একটু আগে ঝমঝম করে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। চারদিকে কেমন যেন একটা ভ্যাপসা গরম ছড়াচ্ছে। ভেজা মাটিতে কয়েক শত মানুষের পদচিহ্ন! কারো কারো হাতে নানা ধরণের প্ল্যাকার্ড। কেউ কেউ মাথায় বেঁধে নিয়েছে কোমরে বাঁধা গামছাটা। মাঝে মাঝেই হুঙ্কার ছাড়ছে কেউ কেউ। যদিও সে হুঙ্কারে নার্ভের দুর্বলতার ছাপ খুবই স্পষ্ট! পরিবেশটাই ঠিক যেন কেমন! শহরবাসী এই প্রথম দেখছে না এই পরিবেশ। এহেন পরিস্থিতির সাথে তারা খুব ভালো করে পরিচিত। তবে আজকের ব্যাপারটা একটু খেয়াল করলে সবাই ব্যতিক্রমটা ধরতে পারত। ধরতে পারত আজকে যারা এখানে এক কাতারে দাঁড়িয়েছে,তারা এর আগে কখনও সাহস করেনি এভাবে রাস্তায় নামতে! একটা অন্যরকম,ভিন্ন রকম পরিবেশ! হ্যান্ড মাইকে ভেসে আসছে একজন বৃদ্ধের বলা কিছু কথা-
-'আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত এক শ্রেণির মানুষ(দুর্বল) নির্যাতিত হচ্ছে,আরেক শ্রেণির মানুষ(সবল) দ্বারা। প্রতিনিয়ত পুতুল হয়েই পাঁথর দৃষ্টিতে তা দেখে যাচ্ছি! নেই আমাদের কোন প্রতিবাদের ভাষা। নেই কোন প্রতিকার। কিন্তু আর নয়। সমাজের উঁচু তলায় বসে মুখোশের আড়ালে ওরা একের পর এক অন্যায় করে যাচ্ছে। অথচ ওদের স্তরে থাকা মানুষগুলো সম্মান আর ক্ষমতা দিয়ে ওদেরকে করে তুলছে আরও বেশি শক্তিশালী। কেউ তার সবকিছু জেনে করছে। কেউ করছে না জেনেই। এই ক্ষমতাধর মুখোশ পরা মানুষগুলো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় এবং সমাজে আধিপত্য বিস্তারে নিজেদের দলে রাখে কিছু দুর্বল মানুষকেও। সমাজে তাদের অধিকার দেবার নামে-এই বিত্তবানেরা সমাজসেবার নামে গড়ে তোলে সামাজিক কর্মকাণ্ড। এই সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে চলে সব অসামাজিক কার্যকলাপ। কিন্তু আর নয়! অনেক হয়েছে! আমি দুর্বল হতে পারি। গরীব হতে পারি। কিন্তু আমি একজন মানুষ! আমি একজন বাবা। আমি একজন অসহায় বাবা...' কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দিন মজুর বশীর। তারপর একটু ধাতস্থ্য হয়ে শুকনো চোখে তাকায় সামনে দাঁড়ানো জনতার দিকে। সব মানুষের মাঝে একটা হিংস্র ভাব তিনি দেখতে পান। যে হিংস্রতা বুকে সাহস যোগায়। আশার তরীতে মন ভাসায়।
ঘটনার শুরুটা হয়েছিল দুই বছর আগে। সেই সময়ে মহল্লার সবচেয়ে বখাটে ছেলে নাসিরের,চোখ পড়েছিল নিরহ দিন মজুর বশীরের কিশোরী মেয়েটির উপর! নাসির কেমন স্বভাবের ছেলে তা মহল্লার সবাই জানে। নেশায় ডুবে থাকা এক হিংস্র শয়তান! সে প্রতিদিন একটা করে বিভিন্ন বয়সী মেয়ে বস্তি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর তাকে নিয়ে প্রবেশ করে মহল্লায় নির্মানাধিন ইট বালি সিমেন্টে ঢাকা বাড়ির ভীতরে। এইতো মাত্র কয়েকদিন আগে সন্ধ্যার সময়-৯ বছরের একটা মেয়েকে বগলদাবা করে ঢুকে গেল ঐ বাড়িতে! মহল্লার অনেকেই তা দেখেছে! ছিনতাই,মারামারি,চাঁদাবাজি কোন কিছুই সে বাদ দেয় না! মাঝে মাঝে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তারপরও কী এক জাদু মন্ত্রে আবার তাকে মহল্লায় দেখা যায়!
বশীর দিন মজুর হলে কি হবে। লেখাপড়া করেছে ক্লাস টেন পর্যন্ত। অভাব আর পেটের তাগিদে পড়াশুনা বাদ দিয়ে, দিন মজুরের কাজে যোগ দিয়েছিল। তারপর এক সময় বিয়ে সংসার এসব করতে গিয়ে আর লেখাপড়া করা হয়নি। ওর মেয়ে পুতুল দেখতেও সে পুতুলের মত। লেখাপড়ায়ও সে ভীষণ মেধাবী। দুধে আলতা তার গায়ের রঙ। গায়ে গতরে মাংস একটু কম। তাতেও যেন চেহারার জৌলুশ ফুটে বের হয়। ভালো খাওয়া পেলে তাকে কোন এক রাজকুমারীর মত লাগত। নিজের এই জৌলুশ চেহারা ঢেকে রাখতে বাচ্চা মেয়েটা নিজেকে ঢেকে রাখে কাল বোরখায়! তবুও একদিন ঠিকই শকুনের নজরে এলো সে। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেকভাবে তাকে নিজের করে পেতে চেষ্টা করে নাসির! প্রতিদিন সঙ্গী সাথি নিয়ে পুতুলকে উত্যক্ত করে। কিন্তু পুতুল কি জানতো? শকুন যেখানে নজর দেয়,ছোবল মেরে সেখান থেকে একটুকরো মাংসের স্বাদ সে নিবেই! এখানেও তার কোন ব্যতিক্রম হল না।
একদিন স্কুল থেকে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেলো। সন্ধ্যা তখনও হয়নি। মেঘ করে আকাশ একেবারে ঘন কালো হয়ে গেছে। ঝড় বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বোরখা। পুতুলের বাসায় যেতে হলে ঐ সদ্য নির্মাণাধীন বাড়িটির সামনে দিয়ে যেতে হয়। বাড়িটার সামনে আসতেই পথ রোধ করে দাঁড়ায় নাসির আর তার দল। যেন এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ওরা ছিল! পুতুল কিছু বুঝে উঠার আগেই দুই তিনজন মিলে ওকে কোলে তুলে নিয়ে ঢুকে যায় ঐ বাড়ির ভীতরে। কিশোরী পুতুল খাঁচায় বন্দী পাখির মত ছটফট করতে থাকে! নাসির একটানে খুলে ফেলে ওর বোরখা। তারপর একে একে সব কাপড়। পুতুল সবটুকু শক্তি দিয়ে চিৎকার দিয়ে ডেকে যায় বাবা মাকে। কিন্তু ওর চিৎকার পাশের বিল পার হয়ে কোন মানুষের কাছে পৌঁছায় না। বয়সে দ্বিগুণ নাসির নিজের সমস্ত শক্তি নিয়ে উঠে বসে কচি শরীরের উপর! অশরীরী শক্তি নিয়ে কামড়ে দেয় ওর ঠোঁট,বুক সারা শরীর! তারপর তুমুল যুদ্ধ। পুতুল বুঝতে পারে প্রচণ্ড ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে নিজের দেহটা! বাইরে প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ে! ওর মনে হল যেন,কচি ডগার মত,শরীরের হাড্ডিগুলো কড়মড় শব্দে চামড়া ভেদ করে বের হয়ে আসতে চায়ছে! অসহ্য যন্ত্রণায় শরীরের আর কোন স্পন্দন সে টের পেলো না। একসময় চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে।
********
বশীর ঘটনাটাকে ঢেকে রাখতে চেয়েছিল। মেয়েটার যা ক্ষতি হবার তাতো হয়েছে। তবুও আর কোন ক্ষতি না হোক। এই ভেবে সবকিছু খুব সুন্দর করে আড়াল করতে চেয়েছিল। কিন্তু মেয়েটার মুখের দিকে যতবার তাকায়! ওর কলিজাটা শক্ত পাঁজর ভেঙে বের হয়ে আসতে চায়। ওর ভিতর থেকে কে যেন বলে "বাবা তুমি কেমন বাবা? মেয়েকে ন্যায় দিতে পারো না?" একটা ভয়। যদি মেয়েটা আত্মহত্যা করে! নাহ সে বিচার চাইবে। সে যেভাবেই হোক মেয়ের হয়ে লড়বে...। কিন্তু কোন ভাবেই ওর সাহসে কুলায় না। ঘটনাটা কীভাবে কীভাবে যেন পাশের বাসার সাংবাদিক পিয়া মেয়েটা জেনে যায়। ব্যাস...
তারপর পুতুলের এই ঘটনায় সারা শহর জেগে উঠে! বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয় ওর মত কিছু মানুষ। পাশে এসে দাঁড়ায় সামাজিক সংগঠনগুলো! জনগণের দাবিতে প্রচণ্ড চাপে পড়ে নাসিরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। দিনমজুর বশীরের ভাগ্য ভালো। তার মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায়,স্বয়ং মহল্লার ধনী ক্ষমতাবান সমাজ সেবক নাসিরের বাবাই পাশে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু তার উদ্দেশ্য কেউ জানে না। তিনি যখন কিছু নগদ অর্থদণ্ড দিয়ে কেইসটি মীমাংসা করতে গিয়েও বশিরকে রাজি করাতে পারলেন না! তখন তিনি বশিরের মেয়ে পুতুলকে ছেলে নাসিরের সাথে বিয়ে দিয়ে ঘরে নিতে চাইলেন। "আর যদি না এই প্রস্তাবে বশীর রাজি না হয়? তাহলে বশিরের পুরো পরিবারকে শেষ করে দেয়া হবে! যা একটা কাকপক্ষীও কোনদিন জানতে পারবে না।"-এ কথা শুনিয়ে দিলেন। বশীর ভাবল সে গরীব মানুষ। এইসব ধনীদের সাথে কোনভাবেই সে পেরে উঠবে না। যেখানে একদিন কাজ না করলে খাবার জোটে না। সেখানে তিনি কীভাবে এসব আইনি লড়াই লড়বেন? তার চেয়ে সবকিছু মেনে নেয়ায় ভালো। মেয়েকে তো একদিন বিয়ে দিতেই হত। ধনীর ঘরের বউ হবে! ভালোই হল গরীবের মেয়েটার একটা ভালো গতি হল। মান-সম্মানও বাঁচল! মেয়েটা কপালে যা লিখে নিয়ে আসছে তাই হবে! আর ওদিকে নাসিরের বাবা ভাবে "যাক ছেলেটা আর নোংরা জায়গায় মুখ দেবে না! যা কিছু হবে তা এখন ঘরেই হবে। চার দেয়ালের মাঝে।" স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দিন মজুরের মেয়েকে পুত্রবধূ করে ঘরে নিয়ে আসেন।
কিন্তু সাংবাদিক মেয়েটি তবুও ছাড়ল না। 'এইটুকুন বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে দেয়া আইন বিরুদ্ধ!' এই কথা বলে পিয়া চেষ্টা করল মেয়েটার বিয়েতে বাঁধা দিতে। সে আইনের আশ্রয় নিলে দেখা গেলো বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল। যা সদ্য পাশ হয়েছে। সেই বিলের একটি বিশেষ বিধানে বলা আছে "এই বিলের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন,কোন বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে,আদলতের নির্দেশ এবং পিতামাতার সম্মতিক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হলে তা এ আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না!" এই বিশেষ বিধানে বাল্যবিবাহ নিরোধ-আইনেই পুতুলকে বিয়ে দিতে আর বাঁধা হল না।
এদিকে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবার এবং জেল খাঁটার ভয়ে নাসির বাধ্য হল পুতুলকে বিয়ে করতে। আর ধর্ষণ কেইসটা ওখানেই দফারফা হয়ে গেলো। পুরো শহর এক সময় শান্ত হয়ে যায়। ঘটনা ভুলে সবাই যার যার মত করে,নিজেদের নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে যায়।
তারপর কেমন আছে পুতুল...
পুতুলের পেটে আগে প্রতিদিন তিনবেলা খাবার জুটত না। তবুও সে অনেক সুখে ছিল। মাটির মেঝেতে শুয়ে শুয়ে, জংধরা টিনের ফোঁকর গলে আসা জ্যোৎস্নার সাথে,সে প্রেমালাপে লজ্জা পেত। শীতের রাতে ছেঁড়া কাঁথা জড়িয়ে ঠকঠক করে কেঁপে কেঁপে,আগামীর স্বপ্নে ওম খুঁজে নিত! শস্য খেতের আইল ধরে সে,প্রজাপতির মত উড়ে বেড়াত! স্বপ্নের খেয়ালে নিত্য কত যে ভেসে যাবার সুখানন্দ চিল! আর এখন...? এখন তার খাবারের কোন অভাব নেই। শীত কিংবা গরম! বিদেশি বিছানায় শুয়ে কিছুই বুঝার উপায় নেই! কিন্তু সুখ...? সে যেন সুদূর সমুদ্রের গহীন জলে ভেসে যাওয়া কোন ঢেউ। যে ঢেউ আর ফিরে আসে না! এতো আরাম আয়েশের মাঝেও ডানাভাঙা পাখির মত,প্রতিটা ক্ষণ ছুটে পালাবার ইচ্ছে জাগে তার! কিন্তু কোথায় যাবে সে...? এই সংসারে ওর কোন মতামত,ইচ্ছে,চাওয়া পাওয়া কোন কিছুর কোন দাম নেই! একবারের জায়গায় দুইবার কোন কথা বললেই প্রচণ্ড মার খেতে হয়। দুধে আলতা গায়ে এখন ছোপ ছোপ রক্ত জমাট বেঁধে আছে জিঘাংসার সাক্ষী হয়ে।
নাসির আগে তার কর্মকাণ্ড গুলো বাইরে করত। এখন সে ঘরের মাঝেই করে। প্রতিদিন ঠিক যেন সিনেমায় দেখা কোন
রাজকীয় স্টাইলে জলসা ঘরের সিন চলছে এই বাড়িটাতে। সবকিছুই চলে পুতুল নামের পুতুলের সামনেই। এ যে কত বড় মানসিক অত্যাচার তা কেবল ভুক্তভুগিই জানে। এসব ঘটনা চার দেয়ালেই আটকা পড়ে থাকে। পুতুল ধীরে ধীরে মানসিক রোগীতে পরিণত হয়। নাসির নামের সামাজিক ক্যানসার,তাকে ধীরে ধীরে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে নিচ্ছে। এ খবর বাইরের কারোর জানা হল না। বাবা মা কারোর সাথে দেখা নেই পুতুলের।
আজ দুই বছর পরে দিন মজুর অসহায় বাবা বশীর মেয়ের জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। যতবার দেখা করতে গেছে দারোয়ান গলা ধাক্কা দিয়ে মারধোর করে বের করে দিয়েছে। কলিজার টুকরো মেয়েটা আজ বহুদিন সে একনজর দেখতে পায়নি। কেমন আছে ম্যা মরা মেয়েটা? সে জানে না। শুধু জানে বুকের ভিতরে চাপচাপ ব্যথা। আর সেই ব্যথা নিংড়ে কেউ একজন আগের মত করে ওকে ডাকে 'বাজান গো আমার কোলে তুইল্লা কাছে নিয়া যাও। আমারে বাঁচাও বাজান!" আর তাই আবার শরণাপন্ন হয় সেই সাহসী সাংবাদিক পিয়া নামের মেয়েটির। দগদগে ঘা যা গত দুইবছরে নীরবে ক্ষতবিক্ষত হলেও চাপা পড়ে ছিল! আজ সেই ঘা যেন একজন বাবার আকুতিতে আবারও তাজা হয়ে সবার মনে রক্তক্ষরণ করছে! এবার যেন একটু বেশিই জ্বালা ধরেছে...।
বশীর কথা বলতে বলতে থেমে যাওয়ায় পিয়া পাশ থেকে বলে উঠে 'বশীর মিয়া কথা বল। সবাই তোমার কথা শুনতে চায়। বল..." সম্বিত ফিরে পায় বশীর। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে ঘোলাটে চোখে তাকায় সামনে উত্তাল জনতার দিকে। তারপর আবার বলতে শুরু করে। গলাটা এবার বেশ ধরে আসে-
' আমি আগে এতটা ভাবি নাই। গত দুই বছরে ধুঁকে ধুঁকে জীবন চালিয়েছি। অনেক করে ভেবে ভেবে একটা জিনিষই অনুভব করেছি-একজন ধর্ষক যখন ধর্ষণ করে? তখন তাকে সাঁজা দিতে ধর্ষিতার সাথে বিয়ে দিলে? সাঁজাটা আসলে ঐ ধর্ষিতাই পায়। ধর্ষণ করে ছেলেটা যে শাস্তি মেয়েটাকে দিয়েছে? এ শাস্তি তার থেকেও অনেক বেশি। আমার পুতুল...! পুতুলের মত মেয়েরা ধৈর্য ধরলে কয়েকজন সন্তান পাবে। কিন্তু সুখ আর স্ত্রীর মর্যাদা কোনদিন পাবে না। আর ধৈর্য না থাকলে সিলিং ফ্যানের সাথে নিজেকে ঝুলিয়ে,অথবা ঘুমের ওষুধ খেয়ে! নিবিড় ঘুমকে আলিঙ্গন করে নাসিরের মত জানোয়ারকে মুক্তি দিয়ে যাবে। সুতরং একজন ধর্ষিতার বাবা মাকেই তাঁদের পুতুলের জন্য ভাবতে হবে...। যে শাস্তি নাসির ও তার পরিবার পাবার কথা? নির্দ্বিধায় বলা যায়-বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-এর এই বিশেষ বিধানে সে শাস্তি ভোগ করতে হবে পুতুল আর তাঁর পরিবারকে। এই আইন ক্ষমতাধরদের ক্ষমতাকেই বাড়িয়ে দিলো। এই বিধানের ফোঁকর গলে,ফোঁটার আগেই ঝরে যাবে অনেক কুঁড়ি...।'
আর যেন কোন কথা বলার শক্তি নেই। কে যেন গলাটা চেপে ধরেছে...! কিন্তু কথা যে তাকে বলতেই হবে! যেভাবেই হোক বাবা হয়ে মেয়েকে যে ন্যায় দিতেই হবে। এই তো সুযোগ-নাসির আর ওর বাবা প্রভাবশালী সমাজসেবকের মুখোশ খুলে দিয়ে তাদেরকে উলঙ্গ করার। 'একটা আইন সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। সাথে ছিল আমার লোভ। আমার মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া। আমার মেয়েটাকে এই আমি নিজের হাতে আগুনে ফেলে দিয়েছি। আমি কারো কথা শুনিনি। আমি শুধু মানসম্মান আর মেয়ের ভবিষ্যৎ দেখেছি। আমার শাস্তি হওয়া উচিৎ। আমার প্রায়শ্চিত্ত হওয়া উচিৎ। আর এই প্রায়শ্চিত্ত করতে আমি জান দিতে হলেও দেব। ঐ উঁচু তলার মানুষগুলোকে আমি ন্যাংটা করে রাস্তায় নামিয়ে এনে ছাড়ব।আপনারা আমার মেয়ের জন্য আগেও করেছেন। আমি জানি,আমার মন বলে আজ আমার মেয়েটা অনেক কষ্টে আছে! শুধু তার কথা ভেবে আজ আমি আপনাদের কাছে আসিনি...। আমি চাই আর কোন বাবাই যেন আমার মত ভুল না করে। আর কোন পুতুল যেন নাসির আর ওর বাবার মত জানোয়ারের থাবায় জীবন না দেয়। আল্লাহের ওয়াস্তে আপনারা আমাকে দয়া করে সাহায্য করেন। আমার মেয়েটাকে আপনারা বাঁচান...' বশীর কথা বলতে বলতে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে।
একজন বাবার কান্না যেন আকাশ বাতাসকে ভারী করে তোলে। শুরু হয় জনতার উত্তাল ঢেউ! নাসিরের বাবার টাকা ক্ষমতা কোনকিছুই এই ঢেউকে বাঁধা দিতে পারে না! ওদের বাসার সামনে এসে থামে সে ঢেউ। টেনে হিঁচড়ে বের করে আনে নাসির ও ওর বাবাকে। আজ হিংস্র জনতা দুইজন জানোয়ারকে জানে মেরে ফেলার প্রতিজ্ঞায় নামে। কিন্তু আইন ভেঙে ন্যায় প্রতিষ্ঠা কোনভাবেই সম্ভব নয়। সাংবাদিক মেয়েটা সবাইকে অনেক কষ্টে কথাটা বুঝাতে সক্ষম হয়। নাসির আর ওর বাবাকে আধমরা অবস্থায় পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
পুতুলকে পাওয়া যায় শিকলে বাঁধা অপ্রকৃতিস্হ অবস্থায় একটা অন্ধকার ঘরে। বাবা ওর হাতটা ধরতেই ভয় আর আতঙ্কে থরথর করে কেঁপে যায় কংকালসার ন্যাড়া মাথার মেয়েটা। সে আজ প্রিয় বাবাকেও চেনে না! দিন মজুর বশীর মেয়েকে আদর করে জড়িয়ে ধরে। এই মুখোশের আড়ালে থাকা সমাজের মাত্র দুজন মানুষের মুখোশ খুলে,সমাজকে কলুষিত মুক্ত করা যাবে না। সমাজটাকে পবিত্র করা যাবে না! এখানে সবার চোখ বিবস্ত্র দেখা গেলেও-কারো কারো হৃদয় ঢাকা পড়ে আছে নোংরা খোলসে! এখানে মেয়েটাকে সে বাঁচাতে পারবে না। এই সমাজের কিছু মানুষ পুতুলকে নিয়ে এখন অন্যরকম খেলায় মেতে উঠবে। সে তা হতে দেবে না! আর তাই মেয়েকে নিয়ে ছুটে যায় ট্রেন ষ্টেশনের দিকে। যেখানে বিশুদ্ধ ভালোবাসায় মানুষ এখনও নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকে। যেখানে সামান্য হলেও খাঁটি মানুষের স্পর্শ মেলে। এমন একটা জায়গার সন্ধানে বশীর মেয়েকে নিয়ে ছুটে চলে। সবুজ সোনালি স্নিগ্ধতায় ভরা কোন এক অকৃত্রিম পৃথিবীর সন্ধানে- তাকে যে দূরে যেতেই হবে। অনেক অ-নে-ক দূরে...।
এই ঘটনা পুরো শহরে শুধু নয়। দেশ ছেড়ে বিদেশেও বাবা ছেলের ছবি দিয়ে বড় বড় অক্ষরে হেডলাইন হয়...'দেশে চলবে না আর ধর্ষক ও তাদের দোসরদের ধৃষ্টতা। দেশবাসী তাদের উলঙ্গ করে ছেড়ে দেবে।'
২৭ মে - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১২০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪