লক্ষীপেঁচা

কষ্ট (জুন ২০১১)

রিপন ঘোষ
  • ১৮
  • ৫৯
বাড়ির পাশে বাঁশের ঝোপে বাসা বেধেছে একজোড়া লক্ষীপেঁচা। প্রতি রাতে এদের ডাকে সৃষ্টি হয় এক অদ্ভুত ভৌতিক পরিবেশের। যদিও নিরু জানে এটা পেঁচার ডাক,তারপরও কি একটা অজানা ভয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে একা বাইরে যেতে সাহস পায়না। কিন্ত বেগ যখন বেশি পায় তখন তার স্ত্রীকে ডাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। সে মিনুকে ডেকে তোলে। মিনু অত্যন্ত বিরক্তির সাথে উঠে আর ঘুম জড়িত কন্ঠে বলে তোমারে নিয়া আর থাকন যাইতো না,পুরুষ মানেরষ এতো ডর আমার জীবনেও দেখি নাই।

নিরু আমতা আমতা করে বলে,রাগ করস কেন বউ? দেখস না বাইরে কেমুন শব্দ হইতাছে।

পেঁচার ডাক হুইনা ডরায়! আল্লাহ আর কত কি দেখাইবা! বলতে বলতে বিছানা থেকে নামে মিনু।

মিনু এগিয়ে গিয়ে দরজা খোলে। বাইরে মৃদু হাওয়া বইছে। প্রাকৃতিক কর্ম সেরে ফেরার সময় মনে হয় বাতাসের বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঝড় হবে। ঝড়ের কথা মনে হতেই নিরুর মনে পড়ে লক্ষীপেঁচা দুটোর কথা। সে প্রচন্ড বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। মিনু বলে,দাঁড়াইছেন ক্যান ঘরে চলেন।

বউ বাতাস তো বেশ বাড়াইছে মনে অইতাছে ঝড় আসবো,নিরুকে যেন খানিকটা ভীত দেখায়।

মিনু খানিকটা বিরক্তির সাথে বলে,ঝড় আইলে আইবো,তো কি অইছে?

না বাঁশঝাড়ের পেঁচা দুইটার এই ঝড়ে কি অইবো? বউ চলনা ওই গুলারে খুইজা বার করি,নিরু মিনতির স্বরে বলে।

মিনু যেন ভুত দেখছে এমন ভঙ্গিতে বলে,এট্টু আগে পেঁচার ডরে মইরা যাইতেছিলেন,এহন আবার ঐ গুলার লাইগা দরদ উছলাইছে।

নিরু কাতর কন্ঠে বলে,চল্ না বউ দেখে আসি। চিন্তা কর তুফান বাড়লে অগোর কি অবস্থা অইবো।

অগোর কি অইবো আমার চিন্তা করনের দরকার নাই।আমার ঘরের চাল কখন উড়াইয়া নিব সেই চিন্তায় বাঁচিনা আর উনি আছেন পেঁচা লইয়া। আপনে আপনার পেঁচা নিয়া থাকেন আমি ঘরে যাই।বলে মিনু ঘরে চলে যায়।


ক্রমেই বাড়ছে বাতাসের বেগ।বাতাসের সাথে সাথে ইলশেগুড়ি বৃষ্টিও হচ্ছে।প্রকৃতি ধীরে ধীরে এমন রূপ নিচ্ছে যেন আজ একটা হেস্থনেস্থ করে তবেই ছাড়বে। এমন বিরূপ পরিবেশেও নিরু উঠোনে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।তার বউ মিনু দরজায় কপাট দিয়ে নিশ্চয়
ঘুমিয়ে পড়েছে।

একটু আগেও যে লোকটি ভয়ে বাইরে বেরোতে সাহস করেনি,সেই কিনা লক্ষীপেঁচা দুটির প্রতি গভীর মমতায় এই ঝড় বৃষ্টির রাতেও নীরবে উঠোনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
নিরু প্রচন্ড বাতাস উপেক্ষা করে উঠোনের উত্তরে বাঁশঝাড়ের দিকে এগুতে থাকে। জায়গাটা ভীষন অন্ধকার। হাতে যদি একটা হারিকেন থাকতো তবে বেশ হতো,নিরু মনে মনে ভাবে।
কাছেই কোথাও বিকট শব্দ করে বাজ পড়ার শব্দে নিরুর বুক কেঁপে উঠে।সে বুকে থু থু ছিটিয়ে দেয়। একটি বাঁশে হাত দিয়ে আঘাত করতেই একটি লক্ষীপেঁচা ডেকে উঠলো। নিরুর চোখ চিকচিক করে উঠে। তাহলে সত্যিই ওগুলো এখানে আছে। কিন্ত ঘন অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। মাঝে মাঝে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল ঠিকই কিন্ত তা নিমিষেই আবার মিলিয়ে যাচ্ছিল।সে বাঁশঝাড়ের চারপাশে ঘুরেও এদের সঠিক অবস্থান বুঝতে পারলনা।

অবশেষে বিজলির আলোতেই চোখে পড়ল দুটি বাঁশের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে সেই কাঙ্খিত প্রাণীদ্বয়। নিরু চুপিচুপি পিছন থেকে হাত দিয়ে লক্ষীপেঁচা দুটি ধরল। ওগুলো ভয়ে ভীষন ডাকাডাকি শুরু করল।

ঝড় এখন চূড়ান্ত রূপ ধারন করেছে।শোঁ শোঁ বাতাসের মধ্যে নিরু ঘরের দিকে যেতে থাকে। কোন রকমে দরজার সামনে গিয়ে মিনুকে ডাক দেয়। মিনু ঘুম কাতুরে চোখে দরজা খোলে। সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনা তার স্বামী হাতে ধরে আছে সাদা রংয়ের দুটি লক্ষীপেঁচা।
সে অবাক হয়ে নিরুকে জিজ্ঞেস করে,এইগুলারে কই থাইকা ধইরা আনলেন!
নিরু কোন কথা না বলে ঘরে ঢুকে।মিনুকে বলে,পারলে একটুকরা ন্যাকড়া দে আর না পারলে মরার মতো ঘুমা।
মিনু স্বামীর কন্ঠে কিছুটা ভয় পায়,সে একটুকরো ন্যাকড়া এগিয়ে দেয়।
নিরু যত্ন সহকারে পেঁচাগুলোর গা মুছতে থাকে।পেঁচাগুলোও ওকে আপন করে নিয়েছে।এখন আর ডাকাডাকি করছে না। ওদের প্রতি গভীর মমতায় নিরুর চোখ ছলছল করে উঠে।

হঠাৎ এক ধমকা হাওয়ায় নিরুর ঘরের চাল উড়ে গেল।খোলা আকাশ থেকে ঘরে ঢুকতে থাকে বৃষ্টির পানি। মিনু চিৎকার দিয়ে উঠে আল্লাহ এইডা কি করলা? এখন এতো রাইত কি করুম?

নিরু,মিনু,তাদের ছেলে রাজু সবাই খাটের নিচে ঢুকে আত্নরক্ষার্থে। আর নিরুর হাতে তখনও থাকে লক্ষীপেঁচা।
নিরুর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রুজল আর আকাশের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে বৃষ্টির জল। দুয়ে মিলে একাকার হয়ে যায়,বোঝা যায়না কোনটা অশ্রুজল আর কোনটা বৃষ্টিজল। আশ্রিত এবং আশ্রয়দাতা উভয়েই আশ্রয়হীন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ভূঁইয়া ঘরের যে চাল উড়াইয়া নিয়া গেল ? অনেক ভাল হইছে
ওবাইদুল হক সত্যই অসাধারন আপনার গল্প তবে আরেকটু সময় নিলে আরো ভাল হতো ।
রিপন ঘোষ সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
সূর্য আহত না হলে পেঁচা ধরাটা অনেক কঠিনই তাও রাতের বেলায়। গল্পটা অনেক ভাল লাগলো।
প্রজাপতি মন অসাধারণ লিখা, ভালো লাগল। আশ্রয়হীন এবং আশ্রয়দাতা উভয়েই আশ্রয়হীন। কথাটা মনকে নাড়া দিয়ে যায়। শুভ কামনা রইল।
রওশন জাহান অসাধারণ . কমেন্ট কম দেখে লেখা বন্ধ করবেন না. আপনি একদিন অনেক ভালো করবেন . এত মানবিক লেখা এখানে খুব কমই পেয়েছি.
মোঃ আক্তারুজ্জামান ৩০ বছর আগে আমাদের বড় একটা কড়ুই গাছ ঝড়ে ভেঙ্গে পড়ে গাছের খোড়লে থাকা ৩/৪ টা পেচা মারা যায় সেদিন আমিও খুব কেদেছিলাম| অথচ রাতে এদের ডাক শুনে আমিও খুব ভয় পেতাম- মাকে ছাড়া ঘর থেকে বেরুতাম না| স্মৃতি জাগানিয়া গল্প লেখা এবং পাখি প্রেমের জন্য আপনার প্রতি আমার অনেক দোয়া রইলো |
Abu Umar Saifullah গল্প কবিতার ভিতর সব কিছুর বসবাস সেখানে পেচা ডুকলে ও সমসসা নেই. চিন্তার পরিশীলন আমাদের কে যে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে এইটি তারই উপদান বয় কি ?
sakil valo legeche অন্যরকম গল্প .শুভকামনা রইলো .

২৩ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪