রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে

অন্ধকার (জুন ২০১৩)

সোহেল মাহরুফ
  • ১২
  • ২৬
কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ক্লান্ত দু’টি চোখ। হাতের আঙ্গুলগুলো আর কিবোর্ডের ওপর চলতে চায় না। হাসান হঠাৎ লেখা বন্ধ করে সমুখের দেয়ালের দিকে তাকায়। যেন রঙ্গিন দেয়ালের নিরেট বুকে ফেলে আসা জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে ফেরে। নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসে দীর্ঘ নিঃশ্বাস। অনেক কিছুই হওয়ার কথা ছিল তার। ক্লাসের মেধাবী ছাত্র থেকে মহাকাশ বিজ্ঞানী কিংবা তরুণ মেধাবী নাট্যকর্মী থেকে বিশ্বের সমকালীন শিল্প সংস্কৃতির অঙ্গন কাঁপানো নাট্যকার কিংবা নাট্যনির্মাতা কিংবা আরও অনেক কিছু। আরও অনেক কিছুই হতে পারতো তার জীবনে। অনেক কিছুই তার এই নিস্তরঙ্গ, বিবর্ণ, বিরস জীবনকে রঙ্গিন, আনন্দময়- অর্থবহ করে তুলতে পারতো। কিন্তু হয়নি। কেন হয়নি? হয়ত সে চায়নি। নইলে কলেজের পাট চুকিয়েই তো সে এ্যারোইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার জন্য স্কলারশিপ জোগাড় করে ফেলেছিল স্টেট্স এর একটি নামকরা ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু যাওয়া হয়নি। সে যায়নি। নাটকের ওপর হাইয়ার স্টাডির জন্য স্কলারশিপ জুটেছিল জার্মানীতে। সে যায়নি। নিউইয়র্ক-আমাস্টারডাম এর বড় বড় মঞ্চে কাজ করার অফার সে অনায়াসে ফিরিয়ে দিয়েছে। সে চায়নি। কেন চায়নি? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে অনেকদিন পর একটা মুখের ছবি তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। হ্যাঁ, জেনির মুখ। এই একটা মুখচ্ছবি যার প্রতি তার শর্তহীন মুগ্ধতা তার জীবনকে এমন নিস্পন্দ করে দিয়েছে। হ্যাঁ নিস্পন্দই তো বটে। এখন কি করে সে।এই মাঝে মাঝে নাটক বিষয়ে টুকিটাকি লেখালেখি, নাটকের প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা, কর্মশালার ক্লাস নেওয়া, মাঝে মাঝে নবীন নাট্যকর্মীদের সাথে আড্ডা দেওয়া আর দেশি-বিদেশি কোনো নামীদামী নাটকের লোক আসলে তাদের সাথে দেখা সাক্ষাত করা-এইতো। এর বাইরে আর কিছু করা হয় না। অথচ একদিন কত কিছুই না করতো। স্বপ্নের পেছনে কি উদ্যমেই না ছুটে বেরিয়েছে সে। অথচ কোনো এক সর্বনাশা ফাগুনে ঐ মুখের প্রতি তার অপলক দৃষ্টি তাকে চিরতরে স্তব্দ করে দিয়েছে। এরপর অনেক কিছুই অনেকভাবে চেষ্টা করেছে। কিন্তু কিছুই তার সেভাবে আর করা হয়ে উঠেনি। সে সত্যিই জেনিকে ভালোবাসত। অদ্ভুত সে ভালোবাসা। যে ভালোবাসার কথা মুখে কোনোদিন সে জেনিকে বলতে পারেনি। বলতে চেষ্টাও করেনি। ভাবতো ভালোবাসা যদি সত্যিই স্বর্গীয় হয় তবে জেনি একদিন ঠিকই বুঝতে পারবে এবং তার কাছে চলে আসবে। এবং সেজন্য সে অপেক্ষাও করে। কিন্তু তার অপেক্ষাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জেনি অন্যের হয়ে যায়। তবু সে হাল ছাড়ে না। অবশেষে সে তার চোখের সীমানা থেকেও বহুদূরে চলে যায়। তবু সে অপেক্ষায় থাকে। সে মনকে প্রস্তুত করে। ভাবে, জেনি যদি শেষ বয়সেও তার কাছে আসে সে তাকে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করবে। এই অপেক্ষাতেই দিন গুণে গুণে সে এখন জীবন সায়াহ্নে। এর ভেতরে জেনি একবার কি দুইবার বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু সে দেখা করেনি। এখন জেনি অস্ট্রেলিয়ায় আছে। সে জানে এবং তার সব খবরই রাখে। তবু তার সাথে যোগাযোগের কোনোরকম চেষ্টা সে করে না। তার বিশ্বাস ভালোবাসা সত্য হলে জেনি নিজের থেকেই তার কাছে আসবে কিংবা যোগাযোগ করবে। যদিও এখন আর তেমন একটা ভরসা পায় না। দিনতো দেখতে দেখতে শেষ হতে চলল। তবে কি এ জগৎ এ জেনির সাথে তার দেখা হবার আর কোনো সম্ভাবনাই নেই? তবে কি পরকালে তার সাথে জেনির দেখা হবে? না কি সেখানেও তাকে এমন ধোকা খেতে হবে। ভাবতেই তার মন বিষাদে ভরে উঠে। ভাবে, তার জীবনটা কি তবে ব্যর্থই হলো? এক মানবীর তরে তার পুরো জীবনই কি তবে উৎসর্গকৃত? তাই কি কবি এটা বলেই জীবন নষ্ট করেছিলেন-

“এক জীবনে কতটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতটাই বা কষ্ট দেবে।”

তার আর কিছুই ভাবতে ইচ্ছে করে না। সে কম্পিউটারের টেবিল ছেড়ে উঠে গিয়ে ছোট্ট খোলা বারান্দায় দাঁড়ায়। মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকায়। দেখে আকাশ জুড়ে অনেক তারা। হঠাৎ দেখে তার ভেতর থেকে একটি তারা ঝরে পড়ছে। তার হঠাৎ মনে পড়ে ছোটবেলা শুনেছিলো- তারা ঝরতে দেখে কিছু চাইলে তা পাওয়া যায়। সে এভাবে অনেক অনেক রাত তারা ঝরতে দেখে জেনিকে চেয়েছে। কিন্তু পায়নি। তারপর ভুলেই গেছে। আজ হঠাৎ কিছু চাইতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মনে হলো তার আর কিছু চাওয়ার নেই। তবু তার মনের অজান্তেই মন থেকে বেরিয়ে এলো-“জেনির সাথে এই জীবনে যেন আর একবার দেখা হয়।” তারপর তার ভাবনা হঠাৎ অন্যদিকে মোড় নেয়। ভাবে, রাতের এত তারারা দিনের আলোয় কোথায় পালায়? ভাবে, পালাবে কোথায়? আকাশেই থাকে। যেমন জেনি তার বুকে আছে অহর্ণিশ। শুধু মাঝে মাঝে অন্ধকারে উঁকি দেয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
স্বাধীন আবেগী প্রেমের একমুখী গল্প ভাল লাগল।
এফ, আই , জুয়েল # আবেগের বিলাসী ভাবনা----তার সাথে ভাবের গভীর পথচলা---সব কিছু মিলে অনেক সুন্দর একটি গল্প ।।
জাকিয়া জেসমিন যূথী ছোট্ট গল্পটায় মিষ্টি একটা প্রেমের অপেক্ষা। বেশ ভালো লিখেছেন।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন আবেগ দিয়ে লেখা। খুব ভাল লাগল। শুভেচ্ছা রইল।
গল্প পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
কনা আপনার লেখার ধরনটা আমার বেশ লেগেছে..ঝরঝরে।শুভকামনা রইল
সৈয়দ আহমেদ হাবিব জেনির চোখের মতো সুন্দর
মোঃ আক্তারুজ্জামান নি:সন্দেহে খুব দরদ দিয়ে লেখা গল্প| খুব খুব ভালো লাগা নিয়ে পড়েছি|
সূর্য যারা ভালোবাসে তারা এমন করেই ভাবে। হাসান জানে সে জেনিকে কতটা ভালোবাসে অথচ খোলা চোখে আমরা এদের বোকা বলি। এমন একজন বোকা কিন্তু উজাড় করে ভালোবাসতে জানা হাসানের গল্প মুগ্ধতা নিয়েই পড়লাম।
মিলন বনিক অসাম....মাহরুফ ভাই...অসাম...ভাবনার গভীরতা...ভালবাসার রেশটুকু যেন অন্য অনেক ভাবনার সাথে মিতালি করছে...এমন কেও কি আছে যে এমনটি ভাবে না....খুব ভালো লাগলো....প্রিয়তে রাখলাম...
এশরার লতিফ রবীন্দ্রনাথের একটি গদ্য-কবিতার প্রিয় দুটি ছত্র আপনার গল্পের শিরোনাম। খুব ভালো লাগলো গল্পটি।

২৫ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী