রেশমি চুড়ির মাদুলি

ভালবাসি তোমায় (ফেব্রুয়ারী ২০১৪)

সেলিনা ইসলাম
  • ১০
  • ২৮
এক

আজও ভোরের চাদর সরিয়ে সূর্য মুখ তুলে চাইতেই প্রতিদিনের মতই আরো একটা জীবন ফুলের পাপড়ি সুবাস ছড়াতে যেন ব্যাকুল হয়ে ওঠে! কিন্তু আজকের দিনের শুরুটা কেমন যেন অন্যরকম...সবই আছে আগের মত তবুও মনে হচ্ছে মানুষের কোলাহল নেই,নেই প্রতিযোগিতার মেকী তরঙ্গের স্রোত । চারিদিকের সবকিছুই যেন একরাশ পেঁজা মেঘের ভেলায় দূরে হারিয়ে যাবার ইচ্ছায় একটা শূন্য গভীরতা তৈরী করেছে! মাঝে মাঝে শূন্যতাকে আরো প্রকট করে দিচ্ছে অজানা পাখীর ডাক! অন্যদিন হলে একটা সূরের মাধুর্য পাওয়া যেত কিন্তু আজ কেন যেন মনে হচ্ছে পাখীরা কিছু বলতে চায়ছে। অন্যরকম একটা করুণ সূরধ্বনি ভেসে বেড়ায় বাতাসের তালে তালে! কুয়াশা নেই, নেই শিশিরের ছোয়া। নেই কণকণে শীতল হাওয়া! তবু কেন এ সকাল আজ হেসে উঠেনা প্রতিদিনের মত?

জানালার পাশে বসে আনমনে ভাবনা ঘিরে ধরে। হাতের ছোয়া লেগে ঝনঝন শব্দ শুনে বুকচীরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে । আজ তার জীবনে একটা বিশেষ দিন অথচ এই দিনটাকে দেখে সবচেয়ে যে মানুষটা খুশি হত সে আজ তার পাশে নেই! আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা, তারপর…



আনমনে হাত বাড়িয়ে তুলে নেয় লাল টকটকে চুড়ীগুলো । দুই আঙুলের মাঝে নিয়ে কানের কাছে ধরে ঝনঝন শব্দ তুলে হেসে দেয় শেফালী। কতদিনের শখ ছিল তার, এই দুইহাত ভরে সে চুড়ী পরে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়াবে। মনে পড়ে বাবা বেঁচে থাকতে তাকে গ্রামের মেলায় নিয়ে গিয়ে দুগাছি চুড়ী আর ভেলভেটের ফিতা কিনে দিয়েছিল। কিশোরী শেফালী সেদিন মায়ের একটা শাড়ী পরে বেণী দুলিয়ে গ্রামের সবুজ ক্ষেতের আইল ধরে প্রজাপতির মত উড়ে চলেছিল । কিন্তু কিছুদুর যেতেই ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে চুড়ী ভেঙে টপটপ করে রক্ত পড়ে তার হাত থেকে-

-আহহা রে এতো ছুটতাছোস ক্যা?

চোখ তুলে তাকিয়ে লজ্জায় মরে যায় শেফা। সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে সে কোনভাবেই এখানে আশা করেনি! সেজেগুজে সেতো তারই কাছে যাচ্ছিল। অথচ কেমন করে যেন এখানেই দেখা হয়ে গেল। খবির শেফালীকে শেফা বলে ডাকে। তার ডাকে যেন অন্য রকম একটা মাদকতা আছে ! যার শ্রবনে অনুভুতি খেলে যায় সারা দেহ জুড়ে।

-কীরে সেফা কতা কসনা ক্যা?

-কি কমু? লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে।

-আইজ গো হাইজা গুইজা কই যাইতেছোস? কার খোঁজে যাইতেছোস?

-জানি না... হাত দুটো ধরে খবির নিজের হাতে নেয়। রক্ত মুছে দেয় নিজের কাঁধে থাকা গামছা দিয়ে।

-আমার চুড়ী ভাইঙ্গা গেছে! নাকী কান্নায় কথাটা বলে শেফা।

-তরে আমি হাত ভইরা চুরী কিইনা দিমু। আমি তর চুরীর শব্দে খুইজা লমু তুই কোনখানে।

কথাটা শুনে লজ্জায় মরে যায় শেফা।

-ইস শখ কত আফনের, আমারে চুড়ী কিন্না দিব...আমারে পাওন অত সোজা না সাহেব। কথাটা বলে ছুটে যায় চঞ্চলা হরিণীর মত।

-ওক্কে দেখুমনে আমি ছাড়া তরে কেডাই পায়... চাকুরিডা পাইতে দে তরে আমি সখী কইরা ছাড়ুম...! চিৎকার দিয়ে কথাটা বলে। ফাঁকা খোলা ক্ষেতের বাতাসে কথাটা প্রতিধ্বনিত হয়। পিছনে ঘুরে শেফা জিভ ভেংচে চলে যায়।

দুই

আর মাত্র কয়েক দিন অথবা বছর। চাকুরীটা হলেই তারপরই দুজনের একসাথে বসবাস। খবিরের দুনিয়াতে কেউ নেই। একদিন রাক্ষুসি নদী রাতের অন্ধকারে ঘরবাড়ির সাথে ঘুমন্ত মা বাবাকেও খেয়ে নিয়েছে! কেবল সে বেঁচে গেছে অলৌকিকভাবে । সেই থেকে একা একা থাকে মহাজনের বাড়িতে । এই বাড়ীতেই শেফার বাবা মা দুজনেই খবিরকে পেয়ে ভীষণ খুশি। আর তাই শেফা আর খ্বির এই দুজনকে একসাথে করতে পারলে তাঁদের একটা স্বপ্ন পূরণ হবে। কিন্তু করুণাময়ের এই চাওয়াটা যেন মঞ্জুর ছিলনা। আর তাইতো সেদিন শেফা খবিরের কাছ থেকে হাতভরা চুড়ী পাবার আশ্বাস পেয়ে খুশিতে চঞ্চলা হরিনীর মত ছুটে বাড়ীতে পৌছে

‪ । কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে উঠানে বাবার নিথর দেহটা পড়ে আছে। বৃদ্ধ অসুস্থ্য বাবা মহাজনের জমিতে একচালা ঘর করে সবাইকে নিয়ে থাকত। মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে গাছ ছাটাই ও গাছ কাটার কাজ করে দুমুঠো খাবার এনে পাঁচজন মানুষের মুখে তুলে দিত। ‬

একসময় তাদের অনেক জমি ছিল, ঘর ছিল । বাড়ীতে পুকুর ভরা মাছ ছিল, গোলাভরা ছিল ধান ! সবকিছু কেড়ে নিয়েছে ক্ষুধার্ত নদী ! তবু ওতো বাবা দুমুঠো খাবার এনে দিত কিন্তু এখন কী হবে? কী করে ছোট ভাইবোন আর মায়ের মুখে দুবেলা খাবার তুলে দেবে কেউ? কেউ তো নেই তাদের পাশে। অভাবের মাঝেও যে সুখটুকু ছিল তা উড়ে গেল কর্পূরের মত। মা নিজে মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে কাজ করে ঠিক-ই ,কিন্তু হাঁপানির জন্য অনেক কষ্ট হয় তার। শেফালী কাজ করতে চায় কিন্তু খবির নিজেও চায়না সে মানুষের বাসায় কাজ করুক।

স্বপ্নের আলোতে আলোকিত হতে সেই স্বপ্নের সিঁড়ির খোঁজে খবির চলে যায় শহরে । একটা কাজ যোগাড় হয় ঠিকই কিন্তু যে টাকা পায় তাতে তার নিজেরই অনেক কষ্টে চলে। তবুও খেয়ে না খেয়ে শেফালীদেরকে কিছু টাকা পাঠায়।শেফালি ও তার পরিবার তিনটা বছর বহু কষ্টে গ্রামে থেকে এভাবে আধাপেট খেয়ে থাকলেও এক সময়ে থাকার জায়গাটা ছেড়ে দিতে হয় মহাজনের হুকুমে। এখন কী হবে?

খবিরই নিজে থেকে শেফালীর পরিবারের সব দায়িত্ব নিয়ে নেয়। শেফার কথা সেও চাকুরী করবে। খবিরের একার টাকায় সে সংসার করবে না। আর তাই চীরচেনা মাটির নিবিড় বন্ধন ছেড়ে বাচাঁর তাগিদে শেফালী খবিরের সহয়তায় মা ভাইবোনকে সঙ্গে করে চলে আসে আলো ঝলমল প্রাচুর্য্যময় শহরে। একটুখানি সুখের আশায় সবাইকে নিয়ে ওঠে একটা বস্তিতে ।



তিন

"-ওক্কে দেখুমনে আমি ছাড়া তরে কেডাই পায়... চাকুরিডা পাইতে দে তরে আমি সখী কইরা ছাড়ুম...!" সে কথার সুর আজো বাজে শেফার কানে । আজ দশদিন হয়েছে শেফালী এই শহরে এসেছে। খবির এই শহরেই একটা মার্কেটে কাজ করে। সেই মার্কেটের পাশে থাকা এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সুপারভাইজারের হাঁতে পায়ে ধরে শেফালীর একটা কাজের ব্যবস্থা করেছে সে। সেখানেই শেফালীর দুইদিন হল একটা কাজ হয়েছে। কাজ ঠিক না ট্রেনিং নিয়েছে। বলেছে তাকে কাজে খুব শীঘ্রই নেয়া হবে! ফোন করলেই আসতে হবে তবে এই ট্রেনিঙের জন্য কোন টাকা দেবে না তারা!

কাল রাতে কি সুন্দর রেশমি চুড়ী এনে দিয়েছে খবির। শেফার মা আজই দুজনকে বিয়ে দেবে। এমনিতে শরীরটা ভালনা তার উপর দুইটা শেয়ানা ছেলে মেয়েকে এভাবে একসাথে চলাফেরা করতে দেখে দুশ্চিন্তায় শরীরটা আরো খারাপ হয় । দুজনের এমন করে মেলামেশা ঠিক ভাল দেখায় না তার কাছে ।



গরিবের বিয়েতে ধনীদের মত খুব আনন্দ নেই,নেই বাড়তি চাকচিক্য । তবুও অন্য দশজনের মত আছে চোখভরা স্বপ্ন আর খুশির স্রোত। সেই স্রোতে ভেসে যায় এই বস্তি আজ ..

শেফা ভাবে বাবা বেঁচে থাকলে অনেক কিছুই তাকে চিন্তা করতে হত না! সে জানে না কীভাবে এই শহরের বুকে মা ভাই বোনকে নিয়ে দুবেলা আধাপেট খেয়ে হলেও বেঁচে থাকবে? দু দিনের কাজের অভিজ্ঞায় সে বুঝে গেছে এখানে থাকতে হলে মুখ বন্ধ করে সব অন্যায় সইতে হবে। তার উপরে থাকা মানুষদের ঈশারা বুঝে সামনে পা দিতে হবে। পা পিছনে গেছ তো খোঁড়া হয়ে থাকতে হবে! কষ্টে পোষা জানটাও চলে যেতে পারে নিঃসন্দেহে !

খবিরের উপর অনেক ভরসা আছে কিন্তু এতোগুলো মানুষের দায়ভার নেয়া তো কম ঝামেলার নয়? শেফালী কীভাবে কী করবে বুঝে উঠতে পারে না ।

-কীরে কী ভাবতেছোস তুই?

চমকে উঠে শেফালী। এতক্ষণ যেন সে অন্য জগতে ছিল। এই সাত সকালে খবির এসে হাজির…যেন তর সইছেনা!

-অহনও রেডী হস নাই

খুব অবাক হয়ে তাকায় যেন সে কিছুই জানেনা । তার চোখের ভাষা ঠিক-ই খবির পড়তে পারে

-আরে একটু আগে সুপারভাইজারে কল দিছে আটটার মধ্যে যাইতে হইবে। তর কামের জন্য।…কয়ছে আইজগো থাইকা কামে লাগতে হইব।

-তাইলে বি...! কথা শেষ করতে পারেনা। লজ্জা পায়

খবির শেফালীর মুখ দু হাতের মাঝে তুলে নিয়ে বলে

-হইব তো । আমি সুপারভাইজাররে কইছি বারটার মধ্যে তরে ছুডি দিতে। হে কইছে দিয়া দিব। আমি তো ছুডি নিয়া নিছি।

-তাইলে আফনেও চলেন আমার লগে! ক্যামন যেন ভয় ভয় করে।

শেফালীর মন একেবারেই টানেনা ঘরের বাইরে যেতে। মনে পড়ে পাখীদের করুণ সুরে গানের কথা! দুরু দুরু বুকে সে স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে চুলটা পরিপাটি করে নেয়। চোখ যায় চুড়ীর দিকে। খবির শেফার হাত টেনে একেবারে বুকের কাছে নিয়ে আসে। সে নিজেই শেফার বুকের স্পন্দন শুনতে পায়। শেফা প্রিয় মানুষটার বুকে মুখ ঘষে ঘামের গন্ধ নেয়। পরমুহুর্তে কী এক অজানা ভয়ে কুঁকড়ে যায়। খবির আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে শেফালীকে নির্ভয় দেয় । কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে “আমার জান যাইব তবু তর কিছু হইতে দিমুনা রে পাগলী” চিবুকটা তুলে ধরে নিজের দিকে। বিয়ে উপলক্ষ্যে দুইহাজার টাকায় চোরের কাছ থেকে কেনা মোবাইলে ক্লিক ক্লিক করে তুলে নেয় এই মুহূর্তের ছবি। টপটপ করে গড়িয়ে পড়ে দুফোটা পানি। শেফালী জানে এ সুখের অশ্রু...খবিরের মত মানুষ যার জীবনে আছে সে বড় ভাগ্য নিয়েই জন্মেছে। খবিরের চোখও কী কারনে যেন ভিজে আসে ! সেদিকে খেয়াল না করে হাত বাড়িয়ে নিজেই শেফালীর হাঁতে চুড়ীগুলো পরিয়ে দেয়। তারপর দুজনে একসাথে বের হয়ে রিকশায় চড়ে বসে। হেঁটেও যাওয়া যায় । কিন্তু খবির আজ প্রিয়তমাকে নিয়ে দুজনে পাশাপাশি বসে রিকসার হুড নামিয়ে খোলা আকাশে উড়তে চায়।‬



শেষ

দু’জনে নামে একটা বিশাল বিল্ডিঙের সামনে। এতো বড় দালান শেফালী জীবনেও দেখেনি। দুজনে হাত ধরাধরি করে ঢুকে যায় ভিতরে। সময়ের একটু আগেই এসে পৌছায়। খবির অবাক হয় অন্য দিনের তুলনায় মানুষ কিছুটা কম দেখে! সবার মাঝে ফিসফিস করে কীসব কথা বলতে দেখে সে! কারো কারো চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। কয়েকজনকে দেখা গেল ওড়নায় চোখ মুছতে। লজ্জা শরম খেয়ে শেফা খবিরকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে! খবির শেফার হাতটা কীভেবে নিজের বুকের কাছে নেয়। কেমন একটা কষ্ট অনুভুত হয় বুকের বাম পাঁশে কিন্তু শেফার হাতটা বুকে ছোঁয়াতেই ব্যথাটা কম মনে হয়!

“কীরে ভয় লাগতাছে?”

শেফা কোন উত্তর না দিয়ে ডান হাতে ওড়নার খুঁট দাঁতের মাঝে নিয়ে লজ্জায় মাথা নীচু করে রাখে। খবির শেফার বাম হাতে মৃদু চাপ দিয়ে বলে

-“ইস বৌয়ের আমার কত শরম” হেসে দেয় কথাটা বলে। তারপর সুপারভাইজারের সাথে শেফালীকে দেখা করিয়ে দেয়। সুপার ভাইজার বলে বারোটায় শেফালীকে ছুটি দিয়ে দেবে। খবিরের অনুভূতিতে একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায়। কী এক অজানা ভয়ে সারা গা শিউরে উঠে । কপালের ঘাম মুছে নিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে আটটা বাজে। আরে মাত্রতো তিন ঘন্টা,সাড়ে তিন ঘন্টা!

খবির বের হয়ে তপ্ত রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে মাথায় হাত চালায়। সে ভাবে এইফাকে কিছু ফুল কিনে বাসর সাজালে কেমন হয়? শেফা নিশ্চয় দেখে অনেক খুশি হবে। চলে যায় পাশেই একটা ফুলের দোকানে। দামাদামি করে কিনে নেয় কিছু ফুল। ব্যাগটা হাতে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতেই দেখে সারী সারী এ্যাম্বুলেন্স, দমকল আর পুলিশের গাড়ী ছুটে যাচ্ছে সামনের দিকেই।“আরে দ্যাশে কী গজব পড়ল নাকী”!

আজ প্রায় দুই বছর ধরে সে এই শহরে আছে এমন করে শহরটাকে সে বেশ কয়েকবারই দেখেছে। কিন্তু আজ যেন অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশী গুরুতর কিছু মনে হচ্ছে।“আল্লায় জানে আজ আবার কার বুক খালি হইল!” একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে দেহটাকে কাঁপিয়ে। ব্যাগটা হাতে নিয়ে কী মনে করে ছুটে যায় গাড়ীগুলোর পিছনে পিছনে। যত এগিয়ে যায় বুকটা ধড়ফড় করে উঠে অজানা এক ব্যথায়। যা সে ভাবতেও পারেনি। যা সে মাথায়ও আনেনি তাই হয়েছে। নয়তলা বিল্ডিংটা একেবারে মাটির সাথে মিশে গেছে। চারিদিকে “বাঁচাও বাঁচাও” চিৎকার আর মানুষের আহাজারি! দলে দলে লোক ছুটে চলেছে সেই স্তূপের ভীতরে। খবিরও ছুটে যায়।পাগলের মত ছুটোছুটি করতে থাকে।

একে একে বের করে আনে বেশ কয়েকজন আহত মানুষ। বের করে আনে কিছু মৃত লাশ। যা দেখে হিংস্র শিকারির মত দুহাত দিয়ে খামচে সরায় ইট বালির স্তূপ। চিৎকার দিয়ে ডাক দেয়-“শেফা.....শেফা রে এ এ এ.....”! কেউ সাড়া দেয়না। লোকেলোকারন্য চারিদিক। হাহাকার আর কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে গেছে। একনাগাড়ে কয়েক ঘন্টা খুঁজেও পায়না প্রিয়তমাকে! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বাড়টা বাজে। হু হু করে কেঁদে যায় সারা পৃথিবী । একটু দূরে দেখে ফুলের সেই ব্যগটা। কখন যেন এদিকেই ছুড়ে ফেলেছিল সে। ব্যগটা হাঁতে নিতে গিয়ে ফুলগুলো সব পড়ে যায়।“শেফা.....শেফা রে.. তুই কই..”! পড়ে যাওয়া সেই ফুল তুলতে গিয়ে চোখে পড়ে লাল কিছু। হাতের ফুল্গুলো সব ছুড়ে ফেলে দুহাতে সরিয়ে নেয় বালি আর প্লাসটার। বের হয়ে আসে লাল রেশমি চুড়ী পরা একটা হাত।

“শেফা...শেফা
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সেলিনা ইসলাম গল্প পড়ে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে আমার লেখাকে অলঙ্কৃত করায় সবাইকে জানাই অনেক অনেকে ধন্যবাদ-সবার জন্য রইল সতত শুভকামনা
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মোঃ মহিউদ্দীন সান্‌তু এমনই কতশত গল্প হয়ত আজও নিভৃতে কাঁদছে ঐ বিদ্ধস্ত নয় তলার নিচে, যাহা আমাদের অজানাই থেকে যাবে। লেখক খুবই নিপুন ভাবে তার একটি তুলে এনেছেন, খুবই ভালো লাগলো গল্পটি। শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
তাপসকিরণ রায় গল্পের রূপরেখা সুন্দর--সেই রূপরেখার ওপরের সাজসজ্জাও চমৎকার--লেখার বর্ণনা ভঙ্গী বেশ ভাল--সব মিলিয়ে পূর্ণাগ একটি গল্প।
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ফেরদৌসী বেগম (শিল্পী ) খুবই কষ্টের হলেও, অসম্ভব সুন্দর লিখেছেন সেলিনা আপা। ভালোলাগা আর শুভকামনা রেখে গেলাম।
ভালো লাগেনি ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
সেলিনা ইসলাম সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে গল্প পড়ে মন্তব্য করার জন্য -সবার জন্য শুভ্কামান
ভালো লাগেনি ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ...বের হয়ে আসে লাল রেশমি চুড়ী পরা একটা হাত...। খুব ভাল লিখেছেন।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
বশির আহমেদ গল্পটাকে এভাবে রানা প্লাজার দিকে টেনে নেবেন ভাবতে পারিনি । প্রথমে ভেবেছিলাম শেফালীকে হয়তো পঙ্কিল রাস্তায় ঠেলে দেবে । অনেক অনেক ধণ্যবাদ লেখিকার জন্য । সুন্দর সাবলিল একটি গল্প উপহার দেবার জন্য ।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
এশরার লতিফ ধনীদের লোভের কাছে এভাবেই মৃত্যু ঘটে সাধারণ মানুষের স্বপ্নের, খুব ভালো লাগলো.
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ধনীদের লোভের কাছে এভাবেই মৃত্যু ঘটে সাধারণ মানুষের স্বপ্নের, - ঠিক তাই ! গল্পটা যে এত বড় হবে ভাবেনি ! সময় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ওয়াহিদ মামুন লাভলু দুঃখজনক করুন একটা গল্প। অনেক অনেক ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম। শ্রদ্ধা জানবেন।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
অনেক ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
সেলিনা ইসলাম গল্পের শেষের অংশ আসেনি তাই পাঠকের সুবিধার জন্য মন্তব্যের ঘরে দিলাম । কর্তৃপক্ষকে মেইল করেছি তাঁরা সময় পেলে হয়তবা ঠিক করে দিবেন । ধন্যবাদ “শেফা...শেফা...এই তো আমার শেফা”খুব যত্ন করে দুহাতে বালি সুরকি সরিয়ে প্রিয় মানুষটার মাথাটা বের করে নিজের কোলের উপর রাখে। নিথর দেহটা নিয়ে ঠিক কী করতে হবে এখন বুঝে উঠতে পারেনা সে। ছটফট করতে করতে গগন বিদারী চিৎকারে বাতাস ভারী করে তোলে। “কিচ্ছু হবেনা তোর তুই দেখে নিস, কিচ্ছু হইতে দিমুনা তোর”! কথাগুলো বলে কাঁপতে থাকে খবির। যেন এই মুহূর্তে সব শক্তি কে যেন নিয়ে গেছে, একটুও শক্তি পাচ্ছেনা সে । ছুটে আসে আরো দুজন ছেলে। ধীরে ধীরে বের করে আনে প্রিয়তমা শেফাকে। মুখটা একেবারেই চেনা যায়না। বুকের মাঝে নিয়ে ছুটে যায় ডাক্তারের কাছে ... তারা শেফালীকে মৃত ঘোষণা করে । বিশ্বাস করতে পারেনা খবির। এম্বুলেন্সের পিছনে পিছনে ছুটে এসে সে দাঁড়ায় অধরচন্দ্র স্কুল মাঠে! ততক্ষণে শেফালীর মা ভাইবোন সবাই এসে হাউমাউ করে কেঁদে চলে। লাশ বুঝে নেয় শেফালীর মা! আর খবিরের হাতে শেফালীর লাল দুগাছি চুড়ী। বাকিগুলো সব খেয়ে নিয়েছে ঐ পৈশাচিক দালানটা। মায়ের ছেড়া আঁচলের মাঝে মেয়ের জীবনের দামে পাওয়া কিছু টাকা । কানা ঘুষায় শুনেছে বিশ হাজার দেবার কথা থাকলেও দিয়েছে দশ হাজার। বাকী টাকা কেটে রেখেছে ! কিন্তু কেন? কীসের দরুন? কিছুই জানেনা কেউ! টাকাটা আঁচলে বেঁধে নিথর দেহটা ভ্যানে তুলে মা রওনা দেয় গ্রামের পথে। মেয়েটা একটু শান্তি পেতে চেয়েছিল । চেয়েছিল ভাইবোনকে লেখাপড়া শেখাবে,দুবেলা দুমুঠো খাবার তাদের মুখে দিতে না পারুক মানুষের মত মানুষ করে তুলবে...। মেয়েটা নিজের সুখ,হাসি আর আলোকিত জীবন বিসর্জন দিয়ে ছোট্ট একটা ঘরের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু এই ডাইনী শহর আর শহরের লোভী দানব সন্তানেরা শুরুতেই সবকিছু খেয়ে নিল...! খুব ইচ্ছে হয় কুড়িদিনের পিছনে ফিরে যেতে। খুব আকাঙ্ক্ষা জাগে মনে,যদি একবার ফিরে যাওয়া যেত ক্যাসেটের ফিতে টেনে ছবি দেখার মত করে! তাহলে আর কোনদিন এই মানুষ খেকো শহরে সে আসতো না। যদি জানতো এই শহরের মানুষেরা গরীবের রক্তে বিলাসিতা করে আর সেই গরীবদের একমুঠো ভাতের টাকা নিজেদের জিম্মায় রেখে ফাস্টফুডের খাবারে ধুয়ো উড়ায়! আবার জুয়ার পানসি তে গা ভাসিয়ে শ্যাম্পেনে সুখ খোঁজে! আর সেই গরীবের বেতনের টাকা দিতে কুণ্ঠা বোধ করে, তাহলে সে এই শহরে না খেয়ে মরে গেলেও কোনদিনই সন্তানদেরকে নিয়ে আসতো না...। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে এক হাতে ছোট বাচ্চাদুটোকে বুকে জড়িয়ে ধরে বোবা কান্নায়...আরেক হাতে খেজুর পাতায় মোড়ানো নিথর দেহটাকে স্পর্শ করে মা। সবাইকে নিয়ে না খেয়ে মরে যাবে নিজের সবুজ গ্রামে তবুও সে এই পথে আর হাঁটবে না কোনদিন...। এদিকে দিন গড়িয়ে হয় মাস...বিধ্বংসিত মানুষ খেকো দালানের জায়গাটা ঘিরে টিন-বাঁশের বেড়া। আর তারই পাশে ইদানিং একজন নতুন পাগলকে দেখা যায়। দুচোখ ভরা অসীম শূন্যতা নিয়ে সুদূর আকাশে তাকিয়ে অপেক্ষায় থাকে । কেউ জানেনা কার অভিলাষে? কী আশায়? কীসের অভিপ্রায়ে সে ঘুরে বেড়ায় ? তা কেউ জানে না...কেউ কাছে ডেকে কিছু জিজ্ঞাসাও করে না...! কী ঘটেছিল এখানে...? কেন এবং কারা ঘটিয়েছিল এই ঘটনা? নদী তার ক্ষুদা মেটাতে খেয়ে নেয় এককূলের ফসলি জমি ,বাসযোগ্য ভূমি আর প্রিয়জন। বিনিময়ে গড়ে তোলে আরেক কূল । তখন করুনাময়ের কাছে কৃপা ভিক্ষা চেয়ে নিজের ভাগ্যকে মেনে নিতে হয় । কিন্তু এই স্বার্থেন্বেষী সর্বনাশা তান্ডব মেনে নেয়া যায় না, মেনে নিতে কী বিবেক বিদ্রোহ করে না? এই তান্ডবের জন্য আসলে কে বা কারা দায়ী ? তার বা তাদের কী কোন সাজা হয়? এমন ঘটনার কী কোন প্রতিকার বা সমাধান নেই ? আর কত শেফালি, খবিরের স্বপ্নের ডিঙ্গি কুলে ভেড়ার আগেই অথৈ সাগরে ডুবে যাবে ? আর কত শেফালির পরিবার বেঁচে থাকার তাগিদে একমুঠো ঘাস আকড়ে ধরে বাঁচার শেষ পথ্টা হারিয়ে নর্দমায় হাবুডুবু খাবে? কেন এই মানুষ্গুলোর জীবনের কোন নিরাপত্তা বা মুল্য নেই ? এমন একটি ঘটনা হাজারও প্রশ্নের জন্ম দিলেও উত্তর মেলেনা একটিরও । আর তাই হয়ত ধারাবাহিকভাবে ঘটে যায় অনাকাংখিত সব ঘটনা! আর এই ঘটনা স্থলে সাময়িক্ভাবে নেমে আসে শোকের ছায়া । ব্যতিক্রম, ব্যস্ত শহরের মানুষ্গুলো ছুটে যেতে যেতে কেউ কেউ দেখতে পায়-পাগলটার গলায় শোভা পাচ্ছে,কালো সুতোয় বাঁধা ভালবাসার দু’গাছি রেশমি চুড়ি...। **শেষ**
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪