ইরা

কষ্ট (জুন ২০১১)

লক্ষীছাড়া
  • ২১
  • 0
  • ৫৯
ইরা-কে প্রথম দেখাতে মুগ্ধ হয়েছিলাম । পদ্ম পাতার মত গোল মুখ, বড় বড় চোখে বিস্ময় । বাবা মা দুই ভাই আরো সব আত্মীয়দের মাঝে থেকে লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না তার দিকে । তবু কিভাবে যেন চোখে চোখ ঠিকই পড়েছিল । তার মনোভাব তখন বুঝিনি । পরে অবশ্য সেও স্বীকার করেছিল আমাকে ভাল লাগার কথা । তখন সে আমার অর্ধাঙ্গীনি ।
ইরা ছিল সচিবের মেয়ে । ঢাকার বারিধারায় তাদের বাড়িটা যেন বাড়ি নয় একটা প্রাসাদ । প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা গাড়ি । মানুষের চেয়ে গাড়ির সংখ্যা-ই ছিল বেশি । সে প্রাসাদ প্রতিম বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে ইরা এবং স্বভাবতই আহ্লাদী ।
আমাদের বাড়ি ঢাকার অদূরে এক মফস্বলে । বিয়ের পর আমি হাসপাতালে রোগী দেখা শেষ করে খুব দ্রুতই চাইতাম বাড়ি ফিরে যেতে । প্রাইভেট প্রাকটিস তখনো শুরু করিনি ।
ইরা আমার জন্য ফিটফাট হয়ে অপেক্ষা করত । অনেক সময় দেরী হলে মুখ ভার করেও রাখত । আমি তার জন্য নিয়ে যেতাম বেলী ফুলের মালা । শিশুদের মত খুশি হয়ে উঠত সে সামান্য উপহার পেয়ে । সেই দিনগুলোই ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিন । হয়তো ইরার জীবনেরও । আমার প্রতি ইরার ভালবাসাও শীর্ষ বিন্দুতে পৌছেছিল সেই সময়টায় । একবার গভীর রাতে আমাদের পাশের বাড়ির মা হতে যাওয়া বউটি অসুস্হ হয় । তার তরুন স্বামীটি আমাকে ডাকতে আসে । ইরা দরজা বন্ধ করে আমাকে ধরে রাখে । সে কারো ডেলিভারী করতে দিবেনা আমাকে । মোট কথা ইরা ছাড়া আর কোন মেয়ের শরীরে আমি হাত দেই এটা সে মানতে পারছিল না । এতরাতে আর ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যাবেনা এবং এ্যাম্বুলেন্স আসতে আসতে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেলে আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজের বিবেকের কাছে কি জবাব দেব ভেবে অস্থির হয়ে উঠছিলাম । শেষে বউটির শাশুড়ী , আমার মা সবাই ইরার হাতে পায়ে ধরে বুঝিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে পারে । এত সব ঘটনার ভিড়ে কিভাবে যেন দুইটি বছর পার হয়ে গেল ।
এক সকালে ইরার বাবা গাড়ি পাঠিয়ে দিল তাকে নিয়ে যাবার জন্য । সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে গাড়ীতে উঠল । অনেকগুলি দিন পার হয়ে গেল ইরার ফেরার নাম নেই । আমি তাদের প্রাসাদ প্রতিম বাড়ীতে গিয়ে থাকতে লাগলাম মাঝে মধ্যে ।
কোথাও একটা পরিবর্তনের সুর টের পেলাম ইরার আচরনে । এক রকম জোর করেই তাকে নিয়ে এলাম আমার নিজের সাধারন বাড়িটাতে । কিন্তু কাজ হল না । যে পরিবর্তন শুরু হয়েছিল আমার ইরা কে ঘিরে তা দিন দিন পূর্নতা পাচ্ছে ।
এখন আর বেলীফুলের মালা পেলে তার মন খুশি হয়ে উঠেনা । ব্যবহার রুক্ষ হচ্ছে দিনকে দিন ।
একদিন সকালে আমাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল এই মফস্বলে থাকা তার জন্য অসম্ভব । দীর্ঘ দুই বছর পর ইরার আমাদের বাসার পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য মনে হল । বিকেলেই ইরার বাবা এসে তাকে নিয়ে গেল ।
এরপর কতবার আমি আর আমার বাবা ইরাদের বাড়িতে গিয়েছি । ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছি । ইরার বাবা মা সবার কথা, আমাকে তাদের বাড়িতে গিয়ে থাকতে হবে । মফস্বলে থাকলে আমাদের ছেলে মেয়ে মানুষ হবে না । কেন যেন বুঝতে চাইল না আমি ডাক্তার হয়েছি এই মফস্বলে থেকেই । রাজধানীর অনেক ভাল পরিবারের ছেলেকে পিছনে ফেলে আমি মেধা দিয়ে নিজের অবস্থান করে নিতে পেরেছি । এখন কিভাবে আমি এই বাড়ি বাবা মাকে ফেলে স্বার্থপরের মত ইরাদের রাজ প্রাসাদে চলে যাই ?
আমাদের পরিবার থেকে প্রস্তাব রাখা হল ঢাকায় বাসা ভাড়া করে আমি আর ইরার থাকার ব্যাপারে । কিন্তু তাতেও ইরা রাজী না । তার একটিই কথা সে তার বাবার বাড়িতে থাকবে আমাকে নিয়ে ।
জানিনা আমাকে বেঁধে রাখার জন্যই কিনা ইরা মা হল । আমাদের সন্তান তাসিন জন্ম নিল আমার হাসপাতালে নয় রাজধানীর অভিজাত এক ক্লিনিকে । নামকরন করল ইরার পরিবার । এত কিছুর মধ্যে আমাদের পরিবারের কোন অংশগ্রহন করার সুযোগ কেউ রাখেনি ।
তাসিনের দুই বছর বয়সে অনেক অনেক প্রতিশ্রুতির পর ইরা ফিরল আমাদের বাড়ী ।
আমার মা ইরাকে অতিথির মত যত্ন করত । ভোরবেলায় গিয়ে আমাদের দরজার সামনে বার বার ঘুরে আসত কখন আমরা ঘুম থেকে উঠি । বাড়িতে দুটি কাজের মানুষ থাকলেও আমার মা নিজে তাসিনের সব জামা কাপড়, কাঁথা ধুয়ে দিত ।

আমাদের চতুর্থ বিয়ে বার্ষিকী পালন করা হল খুব ঘটা করে । তাসিনের ঘুম ভাঙ্গিয়ে নিয়ে এলাম আমরা কেক কাটার জন্য । কাঁচা ঘুম থেকে উঠে আমার দুই বছরের মেয়েটি কেক কাটতে চাইল না । সবার আনন্দ হুল্লোরে কেটে গেল সন্ধ্যাটি । ইরার বাবা এসেছিল । অনুষ্ঠান শেষ হবার পর ইরা জিদ করল বাবার সাথে চলে যাবে । আর আমরা জানি ইরা একবার গেলে তার মন বদলে যাবে । আর আসতে চাইবে না সহজে । সবাই বুঝালো । আমি একটু কঠোর হয়ে গিয়েছিলাম সেই মুহূর্তে । রাগের মাথায় হাত উঠে গেল অজান্তে । একটা চড় মারলাম । তখনই ইরার বাবা মেয়েকে নিয়ে চলে গেল । বাড়িতে নয় থানায় । সেই রাতেই পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে গেল নারী নির্যাতনের মামলায় । তিন মাস জেলে থেকে যখন আমি বের হলাম তখন আমি আরেক মানুষ । কোন বন্ধন নেই । ইরা আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে । তাসিন তার মায়ের কাছে ।
আর কোন দিন আমি ইরা বা তাসিন কে দেখতে পাইনি । আমাকে দেখতে দেয়া হয়নি । ইরার বাবা বলে পাঠিয়েছে আমাকে যেন কোন দিন তাদের রাজ প্রাসাদের আশে পাশে দেখা না যায় । আমি অনেক দিন ইরা কে, তাসিনকে দেখার আশায় তাদের বাসার সামনে ঘুরে বেড়িয়েছি এটা তার নজর এড়ায়নি ।

একটি বছর পার হয়ে গেল । আমি কিছুই ভুলতে পারিনা । ইরার সে পদ্ম পাতার মত মুখ । আমার তাসিনের ছোট আধো বোল , ঘুম ভাঙ্গা মুখ । একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম । আমার উদ্ভ্রান্ত অবস্থা দেখে বাবা মা জোর করে বিয়ে করালো আবার । এবার একেবারে গ্রাম থেকে অল্প শিক্ষিত গরীব ঘরের এক মেয়ে । বাবা নেই । নাম রত্না ।
রত্না এসে আমার অগোছাল জীবন টা গুছাতে পারল না । আরো জটিল হয়ে গেল । আমার মন এখনো ইরাকে ভালবাসে । রত্নার প্রতি আমি কিছুতেই টান অনুভব করিনা । আবার রত্নার কষ্ট আমাকে একজন মানুষ হিসেবে ভাবায় । তাকে চেষ্টা করেও তার প্রাপ্যটুকু দিতে পারি না । সে শুধু আমার সময়ের সাথী হয়েই আছে মনের নয় ।
আজ ইরা ফোন করেছে এত বছর পর । সে ফিরে আসতে চায় আমার কাছে । কি করব আমি ? মনের কথা শুনব নাকি দ্বন্দ্বদোলায় দুলে যাব আজন্মকাল । একদিকে আমার ভালবাসা আর একদিকে বাস্তবতা । কাকে বেছে নেব আমি ?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লক্ষীছাড়া সবাইকে ধন্যবাদ , যারা আমার গল্পটি পড়ে মতামত দিয়েছেন
সাঈদ উল হক কাহিনীটা গতানুগতিক হলেও নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় বর্ণিত | তাই খারাপ লাগেনি | আর খুব সহজ করে লিখেছেন বলে আরও ভালো লাগলো | একটা প্রশ্ন করি ... যদি ইরার জন্য এতই ভালবাসা থাকত তাহলে আবার দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন কেন ? হয়ত ইরা আপনাকে ভালবাসতেন না , আপনি তো বাসতেন ...
এফ, আই , জুয়েল # নিয়তির কাছে মানুষ বড় অসহায় । সুন্দর গল্প ।।
রনীল ইরা চরিত্রটি দ্বারা বর্তমান যুগের মেয়েদের স্বার্থপরতার একটি সাধারন চিত্র তুলে ধরেছেন... মেয়েরা নিজেদের ছাড়া আর কাউকে যেন ভালবাসতে চায়না... গল্পটা ভালই শুরু করেছিলেন... কিন্তু শেষে এসে কেন যে তাড়াহুড়ো করলেন... বুঝলামনা...
সেলিনা ইসলাম গল্পটা সত্যি অনেক সুন্দর ......ভালবাসা পরিবর্তনশীল , যে ভালবাসায় ঈর্ষা কাজ করে সে ভালবাসা বেশিদিন ধরে রাখা যায়না আর যে ভালবাসায় শ্রদ্ধা কাজ করে তাকে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও ধরে রাখতে হয় .. বাস্তবতাকে ঘিরেই ভালবাসার যে আবির্ভাব তা অনস্বীকার্য , রত্না এবং ইরা দুজনেই কিন্তু গল্পের নায়কের বাস্তবতা যেনেই জীবন সঙ্গী হয়েছে , ইরার মাঝে আভিজাত্যের অহংকার এবং আত্বগরিমা বেশি কাজ করেছে । আর এখন রত্নাকে দেখে ঈর্ষা হচ্ছে । মেয়ে হোক বা ছেলে সবার বাবা মায়ের সন্মান আগে দেখতে হবে । যেখানে নিজের বাবা মায়ের সন্মান নেই সেখানে আর যাই থাক সুখ থাকতে পারে না , এমন ভালবাসার খুব বেশি প্রয়োজন আছে কি? যে মানুষ ব্যর্থ জীবনকে পিছনে ফিরে দেখে সে সামনে আগাতে পারে না । অনেক কিছু লিখে ফেললাম গল্পের ভাল লাগা থেকেই । ধন্যবাদ , শুভকামনা সতত ।
আহমেদ সাবের গতানুগতিক কাহিনী হলেও লেখার মুন্সিয়ানার গুনে উতরে গেছে। বিয়ের দু বছর পর ইরার বাপের বাড়ী যাওয়া, মাঝে কিছুটা সময়, তার পর ইরার মা হওয়া, তাসিনের দু বছর বয়সে ইরার ফিরে আসা। তার কিছুদিন পর ইরার চতুর্থ বিবাহ বার্ষিকী - চাঁদের কলঙ্কের মত সময়ের ধারাবাহিকতায় কিছুটা ক্ষুত, একটু মনযোগী হলে এড়ানো যেত। তবে লক্ষ্মীছাড়া আমাদের আরো সুন্দর গল্প উপহার দিতে পারবেন, ও ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।
আবু ফয়সাল আহমেদ @ লক্ষীছাড়া : বর্ণনা খারাপ নাহ, ভালই তবে আরো ভাষার কারুকাজ দেখানো যেত.
সূর্য আমাদের চতুর্থ বিয়ে বার্ষিকী...... এই প্যারাটায় খুব তাড়াহুড়ো হয়ে গেছে এবং স্বাভাবিক গতিটা নষ্ট হয়েছে। দুবছর এভাবেই কেটেছে অথচ বিয়ে বার্ষিকির দিন এবং ইরার বাবার উপস্থিতিতে এমন ঘটনাটা .................... তার পরও ভালই বলতে হয়
ফাতেমা প্রমি আপনার গল্পটা ভালো লাগলো-বেশি ভালো লাগলো এই কারণে যে অনেকটাই এরকম প্লট সাজিয়েও অর্ধেকের বেশি লিখার পর কি মনে করে যেন বাদ দিলাম-তারপর অন্য প্লটে অন্য গল্প সাজালাম...যদি ওটা SUBMIT করতাম তাহলে গল্প দুটো হুবুহু মিলে যেত.....অনেক শুভকামনা আপনার জন্য...

০২ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪