টকটকে লাল ফুলে সেজে সেজে কৃষ্ণচূড়া গাছ যেন মনে,ফাগুন মাসে আগুন ধরা প্রেম জাগায়। ঠিক তেমনি করে লাল রঙ সাঁজ স্মরণ করিয়ে দেয় এই দিনটাকে "হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে"! এই দিনে সঞ্চিতা এই ষ্টোরে আসা প্রতিটি ক্রেতার মুখে সুখের একটা ঝিলিক দেখতে পাচ্ছে! ওর মনে হচ্ছে সবাই যেন ভালোবাসার স্বর্গীয় অনুভূতি নিয়ে এই দিনটির অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু ওর মনে আজকের দিনে কোন আনন্দ নেই।
মাত্র দুই মাস হয়েছে সে এখানে বোনের কাছে পড়তে এসেছে। এই ছোট্ট স্টোরটি ওর বোনের। বোন আজ ডাক্তারের কাছে গেছে। তাই সঞ্চিতাকে আসতে হয়েছে। দেশে বসে নিজেদের দেশে যে উৎসব দেখেছে? তারথেকে যেন একটু বেশিই সাঁজ সাঁজ রব রব চারদিকে! দেশে বসে সে প্রবাসে এই দিনটি পালনের অনেক কথা শুনেছে। প্রেমিক প্রেমিকা ফুল কার্ড চকলেট উপহার দিয়ে নিজেদের হৃদয়ের কথা প্রকাশ করে। "ভালবাসি" কথাটা ছোট হলেও এর প্রকাশ করার শক্তি সবাই অর্জন করতে পারে না। আর পারে না বলেই অনেক কাছে এসেও দুজন মানুষের ভালবাসা অপ্রকাশিতই থেকে যায়। ভালবাসা যদিও অনুভবের বিষয়। তবুও উপহার আর ভালবাসি বলা কথাটা যেন জীবনে অন্যরকম সুখ এনে দেয়।
দুজন মানুষ দীর্ঘ সময় একে অন্যকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে। সুখের স্বপ্ন বুনে বুনে পাড়ি দেয় কত সাগর। অথচ ভালবাসি মুখে বলা হয় না বলেই ধীরে ধীরে বাড়ে এক ঘেয়েমি। আর যদি দুজন কোন কারণে সত্যিই দুদিকে যায়? তাহলে ভালবাসাও ছুটে পালায় অন্যকোন খেয়ালে!
সেই স্কুল জীবন থেকে সঞ্চিতা ভালবাসে শুভকে। অথচ সে ওকে ভালবাসে কিনা তা কোনদিন বুঝতে পারেনি। ওর প্রতি শুভ'র আন্তরিকতা আর কেয়ারিং অনুভব করায় হয়তবা শুভ ওকে ভালবাসে। সঞ্চিতার ব্যথায় শুভ'র চোখে জল আসে। ও রাগ করলে শুভ'র যেন দুনিয়াটায় বদলে যায়। ওর রাগ ভাঙাতে রাতদিন এক করে ফেলে। "সঞ্চুসোনা বল না তোর কী হয়েছে? আমার কোন কথায় কষ্ট পেয়েছিস!? এই সঞ্চু বল না!" না সঞ্চিতা বলতে পারেনি "শুভ তোকে ছেড়ে আমি অ্যামেরিকা চলে যাচ্ছি। তোর সাথে আমার আর দেখা হবে না। আর যাবোই বা না কেন? তুই তো আমাকে ভালবাসিস না! তোর ভালোবাসা পেলে তো আমি দুনিয়াটায় ছেড়ে দিতে পারি...।তুই ভালবাসলে আজ এতগুলো বছরে কি একবারও বলতে পারতি না "সঞ্চু অ্যাই লাভ ইউ!"
সঞ্চিতার মনের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠে লুকানো ব্যথা। চোখের সামনে ভেসে উঠে সেদিন ওকে প্লেনে তুলে দিতে এসে শুভ হেসে বলেছিল"যা একটা অ্যামেরিকান বিয়ে করে তারপর আসিস!"ওর হাসি বুকের মাঝে চাবুকের মত সপাং করে বাড়ি মারছিল! কিন্তু ওর চোখ! ওর চোখে সে ব্যথা দেখেছিল! "আচ্ছা এই দুই মাসে একবারও এসব কথা মনে আসেনি কেন? তাহলে কি শুভ ওকে ভালোবাসে?" কথাটা ভাবতেই ভীষণ অস্থির লাগে। এমন সময় "টুংটাংটুং"শব্দে স্টোরের উইন্ড চাইমসটা বেজে উঠে। দরজা ঠেলে ভীতরে আসে একজন বৃদ্ধ লোক। ও কিছু বলার আগেই,লোকটা যেখানে গিফট কার্ড রাখা সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়।
সঞ্চিতা এই ফাঁকে ফেসবুকে লগিন করে। আজ কতদিন ফেসবুকও দেখা হয়নি! শুভ'র দেয়া শেষ স্ট্যাটাস দেখে চমকে উঠে! "তোমার অপেক্ষায় জেগে আছি! ঘুম আসে না দুচোখে!" শুভ'র জীবনে অন্যকেউ এসেছে? গলার কাছে কান্না দলা পাকিয়ে দম বন্ধ করে দিতে চায়! "থাক ও সুখে থাকলে আমিও সুখী!" বিষণ্ণ মন নিয়ে যায় কাষ্টমারের কাছে। বৃদ্ধ হেসে বলে- -হাই বিউটিফুল ক্যামন আছো? -ভালো ধন্যবাদ। কোন সাহায্য করতে পারি? এবার বৃদ্ধ লোকটি কয়েক মুহূর্ত ওর দিকে অপলক তাকিয়ে বলে- -হ্যাঁ পারো,কিন্তু মনে হয়না তোমার পছন্দ প্রিয়তমা পছন্দ করবে! হাঃ হাঃ হাঃ লোকটার হাসিটাও অসহ্য লাগছে। তবুও তাঁকে একটার পর একটা কার্ড দেখায়- -এই কার্ডটা নিশ্চয় সে পছন্দ করবে? লোকটা হেসে জবাব দেয়- এটাও ওর কালেকশনে আছে। এভাবে ত্রিশ মিনিট ধরে কার্ড দেখায়। আর বৃদ্ধ বলে "এটাও আছে।"
সঞ্চিতা আজ একটা কার্ড বানিয়েছে। ভেবেছে এই কার্ড সে অ্যামেরিকার প্রথম ভ্যালেন্টাইন ডে হিসাবে শুভকে ভেবে নিজের কাছে রেখে দেবে। কার্ডের উপরে বাংলায় লিখেছে-"তোমাকে ভালবেসে,ভালবাসা চিনেছি-ভালবাসার দামে আমি,ভালবাসা কিনেছি!" কার্ডটা কাউন্টারের উপর রাখা। বৃদ্ধ লোকটির নজর পড়ে ঐ কার্ড-এ। -ওয়াও সো বিউটিফুল! আমি ঐটা চাই... - এটার ভাষা বাঙলা।সে এই ভাষা বুঝবে না। - সে সব ভাষা বুঝে। নিজের ভালোবাসার জন্য বানিয়েছে কথাটা সঞ্চিতা বলতে পারলো না। লোকটা খুব খুশি হয়ে কার্ডটা হাতে নিয়েছে। - ঠিক আছে তুমি তার জন্য কার্ডটা নিতে পার কিন্তু কোন দাম দিতে হবে না। লোকটা বিশ ডলারের একটা নোট কাউন্টারের উপর রেখে বলে- প্লিজ এটা তোমাকে নিতে হবে। আমি তোমার পারিশ্রমিক দেইনি এতে ও আমার উপর রাগ করবে। - সে কিছুই জানবে না ট্রাষ্ট মি। বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কিছু না বলে সামনের দিকে হেঁটে যায়। এমন সময় ষ্টোরে আসে সুদিপ্তা। লোকটাকে বলে - মিঃ স্টীভ স্ত্রীর জন্য কিছু পছন্দ হল? স্টিভ মাথা উপর নীচে ঝাঁকিয়ে "হ্যাঁ" বলে একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বের হয়ে যায়। সুদিপ্তা বলে - কী অদ্ভুত মানুষের ভালবাসা। সঞ্চিতা অবাক হয়ে বলে- মানে?! -আমি এই বৃদ্ধকে সাত বছর ধরে দেখছি গিফট কার্ড কিনে নিয়ে তাঁর স্ত্রীকে হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন জানায়! -ভালো তো লোকটা তাঁর স্ত্রীকে অনেক ভালবাসে। -হ্যাঁ অনেক ভালবাসে। অথচ ওর স্ত্রী সতের বছর আগেই মারা গেছে!
সঞ্চিতার যেন হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে! ভালবাসা কি তাহলে আসলেই এমন...! যাকে ভালবাসা যায় সে যেখানেই থাকুক আমি তাকে মনের মাঝে ধরে রাখব আমার মত করে। সে কী করল সেইটা দেখার দরকার নেই। ভালবেসে আমি কী করছি সেইটাই মুখ্য! ও জানে না ওর কী হল। এক পশলা সুখের দমকা হাওয়া এসে যেন ওর শরীরে শিহরণ তুলেছে! উত্তেজনায় কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে দেশের একটা নাম্বার ডায়াল করে। ওপাশ থেকে ভেসে আসে শুভ'র ব্যাকুল কণ্ঠ-"সঞ্চু...।"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Shihab Mannan Aunee
আপু আপনার একটা গল্প নিয়ে ওটার উপর base করে চিএগল্প এ ফুটিয়ে তুলতে চাচ্ছি আমি আরও একটু details এ কথা বলতে চাচ্ছি কীভাবে যোগাযোগ করতে পারি আপু৷ আপনি যদি ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন একটা text দিলে খুব উপকার হয়৷
কাজী জাহাঙ্গীর
বৃদ্ধের উপমাটাই ত গল্পের টুইস্ট , আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। তবে বর্ণনায় একটা লাইন আমার কাছে উল্টো মনে হয়েছে “ওর(সঞ্চিতা) প্রতি শুভ'র আন্তরিকতা আর কেয়ারিং অনুভব করায় হয়তবা শুভ ওকে ভালবাসে।”নাকি শুভ সঞ্চিতাকে কেয়ার করে বলেই সঞ্চিতা শুভকে ভালবাসে,লেখকের বর্ণনায় শুভ’র এত আবেগ সত্বেও সঞ্চিতা বলছে শুভ তাকে ভালবাসে কিনা সে কোনদিন বুঝতে পারেনি,অথচ সে স্কুল জীবন থেকে ভালবাসে বলেছে, এটা শেষাংশের আবেগের সাথে একটু বেখাপ্পা হলেও সর্বোপরি গল্পের এসেন্সটা ভালই লেগেছে আপা, অনেক শুভকামনা, সময় থাকলে আমার ওখানটায় একবার আসবেনএই প্রত্যাশায়...।
"“ওর(সঞ্চিতা) প্রতি শুভ'র আন্তরিকতা আর কেয়ারিং অনুভব করায় হয়তবা শুভ ওকে ভালবাসে।”নাকি শুভ সঞ্চিতাকে কেয়ার করে বলেই সঞ্চিতা শুভকে ভালবাসে।"গল্পের প্রথমেই বলেছি-""ভালবাসি" কথাটা ছোট হলেও এর প্রকাশ করার শক্তি সবাই অর্জন করতে পারে না। আর পারে না বলেই অনেক কাছে এসেও দুজন মানুষের ভালবাসা অপ্রকাশিতই থেকে যায়।" অনেক সময় দুজন মানুষ দুজনেই বুঝে অনুভব করে যে একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। কিন্তু মুখে বলতে পারে না। ভ্যালেন্টাইন হচ্ছে মুখে"ভালোবাসি তোমাকে" প্রকাশ করার দিন। আর টুইস্ট এর ব্যপারটা হচ্ছে গল্প পড়লে না বুঝা যাবে টুইস্ট আছে কি নেই। কারো কারো মন্তব্য দেখেই বুঝা যায় গল্প পড়ে নাকি না পড়ে মন্তব্য করছে। অনেক সময় হয়ত মজা করে লেখককে কিছুটা ঝালাই করতেও অনেকে এমনটা মজা করে। অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে গল্প পড়ার জন্য। অবশ্যই আপনার লেখাও পড়ব। ভালো থাকুন শুভকামনা।
আশা জাগানিয়া
শেষটা হৃদয় স্পর্শ করে গেল। অনেক শুভকামনা রইল।
বেশ কয়েকবছর পর আবার এই সাইটিতে লেখা দিলাম। আমার গল্পে আপনার মতো অভিজ্ঞজনের মতামত পেলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
"দায়সারা ভাব" বলতে আসলে কি বুঝানো হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়! গল্পটা ছোটগল্প ফর্মেটেই লেখা হয়েছে। একটা গল্পে মুলতঃ যতটা বাচনিকতা রাখলে গল্প স্বয়ংসম্পূর্ণতা পয়ায় তার একটুও কমবেশি গল্পে নেয়। এটা একজন লেখক হিসাবে বলতে পারি। আর আবেগ ছাড়াও গল্প হয়। তবুও ব্যর্থতা মেনে নিলাম যে পাঠককে গল্প ঠিকভাবে বুঝাতে পারিনি। ধন্যবাদ পান্না ভাই সময় দিয়ে গল্প পড়ে মন্তব্য দেবার জন্য। ভালো থাকবেন।
কোনো ভাবনাই চূড়ান্ত নয়। কিছু বিষয় আমার নজর এড়িয়ে যেতেই পারে। আপনার লেখার হাত শুরু থেকেই এ সাইটের সেরা হাতগুলোর একটা। একটা এক্সপেক্টেশন লেভেল থাকে আপনাদের হাতের কাছে। সেখানে একটা গ্যাপ মনে হয়েছে। সেটা চূড়ান্ত ভাবনা হবে সে দাবী করছিনা।
কোনো ভাবনাই চূড়ান্ত নয়। কিছু বিষয় আমার নজর এড়িয়ে যেতেই পারে। আপনার লেখার হাত শুরু থেকেই এ সাইটের সেরা হাতগুলোর একটা। একটা এক্সপেক্টেশন লেভেল থাকে আপনাদের হাতের কাছে। সেখানে একটা গ্যাপ মনে হয়েছে। সেটা চূড়ান্ত ভাবনা হবে সে দাবী করছিনা।
মামুন ম. আজিজ
পড়লাম সেলিনা।
ঝরঝরে লেখা। তেব সত্যি বলতে মুগ্ধ হবার মতোা কিছু পেলাম না।
আসলে লেখার জন্য লিখেছোা বোঝা যায়।
তবে কমেন্ট করতে হয় বরেই বলিছ...শান্তশিষ্ঠ ভালোবাসার নরম সুরেলা গল্প। টুইস্ট মুইস্ট নাই। জাস্ট চিরন্তন ভালবসার সুর।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।