব্য ঢাকা শহরে টিকে আছে।লোকমুখে শুনেছে সে নাকি অনেক কে ভাল ভাল চাকুরী দিয়েছে।প্রথম প্রথম লিজা ওকে আপনি আপনি করে সম্বোধন করত এখন সেটা অবশ্য তুই-তোকারী তে দাড়িয়েছে।সমস্ত শুনে-মেলে জাহিদ বলল: দ্যাখ দোস্ত এইট পাশ দিয়ে ঢাকা শহরে হয় বুয়ার কাজ করা যায় নতুবা গার্মেন্টসে চাকুরী করা যায়। এছাড়া আর কোন চাকুরী করা যায় না। লিজা বলে:ঠিক আছে তুই আমাকে একটা ভাল বাড়ি দেখে বুয়ার কাজ জুটিয়ে দে। - তুই টিকতে পারবি না। - কেন? - কারণ সাহেবরা বাইরে একরকম আর ভেতরে আরেক রকম।তাছাড়া তুইতো একের মাল।বুকে পিঠে মাশাআলা বলে ওর শরীরের দিকে ইঙ্গিত করে। − লিজা হেসে বলে, তুই আসলেই একটা হারামি।জাহিদও হাসল তারপর হাসি থামিয়ে বলল: দোস্ত এক কাজ কর।বিজনেসে নেমে পড়।আমাকে দেখ চাকুরী করি না ব্যাবসাও করি না কিন্তু ইনকাম করি।আমার কিছু লেডি ক্লায়েন্ট আছে ওদের হ্যান্ডেল করে যা পায় তা দিয়ে দিব্যি দিন চলে যায়। লিজা বলে: তার মানে তুই দালাল! স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে জাহিদ বলে: ইজ্জত দিলি না,ল্যাঙ্গুয়েজটাকে একটু মডার্ণ কর - অমি এজেন্ট। লিজা এবার শুকনো হাসি দিয়ে বলল: তা এজেন্ট সাহেব ক্লায়েন্ট হিসেবে আমার বাজার রেটটা কি রকম হবে জানতে পারি কি? জাহিদের চোখ চক চক করে উঠে বলে: তার মানে তুই আমার প্রস্তাবে রাজি। বুক ছাপিয়ে একটা দির্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে অসে লিজার তারপর দাঁড়িয়ে বলে: নারে এতটা দুর্দিন এখনো আসেনি। যদি কখনো আসে তবে অবশ্যই তোকে জানাব। - তুই কি রাগ করলি? শুকনো হাসি দিয়ে লিজা বলে: - দুঃখে পড়লে চামচিকেতেও লাথি মারে আর তুইতো মানুষ।
জাহিদ আরও কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই লিজা বাইরের দিকে পা বাড়ায়।নিজেকে স্রোতে ভাসা শেওলার চাইতেও অসহায় মনে হয়।অসংখ্য বুভুক্ষু বাঘের সামনে সে যেন দাঁড়িয়ে আছে একটু সুযোগ পেলে ওর শরীরটাকে ছিন্নভিন্ন করে দেবে।হঠাৎ বাবা-মায়ের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।সম্ভবত মানুষ অসহায় হলে প্রথমে বাবা-মার মুখটাকেই স্মরণ করে। সেদিনই বাড়িতে যাবার সময় মিঠুর সাথে বাসে দেখা হয়।খুব বেশী কথা হয়নি শুধু ওর ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বলেছিল “ফোন করো আর কোন প্রয়োজন হলে বাসায় এসো।” তারপর মাঝে মাঝে মিঠুর সাথে কথা হত মোবাইল ফোনে।হঠাৎ একদিন মিঠু বলে বসল:এক কাজ কর তুমি ঢাকায় চলে এস। :ঢাকাতো দেখলাম আর ভাল লাগে না।আর সেখানে থাকব কোথায়? খাব কি? একটা চাকুরী দেন। :চাকুরী করার প্রয়োজন কি? আমার বাসায় থাকবে খাবে আর কি লাগে? :কি পরিচয়ে থাকব আপনার বাসায়? :সেটা পরে দেখা যাবে। আগে তুমি এস। : আমি জানি আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না তারপর ও সমাজ বলে একটা কথা আছে। কথাটা শুনে মিঠু হাসে তারপর হাসি থামিয়ে বলে: যে সমাজ তোমার কথা ভাবে না সেই সমাজের কথা তুমি কেন ভাবছ? দেখ আমি সরাসরি কথা বলতে ভালবাসি।তোমাকে আমার প্রয়োজন।জানইতো বাঘ যদি একবার মানুষের মাংস একবার খায় তারপর অন্য কোন মংসে তার ক্ষুধা মেটে না।এটা ঠিক আমি তোমাকে বিয়ে করে বউয়ের মর্যাদা দিতে পারব না তাছাড়া বাকি সবকিছু তোমার জন্য করতে পারব।আশা করি বুঝতে পেরেছ।আর যদি না আস তবে আমার কাছে ফোন করার দরকার নেই। ওপাশ থেকে মিঠু লাইন কেটে দেয়। আরও কিছুদিন বাড়িতে কেটে যায় তারপর আবারও সেই পুরানো রেকর্ড বাজতে থাকে। মনে মনে সিদ্ধন্ত নেয় মিঠুর কাছে যাবে। অবশেষে সে একদিন মিঠুর বাসায় এসে উপস্থত হয়। (২) সাত-সকালে মিঠুর মেজাজটা সপ্তমে উঠে গিয়েছিল কিন্তু নিচে নামবার সময় সুমিকে দেখে সব ভুলে যায়। দু’মাস হল মেয়েটা এসেছে।ওর একটা চাকুরীর প্রয়োজন।সম্ভবত এজন্যই ওকে তোয়াজ করে চলে।মেয়েটার মাঝে শোভার ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়।শোভা ওর প্রথম স্ত্রী। ছাত্রজীবনে প্রেম করে বিয়ে করেছিল। সামান্য একটা ভুল বোঝাবুঝিতে ওদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় প্রায় আট বছর আগে।তারপর পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা শহরে থিতু হয়েছে।সিঁড়ির নিচেই দাড়িয়ে ছিল সুমি চোখাচোখি হতেই মিষ্টি একটা হাসি দেয়।ক’দিন ধরে অফিস যাওয়ার সময় লক্ষ্য করছে কোন না কোন অজুহাতে মেয়েটা ওর সামনে আসছে।বিষয়টা মিঠু বেশ উপভোগ করে।কাছাকাছি হতেই সুমি বলে:কি ব্যাপার চুল এরকম উস্কোখু¯ো‹া কেন? ভাবীর আদরের মাত্রা বেশী হয়ে গেছে নাকি? চুলে আঙ্গুল চালাতে চালাতে মিঠু বলে আগে একটা চিরুণী এনে দাও তারপর বলছি।সুমি তাড়াতাড়ি ঘর থেকে একটা চিরুণী এনে দেয়। চুল আছড়াতে আছড়াতে মিঠু বলে:আমার ঘরে তিন তিনটা চিরুণী অথচ ড্রেসিং টেবিলের সামনে কোন চিরুণী পেলাম না।কোথায় রেখেছে তোমার ভাবীও খুঁজে পাচ্ছে না। যাকগে সে কথা শুক্রবারে কি করবে? : কেন? : না মানে তুমি ফ্রি থাকলে কোথাও বেড়াতে যেতাম। : কেন ঘরে কি বেড়াতে যাওয়ার মানুষ নাই। : তা আছে তবে একই গাড়ি বার বার ড্রাইভ করতে ভাল লাগে না। : ভাল না লাগলে চেঞ্জ করে নেন। : চিন্তা ভাবনা করছি : একটা সত্যি কথা বলেনতো ভাইয়া আপনাদের কি সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে ছিল? মিঠুর অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। মেয়েটা সব জেনে গেছে নাকি? লিজা কি ওকে সব বলে দিয়েছে? হতেও পারে প্রসঙ্গ উঠলে লিজা আর নিজেকে সামাল দিতে পারে না।মত্র কয়েক সেকেন্ডে অনেক প্রশ্ন মাথার মাঝে ঘুরপাক খায়।কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলে: হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন? : না এমনি। আপনি একজন বড় ইঞ্জিনিয়ার ,ভাবী মাত্র এইট পাশ, শুনেছি উনি নাকি গার্মেন্টসেও চকুরী করেছেন কেমন যেন খটকা লাগে। মিঠু প্রসঙ্গ পরিবর্তন করার জন্য বলে: তোমার একাডেমিক কোয়ালিফিকেশান কি যেন? সুমি যেন গর্জে ওঠে: ভাইয়া গত দু’মাসে অন্তত একশো বার বলেছি আমি বি.এ পাশ। আমার সিভি আপনাকে দিয়েছিলাম।বলেছিলেন খুব শিঘ্রি আমার চাকুরী হবে। মিঠু একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলে: সরি সরি মনে পড়েছে। আসলে তোমাকে দেখলে সব কেমন যেন গুলিয়ে ফেলি। ও হ্যাঁ আগামী মাসে আমাদের একটা রিসিপশনিষ্ট লাগবে। সমস্যা নেই এমডির সাথে আমার কথা হয়েছে। তোমার চাকুরী পাকা। : সেতো একমাস আগে থেকেই শুনছি। : আরে না এবারের কথা পাক্কা। : সত্যি হলেই ভাল।তারপর পেছন ফিরে চলে যায়। মিঠু আস্তে করে বলে: তাহলে শুক্রবারে যাচ্ছতো। পিছন দিকে না তাকিয়েই সুমি বলে: শুক্রবার আগে আসুক তার পরে দেখা যাবে। গোটা দিন খুব উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে কাটল মিঠুর। কোন কাজে ঠিকমত মন বসাতে পারল না।সুমির কথা বার বার কানে কাছে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। “আপনাদের কি সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে ছিল”। লিজাকে ভয় নাই। কিন্তু সুমির সাথে ওর ভাব দেখে সত্যি কথা বলে দিতেও পারে যাতে সুমি আর ওর সাথে না মেশে।মোড়ের উপর এসেই লিজাকে ফোন দিয়েছিল কিন্তু সে জানিয়েছে ওদের বিয়ে নিয়ে সুমির সাথে তেমন কোন কথাই হয়নি।আবার এও হতে পারে ওদের আচার-আচরণে এমন কিছু অসঙ্গতি হয়ত সুমি লক্ষ্য করেছে যার জন্য মনে সন্দেহ ঢুকে গিয়েছে।মনে মনে ভাবে ব্যাপার যাইই হোক জায়গাটা পরিবর্তন করতে হবে।সব জানাজানি হয়ে গেলে মান-সম্মান বলে কিছু থাকবে না। ক’দিন পরে একদিন হঠাৎ লিজা মিঠুকে বলল: আমি কি থাকব না চলে যাব? মিঠু অবাক হয়ে বলে: চলে যাবে মানে? কোথায় যাবে? কেন যাবে? : জানিনা কোথায় যাব।তবে এখানে আমাকেতো আপনার আর প্রয়োজন নেই।অভিসারতো ভালই চলছে।আমি কেন কাবাবে হাড্ডি হয়ে থাকব ? মিঠু আলতো করে লিজাকে জড়িয়ে ধরে বলে: কি যে বল তোমার বিকল্প কেউ হতে পারে না। মিঠুর বাহু বন্ধ থেকে নিজেকে এক ঝটকায় সরিয়ে নিয়ে বলে : যদি আমি কোন ছেলের সাথে মিশতাম তাহলে আপনার কেমন লাগত? :অবশ্যই খারাপ লাগত। তবে তুমি বাইরে যা ইচ্ছা করতে পার আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ঘরে যখন থাকবে তখন আমার বউ হয়েই থাকবে। চোখটা ছল ছল করে ওঠে লিজার ।অনেকক্ষন মিঠুর দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।মিঠুর সেদিকে খেয়াল নেই। সে ওর দিকে না তাকিয়েই বলল: আগামী সপ্তাহে আমি আর সুমি লালবাগ যাব তুমি কি যাবে? লিজার ছোখ দিয়ে কয়েক ফোটা অশ্র“ ঝরে পড়ল। সেটা যেন মিঠুর চোখে না পড়ে তার জন্য পিছন ফিরে আঁচলে চোখ মুছে বলল: না। :ওকে।এবার এক কাপ কফি খাওয়ায় আর হ্যাঁ সামনের মাসে আমরা বাসাটা চেঞ্জ করব। এখানে আর ভাল লাগছে না। লিজা কিছু না বলে কিচেনের দিকে পা বাড়ায়। (৩) এক মাস নয় দ’ুমাসেও বাসা পরিবর্তন করল না মিঠু । আসলে ওকে সান্তনা দেওয়ার জন্যই মিঠু মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছিল।সুমির সাথে সম্পর্কটা আরও জোরাল হয়েছে। আগে কোথাও যাওয়ার আগে লিজাকে জানিয়ে যেত কিন্তু এখন আর কোথাও গেলে বলবারও প্রয়োজন মনে করে না।যত অবগুন্ঠনই থাক লিজার শরীরের গন্ধ শুকবার জন্য মিঠু একসময় পাগলের মত উদগ্রীব হয়ে থাকত আর এখন ওর সমস্তকিছু উন্মুক্ত থাকলেও সে চোখ তুলে তাকায় না।এভাবে নিরব উপেক্ষা না করে মিঠু যদি ওকে মেরে ফেলত তবু সে মরেও শান্তি পেত। এসবের জন্য যতটা না মিঠুর উপরে রাগ হয় তার চাইতে শতগুন রাগ হয় সুমির উপর।কিন্তু কারো কাছে প্রকাশ করে না।মনের মাঝে একটা জলন্ত আগ্নেয়গিরিকে চাপা দিয়ে কতকাল রাখা যায়? অবশেষে সে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। একটু আগে মিঠু অফিসে গেছে। এমনিতে গোটা দিনে রান্না ছাড়া আর কোন কাজ তার থাকে না। বাইরে বেরিয়ে সুমিদের দরজায় টোকা দিল। দরজা খুলে দিল স্বয়ং সুমি।লিজা বলল: তোর কোন কাজ আছে? : না কেন? : আমি একটু তেজগাঁও যেতাম।আমার এক ফুপাতো ভাইয়ের বাসায়।তোর ভাইয়াকে বলেছি কিন্তু সে বলেছে তোকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বলেছে।অবশ্য তুই যেতে না চাইলে সমস্যা নেই। :আমার যেতে সমস্যা নেই।কিন্তু ফিরবে কখন? আমার আবার কম্পিউটার শিখতে যেতে হবে। :তোরতো ক্লাশ তিনটায় । চল তার আগেই চলে আসব। :আচ্ছা তুমি রেডি হয়ে আস ।আমি শিগ্রি বের হচ্ছি। লিজা উপরে উঠে জাহিদকে একটা ফোন করে । ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করেই জাহিদ বলে: তোর সাথে কোন কথা নেই সেই কবে ফোনে বললি একটা ক্লাইন্ট যোগাড় করে দিবি কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন খবর দিলিনা।লিজা বলে: সেজন্যই ফোন করলাম। তুই বাসায় থাক আমি ওকে নিয়ে আসছি।আর শোন আমি ওকে বলেছি ফুপাতো ভাইয়ের বাসায় যাচ্ছি।সাবধান থাকিস ও যেন বুঝতে না পারে।তারপর মাগীকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবি যাতে আর কখনো ফিরে আসতে না পারে। জাহিদ বলে :ডোন্ট ওরি দোস্ত।তোর পথের কাঁটা আমি দুর করে দেব।ওকে এমন জায়গায় নিয়ে যাব যে আর কখনো ফিরে আসতে পারবেনা আর যদিও আসে মুখ দেখাবার জায়গা থাকবে না। আমি বাইরে আছি। তুই বাসায় আয় আমি আসছি। রিকশায় যেতে যেতে সুমি বলে: আচ্ছা ভাবি তুমিনা বলেছিলে ঢাকা শহরে তোমার কোন আত্মীয়-স্বজন নেই তাহলে এই ফুপাতো ভাই কোথা থেকে আসল? : দূর সম্পর্কের ফুপাতো ভাই। তোর চাকরীর কি হল? একরাশ বিরক্তি সুমির কন্ঠে ঝরে পড়ে,বলে: আর বলো না। মিঠু ভাইয়ের অফিসে চাকুরীটা হত কিন্তু কম্পিউটার জানি না সেজন্যই হল না।ঢাকা শহরে চাকুরী করতে হলে কম্পিউটার চালানো জানতেই হবে । এজন্যই কম্পিউটার শিখছি।তার পর চাকুরী খুঁজব।লিজা মনে মনে বলে তোকে আর চাকুরী খুঁজবার জন্য কষ্ট করতে হবে না। জাহিদ বাসাতেই ছিল।সুমি কে জাহিদের ঘরে বসিয়ে রেখে লিজা বলল: তোর ফোনটা একটু দিবি আমার মোবাইলে টাকা নেই। তোর ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলতে হবে।সুমি ওর ফোনটা লিজার হাতে দিতেই লিজা বলল: তুই চা-নাস্তা শেষ কর আমি আসছি।বাইরে বের হবার সময় জাহিদকে বাইরে আসার জন্য ইশারা করে।লিজার পিছন পিছন জাহিদও বাইরে আসে।বাইরে এসেই সুমির মোবাইলের সুইচ বন্ধ করে সেটা জাহিদের হাতে দিয়ে বলল:এটা তোর কাছে রাখ।কেমন দেখলি।জাহিদ হাসল,বলল: মাশালাহ। ও এখান থেকে গুম হয়ে গেলে তোর কোন সমস্যা হবে না। −: না।সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।ওদিকটা আমি সামলব।তুই ওকে যত কষ্ট দিবি আমি তত শান্তি পাব।আর শোন ও যেন কারো কাছে ফোন করতে না পারে। : সেটা কি আর বলতে হয়।তুই নিশ্চিত থাক একবার যে আমার খপ্পরে পড়বে সে আর উদ্ধার পাবে না।আজ রাতেই ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেব আর দু’তিন দিনের মধ্যেই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেব। লিজার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।আনেক দিন পর যেন ওর জ্বলন্ত মনে শান্তি আসে। জাহিদ আরো বলে: তোর এখানে আর থাকার প্রয়োজন নেই তুই তোরদিকটা সামলা আমি এদিকটা দেখছি। জীবনে প্রথম কবে লিজা সত্যিকারের হাসি হেসেছিল তা তার মনে নেই কিন্তু আজ সে প্রাণ খুলে হাসল।পথের কাঁটা দুর হয়ে গেছে। আপাতত মিঠুকে ওর কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।বাসায় ফিরল দুইটার দিকে।একটু আগে মিঠু ফোন করেছিল ও বাসায় আজ আসবে না। না আসুক কালতো আসবে।নয়ত দু’দিন পরে আসবে। যখনই আসুক সুমি নেই সুতরাং ওর কাছে আসতেই হবে।আজ যেন ওর পখির মত পালক গজিয়েছে।সারাটা দিন বাধাহীন ভাবে মনের আকাশে উড়াল দিল। গুনগুন করে সারা দিন গান গাইল।কিন্তু একবার তার মনে হলনা অন্যের জন্য গর্ত খোঁড়া হলে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়। সন্ধ্যার সময় সুমির বড় বোন এসে লিজাকে বলল: সুমি কোথায় গেছে বলতে পার। লিজা বলল: নাতো আপা।কেন কি হয়েছে? : ওকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।আর ওর মোবাইলটাও বন্ধ পাচ্ছি।তোমার জামাই কোথায়? : ওতো আফিসে গেছে।আজ কোন এক বন্ধুর বাসায় যাবে রাত্রে ফিরবে না।সকালে সুমি আমার সাথেই বেরিয়েছিল।আমি বাজারে যাচ্ছিলাম দেখলাম সেজেগুজে কোথায় যেন যাচ্ছিল বললাম কোথায় যাচ্ছিস? বলল একজনের সাথে দেখা করতে যাব তাড়াতাড়ি চলে আসব ।তারপর আর কথা হয়নি। : কোথায় যে গেল।রাস্তাঘাট ও তেমন চেনে না।ওর সাথে কথা হলে আমাকে একটু জানিও । তারপর একরাশ হতাশা নিয়ে সুমির বোন নিচে চলে গেল। পরের দিনও সুমি ফিরে এল না। অবশেষে ওর বোন দুলাভাই পুলিশের দারস্থ হল। সমস্ত শুনে থানার দারোগা বললেন : আপনাদের কাউকে সন্দেহ হয় ওর গুম হয়ে যাওয়ার জন্যে? সুমির বোন জানাল: না তবে উপর তলার ভাড়াটিয়া মিঠুর সাথে ওর খুব ভাব ছিল।মাঝে মাঝে ওর সাথে বেড়াতে যেত।সম্ভবত ও জানে সুমি কোথায় আছে।কারন ঢাকা শহরে ওর পরিচিত কেউ নেই তাছাড়া কারো সাথে ওর সেরকম সম্পর্ক ছিল না।আর গতকাল থেকে মিঠুও বাসায় নেই। : ঠিক আছে আপনারা বাসায় যান।দেখি কি করা যায়। পরদিন পত্রিকার পাতায় ছোট্ট একটা খবর বের হল “যুবতী অপহরণের দায়ে ইঞ্জিনিয়ার গ্রেফতার।”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সুন্দর সকাল
পুরু গল্পটা একবারেই শেষ করতে হলো ! কারণ গল্পের মাঝে কেমন একটা মাদকতা আছে , যা পাঠক উপেক্ষা করতে পারনা ! সুন্দর গল্প , অনেক শুভকামনা আপনার জন্য |
আপনার কমেন্ট পড়ার আগে বুকটা ধুকপুক করে না জানি কি ভুল আপনি ধরে ফেলেছেন। কারণ অনুসন্ধানের চোখে আমি যা দেখতে পাইনা আপনি তা সহজেই ধরে ফেলেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও যে আপনি আমাকে সময় দিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ।ভাল থাকবেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।