মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্ত সে পাখি...

বিজয় (ডিসেম্বর ২০১৪)

সেলিনা ইসলাম
  • ১৮
"হেল্প! প্লিজ কেউ কী আছেন একটু সাহায্য করুন। আমার নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে...প্লিজ!"
সাহায্যের জন্য আকুতি করে যাচ্ছে রবিন। কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে কেউ আসছে না। প্রথম প্রথম চিৎকারের আওয়াজ জোরালো হলেও এখন আর জোর নেই। ক্ষীণ কন্ঠে তবুও বাঁচার শেষ নিঃশ্বাসটুকু ধীরে ধীরে ফেলে যায়। পাশেই ফ্লোরে পড়ে আছে দু'জন সঙ্গী। কিছুক্ষণ আগে ওদের গুঙ্গানির শব্দ কানে এলেও,এখন তাদের কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না! আর তাই জীবন যুদ্ধে হেরে যাবার ভয়টা যেন আরো জেঁকে বসেছে মনের মাঝে। শরীর নাড়াতে পারছে না। রক্তের একটা চিকন ধারা কপাল বেয়ে নেমে গেলেও তা এখন শুকিয়ে গেছে। মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা ! মাথা ভাল করে কাজ করছে না তার। কেবল মনে পড়ছে গতকাল ওরা তিনজন মিলে এই শহরের সদ্য তোলা সবচেয়ে বড় বিল্ডিং-এর পঞ্চাশতম ফ্লোরে কাজ করছিল। একটা রুমে কাজ করতে করতে তিনজনেই আটকা পড়ে যায়। ছাদটা এখনো ঢালাই দেয়া হয়নি। রুমের ভীতরে সারি সারি ইস্পাতের তৈরি ফ্রেম ও পাটাতন রাখা হয়েছে পাশে। কেমন করে যেন সেগুলি হুড়মুড় করে ওদের গায়ে এসে পড়ে! যা ছিল একেবারেই অসম্ভব...!

তিনজনই ওতো ভারী জিনিষ সরিয়ে বের হয়ে আসতে পারে না! এদিকে নীচে থেকেও কারো নজরে আসবে না এই দুর্ঘটনা! কাজে মোবাইল আনাও মালিকের নিষেধ তাই কারো সাথে যোগাযোগও সম্ভব না। ওকিটকি থাকে সুপারভাইজারদের হাতে কিন্তু তারা কোথায় আছে ওরা কেউ জানে না! পয়তাল্লিশতম ফ্লোর পর্যন্ত এলেক্ট্রিক এলিভেটর কাজ করলেও বাকী পাঁচটা ফ্লোরের কাজ বিল্ডিং-এর বাইরে থেকে এলিভেটরে এনে এক একটা ফ্লোরে শ্রমিকদের নামিয়ে দেয়া হয়। কাজ শেষ হবার পরে একই সময়ে সবাই জানালার কাছে এসে দাঁড়ালে ঐ জানালার কাছে এলিভেটর এসে তাদেরকে তুলে নিয়ে যায়। ধারণা ছিল যখন এই ফ্লোরের জানালায় কাউকে সুপারভাইজার দেখবে না; তখন গ্রুপের সবাই এসে তাদেরকে উদ্ধার করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য কেউ এগিয়ে এলো না!

বেশ কিছুদিন ধরে এই বিল্ডিং -এর দ্বায়িত্বে থাকা কোম্পানীর মালিকের সাথে শ্রমিকদের বেশ মনোমালিন্য চলছে। কোম্পানির মালিকের সাথে শ্রমিকদের কথা হয়েছিল প্রতিদিন হিসাবে প্রতিটা শ্রমিককে বেতন বাবদ নগদ টাকা দেবে এবং থাকা খাওয়া ফ্রী। কিন্তু দেখা গেল কাজ শুরু করার প্রথম এক বছর টাকা দিলেও গত প্রায় দুই বছর ধরে কোন শ্রমিকের বেতন পুরোপুরি দিচ্ছে না। থাকার জন্য বিশজনের ভাগে একটা রুম দিলেও,খাওয়া দেয় শুধুই ভর্তা আর ডাল,ভাত! থাকা খাওয়া নিয়ে কারো কোন অভিযোগ নেই। তারা কষ্ট করতেই এসেছে কিন্তু যে পরিমান শ্রম দিচ্ছে সেই পরিমান মূল্যের অর্ধেকও পেমেন্ট করবে না, এটা কেমন কথা! অসুস্থ বুড়ো মা বাবা, ছোট ভাই বোন সবাই এই টাকায় চলে! নিজেদের পেটে দু'মুঠো ডাল ভাত গেলেও তাঁরা সবাই কেমন আছে? খেয়ে আছে? না, না খেয়ে আছে ? এই দুঃশ্চিন্তায় কেউ ঠিক মত খেতেও পারে না! আবার সারাদিন এতো কষ্ট করেও রাতে ঘুমাতে পারে না। ওদের মাঝে যে-ই প্রতিবাদ করে তাকেই লাঞ্চিত হতে হয়। দুই একজনের তো কাজই নেই...। তারা কোথায় গেছে কেউ জানে না! কেউ বলে মালিক গুম করে দিয়েছে! কেউ বলে তারা অন্য কোন শহরে চলে গেছে! রবিন জানে না আসলে ওদের কী হয়েছে। বাঙালি এইসব মালিকদের ব্যবহারের কারণে এখন বিদেশী কোম্পানির মালিকরাও বাঙালিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। একে তো ভিসা প্রায় শেষ হতে চলেছে তার উপর নিজের পারিশ্রমিকের সব টাকাও হাতে পাওয়া হয়নি! এ অবস্থায় সবাই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। প্রতিবাদ করলেই কাজের সাথে সাথে জান যাবার বা নিখোঁজ হবার ভয়...!

এখানে কারো কোন আত্মিয় স্বজন নেই যে পুলিশে নিখোঁজ রিপোর্ট করবে। আবার অনেকে বন্ধু হয়ে বন্ধুর জন্য কিছু করবে সে উপায়ও নেই। কারণ তারা কোন ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে এই ভাবনায় আর সামনে এগোয় না। সবাই সকালে উঠে মালিকের দেয়া গাড়িতে চড়ে কাজের জায়গা; আবার কাজ শেষ করে একই গাড়িতে করে মালিকের দেয়া ঘরে ফেরা! স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে নিজের দেশের মানুষের হাতেই বন্দী জীবন যাপন! মাঝে মাঝে জানালা বিহীন ঘরে শুয়ে গলা ছেড়ে গান ধরে রবিন-
"বন্দি পাখির মত মনটা কেঁদে মরে
মুক্ত আকাশখানি কে আমার নিল কেড়ে
ও পাহাড় ও নদী বলে দাও কি নিয়ে থাকি
এ ব্যথা কি দিয়ে ঢেকে রাখি" গানটা পুরো জানলেও কোন দিনও শেষ করতে পারেনি সে। যতবার গানটা গেয়েছে ততবারই সব বন্ধুরা ওকে ঘিরে ধরে এক সাথে ভিজে গেছে মনের অতলে,দুঃখকে পুষে রেখে। এই একটা জায়গায় ওদের সবার জন্য সবাই এগিয়ে আসে। সবার সুখ,দুঃখ,কষ্টকে ভাগাভাগি করে নিতে পারে নিজেদের মত করে,স্বাধীন ভাবে...।

রবিনের মনে পড়ে বাবা তাকে সব সময় লেখাপড়া করার জন্য বকাবকি করতেন। সে প্রবাসে থাকুক বাবা মা কেউ চাননি। কিন্তু রবিন সব সময় একটাই অজুহাত দিয়েছে। বাবা'র সাথে তর্ক করেছে,যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। জেদ করে নিজের খেয়াল খুশি মত চলেছে! একদিন তো বাবা'র সাথে রীতিমত ঝগড়া করেছে যা সে কোনদিনও করেনি।
-সব সময় একই কথা ! লেখা পড়া কর! লেখা পড়া কর ! লেখা পড়া কর। নিজে তো অনেক শিক্ষিত -ডাবল এম এ ! লাভ কী ? করেন তো সেই কেরানীর চাকরী!
- বদমাইশ...!এই কেরানী'র চাকরী করি বলে দুই বেলা ভাত পেটে যায়! লেখা পড়া না করলে খাবি কী করে হ্যাঁ?
- এ দেশে লেখা পড়া শিখে লাভ কী? কোন চাকরী পাওয়া যাবে? আমার মামাও নাই খালুও নাই। কে দেবে চাকরী? ঘুষ দিতে পারবেন? ঠিক আছে ঘুষ দিয়ে একটা কাজ পেলাম কিন্তু তারপর? দোধারি সিস্টেমের মাঝে পিষে মরা! হয় ঘুষ নিয়ে কাজ কর না হয় বুলেট খেয়ে কবরে যাও! এইতো ? এর চেয়ে ভাল কিছু টাকা দেন আমি বিদেশে গিয়ে সৎ পথে কামাই করে আনি!
বাবাও আজ ধৈর্যের সীমানা পার করে ফেলেছেন!
- জাহান্নামে যা। আর দুই মাস পরে রিটায়ারমেন্টে যাচ্ছি তখন কে খাওয়ায় তাই দেখব। সব ফুটানি বাইর হয়ে যাবে নবাবের বাচ্চার!
স্বল্প ভাষি বাবা আজ অনেক বেশি কথা বলে হাঁপিয়ে গেছেন। সব কথা শোনার মত সময় কৈ রবিনের কাছে? বন্ধুরা বাইরে অপেক্ষা করছে। মাথার মধ্যে ঘুরছে একটাই কথা "রিটায়ারমেন্টে যাচ্ছি"। ঘণ্টা বাজার মত বেজেই যাচ্ছে !
মাকে বুঝাতে বেশি সময় লাগেনি সেদিন। কেউ একজন ঠিকই বলেছিল "মায়ের মন মাখনের মত নরম আর পানির মত কোমল!" মাখনের মত নরম বলে মাকে অল্পতেই সন্তান কাবু করতে পারে। আর পানির মত কোমল বলেই মা সন্তানের উপর যতই রাগ করুক না কেন,কিছুক্ষণ পর ঠিকই তা ভুলে বুকে টেনে নেন! ঠিক যেমন পানিতে যতই আঘাত কর তা দু'ভাগ করা যায় না! মায়ের মনটাও সন্তানের জন্য দু'রকম থাকে না। ঐ মনে কেবলই মায়া আর ভালোবাসা।

ছয় মাস পরে বাবার রিটায়ারমেন্টের এবং পেনসনের এক কালিন যত টাকা পাওয়া যায় সব নিয়ে; আর গ্রামে যে জমিটুকু ছিল তা বিক্রি করে চলে আসে স্বপ্নীল এই রাজ্যে! জেগে অথবা ঘুমিয়ে স্বপ্নের রাজ্যে রাজকীয় জীবন যাপন করলেও,বাস্তবে এসে বুঝেছে কী ভুলটাই না সে করেছে। মাকে দিয়ে ব্যবসা'র কথা বলিয়ে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে খুব বড় ধরনের একটা ধোকা তাঁকে দিলেও; প্লেনে উঠার সময় বাবা বুকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদে ছিলেন। পাথরের মত শক্ত মনের বাবাকে কাঁদতে দেখে সেদিনই রবিন প্রতিজ্ঞা করেছিল-প্রবাসে যেয়ে অনেক কষ্ট করবে। অনেক টাকা রোজগার করে বাবাকে গর্বিত করবে। দায়িত্ব সহকারে মা,বাবা, ভাই,বোন সবার কষ্ট দূর করে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকবে। প্রবাসে আসার তিন চারদিন পরে অনুধাবন করেছে কী বড় ভুলটাই না করেছে সে। এর চেয়ে যে টাকা খরচ করে সে ধনী হবার বাসনা নিয়ে এখানে এসেছে, সেই টাকা দিয়ে সব্জি চাষ করে তা বিক্রি করে দু'বেলা খেয়ে মায়ের আদরে সবার সাথে অনেক শান্তিতে থাকা যেত! কিন্তু এখন আর ফিরে যাবার পথ নেই! নিজের ভুলে প্রায়শ্চিত্ত করতেই থেকে যেতে হবে এই মরুভূমি জীবনে...।
কষ্টের নদীতে সাঁতার দেবার অনেক খানি শক্তি ও সুখ এনে দিয়েছিল পাশের বাসার রিক্তা...। ধনীর আদরের দুলালী! ভালোবাসার সবটুকু তৃপ্তি রিক্তাকে ঘিরে! রবিন জানে রিক্তা কেবল তার...। একটা বাড়ি আর ছোট একটা ব্যবসার টাকা নিয়ে দেশে যেতে পারলেই রিক্তাকে নিয়ে সে ছোট্ট সুখের ঘর বাঁধবে! রিক্তা ধনীর দুলালী হলে কী হবে ওর একটুও অর্থের প্রতি টান নেই। সে রবিনের সাথে যেভাবে তার নিজস্ব কথা গুলো শেয়ার করেছে তাতে সে বুঝে গেছে রিক্তাও তাকে ভালোবাসে! আসার সময়ে তাকে একটা লাল টকটকে সূতির মাফলার গিফট দিয়েছে! যা সব সময় গলায় পেঁচিয়ে রাখে। সারা মাফলার জুড়ে রিক্তার স্পর্শ! "আহঃ কি শান্তি...!" এই শান্তির অনুভূতি অন্যরকম শক্তি এনে দেয় রবিনকে।

রবিন নিজের করা প্রতিজ্ঞার আংশিক পালন করতে পেরেছে। গত তিন বছরে প্রবাসে এসে হাড় ভাঙ্গা খাটুনী খেঁটে যা কিছু অর্থ পেয়েছে সব দেশে বাবা মাকে দিয়েছে! স্বজনের সাথে সাথে মাতৃভূমির প্রতি কতটা ভালবাসা তার মনের মাঝে জমে আছে,তা সে প্রবাসে এসে টের পেয়েছে। দেশের মানুষের দুঃখে,তার সাথে সাথে খেঁটে খাওয়া প্রতিটি বাঙালিকে দেখেছে অঝরে কেঁদে বুক ভাসাতে! এখানে প্রতিটা বাঙালিই দেশের উন্নয়নে নিজেদেরকে ভাবে এক একজন গর্বিত সৈনিক। কিন্তু যাদের হাতে এই উন্নয়নের মূল চাবি,তারা সবাই দেশি ভাইবোনদের অল্প পারিশ্রমিকে খাঁটিয়ে বিদেশী অর্থ দেশে না দিয়ে প্রবাসেই ব্যবসা, অট্টালিকা গড়ে আলিশান জীবন যাপন করছে! রবিন প্রবাসে এসে অনেক পরিশ্রম করেছে। যতটা ভেবেছিল তার থেকেও অনেক বেশি। যে কাজ সে দেশে থেকে করেনি নিজের আত্মসম্মান বোধে,সেই কাজ সে এই অচিন দেশে করেছে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে। কিন্তু মুখোশের আড়ালে থাকা স্বদেশী কিছু মানুষের স্বার্থ রোষানলে নিজের স্বপ্নের প্রজাপতি গুলোকে;একে একে ডানা ভেঙে মুখ থুবড়ে পড়ে ছটফট করে মরে যেতে দেখেছে! নিরুপায় হয়ে ডুকরে কেঁদে কেঁদে নিজেকে শক্ত করে,দেশের সবার স্বপ্নকে জীবন দিতে আবার নতুন করে শক্তি জুগিয়েছে ! কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা রোজগার করে বাবাকে গর্বিত করতে পারেনি। পারেনি সবার কষ্টকে দূর করে অভাবকে জয় করতে। "সাধারণ ভাড়া বাসা থেকে সবাই এখন না জানি বস্তি..."নাহ...! আর ভাবতে পারে না সে। নাহ সে হেরে যাবেনা এভাবে! তাকে যেভাবেই হোক জয়ী হতে হবে। মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য আজ তিনটা বছর সবার ভালোবাসা,হাসি আনন্দ থেকে সে দূরে থেকেছে ! এভাবে পরাধীন থেকে নিজেকে বিলিয়ে দিতে নয়! যদি বাঁচতে হয় ন্যায্য অধিকার,ও উপযুক্ত পাওনা বুঝিয়ে নিয়ে মায়ের কোলে গিয়ে থাকবে। তবু সে এভাবে নীরবে পরাজয় মানবে না!
এভাবেই গত কয়েকদিন ধরে নানা ভাবনা তাকে এবং তার সঙ্গী দুজনকে মালিকের কাছে "টাকা না দিলে বাংলাদেশ দুতাবাসে অভিযোগ করব"এই কথা বলতে বাধ্য করেছে! যে বাবা মা'র একমাত্র ভরসা রবিনের মত সন্তান! যে বাবা মা দৃঢ় বিশ্বাসে রবিনের মত সন্তানের হাতে তুলে দেয় জীবনের সবটুকু সঞ্চয়! সেই বাবা মাকে কীভাবে কষ্টে রাখবে রবিনের মত সন্তান! কীভাবে শত্রুর কাছে পরাজয় বরণ করে নেবে সে? কীভাবে ছেড়ে দেবে প্রতিটি রক্ত কণার দামে কেনা অর্জিত সুখ! এভাবে মৃত্যুর কাছেও সে হার মানবে না। তার মৃত্যু সংবাদ আরও কিছু মানুষকে এ পথের যাত্রী করবে! সাথে আছে পাশে থাকা দুজন সঙ্গী আর তাদের প্রিয়জন! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে দেখে পরিষ্কার খোলা আকাশে একটি হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে। মনে পড়ে রিক্তার দেয়া মাফলারের কথা। যেভাবেই হোক এখান থেকে তাকে বের হতেই হবে। এভাবে সে মরতে পারে না...! সকল ষড়যন্ত্রের ঊর্ধ্বে গিয়ে সে সবাইকে বাঁচিয়ে তুলবে। অন্তত শেষ বারের মত হলেও মায়ের হাতে এক লোকমা ভাত খেয়ে সে মরতে চায়। বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়াটাও হয়নি! যারা বিদেশে এসে নিজের দেশের ভাইবোনদের রক্ত শুষে খেয়ে নিঃশেষ করে শোষণ করে। সেই স্বদেশী শত্রুকে জেলে পাঠিয়ে স্বদেশের কালিমা মুছে দিয়ে তাকে যে জয়ী হতেই হবে। তার আগে সে মরবে না... মরতে পারে না। বাঁচার অদম্য ইচ্ছায় কোথা থেকে যেন বেশ শক্তি আসে...।

রবিনের দুই পায়ের উপর ভারী ইস্পাতের পাটাতনগুলো পড়েছে। যখন সে মেঝেতে পড়ে যায় তখন তার মাথায় আঘাত লাগে! খুব কষ্টে মাফলারটা উপরের দিকে বের করে দেয়। লাল মাফলারটা সমস্ত শক্তি দিয়ে নাড়াতে থাকে। হেলিকপ্টারের শব্দ খুব কাছে মনে হয়। আর পারছে না রবিন...। ভোরের সূর্যের আলো চোখে লাগে। মাকে ভীষণ মনে পড়ে। বুকের মাঝে চাপ চাপ ব্যথা! গলা শুকিয়ে গেছে! খুব ক্ষীণ স্বরে বলে উঠে-
"হেল্প! প্লিজ কেউ কী আছেন একটু সাহায্য করবেন? আমার নিঃশ্বাস নিতে খুউব কষ্ট হচ্ছে...। ওয়াটার প্লিজ...!" আর কোন শব্দ বের হয়না মুখ থেকে! খুব ঠান্ডা বাতাসের পরশ এসে মুখে লাগে। রবিনের মনে হয় সে মায়ের কোলে শুয়ে আছে। মা পানির গ্লাস ধরে মুখে। ঢকঢক করে পানি খায় সে...অনেক ভাল লাগে তার।
" মা এতো কাজ কর কেন? ঘেমে একেবারে নেয়ে উঠেছো!”
"পাগল ছেলে তবুও ভাত খেয়ে হাত মুখ তো ঘামে ভেজা এই আঁচলেই মুছে নিবি" মা হেসে আদর করে দেয়। মায়ের গায়ের গন্ধটা আজ কড়া মেডিসিনের গন্ধের মত লাগে। আর সে বন্দী থাকবে না। ডাল ভাত খেয়ে হলেও নিজের দেশে থাকবে। অন্যরকম এক বিজয়ের আনন্দে গরুর গাড়ীতে আঁকাবাঁকা সবুজ গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে ছুটে চলে সে। দেশ ছেড়ে আসার পর থেকে একদিনও ভাল করে ঘুমাতে পারেনি! আজ অনেক ঘুম আসে তার...। শরীরে বেশ ঝাঁকি অনুভূত হয়। ভেসে আসে অনেক মানুষের কলরব।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ প্রায় মাস তিনেক পড়ে কোন গল্প পড়ছি......দূঘর্টনার করুন চিত্র আর আবেগ ঘন বণর্না ভালো লাগলো
অনেক অনেক ধন্যবাদ। অনেকদিন পর পেলাম গল্পে আশাকরি ভাল আছো ভাই । ভাল থাকা হোক সেই শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪
মোঃ আক্তারুজ্জামান গরীব, নিম্নমধ্যবিত্তদের সুখ, স্বপ্ন আর ভবিষ্যত যেভাবে চাপা পড়ে তারই খণ্ড চিত্র। এ এক যুদ্ধ- এ যুদ্ধে অনেকসময় পার পাওয়া যায় অনেকসময় যায় না। রবিনের জয়ী হওয়ার আবছা ইঙ্গিতের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পেরেছি। আপা অনেক ভাল লাগলো। সবসময় ভালো থাকুন।
ভালো লাগেনি ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
সময় দিয়ে গল্প পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। সতত শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ চমৎকার গল্পটা খুব ভাল লাগল। শুভ কামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪
ধন্যবাদ শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি প্রবাসী বাংলা দেশী শ্রমিকদের সাথে মালিক ও দালালদের যে অমানবিক আচরণ গল্পে তা সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে....তবে রবিনকে বাঁচিয়ে রেখে গল্পের শেষটায় মোড় নেয়া যেতো....যা কিনা রবিনের জীবনে বিজয় আসতে পারতো ....যাই হোক সেলিনা আপনি ভাল লেখেন আপনার গল্প আমার বরাবরের মতো ভাল লেগেছে....অশেষ শুভকামনা রইলো আপনার জন্য.......
ভালো লাগেনি ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে গল্প পড়ে সুন্দর মন্তব্য করায়। গল্পের শিরোনামই বলে দেয় মৃত্যুকে রবিন জয় করেছে। রবিনের বিজয় হয়েছে গল্পের শেষ প্যারায়। এখানে বলা হয়েছে "অন্যরকম এক বিজয়ের আনন্দে গরুর গাড়ীতে আঁকাবাঁকা সবুজ গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে ছুটে চলে সে।" এখানে গরুর গাড়িটি ছিল রুগী বহনকারী স্ট্রেচার! শেষ দুই লাইন বলে দেয় এ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানোর সময়ে ঝাঁকি অনুভূত এবং অনেক মানুষ ব্যস্ত হয়ে যায় রুগীকে বাঁচাতে! বাস্তবে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই ছিল অবচেতন মনে রবিনের ভ্রম! মনের গহীনে চেপে রাখা ঘুমন্ত স্বপ্নরা। আপনার জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। ভালো থাকুন নিরন্তর...।
ভালো লাগেনি ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪
ইমরান আলম সুন্দর একটা গল্প পরলাম .খুবই ভালো লাগলো
মিলন বনিক সুন্দর গল্পের বুনন আর বিন্যাসে অসীম মুগ্ধতা....শুভ কামনা...
ভালো লাগেনি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে পড়ার জন্য শুভকামনা...
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ অসাধারন একটি গল্প ! মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম আপু ----- ।। সেই দিয়ে গেলাম আপনার প্রাপ্য ভোট । ভাল থাকবেন -- অশেষ ।।
ভালো লাগেনি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪
ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য সতত শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
রিক্তা রিচি অসম্ভব সুন্দর . ভালো লাগা রেখে গেলাম .
ভালো লাগেনি ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্যে শুভেচ্ছা রইল ।
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
ruma hamid জীবনের প্রায় শেষ সময় এসে রবিন দেশ ও মায়ের মমতা বুঝতে পেরেছে ।গল্পটি শিক্ষণীয় ।অনেক ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪
ধন্যবাদ শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪
মাহমুদ হাসান পারভেজ দারুণ গল্পটি। প্রবাসীদের যে রক্ত পানি করা অর্থ আজ দেশে আসছে- যার কল্যাণে আমরা বগল বাজিয়ে যাচ্ছি- তাদের জীবন সংগ্রাম- তার পেছনের গল্পটি-দারুণভাবে আপনি তুলে এনেছেন। এর জন্য আপনার প্রতি সাধুবাদ।
ভালো লাগেনি ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪
সময় দিয়ে গল্প পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। নিরন্তর শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী