একা একা সমুদ্রের ধারে দাড়িয়ে কাঁপছিল শ্রুতি | বুঝতে পারছিল যে প্রচন্ড শীতে ও যথেষ্ট কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু শীতার্ত সুর্যের মায়ায় যেন কি একটা অদ্ভূত মোহ জড়িয়ে ছিল | ঘুম থেকে খুব ভোরেই উঠে গেল হঠাত, কেন যে এত সকালে ঘুম ভাঙ্গলো, নিজেই বুঝতে পারেনি | সৈকত কে ডাকতে গিয়েও ডাকলো না, কাল অনেক রাত অবধি ওর জন্যে অনেক কষ্ট পেয়েছে মানুষটা | নিজের প্রচন্ড জর উপেক্ষা করে গিটার বাজিয়ে গেছে শ্রুতির মন ভালো করবার জন্যে | এই অসহ্য শীতেও করিডরে বসে দুজনে এক অদ্ভূত ভালো বাসায় গান গেয়েছে গভীর রাত পর্যন্ত | একবার ও বুঝতে দেয়নি গায়ে এতটা জর | যখন বুঝতে পেরেছে শ্রুতি, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে |
প্রতিটা মুহূর্ত অবাক হচ্ছে শ্রুতি | মানুষ এত ভালবাসতে পারে কাউকে, এটা ওর ধারনায় ছিল না | নিজের জর এর কথা এক মুহুর্তের জন্যও ভাবেনি মানুষটা, শ্রুতির ভালো লাগাটাই তার কাছে গুরুত্ব পূর্ণ ছিল | অথচ এই মানুষটাকে এতদিন কত কষ্ট দিয়েছে |
সেই ক্লাস টেন এ পড়ার সময় থেকে ওকে ভালো বাসে সৈকত | অথচ সেই ভালো বাসাটা বুঝতে শ্রুতির এত দিন লাগলো | তাও হয়ত হত না যদি এক্সিডেন্ট টা না ঘটত |
দিনটার কথা ভাবলে এখনো কেপে ওঠে শ্রুতি | পাহাড়ি রাস্তায় গাড়িটা স্কীপ করে চলে গেল খাদে, এখনো কপালের কাটা দাগ শুকায় নি পুরো পুরি | রক্ত গুলো চোখের সামনে ভাসে | সাত দিন তার কিছুই মনে ছিল না | শুধু মনে ছিল, শেষ মুহুর্তে পড়ে যাবার সময় খুব শক্ত করে ওকে ধরে ছিল সৈকত | আহত হয়েছিল সৈকত ও | ওই অবস্থায় ওকে নিয়ে হসপিটালে পৌছেছে | রক্ত দরকার ছিল, নিজে আহত থেকেও রক্ত দিয়েছে, কাউকে দিতে দেয় নি | পুরোটা সময় শেষ পর্যন্ত হসপিটাল এ ওর কাছে ছিল | বিয়ের পর ও স্বাভাবিক হতে না পারা শ্রুতি, জ্ঞান ফিরে গভীর রাতে মাথার কাছে কপালে ব্যান্ডেজ বাধা সৈকত কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে নিজের মধ্যে এলোমেলো হয়েছিল, মানুষ এত ভালবাসতে পারে !
সেই ঘটনার পরে কেটে গেছে অনেক গুলো দিন | সৈকত এর ভালোবাহ্সায় সিক্ত শ্রুতি, সামলে নিয়েছে নিজেকে অনেক আগেই, বদলেছে নিজের অজান্তেই | কিন্তু সৈকত যতটা ভালো বাসে, তার অর্ধেক ও নিজে পারে নি |
গভীর শীতের কুয়াশায় জড়ানো সোনালী সূর্যটাকে যেন সৈকত এর মত লাগছে | নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে ভালবাসার মত মানুষ বোধ হয় সুর্যের মতই হয় |
আচমকা একটা কাপড় ঘিরে ফেলে শ্রুতিকে, হঠাত ছোয়ায় ভয় পেয়ে পেছন ফেরে শ্রুতি | " তোমাকে নিয়ে আর পারি না, এই শীতে কেউ পাতলা সুয়েটার গায়ে বের হয়, ঠিক বাচ্চাদের মত রয়ে গেলে" | সৈকত এর চিন্তা ক্লান্ত মুখটা দেখে মায়া হয় শ্রুতির | "ঘুম ভেঙ্গে গেল? এই জর নিয়ে উঠলে কেন?" "ইচ্ছা করে কি আর বেরিয়েছি, ঘুম ভেঙ্গে তোমাকে পাশে পেলাম না, বাথরুম এও নেই, ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম | বারান্দায় দাড়িয়ে দেখি তুমি বীচ এ দাড়িয়ে | আমাকে টেনশন দিতে খুব ভালো লাগে তোমার?"
নিজেকে খুব সৌভাগ্যবতী মনে হয় শ্রুতির, এমন একটা সুখ ভর্তি সময় তার অপেক্ষায় কতদিন দাড়িয়েছিল টের পায়নি সে | নিজের মাথাটা আলতো করে সৈকত এর বুকে রাখে, জীবনে প্রথম বারের মত | হতভম্ব সৈকত আনন্দে কিছু বলে ওঠার আগেই শ্রুতি বলে ওঠে, "আর টেনশন দেব না, কোনদিন না, প্রমিস" |
শীতার্ত সমুদ্র তার বুকে সুর্যের মৃদু এল নিতে নিতে প্রতিদ্ধনি করে ওঠে, "প্রমিস" |
০২ জুন - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪