বাবর আলি একজন কৃষক

মুক্তিযোদ্ধা (ডিসেম্বর ২০১২)

এ এইচ ইকবাল আহমেদ
  • ৩১
প্রিয় পাঠক আপনারা কি বাবর আলিকে চিনেন। বাবর আলী একজন কৃষক। যার নিজের কোন জমি নাই। সে পরের জমি চাষ করে। এমন কৃষকদের সাহেবেরা চাষা বলেই জানে। যা তাদের সবচেয়ে ইতর গালি।
১৯৭১এর জানুয়ারি মাস থেকে চৌধুরি সাহেরো ঘনঘন শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে আসা বাড়তে থাকে। বাবর আলি তাঁদের জমি চাষ করেন।জোয়ান মর্দ ছেলে। চৌধুরি বাড়িতে আশৈশব মা-বাপ হারা বাবর এ বাড়ির পালা কুকুরের সাথে মানুষ। দেশি কুত্তা থেকে সাহেবদের কুকুরদের দেকভাল করে তার বেড়ে ওঠা। কুকুদের মতই তার প্রভুভক্তি। শীতের দাপট যত কমতে থাকে জলাবিলের বিলাতি পাখির সংখ্যা তত কমতে থাকলেও এ বাড়িতে আসা লোকদের সংখ্যা ততই বাড়তে থাকে।
সন্ধ্যা হতেই বিরাট ওঠানজুড়ে এলাকার লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। রেডিওতে বিবিসির খবর শোনার জন্য এতো ভিড়। বিবিসির খবর শেষ হলে শুরু হয় নানা আলোচনা। দেশের সামনে মহা বিপদ আঁচ করে বাবর। ইতোমধ্যে এ বাড়ির হাঁস মুরগির সাথে বেড়ে ওঠা আর এক এতিম মেয়ে ময়নার সাথে বাবর আলির বিয়ে দেন চৌধুরি বাড়ির বড় মা। এখন তাঁর পানের বাটা আর বাতুয়া শরীরে তেল মাখার দায়িত্ব ময়নার।
১৯৭১এর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ক্যাম্প গেড়েছ্ েচৌধুরি বাড়ির কাচারি ঘরে। মেজর মির্জার আগ্রহে বড় চৌধুরি শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয় নি। তার দুই সোমত্ত মেয়েকে মেজর মির্জা বেইজ্জুতি করে। চৌধুরি সাহেবের অবস্থা শ্যাম রাখি না কূল রাখি। এরই মধ্যে চৌধুরি সাহেবের কলেজ পড়–য়া ছেলে তারিক চৌধুরি রাতের আঁধারে গৃহত্যাগ করে। মেজর মির্জা গর্জে ওঠে: চৌধুরি সাহাব! এতনা হিম্মত কাঁহাছে আয়া, তোমহারা লারকা মুক্তি হুয়া! চৌধুরি পরিবারের উপর নির্যাতন আরও বাড়তে থাকে।
বাবর আলি পাকিস্তানি ক্যাম্পের সিপাইদের ফাইফরমাস খাটে। সিপাহিরা শখ করে তাকে বন্দুক চালনা শেখায়। সে কাক মেরে হাতের নিশানা শানায়। তার উপর ক্যাম্পের দায়িত্বভার দিয়ে সেনারা মুরগিখোঁজা শিয়াল হয়ে গ্রামময় চষে বেড়ায়। মেয়রা তাড়া খেয়ে আগেই গ্রামছাড়া। চৌধুরিবাড়ি এদিক থেকে জিন্দানখানা। বাবর ক্যাম্পের খবর তারিকের কাছে পাচার করে। বর্ষার এক সন্ধ্যায় ময়নার উপরেও মেজর মির্জার হাত ওঠে। সে রাতে মেজর মির্জাসহ বাকি ছয়জন সিপাহি নিহত হয়। কাকপক্ষিও জানতে পারেনি কিভাবে এ কান্ড ঘটে গেল। পর দিন রটে গেল মুক্তিবাহিনির হাতে সাত পাকসেনা খতম।
অগত্যা ভোরের আলো ফোটার আগে চৌধুরি পরিবার মাইলকয়েক পথ হেঁটে আগরতলায় দূর সম্পর্কের আত্মিয়ের বাড়িতে ওঠে। সাথে ময়না ও। পরদিন পাকিস্তানি সেনাদের আক্রোসের আগুণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় চৌধুরি বাড়ি । ব্বার আলি মুক্তিবাহিনি ক্যম্পের বাবুর্চি। মাঝে মাঝে তারিক চৌধুরিদের বাহিনির সাথে অভিযানে যায় । পাকিস্তানি সেপাহিদের কল্যাণে ভালই হাত পাকানো আছে তার।
যুদ্ধ শেষে তারিক চৌধুরি একটা সার্টিফিকেট বাবর আলির হাতে দিয়ে বলেন রেখে দে কাজে লাগবে। তারিক চৌধুরী দীর্ঘদিন আর্মিতে চাকুরি করে বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তাঁর মেয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় রাজধানিতে বড় চাকুরি করছে।
১৯৭২সাল। ভরা বর্ষার এক বিকেলে দৌলতপুরের চৌধুরিদের জমি দেখে ঘরে ফিরে বাবর মিয়া। দাওয়ায় ঢুকতেই দাইবুয়া জানায় সে ছেলের বাবা হয়েছে। ভরাবর্ষায় আগুন জ্বালানোর লাকড়ি না থাকায় বেতের তোরঙ্গসহ তলায় জমা কাগজপত্র দিয়ে কোন রকমে ছেলের গা গরম করা হচ্ছে। আরও না তাপালে এ ঠান্ডায় লেদাবাচ্চা মারা যাবে। বাবর এক ঝলক ছেলের মুখ দেখে চৌধুরি বাড়ির দিকে হনহনিয়ে এগোয় । খবরটা ঔ বাড়িতে দিয়ে কিছু কাঠখড়ি যোগার করে আনার জন্য।
বাংলাদেশ আমলে বাবর আলি কিছুদিন সেনাবাহিনীতে বাবুর্চির কাজ করে। ময়নার অসুখের খবরে পেয়ে সেই যে মাটির টানে চাকুরি ছেড়ে দৌলতপুরে এসেছে আর ফিরে যায় নি কর্মস্থলে। চাষের মাটির গন্ধে বেড়ে ওঠা মানুষের সহর মানায় না। তার মেয়ে মরিয়ম আক্তার আশুলিয়ায় গার্মেন্টে চাকুরি করে। তারিক চৌধুরির সাহেবের চেষ্টায় ছেলে মজিবর দুবাইতে আছে। ময়না বিবির মৃত্যুর পরে ছেলের বৌ আর নাবলক নাতি আকবর আলিকে নিয়ে ভালই চলছে বাবর আলির দিন।
আজ নাতি আকবর আলির কথায় হতবিহŸল হয়ে পড়ে বাবর মিয়া। ‘আগামি কালকে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সম্বর্ধনা উৎসব হবে মুক্তিযোদ্ধা তারিক চৌধুরি স্কুলে। ভাল পোষাক পড়ে স্কুলে যেতে বলেছে স্যারেরা। দাদা তুমি মুক্তিযুদ্ধে যাওনি কেন? বুক ফুলাইয়া কইতাম আমার দাদা একজন মুক্তিযোদ্ধা। বকুল কইল তুমি না কি চৌধুির বাড়ির ক্যাম্পে রাজাকার আছিলা? থুক্কু, দাদা থুক্কু।’
বাবর আলি কিছুক্ষণ নীরবে চেয়ে থাকে নাতির মাখের দিকে। চোখে ভেসে ওঠে ছেলে মজিবরের জম্মক্ষণ। ছেলেকে বাচাঁনোর জন্য পুরানো কাগজের সাথে রাখা মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটখানার জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের তাপে বাঁচানো ছেলের পুত্রের কাছে রাজাকারের খেতাব আজ পেল সে। অথচ তার জানা মতে চৌধুরিবাড়ি ক্যাম্পে পাকিস্তানি সিপাহিদের মাল সাপ্লাইয়ার বাচ্চু মিয়া আজ সার্টিফিকেটওয়ালা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার সার্টিফিকেটের জোরে বাচ্চুর দুই ছেলে চাকুরি করছে। বাবর আলি ভাবতে থাকে তার রাজাকার জীবন আর দেশের জন্য সংগ্রামের মধ্যে কোনটা ভারি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
F.I. JEWEL N/A # অনেক সুন্দর গল্প ।
ম্যারিনা নাসরিন সীমা বাস্তব লব্ধ কাহিনী চমৎকার সাবলীল ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন । লহুব ভাল লাগলো ।
তাপসকিরণ রায় গল্পটি পছন্দ হলো--গরীব বেহাল লোকেদের তো এমনি অবস্থা হয়!পছন্দ অপছন্দ ভালো মন্দ সবই অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়.তার নিজস্ব সত্তার কাজটুকু তাই কারো নজরে ধরা পড়ে না.ভালো লেখেন আপনি,আরো লিখে যেতে অনুরোধ করছি.
আহমেদ সাবের একই থিমে কয়েকটা গল্প পড়লাম এই সংখ্যায়। মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার / মিলে মিশে একাকার। / চালেতে মিশায়ে কাঁকর / রাজাকার কর্ণধার। হায় দেশ! গল্পটা ভাল লেগেছে।
মিলন বনিক দাদা অনেক সুন্দর আর সাবলীল গল্প..খুব ভালো লাগলো...অনেক অনেক শুভ কামনা....
মোহাঃ সাইদুল হক ভালো লাগলো আপনার গল্পটি। শুভ কামনা রইলো।
আজিম হোসেন আকাশ ধন্যবাদ। ভাল লাগল।
এশরার লতিফ এই প্রথম আপনার গল্প পড়লাম, সার্টিফিকেটের অভাবে মুক্তিযোদ্ধা অস্বীকৃত অথচ যুদ্ধাপরাধীরা মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে সমাজে পুরস্কৃত ও প্রতিষ্ঠিত.মনে হলো গল্পের কাহিনী লেখকের অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণলব্ধ. আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা.
সূর্য N/A এই প্রথম আপনার গল্প পড়ছি। এতদিন "কবিতা মানুষ" বলেই চিনতাম আপনাকে "নিদৃষ্ট একটা ছকে" প্রতিটি সংখ্যায় কবিতা। গল্পে বুনটের চেয়ে আক্রোশটা বেশি মনে হয়েছে। "চৌধুরী বাড়ি" "বড় চৌধুরী" না বলে একটা নাম ঠিক করে দেয়া যেত। বাচ্চু রাজাকার কি ঐতিহাসিক আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের রূপক হিসেবে এসেছে? ভাল লাগা রইল। আপনার আরো ভালো ভালো গল্প পড়ার অপেক্ষায় থাকব।

২৪ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৮০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী