আজ ভীষণ গরম পড়েছে। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ। মনে হচ্ছে মারাই যাব। চুপচাপ শুয়ে আছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনো চার ঘণ্টা বাঁকি। রান্না ঘর থেকে মা চিৎকার দিয়ে নাম ধরে ডেকেই যাচ্ছে। অথচ বাবা বেঁচে থাকতে এক রুম থেকে মা ডাক দিলে,আরেক রুমে বসে শোনা যেত না। বাবা মারা যাবার পরে মায়ের কণ্ঠ যেন অনেক জোরালো হয়েছে। ভীষণ রাগ হল। দপদপ শব্দ করে হেঁটে গিয়ে মায়ের উপর বিরক্ত ঝাড়লাম -কি হয়ছে? এতো জোরে জোরে চিল্লাচ্ছো কেন? মা এবার বিরক্ত নিয়ে বললেন -আরে রোজা রেখে ঘুমালে রোজা হালকা হয়ে যায় জানিস না? -হালকা না আজকে রোজা ভারই হয়ছে মা। গরমে আমারে রোজায় ধরছে তাই শুয়ে আছি। -হ্যাঁ গরম তো শুধু তোমাদেরই লাগে। আর আমি যে চুলার কাছে বসে বসে এতগুলো রান্না করছি। আমার গরম লাগে না? কোথায় একটু সাহায্য করবে তা না। যার যার মত শুয়ে বসে ঠিক ইফতার টাইমে এসে হাজির হবে। মা বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠেই কথা বলেই গেলেন। আমি মাকে আর কিছুই বললাম না। সত্যিই তো মা ওতো রোজা রেখে কত কি বানাচ্ছে,রান্না করছে। মায়ের পাশেই বসে চুপচাপ তাঁর রান্না করা দেখছি। কিছুক্ষণ পর দেখি মা বলছে - 'শোন মা রান্না ঘরে অনেক গরম। যা বারান্দায় গিয়ে বস।' মনে মনে ভীষণ হাসি পেলো। যত যাই বলুক। মা বলেই সন্তানের কষ্ট সহ্য হয় না। এমন সময় শুনি গেইটের কাছে পুরুষ কণ্ঠ-'মা এক মুঠ ভিক্ষা দেবেন!' আমি রান্নাঘর থেকে উঁকি মেরে দেখি প্রায় সত্তর বছরের একটা বৃদ্ধ। কেতাদুরস্ত পাঞ্জাবী পরা! ইনি ভিক্ষুক? এই বিকেল বেলা কেউ ভিক্ষা করে নাকি? তাও রোজার দিনে? আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম। তার আগেই মা বললেন-'উনাকে বলে দেখতো মা, উনি ইফতার করতে আসতে পারবে কিনা?' আমি মায়ের কথায় একটুও অবাক হলাম না। প্রতিদিনই কেউ না কেউ ইফতার ও সেহরির মেহমান আমাদের বাসায় থাকেই। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। মায়ের কথা রাখতে আমি বের হয়ে বৃদ্ধকে গিয়ে বললাম-'চাচা ইফতারির দাওয়াত দিলে কি কবুল করবেন?' লোকটা এমন কথা মনে হয় এই প্রথম শুনল! দুনিয়ার বিস্ময় নিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। বুঝলাম আমার কথা উনি বুঝে উঠতে পারেন নি। আমাকে এক রকম সরিয়ে এবার মা একহাত ঘোমটা টেনে সামনে এলেন। বললেন-'বুড়ো মিয়া আজকে ইফতার আমার বাসায় করতে পারবেন?' লোকটার মুখে চাঁদের ঝিলিক খেলে গেলো। বলল -'হ্যাঁ মা আসতে পারব।' মা যেন কি ভাবলেন তারপর বললেন-'এই গরমে আর ভিক্ষে করতে হবে না। আপনি আমাদের বারান্দায় বসে বিশ্রাম নেন।' -কিন্তু মা রাতের খাবারটার ব্যবস্থা তো করতে পারি নাই। -আজকে আর আপনাকে রাতের খাবার সেহরি কোনটা নিয়েই ভাবতে হবে না। মায়ের কথায় বৃদ্ধ মাথা কাঁত করে 'আচ্ছা' বললেন। আমি উনাকে আমাদের বারান্দায় বসতে দিলাম। তারপর ইফতারি রেডি করতে মাকে সাহায্য করলাম। কাজের মাঝে ব্যস্ত থাকায় কখন যেন সময় চলে গেছে। গেইট খোলা থাকায় দেখি আরও দুইজন ভিক্ষুক এসে একেবারে বারান্দায় বসল। তাদেরকে আগেই দাওয়াত দেয়া ছিল। মাদুর পেতে তার উপর ধোঁয়া বিছানার চাদর দেয়া হল। তিনজন ভিক্ষুককে ইফতার দেয়া হল। সবাই ইফতার সামনে নিয়ে দোয়া দরূদ পড়ছে শুধু বৃদ্ধ লোকটিকে দেখলাম চুপ করে বসে আছে! তাঁর মাঝে একতা জড়তা কাজ করছে! এক সময় দেখি তাঁর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে! আমি জিজ্ঞাসা করলাম -চাচা কাঁদছেন কেন? লোকটা কোনও দ্বিধা না করেই বললেন- -কি বলব মা। ভাগ্য আমার সাথে যে খেলা খেলেছে তা ভেবে চোখে পানি এলো। বৃদ্ধ চাচার কথা শেষ হতেই আজানের সূর ভেসে এলো। সবাই মিলে ইফতার শুরু করেছে। আমিও রুমের ভিতর গিয়ে ইফতার নিয়ে বসলাম। কিন্তু বারবার কানে ভেসে আসছে বৃদ্ধের বলা কথা'ভাগ্য আমার সাথে যে খেলা খেলেছে'। কেন যেন কথাটার জন্য খেতে মন বসছে না। বাইরে বের হয়ে দেখি সবাই খাচ্ছে। বৃদ্ধ শুধু পানি আর খেজুর খেলো। আর বাঁকি ইফতার এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজের ব্যাগে ভরে নিচ্ছে। কেন যেন আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো। বললাম -কি চাচা নিজে না খেয়ে সব খাবার ব্যাগে ভরছেন কেন? এবার উনি কোন উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করলেন না। আমি তাঁর কপালে স্পষ্ট বিরক্তের চিহ্ন দেখতে পেলাম। আর কিছুই বললাম না। ইফতার শেষ করে সবাই নামাজ পড়লো। পরে আসা ভিক্ষুক দুজন মাকে বলল-তারা আজ রাতের খাবার বা সেহরি খাবেন না। তাদের আরেক জায়গায় দাওয়াত আছে। এ কথায় মা একটু রাগই হল। ঐ দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল- - আগে কেন বললেন না। তাহলে রান্না করতাম না। বা অন্য দুজন রোজাদারকে খাওয়াতাম। মায়ের কথা শুনে ওরা একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। তারপর একজন বলল - আসলে আগে তো জানি নাই মা। আপনার দাওয়াত নেবার আগেই ঐ দাওয়াত নিছিলাম। -একদিনে দুই বাড়িতে দাওয়াত কেন নিলেন? -আসলে কি বলব মা-আপনি দাওয়াত দিলে তা ফেলতেও পারি নাই তাই কবুল করেছি। আপনি যদি রান্না করে ফেলেন তাহলে আমাদের দিয়ে দেন। কাল না হয় আমরা খেয়ে নেব। মা আর কিছু বললেন না। আমি মনে মনে বলি'কত বড় চালাক! আজকে খেয়ে যাচ্ছে আবার আগামী কালেরটাও গুছিয়ে নিচ্ছে! অথচ এই খাবারটা আরও দুজন অনাহারী মানুষকে আহার দিত। এরা কি আসলেই ভিক্ষুক না কি ব্যবসায়ী?' শুনেছি অনেকে নাকি ভিক্ষার খাবার,চালডাল, অন্য গরিবদের কাছে বিক্রি করে! এও শুনেছি অনেক ভিক্ষুকের নাকি এই ভিক্ষা করেই খুব ভালো অবস্থা হয়েছে। কিন্তু তা স্বত্বেও ভিক্ষার অভ্যাস ছাড়তে পারে না! এদেরকে তেমনই ভিক্ষুক মনে হল। মা কিছু খাবার ওদের প্লেটে নিয়ে তাতে দিলেন। ওরা চলে গেলো। ওরা চলে যেতেই দেখি বৃদ্ধ লোকটা কেমন অস্থির হয়ে উঠলেন। মনে হল কিছু বলতে চায়ছেন কিন্তু কোন কারণে বলতে পারছেন না। একটু আগে আমার কথার উত্তর দেয়নি। তাই আর কোনকিছু জিজ্ঞাসা করতেও আমার ইচ্ছে হল না। তবুও 'ভাগ্য আমার সাথে যে খেলা খেলেছে' তাঁর বলা কথাটা ভেবে মায়া হল। তাই অনিচ্ছাতেই জিজ্ঞাসা করলাম। -চাচা কিছু লাগবে? -না মা আমি ঠিক আছি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন-আসলে তোমার মা যদি আমার খাবারটাও দিয়ে দিতেন। তাহলে আমিও চলে যেতাম। -কেন আপনারও কি দাওয়াত আছে? আমার কথায় বৃদ্ধ মৃদ্যু হাসলেন বললেন- -না মা দাওয়াত নাই। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। বড় করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। আমার মনে হল আমার কথায় উনার মনে একটা বোঝা চেপে বসেছে। হঠাৎ বলে উঠলেন- আমি মা ভিক্ষুক না। এক সময় আমি নিজেই মানুষকে ইফতার করিয়েছি। নদীর ওপারে আমার দালান বাড়ি আছে। কিন্তু আজ আমি সব থেকেও নিঃস্ব। -কেন বুড়ো মিয়া কি হয়েছে? আর আপনি ইফতার না করে সবকিছু ব্যাগে ভরলেন কেন? মা যে কখন নামাজ শেষ করে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি। মায়ের কথায় বৃদ্ধ লজ্জা পেলেন। ব্যাগটাতে হাত বুলিয়ে বললেন-আসলে ইফতার করতে গিয়ে বুড়ির কথা মনে এলো। আমি তো কত খাবার খেয়ে ইফতার করছি। কিন্তু সে তো শুধু পানি দিয়েই ইফতার করবে। তাই আমি... বৃদ্ধ আর কোন কথা বলতে পারলেন না। ঠোঁট দুটো থিরথির করে কাঁপছে! একটু সময় পরে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন- সবই আমার ভাগ্য! আমার দুইটা ছেলেই ভালো চাকুরী করে। থাকে ঢাকা শহরে। ওরা ঢাকায় নিজেদের ফ্লাট নিয়েই থাকে। কিন্তু ওরা যে ফ্লাট কিনেছে তা আমার নদীর ওপারের বাড়ি আর জমি বিক্রি করে। আমার সই নকল করে কীভাবে কীভাবে যেন নিজেদের নামে দলিল করে সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে। একদিন এক লোক এসে আমাকে আর আমার বুড়িকে বাড়ি থেকে বের করে দিলো। ওরাই এখন আমার জমি আর বাড়ির মালিক। সাথে আসা উকিল সব বুঝিয়ে বলল আমাকে। ছেলেদের এই কাজের কথা লজ্জায় আত্মীয়স্বজন কাউকেই জানাতে পারিনি। সবাই জানে আমার সন্তানরা আমার বাধ্য সন্তান। ঐ দুটো ছেলেই আমার সব ছিল। বাড়িটা যে কিনেছে লোকটা ভালো। তাই দয়া করে আমাদেরকে বাড়ির পিছনে একটা এক চালার ঘর করে দিয়েছে। এই বয়সে কোথায় যাব আমরা? কয়দিন ধরে খাবার কষ্টে ভুগছি। বুড়িকে কিছু না বলে আজ নদী পার হয়ে এপারে ভিক্ষা করতে আসছি। এখন সন্ধ্যাও হয়ে গেছে। আমি আবার ভালো করে চোখে দেখিনা মা। বুড়ি নিশ্চয় চিন্তা করছে। আমি যাই মা। কথাটা বলেই বৃদ্ধ রওয়ানা দিতে লাগলো। মা বললেন-'বুড়ো মিয়া একটু অপেক্ষা করেন। আমি খাবার বেঁধে দিচ্ছি। সেইটা নিয়ে জান। -কিন্তু মা আমার কাছে তো কোন বাটিবুটি নাই! -আপনি বসেন আমি আসছি। মা ভিতরে চলে গেলেন। আমি জানিনা আমার কি হল। বৃদ্ধকে বললাম- চাচা আপনি কালকেও আসবেন। বুড়ি চাচিকে নিয়ে আসবেন। - না গো মা। তোমার চাচি প্রায়ই অসুস্থ থাকে। আর সে যদি জানে আমি ভিক্ষা করতে বের হয়েছি,তাহলে রাগ করে খাবার মুখে নেবে না। -তাহলে আপনি একাই আসবেন। আর চাচিকে বলবেন আপনি একটা মেয়ে পেয়েছেন। আমার কথায় বৃদ্ধ চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইল। তা দেখে আমি বললাম- -আমার মা। আমার মায়ের কেউ নেই। এখন থেকে আপনি আমার মায়ের আত্মীয়। বৃদ্ধ কিছু না বলে শুধুই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মা ঘর থেকে বের হয়ে এলো। হাতে একটা বিশাল টিফিন কেরিয়ার। -বুড়ো মিয়া এখানে দুইজনের দুইবেলার খাবার আছে। আর এই নেন টাকা। রিকসায় করে যাবেন। খুব সাবধানে থাকবেন। বৃদ্ধ টাকাটা নিতে চাইলেন না। মা এক রকম জুরাজুরি করেই নিতে বাধ্য করলেন। বৃদ্ধ চলে গেলো। যাবার সময় আমার মাথায় হাত রেখেছিলেন। জানিনা উনি কি দোয়া করেছিলেন। কিন্তু কেন যেন ভীষণ কান্না পাচ্ছিল।
বৃদ্ধ যাবার পর থেকে মাকে কেমন যেন চিন্তিত লাগছে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম- কি হয়েছে মা? -আমি বুড়ো লোকটাকে কালকে আসতে বলব তা বলতে ভুলে গেছি। আমি শুনে মনে মনে হাসলাম। বললাম -মা তোমার কি এই বুড়োর বলা গল্প সত্যি মনে হয়েছে? -কি বলিস তুই! সে এই বয়সে মিথ্যে কেন বলবে? আর উনার কাপড় চোপড় দেখে তো প্রথমেই আমার সন্দেহ হয়েছে যে উনি ভিক্ষুক না। -আমারও সন্দেহ হয়েছে মা। কিন্তু উনি উনার বুড়িকে না জানিয়ে ভিক্ষা করছে। আর তাই হয়ত অমন কাপড় পরে বের হয়েছে। তাছাড়া ময়লা কাপড় পড়তে হয়ত উনি অভ্যস্থ নন। মা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন-বাবা মা কত কষ্টে সন্তানকে মানুষ করে। ভাবে এই সন্তান বড় হয়ে তাঁদের বুড়ো বয়সে কাছে রাখবে,সঙ্গী হবে। একটু দেখাশুনা করবে। কিন্তু কিছু সন্তান কোন কালেই মানুষ হয় না। মনে হচ্ছে বুড়ো আর বুড়িকে আমার কাছে রেখে দেই! মায়ের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়লো। তা দেখে মৃদ্যু ধমকের সূরে বললাম- -এই তো মা তুমি আবার সেন্টু হয়ে গেলে। এত ভেব নাতো। আমি উনাকে কালকেও আসতে বলেছি। আমার কথা শুনে মা খুব খুশি হলেন। বললেন- -সত্যি তুই বলেছিস মা? -হ্যাঁ মা বলেছি। উনি বলেছে উনার বুড়ি যদি জানতে পারে যে ভিক্ষা করে এসব নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে সে অনেক বকা দেবেন আর না খেয়েই থাকবেন। -কি বলিস তুই! -হ্যাঁ মা। আর তাই আমি বলেছি। বুড়িকে যেন বলে তুমি উনাকে চাচা ডেকেছ। কারণ তোমার কোন আপনজন নেই। -ও মা আমার মা তো দেখি অনেক বুদ্ধি রাখে হা! কবে এত বড় হলি সোনা? মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন। -মা আমি ঠিক করেছি না? -হ্যাঁ রে মা খুব ঠিক করেছিস। -কিন্তু মা তোমার কি মনে হয় কাল উনি আবার আসবেন? মা বেশ ভাবলেন। তারপর বললেন - যদি উনি সব কথা সত্যি বলে থাকেন?তাহলে কয়েকদিন আসবেন না। উনি লজ্জাবোধ করবেন। -তবে উনি একদিন অবশ্যই আসবেন তাই না মা? মা মুখে কিছুই বললেন না শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলেলন।
আমার কিশোরী মন জুড়ে সারারাত শুধু বৃদ্ধের কথা মনে হল। মাকে নানা প্রশ্ন করতে লাগলাম। ক্লান্ত মা মাঝে মাঝে উত্তর দিলেন। আবার চুপ করে কি যেন ভাবলেন। হয়ত ভাবলেন সব প্রশ্নের উত্তর হয় না। বেশ কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বললাম না। এক সময় হঠাৎ মা বললেন- বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে কোন সন্তানই ভালো থাকে না। সন্তানের কৃত কর্মের জন্য বাবা মা সহজে বদদোয়া দেন না। নিজে কষ্ট সহ্য করতে করতে যদি কখনোবা মুখ থেকে সন্তানের জন্য খারাপ কিছু বের হয়ে যায়। তা তাঁরা মন থেকে বলেন না। কিন্তু আল্লাহ! আল্লাহপাক বাবা মাকে যে সন্তান কষ্ট দেয় তাদেরকে তাদের ভুলের শিক্ষা বা শাস্তি এই পৃথিবী থেকেই দিয়ে দেন। -মা ঐ বৃদ্ধ চাচার ছেলেরা কী শাস্তি পাবে? -অবশ্যই পাবে। আজ তোমাকে একটা সত্য কথা বলি-তোমরা সবাই জানো আমার কেউ নেই। আসলে আমার বড় বোন আছে। আমাদের দুই বোনের মাঝে বয়সের ব্যবধান এগারো বছর। একদিন আমাদেরকে পড়ানোর জন্য আমার আব্বা একজন গৃহশিক্ষক রেখে দিলেন। তিনি বেশ বয়স্ক ছিলেন। আমার বড় বোনের থেকে কুড়ি বাইশ বছরের বড় হবে। একদিন সকালে আমার বোন সেই শিক্ষকের সাথে চলে গেলেন। একটা চিঠিতে লিখে গেলেন তাঁরা দুজন বিয়ে করেছেন। আমার আব্বা মেয়ের এই ব্যপারটা সইতে পারলেন না। তিনি হার্ট এট্যাক করে মারা গেলেন। আব্বার এই মৃত্যু এবং বোনের করা কাজ মা কিছুতেই সহ্য করতে পারলেন না। তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে গেলেন। মাঝে মাঝে মা কষ্ট সইতে পারতেন না। আমাকে ইশারাই বলতেন আমি যেন তাঁকে গলা চেপে মেরে ফেলি! আমার মন বলত মা বুবুকে অনেক অভিশাপ দিচ্ছে। মাঝে মাঝে মাকে দেখতাম দেয়ালে টানানো আমাদের চারজনের ছবিটা দেখছে। আর দরদর করে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে বালিশ ভিজিয়ে দিচ্ছে। আমি মায়ের বলা কথা শুনে একেবারে ভয়ে শক্ত হয়ে গেলাম। কেন যেন মনে হল মা কাঁদছে। আমি বললাম -মা তারমানে তোমার বুবু মানে আমার খালা আর কোনদিন আসেনি নানীকে দেখতে? -না মা আসেনি। এমন কি মা মরে গেলে আমাকে কে দেখবে সেই কথাও সে কোনদিন ভাবেনি। একবার কেউ একজন এসে জানিয়েছিল। সে তার স্বামী সন্তান নিয়ে অনেক সুখেই আছে। কথাটা শোনার কয়েকদিন পরই মা মারা গেলেন। তোমার বাবা আমাদের গ্রামের খুব ভালো একজন সমাজ সেবক ছিলেন। তোমার নানা তোমার বাবাকে সেই ছোটবেলা থেকেই অনেক পছন্দ করতেন। তোমার বাবাকে তোমার নানী আমার জামাই করবেন বলে জানিয়েছিলেন ওদেরকে। ওদের পরিবার আমাকে ছেলে বউ করে আপন করে নিয়েছিলেন। -মা খালা কি এখনো বেঁচে আছে? -ঠিক জানি না মা। আমরা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে এসেছি। সে এই ঠিকানা জানে না। কেন যেন আবার দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম। মনের ভিতরে তোলপাড় করছে হাজারো কথা। কিন্তু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। এক সময় মায়ের গভীর নিঃশ্বাসের শব্দ পেলাম। তবুও মনে থাকা প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করলাম। -আচ্ছা মা এই যে তুমি আমাকে দিয়ে বৃদ্ধ মানুষকে সাহায্য করাও,তাঁদেরকে সেবা করতে বল! এসব আমাকে দিয়ে কেন করাও?' ঘুম জড়ানো কণ্ঠে মা বললেন- -আমি তোমাকে না শেখালে কীভাবে শিখবে তুমি? -তাহলে কি বড় হয়ে আমাকেও গরিবদেরকে ইফতার করাতে হবে? সেবা করতে হবে? মা এবার আমাকে বুকের দিকে টেনে নিয়ে বললেন- -আমি যতটুকু করছি তাঁর থেকেও তোমাকে বেশি করতে হবে। তাই তো ঠিক ভাবে লেখাপড়া করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে। -মা আমি যদি বড় হয়ে এসব করতে ভুলে যাই! তাহলে কি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? কথাটা বলতে গিয়ে আমার কণ্ঠ ধরে আসে। মাকে ছেড়ে থাকার কথা আমি কল্পনায় ভাবতে পারি না! মা আমার কপালে আদর দিয়ে বলেন। -কেন ভুলে যাবে? আর আমি তোমাকে ছেড়ে যেন না যাই,সেই জন্য তোমাকে লেখাপড়া শিখে সুশিক্ষা নিতে হবে। বেশ কিছুটা সময় দুজনেই চুপ করে রইলাম। এক সময় দেখি মায়ের আর কোন সাড়াশব্দ নেই। বুঝে নিলাম মা আমার নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেছে।
না পরেরদিন বৃদ্ধ লোকটা আসেনি। তারপর দিন,তারও পরদিন না। এদিকে কীসের মায়ায় জানিনা, প্রায় প্রতিদিনই মা আমি দুজনে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতাম। নতুন নতুন ভিক্ষুকদের ইফতার করাতাম। কিন্তু উনাকে আর দেখলাম না। এক সময় লোকটা মনের পাতায় আবছা রঙ্গ হয়ে পড়ে রইল। ঈদের দুইদিন আগে খুব আনন্দ নিয়ে বড়বোনের সাথে শপিং করতে গেলাম। শপিং শেষে ফেরার সময়ে শপিং মলের সামনে দেখি অনেক ভিড়। বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়ে একটা চোরকে মারছে। আমার বাম পাশটা কেন যেন চিনচিন করে ব্যথা করছে। একেতে ভ্যাপসা গরম তার উপর প্রচণ্ড ভিড়! কেনাকাটার চেয়ে যেন দেখার মানুষই বেশি! ভিড় ঢেলে অনেক কষ্টে একটা রিকসা পেলাম। রিকসায় উঠে উঁচু হয়ে ভিড়ের মাঝে উঁকি দিলাম। দেখি চোর বোলে যাকে মারধোর করছে সে একজন বৃদ্ধ মানুষ। তাঁর গায়ের জামা টেনে টুনে সবাই ছিঁড়ে দিয়েছে। বাসায় যেতে মন সায় দিল না। রিকসায় বসে একটু অপেক্ষা করলাম। একজন বৃদ্ধ চোরকে মারতে পেরে বেশ তৃপ্তি নিয়েই এক সময় সবাই চলে গেলো। তাও আবার সংযমের এই মাসে! আসলে সংযম কথাটার সঠিক অর্থ অনেকেই জানে কিনা আমার সন্দেহ আছে! হয়ত বৃদ্ধ বলেই দয়া করে কেউ চোরটাকে পুলিশে দিলো না! শপিং মলের সিকিউরিটি লাঠিপেটা করে ভিড় ভেঙে দিলো। এক সময় দেখি একেবারেই ভিড় নেই। বৃদ্ধ মানুষটা চুপচাপ রাস্তায় বসে আছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম। দেখি তখনও সে হাতে ধরে আছে একটা লাল জামা। কাছে গিয়ে খেয়াল করতেই দেখি সেই বৃদ্ধ চাচা। আমার চোখ ফেটে এক সমুদ্র জল গড়িয়ে এলো -চাচা আপনি এখানে? উনি আমার কথা ঠিক বুঝল কিনা জানিনা। উনার ঠোঁট বেয়ে রক্ত ঝরছে। মনে হচ্ছে বেশ কিছুদিন ঠিকমত খাবারও খায়নি! অনেক কষ্টে কাঁপতে কাঁপতে মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল। কিন্তু মুখে কিছুই বলল না! আমরা দুইবোন উনাকে ধরে পাশেই একটা উঁচু জায়গায় বসালাম। লাল জামাটা বুকের সাথে জাপটে আছে তখনও। আমি বললাম - এই অবস্থা কেন আপনার? আপনি আমাদের বাসায় আর আসলেন না কেন? এবার আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি খুব কষ্টে কথা বললেন- মা তোমাদের বাসার রাস্তা যেন কোন দিকে? আমি নদীর ওপারে থাকি। কিন্তু নদীর কোন দিকে যে থাকি ভুলে গেছি। আমার বুড়ি আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে। কীভাবে যে যেতে হয় বুঝতেছি না। উনাকে আমার স্বাভাবিক মনে হল না! একটু দূরেই তাকিয়ে দেখি আমাদের সেই টিফিন কেরিয়ার আর সেই ব্যাগটা পড়ে আছে। তারমানে উনি সেই রাতে বাড়ি জাননি? আমি ওগুলো এনে উনার হাতে দিলাম। বললাম- চাচা আপনি বাড়ি জাননি সেদিন? -আমার বাড়ি কোথায়? আমি তো রাস্তা ভুলে গেছি। আমি যেই উনার হাতের লাল জামার দিকে তাকালাম বাচ্চাদের মত কেঁদে দিয়ে বললেন- না না আমি চুরি করিনি। একটা মেয়ে এই জামাটা আমাকে দিয়েছে। সে বলেছে এইটা জাকাতের কাপড়। আমার নাতনি লাল জামা চেয়েছিল আমার কাছে তাই নিয়েছিলাম। মা আমি চোর না। ভীষণ খারাপ লাগলো। উনাকে এভাবে রাস্তায় ফেলে যেতে মন একেবারে মানছিল না। তা ছাড়া মা জানোতে পারলে আমাকে বকা দেবে। সাথে নিয়ে যাব কিন্তু উনি যাবেন না। আমি উনাকে কোন নদী পার করে দেব? ঠিক বুঝতে পারলাম না। অনেক অনুরোধ করলাম। কথা দিলাম তাঁকে তাঁর বুড়ির কাছে পৌঁছে দেব। এ কথায় সে আমাদের সাথে উনি আসতে রাজি হলেন। বাসায় নিয়ে আসার পরে মা ভাবনায় পড়ে গেলেন। এখন কীভাবে এই বৃদ্ধকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেবেন? আমাদের বাড়িতে একজন পুলিশ ভাড়াটিয়া থাকে। তার সহযোগিতা চাওয়া হল। সে এই বৃদ্ধের ঠিকানা খুঁজে বের করবেন বলে কথা দিলেন।
বৃদ্ধ চাচা ঈদটাও আমাদের বাসায়ই করলেন। সারাক্ষণ নাতনি,ছেলেদের আর বুড়ির জন্য অস্থির হয়ে থাকেন। এভাবেই মাস শেষ হল কিন্তু তাঁর ঠিকানা পাওয়া গেলো না। ধীরে ধীরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মা আমি আমাদের বাসার সবাই একটা অপরাধ বোধে ভুগতে লাগলাম। আপন জন থেকে দূরে একটা মানুষ এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে? এটা কোনভাবেই মানতে পারছিলাম না। উনার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলো। বাধ্য হলাম নদীর ধারেই অবস্থিত সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে। সেখানে তিনদিন থাকার পর বৃদ্ধ একটু সুস্থ হলেন। একদিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে মা আর আমি যা দেখলাম! তা দেখে দুজনেই অবাক বিস্ময়ে যেন বরফের মত জমে গেলাম।
বৃদ্ধ হেসে হেসে এক বৃদ্ধার সাথে কথা বলছেন! মনে হল পৃথিবীর সব প্রশান্তি তাঁর চোখে মুখে খেলে যাচ্ছে। কাছে যেতেই নদীর মত কলকল শব্দে বৃদ্ধ বলে উঠলেন-মা এই আমার বুড়ি। আমাকে খুঁজতে খুঁজতে সে এইখানে চলে এসেছে। আমারে ছাড়া বুড়ি চলতেই পারে না। কয়দিনে দেখো শুকাই কাঠ হয়ে গেছে। বুড়িয়ে দেখিয়ে কথাগুলো বোলে হাঁপিয়ে উঠলেন উনি। এই বয়সেও তাঁদের ভালোবাসার যে টান,তা যেন সব প্রেমকাহিনীকে হার মানায়।
তাকিয়ে দেখি বেশ ফর্সা,রুগ্ন একজন মহিলা। বয়সটা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না! খুব সুন্দর আটপৌঢ় করে শাড়ি পরা। দেখলেই বুঝে নেয়া যায় একটা ভদ্র সচ্ছল ঘরের বউ। বৃদ্ধ তাঁকে হারানোর ভয়ে হাত ধরে আছে খুব শক্ত করে। আমাদেরকে দেখে ভদ্র মহিলা হাত ছাড়িয়ে নিলেন। আমার মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও উনার মাঝে এক রকম জড়তা কাজ করছে। যে কেউ বুঝে নেবে এই মহিলার আত্মসম্মান বোধ কতটা গভীর! সে কারো কাছ থেকে কোন ধরণের সাহায্য সহযোগিতা নিতে অভ্যস্থ নয়! বৃদ্ধ যেন বুড়ির মনের অবস্থা বুঝতে পারলো। অসস্থিকর মুহূর্তটাকে ভেবেই যেন উনি বলে উঠলেন- -জয়গুণ এইটা আমার মেয়ে। আমাকে চাচা ডেকেছে। আমাকে দেখিয়ে বললেন-আর এইটা হল আমার নাতনি। বলেই আমার দিকে তাকালেন। মহিলা মুখে কিছুই বললেন না। মায়ের হাত দুটো ধরে বৃদ্ধের বেডে বসালেন। কেন যেন মা একটুও অপ্রস্তুত হলেন না! মহিলা সুন্দর করে 'ধন্যবাদ' বললেন। উনার চোখ চিকচিক করে উঠলো। আমি লক্ষ্য করলাম মা অবাক দৃষ্টি মেলে ভদ্রমহিলাকে পলকহীন দেখছে। মায়ের ঠোঁট দুটো কাঁপছে। তারমানে মা কোন কষ্ট লুকাচ্ছেন! এতক্ষণ পর মা খুব ধীর লয়ে কথা বললেন- বুবু...চলেন আমাদের সাথে,আমাদের বাসায়। বুবু ডাকটা শুনে মহিলা যেন মুহূর্তেই চমকে উঠলো! পরমুহুর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে বললেন- -না না আজ যাব না। আসলে আমি উনার ভাইয়ের ওখানে যাব। সবাই খুব টেনশনে আছে। বৃদ্ধকে দেখিয়ে বললেন- উনি কোনও স্বজনদের কাছে যেতে চান না। কিন্তু আজ উনাকে আমি জোর করে হলেও নিয়ে যাব। আপনাদের ঠিকানা দিন। কথা দিলাম একদিন আসব। মহিলার ঠোঁটে মৃদ্যু হাসি ফুটে উঠলো। মা আমাদের বাসার ঠিকানা লিখে দিলেন। তখনও চেয়ে আছেন ভদ্র মহিলার দিকে। মহিলা আর একবারও মায়ের দিকে তাকালেন না। মা কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলেন। এমন সময় পণের ষোলো বছরের একটা ছেলে এসে ভদ্র মহিলাকে বলে - চাচিমা রিকসা নিয়ে আসছি। চাচাকে নিয়ে চলেন। পরে আর নৌকো পাওয়া যাবে নানে। দেখি উনি সবকিছু আগেই গুছিয়ে নিয়েছে। মা আর আমি একজন আরেকজনকে দেখলাম। মনে হল আর একটু দেরি করে আমরা এলে হয়ত আর দেখাই হত না। আমাদেরকে না জানিয়েই সবাই চলে যেতেন! উনারা সবাই রিকসায় চড়ে বসলেন। মা থরথর করে কাঁপছে। প্রিয়জন কেউ তাঁকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে এমন ব্যথাভরা চোখ মেলে দূরে তাকিয়ে দেখছেন-রিকসাটা ছুটে ছুটে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো।
নদীর পার ধরে আমরা দুজন কিছুক্ষণ হাঁটলাম। আজ বহুদিন পর আমরা দুজন যেন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। মনে মনে ভাবলাম-'মা বাবা যে শিক্ষা দেয়। যে নিখাত ভালোবাসা দিয়ে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখে। তিলতিল করে তাঁদের জীবনের সবচেয়ে দামি সময়টা তুলে রাখে-এই সন্তানের জন্যই। প্রতি মুহূর্তেই তাঁদের ভাবনায় অবুঝ সন্তানকে পৃথিবীর বুকে একটা নক্ষত্র করে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা! এ যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে দায়মুক্ত হতেই সন্তানকে মানুষের কল্যাণে মানুষ করে গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা। আর তাই তো নিজের জীবনকেও হাসিমুখে বাবা মা সন্তানের জন্য বিসর্জন দিয়ে দিতে একটুও ভাবেন না। এমন বাবা মায়ের জন্য এক জীবনে কিছু করেও যে শান্তি পাওয়া যায় না। এই ছোট্ট ব্যাপারটা কেন সন্তান হয়ে আমরা বুঝি না!' আজ বারবার বাবার কথা মনে করে কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছে। হঠাৎ একটা স্পর্শ। তাকিয়ে দেখি মা আমার হাতটা খুব শক্ত করে ধরেছে। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনার মোটা চশমার ফাঁক গলে যেন ঝুমঝুম বৃষ্টি ঝরছে! কেন যেন আজ আমার চোখের পানি মুছতে ইচ্ছে হল না। কিছু কিছু চোখের জল নীরবে বৈতে দেয়ায় অনেক সুখ। মা সেও যেন আজ সেই সুখ অনুভব করছে! ঠিক পাখির ছানাকে যেমন করে পাখি নিজের বুকের মাঝে জাপটে রাখে? আমি সেভাবেই মায়ের গায়ের সাথে নিজেকে নিবিড় করে জড়িয়ে নিলাম। একেবারে সারা জনমের জন্য। হঠাৎ মা ডুকরে কেঁদে উঠলেন! কাঁদতে কাঁদতে বললেন-'বুবু...তুমি আমাকে চিনতে পারলে না!'
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এস আহমেদ লিটন
ব্যাতিক্রমধর্মী দারুণ লেখা, যেমন ছিল গতি তেমনই সাবলীল ও সহজ ভাষা। সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়ের উপাখ্যান। ভোটের দিক তাকালেই বোঝা যায়, পাঠকদের মনে কতটা জায়গা দখল করেছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।