সোয়ান

কষ্ট (জুন ২০১১)

পাভেল
  • ৫৮
মিরাজ সাহেব একজন ইংরেজী অধ্যাপক ।প্রতিদিন দেরি করে কলেজে পৌঁছানো তার একটা রুটিনে পরিণত হয়েছে।কলেজে ঠিক সময় মত যাওয়ার জন্য তিনি অনেক পদ্ধতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন।তার কাছে মনে হয়েছে সব পদ্ধতি তার কাছে ক্ষমা চাইছে এবং বলছে, ‘মাফ চাই জনাব,আপনি
অপরিবর্তনশীল।কলেজে পৌঁছে যখন তিনি সময় দেখেন,তখন সে তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেন না।বিশ পঁচিশ মিনিট বিলম্ব।এজন্য কলেজে তার নাম হয়েছে-ঢিলা স্যার।অন্ন্য সব অধ্যাপকরাও তার চোখের আড়ালে এই নামে ডেকে বেড়ায়।মিরাজ সাহেবের বাসা থেকে বের হয়ে কয়েকটা গলি পেরুলে বড় রাস্তার মোড়।সেখানে হেঁটে পৌঁছাতে সময় লাগে দশ মিনিট।ভাগ্য ভালো থাকলে রিক্সা পাওয়া যায়।আর ভাগ্য খারাপ থাকলে কিছুটা দৌড়ে দৌড়ে হাঁটতে হয় তাকে।আজ তার ভাগ্য খারাপ।কোথাও রিক্সা নেই।একটা রিক্সা পাওয়া গেল।রিক্সাওয়ালা আয়েশ করে বসে সিগারেট খাচ্ছে।তার সামনে যেতেই হলুদ দাঁত সব বের করে বলল, ‘যামুনা স্যার হাঁটা দেন’।
মিরাজ সাহেব কিছুটা বিরক্ত হলেন।মনে মনে বললেন, ‘নন-সেন্স কোথাকার!তুই বিড়ি খাচ্ছিস, বিড়ি খা।আমি হাঁটবো নাকি উড়াল দিব তা তোকে বলতে হবে।’ বিরক্ত মুখে সে হাঁটতে লাগলেন ।
হঠাৎ রাস্তার বাম পাশ থেকে একটা বাচ্চার গলার আওয়াজ ভেসে আসল, ‘ কিরে তোর নাম কি?’ মিরাজ সাহেবের দিনে ভুত দেখার মত অবস্থা।রাস্তার পাশের বারান্দা থেকে চার পাঁচ বছরের এক বাচ্চা ছেলে একথা বলছে।বাচ্চা ছেলেটা দু’তলা দালানের বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে।মিরাজ সাহেব চোখ বড় করে কিছুটা বারান্দার কাছাকাছি আসলেন। বাচ্চা ছেলেটা মিরাজ সাহেবের মত চোখ বড় করে আবার জিজ্ঞেস করল, কিরে তোর নাম কি? মিরাজ সাহেব একটু মুচকি হেঁসে বললেন, আমার নাম মিরাজ।
‘হাসছিস কেন?নাম বলতে হাঁসতে লাগে নাকি?একেবারে মাথায় পানি ঢেলে দিব।’
মিরাজ সাহেবের হাঁসির মাত্রা বেড়ে গেল।সে অনেক দিন পর অবাক হল। সে চিন্তা করছে শেষ কবে এমন অবাক হয়েছিল।তার মনে পড়লো ঘটনাটা।নতুন মোবাইল কিনে পকেটে রেখে হাঁটছেন ।হঠাৎ তার কল আসল। মোবাইল পকেট থেকে বের করে কানে দিতে গিয়ে হাত থেকে ড্রেনে পড়ে গেল।তিনি খুব অবাক হলেন এবং হো হো করে হেঁসে উঠলেন।আজও তেমন অনুভব করছেন।এতটুকু বাচ্চা তাকে বলছে,কিরে তোর নাম কি?
মিরাজ সাহেব বারান্দার আর একটু কাছে গিয়ে বললেন, ‘তোমার নাম কি বাবু?’
‘আমি বাবু না,আমি বড় মানুষ,অনেক বড়।’
‘আচ্ছা, স্যার আপনার নাম কি?’
‘ফাজলামি করিস?আমাকে আপনি করে বলছিস কেন? তোর নাম কি?’
‘ও, সরি আমার নাম মিরাজ।’
‘আমার নাম সোয়ান’
‘ও রাজহাঁস ,খুব ভাল নাম।’
‘না ।না । আমার নাম সোয়ান ।কোন রাজহাঁস তাস না।
‘হ্যাঁ , বুঝলাম,সোয়ান –বাংলায় রাজহাঁস ।হা হা।
‘যা যা ভাগ এখান থেকে।না হলে মাথায় পানি ঢেলে দিব।’
‘দাও পানি ঢেলে।
বাচ্চা ছেলেটা তড়িৎ গতিতে তার পাশে রাখা গ্লাস থেকে পানি ঢেলে দিল।মিরাজ সাহেব হতভম্ব হয়ে গেলেন।তার পুরু শার্ট এবং মাথা পানিতে ভিজে গেছহে।বাচ্চা ছেলেটা বারান্দায় বসে উচ্চস্বরে হাসছে।সোয়ানের হাঁসির শব্দ শুনে ভিতর থেকে তার মা বারান্দায় চলে এলেন। মহিলা মিরাজ সাহেবের বেহাল অবস্থা দেখে একটু শুকনো হাঁসি হাসলেন।তারপর সোয়ানকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে ভিতরে চলে গেলেন।মিরাজ সাহেবের মনে হল তার আজ অবাক হওয়ার দিন।তার বাচ্চা এত বড় একটা অপরাধ করল অথচ তার মা নির্বাক।কিছুই বলল না।রাগে তার শরীরে আগুন ধরে যাচ্ছে।আজ কলেজে যেতে তার সবচেয়ে বেশি দেরি হল।কলেজে ঢোকা মাত্র প্রধান শিক্ষকের কিছু কটু কথা হজম করতে হল।মনে মনে তিনি ঘোষণা দিলেন চাকরি ছেড়ে দিবেন।কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলেন ভুলটা নিজের।মনের বিষ মনেতেই শেষ হল।
প্রতিদিন তিনি কলেজে যাওয়ার সময় সোয়ানদের বারান্দা কয়েকবার দেখে যান।চার পাঁচদিন চলে গেল।সেই বারান্দায় সে বাচ্চাটাকে আর দেখা গেল না।মিরাজ সাহেব বাচ্চাটার কথা প্রায় ভুলে গেলেন।তারপর আরেক দিনের ঘটনা।মিরাজ সাহেব কলেজে যাচ্ছেন দ্রুত গতিতে।বাচ্চা গলা কানে ভেসে আসল-‘কিরে কোথায় যাস? মিরাজ সাহেব ভ্রু কুঁচকে বারান্দায় তাকালেন।তার সেদিনের কথা মনে পড়ল।তিনি কথা না বাড়িয়ে হাঁটা ধরলেন।সোয়ান চিৎকার করে বলল, ‘কিরে কোথায় যাচ্ছিস।বলে যা...। মিরাজ সাহেব থেমে গেলেন এবং গম্ভীর রূপ ধারন করলেন।তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, ‘এই ছেলে কি যেন নাম...ও সোয়ান।আমি তোমার ছোট না বড়?’ সোয়ান তার ভ্রু দুটি কুচকে চোখের দুপাতা টিপে টিপে বলল, ‘ তুই তো আমার ছোটরে।’ মিরাজ সাহেব রেগে গিয়ে কি বলতে গিয়ে বললেন, ‘আমি কি তোমার বন্ধু হই?’সোয়ান মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বলে তার হাতের পাশে রাখা গ্লাসটি হাতে নিল।মিরাজ সাহেব তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে দৌড়ের ভঙ্গিতে বারান্দার পথ থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলেন।দূর থেকে দেখা গেল সে পানি পান করছে।বড় বড় চোখ করে মিরাজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে।বিকেলে কলেজ থেকে ফেরার পথে আবারও সোয়ানের সাথে দেখা হল।তিনি সোয়ানকে দেখেও না দেখার ভান করে হাঁটতে লাগলেন।বারান্দার পথের পাশে আসতেই সোয়ান বলে উঠল, ‘কিরে বন্ধু,কোথা থেকে আসলি?মিরাজ সাহেব হেঁসে ফেললেন।
‘কিরে তোর মাথায় দেখি চুল নেই।কেমন কেমন লাগে রে...’
মিরাজ সাহেব মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘কোথায় নেই,এই যে আমার চুল।’
‘এই চুল পড়ে যাবে,কি মজা!কি মজা!’
‘কেন?
‘আমার দাদার চুল পড়ে গেছে।তোর চুল ও পড়ে যাবে। সবার চুল পরে যাবে, আমার চুল থাকবে’।
‘ধুর বোকা।আমার চুল পড়বে না।’
‘এই তুই বেশি কথা বলিস।যা ভাগ এখান থেকে।ভাগ নইলে পানি ঢেলে দিব।’
‘তোমার দাদা কোথায়?
‘দাদাকে দিয়ে তোর কাজ কি? তুই ভাগ।এ…বিচার দিবে…।
মিরাজ সাহেব মুচকি হেঁসে হাঁটা ধরলেন।পেছন থেকে সোয়ান ডাক দিল।এবারের ডাক শুনে সে পুরু চমকে গেলেন।সোয়ান বলছে, ‘এই মিরাজ শোন, এই মিরাজ …
‘তুমি আমার নাম মনে রেখেছ?’
‘হু।
‘বাহ!তোমার ব্রেন তো খুব ভালো।
‘এই আমি ভালো না,আমি পঁচা।
‘না,তুমি খুব ভালো।
‘আচ্ছা,ভালো।শোন আমার জন্য তুই চকলেট নিয়ে আসবি।
‘কেন?
‘তুই আমার বন্ধু না?আমাকে খাওয়াবি না?
‘আচ্ছা,নিয়ে আসব।
মিরাজ সাহেব পরের দিন চকলেট নিয়ে আসল।কিন্তু সোয়ানকে বারান্দায় পাওয়া গেল না।তারপরের দিন ও নেই।প্রতিদিন তিনি চকলেট কিনে বারান্দার পাশে অপেক্ষা করেন।সোয়ানকে পাওয়া যায় না।তারপর চকলেট নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন।একদিন তার এক প্রতিবেশী ঠাট্টা করে বলল, ‘ইদানিং হাতে শুধু চকলেট দেখি।কি ব্যাপার!কলেজের কেউ দেয় নাকি।বুইড়া বয়সে আর কত চকলেট খাবেন।আমাদেরও দিবেন একটু।’
কলেজে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হল।মিরাজ সাহেব বিনা কারনে ঘর থেকে বের হন না।তার মাঝে মাঝেই সোয়ানের কথা মনে পড়ছে।সোয়ানের জন্য জমানো চকলেটের সংখ্যাও কম নয়।সে ভাবল একবার সোয়ানদের বাসায় যাওয়া যাক।চকলেট গুলো পেলে ছেলেটা খুশি হবে।ওর দাদার সাথে ও একটু কথা বলা দরকার।এক বিকেল বেলা মিরাজ সাহেব সোয়ানদের দরজার কড়া নারল।ভেতর থেকে দরজা খুললেন বয়স্ক এক ভদ্রলোক।তার মাথায় গুটি কয়েক চুল।মুখে সাদা দাড়ি।ভদ্রলোক চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে বললেন,‘কাকে চাই? ‘এটা কি সোয়ানদের বাসা।’ভদ্রলোক হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন।মিরাজ সাহেব কিছুই বুঝতে পারলেন না।কিছুক্ষন পর দরজা খুলে এক মহিলা বলল,ভেতরে আসুন।
মিরাজ সাহেব সোফায় বসে আছেন।তার বাম পাশের সোফায় বসে গভীর মনোযোগে পেপার পড়ছেন বৃ্দ্ধ ভদ্রলোক।তিনি পেপার থেকে চোখ না সড়িয়ে বললেন,
‘আপনার পরিচয়?
‘আমি অধ্যাপক মিরাজ।
‘কোন বিষয়ের অধ্যাপক?
‘ইংরেজী
‘হুম।বেশ ভাল।এখানে কিসের জন্য আসছেন?
‘আমি সোয়ানের কাছে এসেছি।ওর জন্য কিছু চকলেট নিয়ে এসেছি।
বৃ্দ্ধ লোকটি পেপার সড়িয়ে পূর্ণ দৃষ্টিতে মিরাজ সাহেবের দিকে তাকালেন।গলার স্বর একটু নামিয়ে বললেন, ‘আপনার সাথে সোয়ানের পরিচয়?আমি সোয়ানের দাদা।’
‘না মানে।আমি প্রতিদিন এ বাড়ির পাশ দিয়ে কলেজে যাই।এভাবে ওর সাথে আমার পরিচয় হয়। সোয়ানের দাদা ছোট করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন, ও ,আচ্ছা,বুঝতে পেরেছি।ঘরের ভেতর থেকে এক মহিলা ট্রে নিয়ে ঢুকল। বৃ্দ্ধ এবং মিরাজ সাহেবের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিলেন।সোয়ানের দাদা বুললেন, ‘বৌমা তুমি উনাকে চেন?’সোয়ানের মা বলল, ‘বাবা সোয়ান একদিন উনার গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছিলেন।’ সোয়ানের দাদার মুখ শুকিয়ে গেল।তিনি শুকনো গলায় বললেন, ‘তা আপনি কি বিচার দিতে এসেছেন?মিরাজ সাহেব হাঁসি দিয়ে বললেন, ‘না,বিচার দিতে না,অর জন্য কিছু চকলেট নিয়ে এসেছি।সোয়ানের দাদার শুকনো মুখ আরও শুকিয়ে গেল।সে পেপার হাতে নিয়ে ভিতরের ঘরে চলে গেলেন।সোয়ানের মা চায়ের কাপ নিতে আসলেন। মিরাজ সাহেব মৃদু কণ্ঠে বললেন, ‘সোয়ান কোথায়?’ সোয়ানের মা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন।কিছুক্ষণ পর সে বললেন, ‘সোয়ান এক সাপ্তাহ ধরে বিছানায় পরে আছে।’মিরাজ সাহেব বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেসা করলেন, ‘কি হয়েছে ওর?’।সোয়ানের মায়ের চোখ থেকে কয়েক ফুটা পানি গাল বেয়ে মাটিতে পরল।তারপর সে কান্না ভরা কণ্ঠে বলতে লাগলো, আমার একমাত্র এ ছেলেটার ক্যানসার হয়েছে ভাই।যখন আমি এ কথাটা বলি,বুকটা কষ্টে ফেটে যায়।এই ছেলেটা বড় আদরের।ছেলেটা বাবার আদর কি তা কখনও পায় নি।আমার এ ছেলেটাকে আর বেশিদিন বাঁচানো যাবে না।সোয়ানের মা অনবরত কান্না করে যাচ্ছে।মিরাজ সাহেব কি বলবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।তার চোখ দুটিও কেমন ভিজে আসছে।সে বললেন , ‘আমি কি সোয়ানের সাথে দেখা করতে পারি?’
সোয়ানের মা চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘আমার সাথে ভেতরে আসুন।’ ভিতরের ঘরে ঢুকে মিরাজ সাহেবের চোখে পানি চলে আসল। তিনি শত চেষ্টা করেও তা আটকে রাখতে পারলেন না।ঘর কিছুটা অন্ধকার থাকায় চোখের পানি ঢাকা পড়ল। সোয়ান বিছানায় শুয়ে আছে।শরীর বলতে শুধু একটা কঙ্কাল বলা যেতে পারে।তার মাথার চুল সব ফেলে দেওয়া হয়েছে।চোখের নিচে কালোদাগের রেখা পড়ে গেছে।গায়ের রক্ত, রক্তসার শূন্য হয়ে আছে।সে তাকিয়ে আছে দেয়ালের দিকে।মিরাজ সাহেব চকলেটের প্যাকেটা সোয়ানের হাতের কাছে রাখলেন।সোয়ান দেয়ালের দিকেই তাকিয়ে আছে।সোয়ানের মা ঘরের বাইরে চলে গেল।তার চিৎকার করে কাদতে মন চাইছে।এবার সোয়ান মিরাজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাঁসি হেসে বলল, ‘কিরে বিচার দিতে এসেছিস।’সে সোয়ানের মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘না রে পাগল।তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।তুমি না চকলেট খেতে চেয়েছিলে।এইতো তোমার চকলেট।সোয়ান মিরাজ সাহেবের হাতটা তার রুগ্ন দু’হাতে শক্ত করে ধরে নিজের বুকে নিয়ে রেখে বলল, ‘তুই কত ভাল!’
মিরাজ সাহেব আলতো করে সোয়ানকে বুকে টেনে নিলেন।সোয়ানও চুপ করে পাখির ছানার মত বুকে লেপ্টে থাকল।এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়ল।মিরাজ সাহেব এর মাঝে কয়েকটা সিদ্ধান্ত নিলেন।তিনি সোয়ানের দাদা এবং মায়ের সাথে অনেকক্ষণ আলোচনা করলেন।জানা গেল,সোয়ানকে বাঁচাতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন।তার দাদা তাকে বাঁচাতে এ বাড়ি বিক্রি করারও পরিকল্পনা করে ফেলেছেন।মিরাজ সাহেব এটা শুনে আরও কষ্ট পেলেন যে,সোয়ানের বাবা নেই। তিনি সোয়ান যখন দেঁড় বছর তখন নিখোঁজ হন।তার আর কোন খোজ পাওয়া যায়নি।এতটুকু বাচ্চা কখনই বাবার আদর পায়নি।মিরাজ সাহেব বললেন, ‘সোয়ানকে বাঁচাতেই হবে।সোয়ান বাঁচবে ।প্রয়োজনে আমি সব কলেজে ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাইবো। আমার বিশ্বাস অবশ্যই সোয়ান ভাল হবে।’ একথা শুনে সোয়ানের দাদার চোখ চকচক করে উঠল।তিনি মিরাজ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘বাবা,আমার দাদা ভাইকে বাঁচান ।আমার জাদুকে বাঁচান ।ছেলেটা খুব কষ্ট পাচ্ছে।’
তারপর দুসপ্তাহ কেটে গেল।মিরাজ সাহেব এখন প্রতিদিন একবার করে সোয়ানকে দেখে আসেন। সাহায্যের টাকা চাইতে সে কলেজ কলেজ ঘুরে বেড়ায়।বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে সাহায্যের খবর ছাপায়।এসব নিয়ে তিনি অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।যত দিন বাড়তে লাগল,সোয়ানের শরীরের অবনতি হতে লাগল।মিরাজ সাহেবকে নিয়ে এর মাঝে অনেক কুকথা ছড়িয়ে পড়েছে ।কেউ কেউ বলছে,টাকা তোলা স্যারের ব্যবসা।সে নিজের কানেও শুনেছে এমন ধরনের কিছু কথা।কোন কথাই সে তার কানে নিল না।সে সাহায্যের জন্য সম্ভব-অসম্ভব সব জায়গায় ছুটতে লাগলেন।এভাবে দিন কেটে যাচ্ছে। ডাক্তাররা সোয়নকে বাঁচানোর আশা ছেড়ে দিচ্ছেন।মিরাজ সাহেব আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন।মিরাজ সাহেবের প্রতিদিনের কাজ মজার মজার গল্প শুনিয়ে সোয়রানকে ঘুম পাড়ানো।গল্প শেষে সোয়ান কিছু অদ্ভুত প্রশ্ন করে।যেমন- আচ্ছা,মানুষ মরে গেলে কোথায় যায়?মরে যাওয়ার পর কি হয়? এসব প্রশ্নের কোন জবাব মিরাজ সাহেব দিতে পারেন না।মিরাজ সাহেব এখন অনেক রাতে ঘরে ফিরেন।সোয়ানের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হতে লাগল।এক সময় তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।কথাও বলে না তেমন।মিরাজ সাহেব চিন্তায় পড়ে গেলেন।সোয়ানের মা সারাদিন কান্নাকাটি করেন।মিরাজ সাহেব যখনই একা বসে থাকেন, সোয়ানকে নিয়ে ভাবেন।কি সুন্দর ফুটফুটে ছেলেটা এখন কঙ্কালের মত।সেদিন সোয়ান বলছিল, ‘ওরা আমাকে শুধু কষ্ট দেয়।আমাকে সুঁই দিয়ে গুঁতো দেয়।আমি ব্যাথা পাই না?উহ!অনেক ব্যাথা পাই।’
মিরাজ সাহেব সোয়ানের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন।কিছুক্ষণ পর বললেন,‘আচ্ছা,আমি ওদের বকে দিব।সোয়ানকে হাঁসপাতালের যে কক্ষে রাখা হয়েছে সেখানে কোন জানালা নেই।সোয়ান সেদিন খুব কষ্টে শ্বাস নিতে নিতে বলল, ‘বন্ধু,একটা জানালাও নাই।আমি বাসায় যাব।এ ঘরটা পঁচা।’ মিরাজ সাহেবের কিছুই ভাল লাগে না।তার মাথায় শুধু ঘুরছে, সোয়ান বাঁচবে তো ?
সেদিন রাতে সোয়ান গুঙ্গানির মত শব্দ শুরু করল।সোয়ানের মা কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ‘ কিরে বাবা এমন করছিস কেন? কি হয়েছে?কথা বল...। সোয়ান কিছুই বলতে পারল না।শুধু বলল, ‘মা...ওমা... মা...ওমা।’ মিরাজ সাহেবকে খবর দেওয়া হল।সে তড়িৎ গতিতে ছুটে আসলেন।ডাক্তাররা সোয়ানের অপারেশনের ব্যাপারে বোর্ড গঠন করল।কাল সকাল সাতটায় অপারেশন।মিরাজ সাহেব সোয়ানের হাত ধরে বসে আছেন।কিছুক্ষণ আগে সোয়ান ছটফট করছিল,এখন কম।মিরাজ সাহেবের কষ্টে দুচোখ ভিজে আসছে।
রাত দু’টা পনের মিনিটে সোয়ান মারা গেল।সোয়ানের মায়ের কান্নায় হাঁসপাতালের চারপাশ ভারি হয়ে গেল।মিরাজ সাহেব নির্বাক হয়ে গেলেন।তিনি হাঁসপাতালের এক কোণায় বসে চোখের পানি ফেলতে লাগলেন।সোয়ানের মায়ের আর্তনাদ বার বার তার কানকে ছুরির মত আঘাত করছে।সারারাত তিনি চেয়ারে বসে কাটালেন।পুব আকাশে সূর্য উঠল।সকাল হল।
তারপর অনেকদিন কেটে গেল।মিরাজ সাহেব কলেজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।তিনি এখনও তার দেরি করে কলেজে যাওয়ার বদ অভ্যাসটা দূর করতে পারেননি। এক সকালের ঘটনা।তিনি রিক্সা না পেয়ে দৌড়ের ভঙ্গিতে হাটছেন।হঠাৎ চোখ পড়ল সোয়ানদের বারান্দার দিকে।বুকের বাম পাশে সোয়ানের কথা মনে পড়তেই বিস্ফোরণের মত হল।সে বারান্দা শূন্য হয়ে পড়ে আছে।মিরাজ সাহেব কলেজের পথে হাঁটা ধরলেন।হঠাৎ তার মনে হল, পেছন থেকে বাচ্চা গলায় কে যেন ডাকছে।একেবারে সোয়ানের গলায় কে যেন ডাকছে, ‘এই মিরাজ এই, কোথায় যাস।এই মিরাজ...
মিরাজ সাহেব বিচলিত হয়ে সোয়ানদের বারান্দার দিকে ফিরে তাকালেন।শুন্য বারান্দা শুন্য পড়ে আছে।এটা তার মনের ভূল।এটা তার কল্পনা।সোয়ান এখন অন্ন্য ভূবনের মানুষ।যে ভূবনে মানুষ একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না।মিরাজ সাহেবের চোখ দু’টি এক অজানা কষ্টে ভিজে এল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
miraj শুভ কামনা রইল আমার ভাই তির জন্য.
miraj আমি কি তোমার বন্ধু হই
খোরশেদুল আলম ভালো লাগলো আপনার লেখা, শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
পাভেল অনেক ধন্যবাদ সবাইকে । ই প্রত্যয় যোগে মন্তব্য গুলো অসাধারণ লাগে । হা হা । ধন্যবাদ বন্ধুগণ ।
ফাতেমা প্রমি গল্পটা এর আগেই পড়ে গিয়েছিলাম-ভোট,কমেন্ট করার সুযোগ ছিল না..ভালো লিখেছেন..তবে বর্ণনা শৈলী আরো সুন্দর করতে হবে..লিখতে থাকলে একসময় ওটা আপনাতেই চলে আসবে মনে হয় কারণ আপনার লেখনি কিন্তু বেশ ভালই...
sakil সবাই শৈশবে কম বেশি এমনি থাকে . সরল ভাষায় লেখা সুন্দর গল্প . আগামীর ভালো একজন লেখকের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম আপনার লেখায় . শুভকামনা রইলো আপনার জন্য এবং সেই sathe আপনার lekhar জন্য .
মোঃ আক্তারুজ্জামান অনেক সুন্দর লিখেছেন| গল্প উপন্যাস যেন 'টি. এস. সির কইতর কৈতরির প্রেম কাহানি' ছাড়া হবার নয়| আপনি সে আঙ্গিক থেকে বেরিয়ে এসে চমত্কার লিখেছেন তার জন্য আপনাকে অনেক অনেক সুভেচ্ছা|
সৌরভ শুভ (কৌশিক ) পাভেল এর সোয়ান,লিখবে ভালো জানি হে নওজও যান /
পাভেল মাহমুদা অনেক ধন্যবাদ | আনিসুর ভাই আপনাকে ও ধন্যবাদ | ভাই বানানের ভুল আমি স্বীকার যাই |কিন্ত ভাবার বিষয় হলো যে বানান গুলো ভুল হয়েছে তা কিন্ত সহজ বানান যা নরমাল ক্লাসের কেউ ও করে না |ভাই এটা লেখার ভুল |অভ্র keyboard এ প্রথম লিখলাম |খুব তরিঘরি করে লিখেছিলাম | @ ফাতেমা আপনার মন্তব্য দারুন লাগলো |

২৫ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪