ছোট্ট এক রাজকন্যা

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

হোসেন মোশাররফ
  • ৬০
  • 0
  • ১৪০
দূরের দেশ তারার দেশের কাহিনী এটা। সেখানে আছে এক পরীর রাজ্য। সেই রাজ্যে ছিল এক রাজা আর তার সাত কন্যা। সাত কন্যার কোলাহলে মুখরিত থাকে সেই রাজ্যের রাজমহল। আনন্দ স্ফূর্তিতে ভরে থাকে পরীর রাজ্যের সবাই। রাজার সাত মেয়ের সাত রকম গুণ। কেউ ভাল রাঁধতে জানে, কেউ ভাল আঁকতে জানে আবার কেউবা ভাল চুল বাঁধতে জানে। কিন্তু রাজার ছোট মেয়েটাই শুধু জানে না কোন কর্ম। সে একা একা থাকতেই বেশি ভাল বাসে। তাকে নিয়ে সবার চিনত্দার আর শেষ নেই। রাজার মেয়ে হলেও একেবারে অকর্মা হলে তো আর চলে না। কিন্তু ছোট মেয়ে বলেই কথা। সবার আদর আর আহ্লাদ পেয়ে শেষ পর্যনত্দ তার কোন কাজই আর তার শেখা হল না। আদর আর সোহাগের কারণে রাজা কিংবা রানি কেউই তাকে কিছু বলতেও পারে না। তার বয়স যখন সাত বছর হল তখন তাকে পাঠানো হল বুড়ি দাদির কাছে। সেই দেশের সেই রাজ বাড়ির এটাই নিয়ম। বুড়ি দাদির কাছ থেকেই তারা নানা শিৰা লাভ করে। বুড়ি দাদি তাদের ছলে বলে কৌশলে আর আদর সোহাগ দিয়ে মানুষ করে তোলে।
ছোট রানির নাম ছিল ওনা। বুড়ি দাদি ছোট রাজকন্যা কে পেয়ে খুব খুশি হল। রাজকন্যারা সবাই দেখতে সুন্দরী কিন্তু ছোট রাজকন্যা ওনার কাছে তাদের সব সৌন্দর্য যেন মস্নান হয়ে গেছে। তার জীবনে এমন সুন্দরী মেয়ে আর দেখেনি সে। তাই তাকে আদর করে অনেক গল্প শোনাল। সব শেষে শোনাল পৃথিবীর গল্প। ছোট্ট রাজকন্যা ওনা ভারি অবাক হয়ে শুনল বুড়ি দাদিমা'র কাছ থেকে পৃথিবীর গল্প। তারপর সে পৃথিবী সম্বন্ধে নানা কথা জানতে চাইল বুড়ি দাদি মা'র কাছে। তার আগ্রহ দেখে বুড়ি দাদিও তাকে পৃথিবীর আরও গল্প শোনাল। সব শুনে ছোট্ট রাজকন্যা ওনা বলল, 'আমি সে দেশে যাব।'
তার কথা শুনে বুড়ি দাদি তো আকাশ থেকে পড়ল। সে তার গোলাপি দুই ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে বলল, 'দেখতো কী অলুক্ষুণে কথা। ভুলেও আর কখনো মুখে এনোনা ও কথা।'
বুুড়ি দাদির কথা শুনে ভারি অবাক হল ওনা। রাজ্যের বিষ্ময় চোখে মুখে ফুটিয়ে তুলে বলল সে , 'কেন গো দাদিমা , পৃথিবীতে যেতে চাওয়া কী খুব খারাপ কিছু?'
ওনার কথা শুনে বুড়ি দাদির বিষ্ময় আর কাটে না। কত রাজকন্যা, উজির কন্যা আর কোটাল কন্যা তার হাত দিয়ে শৈশব পার করে বড় হয়ে গেল। কিন্তু এমন আজব কথা কেউ কখনো আর বলেনি তাকে। তাই তার ছোট্ট রাজকন্যার প্রশ্নের উত্তরটাও জানা নেই বিশেষ। এদিকে আবার উত্তর না দিলেও চলে না। ছোট্ট রাজকন্যা ওনা নাছোড়বান্দা। শেষে বুড়ি দাদিমা ভেবে চিনত্দে বলল তাকে, 'গল্পের কথা গল্পের দেশেই রাখতে হয়। সেখানে কখনো যেতে হয় না। যাওয়ার বায়নাটিও ধরতে হয় না।'
রাজকন্যা ওনার মোটেও পছন্দ হল না জবাব টা। সে মুখ চোখে বিরক্তি ফুটিয়ে তুলে বলল, 'কেন গো দাদিমা, বলনা তাড়াতাড়ি।'
'ভারি মুশকিলে পড়া গেল দেখছি।'_ মনে মনে একবার বলল বুড়ি দাদিমা। কিন্তু ততৰণে তার আর কিছু করার নেই। পৃথিবীর গল্প ছোট্ট রাজকন্যা ওনা কে শোনানো হয়ে গেছে। কথায় আছে ধনুকের তীর আর মুখের কথা একবার বের হয়ে গেলে তাকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। সুতরাং এখন রাজকন্যার প্রশ্নের সদুত্তরও তাকেই দিতে হবে। রাজকন্যা বলেই কথা।
বুড়ি দাদিমা তাই একটু চিনত্দা-ভাবনা করে আর বুদ্ধি-বিবেচনা খাটিয়ে বলল, 'পৃথিবীতে যতসব দুষ্ট লোকের বসবাস। তুমি এ দেশের রাজকন্যা, তোমার সেখানে যাওয়া কী সাজে? সেখানে না আছে সুখ না আছে আনন্দ।'
বুড়ির কথা শুনে ওনা বুঝল বুড়ি দাদিমা তার সাথে চালাকি করছে। তাই সে চুপ করল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে পৃথিবীতে যাওয়ার সাধ ষোলআনা চেপে বসল তার মাথায়। সেই থেকে তার ঘুম নেই দুই চোখে। দিবানিশি তার একটাই চিনত্দা পৃথিবীতে একবার না একবার তাকে যেতেই হবে। কিন্তু সে আর কাওকে বলল না এ কথা। কেননা সেই যে বুড়ি দাদিমা তাকে বলেছিল তুমি এই দেশের রাজকন্যা আর তাই তোমার পৃথিবীতে যাওয়া মোটেও সাজে না। সেই থেকে সে সাবধান হয়ে গেছে। এমনিতেই রাজকন্যা হওয়ায় রাজপ্রাসাদের গন্ডির মধ্যেই তাদের বন্দি থাকতে হয়। এর উপর যদি প্রকাশ পায় সে পৃথিবীতে যেতে চায় তাহলে নিশ্চয় তার ডানাই কেটে নেয়া হবে। তখন তার স্বাধীন ভাবে আকাশে ওড়া উড়িটাই বন্ধ হয়ে যাবে। ছোট হলেও রাজকুমারী ওনা কিন্তু বুদ্ধিতে বেশ পেকেছে এরই মধ্যে। মনে মনে সে ভাবতে লাগল কীভাবে চুরি করে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে তার স্বপ্নের পৃথিবীতে একবার যাওয়া যায়। কিন্তু তার সব স্বপ্ন পরিকল্পনা ভেসত্দে গেল। কী করে কী হবে। সে যে একেবারে ছোট। তার বুদ্ধিতে তে তো আর পরীর দেশ চলে না কিংবা সে পালাতেও পারবে না রাজপ্রাসাদ ছেড়ে। আর পৃথিবীতে যেতে হলে তো তাকে পালিয়েই যেতে হবে। সুতরাং ভেবে ভেবে কোন কূলকিনারা পায় না ছোট্ট রাজকন্যা ওনা।
চেষ্টা যে করে তার একটা না একটা উপায়ও হয়। রাজকন্যা ওনারও যেন তাই হল। কারণ সে যা চেয়েছিল মনে প্রাণেই চেয়েছিল। একটুও খাদ ছিল না তার চাওয়ার মধ্যে। দেখতে দেখতে তার জীবন থেকে আরও পাঁচটি বছর কেটে গেল। তবে যেদিন থেকে সে শুনেছে পৃথিবীর কথা সেদিন থেকেই তার একটাই স্বপ্ন সেখানে যাবে সে। একদিন রাতে শুয়ে স্বপ্ন দেখল ওনা, সে উড়তে উড়তে পৃথিবীতে চলে এসেছে। কিন্তু নিচে যেই নামতে যাবে অমনি ঘুম ভেঙে গেল তার। মনে মনে বলল 'যাহ্ ! দেখা হল না আর পৃথিবীটা।' খুব আফসোস হল তার। তারপর থেকে ইচ্ছাটা আরো বেশি করে চেপে বসল তার মনের ভিতরে।

সেই রাজপ্রাসাদে ছিল এক জ্যোতিষী। বয়োবৃদ্ধ এই জ্যোতিষী ভাল স্বপ্ন বৃত্তানত্দও বলতে পারত। ছোট্ট রাজকন্যা ওনা তার এই গুণের কথা ভালই জানত। রাজপ্রাসাদের চাইতে বুড়ি দাদিমা'র কাছে শাসন ছিল খুবই ঢিলেঢালা। তার চোখ কে ফাঁকি দিয়ে চুরি করে কোথাও চলে যাওয়াটা একেবারেই মামুলি ব্যাপার। রাজকুমারী ওনা সেটা অল্পদিনেই বুঝে ফেলল। তারপর করল কী সে, বুড়ি দাদি যখন দুপুরে একটু ঘুমিয়েছে অমনি সুযোগটা নিয়ে ফেলল ওনা। পালিয়ে একেবারে সোজা গিয়ে হাজির হল সেই জ্যোতিষীর কাছে। জ্যোতিষী তাকে দেখে অবাক হতেই তার গোলাপি ঠোঁঠে আঙুল চেপে ধরে ইশারায় তাকে চুপ করতে বলল ওনা। একটু পর অবাক কাটিয়ে উঠে জ্যোতিষী যখন ঠান্ডা হল তখন ওনা তাকে বলল, 'একটা স্বপ্নের ফল ভেঙে দিতে পারবে গো?'
'কী স্বপ্ন তোমার, মা ওনা?' বলল তাকে জ্যোতিষী।
একটু চিনত্দা করে নিয়ে ওনা বলল, 'ওম্ -ম-ম , আমি দেখলাম। উড়তে উড়তে আমি একেবারে পৃথিবীতে চলে গেছি।'
তার কথা শুনে জ্যোতিষী আবার অবাক হল। বলল, 'তারপর?'
'তারপর? যেই না নামতে গেছি অমনি আমার ঘুম ভেঙে গেল।'
জ্যোতিষীকে দেখে মনে হল এবার সত্যিই সে চিনত্দায় পড়ে গেছে। খুক খুক করে একটু কেশে সে তার স্বপ্নের বহু পুরানো ছেঁড়া বইটার পৃষ্টা একের পর এক উল্টাতে শুরম্ন করল। তারপর আবার জিজ্ঞেস করল সে তাকে, 'কখন দেখেছ স্বপ্নটা একবার মনে করতে পার?'
মুখ চোখ ঠোঁঠ উল্টে এবার ওনা বলল, 'শেষ রাতও না আবার মধ্যরাতও না ; এই ধর রাত শেষ শেষ। আবার একেবারে শেষও না কিন্তু.......' এমন হেঁয়ালি করে কথা বলা ওনার অভ্যাস। জ্যোতিষী তার স্বপ্নের ব্যখ্যার বই থেকে মুখ না তুলেই বলল, 'হুম্ বুঝেছি, শেষ রাতের শেষ প্রহর। তাইতো? '
ওনা উৎসাহিত হয়ে বলল, 'হঁ্যা, একদম ঠিক তাই।'
একটু চিনত্দা করে নিয়ে জ্যোতিষী আবার মাথা তুলে বলল, 'শেষ রাতের স্বপ্ন সত্যি হয় আর তুমিও খুব শিগগির পৃথিবী দেখতে যেতে পারবে।'
জ্যোতিষীর কথা শুনে দারম্নণ উৎসাহিত হয়ে উঠল ওনা। অবাক হয়ে বলল, 'সত্যি?'
'সত্যি না তো কী মিথ্যে বললাম। তবে হঁ্যা, পৃথিবীতে একবার চলে গেলে তাকে আর পরীর দেশে ফিরতে দেয়া হয় না। কেননা আমরা চাই না পৃথিবীর অশুভ প্রভাবে আমাদের সবকিছু সুন্দর নষ্ট হয়ে যাক।'
ওনা গভীর মনোযোগের সাথে শুনল জ্যেতিষীর কথাগুলো। তারপর বলল সে, 'কিন্তু আমি তো সেখানে কেবল দেখতে যাব।'
'হঁ্যা, সবই জানি-বুঝি কিন্তু পৃথিবীর মায়া বড় কঠিন মায়া। যে একবার সেই মায়ার জালে আটকে গেছে সে আর ফিরতে পারেনি আমাদের এই রাজ্যে। সে জন্যই আগে থাকতেই সতর্ক সাবধান করে দিই সবাইকে।' বলল অশতিপর বৃদ্ধ জ্যোতিষী।
'ওসব নিয়ে তোমাকে কিস্সু ভাবতে হবে না' বড় জোসের সাথে বলল ওনা। ইতিমধ্যেই উড়ে আসা একখন্ড মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছিল ওনা। ওর ছোট্ট ডানার এক মৃদু ঝাপটায় সেই মেঘ খন্ডটি সরিয়ে দিতে দিতে বলল আবার সে, 'তাহলে এবার বলে দাও কেমন করে সেখানে যেতে পারব আমি।'
আবার খুক্ খুক্ করে একটু কেশে নিয়ে জ্যোতিষী শুরম্ন করল, 'আমাবস্যার নিশুতি রাতের মধ্যভাগে তোমাকে আসতে হবে আমার কাছে। আমার আসত্দাবলে রয়েছে দ্রম্নত আকাশ পথে উড়তে পারে এমন সব তেজী ঘোড়া। তারই একটাতে তোমাকে সওয়ার করে দেব। কিন্তু সাবধান রাত পোহানোর আগেই তোমাকে আবার ফিরে আসতে হবে আমাদের এই পরীর রাজ্যে। আর তা যদি না পার তাহলে চিরদিনের মত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে তোমার জন্য এই পরীর রাজ্য। '
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে ওনা বলল, 'আমি তা পারব; তুমি কোন চিনত্দা করোনা।' কিন্তু ওনা অতো সহজে কথার উত্তর দেয়ায় জ্যোতিষীর মোটেও বিশ্বাস হলো না তার উপর। সন্দেহের দৃষ্টি হেনে একবার তাকিয়ে রইল তার দিকে; তারপর আবার বলল, 'সাবধান হয়ে যাও কিন্তু!'
জ্যোতিষীর অবাক করা চাহনি আর কথা বলার ধরণ দেখে এবার খিল খিল করে হেসেই দিল ছোট রাজকন্যা ওনা। তারপর হাসি থামিয়ে খুব করে একবার পাখা ঝাপটা দিয়ে আড়মোড়া ভেঙে নিল সে। তার পাখার ঝাপটায় ছেঁড়া ছেঁড়া ছোট যে মেঘ গুলো আশপাশ দিয়ে উড়ছিল তা এক লহমায় দূরে সরে গেল। একটু যেন গম্ভির হলো ওনা। খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়া এক টুকরো সাদা মেঘ হাতের মধ্যে নিয়ে লুকোচুরি খেলতে খেলতে বলল এবার ওনা, 'তুমি কী ভেবেছ এখনো আমি সেই আগের মতো ছোট আছি?' তারপর হঠাৎ করেই দৃষ্টিটা তার দিগনত্দ ছাড়িয়ে চলে গেল অনেক দূরে আকাশের শেষ সীমানায়। সেদিকে চেয়ে থেকে ভাবালুতায় পূর্ণ তার সমুদ্র নীল দু'চোখে আবছা সবুজ কুয়াশা জমে উঠল। হাতের জমা করে রাখা মেঘ নিজেরই অজানত্দে একটু একটু করে ঝেড়ে ফেলতে লাগল ওনা। সুদূরের কোন কল্পলোক থেকে এক টুকরো মিষ্টি দুষ্টমি ভরা হাসি যেন তার চোখের কোণে দোলা দিয়ে গেল। আর দেরি করল না ওনা। উঠে পড়ে পাখা মেলে বলল, 'আজ আর না আর একদিন বলব সব।'
পাখার এক টানেই শূন্যে উঠে কিছুৰণের জন্য বাতাসে নিজেকে মেলে ধরে রাখল ওনা। শূন্যে উঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জ্যোতিষী নিচে থেকে আবার প্রশ্ন করল তাকে, 'তোমার বয়স এখন কত হয়েছে বলতে পার?'

উড়তে উড়তেই জবাব দিল ওনা, 'সেটা আমার মায়ের কাছ থেকেই জেনে নিও।' জ্যোতিষী বুঝল এই বয়সে মেয়ের বয়স জিজ্ঞেস করে সে নিতানত্দই ভুল করে ফেলেছে। সুধরে নিয়ে সে আবার বলল, 'বলছিলাম বয়স চৌদ্দ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যনত্দ এই পরী রাজ্য ছেড়ে কোথাও যাওয়ার অনুমতি নেই। এটাই রাজার আদেশ।'
কথাটা থোড়াই কেয়ার করল ওনা। পাখা ঝাপটা ঝাপটি করে শূন্যে দু'বার ডিগবাজি খেয়ে নিল সে। তারপর তার ডানা দু'টো সাবধানে মেলে ধরল বাতাসে। এবার একেবারে সোজা নেমে জ্যোতিষীর মাথার উপরে এসে শূন্যে ভাসমান অবস্থায় থাকল কিছুৰণ। তারপর ভাসমান অবস্থা থেকেই বলল আবার সে, 'তোমার রাজার যত আইন-ই থাক আমি কিন্তু সেখানে যাবই।'
গুণিজনেরা বলে থাকে বছর গুলো পানির স্রোতের মতো যায় আর সময় চলে যায় চোখের পলকে। কিন্তু ওনার সময় আর সহজে কাটতে চায় না। সবে মাত্র জীবনের বারটি বছর পার করেছে সে। সামনে আরও দু'টি বছর ভাবতেই তার সমুদ্র নীল চোখ দু'টো লোনা জলে পূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই তার। এ যে রাজার আদেশ, আর তারই ঘরের আদরের রাজকন্যা সে। মানতেই হবে তাকে এ আদেশ। কিন্তু কিশোরী বয়স তার; এ বয়সে সাধারণত বাধাহীন উদ্দাম হতে চায় মনের ইচ্ছা গুলো। পরাধীনতার নিগূঢ় শৃঙ্খলে বন্দি থাকতে চায় না শরীর মন প্রাণ। আকাশে উড়তে উড়তে একেক বার উদাস দৃষ্টিতে শূন্যে দিগনত্দের দিকে তাকিয়ে থাকে ওনা। কোথায় সেই পৃথিবী, মনে মনে কল্পনা করতে থাকে সে।
জ্যোৎন্সালোকিত রাতে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে আবার শোনে সে দাদিমা'র কাছ থেকে পৃথিবীর গল্প। মন ভরে না তার; যে করেই হোক পৃথিবীটা একবার দেখতেই হবে.....মনে মনে বলে সে।
একরাতে দাদিমা'র চোখ ফাঁকি দিয়ে চুরি করে আবার চলে এল ওনা জ্যোতিষীর কাছে। কেননা তার কাছেই আছে সব কলকাঠি; ঘুম থেকে ডেকে তুলল তাকে। জ্যোতিষী অবাক হল এত রাতে ওনাকে দেখে। ঘুম জড়ানো চোখে হাই তুলতে তুলতে বলল সে, 'কেন মা, এতরাতে তুমি এখানে?'
কোন ভুমিকা না করেই ওনা বলল, 'তুমি যে সেদিন বললে বয়স চৌদ্দ না পেরম্নলে পৃথিবীতে যাওয়া চলবে না, এটাই রাজার আদেশ। বলছি, রাজার আদেশ কী এমনই আদেশ রাতের আঁধারে গোপনেও তা খেলাপ করা যাবে না?'
জ্যোতিষী যারপরনাই অবাক হল ওনার কথা শুনে। তবে চোখ কচলে আড়মোড়া ভেঙে স্বাভাবিক হতে তার যেটুকু সময় লাগল। তারপর ওনাকে দেখে আর বুঝতে বাকি রইল না জ্যোতিষীর। অল্প বয়সী কিশোরী ওনার কাছ থেকে এমন ব্যবহার আশা করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। চোখ গোল গোল করে কিছুৰণ ওনার দিকে চেয়ে থেকে বলল সে,

এ আদেশ তো রাজার আদেশ
করবে কে আর খেলাপ?
ইচ্ছে ভুলে প্রাণটা যাবে,
দেবে আক্কেল সেলাম!

কিন্তু অতো সহজে ওনাও ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। বলল, 'বা কেউ যদি না পারে তাহলে আমি দেব আক্কেল সেলামি, কিন্তু আমাকে যে একবার যেতেই হবে সেখানে।'
এবার একটু চিনত্দায় পড়ে গেল জ্যেতিষী। একে বয়সে কিশোরী তার উপর রাজকন্যা বলে কথা। বায়না যখন ধরেছে একবার, তখন তো কিছু একটা করতেই হয়। একটু ভেবে চিনত্দে জ্যোতিষী শেষে বলল, 'হুম্ উপায় একটা আছে বটে! তবে একটা কথা...'
'কি কথা?' উত্তেজনার আতিশয্যে কথাটা বেরিয়ে গেল রাজকুমারী ওনার মুখ দিয়ে।
'থামো থামো, উত্তেজিত হয়ো না। আগে দেখি কী করতে পারি তোমার জন্য।' তারপর জ্যোতিষী তার কাছে রাখা রাজার পুরানো আইনের বইটা খুলল। ওনার হাতে ধরে থাকা তারা বাতির আলোতে যথেষ্ট মনোযোগের সাথে সেটা সে দেখতে শুরম্ন করল। কিছুৰণ বাদে দেখা শেষ করে বইটা বন্ধ করল। ওনার দিকে একবার গভীর দৃষ্টিতে তাকাল। শেষে বলল সে, 'সব আইনেই ফাঁক আছে। রাজার এই আইনও তার বাইরে না।' তারপর অন্ধকারে তার ক্ষুরধার দৃষ্টি দিয়ে চারদিকটা একবার ভালভাবে দেখে নিয়ে বলল, 'আমাবস্যার মধ্যরাত পার করে আমার কাছে আসতে হবে তোমাকে একাকী। তবে সাবধান! কেউ যেন দেখে না ফেলে। দেখে ফেললে কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে।'
'তারপর?' কেঁপে কেঁপে উঠে বলল ওনা।
'তারপর আমার আসত্দাবলে গোপনে রাখা লাল টাট্টু ঘোড়ায় তোমাকে তুলে দেব। এই ঘোড়া দেখতে যেমন ছোট তেমনি উড়তেও পারে দ্রম্নত। চোখের পলক না ফেলতেই ঐ টাট্টু ঘোড়া তোমাকে নিয়ে যাবে পৃথিবীতে। আকাশে ওঁত পেতে বসে থাকা প্রহরীরা দুরে থাক; কাক পৰিটাও টের পাবে না ঐ টাট্টু ঘোড়ার নিশানা। তবে তোমার বয়স অল্প, তাই ভয় হয়। পৃথিবীর কঠিন মায়ায় তুমি যদি বশীভূত হয়ে পড় তাহলেই বিপদ।' কথাগুলো বলতে গিয়ে জ্যোতিষী যথেষ্ট ভয় পেলেও ওনা কিন্তু মোটেও ভয় পেল না।
ওনা তার পাখা বেশ কয়েকবার ঝাপটা দিয়ে একটু আড়মোড়া ভেঙে নিয়ে বলল, 'তুমি অত ভেবো নাতো, আর দু'দিন পরেই আমাবস্যার রাত। আমার কিন্তু তোমার ঐ লাল টাট্টু ঘোড়াটা চাই।' কথা শেষ করে ওনা আর দেরি করল না। সোজা উড়ে চলে এল তার দাদির মা'র আসত্দানায়। তারপর নিঃশব্দে তার বিছানায় যেয়ে লেপমুড়ি দিয়ে আবার শুয়ে পড়ল।

আমাবস্যার গভীর রাত। চারদিকে ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। পরীরাজ্য নিরব নিথর, আশপাশে কেউ জেগে নেই। দূরে কোথায় একটা 'চোখ গেল' পাখি ডাকছিল। তার ডাক শোনার জন্য তখন পর্যনত্দ শুধু একজনই জেগে বসে আছে ঘুম কামাই দিয়ে, সে আর কেউ নয় রাজ জ্যেতিষী। গভীর আগ্রহ নিয়ে সে অপেৰায় আছে ওনার।
একটু পরই ওনা এসে হাজির হল সেখানটায়। তার জন্য রাখা লাল টাট্টু ঘোড়া তৈরিই ছিল। ওটাতে চড়ে বসে লাগামটা হাতে নিতেই জ্যেতিষী তাকে আরও একবার সাবধান করে দিয়ে বলল, 'দেখ যত যাই হোক, এই টাট্টু ঘোড়া থেকে কিন্তু ভুলে একবারের জন্যও পৃথিবীতে নামার চেষ্টা করোনা। এই টাট্টু ঘোড়া তোমাকে রাত শেষ হওয়ার আগেই আবার এখানে ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু পৃথিবীতে একবার নেমে পড়লে টাট্টু ঘোড়া তোমাকে ফেলে রেখেই চলে আসবে; তুমিও আর কোনদিন ফিরতে পারবে না এখানে।'
উত্তরে ওনা শুধু একটু মুচকি হাসল। তারপর দৰ সহিসের মতো ঘোড়ায় উঠে বসে লাগাম তুলে নিল হাতে। এবার আলতো করে লাগামটা একটু টেনে ধরে কয়েক পা সামনে এগিয়ে পরীৰা করে নিল ঘোড়াটিকে। তারপর পিছনে ফিরে এসেই আর দেরি করল না ওনা। লাগাম চেপে ধরে ঘোড়া ছুটাল শূন্যে। চোখের পলক পড়তে না পড়তেই ওনাকে নিয়ে ছুটে চলল টাট্টু ঘোড়া। জ্যোতিষীর কথাই সত্য হল। কিছুৰণের মধ্যেই মহাশূন্যে ঘুরতে থাকা ছোট্ট পৃথিবীটা ভেসে উঠল ওনার চোখের সামনে। ছোট্ট বিন্দুটা বড় হতে হতে একসময় ওনা চলে এল পৃথিবীর একেবারে কাছাকাছি। টাট্টু ঘোড়া তখন ওনা কে বলল, 'তুমি যে পৃথিবী দেখতে চেয়েছিলে এই সেই পৃথিবী।' তারপর টাট্টু ঘোড়া ওকে নিয়ে ঘুরতে লাগল পৃথিবীর চারপাশে। ওনা একে একে দেখতে লাগল পৃথিবীর কোথাও আলো কোথাও অন্ধকার। কোথাও বা ভেসে বেড়ানো পুঞ্জিভুত মেঘ থেকে নেমেছে সজোরে বৃষ্টি। কোথাও তুষার পড়ে সাদা হয়ে গেছে ঘর বাড়ি মাঠঘাট। আবার কোথাও বা প্রচন্ড রোদ আর গরমে পুড়ে খাক হয়ে গেছে ঘরবাড়ি প্রানত্দর। আরও রয়েছে নীল নীল সমুদ্রের নয়নাভিরাম দৃশ্য, উচুঁ উচুঁ পাহাড় মালভূমি সমতলভূমি আর গিরিকন্দর। বন বাদাড় আর নদ-নদী ঘেরা স্থলভাগ। সব দেখে শেষে ওনার মুখ থেকে একটা কথাই অস্ফুটে বের হয়ে এল, 'অপূর্ব!'
আর তাই না শুনে ছোট্ট লাল টাট্টু ঘোড়া তখন বলতে শুরম্ন করলঃ-

পৃথিবীটা উপর থেকে দেখতে যত ভাল,
ভিতরে যে যাবে সে দেখবে ততই কাল।
ইচ্ছে মতো নামতে পার দেখতে যদি চাও,
মায়ার ছলে ভুল করোনা বলে দিচ্ছি তাও।

রাজকন্যা ওনা টাট্টু ঘোড়ার কথা শুনে ভারি অবাক হল। কিন্তু পৃথিবীটা দেখে তার আনন্দ আর ধরে না। তাই টাট্টু ঘোড়া কে সে বলল,

টাট্টু ঘোড়া টাট্টু ঘোড়া
আমি ওনা বলছি সোনা
দেখতে আমি চাই,
এই পৃথিবীর সেরা রাজা
আর সু-রাজপুত্র তার
সুযোগ যদি পাই।

অনেক অনেক দিন আগের কথা। তখনও পৃথিবীর মানুষ জানতো না সাত সুমদ্র আর তের নদীর ওপারে কী আছে আর কী নেই। এমনই এক দিনে সমুদ্রের মাঝে টিপের মতো ছোট্ট এক দ্বীপ ছিল। সেই দ্বীপের রাজাই ছিল পৃথিবীর সেরা রাজা। সেই দেশের রাজপুত্রটিও ছিল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই সবার প্রিয়। টাট্টু ঘোড়া কেমন করে জানি জেনেছিল সেই কথা। রাজকুমারী ওনার কথা শোনা মাত্রই টাট্টু ঘোড়া তাকে সেখানে নিয়ে যেয়ে হাজির করল। রাজপ্রাসাদের উঁচু উঁচু দালান গুলোর উপর দিয়ে উড়ে যেয়ে রাজকুমারীর লাল টাট্টু ঘোড়া নামল সোজা রাজকুমারের ঘরের জানালায়। পৃথিবীর সেই দ্বীপ রাজ্যটিতেও তখন মধ্য রাত চলছে। ফলে প্রাসাদের কেউ তখন জেগে নেই। রাজপ্রাসাদের বিশাল বিশাল জানালার খড়খড়ি গুলো সব খোলা ছিল; আর তাতে ঝুলছিল পাতলা ফিন ফিনে রেশমির পুরম্ন পর্দা। কিন্তু সেসব পুরম্ন পর্দা ভেদ করেও ভিতরটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল। টাট্টু ঘোড়ায় বসে রাজকুমারী ওনা অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইল রাজকুমারের দিকে। এতদিন সে পৃথিবীর রাজকুমারের গল্পই শুধু শুনে এসেছে কিন্তু সত্যি রাজকুমার দেখেনি কোনদিন। এই প্রথম দেখল এবং সবার সেরাটাই দেখল। তার কল্পনায় আঁকা এতদিনের সব সপ্ন যেন এক ফুৎকারে নিভে গেল। লালিত সপ্নের চেয়েও সুন্দর, কল্পনাকেও যেন হার মানায়। অবাক বিষ্ময়ে তার মুখ দিয়ে বের হয়ে এল আবার, 'অপূর্ব।'
আর তাতেই ঘুম ভেঙে গেল রাজকুমারের। টাট্টু ঘোড়া থেকে বিচ্ছুরিত লাল আলোয় দু'জন দু'জনের দিকে তাকিয়ে রইল পলকহীন চোখে। কিন্তু তা মাত্র এক মুহূর্তের জন্য। রাজকুমারীর জন্য জ্যোতিষীর বেঁধে দেয়া সময় শেষ হয়েছিল। তাই টাট্টু ঘোড়া আর দেরি করল না; ওনাকে নিয়ে রওনা হয়ে পড়ল। পরীর দেশে আবার ফিরে যেতে মাত্র কয়েক মুহূর্ত সময় লাগল ওনার। কিন্তু কেউ জানল না ওনা তার সব সপ্নগুলো পৃথিবীতে রেখে এসেছে। যারা লৰ্য করার তারাই শুধু লৰ্য করল ওনার ভিতরে ওনা আর নেই। আছে আনমনা এলোকেশী অন্য এক ওনা; যে উদাসীন আলাভোলা একাকী। যে নিঃসঙ্গ দুপুরে উড়ে যাওয়া উদাসী রূপালি মেঘের দিকে চেয়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। কিংবা রাতের আকাশে যখন তারা ফুটে বের হয় তখন সে হারিয়ে যায় সেই তারার দেশে।
ওনার বাকি ছয় বোন নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে একদিন ওনাকে ডেকে নিয়ে গেল তাদের অন্দর মহলে। তারপর তাকে ঘিরে বসে সবাই বলল, 'তুমি আমাদের সবার ছোট আর সবচে' সুন্দরী বোন। তোমার মন খারাপ দেখে আমাদেরও মন খারাপ। সত্যি করে বলতো তোমার কী হয়েছে?'
ওনা তখন বলল, 'আমি চুরি করে পৃথিবীতে গিয়েছিলাম।'
বিষ্মিত হয়ে সবাই বলল, 'তারপর?'
'আমি এক রাজকুমার কে দেখেছি সেখানে। তারপর আমার সপ্ন-সাধ কল্পনা আর মন প্রাণ সব কিছু আমি হারিয়ে রেখে এসেছি সেখানে।' বলল ওনা।
ওনার কথা শুনে ছয় রাজকন্যা বিষ্ময়ে অভিভুত হয়ে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠে বলল, 'যাঃ-'
তারপর সবাই একে অপরের চোখ চাওয়া চাওয়ি করে হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল ওনার দিকে। শেষে বড় রাজকন্যা বলল ওনাকে, 'আমাদের এত সুন্দর পরী রাজ্য ছেড়ে তুমি সেখানে গিয়েছিলে মরতে? তুমি জান না পৃথিবীর মায়ায় যে একবার জড়িয়েছে সে আর কোনদিন ফিরতে চায় না সেখান থেকে।'
বড় বোনের কথা শুনে ওনা কেঁদে ফেলল। শেষ পর্যনত্দ সে নাকের পানি আর চোখের পানি মুছে একসময় শানত্দ হল। তারপর আবার বলল, 'আমার এখন আর কিছুই করার নেই; পৃথিবীতে গিয়ে মরা ছাড়া।'
তার কথা শুনে বড় রাজকন্যা দুঃখের সাথে বলল, 'তুমি ঠিকই বলেছ ওনা, পৃথিবী যে চায় মৃতু্যই তার শেষ পরিণাম। তাকে ভালবেসে কোন লাভ নেই যে ভালবাসার দাম দিতে জানে না। পৃথিবীকে তুমি যতই ভালবাস না কেন, সময় শেষ হলে পৃথিবী কোনদিন তোমাকে রাখবে না।'
শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে ওনা বলল, 'তুমি যত উপদেশই দাও না কেন, কোন উপদেশই এখন আমার আর কানে ঢুকবে না। কেননা পৃথিবীর মায়ার জালে এখন আমি অন্ধ হয়ে গেছি। নিজের ভাল মন্দও বোঝার ৰমতা এখন আমার আর নেই।'


সেই দেশে ছিল এক বড় নামকরা কবিরাজ। সে কবিরাজি তে যেমন ছিল পটু তেমনি জানত বিসত্দর তন্ত্রমন্ত্র আর জাদু-টোনা। একদিন ওনা তার কাছে যেয়ে বলল,

শোন শোন কবিরাজ,
বলছি ছেড়ে শঙ্কা-লাজ;
রেখে তোমার সকল কাজ,
দাওনা সময় একটু আজ।

কবিরাজ বলল, 'দিলাম সময় , বল তোমার কী সমস্যা?'
ওনা বলল, 'আমি মানুষ হতে চাই।'
রাজকন্যা ওনার কথা শুনে বৃদ্ধ কবিরাজ নাকে নস্যি টেনে বলল, 'কেন, তুমি মানুষ হতে চাও কোন দুঃখে?'
ওনা তখন বলল, 'পৃথিবীর এক রাজকুমারকে মনপ্রাণ সব দিয়ে এসেছি। এখন তাকে আমি আপন করে পেতে চাই।'
কবিরাজ কিছুৰণের জন্য গভীর চিনত্দায় মগ্ন হয়ে পড়ল। বেঘোরে প্রলাপ বকার মতো করে মন্ত্র আওড়ে নিয়ে শেষে বলল, 'পরীদের বিয়ে কখনো মানুষের সাথে হয় না। তবে তুমি যদি একানত্দই তাকে বিয়ে করতে চাও তাহলে খুব কঠিন একটাই পথ খোলা আছে তোমার সামনে।'
'কী সেই পথ?' খুব উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করল ওনা।
'তোমাকে পাখির বেশ ধরে সেই রাজকুমারের মন জয় করতে হবে। এভাবে এক বছর সেখানে থাকতে হবে। কিন্তু সাবধান এর মধ্যে একদিনের জন্যও সে যদি তোমাকে ভুলে যায় তাহলে সেই দিনটিই হবে তোমার জীবনের শেষ দিন। এ খুব কঠিন সাধনা, ভুলেও কখনো ও পথে পা বাড়িও না যেন।' কথাগুলো বলে শেষ করে বৃদ্ধ কবিরাজ যেন দম ফেলে বাঁচল।
কিন্তু ওনার মধ্যে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া লৰ্য করা গেল না। সে তার নরম তুল তুলে হাত দিয়ে ডানার পাখা পরিস্কার করতে করতে বলল, 'তুমি আমাকে পাখিই তৈরি করে দাও।'
কবিরাজ তাকে সাবধান করে দিয়ে আবার বলল, 'তোমাকে আবারো বলছি, এ পথ মোটেও ভাল পথ নয়। পৃথিবীতে নিখাদ ভালবাসা কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না। ভুলে যাওয়াটাই তাদের ধর্ম। সুতরাং জেনে শুনে তুমি আগুনে ঝাঁপ দিও না।'
নির্বিকার ওনা বিড় বিড় করে শুধু একটা কথাই বলল, 'যে পতঙ্গ আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মধ্যে সুখ খুঁজে পেয়েছে তাকে কেন তুমি বাধা দাও।'
নিজের ভুল বুঝতে পেরে কবিরাজ মাথা হেঁট করে বলল, 'ঠিক আছে, তবে তাই হোক; তোমার ভালমন্দ তুমি যখন বুঝতে শিখেছ তখন আমি আর বাধা দেই কেন?'
তারপর কবিরাজ তার শাস্ত্র বই ঘেঁটে মন্ত্রটা খুঁজে নিয়ে বলল, 'তোমার বয়স যখন পনের বছর হবে তখন এই মন্ত্রটা একঢোক পানি দিয়ে গুলে খেলেই তুমি পাখি হয়ে যাবে। তবে আমি শুনেছি পৃথিবীতে কবুতরই মানুষের সবচে' প্রিয় পাখি। তারা থাকেও মানুষের কাছে মানুষেরই তৈরি করা ঘরে। তুমি কবুতর হয়ে যেতে পার সেখানে হয়ত তুমি সফল হতে পারবে। আর পানি গুলে খাওয়ার সময় যে পাখির নাম তুমি মনে মনে বলবে সেই পাখিই তুমি হতে পারবে।'
কবিরাজ তাকে একটা গাছের পাতায় মন্ত্রটা লিখে হাতে দিয়ে বলল, 'নাও, এটা যেন হারিয়ে ফেল না; যদি যেতে চাও পৃথিবীতে।' ওনা সেটা হাতে নিয়ে পরম যত্নে তার ডানার পালকের মধ্যে লুকিয়ে রেখে দিল।
তারপর আর দিন কাটতে চায় না তার। ক'বে সে বড় হবে আর পৃথিবীতে যাওয়ার দিন আসবে তার.... । কিন্তু দিন তো আর বসে থাকে না কারও জীবনে। শেষে ওনার জীবনেও এল সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি। তখন সে পরম যত্নে রেখে দেয়া তার ডানার পালকের মধ্য থেকে কবিরাজের সেই মন্ত্র লেখা পাতাটি বের করল। তারপর খুব সাবধানে সেটি সে এক ঢোক পানি দিয়ে গুলে খেয়ে ফেলল। আর যাই কোথায় অমনি সে কবুতর হয়ে গেল। শরীরটা তার এতই হালকা হয়ে গেল যে এমন আনন্দ সে জীবনে আর কখনো পায়নি। পৃথিবীতে যাওয়ার আনন্দে সে মুক্ত স্বাধীন আকাশে ডিগবাজি দিয়ে অনেৰণ ধরে উড়ে বেড়াল। ওনা বোনদের অবশ্য আগেই জানিয়েছিল তার জন্যে টাট্টু ঘোড়ার ব্যবস্থা করে রাখতে। ফলে তারা বোনকে বিদায় জানানোর জন্য টাট্টু ঘোড়া নিয়ে তৈরীই ছিল। ফিরে এসে ওনা শুধু তাতে চড়ে বসল মাত্র। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই পেঁৗছে গেল সে পৃথিবীতে। টাট্টু ঘোড়া নিয়ে বড় বোনই তাকে আবার পেঁৗছে দিয়ে গেল তার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই রাজপ্রাসাদের দোর গোড়ায়।
ওনা উড়ে যেয়ে বসল রাজপুত্রের কৰের জানালায়। রাজপুত্র তাকে এক পলক দেখে চোখ ফিরিয়ে নিল। ওনা বুঝল আজ সে আর পরী নেই এই জন্য রাজপুত্রের কাছে তার কোন দামও নেই। কিনত্দ তাকে বাঁচতে হলে রাজপুত্রের মন জয় করতেই হবে। তাই নাছোড়বান্দা হয়ে ওনা উড়ে যেয়ে রাজপুত্রের সামনে একটা ফুলদানির উপর বসল। গভীর দৃষ্টি মেলে তাকে দেখল আবার রাজপুত্র। ওনা তাকে বলল, 'তুমি আমাকে চিনতে পারছ না, ঘুমের ঘোরে মধ্যরাতে দেখা সেই পরী আমি।'
কিন্তু তার মুখ দিয়ে 'বাক্ বাকুম' ছাড়া আর কিছুই বের হল না। রাজপুত্র তাকিয়ে আছে তারই দিকে। এতদিন পরে দেখা অথচ সে তাকে চিনতে পারছে না। ওনার মুখের কথাও সত্দব্ধ আজ। এত তাড়াতাড়ি সব কিছু ফুরিয়ে যেতে পারেনা। ওনা কেঁদে ফেলল।
এবার রাজপুত্রের মন গলল। সে তাকে হাতের উপর তুলে নিয়ে বলল, 'কাঁদছ কেন তুমি? খেতে পাওনি বুঝি?'
রাজপুত্রের কথা শুনে ওনা এবার অবাক হল। মুখের ভাষা সে আগেই হারিয়েছে,তাই এবার মনে মনেই বলল সে রাজপুত্র কে, 'তুমি কী আমার চোখ দেখেও বুঝতে পার না, আমি কি চাই আর কেনই বা এসেছি তোমার কাছে?'
রাজপুত্র অবশ্য বুঝতে না পারলেও তাকে যথেষ্ট আদর করল আর নিজের ঘরেই তার থাকার জন্য ছোট্ট একটা বাসা তৈরি করে দিল। আদর করে তার নাম রাখল প্রীতি।
তারপর থেকে দিনে দিনে রাজপুত্রের সাথে প্রীতির ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠল। শেষে এমন অবস্থা হল রাজপুত্র এক মুহূর্ত প্রীতিকে না দেখে থাকতে পারে না।
এদিকে তলায় তলায় রাজপ্রাসাদে একটা গুঞ্জণ উঠে গেল। সবার ধারণা রাজপুত্র ঠিক পাগল হয়ে গেছে। এমন কি রাজার কান পর্যনত্দও পেঁৗছে গেল কথাটা। রাজার ছিল এক বামন দাসী। সে কথাও বলতে পারতো না ঠিকমতো। তোতলা ছিল সে। তোতলিয়ে সে যা বলত তাই ছিল রাজার কাছে ভারি পছন্দ। সেই প্রথমে খবরটি দিল রাজাকে। শুনে রাজা তো অবাক। যে কিনা দেশের ভবিষ্যৎ রাজা তার পাগল হওয়া তো মোটেও চলে না। তাই রাজা প্রথমে খবর দেয়া বামন দাসীর কাছেই এর সমাধান জানতে চাইল। বামন দাসী বামন হলে কী হবে সে ছিল বেজায় চালাক আর কূট বুদ্ধির মানুষ। রাজাকে সে পরামর্শ দিল, 'তোমার ছেলেকে ভাল দেখে এক রাজকন্যার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। তারপর কী করতে হয় সে আমিই করব।' রাজার অন্দর মহলের খাস দাসী, ধরতে গেলে রাজার ডান হাত বাঁ হাত। সুতরাং তার ৰমতাটাও নেহাত কম না।
বামন দাসীর পরামর্শ মোতাবেক অল্পদিনের মধ্যে পাশের এক ছো্ট্ট দ্বীপ দেশের রাজার মেয়ের সাথে সেই রাজপুত্রের বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু সবাই অবাক হয়ে লৰ্য করল সুন্দরী রাজকন্যাকে স্ত্রী হিসাবে পেয়েও রাজপুত্র প্রীতি কে মোটেও ভুলতে পারল না। কূট বুদ্ধির মানুষেরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভাল মানুষদের চিনতে পারে। বামন দাসীও প্রথম দিন দেখেই কবুতর ওনা কে চিনে ফেলেছিল। কিন্তু সন্দেহটা তখন আর প্রকাশ করেনি; নিজের মধ্যেই রেখেছিল। তার এক তন্ত্রমন্ত্র জানা গুরম্ন ছিল। তার কাছেই বামন দাসী শুনেছিল পরীরা পৃথিবীতে আসে পাখি হয়ে কিন্তু পরে তারা মানুষ হয়ে যায়। ওনার চোখের তারা দেখেই বামন দাসী বুঝেছিল; যদি তার গুরম্নর কথা সত্যি হয় তাহলে এ কবুতর সাধারণ কোন পাখি নয়।
কবুতার রূপী রাজকুমারী ওনাও বামন দাসীকে দেখে চিনেছিল। তার চাউনি ছিল শকুনের চাউনির মত। যখন ওনার দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকাত সে, মনে হতো যেন আসত্দ পেলে গিলে খায় তাকে। রাজপুত্রের বিয়ের পর থেকেই ওনা দূরে সরে গিয়েছিল। মূলত বামন দাসীর দৃষ্টি এড়াতেই ওনা দূরে দূরে থাকতে শুরম্ন করল। কাকভোরে সে বের হয়ে যায় আর সন্ধ্যা ঘোর হলে সে ফিরে আসে রাজপ্রাসাদে। রাজপ্রাসাদে আরও অনেক কবুতর আছে তাদের কারো সাথেই ওনা মেশেনা। এসব দেখে শুনে বামণ দাসী নিশ্চিত হল তার গুরম্নর কথাই ঠিক। সুতরাং বামন দাসী মনে মনে কূট ষড়যন্ত্র শুরম্ন করে দিল। মনে মনে সে একটা বেড়াল পুষতে শুরম্ন করল। তারপর তাকে একদিন ডেকে বলল, 'কবুতরের কলিজা তুমি খেয়েছ হয়তো কিন্তু আমি তোমাকে এমন কবুতরের কলিজা খাওয়াব যা সারাজীবন মনে থাকবে।' আর এই কথাটা ওনা শুনে ফেলল। তার আর বুঝতে বাকি রইল না বামন দাসী কার কলিজার কথা বলছে। কিন্তু কবিরাজ তাকে বলেছিল রাজপুত্রের ভালবাসা যতদিন থাকবে ততদিন কেউ তোমার কোন ৰতি করতে পারবে না। ওনার মনে অটুট বিশ্বাস রাজপুত্রের ভালবাসা থেকে সে কখনো বঞ্চিত হবে না। তাই ওনা নিশ্চিনত্দে থাকতে লাগল।
এদিকে সে দেশে নিয়ম ছিল রাজপুত্ররা নূতন বিয়ে করে শিকারে বের হতো। তাই মনে মনে শিকারে বের হওয়ার আয়োজন চলতে লাগল রাজপ্রাসাদে। কিন্তু ওনা সারাদিন প্রাসাদে না থাকার জন্য এসব খবর কিছুই জানল না সে । শেষে রাজপুত্র যেদিন শিকারে বের হল সেদিনই আটকা পড়ে গেল ওনা। ওনার অপেৰার বছর শেষ হতে আর মাত্র তখন দু'দিন বাকি। এদিকে রাজপুত্রও ওনাকে সাথে নেয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেল। পথে বেরিয়ে যখন মনে হল তার ততৰণে অনেকটা পথ পাড়ী দেয়া হয়ে গেছে। রাজপুত্র ভাবল তার প্রীতি যদি সত্যিই তাকে ভালবাসে তাহলে নিশ্চয়ই আকাশ পথে উড়ে তার কাছে চলে আসবে। কিন্তু রাজপুত্র তো জানে না প্রীতি এখন রাজপ্রাসাদে তারই ঘরে বন্দি। সে আর কোনদিন আসতে পারবে না তার কাছে। কথায় আছে, চোখের সামনে থেকে সরেছে যে, মন থেকেও হারিয়েছে সে।

বন্দি অবস্থায় ওনা বলল,

'ভাগ্যহীনা এক রাজকন্যা আমি, নামটি আমার ওনা
পথ হারা আহত পাখি, বন্দি আমায় কোরোনা।
সুখের দিন হারিয়ে ফেলে হয়েছি এখন একা
নেই আমার আপন কেউ, নেই কোন ঠিকানা। '


বামন দাসী তার তন্ত্রমন্ত্র জানা গুরম্নকে ডেকে এনেছিল। সে ওনার ভাষা বুঝল। কিন্তু তার পাষাণ হৃদয় একটু গলল না তাতে। বরং খুশি হয়ে সে বলল, 'যাক, অনেকদিন পর শিকার হাতে পেয়েছি। বেড়াল কে যখন তুমি বলেই ফেলেছ তখন আর তাতে ভাগ বসাবো না আমি। তবে তার হাড় গোড় গুলো আমার চাই। আমার জাদু টোনায় খুব ভাল কাজ দেবে ওগুলো।'


শিকারের নেশায় রাজপুত্র বেমালুম ভুলেই রইল ওনার কথা। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় ক্লানত্দ শ্রানত্দ রাজপুত্র শিকার শেষে ফিরে এল তার তাবুতে। সেদিন বৃষ্টি ভেজা বর্ষার রাত। গভীর বনে বাঘ শেয়াল আর পেঁচার ডাকে মুখরিত চারদিক। সেই মনোরোম সন্ধ্যায় রাজপুত্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। অথচ কেউ জানল না এক বছরের কঠোর সাধনার শেষ প্রহরে এসে ভালবাসার ইঁদুর বেড়াল খেলায় হেরে গেল ওনা। অবশেষে তার ঘরে বামন দাসীর সাদা বেড়াল ঢুকল তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। রাজকুমারী ওনা তখন জীবনের শেষ কথাগুলি বলছিল রাজপুত্র কে উদ্দেশ্য করে,

মেঘমেদুর এই বর্ষা রাতে
যাচ্ছি আমি তোমায় ছেড়ে
সব হারানোর দেশে।

যখন তুমি গভীর ঘুমে
রাতের শেষে, স্বপ্নের দেশে;
তখন আমি যাচ্ছি ফিরে
এখান থেকে অনেক দূরে
সব হারানো দেশে।

এই পৃথিবীর মায়ার জালে,
আটকে যে পথ হারাবে;
ছুটবে আপন ফেলে,
আমার দশা তারও হবে;
যেতে হবে শূন্য হাতে
সব হারানোর দেশে।

রাজপুত্র শিকার থেকে ফিরে এসে দেখল তার প্রিয় কবুতরের ঘরটি শুন্য পড়ে আছে। তার খবরা খবরও কেউ তাকে বলতে পারল না। শুধু বামন দাসী একদিন তাকে বলল বোধহয় বেড়ালের পেটেই গেছে ওটা। কেননা আমার সাদা বেড়াল টার মুখে একদিন আমি রক্ত লেগে থাকতে দেখেছি।
রাজপুত্র কয়েক দিন ধরে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াল প্রীতি কে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেল না সে তাকে। আকাশের সাদা রূপালি মেঘ উড়ে যেতে দেখে সে ভাবল বোধহয় প্রীতিই উড়ে যাচ্ছে তাকে ফাঁকি দিয়ে। কিন্তু সেদিকে ঠাঁই তাকিয়ে থেকেও সে প্রীতিকে খুঁজে পেল না কোথাও। ক্লানত্দ দৃষ্টি তার ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল বার বার। রাতে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখল তার প্রিয় কবুতর প্রীতি পরী হয়ে উড়ে এসেছে তার ঘরে। কিন্তু যেই তাকে ধরতে যাবে অমনি দূরে সরে গেল সে। তারপর সে বলল, 'আমি রাজকুমারী ওনা, তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে; তাই আমিও তোমাকে ভুলে গেলাম।\' আর অমনি ঘুম ভেঙে গেল তার। তারপর তার মনে হল রাতের আঁধারে কে যেন চুপি চুপি তার ঘরে এসে বলে যাচ্ছে......


যেদিন আমি থাকব না আর, হারিয়ে যাব চিরতরে;
সেদিন আমায় পড়বে মনে, খুঁজবে সেদিন খুঁজবে।

ব্যসত্দ দিনের কাজের মাঝে, একটু যদি রাখতে মনে;
ভুলের মাঝেও ভুল করে, রাখতে যদি আপন করে-
যেতাম না আর এমন করে তোমায় একা ফেলে।
সব পেয়েও সব হারায় মানুষ, একটু খানি ভুলে।
এখন আমি হারিয়ে গেছি সব হারানোর দেশে
আমায় তুমি পাবে না আর সারা জনম খুঁজে।

তোমরা যারা এই গল্প পড়বে তারা কখনো এক ফোঁটা চোখের পানিও ফেলবে না রাজকন্যা ওনার জন্যে। বরং তার বলে যাওয়া শেষ কথাটা মনে রেখো চিরদিন। পৃথিবীতে যত পাপ আছে তার কোনটাই হয়তো কোন ৰতি করতে পারবে না তোমাদের, যদি তোমরা কখনো ভুলে না যাও। ভুলে যাওয়াই পাপ। আর ভুলে গিয়েই মানুষ সব হারায়। মনে রেখ চিরদিন কথাটা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
হোসেন মোশাররফ আপনার সুচিন্তিত মতামত আমাকে অনুপ্রানিত করল @ এফ ই জুয়েল, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ .....
এফ, আই , জুয়েল # সাধনা । বিভিন্ন শাস্ত্রের বর্ননা । রুপকথা । অন্য জগতের অপরুপ কল্পনা । আসক্তি, মোহ ও মায়াজালের মিশেলে সুন্দর গল্প ।
হোসেন মোশাররফ আপনার সুন্দর মন্তব্যটির জন্য আপনার জন্যও রইল আমার আন্তরিক ধন্যবাদ @ নাহিদ হোসাইন ...
হোসেন মোশাররফ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ @ আক্তার হোসাইন....
খন্দকার নাহিদ হোসেন বড় ভালো লাগলো আপনার গল্পটি। অন্য এক জগতে যেন চলে গেলাম। তো গল্পকার স্বার্থক।
হোসেন মোশাররফ রূপকথার গল্পটি পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ @ সাহানাজ আক্তার...
শাহ্‌নাজ আক্তার oshadharon ekti rupkothar golpo porlam ..........
হোসেন মোশাররফ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ @আপন
এম এম এস শাহরিয়ার ওনা তখন বলল, 'পৃথিবীর এক রাজকুমারকে মনপ্রাণ সব দিয়ে এসেছি। এখন তাকে আমি আপন করে পেতে চাই।--------- খুব ভালো লাগলো .

২৫ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪