সোনার পাতা ও হীরার ফুল

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

হোসেন মোশাররফ
  • ৪৩
  • 0
  • ৬৮
এখান থেকে অনেক দূরের এক দেশের কথা বলছি এখন। সময়টাও অনেক অনেক দিন আগের। তখনও চীন দেশের মহাপ্রাচীর তৈরি হয়নি। সে সময় সেখানে ছিল পাহাড় ঘেরা ছোট ছোট অনেক দেশ। তেমনি এক দেশের রাজা রানির ছিল একটাই মাত্র ছেলে। সেই দেশের সেই রাজপুত্রটি দেখতে যেমন ছিল সুন্দর তেমনি সে গুণেও ছিল ষোলআনা। রাজপুত্রটি যখন বড় হলো রাজা রানির একটাই সাধ দেশের সবচে' ভাল মেয়েটিকে পুত্রবধূ করে ঘরে আনা। অবশ্য ইচ্ছা করলে অনেক রাজকন্যা, উজিরকন্যা কিংবা ধনী ঘরের আদরের দুলালিকে পুত্রবধূ করে ঘরে তুলতে পারেন তারা। কিন্তু রানি ছিল খুবই বুদ্ধিমতি মেয়ে। তার ভালই জানা ছিল ছেলের সংসার সুখের হলে দেশের মানুষও সুখে শান্তিতেই থাকবে। তাই সে রাজা কে আগেই পরামর্শ দিয়ে রেখেছিল ধনীর দুলালি নয় বরং গুণী মেয়েকেই সে ঘরে তুলতে চায়। রাজাও তাতে খুশি, কেননা সে দেশের রাজাটিও ছিল দরুন বুদ্ধিমান।

কিন্তু সমস্যা হল গুণী মেয়ে খুঁজে পাওয়া তো চাট্টি খানি কথা নয়। আর বাইরে থেকে বোঝায় বা যাবে কিভাবে, কে সবচে' গুণী মেয়ে। রাজা রানি দু'জনেই ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। কিন্তু এর সমাধান তারা কেউ খুঁজে বের করতে পারল না। তবে কথায় আছে বড়দের দিয়ে যে কাজের সমাধান হয় না অনেক সাধারণ মানুষকে দিয়ে তা অনায়াসে হয়ে যায়।

রানির ছিল এক গৃহপরিচারিকা। সে ছিল বোবা। কিন্তু হলে কি হবে তার যা বুদ্ধি ছিল দেশের মন্ত্রী উজির-নাজিরদেরও তা ছিল না। না হলে আর রাজরানির গৃহপরিচারিকা, চাকরিটা তো আর তার এমনি এমনি জুটে যায়নি। রানিমাতাও তার পরামর্শ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করত। শেষে রানিমাতা তার কাছেই জানতে চাইল কেমন করে গুণী মেয়ে খুঁজে বের করা যায়। গৃহপরিচারিকা একটুও চিন্তা না করেই ইশারা ইঙ্গিতে যা উত্তর দিল তার অর্থ দাঁড়াল এই, যে মেয়ে সবচে' ভাল হাতের কাজ জানে সেই সবচে' গুণী।

কথায় আছে সোনায় সোনা চেনে। রানির বুঝতে একটুও দেরি হলো না তার বুদ্ধিমতী গৃহ পরি-চারিকার কথার মর্মবাণী। আর বাকি কৌশল যে তাকেই খুঁজে বের করতে হবে তাও তার ভালই জানা ছিল। কিন্তু তা ছিল তার জন্যে অতি সহজ বিষয়। অংক যে কষতে জানে তাকে নিয়মটা একটু দেখিয়ে দিলেই অমনি তা ঝটপট করে ফেলে। রানিরও হলো সেই দশা। এখন তার জন্যে শুধু অংকটা কষতে যা একটু বাকি।

সেই দেশে সারা বছরে নব বর্ষের উৎসবই ছিল সবচে' বড় উৎসব। সারা দেশে সেদিন আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। ছোট বড় নারী পুরুষ সবাই সেদিন আনন্দে গা ভাসাতে ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে ঘুরে বেড়াত। আর সে দেশের সবচে' বড় যে পাহাড়টি ছিল তার ঠিক নিচেই বসতো বারোয়ারি মেলা। সে মেলায় সবাই যোগ দিত। এমনকি রাজা রানি আর রাজকুমারও সেদিন আনন্দে যোগ দিতে ভুল করতো না। অন্য সবার সাথে মেলায় যেয়ে সেদিন তারা বর্ষ বরণ উৎসবে মেতে উঠতো। এমন একটি দিনকেই রানি বেছে নিল তার পুত্রবধূ পছন্দের দিন হিসাবে।
তো যেই কথা সেই কাজ, রাজ্য ময় রাজা ফরমান জারি করে দিল। নববর্ষের দিন যে মেয়ে সবচে' বেশি সাজ গোজ করে বাইরে বের হবে তাকেই করা হবে পুত্রবধূ। ঘোষণা শুনে সবাই অবাক, এমন কথা তো কেউ কোনদিন শোনেনি। রাজা যে পুত্রবধূ হিসাবে গুণী মেয়ে চায় তা কানাঘুষা হয়ে আগেই দেশময় রটে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই কিনা মূর্খের মতো সাজগোজ করা সুন্দরী মেয়ে চেয়ে ঘোষণা দিল। উপরে উপরে কেউ কিছু না বললেও চুপে চুপে সবাই ছি ছি করতে ছাড়ল না মোটেও। কিন্তু হলে কি হবে রাজার হুকুম। কার বা সাধ্য আছে তার হুকুমের বরখেলাপ করে। মন্ত্রী উজির-নাজিররাও সব বরখাস্ত হওয়ার ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইল।
এদিকে কিন্তু দেশের তাবৎ সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে ভিতরে ভিতরে তুমুল প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। কে কার চেয়ে বেশি সাজতে পারে আর সাজ-গোজের গুণেই তার বুঝি কপালটাই খুলে যায় কিনা? মনে মনে রাতদিনের ঘুমটাই তাদের একরকম হারাম হয়ে গেল।
বুড়োদের ছি ছি তে যে তাদের কোনই যায় আসে না তা বেশ বোঝা গেল তরুণী মেয়েদের কার্যকলাপ দেখে। রীতিমতো তারা নববর্ষ সামনে করে নূতন নূতন পোশাক তৈরির কাজে প্রতিযোগিতাই শুরু করে দিল। এতে করে কিন্তু যারা মোটেও সুন্দরী ছিল না তারাও কেউ হাত গুটিয়ে বসে রইলো না। কেননা এটা তো সবার জানাই আছে যে অল্প বয়সে মানুষের মনে হিংসা-দ্বেষ মোটেও থাকে না। বয়স যত বাড়ে মানুষের মনটাও তত ছোট হয়ে যায়।
সুতরাং গোপনে গোপনে যে যার মতো পোশাক তৈরির কাজ চালিয়ে যেতে লাগল। শুধু একজন মেয়েই ছিল সে দেশে যার দু'চোখে কোন স্বপ্ন ছিল না। কেননা সেই মেয়েটির বাবা ছিল না। তার নাম ছিল শান্তা। পৃথিবীতে শান্তার আপন বলতে শুধু তার দুখিনী মা ছিল। তার মাকেও অনেক কষ্ট করে পরের বাড়ি কাজ করে তাদের সংসারের ঘানি টানতে হতো। এমনি দুর্বিষহ কষ্টের মধ্যে মেয়েটিও তো আর চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। তাই সে টুকটাক হাতের কাজ করে মাকে সাহায্য সহযোগিতা করতো।
আর এভাবে কাজ করতে করতে সে অনেক সুন্দর সুন্দর হাতের কাজ শিখে ফেলেছিল। তার নিজের পরনে ছেঁড়া জামা থাকলেও অনেক ধনী আর বড়লোক বাড়ির মেয়েদের জন্য তৈরি করে দিত সুন্দর সুন্দর সব পোশাক। এতে করে অল্পদিনেই তার হাতের কাজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল দিকে দিকে। নববর্ষ সামনে করে তাই তার কাজের বায়না পড়ল অনেক। অনেক ধনী ঘরের আদরের দুলালিরা তাদের নববর্ষের জন্য তৈরি করা নূতন নূতন সব পোশাক নিয়ে ছুটে এল তার কাছে। সেসব পোশাকে তারা এমন সব নকশা তুলতে চায় যা দেখে শুধু রাজপুত্র কেন স্বয়ং রাজাও ভড়কে যাবে। কিন্তু সবার আশা তো আর একা রাজপুত্র পূরণ করতে পারবে না। সবার আশা সব সময় পূরণও হয় না। আর তাই আশার উপরও ভরসা থাকে না অনেকের। তেমনি এক ধনী ঘরের মেয়ে ছিল সে দেশে; তার নাম ছিল পিংকি। যার আশা ছিল আর সবার চাইতে অনেক বেশি। ফলে তার উচ্চাশা ছিল মোটেও কম না। উচ্চাশা পূরণ করার মতো ৰমতা যার আছে তার উচ্চাশা থাকলে যা হয়, তাই হলো।
পিংকি একদিন শান্তার ঘরে কতগুলো সোনার পাতা আর সোনার সুতো নিয়ে হাজির হলো। তারপর সে তাকে বলল, 'এই সোনার পাতাগুলো সুতো দিয়ে গেঁথে আমার জামায় নকশা করে দিতে হবে।'
দরিদ্র মেয়ে শান্তা তার এই প্রস্তাব শুনে বলল, 'আমরা গরিব মানুষ। আমাদের ঘরে এই সোনার পাতাগুলো রেখে গেলে কোথায় চুরি হয়ে যেতে পারে, তা'ছাড়া আমার হাতে অনেক কাজও জমা হয়ে গেছে। তাই বলছিলাম আপনি অন্য কোথাও কোন ভাল কারিগরের হাতে কাজটা দিলে সে ভাল ভাবে করে দিতে পারবে।'
কিন্তু গর্বিত আর অহংকারী পিংকি বলল, 'আমার তোমাকেই চাই। দরকার পড়লে তুমি আমাদের বাড়িতে থেকে আমার কাজ করে দিয়ে আসবে। কিন্তু তারপরও তোমাকেই করতে হবে।'
'কিন্তু আমার হাতে অনেক কাজ। কাজ ফেলে তো আমি এখন কোথাও যেতে পারব না।' বলল শান্তা।
তার কথা মোটেও পাত্তা দিল না পিংকি। সে তখন বলল, 'আমার বাবা অনেক বড়লোক আর অনেক ৰমতাশালী। তুমি যদি আমার কথা না শোন তাহলে তোমাদের এদেশ থেকে বের করে দেয়া হবে।'
এই কথা শুনে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল শান্তা। সে তখন বলল, 'নববর্ষের আগে আগে আমার হাতের কাজ শেষ করতে না পারলে আমাকে আর কেউ কাজ দেবেনা। আর এই কাজ করেই আমাদের দু'বেলা দু'মুঠো খাওয়া জোটে।'
শত অনুনয় বিনয় সত্বেও অহংকারী ঐ মেয়েটি তার কথায় মোটেও পাত্তা দিল না। বরং শেষে সে বলে গেল, 'ভেবে দেখার জন্য তোমাকে মাত্র একদিন আমি সময় দিতে পারি। কিন্তু তারপরও তুমি যদি আমার কথা না শোন তাহলে যা যা হবে তা তো শুনলেই নিজের কানে।'
এরপর ভয়ে আর দুশ্চিন্তায় শান্তার হাতের কাজ বন্ধ হয়ে গেল। গালে হাত দিয়ে সে ভাবতে লাগল এখন তার কী উপায় হবে। কিন্তু ভেবে ভেবেও কোন কুল কিনারা পেল না সে। এ পর্যন্ত সে যত গুলো কাজের বায়না নিয়েছে সেগুলো শেষ করতেই হা পিত্যেস হয়ে যাবে। নূতন করে কাজ হাতে নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এদিকে আবার তার বাসায় যেয়ে কাজ করতে হলে তো বাকি সব কাজই নষ্ট হবে। নববর্ষের আগে আগে একটাও শেষ করতে পারবে না সে। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না পেয়ে সে কাঁদতে শুরু করল। দিনের শেষে তার মা বাইরে কাজের থেকে ফিরে তাকে কাঁদতে দেখে ভারি অবাক হল। তারপর মেয়ের কাছ থেকে সব বৃত্তান্ত শুনে বলল, 'তুমি কোন চিন্তা করো না। অহংকারীদের সৃষ্টিকর্তা মোটেও পছন্দ করে না। দেখবে আমাদের কোন না কোন একটা উপায় করে দেবনই তিনি।'
মায়ের কথা শুনে সান্ত্বনা পেলেও তাতে চিন্তা মোটেও দূর হল না তার। সেদিন তার আর কোন কাজই করা হলো না। এদিকে নববর্ষের আর খুব বেশিদিন বাকি নেই।
রাত্রে বিছানায় শুয়ে শান্তা দেখলো এক অপূর্ব সুন্দরী পরী তাদের বাসায় এসেছে। সে তাকে জিজ্ঞেস করল, 'তুমি কাঁদছ কেন?'
শান্তা বলল, 'নববর্ষের জন্য জড়ো হওয়া কাজগুলো কে করে দেবে, তাই ভেবে কাঁদছি।'
পরী তখন বলল, 'তুমি মোটেও চিন্তা করো না। তুমি ঐ মেয়েটির বাড়িতে কাজ করতে চলে যেও; তোমার বাকি কাজ আমিই করে দেব।'
শুনে শান্তা ভারি খুশি হয়ে গেল। বলল, 'তাহলে তো বেশ হয়। আমারও আর কোন চিন্তা থাকে না।'
পরদিন সকালে উঠে শান্তা পিংকিদের দরজায় দাঁড়িয়ে বলল, 'ওগো, তোমরা কেউ বাড়িতে আছ? আমি কাজে এসেছি।'
এদিকে পিংকিরও উত্তেজনায় সারারাত ঘুম হয়নি। গর্বে আর অহংকারে সে বার বার ফুলে ফুলে উঠছিল। সকালে উঠেই যখন সে দেখল শিকার তার হাতের নাগালের মধ্যেই চলে এসেছে তখন আর দেখে কে তাকে। ভিতর থেকেই চেঁচিয়ে বলল সে, 'তাহলে বোধোদয় হয়েছে তোমার? এস এস।'
শান্তা ভিতরে ঢুকলে তাকে মোটেও সম্মান দেখাল না পিংকি। মেঝেতে একটা ছেঁড়া পাটি পেতে বসতে দেয়া হল তাকে। তারপর তাকে সোনার পাতাগুলো দেয়া হল গুণে গুণে। একজন পরিচারিকা সব সময় পাশেই বসে তদারকি করতে লাগল। বলা কী যায়? লোভে পড়ে দরিদ্র মেয়েটি যদি সোনার পাতাগুলো লুকিয়ে ফেলে। অথচ সারাদিন খাটা-খাটনি শেষে সন্ধ্যায় তাকে দেয়া হল মাত্র দু'টো শুকনো রুটি।
তাই নিয়ে সে সেদিনকার মতো বাড়ি ফিরে এল। তখনো তার মা বাড়ি ফিরে আসেনি। কিন্তু সে তার কাপড়ের বাঙ্টি খুলে ভারি অবাক হয়ে গেল। তার নববর্ষের জন্য রেখে দেয়া সবগুলো কাপড়েই কে যেন নকশা তৈরি করে রেখে গেছে। নকশাগুলো ভারি সুন্দরও হয়েছে। সে তখন ভাবল নিশ্চয় তার রাতে দেখা পরীরই কাজ হবে এটা। এই না ভেবে তার সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমিষে ঝরে পড়ল শরীর থেকে। শরীর মন আবার চাঙ্গা হয়ে উঠল তার।
সেদিন রাতে শুয়ে সে দেখতে পেল গতরাতে দেখা সেই পরী আজ আবার এসেছে তাদের বাড়ি। তাকে দেখেই সে বলল, 'আজ আমার সবচে' আনন্দের দিন। কেননা নববর্ষের জন্য আর আমাকে চিন্তা করতে হবে না, আমার সব কাজ হয়ে গেছে।'
পরী তখন বলল তাকে, 'এমনই হয়। যারা সৎ এবং পরিশ্রমী হয় তাদের কোন চিন্তা করতে হয় না কখনো। তাদের চিন্তা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই করে থাকেন।'
শান্তা খুশি হয়ে বলল, 'এতদিন আমি মনে করতাম পৃথিবীতে বুঝি আমিই সবচে' দুঃখী আর অসহায়; কিন্তু আজ আমার সে ভুল ভাঙল।'
পরী তাকে বলল, 'নিজেকে কখনো ছোট মনে করতে নেই। এ পৃথিবীতে তারাই দরিদ্র যারা নিজেকে ছোট মনে করে।'

এদিকে নববর্ষ যত এগিয়ে আসতে লাগল ততই পিংকির হিংসার আগুন আরও বেশি করে জ্বলে উঠতে লাগল। শেষে সে ভাবল দেশের সেরা কারিগর কে যখন সে আটকে রেখেছে তখন আর তাকে পায় কে? অন্যেরা নিশ্চয় সময় মতো তার কাছ থেকে জামা বুঝে নিতে পারবে না। সুতরাং সুযোগটা ষোলআনা সেই পেতে যাচ্ছে।
নববর্ষের দিন যখন সবাই নূতন জামা পরে বের হল তখন ভাগ্যহীনা দরিদ্র মেয়ে শান্তা দূরে বসে তা দেখতে লাগল। কেউ তার দিকে একবার তাকিয়েও দেখল না। তবুও তার মনে কোন দুঃখ রইলো না। কেননা নববর্ষের পোশাকে নকশা তুলে এ ক'দিনে যা উপায় হয়েছে তার; তাতে অন্তত দু'দিন তাদের পেট পুরে খাওয়া জুটবে।
যথাসময়ে নববর্ষের মেলা শুরু হলো। রাজা রানি আর রাজপুত্রও সময়মতো সেখানে হাজির হলো। শেষ পর্যন্ত রাজা-রানি আর রাজকুমারের একজনের পোশাকই সবচে' বেশি পছন্দ হলো। আর তা হলো সোনার সুতো দিয়ে এক একটি সোনার পাতা বসানো সেই পিংকির পোশাক। পিংকি যখন লৰ্য করল রাজকুমার ঘোড়া ছুটিয়ে তার দিকেই আসছে। তখন তার অহংকারে যেন মাটিতে আর পা ই পড়ল না।
রাজকুমার একসময় কাছাকাছি পৌঁছে ঘোড়া থেকে নেমে পড়ল। তারপর তাকে বলল, 'তোমার পোশাকটি তো ভারি সুন্দর। কে তৈরি করে দিয়েছে এটা তোমাকে?'
গর্বিত মেয়েটি অহংকারে ফুলে ফুলে উঠে বলল, 'এটা আমি নিজেই তৈরি করেছি।'
নিজের দাম বাড়াতে যারা অহংকারী তারা এভাবেই মিথ্যাচার করতে মোটেও পিছপা হয় না। রাজকুমারও কম যায় না। একটু হেসে বলল সে, 'আমাকেও যদি এমন একটি পোশাক তৈরি করে দিতে পার, তাহলে তোমাকে আমি বিয়ে করতে পারি।'
কথায় আছে একটা মিথ্যা ঢাকতে দশটা মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। পিংকি তখন বলল, 'অবশ্যই পারব।'
রাজকুমার বলল, 'তাহলে কালই তুমি রাজবাড়িতে এসো। বাবা মাকে নিয়ে তুমি সেখানে থেকে আমার জামাটা তৈরি করে দেবে।'
বেশ কঠিন প্রস্তাব। মনে মনে বলল পিংকি। কিন্তু ততৰণে তার আর কিছুই করার নেই। কেননা রাজকুমার তার কথা শেষ করে ঘোড়ায় চড়ে ফিরে যেতে শুরু করেছে।
এদিকে রাজকুমারের সাথে এতসব ঘটনা যখন ঘটে যাচ্ছে তখন দরিদ্র মেয়ে শান্তা তাদের ভাঙা ঘরে ফিরে যেয়ে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে। বেশ ক'দিনের হাড় ভাঙা পরিশ্রমের পর তার ঘুমটা বেশ গভীর হয়েই এসেছিল। তারপর যখন ঘুম ভাঙল তার তখন সে দেখল তাদের বাড়িতে আবার পরী এসে তার অপেৰায় বসে আছে। তাকে দেখে চোখ কচলে শান্তা বলল, 'তুমি সময় মতো চলে আসায় আমার খুব উপকার হয়েছে। এখন আমার আর কোন দুঃখ নেই। মনে হয় আজকের এই নববর্ষের দিনে আমার চাইতে সুখী মানুষ পৃথিবীতে আর কেউ নেই।'
তার কথা শুনে পরী একটু হাসল। তারপর বলল , তুমি খুব সহজ সরল মেয়ে। যারা সহজ সরল হয় তারা একটু বোকা হয়। আর এই বোকামি টুকুই তাদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে তুমি যা ধারণা করেছ তা সত্যি হতে এখনো কিছু সময় বাকি আছে। আজ আমি একটা পরামর্শ দেয়ার জন্য তোমার কাছে এসেছি। তুমি খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথাটা শুনবে একটুও ভুল হয় না যেন।

তারপর তার কানে কানে কিছু কথা বলে পরী বিদায় নিয়ে চলে গেল। পরী চলে যাওয়ার কিছুৰণের মধ্যেই পিংকি সেখানে এসে হাজির হলো। তারপর সে তাকে আগের মতোই বলল, 'কালই তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে। আর এবার যেয়ে কয়েকদিন আমাদের সাথেই থাকবে।'
শান্তা মনে মনে বুঝল পরী তাকে কিছুৰণ আগে ঠিকই বলে গেছে। সে তাকে যা যা বলে গেছে পিংকিও ঠিক তাই তাই বলছে। তাকে কী উত্তর দিতে হবে পরী অবশ্য তাও শিখিয়ে দিয়েছিল। সুতরাং আর কোন অসুবিধা হল না তার।
সব শুনে শান্তা বিনয়ের সাথে বলল এবার, 'কিন্তু.. আমার হাতে তো এখন অনেক কাজ। কাজ ফেলে কোথাও যাওয়া মোটেও সম্ভব নয়।'
তার কথা শুনে পিংকি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। তারপর সে সাপের ফনা তুলে ছোবল মারার মতো ভঙ্গি করে বলল, 'তোমার এই ধৃষ্টতার পরিণতি কী হতে পারে একবার ভেবে দেখেছ?
'আমাদের দেশ ছাড়া করা হবে,তাইতো? আমরা গরিব মানুষ; হাতে কাজ করে যা দুটো খেতে পাই তাতে কোন রকমে চলে যায় আমাদের। তাড়িয়ে দিলে আমরা যেদিকে দু'চোখ যায় চলে যাব। নিশ্চয় এতে আমাদের কোন অসুবিধা হবে না।' বলল শান্তা।
গন গনে কয়লার চুলোয় পানি পড়লে যা হয় পিংকির যেন এবার তাই হলো। নিমিষে তার রাগ পানি হয়ে গেল। যথেষ্ট ভান ভনিতা করে সে বলল, 'দেখ দেখ কী বলতে কী বলে ফেললাম। তুমি যা চাইবে তাই পাবে। তবুও তুমি আমার সাথে চলো। আমার কথায় তুমি রাগ করো না ভাই।'
এবার কিন্তু সহজে আর মন গলল না শান্তার। সে বলল, 'দিনে আমি তোমাদের ওখানে যেতে পারব না। বাড়িতে আমার অনেক কাজ। তবে তুমি চাইলে রাতে আমি যেতে পারি।'
তার কথা শুনে ভীষণ অবাক হয়ে গেল পিংকি। বলল, 'সেকি! এবার তো তোমাকে কাজ করতে রাজবাড়িতে যেতে হবে। আর সেখানে যেতে চাইলেই তো তুমি যেতে পারবে না। রাজবাড়িতে একবার ঢুকতে চাইলেও যেমন কাঠখড়ি পোড়াতে হয় তেমনি সেখান থেকে বের হতে চাইলেও কাঠখড়ি পোড়াতে হয়।'
পরী তাকে আগেই শিখিয়ে দিয়েছিল সব কথা। তাই একটুও চিন্তা না করে শান্তা বলল, 'সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। যাওয়া আসা আমার ব্যাপার। তবে রাত শেষ হওয়ার আগেই আমি ফিরে আসব প্রতিদিন। ফলে কেউ জানতে পারবে না আমার কথা।'
'এটা অসম্ভব!' বলল পিংকি । তারপর একটু ভেবে নিয়ে আবার বলল সে, 'রাজবাড়ি সম্বন্ধে তোমার বোধহয় কোন ধারণাই নেই। দেশের রাজা যেখানে থাকে সেটাই রাজবাড়ি। আর সেখানে প্রহরীদের চোখ এড়িয়ে রাত-বিরাতেও যাওয়া মোটেও সম্ভব না। '
পিংকির কথায় এবার মোটেও কান দিল না শান্তা। বরং বলল সে, 'আমি যখন যাব তখন তুমি দেখতে পাবে সবকিছু।'
এরপর আর কোন কথা চলে না। অগত্যা সেদিনকার মতো বিদায় নিয়ে চলে গেল পিংকি।
এদিকে রাজবাড়িতে পৌঁছানোর পর অনেক সংবর্ধনা পেল পিংকি। রাজবাড়ির এলাকার মধ্যেই একটা ছোট্ট বাসা বাড়িতে তাদের থাকতে দেয়া হল। তারপর যখন তাকে রাজকুমারের পোশাক দেয়া হলো তখন সে ভয়ে রীতিমতো চুপসে গেল। তার ফ্যাকাসে মুখ দেখেই রাজকুমার তাকে সন্দেহ করে ফেলল। কিন্তু উপরে উপরে তাকে কিছুই বলল না সে।
শান্তা কিন্তু মোটেও ঠকাল না পিংকি কে। যখন ঠিক মধ্যরাত্রি হল তখন সে এসে হাজির হল রাজবাড়িতে। পরীই তাকে তার ডানায় চড়িয়ে নিয়ে এল। তারপর তাকে সে পিংকিদের নূতন বাসা চিনিয়ে দিয়ে উড়ে চলে গেল আবার।
হাঁ যা, এই কথাই সেদিন পরী তাকে কানে কানে বলেছিল । আর সেও তার কথা রাখল তার ডানায় চড়িয়ে শান্তা কে রাজবাড়িতে পৌঁছে দিয়ে। তারপর শান্তা দরজায় দাঁড়িয়ে করাঘাত করতেই উৎকণ্ঠিত পিংকি দরজা খুলে দিল। তাকে দেখে হাঁফ ছেড়ে বলল পিংকি, 'বাঁচালে ভাই। কী ভয়ে ভয়েই ছিলাম। তা তুমি এত পাহারা ভেদ করে কেমন করে ভিতরে ঢুকেছ?'
'সে তুমি যাওয়ার সময় হলে সব দেখতে পাবে। এখন দাও দেখি আমার কাজ। সময় মোটেও নেই আমার হাতে।' বলল শান্তা।
পিংকি তখন রাজকুমারের পোশাক আর সেই সাথে সোনার পাতা ও হীরার ফুল নিয়ে হাজির করল শান্তার সামনে। তারপর সে বলল তাকে, 'এগুলি দিয়ে এমন পোশাক বানিয়ে দিতে হবে যেন মনে হয় সত্যি সত্যি সোনার গাছ। সেই গাছে ফুটে রয়েছে অনেক হীরার ফুল।'
এভাবে প্রতি রাতেই তৈরি হতে লাগল রাজকুমারের পোশাক। দিনে যখন রাজকুমার দেখতে আসে তখন পিংকি বলে এটি তারই হাতের তৈরি। কিন্তু প্রথম দিনের সন্দেহটা রাজকুমারের মন থেকে পুরোপুরি দুর হয়নি। এরই মাঝে একদিন রাজকুমার পরীৰা করার জন্য একটা হীরার ফুল হঠাৎ ইচ্ছা করেই খুলে ফেলল। তারপর সে তার সামনে এমন ভান করল যেন হঠাৎ সেটা খুলে গেছে। কিন্তু পিংকি সেটা হাতে নিয়েও কিছুতেই তা আর লাগাতে পারল না। এতে রাজকুমারের সন্দেহ আরও বেড়ে গেল। শেষে রাজপ্রাসাদের প্রধান নিরাপত্তা প্রহরী একদিন খবর দিল প্রাসাদে পরীর আনাগোনা শুরু হয়েছে।
সেই থেকে রাজকুমারের ঘুমও হারাম হয়ে গেল। রাজ জ্যোতিষী এসে খবর দিয়ে গেল প্রতি রাতেই পরী আসে রাজপ্রাসাদে। শেষমেশ রাজকুমার নিজেই রাত জেগে গোপনে পাহারায় বসে গেল। মধ্যরাত পার হওয়ার পরও যখন কারও দেখা নেই তখন রাজকুমার প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল। কিন্তু হঠাৎ তার নজরে পড়ল আকাশ থেকে নেমে এল অন্ধকারে আলো ছড়িয়ে এক লাল পরী। এক নিমিষে ঘুম ছুটে গেল তার। তারপর যখন পরী তার ডানা থেকে নামিয়ে দিল এক সুন্দরী মেয়েকে তখন তার আর বিস্ময়ের সীমা থাকল না। সেদিন আর কাওকে কিছু বলল না রাজকুমার। শুধু মেয়েটা যে দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকল সেই দৃশ্যটা দেখে ফিরে গেল সে।
পরের রাতে আবার একই জায়গায় বসে অপেৰায় রইল রাজকুমার। সে রাতেও মধ্যরাতের পর একই ঘটনা প্রত্যৰ করল সে। এই রাতে সে সারারাত মেয়েটার ফিরে যাওয়ার দৃশ্য প্রত্যৰ করার জন্য অপেৰায় বসে রইল। শেষ রাতে অবশেষে তার অপেৰার অবসান ঘটল; যখন সে দেখল মেয়েটা ঘর থেকে বের হয়ে আবার পরীর ডানার উপর চড়ে বসল। সবকিছু দেখে হতভম্ব রাজকুমার মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলল, যে ভাবেই হোক এর একটা প্রতিকার তাকে করতেই হবে।
পরের রাতে রাজকুমার ছদ্মবেশ ধরে ঘরের দরজার পাশেই লুকিয়ে বসে রইল। ঠিক মধ্য রাতের পর পূব আকাশে হঠাৎ আলোর রেখা দেখা গেল। তারপর ধীরে ধীরে নেমে এল আকাশ থেকে পরীটা। শীতের রাত না হলেও শরীরে কাঁপুনি ধরে গেল রাজকুমারের। একটা ঘন পাতা সন্নিবিষ্ট ফুল গাছের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলল রাজকুমার। সেদিন কী কারণে একটু আনমনা হয়ে ছিল শান্তা। পরী তাকে রেখে ফিরে যাওয়ার জন্য উড়াল দিতেই রাজকুমার সামনে এসে দাঁড়াল।
তারপর জিজ্ঞেস করল তাকে, 'তুমি কে?'
অন্ধকারে শান্তা রাজকুমারকে চিনতে পারল না। তাছাড়া সে রাজকুমারকে কোনদিন দেখেনি। আজ এই রাতের আঁধারে সে তার প্রশ্ন শুনে একটুও বিচলিত না হয়ে বলল, 'এভাবে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করছ; তুমি কে তাই আগে শুনি।
'আমি এই দেশের রাজকুমার। আর এই রাজ-প্রাসাদের ভাবী উত্তরাধিকারী।' বলল রাজকুমার।
'তোমার তো ভারী অহংকার। রাতের এই অন্ধকারে পরের রাস্তা আটকে নিজেকে রাজকুমার বলে জাহির করছ। আবার বলছ কিনা তুমি এই দেশের রাজা হবে?' সহজ সরল ভাষায় বলল শান্তা।
তার কথা শুনে রাজকুমার কিন্তু মনে মনে আহ্লাদে আটখানা হল। আজ পর্যন্ত কেউ তাকে অমন করে বকা ঝকা করতে পারেনি। আর যাই হোক মেয়েটা সরল সোজা কিংবা তাকে একেবারেই চেনে না। তখন মজা করার জন্য রাজকুমার তাকে বলল, 'আমি যে এই দেশের রাজকুমার তার কী প্রমাণ তুমি দেখতে চাও তাই বল?'
শান্তা বলল, 'আমি প্রতি রাতে এখানে এসে এ দেশের সেরা সুন্দরীর বাড়িতে বসে একটা পোশাক তৈরি করি। শুনেছি সেটা নাকি সে এ দেশের রাজকুমার কে উপহার দেবে। তুমি যদি আমার কাজ শেষ করার আগেই পোশাক টা পরে আমাকে দেখাতে পার তাহলে বুঝবো তুমি সত্যিই এ দেশের রাজকুমার।'
'ওঃ হো, এই কথা তোমার?' বলল রাজকুমার। 'ঠিক আছে, কালকেই ষোলআনা প্রমাণ তোমাকে আমি হাতে নাতেই দিয়ে দেব।'
এই কথা না বলে অপমানিত রাজকুমার সেদিনকার মতো বিদায় নিল।
পরদিন সে পিংকির বাসায় যেয়ে বলল, 'তুমি যে পোশাকটা তৈরি করছ সেটা আমি একদিন একরাতের জন্য ধার নেব তোমার কাছ থেকে। কালকে অবশ্যই ফেরত পাবে তুমি সেটা।'
পিংকি কিন্তু মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারল না। সে ভাবল রাতের বেলায় এসে যদি শান্তা তার পোশাকটি না পায় তাহলে পরের রাত থেকে সে আর নাও আসতে পারে। তাই সে বলল, 'এটা তৈরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকেই তা দেওয়া যাবে না।'
রাজকুমার মনে মনে সবই বুঝল। কিন্তু উপরে উপরে কিছুই না বোঝার ভান করে বলল, 'কেন জানতে পারি?'
মুহূর্তে পিংকির মুখটা রক্তশূন্য ফ্যাকাসে হয়ে গেল। চুরি করে কেউ যখন ধরা পড়ে তখন তার চেহারা এমনি ভাবেই সবার কাছে তা প্রকাশ করে দেয়। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে আড়াল করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না তখন। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই বলল সে, 'আমার গুরুর এমনই নির্দেশ ছিল।'
রাজকুমারও কম যায় না; বলল, 'কে তোমার গুরু তাকে একবার আমি দেখতে চাই।'
কথায় আছে একটা মিথ্যা ঢাকতে দশটা মিথ্যা বলতে হয়। কোন উপায় না দেখে পিংকি তখন বলল, 'তাকে দেখা যাবে না।'
রাজকুমার আর দেরি করল না; বলল, 'আমি তাকে দেখেছি। সে প্রতিরাতে পরীর পিঠে চড়ে তোমাদের বাড়িতে আসে। আর তোমার সেই গুরুই আমাকে নির্দেশ দিয়েছে তার তৈরি অসমাপ্ত পোশাকটা পরে আজ যেন আমি তার সামনে হাজির হই। তাহলে সে বিশ্বাস করবে আমি সত্যিই এ দেশের রাজকুমার।'
সত্যের সামনে মিথ্যা যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে তখন ঘোর পাপীও তার দোষ স্বীকার করতে কুণ্ঠা বোধ করে না। কেননা তখন তার বুঝতে আর বাকি থাকে না সে ধরা পড়ে গেছে।
কোন উপায় না দেখে পিংকি তখন রাজকুমার কে বলল, আজ আমার অহংকার এবং মিথ্যাচার আমাকে নিচে নামিয়ে দিল। সত্যিই আমি তোমার মতো রাজকুমারের যোগ্য পাত্রী নই। যোগ্য একমাত্র সেই হতে পারে যে সৎ, সরল এবং পরিশ্রমী মেয়ে। এখন তুমি আমাকে যে শাস্তিই দাও আমি তা মাথা পেতে নিতে রাজি আছি।
রাজকুমার বলল, 'দোষ করে যে দোষ স্বীকার করে নেয় তার অর্ধেক মাফ। আর তোমার বাকি অর্ধেক মাফ হলো আমার যোগ্য পাত্রীকে আমার কাছে পেঁৗছে দেয়ার জন্যে। এখন বল তুমি আমার কাছে কী পুরস্কার চাও?'
পুরস্কার তো তৈরিই আছে। ঐ নিঃস্ব দরিদ্র মেয়েটি যদি সততা এবং পরিশ্রমের পুরস্কার হিসাবে রাজবধূ হওয়ার মর্যাদা লাভ করে; তাহলে সেটাই হবে আমার জন্য সবচে' বড় পুরস্কার।
রাজকুমার বলল, 'না এটাই সবচে বড় পুরস্কার হতে পারে না। তোমার পুরস্কার আমি আমার পছন্দ মতো দিতে চাই।
নববর্ষের উৎসব শেষ হওয়ার মাত্র কয়েকদিনের মাথায় আবার উৎসব শুরু হলো সেই দেশে। এবার আর একদিনের জন্যে না। রীতিমতো সাতদিন ধরে চলল সেই উৎসব।
আর সেই উৎসবটা কী, জানো তোমরা? রাজকুমারের সাথে দরিদ্র মেয়ে শান্তা আর রাজকুমারের বন্ধু; দেশের প্রধান সেনাপতির ছেলের সাথে ধনী ঘরের আদরের দুলালি পিংকির বিয়ের উৎসবের।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
হোসেন মোশাররফ খুব ভাল লাগল / আপনি আমার ধন্যবাদ নিন এবং ভাল থাকুন @আহমেদ সাবের
আহমেদ সাবের আপনাকে কথা দিয়েছিলাম, বন্ধু সংখ্যার সব লেখা পড়বার পর আপনার গল্প গুলো পড়বো। হ্যাঁ, কথা রাখতে এলাম, পড়লাম এবং ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম।
এফ, আই , জুয়েল তোর নিজো হাতে গড়ে তোলা পথটি ধরে/ আগাশী সভ্যতা আসে ধীরে ধীরে ।। ক্ষ= [J+G+shift (n)]
হোসেন মোশাররফ আপনার মনের এই অহেতুক মনোবেদনার কোনো কারণ নেই / কেননা আপনার রং এর বাজারে আমি গিয়াছিলাম এবং বার দুই পুরো বাজারটা ঘুরে ফিরে দেখেও এসেছিলাম কিন্তু মন্তব্যের বাজারে যখন দেখলাম আমার মন্তব্যটা অন্যের দ্বারা আগেই লেখা হএছে তখন নিরবে ফেরত এসেছি মাত্র , আশা করি মনে আর কোনো বেদনা রাখবেন না / ধন্যবাদ আপনাকে ...............
বিন আরফান. শুধু আপনার লেখায় পড়ে গেলাম. আপনাকে পেলাম না. মনে অনেক বেদনা.
হোসেন মোশাররফ যারা কষ্ট করে এই গল্পটি পড়এছেন, মন্তব্য করেছেন এবং উত্সাহ যুগিয়েছেন তাদের সবাইকে আমি আমার অন্তর থেকে জানাচ্ছি শুভেচ্ছা, আবারও ধন্যবাদ সবাইকে ..........
মাহাতাব রশীদ (অতুল) আমিও সবার চেয়ে ছোট।
হোসেন মোশাররফ মাহতাব রশিদ (অতুল) আবার লেখার জন্য তোমাকে আমি অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি / তোমার সাথে আমি মজা করেছি মাত্র এতে ভাই মনে করার কিছু নেই, আর তুমি লিখেছ তোমার কোনো ছোট ভাই বন নেই তাতে কি হএছে? অমিও তো বাসায় সবার ছোট , আমার কোনো ছোট ভাই বন নেই / এতে দুখ পাওয়ার কিছু নেই ........
মাহাতাব রশীদ (অতুল) মোশশারফ চাচা,অনেকে খুব ভাল লাগাকে তেলে পরিণত করে দেয় তাই সতর্ক হয়ে লিখেছি।তবে একটা দু খের কথা যে আমার বাসায় কোন ছোট ভাই বোন নেই।আত্মীয়দের মধ্যে কয়েক জন আছে ।সুযোগ পেলে পড়ে শোনাব।

২৫ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪