জীবনের এই মাঝ বযসে এসে কত কথাই না মনে পড়ছে।সুখের দিনগুলো যেন শেষ হয়ে যায় কিন্তু দুঃখের দিন গুলো যেন শেষ হতে চায় না। আমার দুঃখ খুব বেশি না আবার সুখ যে পর্যাপ্ত তাও বলতে পারি না।আমার মনে হয় আমি সুখের অসুখে ভুগছি।কর্তা এক রকম চাচ্ছেন কিন্তু পরিবারের সদস্যদের সাথে তার মত না মিললে কর্তার মনের অবস্থা যে রকম হয় আমারও ঠিক সে রকম অবস্থা। কার কাছে গেলে, কিংবা কাকে বললে সমস্যা সমাধান হবে তাও আমি জানি না।আবার এও ঠিক সমস্যা সমাধান না হলে আমার ভবিয্যত জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে। আমার জন্য কত রথী-মহারথীর জন্ম হল তার ইয়াত্তা নেই।দু'এক জনের পরিচয় না দিলে ভাববেন আমি বোধ হয় চাপাবাজি করছি।রবি ঠাকুরকে নিশ্চয় মনে আছে ? যে ভাষায় গীতাঞ্জলী কাব্য লিখে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন আমি সেই বাংলা ভাষা।আমার দুর্ভাগ্য বিশ্বের দরবারে আমাকে এমন ভাবে আর কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি। জানিনা আগামী একশো বছরে কেউ পারবে কি না? নজরুলের জন্য দুঃখ হয়, বেচারা অকালেই ঝরে গেল।যত দিন আমি বেচে থাকব সালাম-বরকত-রফিক-জব্বার নাম না জানা আরও অনেকেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।ভাবতে ভালই লাগে ২১ শে ফেব্রুয়ারী সারা বিশ্বের মানুষ শুধু আমার জন্য "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" পালন করে।১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী যদি ওরা জীবন না দিত তাহলে হয়ত আজ আমার অবস্থান হত ইতিহাসের আস্তাকুড়ে। বড় পরিতাপের বিষয় সারা বছরের ঐ একটা দিনই আমাকে নিয়ে মাতামাতি হয়।ইলেকট্রনিক কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া সর্বত্রই থাকে আমার জয় জয়কার।আলোচনা-সমালোচনা,অনুষ্ঠানমালার আয়োজন দেখলে মনে হয় যেন আমারই জন্য সব। কিন্তু না সবই লোক দেখানো কারন পরদিন সবাই আমাকে বেমালুম ভুলে যায়।আমার যন্ত্রণা এখানেই।সব অফিস-আদালতে এখনও আমার তারিখের প্রচলন শুরু হয়নি।বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে আজও আমার ঠায় হয় ছোট ছোট অক্ষরে।ইংলিশ ভাইয়ের দাপটে আমার অবস্থা এতটায় কোনঠাসা যে পৃথিবীর সমস্ত কাগজ-কলমে লিখলেও আমার দুরবস্থার কথা লিখে শেষ করতে পারব না। এইতো ক'দিন আগে ইংরেজি নববর্ষের শেষদিন টি,এস,সির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।দু'বন্ধুর কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম।প্রথম বন্ধু দ্বিতীয় বন্ধুকে বলল "দোস্ত থার্টি ফাষ্ট নাইট উদযাপন করবি না ?" ২য় বন্ধু বলল "কি যে বলিস, বাঙালী হয়েছিস বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবি।" প্রথম বন্ধু বলল "দস্তো তাহলে পুরো বাঙ্গালী হয়ে গেছিস ?"২য় বন্ধু বলল "অফ কোর্স" প্রথম বন্ধু বলল "আচ্ছা দোস্ত আজ বাংলার কত তারিখ ?"২য় বন্ধু তখন মাথা চুলকাতে শুরু করল।আমিতো লজ্জায় কোথায় গিয়ে লুকাব সেই রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।আজকালকার ছেলে মেয়েরা ফেসবুকে কিংবা মোবাইল ফোনে বাংলিশ চর্চা করে। আত্মা আমার আর শরীর অন্য কারো এটা কি সহজে মেনে নেওয়া যায়। গাধা আর ঘোড়ার মিলনের ফলে একজাতীয় প্রাণীর সৃষ্টি হয় যার নাম খচ্চড়।ধীরে ধীরে আমিও যেন খচ্চড় হয়ে যাচ্ছি।এই যন্ত্রণা গুলো আমি কি করে সহ্য করব ?আমার নামে একটা একাডেমি আছে। কিনতু তার অবস্থা বুড়ো বাঘের মত। নাম আছে, কাঠামো আছে কিন্তু কার্যক্ষমতা নেই।হতে পারে প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা হিমসিম খাচ্ছে। কোথায় সালাম-বরকত-রফিক-জব্বার আর একবার তোমরা জেগে ওঠো।দিনে দিনে আমি যে অন্ধকার গুহার ভিতরে চলে যাচ্ছি সে অবস্থা থেকে আমাকে বাঁচাও। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে উচ্চ মাগর্ীয় লোকেরা আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ক্রমান্বয়ে আমি শ্রমিক-কুলি-মজুরদের কাছের মানুষ হয়ে যাচ্ছি। আমার অবস্থা যে কত করুণ তা টিভি চ্যানেল গুলোর দিকে তাকালে সহজেই অনুধাবন করতে পারি। চ্যানেলগুলেতে ইংলিশ আর হিন্দি ভাইদের দাপট এতই বেশি যে - আমার আবেগ-ভালবাসা ঠিক যেন প্রচন্ড স্রোতের মুখে পড়া এক টুকরা খড় যে শুধু অব্যহত চাপের মুখে যেন নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছি।এটা ঠিক আমার যন্ত্রণা আছে তবে আমি আশাহত নই। আমি আশায় বুক বেঁধে আছি একদিন আমারও পূনর্জাগরণ হবে। হাজারো বছর পরে যেমন ইংলিশের রেনেসাঁ হয়েছিল আমারও রেনাসাঁ হবে। এই প্রত্যাশায় আমি বাঙ্গালীদের দিকে তাকিয়ে আছি।স্বপ্ন পূরন হবে না বলে যে স্বপ্ন দেখা যাবে না এমন কথা কোথাও লেখা আছে নাকি?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
এটা ঠিক আমার যন্ত্রণা আছে তবে আমি আশাহত নই। আমি আশায় বুক বেঁধে আছি একদিন আমারও পূনর্জাগরণ হবে। হাজারো বছর পরে যেমন ইংলিশের রেনেসাঁ হয়েছিল আমারও রেনাসাঁ হবে। এই প্রত্যাশায় আমি বাঙ্গালীদের দিকে তাকিয়ে আছি।স্বপ্ন পূরন হবে না বলে যে স্বপ্ন দেখা যাবে না এমন কথা কোথাও লেখা আছে নাকি? // valo laglo ashahoto na hoye ashay thaka..........khub sundor ovibakti.......iqbal vai apnake dhonnobad........
বশির আহমেদ
গাধা আর ঘোড়ার মিলনের ফলে জন্ম হয় খচ্চর ঠিক কথা । আজ আমরা এই খচ্চর তৈরী করে এই সমাজে বাস করছি । অন্য ভাষা শিক্ষা করা দুষের নয় বরং ভাষার সম্বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন । কিন্তু আজ তা হয়ে পড়েছে আমাদের মাতৃ ভাষাকে তুচ্ছ তাচ্চিল্য করার হীন প্রচেষ্ঠার গ্লোবালাইজেশন । লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
Sisir kumar gain
অনেক ভাল লিখেছেন।তবে দিনে দিনে বাংলা ভাষা যে সমৃদ্ধ হছে,তাতে সন্দেহ নেই। একুশে ফেব্রুয়ারী আজ বিশ্ব মাতৃভাষার মর্জাদা পেয়েছে।সব মিলিয়ে আমি আশাবাদী।ধন্যবাদ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।