প্রায়শ্চিত্ত

শাড়ী (সেপ্টেম্বর ২০১২)

সেলিনা ইসলাম
  • ৩৪
  • ১১
চারিদিকে বেশ অন্ধকার হয়ে গেল । আজ যেন চাঁদও মুখ গোমড়া করে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে । সাধারণত বিদ্যুৎ চলে গেলেও চাঁদের হাসিতে চারিদিক বেশ দেখা যায় । যদিও আলো-আঁধারীতে কেমন যেন একটা গা ছমছম করা অনুভূতি কাজ করে । আর তাই হয়তবা রোশনি অন্ধকারকে খুব বেশী ভয় পায় । কারেন্ট যেতেই মায়ের আঁচল ধরে আস্তে আস্তে হেটে ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় আসে । মা যে বেশ বিরক্ত হচ্ছে বুঝতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না তার । এমন করে মাকে জড়িয়ে ধরেছে যে মা হারিকেনের আলো জ্বালবে তাও পারছে না । -আঁচলটা ছাড়না রে মা , অন্ধকারে তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না । আর আলোর মাঝে থেকে হঠাৎ আলো চলে গেলে চোখে কিচ্ছুই দেখা যায়না । আমাকে অন্তত হারিকেন জ্বালাতে দে !
রোশনি কোন কথার জবাব দেয় না , মাকেও ছাড়ে না । মা কিসের সাথে ধাক্কা খেয়ে হুড়মুড় করে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নেয় । বেশ রেগে গিয়ে বলে
-কে রে এখানে ঘাপটি মেরে বসে আছে ?
-বৌমা আমি ।
-আল্লাহ্‌ চাচী ! আপনি কখন এলেন আর অন্ধকারে কেন বসে আছেন ?
-এইতো মা কিচ্ছুক্ষন আগে এলাম , এমনি বসে আছি ।
-আমাকে ডাক দিতেন ।
-না রে মা আর কত বিরক্ত করব ? ভাল লাগেনা আর কাউকে বিরক্ত করতে ।
ফোঁসফোঁস করে খানিকটা বাতাস বের করে আনে বুকচীরে । মার আর বুঝতে বাকী থাকেনা যে আজও নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে ঐ বাড়ীতে । কেউ কিছু বলেছে এই মানুষটাকে । শুধু শুধু ক্ষতের উপরে আরো আঘাত করে ব্যাথা দেয়া হবে ভেবে মা আর কিছু জিজ্ঞাসা করে না ।
-রোশনি দাদীর কাছে বসো মা, আমি হারিকেন নিয়ে আসি ।
দাদী যে অন্ধকারের মাঝেও বারবার ছেড়া শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নিচ্ছে তা বুঝতে পেরে ছোট্ট মনে কত রকম প্রশ্ন জাগে । মায়ের সাথে সারাটা সময় থাকে বিধায় রোশনি সব জানে এই দাদীর কথা । যা তাকে অনেক বেশী ভাবায় । কেমন করে নিজের পেটের সন্তানরা মাকে কষ্ট দেয় ? কেমন করে সব ছেলেদের আর্থিক সচ্ছলতা থাকা সত্বেও তাদের মা না খেয়ে থাকে ? যখন সব সন্তানরা পোলাও, কোর্মা খায় , কেন তখন তাদের মা ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার ঝুলি পেতে সাহায্য চায় ? কেন এমন হয় ? রোশনি জানে এসব সৎ ছেলেমেয়েদের সাথে সৎ মা করে কিন্তু আপন মায়ের সাথে পেটের সন্তানরা করতে পারে তা দাদীকে না দেখলে সে কোনদিনই বিশ্বাস করত না ।
~*~
মনোয়ারা বেগমকে ক্লাস এইটে থাকতেই বাবা মা ভাল পাত্র পেয়ে বিয়ে দিয়ে দেয় । ছেলে ভাল চাকুরী করে এবং দুই ভাই ,এক বোন তারা । বোনের বিয়ে হয়ে গেছে এবং ছোট ভাই তার সংসার নিয়ে আলাদা থাকে । বেশ সুখেই দিন চলে যায় মনোয়ারা বেগমের । সুখের দিনগুলো আরো উজ্জ্বল ঝলমলে করতে একে একে জন্ম নেয় দুই মেয়ে ও চার ছেলে । একটা সময় মনোয়ারা বেগম যেখানে নিরাবতার মাঝে দিন কাটাতো সেখানে আজ খুশীর উচ্ছলতা নিয়ে আসে এই ফুটফুটে ছয় সন্তান । মনোয়ারা বেগম জানে না বেহেস্তের সুখ কাকে বলে । তবে তার কাছে মনে হয় সন্তান ছাড়া বেহেস্তের সুখও মলিন হয়ে যায় । স্বামীর চাকুরীর টাকা আর তার পৈতৃক ভিটা সব মিলিয়ে বেশ সচ্ছলতায়ই কেটে যায় মনোয়ারার জীবন পঞ্জিনামার এক একটা দিন ।
দেবরের বৌ প্রতিদিন এসে মেয়ে দুটোকে কাছে নিয়ে যায় । অনেক আদর করে যার পরিনাম হয় মেয়ে দুটো মায়ের চেয়ে চাচীর কাছেই বেশী থাকতে পছন্দ করে । এই নিয়ে মনোয়ারা কোন অনুযোগও নেই । কারন সে জানে সন্তান না হবার কষ্ট কতটা । মাঝে মাঝে তো মেয়ে দুটো বাসায়ই আসে না ! থেকে যায় নীচে চাচা চাচীর সাথেই । স্বাভাবিকভাবেই মনোয়ারার কিছুটা রাগ বা হিংসা হবার কথা কিন্তু সে তাতো একেবারেই হয় না বরং মেয়েদেরকে শিখিয়ে দেয় চাচাকে আব্বা আর চাচীকে মা ডাকার জন্য । মেয়েরাও তাই করে । মনোয়ারা আল্লাহের কাছে সব সময় দোয়া করে যেন একটা সন্তান এই দম্পতির কোলজুড়ে আল্লাহপাক দেন ।
কিন্তু স্রষ্টা যা করবার তাতো কেউ না চাইতেই করবেন ! সুখ যেন ধূপের ধোঁয়া হয়ে উড়ে যায় । মনোয়ারার স্বামী ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন । দেবর ননদ সবাই বাবাতুল্য বড় ভাইকে বাঁচাতে সবরকম চেষ্টা করতে থাকে । দুই ভায়ের যেখানে যত টাকা,বাড়ী যা কিছু ছিল সবকিছু বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য ছুটে বেড়ায় । কিন্তু ক্যানসার নামক যম কোনভাবেই হার মানতে রাজী হয় না । একদিন সবাইকে সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে মনোয়ারাকে নিঃস্ব করে বিজয়ীর মুকুট পরে নেয় যমরাজ ।
দেবরের চাকুরী থাকাতে সে বাসাভাড়া করে থাকে কিন্তু বড় ভায়ের এতো বড় সংসার চালাতে সে হিমসিম খেলেও মুখ ফুটে মা সমান ভাবীকে কিছুই বলতে পারে না । মনোয়ারা সব কিছু বুঝতে পারে আর তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় আর এখানে সে থাকবে না । সবাই একসাথে মরে যাবার চেয়ে দেবর তার পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকুক । দেবরের পরিবার কথাটা মনে উঠতেই চোখের সামনে দেবর ,জা আর দুই মেয়ের ছবি ভেসে উঠে । কি সুন্দর সে ছবি !
~*~
একদিন কাকডাকা ভোরে চার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বেনাপোল বর্ডার পার হয়ে চলে আসে এই বাংলায় । উদ্দেশ্য একটাই- বেঁচে থাকা । যা ওপার বাংলায় সম্ভব হত না । সে যা লেখাপড়া জানে তা দিয়ে আর যাই হোক চাকুরী পাবেনা আর তাকে যা করতে হবে তাও ওখানে করা সম্ভব নয় মানসম্মানের কথা ভেবে । এপার বাংলায় এসে ঠায় হয় বিপত্নীক, অবসর প্রাপ্ত এক বিচারকের বাড়ীতে । করুণাময় যেন নিজে হাতে এই আশ্রয়টুকু লিখে রেখেছিলেন । মনোয়ারা বাড়ীর সমস্ত দেখাশুনার ভার খুব আপন করেই নিয়ে নেয় নিজের কাঁধে । তার ব্যাবহার এবং দায়িত্ববোধ কয়দিনের মধ্যেই বাড়ীর সবার মন জয় করে নেয় । সবার ভালবাসায় মনোয়ারা ভুলে যায় সব কষ্ট । জজসাহেব নিজেই বাচ্চাদেরকে একটা ভাল স্কুলে ভর্তি করে দেয় । সুখ যেখানে ভালবাসায় সিক্তনীড় বাঁধে দুঃখও যেন শতগুন শক্তি নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে । অসময়েই নিজের শক্তিতে ভেঙ্গে দেয় সুখের নীড় । দশ বছর না যেতেই জজসাহেব মারা যান । বড় ছেলেটা তখন কেবল কলেজে ভর্তি হয়েছে । এখন কি হবে ? একদিন জজসাহেবের ছেলে দশ হাজার টাকা মনোয়ারার হাতে দিয়ে বাড়ী থেকে বিদায় করে দেয় । আবারও পথে নামে ভাগ্যাহতা এক দুঃখিনী মা ।

মনোয়ারার এখন বয়স হয়েছে , আগের মত করে আর কাজও করতে পারেনা । দুঃশ্চিন্তা আর রোগে শোকে বেশ কাহিল হয়ে গিয়েছে সে । অনেক খুঁজে একটা বস্তিতে ঘর ভাড়া করে সে। সেই বস্তির মালিকই বড় ছেলেকে একটা জুটমিলে কাজ পাইয়ে দেয় । তাতে সে যে টাকা পায় তা দিয়ে ঘরভাড়া দেয়া গেলেও খাবার জোটে না । মনোয়ারা দেখল অন্য ছেলেদের পড়াশুনা প্রায় বন্ধ হতে চলেছে । এভাবে জীবনের কাছে হার মানতে সে একেবারেই রাজী নয় । আর তাই লাঠিতে ভর করে বের হয় রাস্তায় । মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে খাবার আর যে সাহায্য পায় তাই দিয়েই ছেলেদেরকে গড়ে তোলে একজন জীবন জয়ী সৈনিক করে । যারা জীবনের সাথে বাঁচার তাগিদে মাথা উঁচু করে বুক ফুলিয়ে বলবে -তারা তাঁদের পিতা জনাব রাহাত চৌধুরীর ছেলে । বংশীয় পরিচয় ধরে রাখতে এবং পিতার যোগ্য সন্তান করে গড়ে তুলতে যা কিছু করার তার সবটুকুই মনোয়ারা করবে । প্রিয়তম স্বামীকে সে নিজের চেয়েও অনেক বেশী ভালবেসেছে । তার সন্তানদেরকে সে কোনভাবেই অশিক্ষিত মূর্খ হতে দেবে না । সমাজের মাঝে একজন করে গড়ে তুলবেই ।
মনোয়ারা যেদিন এপারে চলে আসে সেদিন থেকে কোনদিন আর ওপারের কোন খবর করেনি । কিন্তু ইদানিং কেন জানি মেয়েদেরকে ভীষণভাবে মনে পড়ছে । কত বড় হয়েছে তারা? কার মত দেখতে হয়েছে তারা? তাদের কি বিয়ে হয়ে গেছে ? তারা কি বেঁচে আছে ? মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে ঘুরতে ঘুরতে মনে ভাসে হাজারো স্মৃতি । মেয়েদের ঝুটি বেঁধে দেয়া । নিজের শাড়ী পরিয়ে দিয়ে বউ সাজানো আরো কত কি ।
এভাবেই ঘুরতে ঘুরতেই পরিচয় রোশনির মা মমতার সাথে । মনোয়ারাকে কখনোই সে ভিক্ষুক ভাবে না । যখনই আসে বেশ যত্ন করে খাওয়ায় এবং বাচ্চাদের জন্য অনেক কিছু সঙ্গে দিয়ে দেয় । এমন করেই দিন চলে যায় ।
~*~
মনোয়ারার বড় ছেলে জুটমিলের কাজে বেশ ভাল করে । ধীরে ধীরে সে হিসাবরক্ষকের পদে পদোন্নতি করে । কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বড়ছেলে মাকে কোন কিছুই বলেনা । বরং মনোয়ারার কাছে সবসময় দেখায় সে যা বেতন পায় তাতে ঘরভাড়া দেবার পরে তার হাতে টাকা থাকে না । মেজোছেলে,সেজোছেলে সবাই চাকুরী নিয়ে বিভীন্ন শহরে চলে যায় । একটা সময়ে সবাই মাকে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে । কেমন করে বলবে এই ভিখারিনী তাদের মা ? ছোট ছেলেও মায়ের সাথে বেশ খারাপ ব্যাবহার করে । ছেলেরা যত খারাপ ব্যাবহার করে তত বেশী মেয়েদের জন্য মনটা হু হু করে উঠে । মনোয়ারা ভাবে এটা তার প্রাপ্য ছিল । নিজের ঐরষজাত সন্তানদেরকে সে ফেলে এসেছে । তবে কি আজ যা কিছু তার ভাগ্যে জুটছে তা তার প্রায়শ্চিত্ত ? ছোট ছেলে মায়ের সাথেই বস্তিতে থাকে । ভিক্ষার টাকা হাতে নিতে এবং খাবার খেতে কোন খারাপ লাগে না কিন্তু মায়ের পরিচয় দিতে এবং মা কেন ভিক্ষা করে সেই শাস্তি দিতেই মাকে পাশ কাঁটিয়ে চলে ।
বেশ কিছুদিন ধরে বড় ছেলেও আর বাসায় আসে না । অনেক খোঁজাখুঁজির পরে জানতে পারে সে অন্য ফ্যাক্টরিতে ভাল টাকার চাকুরী পেয়ে চলে গেছে । বিয়েও করেছে অথচ মনোয়ারা এর কিছুই জানে না । বস্তির ঘরের ভাড়া দেয়া সম্ভবপর হয়না মনোয়ারার । শরীরটাও আর চলতে চায়না । ছোট ছেলেটাও একদিন কোথায় যেন চলে যায় মাকে কিছু না বলে । একা থাকতে মনোয়ারার অনেক বেশী ভয় । একদিন রোশনিদের বাড়িতে ভিক্ষা করতে এসে বারান্দায় অজ্ঞান হয়ে যায় । মমতা ওই বারান্দায়ই একটা খাটের ব্যাবস্থা করে শোবার জায়গা করে দেয় । দুই তিনদিন ঘোরের মাঝে থেকে যখন সে সুস্থ হয় তখন মেয়েদের জন্য অস্থির হয়ে উঠে সে । তার মন বলে সে আর বাঁচবে না । রোশনির মাকে দিয়ে একটা চিঠি লেখায় এবং দেবরের ঠিকানায় পোষ্ট করে দেয় । চিঠি পোষ্ট করে যেন বড় একটা বোঝা বুক থেকে ধীরেধীরে সরে যায় । মেয়েদের দেখার আনন্দে বেশ একটা প্রশান্তির ঢেউ খেলে যায় মনে । অপেক্ষা করতে থাকে কবে এই চিঠি পেয়ে মেয়েরা ছুটে আসবে মায়ের বুকে ।
মমতা হাজার বলা স্বত্বেও মনোয়ারা ভিক্ষা করতে নেমে যায় । সে কারো বোঝা হয়ে থাকতে চায়না । কিন্তু রাত হলে ছুটে আসে থাকার জন্য । ভিক্ষা করাটা এখন উছিলা সে আসলে ছোট ছেলেকে খুঁজে ফেরে । মাঝে মাঝে বড় ছেলের বাড়ীর সামনে লুকিয়ে থেকে এক পলক দেখে আসে ।
~*~
রোশনিদের বাড়ীর পাশে নতুন একটা দালান উঠে । সেখানে নতুন বাড়ীওয়ালা আসে । মনোয়ারা রোশনিকে অনেক ভালবাসে । একদিন রোশনিকে সাথে নিয়ে পাশের ঐ বাড়ীতে যায় । ভিক্ষা করতে না , দেখতে যায় কারা এসেছে এই বাড়ীতে । রোশনি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বউয়ের দিকে । কি সুন্দর দেখতে । কিন্তু চোখ দুটো ঘোলা যা দেখে রোশনির চোখ যেন ঐ দুচোখে আঁটকে যায় । মানুষের চোখ এমন হয় নাকি ? বিড়ালের চোখের মত ! রোশনি চমকে উঠে ঐ বউয়ের কথায় । দেখে মনোয়ারাকে বলছে -
‘আরে তোমরা ভিক্ষা করার আর সময় পাওনা না ? এখন এই বিকালে কি কেউ ভিক্ষা দেয় ? তোমার সাহস হল কি করে বাড়ীর ভিতরে ঢুকতে ?’
- মা আমি ভিক্ষা করতে আসিনি । তোমাকে দেখতে এসেছি ।
-কেন আমাকে দেখার কি আছে ? বের হও ! যাও গেটের বাইরে চুরী করার ধান্ধা নাহ ?
-আরে এতো চিৎকার করছো কেন ? কি হয়েছে ? কথাগুলো বলতে বলতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে একজন লোক । যাকে দেখে মনোয়ারার সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকে । খুব অস্ফুটে বলে “বড় খোকা ...তুই , বাবা এখানে …?”
লোকটা কিছু না বলে বৌটাকে নিয়ে ভিতরে যায় । রোশনির হাত ধরে বাড়ীতে এসে সেকি উচ্ছ্বাস বুড়ীর ।
-মাগো ঐ বাড়ী আর কেউ না আমার বড় খোকা কিনেছে । আমার বড় খোকা দালান দিয়েছে । বাবা আমার অনেক ভাল আছে, অনেক ।
বুড়ী এখন প্রায়ই ঐ বাড়িতে যায় । ভিক্ষা করা একরকম ছেড়েই দিয়েছে । রোশনিদের বাসার ভাতের মাড় থেকে শুরু করে পান্তা সবকিছু খায় তবু আর কোথাও যায় না ।
~*~
বড় খোকার ছেলে হয়েছে সেই খুশিতে বুড়ী ছোট ছোট কাঁথা সেলাই করে নিয়ে যায় । আজ আর বৌটা কিছুই বলেনা তবে ঘরে ঢুকতে দেয় না । মনোয়ারা এদিক ওদিক উকি দিয়ে রক্তের বাঁধনকে খোঁজে একনজর দেখার জন্য । চোখ দুটো যে খুবই তৃষ্ণার্ত ! চাওয়াটাও বুঝি অনেক বেশী ? দাওয়ায় কিছুক্ষন বসে কাঁথাগুলো দিয়ে চলে আসে । বউটা নিজে হাতে কাঁথা নেয়না । কাজের মেয়েকে বলে নিতে । কয়েকদিন পরে বুড়ী নিজে থেকেই চলে আসে । বড়ছেলের বাসার বারান্দায় থাকে । আর প্রায় এসে রোশনিদের বাড়িতে মায়ের কাছে কিছুক্ষন কেঁদে কেটে যায় ।
আজও কিছু একটা হয়েছে হয়ত । রোশনি অন্ধকারের মাঝেই দাদীর কোল ঘেঁষে বসে ।দাদীর গায়ের ছেড়া কাপড় থেকে গন্ধ বের হয় । মা হারিকেন এনে পাশে বসে ।
-কি হয়েছে চাচী ? দুদিন পরে ঈদ কোথায় আনন্দ করবেন , তা না মুখ ভার করে বসে আছেন ।
-বৌমা কালকে রোশনিকে একটু সাথে দিবা ? একটা বড় করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ।
-কেন চাচী ? কোথায় যাবেন ?
মমতা মেয়েকে দিতে চায়না কারন সে জানে মেয়েকে নিয়ে হয়ত যাকাতের কাপড় বা টাকা আনতে যাবে । তার অনেক ইচ্ছে ছিল এবার ঈদে একটা কাপড় বুড়ীকে কিনে দেবে কিন্তু তাদের অবস্থাও ইদানিং খুব একটা ভাল যাচ্ছেনা । পাশের খালি যায়গাটায় লোন নিয়ে বিল্ডিং করতে হবে । আর এই লোন পাশ করাতে গিয়ে অনেক টাকা বের হয়ে গেছে । মনোয়ারার ছেলে এই লোন যাতে পাশ না হয় তার জন্য বেশ ছুটাছুটি করেছে কারন ওখানে দালান উঠলে তার বাড়ী পিছনে পড়ে যাবে এবং অন্ধকার হয়ে যাবে । খুব একটা আলো বাতাস ঢুকবে না । মমতা এসব কিছুই বুড়ীকে বলেনি । কি দরকার শুধু শুধু তার চিন্তা বাড়িয়ে । মমতা জানে এসব নিয়ে সে ছেলেকে কিছুই বলতে পারবে না ।
-চাচী রোশনি কাল ওর বাবার সাথে ঈদের জামা কিনতে যাবে । খুব খারাপ লাগলেও মিথ্যেটা বলতে বাধ্য হল মমতা ।
-আমি সকালে নিয়ে যাব বেশী সময় লাগবে না মা ।
-আসলে ওর আব্বা যদি জানতে পারে তাহলে আমাকে অনেক বকা দেবে । আপনি বরং একা যান চাচী ।
মনোয়ারা আর কিছুই বলে না । মমতা বুঝতে পারে সে কষ্ট পেয়েছে কিন্তু মেয়েকে সাথে দিলে অন্যরাই বা কি বলবে ? মনোয়ারা উঠে এক কদম হেঁটে যেতেই মমতা বলে -
-চাচী আজ সারাদিন মনে হয় আপনার পেটে খাবার পড়েনি তাই না ?
থমকে দাঁড়ায় বুড়ী । ঘুরে আবার বসে পড়ে । মমতা কিছু না বলেই ভীতরে যায় । কিছুক্ষন পরে প্লেটে করে ভাত তরকারী এনে দেয় । মনোয়ারা কোন কোথা না বলে খেয়ে যায় । টুপটুপ করে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি ঝরে পড়ে প্লেটের মাঝে । যার রঙ হয় ঘন নীল ।
পরেরদিন সন্ধ্যায় মনোয়ারা ক্লান্তভাবে ,হাঁপাতে হাঁপাতে এসে মমতার কাছে পানি চায় । পানি খেতে খেতে বলে
-মাগো মা সেই সকালে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি আর এই মাত্র এলাম । এই নাও মা একটু সামলে রেখ ।
কথাটা বলে একটা প্যাকেট এগিয়ে দেয় মমতার দিকে
-এইটা কি চাচী ?
-রেখে দাও মা আমি সময় মত নিয়ে যাব । আমার অনেক পছন্দের একটা জিনিষ ।
একটু থেমে আবার বলে
- চৌধুরী সাহেব মারা যাবার পর থেকে অনেক স্বপ্ন দেখেছি এই জিনিষটার । অনেকবার নিজের গায়ে জড়িয়ে ধরেছি ঘুমের মাঝে । কিন্তু বাস্তবে কোনদিন ছুঁয়েও দেখতে পারিনি । রেখে দাও মা আমি সময়মত নিয়ে নেব ।
কথাগুলো বলতে বলতে মনোয়ারা স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায় । মমতা প্যাকেটটা সত্যিই অনেক যত্ন করে আলমারির মাঝে রাখে ।
~*~
ঐদিনের পর থেকে মনোয়ারা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে । বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনা । বড়ছেলের বারান্দায় শুয়ে কাতরাতে থাকে । ঈদের দিন মমতা নিজেই আসে প্লেটে করে পোলাও মাংস আর সেমাই নিয়ে । এসে দেখে বুড়ীকে রাখা হয়েছে রান্না ঘরের মেঝেতে । কারন আজ ঈদ অনেক মেহমান আসবে , বারান্দায় কেউ শুয়ে থাকলে সেইটা ভাল দেখাবে না । মমতাকে দেখে মনোয়ারা উঠে বসার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না । ফিসফিস করে বলে
-মা আমার মেয়েরা মনে হয় চিঠি পায়নি । তুমি ঐ ঠিকানায় আর একটা চিঠি দেওনা মা । অনেক দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে মাদের আমার ।
মমতা কথা দেয় সে চিঠি পোষ্ট করবে । নিজে হাতে মনোয়ারাকে সব খাবার খাইয়ে দেয় । সে একবার ভাবে নিজের কাছে নিয়ে যাবে কিন্তু পর মুহূর্তে ভাবে এতে করে বড় ছেলের কাছে অনেক অপমানিত হতে হবে । মন খারাপ করে চলে আসে বাসায় । সারাদিন রাত আতিথেয়তায় এতো বেশী ব্যাস্ত হয়ে পড়ে যে আর বুড়ীর খবর নিতে পারেনা । রাতে শুয়ে ভাবে কাল সকালেই সে আগে খোঁজ নেবে তারপর অন্যকথা ।
পরের দিন ভোরে বারান্দায় বসে আছে মমতা । যেহেতু পাশের জায়গাটা খালি তাই দেখতে পায় পাশের বাসায় খাটিয়া নিয়ে যাচ্ছে কিছু হুজুর । একটুও বুঝতে কষ্ট হয়না কি হয়েছে । কষ্টে বুকটা ভেঙ্গে যায় … চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে সে। আর তার কান্নার শব্দে বাসার সবাই ঘুম থেকে উঠে ছুটে আসে ।
এরপর থেকেই মমতা মাঝে মাঝে মনোয়ারার কথা ভেবে আড়ালে চোখের জল ফেলে । বাবা মা হারা মমতা মামা মামীর কাছে বড় হয়েছে । মামা মামীকে সে নিজের বাবা মায়ের মত জেনেছে । তাঁরা যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি তার সাধ্যমত সেবা করেছেন । যদিও মামী তাকে মায়ের ভালোবাসা কখনোই দেয়নি । আর তাই হয়ত মনোয়ারার স্নেহ মনের দগদগে ঘায়ে কিছুটা হলেও প্রলেপ মেখে শুঁকিয়ে দিয়েছিল । আজ সে চলে যাওয়াতে নতুন করে আরো কিছুটা জায়গা জুড়ে ক্ষতের তৈরী হয়েছে । যা এই ছয় সাত মাসেও ভরাট হয়নি ।
~*~
গতপরশু দালানের ভিত ঢালাই দেয়া হয়েছে । চারিদিকে রড, খোয়া ,সুরকি আর ইটের ছড়াছড়ি । এখন যে ঘরটিতে রোশনিরা সবাই থাকে সেখানকার বারান্দায় বসেই অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায় । এমন কি মনোয়ারা বেগমের বড় ছেলের ঘরের জানালায় চোখ রাখলে দেখা যায় ঘরের মাঝে কি হচ্ছে । যেহেতু ভিত ঢালায় দেয়া হয়েছে তাই এখন দালানের কাজও বন্ধ । কিন্তু সারা রাত রোশনির বাবা- মা না ঘুমিয়ে ইট,বালি ,সিমেন্ট,রড পাহারা দেয় ।
তখনও ভোরের আলো ফোটেনি ,ভাঙ্গেনি ঘুম সুখ পাখীদের । ফজরের আজান দেবার বেশ বাকী । রোশনি বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে আর তাই দেখে মা ডেকে বলে
-কিরে বাইরে যাবি ?
-হ্যাঁ মা
-বাথরুম আসছে ?
-হুম
-বড়টা না ছোটটা ?
বাবার ঘুম ছুটে যাবার আশংকায় রোশনি বেশ ভয়ে ভয়ে বলে
- মা ছোটটা
-আচ্ছা নেমে আয় টয়লেটে যাবার দরকার নেই টিউবলের ওখানে চল ।
যেহেতু ঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তাই অস্থায়ী একটা বাথরুমও করা হয়েছে ঘর থেকে একটু দুরেই । মমতা লাইট জ্বালাতে গিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে ।
-নাহ এখনও কারেন্ট নাই । কবে যে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাব আল্লাহই জানে ।
বাইরে এসেই দেখা যায় ফুটফুটে জোসনা অন্ধকারের সাথে মিত্রতা করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে । ঝিরঝির ঠাণ্ডা বাতাসে টিউবওয়েলের পাশে থাকা নারিকেল গাছের পাতায় নাচন খেলে যায় । মা হঠাৎ কাঁপা কাঁপা গলায় ফিসফিস করে বলে
-রোশনি তাড়াতাড়ী কর মা ।
কিন্তু রোশনি তখন সামনে মনোয়ারার বড় ছেলের জানালার দিকে তাকিয়ে পাথরের মত শক্ত হয়ে গেছে । দেখে সাদা ধবধবে শাড়ী পরা একটা বুড়ী । মাথায় এক হাত পরিমান লম্বা ঘোমটা টানা । ঠিক দাদীর মত মোটা এবং বেঁটে মহিলাটি নীচু হয়ে কি যেন একটা তুলতে যাবে -মা একরকম ছোঁ মেরে টেনে রোশনিকে ঘরের মাঝে আনে ।
ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটে যায় ছোট্ট রোশনি নিজের হাফপ্যান্টটি ভিজিয়ে একাকার করে দেয় । আড়ালে গিয়ে চোখ রাখে নলিবাঁশের বেড়ার জানালায় । বেঁটে খাটো ঘোমটা টানা সাদা শাড়ী পরা বুড়ীটি নীচু হয়ে একটা কিছু তুলে ছুড়ে মারে
মনোয়ারার বড় ছেলের ঘরের জানালার দিকে । বেশ জোরে শব্দ হয় যা রোশনি ও ওর মায়ের কানে বাজ পড়ার মত মনে হয় । রোশনি দেখে মা অনেক ক্ষন যাবত কিসব বিড়বিড় করে পড়ে যাচ্ছে । শব্দটা হবার সাথে সাথে মা বলে উঠে "লা ইলাহা ইল্লাল লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” । অবাক চোখে রোশনি দেখে এবার মহিলা হাত মুছে নেয় ্সাদা শাড়ী পরা পাছাতে । ডান হাতে ঘোমটা টেনে দেয় । মা রোশনিকে এতোটাই জোরে জড়িয়ে ধরেছে আর একটু হলে দমটাই বের হয়ে যেত ।
-কি হয়েছে ? অখানে কি কর তুমি ?
রোশনির বাবা কখন যে লাইট জ্বালিয়েছে তা কেউ টের পায়নি । স্বামীর কন্ঠ শুনে মমতা চমকে পিছনে তাকায় । একটু পরে আজান দিলে আস্তে আস্তে সকালের আলো ফুটে । মমতা ওজু করে নামাজ পড়ে যায় ঐ জানালার কাছে । বিস্ময়ের চরম চূড়ায় পৌছে সে দেখে - একটা বড় ইট পড়ে আছে জানালার নীচে আর যে জায়গা উদ্দ্যেশ্য করে বুড়ীটি কিছু ছুড়ে মেরেছিল সেখানে টোক খেয়ে দেয়ালের প্লাসটার উঠে গেছে এবং কাদা মাখানো । যে কাদা ঐ ইটের সাথেও লাগানো । ভিত ঢালাই দেবার কারনে কাল পানি দেয়া হয়েছে এবং এই জায়গাটা কাদা কাদা হয়ে গেছে । রোশনিও মায়ের পিছুপিছু এসে সব কিছুই দেখেছে পাশাপাশি পায়ের চিহ্নও । কিন্তু পায়ের চিহ্ন মায়ের চোখের আড়ালেই থেকে যায় ।
মমতা সবকিছু স্বামীকে খুলে বলে এবং জায়গাটা দেখায় । কিন্তু স্বামী তার কোনভাবেই বিশ্বাস করেনা বরং মমতাকে বলে ডাক্তার দেখাতে । স্বামীর এমন কথায় কিছুটা ভাবতে বসে সে । হতেও পারে সে যা দেখেছে তা চোখের ভুল । কিন্তু রোশনি? ওতো তার সাথে দেখেছে । সেতো মেয়েকে কিছুই বলেনি তবে কি করে ঐ ছোট্ট মেয়েটা জিজ্ঞাসা করতেই হুবহু একই দৃশ্য বলে গেল ?! মমতা ভাবে যেভাবে বড় ছেলে ও বৌ মনোয়ারাকে কষ্ট দিয়েছে , অযত্ন ও অপমান করেছে তাতে তার আত্মা কষ্ট পেতেই পারে । যে রাগ বা অন্যায়ের প্রতিবাদ সে করতে পারেনি তা কি এখন সে করতে চাইছে? কত ত্যাগ ও সহিষ্ণুতা সয়ে , দুঃখের সমুদ্র পার হয়ে যখন তার কিছুটা শান্তি পাবার কথা ঠিক তখনই মানুষটা ধুকে ধুকে কষ্ট পেয়ে শেষ পর্যন্ত চলেই গেল ! কথাটা ভেবে ডুকরে কেঁদে উঠে ।
এই ঘটনার পরের দিন মনোয়ারার বড় ছেলেকে জেলে যেতে হয় । কারন সে কোম্পানীর টাকা আত্মসাৎ করে বিলাসিতার পাহাড় গড়েছিল ।
মমতা কেমন যেন একটা ঘোরের মাঝে রয়েছে । কোনভাবেই সেই রাতের কথা ভুলতে পারছে না । তার উপর বড় ছেলের জেলে যাওয়া এবং বাড়ী বিক্রি করে হলেও সব টাকা শোধ দিতে হবে । এই বিষয়গুলি তার বিশ্বাসকে মজবুত করে দেয় । ‘নিশ্চয় মাকে কষ্ট দেবার শাস্তি এটা -এ প্রায়শ্চিত্ত পাওনা ছিল তার” । হঠাৎ মনে পড়ে ঈদের আগের দিনে দেয়া প্যাকেটের কথা । কি আছে ওর মাঝে ? কি এমন জিনিষ যা পেতে সেই সকাল থেকে সন্ধ্যাবধী অপেক্ষা করেছে । ধাক্কা ধাক্কির মাঝে পড়ে গিয়ে হাঁটু কেটে এনেছিল ? কি সেই দুর্লভ বস্তু যা প্যাকেটে আছে ?
দৌড়ে গিয়ে প্যাকেটটা নিয়ে খুলতে শুরু করে । একটা পলিথিনের ব্যাগ তার মাঝে একটা কাগজের প্যাকেট । প্যাকেটের গায়ে লেখা “শিলা শাড়ী বিতান” । অনেক জায়গায় ছেড়া প্যাকেটটি দেখে মমতা বুঝে যায় এটা কুঁড়িয়ে এনেছে মনোয়ারা । সে হাতে নিয়েই হাত বুলায় বেশ সময় নিয়ে । টপটপ করে কয়েক ফোঁটা পানি পড়ে প্যাকেটের উপর । মমতা যত্ন মাখা হাতে প্যাকেটটা খোলে । অবাক চোখে দেখে বেশ সস্তা একটা শাড়ী । যার জমিন ধবধবে মেঘের মত সাদা ,পাশে চিকণ সবুজ পাড়। মনে পড়ে অনেক দিনের শখ ছিল মনোয়ারা বেগমের এমন একটা শাড়ী পরবার । যা কোনদিন কাউকেই বলতে পারেনি । ভিক্ষা থেকে কিছু পয়সা সঞ্চয় করে করে যতবার কিনতে চেয়েছে ততবারই ছেলেদের কোন না কোন চাহিদা মেটাতে সঞ্চিত ঐ টাকা খরচ করেছে । কিভেবে মা শাড়ীটী খুলে ফেলে । তারপর একরকম ছুড়ে ফেলে দূরে । ভয়ে মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠে । “হায় আল্লাহ এ কি তোমার লীলা?” শাড়ীর একটা জায়গায় ভিজে কাদা লাগানো যা এখনো শুকায়নি । চোখে ভাসে দুটো দৃশ্য -কাল রাতে সাদা শাড়ী পড়া বেঁটে খাটো মহিলাটি হাত মুছেছিল এবং আর একটা দৃশ্য হল মনোয়ারার অভ্যাস একটু পরপর পিছনে হাত মোছা । এবার কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। ভাবনায় ছেদ পড়ে বাইরে থেকে ভেসে আসা একটা কন্ঠে
- “মা আমারে একটু খেতে দিবা মা ? সেই সকাল থেকে কিছুই পেটে পড়েনি গো মা” কিভেবে শাড়ীটা হাতে নিয়ে বের হয় মমতা। ভিখারিনীর নজর শাড়ীর দিকে যা দেখে খুব খুশী হয় এবং মিটিমিটি হাসে । ভিখারিনীর চোখের দিকে তাকিয়ে হতবাক ও বিমোহিত হয়ে যায় মমতা। এটা কি করে সম্ভব ? ভিখারিনীকে শাড়ীটা বিনা বাক্যব্যয়ে দিয়ে দেয় মমতা । ভিখারিনী বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে শাড়ীটা । শাড়ীর মাঝে নাক ঢুকিয়ে বড় করে নিশ্বাস নেয় । মমতা অবাক হয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায় । মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত ! তারপরে সামনে তাকায় ভিখারিনীকে দেখার জন্য । কিন্তু আশেপাশে কাউকেই দেখা যায় না । এই সামান্য সময়ের মাঝেই ভর দুপুরে শাড়ীটাকে বুকে জড়িয়ে কোথায় যেন উধাও হয়ে যায় সে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাকিয়া জেসমিন যূথী অসম্ভব সুন্দর, জীবনের পূর্ণতা ও অপূর্ণতার গল্পটা। পড়ে চোখ ভিজে জল এলো। খুব সুন্দর করে ফুঁটিয়ে তুলেছেন প্রতিটা চরিত্রের গঠন। সেটা তো আপনাকেই মানায় আপু। কারণ গল্পকার যে আপনি।
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
এশরার লতিফ মনোয়ারার জন্য খারাপ লাগছে। সুন্দর গল্প।
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
Azaha Sultan এমন গল্প পড়লে অহেলিতদের প্রতি কান্না আসে.......মাকে যারা কষ্ট দেয় তারা কেন ভেবে দেখে না--স্বর্গ কোথায়.....যে শাড়িটি মনোয়ারার জন্যে অমূল্য সেই শাড়িটি তাকে একবার পরা হল না কেন? গল্প অসাধারণ.....
ভালো লাগেনি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মাকে যারা কষ্ট দেয় তারা কেন ভেবে দেখে না--স্বর্গ কোথায়..সুন্দর বলেছেন দাদা। তবে মাকে কষ্ট দিয়ে কোন সন্তান শান্তি পেতে পারে না। মাকে কষ্ট দেবার শাস্থি আল্লাহপাক দিয়ে দেন এবং তা এই দুনিয়াতেই দিবেন। গল্প পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভেচ্ছা সতত
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মামুন ম. আজিজ জীবন সংগ্রাম, সিনেমাটিক, রহস্য, কষ্ট বেদনা..রিয়েলিটি ..কি নেই...সব আছে এক গল্পে। দারুন লিখেছ সেলিনা।
ভালো লাগেনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মামুন ভাইয়া তোমার মত লেখকের মন্তব্যে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হলাম।শুভেচ্ছা ও শুভকামনা-ধন্যযোগ
ভালো লাগেনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি খুব ভাল লাগল ...কাহিনী এবং বিবরন মান সম্মত ...কলেবর যদিও বড় তবুও শেষোব্দি পড়তে হয়েছে...গল্পের শেষটায় এসে তো শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেল.....
ভালো লাগেনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
সময় করে গল্প পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ- শুভকামনা নিরন্তর
ভালো লাগেনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
ওবাইদুল হক গল্পের কাহিনি বেশ ভাল তবে আরেকটু ক্রোপ করলে সবাই পড়তে সময় কম নিত । কারণ জানেনতো এখন কে কার বা কত সময় আছেইবা দিতে পারবে । এখনকার মানুষ অন্ধের পথে সময় দিতে বেশ ভাল লাগে । নিজের মতামত । অনেক অনেক আশাবাদী আমি আপনার লেকায় ।
আপনার মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে গল্প নয় গল্পের সারাংশ লিখে দিলেই ভাল হত ! তবে কথাটা একেবারেই ফেলে দেবার মত নয় । আগামীতে মনে থাকবে ---অনেক ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মোঃ আক্তারুজ্জামান গল্পকবিতায় যাদের লেখায় জীবন ঘনিষ্ঠ কথা অসাধারনভাবে উঠে আসে- আপনি তাদের একজন। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
গল্প পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভকামনা রইল
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২
সালেহ মাহমুদ অদ্ভূত ঝিম ঝরানো গল্প। বিশ্বাস করুন আমার গা এখনো ছমছম করছে। মাথা ঝাঁকিয়ে তারপর মন্তব্য লিখছি। ওহ্‌ অসাধারণ লিখেছেন। সাংঘাতিক ঘটনাবিন্যাস, এবং বাক্যবুনন অতুলনীয়। অনেক ধন্যবাদ সেলিনা ইসলাম।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২
মন্তব্য পড়ে মনে হল অনেক গভীর মগ্ন হয়ে গল্পটা পড়েছেন -অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভেচ্ছা সতত ।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
রোদের ছায়া আপু বেশ ঝরঝরে লেখা , গল্পের কাহিনী এত করুন যে কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না , এমন একটা বিষয়ের অবতারণা করার জন্য শুভাশীষ রইলো ...
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২
সময় করে গল্প পড়ার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপু -ধন্যযোগ
ভালো লাগেনি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪