বোতাম খোলা ঘর

ঘৃনা (আগষ্ট ২০১৫)

সেলিনা ইসলাম
মোট ভোট ১৮ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.৬২
  • ১২
  • ১০
আজ মেঘলা আকাশ। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু সেই বৃষ্টিকে ছাপিয়ে তোলপাড় করে দিচ্ছে একটা ঝড়! যে ঝড়ের দানব হাওয়ায় ভেঙে যাচ্ছে মন। ভাবছি বসে- মনের কী দোষ? তখন যা কিছু করেছি তা আজকের দিনকে ভেবে করিনি! তখন কেবলই মনে হত বাবা যা বলছে,বাবা যা করছে তা সব ভুল। সন্তান হিসাবে আমার প্রাপ্তি আরও বেশি যা বাবা দিতে পারছে না! আর তাই বাবাকে অনেক অবহেলা আর,অবজ্ঞা করেছি। সেই সময়ে কখনো ভাবিনী বাবার মনের মাঝে কতটা রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। ভাবিনী কতটা ঝড় তাণ্ডবে ভালবাসায় ভরা বাবা'র হৃদয়টা কতগুলো টুকরো হয়েছে!

যতদিন ছোট ছিলাম বাবা ছাড়া আমার প্রতিটা দিন ছিল মরুভূমি। আর প্রতিটা রাত ছিল অমাবস্যায় ঘেরা তদ্রাচ্ছন্ন ঢুলুনি রাত। যে রাতে ঘুমের মাঝেও আঁতকে উঠতাম বাবার সান্নিধ্য না পাবার কারণে। সারারাত মুঠোভরে ধরে রাখতাম বালিশের কভার! কিন্তু সকালে যখন ঘুম থেকে জেগে বাবার লোমশ বুকের মাঝে নিজের নাকটা গুঁজে নিজেকে আবিষ্কার করতাম...তখন কীভাবে যে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে রাত পার করেছি তার কারণটা খুঁজে পেতাম। সেই সময়ে কী যে শান্তি পেতাম ঐ বুকটাতে! গল্পচ্ছলে মা বলতেন,সেই ছোট্ট বেলা থেকে বাবার বুকের উপর উপুড় হয়ে না থাকলে আমার ঘুম আসতো না! ছোট্ট একটা চা-বিড়ির দোকানের মালিক বাবা যখন ক্লান্ত হয়ে মাঝ রাতে ঘরে ফিরে আমাকে জেগে তাঁর অপেক্ষা করতে দেখতেন;তখন মাকে খুব করে বকা দিয়ে দিতেন। নিজেই নিজের প্রতি অনুযোগ করতেন রাত করে ফেরার দোষে। তারপর সব ক্লান্তি ভুলে আমাকে কোলে নিয়ে আদর করে বুকে জড়িয়ে নিতেন। বাবার ঘামে ভেজা শরীর থেকে এক ধরণের ঘ্রাণ আমাকে আবিষ্ট করে দিত। নিশ্চিন্ত,নিরাপদে গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতাম পরম নির্ভরতায়।

অথচ বড় হতে হতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাবার ঘামে ভেজা শরীরের ঘ্রাণ থেকে দুর্গন্ধ পেতাম। বাবা কাছে ডাকলেও হোম অয়ার্ক আছে বলে এড়িয়ে যেতাম। একদিন অনেক গরম পড়েছে। ছোট্ট মুলি বাঁশের বেড়ার ঘরে আমার যেন কষ্ট না হয় তাই একটা টেবিল ফ্যান কিনে দিলেও,গনগনে আগুণ গরমে বাবা ঘেমে নেয়ে উঠেছেন। বারবার পরনের লুঙ্গী উঁচু করে মুখ মুছে নিচ্ছেন। আমি দেখেও না দেখার ভান করছি! মা বললেন ফ্যানটা বাবার দিকে ঘুরিয়ে দিতে। কিন্তু আমি শুনেও শুনিনি! বাবার কাছ থেকে বিড়ি আর ঘামের গন্ধ মিলে একটা কড়া বোটকা গন্ধ আমার দম বন্ধ করে দিতে চায়ছে। বাবা আমার কাছে এসে মাথায় হাত রাখলেন। আদর করে দিতে চাইলেন আমার কপালে। আমি বাবাকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম দু'হাত দূরে। ছুটে বের হয়ে গেলাম ঘর থেকে। পিছনে শুনতে পেলাম বাবার হাসি - "হা হা হা পাগল ছেলে।"

পড়াশুনায় খুব ভালো ছাত্র থাকায় স্কুলের শিক্ষকদের বাড়তি নজর ছিল আমার প্রতি। তাঁদের ভালবাসা বেশ উপভোগ করলেও দিন দিন কেন যেন বাবা মা কে সইতে পারছিলাম না। মায়ের সাথে কেবলই খাবার ওয়াক্তে হু, হ্যাঁ কথা হত। আর যখন টাকা লাগত তখন চাইতাম। আমার স্কুলের বেতন ছাড়া কোনদিনই কোন টাকা আমি কারো কাছ থেকে পাইনি। এমন কী ক্লাসের বইগুলো বাবা কিনে নিত দোকানে কাগজের ঠোঙ্গা দিতে আসা ছেলেটির কাছ থেকে। যে বইগুলো ধরতেও আমার ঘৃণা লাগত! একসময় বাধ্য হয়ে নীরবে কেঁদে বইয়ে হাত দিতাম। এই পুরানো বই সেদিন ভালো লাগল যেদিন প্রথম একটা বইয়ের মাঝে একশত টাকার একটা নোট পেয়েছিলাম! সেদিন থেকে পুরানো বই আসা মাত্র আমি ওলট পালট করা শুরু করতাম খুব আনন্দ নিয়ে। কিন্তু ঐ একবারই বইগুলো আমাকে কিছুটা আনন্দ দিয়েছে। ক্লাসে ফিসফাঁস বাতাসে যে কথাগুলো কানে আসতো তাতে বুঝে নিতাম ক্লাসমেটরা কে কবে কার বাসায় গেছে,গেম খেলেছে,গল্প করেছে! কিন্তু আমাকে কেউ কোনদিন তাদের বাসায়ও আমন্ত্রণ জানায়নি। আমিও কোনদিন কাউকেই আমাদের ঘরে আনিনি! সবার কাছ থেকে দূরে জড়সড় হয়ে থেকেছি সব সময়। সত্যি বলতে কী ঘরে আমার ফিরতে ইচ্ছে হত না! কিন্তু ভালো ছাত্র হওয়াতে বেশ সন্মান পাই ক্লাসে এবং শিক্ষকদের কাছে। আর তাই এই একটা সুখ আমাকে লেখাপড়ায় ডুবিয়ে রাখে।

আমার বাবার নামটা পর্যন্ত আমি কাউকেই বলতাম না। আমি যে আমার বাবার ছেলে এটা কেউ জানুক তা আমি কোনভাবেই চাইতাম না। স্কুলে পাঠ্য বইয়ে এমন কী দু একজন মুরুব্বীর কাছে শুনেছি "তুমি যে ধরণের মানুষের সাথে মেলামেশা করবা ঠিক ওদের মতই তোমার জীবন হবে। নেশাখোর যারা তাদের বন্ধু করলে এক সময় তুমিও নেশা করা শুরু করবে। আর ভাল ছেলেদের সাথে মিশলে তুমিও ভাল হবে!” এই কথা ভেবে আমার মত নিম্নবিত্ত অবস্থা সম্পন্ন যেসব ছেলে, তাদের সাথে মিশতে আমার মন সাঁয় দিত না। সব সময় চাইতাম অনেক ধনী বাবার ছেলেদের সাথে মিশতে। কিন্তু ভাবতাম কেউ যদি আবার বলে ফেলে "ও...! ঐ যে গলির মাথায় চা বিড়ি পান বিক্রি করে যে বুড়ো লোকটা উনার ছেলে তুমি?” আর তাই জীবনে বন্ধুত্ব করতে পারিনি কারো সাথে। বড় হতে হতে বাবার পরিচয় দিতে যেমন জড়তা লাগত,তেমনি বাবার কাছ থেকে অনেক বেশী দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছিলাম। কখনো যদি দেখতাম বাবা বাজার সদাই করে টাকা বাঁচাতে রিক্সায় না এসে হেঁটে হেঁটে ভারী ব্যাগ বয়ে আনছে? দৌড়ে তাঁর হাত থেকে ব্যাগ নেবার পরিবর্তে, আমি নিজেকে আড়ালে লুকিয়ে ফেলতাম। উঁকি দিয়ে দিয়ে দেখতাম বাবা কতদূর গেছে! বাবাও আমাকে দেখেও দেখেনি এমন ভাবে চলে যেতেন। বাড়িতে এসে মাকে বলতেন- “আমগো খোকা অনেক বড় হইয়া গেছে শৈলী...সে বুইজ্ঝা গেছে বাবা বোঝা টাননের ক্ষমতা হারায় ফেলছে!” সেদিন কথাটার অর্থ না বুঝলেও,বাবার চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাসটা এখনও মাঝে মাঝেই শুনতে পাই! যদিও সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম-যে কোনো অবস্থায় বাবা মাকে ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাবো। যেখানে আমার পরিচয় কেবলই আমি এবং আমার পজিশন।

একদিন সত্যি সত্যি নিজের যোগ্যতায় স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে চলে এলাম প্রবাসে। সেদিন আসার সময়ে বাবাকে বেশ কিছু কথাও বলে এসেছিলাম। তবে সরাসরি বলতে পারিনি। ছোট্ট একটা চিঠি লিখে জানিয়ে এসেছিলাম-
"বাবা,
আমি বিদেশে চলে যাচ্ছি সারা জীবনের জন্য। আর আমি তোমাদের কাছে ফিরবো না। যাবার সময় বলে যাই আজ থেকে তোমার সহায় সম্পত্তি কোন কিছুতেই আমি ভাগ বসাতে আসবো না। আমার প্রতি সব দায়িত্ব,কর্তব্য থেকে আমি তোমাদের মুক্তি করে দিয়ে গেলাম!”
জানি না চিঠিটা পড়ে বাবার কী অবস্থা হয়েছিল! জীবনে তাঁর প্রতি আমার করা সব ভুলগুলোর জবাবের মত করে,সেদিনও কী বাবা চিঠিটা পড়ে মিটি মিটি হেসে মাকে সেই কথায় বলেছিলেন?-“ আমগো খোকা অনেক বড় হইয়া গেছে শৈলী...।” আমি কোনদিন জানতে চাইনি কিছুই।

প্রবাসে এসে পরিচয় হল মিতালীর সাথে। প্রথম দিনেই অনেক ভাল লেগে যায় মেয়েটাকে। ধীরে ধীরে আমাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক হয়। ওর সঙ্গ আমাকে মাতাল করে দিয়েছিল। একদিন পড়াশুনা শিকেই তুলে রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়ে দু'হাতে টাকা কামাতে লাগলাম। সঙ্গী করলাম এখানে বেড়ে উঠা মিতালীর সাথেই! ওর বাবা মা-কেই আমি আমার বাবা মা জানলাম। ওদেরকেও আমার বাবার নাম বা আমার বড় হবার স্থান বলতে চাইনি। বলেছি আমার কেউ নেই দেশে...! একজন মামা ছিলেন তিনিও গত হয়েছেন। মামার একটা মনগড়া নামও বলেছিলাম "চৌধুরী সাখাওয়াত হোসেন"। জানি না কেন এই নামটিই মনে এসেছিলো! মিতালী আমার প্রেমে এতটাই পাগল যে ওর বাবা মা আর দেরী না করে বিয়ে দিয়ে দিলেন। জীবনের এই শ্রেষ্ঠ্য মুহুর্তের সময়েও মা বাবা কাউকেই মনে পড়লো না! দেখতে দেখতে কেমন করে যে বছরের পর বছর কাটিয়েছি একটুও বুঝতে পারিনি। দেশ,বাবা-মা সব কিছু মনের পাতায় ধুলোর আবরণে ঢেকে ছিল। সেই ধুলো সরিয়ে ছবির মত করে সবকিছু ভেসে উঠল,এই তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে!

আমার নয় বছরের ছেলে জিসানকে বাসার কাছেই স্কুল থেকে আনতে গেলাম। এর আগেও আমি ওকে যতবার আনতে গেছি,দেখি সে আমাকে পিছনে রেখে বন্ধুদের সাথে বা তাদের ভিড়ে মিশে থাকে। আমি যত ওকে কাছে ডাকি ও তত আমাকে একটা দূরত্ব রেখে এড়িয়ে চলে! ঠিক বাসার কাছে এসে আমার সাথে সাথে হাঁটে। তবে বারবার পিছনে কী যেন দেখে! ওর ভীরু চোখ আর এক ধরণের জড়তা আমাকে ভয় এনে দেয় মনে। বাসায়ও ঠিক আগের মত করে কাছে পাইনা ছেলেটাকে! আমি ওর গালে চুমু দিলে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে " ডোন্ট টাস মি...! ডোন্ট কিস মি...আই হ্যাট ইওর কিসি"হাত দিয়ে ঘষে ঘষে লাল করে ফেলে চুমু দেবার জায়গাটা! ওর ফোকলা গালে কথাগুলো শুনে আমি হেসে দিতাম। খুব ভালো লাগতো ওর বলা কথা এবং ব্যবহার। কিন্তু দিনে দিনে নিজের অজান্তেই বুকের বামপাশে একটা চিন চিন ব্যথা অনুভুব করতে লাগলাম। শূন্যতা আমার চারিদিক থেকে ধেয়ে আসতে লাগলো! ভাবনারা আমাকে ভয় দেখাতে চাইত কিন্তু কাজের ভিড়ে এক সময় ভয়টাকে তাড়াতে পেরেছি। কিন্তু আজ...!
আজ বেশ ব্যস্ততা ছিল আমার। তাই জেসানকে স্কুল থেকে জোর করে হাত ধরে সঙ্গে আনতে চাইলাম। ও কিছুতেই আমার সাথে সাথে হাঁটবে না! একরকম জোরাজুরি শুরু করলাম...। আর তা দেখে ওর এক বন্ধু জিজ্ঞাসা করল ঃ "হে জিসান... হু ইজ দিস ম্যান?” জিসান একবার আমার দিকে তাকিয়ে ঝাঁকি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললঃ "হি ইজ মাই বেবিসিটার!” আমি থমকে গেলাম! বুকের ভেতরের ব্যথাটা প্রচণ্ড যন্ত্রণা দিতে শুরু করল! কথাটা শুনে প্রথমেই যার মুখটি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো সে মুখ আর কারো নয়,আমার বাবার! মনে হল বাবা আজ শব্দ করে হাসছে! বাবার সে হাসিতে কোন খুশি নেই! সেই অট্টহাসিতে চুয়ে চুয়ে পড়ছে অন্তর্বেদনা!

আমার যে কী হল আমি নিজেও জানিনা! এই প্রথম আমি অনুভব করলাম আমার প্রায়শ্চিত্ত করা উচিৎ...। এই প্রথম আমি বুঝতে পারলাম বাবা হয়ে সন্তানের অবজ্ঞার যন্ত্রণার ভয়াবহতা! বাসায় এসে দেশ থেকে আনা এক প্রতিবেশীর ফোন নাম্বারে কল করলাম...। তখন যে দেশে রাত দুপুর,তা আমার ভাবনায় একটুও আসেনি! অনেকবার রিং হবার পরে একজন ফোন উঠালেন! আজ বাবার নাম ধরে পরিচয় দিতে আমার ঠোঁট কাঁপলো না! "আমি জামসেদ মিয়াঁর ছেলে বলছি...ঐ যে গলির মাথায় টোঙের চা বিড়ির দোকানের মালিক যে সেই জামসেদ মিয়াঁর ছেলে... প্লিজ একটু ডেকে দিন!" এই প্রথম বাবার নাম বলে মনে এক ধরণের প্রশান্তি পেলাম...হু হু করে বুকের মাঝে কান্নার স্রোত বইতে চায়ছে! আমার পরিচয় দিতেই বিরক্ত আর ঘুম জাড়ানো কণ্ঠে আমাকে "হোল্ড করেন" বলে ফোন নামিয়ে রাখল। আমি অনেকক্ষণ রিসিভার কানে লাগিয়ে অপেক্ষায় রইলাম। এক সময় লাইন কেটে দিলাম। ঘড়ি দেখে ধরে নিলাম বাবাকে হয়ত কেউ ডাকতে যায়নি সবাই ঘুমিয়ে গেছে। সময় যেন কাটেনা...অস্থিরতা আমাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। হাজারো স্মৃতি কুরে কুরে আমাকে খেয়ে যাচ্ছে! কয়েক ঘণ্টা পরে আবার ফোন দিলাম। দেখি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কেউ একজন বললেন-
-"কেডা?”
আমার গলার কাছে দলা পাকিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে। অনেক কষ্টে বললাম-
"বা...বা, আ... আমি খোকা"
-“কোন খোকাই"?
আমি আবার বললাম "বাবা আ... আমি খোকা"
এবার কণ্ঠটা মনে হল কেঁদে ফেললো। সাথে সাথে মনের কোনে ভেসে উঠল বাবা'র কথা - "পুরুষ মানষের শব্দ কইরা কান্তে নাই গো বাজান, সবাই ভাববো মনের দিক দিয়া তুমি দুব্বল। কাম করবা তাইলে ক্যামনে!” আমি আমার বাবাকে কোনদিন কাঁদতে দেখিনি! সে বাবা আজ কাঁদছে?! কন্ঠটি কান্না জড়িত হয়ে এবার বলল
– "ও বাজান আমি তোমার বাবা না,আমি তোমার মা। তোমার বাজান তো আর নাই গো বাজান!”
কী অভাগা ছেলে আমি মায়ের কণ্ঠও চিন্তে পারিনি! অনেক কষ্টে বললাম –
-"মাগো...কবে হইলো... বাজান...?” কথা ফুরিয়ে গেছে আজ।
-"তোমার চিডি পইড়াই বিছান নিছিল...চার বছর ভুইগা মরছে। কত চেষ্টা করছি তোমার খবর নিতে পারি নাই বাজান...মানষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুইরা তোমার বাজানরে একমুঠ ভাত খাওয়াইছি...। থাউক হে সব হুইনা তোমার টাইম যাইব" খকখক করে কেশে যায় মা...! মা সাপের মত হিস হিস করে ফুঁসে উঠছে যা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারছি! একটু দম নিয়ে আবার বলে-
-"বাজান ঐ টোঙের দোকান ছাড়া তো আমগো কোন সম্পত্তি ছিল না। কিসের ভাগ নিবা বাজান? হুনো হেই দোকানও অহন নাই...। তোমার টেহা যাইতেছে কথা কইয়া,তুমি জাওগা"আমার বলা কথা না শুনেই ফোন লাইন কেটে দিলেন মা।

আমার যে কী হল! আমি হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলাম। বাবার গায়ের গন্ধটা এসে আমার নাকে লাগলো। মনে হল বাবা আমার আশে পাশেই আছে। খুব বড় করে সেই গন্ধটা নিঃশ্বাস ভরে নিতে চাইলাম...। নিঃশ্বাস নিতে পারলেও আর ছাড়তে পারিনি...। বাবাকে কষ্ট দেবার সাঁজা হয়েছে আমার...! এখন আমি চাইলেও আমার দেশ,আমার মা, এমন কী বাবার অন্তিম আশ্রয়ের জায়গাটাও ছুঁয়ে দেখতে পারব না। অপলক চোখে কেবল শূন্যতার হাহাকার নিয়ে তাকিয়ে থাকি ভিজিট করতে আসা কারো কারো দিকে! টাকার যাদুর খেলা আর ডাক্তারের মন্ত্রে উঠে বসা যায়! কিন্তু আমি উঠতে চাইনা...! আমি নিজেকে আর সবার মাঝে দেখতে চাইনা,চাইনা খোলা জানালা দিয়ে যে বাতাস এসেছে তা আবার ধুঁকে ধুঁকে বের হয়ে যাক...! এখন আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কেবল স্মৃতি হাতড়ে ফিরি...। মুঠো ভরে ভরে হাজারো রঙে সাঁজাই আমার প্রতিটা ক্ষণ। নিজের সাথে নিজেই লুকোচুরি খেলি,আর ছুটে ছুটে হারানো দিনগুলোকে কাছে টানি...।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ এখনো এখানে লিখে চলেছো ? গুড
আহা রুবন খুঁজলে এমন সন্তানের দেখা নেহাত কম মিলবে না। বর্তমান যুগটাই তো শেকড় অস্বীকার করার। গল্পটি মনকে দারুনভাবে নাড়া দিয়ে গেল। ভাল একটি লেখা পড়তে পেরে তৃপ্ত মনে হচ্ছে।
এম এ কাশেম বড় স্পর্শ কাতর। শুভেচ্ছা জানবেন।
মোজাম্মেল কবির অভিনন্দন রইলো আপা।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
Fahmida Bari Bipu খুব ভাল লাগল। অসাধারণ। কী নির্মম বাস্তবতা! চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন আপনার লেখনীতে। ভোট রইল আপা।
জাকিয়া জেসমিন যূথী জীবন বাস্তবতার কষ্টময় গল্প। নিখুঁত বুনোনে বাঁধা চমৎকার গল্প পড়ে মুগ্ধ হোলাম।
আবুল বাসার অনেক শুভেচ্ছা রইল।ভাল লাগল।
এশরার লতিফ কষ্টময় গল্প, সুন্দর লিখেছেন.

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.৬২

বিচারক স্কোরঃ ২.৯২ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৭ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪