বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

জুয়েল দেব
  • ৯৬
  • ৫৫
অনু চোখ-মুখ শক্ত করে বসে আছে । ওর চুলগুলো টেনে দিতে পারলে খুব ভালো হত । কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা করা যাবে না । আমি অনুর উপর খুব রাগ করেছি । ও নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘণ্টা পরে এসেছে । সময়টা আমি ঠিক করে দিই নি, ও নিজেই ঠিক করেছে । অনু বলল, ‘আমি কী করব বল, মা’র খুব জ্বর, এদিকে বাসায় কেউ নেই । মাকে একলা ফেলে কী করে আসি ।’
ও যে ইচ্ছা করে দেরী করে আসেনি সেটা আমি ভালো করেই জানি । তবুও একটু চাপে রাখা আর কি ! মাঝে মাঝে এরকম চাপে রাখা ভালো । আরো কিছুক্ষণ রাগ করে থাকলে বেচারী কেঁদেই ফেলবে । তার চাইতে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা যাক। অনুকে বললাম, ‘আচ্ছা, আজকে বৃষ্টি হবে কিনা বলতে পারবি?’
অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ‘কতদিন ধরে যে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি । একটা খুব শক্তিশালী বৃষ্টি নামত, দুনিয়ার সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবার মত বৃষ্টি, খুব করে ভিজতাম, সারাদিন ধরে ভিজতাম ।’
আমি একটু অবাক হই, ‘সে কি, তুই তো একদম ভিজতে চাস না ! ঠাণ্ডা লেগে যাবে, জ্বর আসবে বলে সবসময় বৃষ্টির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকিস । আজকে আবার কী হল !’
হয়তো অনুর খুব মন খারাপ, সে বলে, ‘কখনো কখনো জীবনের সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে ইচ্ছা হয় রে । ঈশ্বর যদি বৃষ্টির রূপ দিয়ে তাঁর কিছু করুণা পাঠাতেন, আমরা সারাদিন সেই করুণাধারায় ভিজে একদম পরিপূর্ণ শুদ্ধ হয়ে ঘরে ঢুকতাম । জীর্ণ সবকিছুকে ধুয়ে ফেলে আসতাম বাইরে ।’
অনুর ভারী ভারী কথায় আমার অস্বস্তি লাগতে থাকে, ‘আরে বৃষ্টি হবে দেখিস । কতদিন আর এরকম গুমোট বেঁধে থাকবে । এখন শ্রাবণ মাস না ! একদিন এমন বৃষ্টি নামবে দেখিস, সারা শহর ডুবে যাবে । ড্রেনের কোকাকোলা রঙের পানি সব ছড়িয়ে পড়বে শহরজুড়ে ।’
অনু আমার কথায় হাসে না, মাথা নিচু করে বসে থাকে । অনুকে বলি, ‘আচ্ছা, তোর মনে আছে, গত বছর এমনই এক দিনে আমরা ক্লাসে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম ? বাইরে আষাঢ় মাসের তুমুল বৃষ্টি । বৃষ্টি দেখে স্যার বোধহয় কাথামুড়ি দিয়ে আরও জাঁকিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন ! ভার্সিটির আশেপাশে আসারও গরজ দেখান নি ।’
অনু মুচকি হাসে, ‘মনে থাকবে না কেন, সেদিন একটা ক্লাসও হয়নি । আমার ভার্সিটি জীবনের সেরা একটা দিন । আমরা সবাই গলা ফাটিয়ে বেসুরো গান গাচ্ছিলাম । তুই হঠাৎ লাফ মেরে বারান্দা পেরিয়ে বাইরে চলে গেলি । আমি তো ভাবলাম তোর মাথায় বুঝি একটা কন্দকাঁটা ভর করেছে ।’
‘হুম, তোকে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য কত ডাকলাম । কিন্তু মহারাণীর মন গলায় সাধ্য কার ! তুই জেদ ধরে বসে আছিস বৃষ্টিতে ভিজবি না । বৃষ্টিতে ভিজলে তোর সর্দি হবে, জ্বর আসবে । আরও কত বায়নাক্কা !’
অনুর মুখটা আবারও কালো হয়ে যায়, ‘আমি কত বোকা ছিলাম, না রে ! ঈশ্বর তাঁর সব সৃষ্টিকেই বোধহয় এই সুন্দর পৃথিবীটাকে কানায় কানায় উপভোগ করতে দেন । আর আমরা যারা বোকা মানুষ সেগুলোকে উপেক্ষা করি, তিনি সম্ভবত তাদেরকে অনেক অভিশাপ দেন । অভিশাপ না পেলে কি আর আজকে এত বড় শাস্তি পাই ?’
আমি অনুকে জড়িয়ে ধরি । অনু আমার বুকে মুখ চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে । তারপর একসময় মাথাটা তুলে বলে, ‘তোর খুব কষ্ট হচ্ছে, তাই না?’
আমি হেসে ফেলি, ‘বোকা মেয়ে, তুই জানিস না, তুই যতক্ষণ আমার সামনে থাকিস, তখন কষ্টগুলো দরজার বাইরে থেকে উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে কতক্ষণে তুই যাবি আর ওরা এসে আমার উপর হামলে পড়বে ।’
অনুর চুলগুলোতে বিলি কেটে দিতে দিতে বলি, ‘আচ্ছা, এই যে আমি এই সুন্দর পৃথিবীটার সবকিছু না দেখে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছি তাতে ঈশ্বরেরও হয়তো একটা অপূর্ণতা থেকে গেল, না রে ? কিন্তু ঈশ্বর তো অপূর্ণ নন, তিনি সম্পূর্ণ, তাহলে কি আমারই সব কিছু দেখা শেষ হয়ে গেল ! টিকিট কেটে মিউজিয়ামে ঢুকলাম, অদ্ভুত সবকিছু দেখা শেষ, এবার বের হয়ে যাওয়ার পালা !’
অনু কান্নার দমকে ফুলে ফুলে ওঠে । কাঁদুক, আজ আমি অভিমানী, প্রচণ্ড অভিমানী । অনুকে বলি, ‘কেমন আজব ব্যাপার তাই না ! বাবা-মা থাকবে, তুই থাকবি, এই বাড়িটা থাকবে, বন্ধুরা সবাই থাকবে, শুধু মাঝখান থেকে আমিই থাকবো না । সময়ের অনেক আগেই আমি চলে যাবো । সিনেমার শেষ দৃশ্য পর্যন্ত আমার থাকার অনুমতি নেই । কী অদ্ভুত !’
অনুর চোখের জলে আমার বুকে বন্যা নামে । লবণ গোলা পানিতে আমার বুকটা ভেসে যায় । যাকগে, অনুকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই । ও তো আর আমার শরীরে ব্লাড ক্যান্সার লাগিয়ে দেয় নি । কোন কুক্ষণে যে রোগটা শরীরে ঢুকে পড়লো একটুও টের পাইনি ।
আমার শরীরে যে একটা মরণ রোগ বাসা বেঁধেছে এটা ভাবলে কষ্টটা আরও বেড়ে যায় । তারচেয়ে পরিবেশটা হালকা করি । অনুকে বললাম, ‘বৃষ্টি হলে তুই কি আমার হাত ধরে ভিজবি ? তোর আবার সর্দি হবে না তো !’
অনু আমার হাত ধরে বলে, ভিজবো, আমি তো সারাজীবন তোর হাত ধরে ভিজতে চাই, কিন্তু বৃষ্টি তো আসছে না ।’
আমি অনুর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরি, ‘আসবে দেখিস, নিশ্চয় আসবে । ঈশ্বর মানুষের কোন ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখেন না ।’
আমরা বৃষ্টির জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকি । ঈশ্বর নিশ্চয় তাঁর করুণাধারায় আমাদের ভিজিয়ে দেবেন ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জুয়েল দেব nilanjona nil ADITI, ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
জুয়েল দেব yeasirarafat, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
নিলাঞ্জনা নীল অদ্ভুত অনুভুতিতে মন ভরে গেল প্রিয় তে নিলাম.
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ইয়াসির আরাফাত অসাধারন .........জুয়েল দেব।
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১
জুয়েল দেব আরে NIROB ভাই, আপনি এই লেখায় এতদিন পরে কোত্থেকে আসলেন?
ভালো লাগেনি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১
নিরব নিশাচর .............................. একজন জুয়েল দেব !
জুয়েল দেব আহমেদ সাবের, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আসলে ভোটের চাইতে আপনার/আপনাদের মন্তব্য গুলোই আমার বেশী কাজে লাগবে। গল্পটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা ।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১
আহমেদ সাবের গত মাসে বেশ কিছু লেখায় চোখ বুলাতে পারিনি। সে গুলো এ মাসে পড়ার চেষ্টা করতে গিয়ে আপনার অসাধারণ লেখাটার সন্ধান পেয়ে গেলাম। সব চেয়ে মুগ্ধ করেছে আপনার লেখার সাবলীলতা। প্রতিটা বাক্য হৃদয়ের গভীরে ঢেউ তোলে। গল্পকারকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
ভালো লাগেনি ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১
জুয়েল দেব আবির, আপনাকে ধন্যবাদ।
জুয়েল দেব নাজমুল হাসান নিরো, উঁচুমানের কিনা জানি না, লেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত । গল্পটি পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।

১২ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪